#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১৬
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
আম্মুর কথা শুনে মাথাটা পুরো চক্কর দিয়ে উঠলো।আমি এই সব কথা কখন বললাম ফারুকে?ও দেখি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে।ফারুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখে দুষ্টু হাসি।ফাজিল মেয়ে আমাকে ফাঁসানো পুরো ব্যবস্থা করে এসেছে।
আম্মু চলে গেল।ফারিয়া আমি আর ভাবি আছি।ভাবিকে বললাম
“ভাবি দেখছো তোমার বোন আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে।আমি এমন কিছুই বলি কি।”
“আমি জানি।এখন তাহলে ফারিয়া যা বলেছে তাতে রাজি হয়ে যাও।”
“মানে!কি বলছো ভাবি।”
“হ্যা ভাই ঠিকই বলছি।ফারিয়া যা বলছে তাতে রাজি হয়ে যাও।তাহলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ভাবিও হাসছে ফারিয়ার সাথে।দুই বোন তাহলে প্লান করেই এসেছে।ধুর ভালো লাগে না।চলে আসলাম ওইখান থেকে।ভাইয়াকে দেখলাম একা একা দারিয়ে আছে।গিয়ে বললাম
“একা একা কি করছো এইখানে?”
“ভাবছি।”
“কি ভাবছো ভাইয়া?”
“তুই কি আমার ভাই নাকি শত্রু।”
“মানে!আমি আবার তোমাকে কি করলাম ভাইয়া।”
“জন্মদিন তোর গিফট দিয়েছে তোর ভাবি কিন্তু সেটার বিল আমাকে কেনো দিতে হয়?”
“কারন ও তোমার ভাই।আর তুমি দিবে না তো কে দিবে?আমি কি এখন আব্বু থেকে টাকা এনে তারপরে কাউকে কিছু গিফট করবো নাকি?তাহলে সেটাও বলে দেও।সামনে আর তোমার থেকে কোনো টাকা নিবো না।টাকার দরকার হলে আব্বুর থেকে নিয়ে নিবো।”
হঠাৎ ভাবি এসে এই সব কথা বলল।ভাইয়া তো পুরো বিড়ালের মত শান্ত হয়ে গেছে।ভাইয়া ভাবিকে বলল
“আমি কি সেটা বলেছি বলো?আর তুমি কেনো তোমার আব্বুর থেকে টাকা আনতে যাবে।তোমার টাকার দরকার হলে আমাকে বলবে।আমি দিবো ঠিক আছে।”
“তাহলে নেহালকে একটু আগে কি সব বলছিলে।”
“ওইটা তো এমনেই বলেছি।”
“এমনেই তাই না।আজ রুমে ঘুমাতে আসো তখন বুঝাবো।”
ভাইয়া ভাবির কাহিনী দেখে ফারু তানহা লিজা আর তাদের সাথে আমি হাসছি।ভাবি আর ভাইয়া চলে গেল।লিজা আমাকে বলল
“তা ভাইয়া আপুকে কি আপুর গিফটটা দিয়েছেন?”
লিজার কথায় বাকা চোখে ফারুর দিকে তাকিয়ে আছি।ফাজিল মেয়ে সবাইকে এক কথা বলে বেড়াচ্ছে।তানহা বলল
“কি ভাইয়া বললেন না যে,গিফট দিয়েছেন আপুকে?”
“নাহ সেটা এখন না।বিয়ের পরে দিবো।”
“তা কি এমন গিফট ভাইয়া যেটা এখন না বিয়ের পরে দিবেন?”
আমি কিছু বললাম না।ফারু বলল
“এই তোর সেটা জানা লাগবে না।নেহাল যেহেতু বলেছে দিবে তাহলে সেটা আমাদের বিয়ের পরেই দেখিস এখন যা তোরা।”
তানহা আর লিজা চলে যেতে যেতে বলছিল
“কি এমন গিফট দিবে যেটা এখন না বিয়ের পরে দিবে।”
“আমিও তো সেটাই ভাবছি।মনে হয় কোনো স্পেশাল গিফট হবে।”
এই সব বলতে বলতে ওরা চলে গেল।তিনদিন পরে সবাই মিলে ভাবিদের বাসায় গেল।আমার অফিস থাকায় আমি যেতে পারি নি।আম্মু আর ভাবি মিলে একুশ দিন পরে আমার আর ফারিয়ার বিয়ে ঠিক করলো।ফারু তখনি ফোন দিয়ে আমাকে বিয়ের বিষয়টা জানিয়ে দেয়।ফারুর কথা শুনে বুঝলাম ও খুব খুশি।
রাতে বাসায় এসে দেখলাম বাসায় মামা মামি আর দিয়া এসেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে দিয়াকে বললাম
“এই দিয়া হিয়া কোথায় রে?হিয়া আসে নি?”
“আর বইলো না ভাইয়া।আপুকে তো এখন পাওয়াই যায় না।”
“কেনো কি হয়েছে?”
