#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১৫
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
রাসেল আর হিয়া সামনাসামনি বসে আছে।রাসেল বলল
“হ্যা হিয়া বলো কেনো ডেকেছো?”
“আপনি বিয়ের তারিখটা এগিয়ে নিয়ে আসেন?”
“কেনো কি হয়েছে?”
“নেহাল নাকি ফারিয়াকে বিয়ে করবে।ওদের বিয়ে হওয়ার আগে আমরা বিয়ে করবো ব্যাস।এখন আমি এত কিছু বলতে পারবো না।”
“আচ্ছা আমি কথা বলে দেখি কি হয়।”
“আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন আমাদের বিয়েটা এগিয়ে নিয়ে আসেন।পরে কিন্তু মুড চেঞ্জ হলে বিয়েই করবো না বলে দিলাম।”
“আচ্ছা আমরা নেহালের আগেই বিয়ে করবো এবার হ্যাপি।এখন চলো কোথা থেকে ঘুরে আসা যাক।”
“হুম চলেন।”
হিয়া আর রাসেল ঘুরতে বেড়িয়ে গেল।ওদের দুজনের সম্পর্কটা এখন বেশ ভালো।হিয়াও রাসেলকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছি কিন্তু নেহালকে এখন আর দেখতে পারে না হিয়া।তাই নেহালের বিয়ের কথা শুনে হিয়া নিজের বিয়েটা আগে করতে চাচ্ছে।এই দিকে দুপুরে খাবার খাওয়া শেষে ভাবি বলল
“নেহাল বিকালে আমার সাথে একটু বের হতে পারবে?”
“কেনো ভাবি?”
“একটা কাজ ছিল।আর তোমার ভাই আসতে লেট হবে তাই তোমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম।””
“আচ্ছা ঠিক আছে ভাবি।যাওয়ার আগে বইলেন তাহলেই হবে।”
বিকালে ভাবি এসে বলল এখন নাকি বাইরে যাবে।রেডি হয়ে ভাবির সাথে গেলাম।ভাবি আমাকে নিয়ে ইমাহার শোরুমে নিয়ে গেল।বলল
“ভাই দেখো তো এইখান থেকে একটা বাইক নিলে কোনটা ভালো হবে?”
“তা ভাবি বাইক কার জন্য?ভাইয়ার জন্য?”
“না নেহাল।ওর তো বাইক একটা আছে।আমার একটা ভাই আছে ওকে গিফট করবো তাই।দেখো তো কোনটা নিলে ভালো হবে।”
“তা তোমার ভাইয়ের বয়স কেমন?মানে বেশি ছোট নাকি?”
“আরে না।তোমার মতই হবে।তুমি একটু পছন্দ করে দেও না ভাই।”
পরে শোরুমটা ঘুরে একটা বাইক পছন্দ হল।ইমাহার এক্স এস আর ১৫৫।বাইকটা দেখতে বেশ লাগছে।ভাবিকে বললাম
“ভাবি এই বাইকটা ভালো হবে।”
“তোমার কাছে ভালো লেগেছে।”
“কি যে বলো না ভাবি।বাইকটা খুব ভালো।তোমার ভাইয়ের কাছেও ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি পেমেন্টটা করে ঠিকানাটা দিয়ে আসি।”
আমি বাইরে এসে দারিয়ে আছি।কিছুসময় পর ভাবি বাইরে আসলো।ভাবিকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।রাতে ফারুকে কল দিলাম।
“হ্যা নেহাল বলো।”
“তুমি এখন কোথায় ফারু?”
