#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১২
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
কথাটা বলেই রেগে হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেল।ওর যাওয়ার দিয়ে তাকিয়ে হাসলাম।পরের দিন সকালে দেখলাম বাসায় কিছু আয়োজন করা হচ্ছে।আম্মু আর মামি রান্না করতে বেস্ত।আব্বুকে বললাম
“আব্বু বাসায় কি কেউ আসবে নাকি যে এত আয়োজন করা হচ্ছে?”
“হ্যা।কেনো তুই জানিস না।”
“কই না তো।তা কে বা কারা আসবে?”
“তোর বন্ধু রানা আছে না।ওর পরিবার আসবে।”
“ওরা কেনো আসবে?আর আমি তো ওনাদের আসতে বলি নি।”
“তোর মামা আসতে বলেছে।হিয়াকে নাকি দেখতে আসবে আজ।”
“বলো কি আব্বু!আমি তো কিছুই জানলাম না।”
“আমিও প্রথমে কিছু জানতাম না।তোর মামাই আমাকে বলল রাসেলের কথা।”
“আচ্ছা আমি একটু মামার সাথে কথা বলে আসি।”
মামার কাছে গেলাম।আমাকে দেখে মামাই বলল
“এই নেহাল তুই কই থাকিস সারাদিন?তোকে খুজেই পাওয়া যায় না কাজের সময়ে।”
“তার আগে বলো হিয়াকে নাকি আজ রাসেল ভাইয়ের পরিবার দেখতে আসছে?”
“আরে এই জন্যই তো তোকে খুঁজছিলাম।আচ্ছা রাসেলের পরিবারকে সবাইকে চিনিস তুই।”
“হ্যা চিনি তো।রাসেল ভাইদের পরিবার অনেক ভালো।এবার বলো রাসেল ভাই কি আজ হিয়াকে দেখতে আসবে?”
“তাহলে তো খুব ভালো।আর হ্যা রাসেলের আব্বু বলেছে হিয়াকে বিকালে দেখতে আসবে।”
“রাসেল ভাইয়ের পরিবার যে তোমার মেয়ে দেখতে আসছে সেটা কি তোমার মেয়ে জানে?”
“রাসেলের পরিবার যে আসবে সেটা জানে না।কিন্তু হিয়াকে যে আজ দেখতে আসছে সেটা জানে।”
“আচ্ছা ভালো তাহলে।তুমি থাকো আমি আসছি।”
সারাদিন হিয়াকে দেখলাম না।বিকালে রাসেল ভাইয়ের পরিবার আসলো।রানাকে দেখলাম ভাইয়ের সাথে খুশি মনে বাসায় আসলো।আমাকে বলল
“নেহাল তুই তো আমার আত্মীয় হতে যাচ্ছিস।”
“আরে হিয়া রাজি হোক তার পরে আত্মীয় হওয়ার কথা বলিস।এখন চুপ থাক।”
সবাই ড্রয়িংরুম বসে আছে।কিন্তু হিয়ার আসার কোনো নামই নেই।অনেকক্ষণ পর ভাবি হিয়াকে নিয়ে আসলো।হালকা সাজে হিয়াকে বেশ মানিয়েছে।ওনাদের পরিবার হিয়াকে কিছু জিজ্ঞাস করলো।হিয়া চুপচাপ সেইগুলোর উত্তর দিয়েছে।মামা বলল হিয়াকে ভিতরে যেতে তখনি হিয়া বলল
“আব্বু ওনার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।”
আমার আব্বু বলল
“রাসেল তুমি হিয়ার সাথে রুমে গিয়ে কথা বলো।”
রাসেল হিয়ার সাথে ভিতরে গেল।রাসেল রুমের ভিতরে আসতেই হিয়া বলল
“ওই আপনি কার থেকে অনুমতি নিয়ে আমাকে দেখতে এসেছে?”
হিয়ার এমন কথাতে রাসেল কিছু চমকে গেল।সে হয়তো ভাবে নি হিয়া এই রকম কিছু বললে।তাই শান্তভাবে বলল
“আপনার আব্বুর সাথে কথা বলেই আমরা এসেছি।”
“তো আমার আব্বু অনুমতি দিয়েছে বলে চলে আসতে হবে।আমার থেকে অনুমতি নিয়েছে?”