“আপু তো এখন বেশিভাগ তার হবুর সাথে থাকে।দেখে মনে হয়ে বহু বছরের প্রেম তাদের।”
“তাই নাকি।তাহলে তো একবার দেখতে হয় কি বলিস?”
“কয়েকদিন আগে আপু কি বলেছে জানো ভাইয়া?”
“কি বলেছিল।”
“আপুর কাছে নাকি এখন প্রেম করার সময়টা কম মনে হয়।একদিনে চব্বিশঘণ্টা না হয়ে আটচল্লিশ ঘন্টা হতো তাহলে নাকি ঠিক ছিল।”
“বলিস কি! হিয়া তো মনে হয়ে প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছে।”
“এখন ফোন দিয়ে দেখো হবু বরের সাথে কোথাও প্রেম করছে।”
“এখন না পরে দেই।আচ্ছা আজ কি হিয়া আসবে?”
“হ্যা।কথা হয়েছিল আমার।তাদের আজকের প্রেম শেষ হলে নাকি তার হবু বর এইখানে দিয়ে যাবে।”
হিয়ার এমন আজগবি কাহিনী শুনে আমি আর ভাবি হাসলাম।রাতে খাবার খেতে বসার সময় হিয়া বাসায় আসলো।বলল
“আমার জন্য খাবার দেও।আমিও খাবো।”
সবাই হিয়ার জন্য একটু অপেক্ষা করলো।হিয়া ফ্রেশ হয়ে আমার পাশে খেতে বসলো।একটু পর খেতে খেতে বলল
“শুনলাম সবাই মিলে নাকি তোর আজ বিয়ে ঠিক করে এসেছে?তা বিয়ে কবে?”
“হ্যা।একুশ দিন পরে ঠিক হয়েছে।”
“কি বলিস এত তাড়াতাড়ি!তুই থাক আমি আসছি।”
হিয়া খাবার রেখেই রুমে চলে গেল।সবাই কিছুটা অবাই হয়েছে।আম্মু মামিকে বলল
“ওর আবার কি হল?এইভাবে খাবার রেখে চলে গেল কেনো?”
“আমি তো ঠিক জানি না আপা।”
পাশ থেকে দিয়া বলল
“আম্মু আপু ওর হবু বরকে কল দিতে গেছে।একটু পরে চলে আসবে।”
আম্মু বলল
“এখন আবার রাসেলকে কেনো কল দিবে?”
“ফুঁপি সেটা না হয় আপু আসলেই আপু থেকে জেনে নিও।”
কিছুসময় হিয়া আবার আসলো খাবার খেতে।তখন আম্মু বলল
“কিরে হিয়া হঠাৎ করে তখন খাবার রেখে উঠে গেলি কেনো?”
“তেমন কিছু না ফুঁপি।একটা কাজ ছিল তাই।আর আব্বু শুনো।”
মামা বলল
“হ্যা হিয়া বল।”
“একটু পরে ওনি তোমাকে কল দিবে।বিয়ের তারিখটা মনে হয় এগিয়ে আনবে।ওনি যেদিন বিয়ের কথা বলবে সেই দিনই আমাদের বিয়ে হবে বুঝেছো।”
“হঠাৎ বিয়ের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসার কারন কি?”
“আমি কিভাবে জানবো।আমাকে বলেছে নাকি?এখন ওনি যা বলে তাই করো।”
কেউ আর কিছু বলল না।আমিও আর সেই বিষয়ে কথা বাড়ালাম না।একটু পর মামার কাছে কল আসলো।মামা কথা শেষ করে জানালো দুই সপ্তাহ পরে নাকি রাসেল ভাই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে।বাসার সবাই কথাটা শুনে অনেকটা অবাক হল।একমাসের ভিতরে দুইটা বিয়ে।একটা আমার আরেকটা হিয়ার।সবাই ভাবনার পরে গেল কিছুটা।
ঘুমানোর আগে ফারুকে কল দিলাম।
“হ্যালো ফারু।”
“হ্যা বাবুর আব্বু বলো।”
“এইখানে তো একটা সমস্যা হয়ে গেছে।”
“কি হয়েছে?”
“হিয়ার বিয়ের তারিখ এগিয়ে এনে দুই সপ্তাহ পর ঠিক হয়েছে।”
“হঠাৎ বিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসার কারন?”
“সেটা তো জানি না।রাসেল ভাই কল দিয়ে বলেছে মামাকে।”
“আচ্ছা হিয়ার বিয়ে ওই দিনই হবে সমস্যা নেই।আর আমাদের বিয়ে যেই দিন ঠিক হয়েছে সেই দিনই হবে।এখন আমি যা যা বলছি সেটা করো তাহলেই হবে।”
তার পরে ফারু আমাকে কিছু কথা বুঝিয়ে বলল।সব শুনে আমার কাছে ফারুর কথা গুলো ভালোই লাগলো।দুই দিন পর থেকে হিয়ার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেল।
#চলবে…