“আমি তো একটু বাইরে এসেছি।”
“ওহ।আমাকে বললে না যে।তাহলে আমিও যেতাম তোমার সাথে।”
“তোমাকে বলার দরকার মনে করি নি।তাই বলি নি।”
“তা কি এমন কাজে বাইরে গেলে যে আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলে না।”
“নেহাল এত কথা পেঁচিয়ো না তো।এখন রাখছি।”
ফারু কলটা কেটে দিল।ফারুর আচারনে অনেকটা মন খারাপ হয়ে গেল।ভাবিনি ফারু আমার সাথে এইভাবে কথা বলবে।রাতে আর খেতে গেলাম না।আম্মু আর ভাবি অনেকবার ডেকেছিল কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ডাকছে।হাত ধরে টানছে।চোখ খুলে দেখি সামনে ফারু।এখন মনে হয় স্বপ্নেও ফারুকে দেখছি।হুম তাই হবে।আবার ঘুমিয়ে গেলাম।হঠাৎ গাড়ে ব্যথা অনুভব করলাম।লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম।ঘাড়ে মনে হয় কেউ কামড় দিয়েছে।ইস অনেক ব্যথা করছে।কিন্তু কামড়টা দিলো কে আমাকে? আরে ফারিয়া এইখানে! তাহলে এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম না।ফারু বলছে
“এই নেহাল তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি কিন্তু তুমি ঘুম থেকে উঠছোই না।”
“আমার ঘাড় জ্বালা করছে কেনো?”
“কি আর করবো বলো।সে কখন থেকে ডাকছি কিন্তু তুমি উঠছিলে না।তাই ঘাড়ে কামড় দিতে বাধ্য হয়েছি।এখন কাছে এসো আদর করে দেই।”
“লাগবে না তোমার আদর।আর এইখানে কি করছো তুমি?”
“কি করছি মানে!আমার হবু বরের বাসা।বরের রুম আমি আসবো না তো কে আসবে শুনি?”
“আরে আমি কি সেটা বলেছি নাকি।বলছি যে তুমি এত রাতে আসলে যে?”
“তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
“কি সারপ্রাইজ?”
“সেটা তো বলা যাবে না।”
“এই এই কি করছো।আমার চোখ বাধছো কেনো?
“বেশি কথা না বলে আমি যা করছি তা করতে যেও নাহলে তোমার খবর আছে।”
কিছু বললাম না।ফারু আমার চোখ ভালো ভাবে কাপড় দিয়ে বেধে বলল
“এবার আমার সাথে এসো।কোনো কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
ফারু আমাকে কোথায় জানি নিয়ে যাচ্ছে।সিড়ি দিয়ে উঠার সময় বুঝলাম হয়তো ছাদে নিয়ে যাচ্ছে।কিছুসময় পর এক জায়গা দাড় করিয়ে রেখেছে।
“এই ফারু এবার কি কাপড়টা খোলা যাবে?”
“না এখন না আর একটু পর।”
পাশ থেকে কেউ একজন ফিসফিস করে কথা বলছে।কিছু বুঝতে পারছি না।কিছুসময় পর কেউ বলল
“ভাইয়া এখন চোখ খুলুন।”
চোখ খুলতেই
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!”
সবাইকে একসাথে এইভাবে দেখে আমি আসলেই সারপ্রাইজ।এক এক করে সবাই উইশ করলো।আম্মু আব্বু গিফট দিলো সিলেটের বাসাটা।ভাবি হাতে একটা চাবি দিয়ে বলল
“আমার পক্ষ থেকে বাইক।গিফট পছন্দ হয়েছে।”
ভাবির কথা শুনে হাসলাম।আমার পছন্দ করা বাইক আমাকেই গিফট দিয়েছে।ভাবিদের বাসা থেকে ফারু তানহা আর লিজা এসেছে।তানহা আর লিজা ঘড়ি গিফট দিয়েছে।এখন শুধু ফারুর গিফট বাকি।কিন্তু ও তো কিছুই দিলো না।দেখলাম সবার জন্য কাচ্চিবিরিয়ানি আনা হয়েছে।ছাদে বড় টেবিলে সবাই বসলো খেতে।কিন্তু আমি আর ফারিয়া ছাড়া।ভাবি বলল
“নেহাল তুমি আর ফারিয়া ছাদের ওই দিকে বসো।ওই দিকে তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
কেউ আর কিছু বলছে না।তাই ফারুর সাথে ছাদের ওই দিকে গেলাম।কিছু বলছে না ফারু।খাবারটা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।এবার চুপ থাকতে না পেরে বললাম
“আচ্ছা ফারু একটা বলি?”
