#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব-২৬
Writer Taniya Sheikh
প্যালেসে ফিরে যাওয়ার পথ রুদ্ধ। ওদিকটাতে নাৎসি সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। অন্য কোনো দিক দিয়ে ফেরার আর উপায় নেই। নিকোলাস একা হলে সমস্যা হতো না। ধোঁয়া হয়ে বাতাসে মিশে সে যে কোনোখানে চলে যেতে পারে। কিন্তু ইসাবেলা মানুষ। লোকচোখে সে পড়বেই। এদিকে রাতও শেষ হওয়ার পথে। ভোরের সূর্যোদয়ের আগেই অন্ধকার নির্জন স্থান খুঁজতে হবে। হাতে সময় কম।
“পিঠে ওঠো।”
“আবার!”
“হ্যাঁ।”
“না, আর উঠব না। হেঁটে যেখানে যাওয়ার চলুন।”
ইসাবেলা রুষ্ট মুখে বলে হাঁটা ধরলো। চাঁদের আলোতে ঝোপেঝাড় পাশ কাটিয়ে সামনে এগোয়। নিকোলাস রাগটা দমিয়ে শুধায়,
“ওদিকে কোথায় যাচ্ছ শুনি?”
“জানি না।” এদিক ওদিক তাকিয়ে আগাথাকে খোঁজার চেষ্টা করল ইসাবেলা। দেখা দিয়ে একটু সংকেত টংকেতও তো দিতে পারে। এই পিশাচটার সাথে থাকতে ওর একটু ইচ্ছে করছে না। বিড়বিড় করে বারকয়েক ডাকল,”আগাথা, আগাথা।”
না! কোনো চিহ্নই নেই তাঁর। রাগে জোরে জোরে পা ফেলে এগোয়। পেছন থেকে নিকোলাস ধমকে ওঠে,
“বেলা, থামো বলছি।”
ইসাবেলা উপেক্ষা করল সেই ধমক। নিকোলাস মুহূর্তে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। রেগে আছে। মুখটা আর হুডির আড়ালে ঢাকা নেই। জ্বলন্ত লাল চোখ দুটো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। শ্বদন্ত বেরিয়ে এসেছে এবার। ইসাবেলার বাহু সজোরে চেপে ধরে মুখটা খুব কাছে এনে বলল,
“তোমাকে থামতে বলেছিলাম আমি, বেলা। কেন শুনছ না আমার কথা তুমি? বার বার অসম্মান করছ আর বার বারই তোমাকে ক্ষমা করতে হচ্ছে। ধৈর্যের একটা সীমা আছে।”
“কে চেয়েছে ক্ষমা? মেরে ফেলুন। শেষ করে ফেলুন আমাকে।” শান্ত স্বরে বেশ স্বাভাবিক মুখে বলল ইসাবেলা। পরস্পরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওরা। নিকোলাসের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ইসাবেলার চোখের স্থিরতা দেখে। ভয় নেই তাতে। নিকোলাস কিছুতেই এই ঔদ্ধত্য বরদাস্ত করবে না। বাহু ছেড়ে ইসাবেলার চোয়াল চেপে ধরে।
“মরার খুব শখ তোমার তাই না? হবেও বা না কেন? বিয়ের দুদিন আগে যার হবু স্বামী পালিয়ে যায় সে বেঁচে থাকতে চাইবে কোন মুখে? তোমাকে কেন মারছি না জানো বেলা? বড্ড করুনা হয় তোমার ওপর। যাকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসলে সেই ছেড়ে পালিয়ে গেল। বেচারী!”