“নাহ।”
“আপনি আমার বিষয়ে কিছু জানেন?”
“নাহ।”
“আমি একজনকে পছন্দ করি।”
“কাকে?”
“নেহালকে।”
“কিন্তু আমি যে আপনাকে ভালোবাসি।”
রাসেলের কথা শুনে হিয়ার মুখে হাত তাকিয়ে আছে।হিয়া ভেবেছিল ওকে দেখে হয়তো রাসেলের ভালো লেগেছে তাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে কিন্তু ভাবেনি ওকে ভালোবাসে বলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।হিয়া বলল
“ওই আপনি তো মাত্র একদিনই আমাকে দেখেছেন।”
“তাতে কি।আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি।”
“আমি এত কিছু শুনতে চাই না।আপনি এখন বাইরে গিয়ে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না।”
“আচ্ছা।”
“তাহলে দারিয়ে আছেন কেনো?যান এখন।”
রাসেল বাইরে চলে আসলো।হিয়া তো মহা খুশি।হিয়া মনে করেছে ওর কথাতে কাজ হয়েছে।রাসেলের পরিবার সব কথাবার্তা শেষ করে চলে গেল।কিছুসময় পর দিয়া হিয়ার রুমে এসে বলল
“ভালোই করেছো।তুমি বিয়ে করে চলে গেলে আমাদের রুমটা আমার একার হয়ে যাবে।”
“বিয়ে করে চলে যাবো মানে?”
“আজব!রাসেল ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তুমি কি আমাদের সাথে থাকবে নাকি?”
“কিন্তু আমি তো ওনাকে বলেছিলাম আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।সে যেনো বাইরে গিয়ে বলে তাকে আমার পছন্দ না।যেনো বিয়েটা না হয়।”
“বলো কি আপু!রাসেল ভাইয়া তো বললো তোমার নাকি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।তাই সবাই মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছে।”
“দেখছিস কি শয়তান।আমি বললাম কি আর ওনি করেছেটা কি।আচ্ছা তোর কাছে ওনার নাম্বার আছে?”
“আমার কাছে ওনার নাম্বার থাকবে কেনো?”
“সেটাও ঠিক।আচ্ছা নেহালের কাছে যাই।ওর কাছে থাকতে পারে।”
হিয়া নেহালের রুমে গেল।হিয়াকে রুমে দেখে আমি বললাম
“কিরে তুই তাহলে রাসেল ভাইকে বিয়ে করছিস?”
“আমাকে তো পাগলে পাইসে যে আমি ওনাকে বিয়ে করবো।”
“তুই তো বলছিস তোর নাকি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।”
“আরে সেটা আমি বলে নি।সেটা তোর বন্ধুর ভাই বলেছে তাও বানিয়ে বানিয়ে।”
“কিন্তু সে তো এমন করার ছেলে না।”
“ওই তুই চুপ থাকতো।এখন ওনার নাম্বারটা দে।”
ভ্রু কুচকে বললাম
“তুই রাসেল ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে কি করবি?”
“ওনার থেকে জানতে চাই কেনো ওনি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলল।এখন ওনার নাম্বার দে।”
“আমার কাছে তো রাসেল ভাইয়ের নাম্বার নেই।তাই রুমে যা।আমি রানার থেকে নাম্বার নিয়ে তোকে দিচ্ছি।”
“তাড়াতাড়ি দিয়ে যাস কিন্তু।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন যা তুই।”
হিয়া চলে যেতেই রাসেল ভাইকে কল দিলাম।কল রিসিভ করতেই রাসেল ভাই বলল
“হ্যা নেহাল বলো।”
“ভাই হিয়া তো সেই পরিমানে রেগে আছে আপনার ওপর।”
“তাই নাকি।তাহলে তো ভালো খবর।”
“আরে না।হিয়া এখন আপনার নাম্বার চাচ্ছে।আপনার সাথে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করতে চাচ্ছে।”
“সেটা তো আমি হতে দিচ্ছি না।আর তুমি তো হিয়াকে ভালোবাসো না অন্য কাউকে ভালোবাসো তাহলে ওকে নিয়ে আর চিন্তা করো না।এখন থেকে হিয়ার বিষয়টা আমি দেখছি।”
“যা করেন ভেবে চিনতে করিয়েন।হিয়া কিন্তু আমার বোনের সাথে ফ্রেন্ডও হয়।আশা করি আপনি আমার কথাটা বুঝতে পেড়েছেন।”
“আচ্ছা আমি হিয়ার সাথে কথা বলছি।এখন রাখছি।”
রাসেল ভাইয়ের সাথে কথা বলে শেষ করতেই ফারিয়া কল দিল।রিসিভ করে বললাম
“হ্যা ফারু বলো।”
“আগামীকাল একটু এই বাসায় আসতে পারবে?”