“আমি জানি তুমি কি বলবে।”
“বলো তো আমি কি বলতে চাচ্ছি?”
“আমি কেনো কোনো গিফট দেই নি তাই না।”
“হ্যা।সত্যি বলতে সবাই কিছু না কিছু দিয়েছে। কিন্তু তুমি তো কিছুই দিলে না কেনো?”
“আমি আজ কিছু দিতে আসি নি।নিতে এসেছি।আজ তুমি আমাকে গিফট দিবে।”
“এইটা এবার কেমন কথা ফারু!”
“এটাই কথা।এখন বলো তুমি গিফট দিবে কি না?”
ফারু যখন এত করে বলছে তাহলে ওকে কিছু দিতেই হবে।ভেবে বললাম
“আচ্ছা বলো তোমাকে জন্য কি গিফট দিতে হবে।”
“আমার তিনটা বেবি লাগবে।আর পরের বার তোমার জন্ম দিনে যেনো আমার কোলে আমার বেবি থাকে।”
ফারু কথা শুনে হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।মানুষ গিফট হিসেবে কোনো জিনিস চায়।কিন্তু প্রথমবার শুনলাম কারো বেবি লাগবে তাও আবার তিনটা।বিয়ের আগে কেউ এইসব নিয়ে চিন্তা করে সেটা আমার জানা ছিল না।আমি চুপ করে ফারুর দিকে তাকিয়ে আছি।আর ফারু আমাকে আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া শেষে ফারু বলল
“আমি যেনো আমার গিফট গুলো পেয়ে যাই।মনে থাকবে তো?”
“এই গুলো কেউ গিফট চায়!অন্য কিছু চাও।”
“আমার এইগুলো লাগবে।তুমি আমার আমার গিফট দিবে কি না সেটা বলো।”
“অন্য কিছু চাও প্লিজ।”
“বুঝেছি তুমি দিবে না তাই তো।সমস্যা নেই আমি সেটারও ব্যবস্থা করছি।একটু অপেক্ষা করো।”
আমাকে রেখে ফারু বাকিদের কাছে চলে গেল।কিছুসময় পর ফারিয়া আসলো সাথে আম্মু আর ভাবিও এসেছে।ফারুকে দেখলাম কিছুটা কাঁদোকাঁদো ফেস করে দারিয়ে আছে।আম্মু বলল
“কিরে নেহাল তুই ফারিয়াকে এই সব কি বলেছিস?”
আম্মু কথা শুনে কিছুটা আটকিয়ে উঠলাম।তার মানে ফারু আম্মুকে ওই সব কথা বলে দিয়েছে।কিছুটা আমতাআমতা করে বললাম
“আম..মু কি বলে..ছি আমি?”
“তুই নাকি বলেছিস এখন বিয়ে করার দরকার নেই।ভালোভাবে প্রেম করে তারপর নাকি বিয়ে করবি।এইটা কোনো কথা হল তোর?তোরা তো বিয়ের পরেও প্রেম করতে পারবি তাই না।আমি দুই তিনদিনের মধ্যে ওদের বাসায় গিয়ে তোদের বিয়ের কথা ঠিক করে আসবো।বিয়ের পরে যত ইচ্ছে প্রেম ভালোবাসা করিস।তখন তোদের কেউ কিছু বলবে না বুঝেছিস।”
আম্মুর কথা শুনে মাথাটা পুরো চক্কর দিয়ে উঠলো।আমি এই সব কথা কখন বললাম ফারুকে?ও দেখি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে।ফারুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখে দুষ্টু হাসি।ফাজিল মেয়ে আমাকে ফাঁসানো পুরো ব্যবস্থা করে এসেছে।
#চলবে…
[গল্পটা মনে হয় এখন আর আগের মত ভালো হচ্ছে না।তাই ভাবছি এই গল্পটা আর কয়েক পর্ব দিয়েই শেষ করে দিবো।ইচ্ছে ছিল গল্পটা আরো কিছুটা বড় করার কিন্তু সবার কাছে ভালো না লাগার কারনে আর ২/৩ পর্বে শেষ করে দিবো।সবাইকে ধন্যবাদ]