“কেনো কি হয়েছে?”
“বড় আব্বু তোমাকে দেখা করতে বলেছে।”
“আচ্ছা আসবো।”
এই দিকে রাসেল হিয়াকে কল দিলো।হিয়া নাম্বার দেখে কল রিসিভ করে বলল
“হ্যালো কে বলছেন?”
“আমি রাসেল।”
“ওই আপনি আমার পরিবারের কাছে মিথ্যা কথা বললেন কেনো?”
“যা বলেছি বেশ করেছি।পারলে বিয়ে আটকিয়ে দেখাও।”
“আপনি একটা শয়তান।আপনাকে সামনে পেলে যে কি করতাম তা নিজেও জানি না।”
“সমস্যা নেই।আমি নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালেই থাকি।যদি কিছু করতে মন চায় তাহলে এসে করতে পারো।”
রাসেলের কথা শুনে হিয়া রাগ করে কলটা কেটে দিল।রাতে ভাবি বলল
“নেহাল আব্বু তোমাকে বাসায় যেতে বলেছে।”
“হ্যা ফারিয়া আমাকে কল করে বলেছে।”
পাশ থেকে ভাইয়া বলল
“আব্বু নেহালকে কেনো যেতে বলেছে?”
“আমি কিভাবে জানবো।তুমি আব্বুর থেকে জেনে নেও।”
ভাইয়া আর কিছু বলল না।পরের দিন সকালে ভাবিদের বাসায় গেলাম।ড্রয়িংরুমে ভাবির আব্বুর সাথে দেখা।আমাকে দেখে বলল
“নেহাল তুমি এসেছো।আসো এইখানে বসো।”
ওনার পাশে বসলাম।রুমের ভিতর থেকে ফারিয়ার আব্বু আসলো।আমাকে দেখে বলল
“নেহাল তুমি!কেমন আছো বাবা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“ফারিয়ার কাছে এসেছো নাকি?”
“নাহ।আঙ্কেল আসতে বলেছেন।”
ভাবির আব্বু বলল
“এইখানে আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?”
“নাহ।বাসা থেকে এইখানে আসতে তো তেমন একটা দূর না।তা আঙ্কেল আমাকে যে আসতে বললেন আজ?”
“তোমার কথা মনে পড়েছিল তাই আসতে বললাম।আজ তোমার সাথে আড্ডা দেয়া যাবে কি বলো।”
“হ্যা সেটা তো দেয়ায় যায়।”
তাদের দুই ভাইয়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম।তারা দুজনই তাদের ছোট বেলার কথা বলছিল।তাদের পরিবারের বিষয়ে বলল।আমরা কথা বলছিলাম তখন ফারিয়া এসে বলল
“আরে তোমরা সেই কখন থেকে ওর সাথে কথা বলছো।ফ্রেন্ড হল আমার।গল্প করার কথা আমার সেই জায়গা তোমরা দুজন ওর সাথে গল্প করছো সেটা কি ঠিক।এই নেহাল ভিতরে চলো।এখন আমার সাথে আড্ডা দিবে।”
আমার হাত ধরে ফারিয়া ভিতরে নিয়ে গেল।আর ওনারা ফারিয়ার কান্ড দেখে হাসছে।
#চলবে…