ঠিক হৃদয়ের পুরোনো ক্ষতটাতে ফের একচোট খোঁচা দিলো নিকোলাস। ইসাবেলার চোখ আগুনের ফুলকি ন্যায় জ্বলছে। দু’হাতের শক্তি দিয়ে নিকোলাসের বুকে আঘাত করে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু পারে না। চোয়াল শক্ত করে ধরেছে নিকোলাস। এই ব্যথা কিছুই না ওর কথার আঘাতের চেয়ে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ইসাবেলার। দাঁতে দাঁত কামড়ে কান্না চেপে রেখেছে। কোনো কথায় আর বলবে না নিকোলাসের সাথে। কীভাবে বলবে? কান্না ছাড়া আর যে কিছু আসছে না। শত চেষ্টার পরও ওর চোখ দুটো বেঈমানী করল। অশ্রু বিসর্জন দিলো আঁখিজোড়া। নিজেকে আজ সেই দুর্বল ইসাবেলা মনে হলো, যে পিটারের নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বিরহে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল।ভগ্নহৃদয়ের সেই ব্যথা পুনরায় আজ একইভাবে ফিরে এলো। ইসাবেলার বন্ধ ভেজা নেত্রপল্লবের দিকে চেয়ে নিকোলাসের ভেতরের পিশাচসত্ত্বার পৈশাচিক হাসি উবে যায়। ছেড়ে দিলো ওর চোয়াল। ঠিক সাথে সাথে ধপ করে হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পড়ে ইসাবেলা, নিকোলাসের পায়ের কাছে। দু’হাতে মুখ ঢেকে উবু হয়ে কাঁদতে লাগল। ভালো যে বেসেছে সেই জানে ব্যর্থতায় কত জ্বালা! কত গভীর এর ব্যথা। ইসাবেলাকে নত করতে সেই ব্যথা নিয়ে উপহাস করেছে নিকোলাস। ভালো তো কোনোদিন কাওকে বাসেনি, বুঝবে কী করে বিরহের ব্যথা কতখানি! ইসাবেলার কান্না নিকোলাসের পিশাচসত্ত্বাকেও স্তব্ধ করে দেয়। নিজের ওপর খুব রাগ হলো নিকোলাসের। নির্দয়, পাষাণ! তিরস্কার করল নিজেকে। ইসাবেলার সোজাসুজি বসল সে। ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো পরম আদরে। ইসাবেলা চুপচাপ ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। নিকোলাস অনুতাপের সাথে নরম গলায় বলল,
“আ’ম সরি বেলা। আ’ম সরি।”
ইসাবেলার যেন ঘোর কাটল। সাথে নিকোলাসেরও। ছিটকে সরে বসল দুজন। রাগে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে ইসাবেলার। তাকাচ্ছে না নিকোলাসের দিকে। নিকোলাসের ছায়াও দেখতে রাজি না এই মুহূর্তে। নিকোলাস উঠে দাঁড়ায়। আ’ম সরি বলেছে! শব্দ দুটো ফিরিয়ে নেওয়া গেলে তাই করত হয়তো। দূর্ভাগ্য তা আর সম্ভব না। ওরা এই মুহূর্তে জঙ্গলের কোনদিকে আছে ঠিক জানে না। আশেপাশে কোথাও ঝরণা আছে। রাতের নিস্তব্ধতার সাথে বড়ো ভাব করে ঝরছে ঝরনার জল। সকরুণ তার সুর। গাছ, গুল্মলতায় ছড়াছড়ি চারিদিক। থেকে থেকে দু একটা পেঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে। ইসাবেলা উঠে কাপড় ঝেড়ে নেয়। এখনও কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর দেহ। নিকোলাস শান্ত গলায় বলল,
“ভোর হতে বেশি সময় নেই। আমাকে নির্জন অন্ধকার একটা জায়গা খুঁজতে হবে। চলো আমার সাথে।”
কোনো উচ্চবাচ্য না করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল ইসাবেলা। নিকোলাস একদৃষ্টে ওর অবনত মুখটা দেখল। তখন চোয়াল চেপে ধরায় আঙুলের ছাপ পড়ে আছে ওর সুন্দর মুখে। খারাপ লাগল বড্ড নিকোলাসের। ঘুরে দাঁড়ায় সে।
“পায়ে হেঁটে জায়গাটা ভোরের আগে খুঁজে বের করা অসম্ভব। পিঠে চড়ো।”
এবারো নিকোলাসকে অবাক করে একটু ইতস্তত করে পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে ইসাবেলা। মুচকি হাসল নিকোলাস। ওর গায়ের ঘ্রাণ লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। ইসাবেলা অবশ্য তা টের পেল না। খুব অস্বস্তি হচ্ছে ওর। চিৎকার করে আবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে অথবা এক ছুটে নিকোলাসের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারলে শান্তি পেত।
“পা তোলো।”
ইসাবেলা সময় নেয় পা তুলতে। পা দিয়ে নিকোলাসের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে দু ফোটা অশ্রু ফেলে। না, এ কষ্টের অশ্রু নয়। ক্রোধ ক্ষয়ে ক্ষয়ে নোনাজল গড়াচ্ছে। দূর্ভাগ্য! ও পিশাচ শেষ করার কৌশল জানে না। জানলে আজ এই মুহূর্তে নিকোলাসকে শেষ করত। এই অসহায়ত্বের অবসান ঘটাত। ঘৃণা করে নিকোলাসকে, প্রচণ্ড ঘৃণা করে। নিকোলাস ইসাবেলাকে পিঠে করে বনের ওপরের দিকে যেখান থেকে ঝরনার জল পড়ার শব্দ আসছে সেদিকে ছোটে। ঝরনার আশেপাশে তেমন নিরাপদ স্থান খুঁজে পেল না। ওরা আরো ওপরে উঠল। রাত শেষ হতে বেশি সময় বাকি নেই। নিকোলাস বিচলিত হয়ে পড়ে। ইসাবেলা এখনও বুঝে উঠছে না কেন এখানে নিকোলাস? সেই তাকে প্যালেস ছেড়ে যেতে বলেছিল। তাহলে আবার কী চাই? খুব ইচ্ছে করছে প্রশ্নটা করতে। কিন্তু না, সে ওর সাথে কোনো কথায় আর বলবে না। মুখ খুললেই আঘাত করবে নিকোলাস তাকে। হয় শরীরে নয় মনে। একেবারে মেরে ফেলে না কেন?
“বলল না তোকে করুনা করে। বেচারী ভাবে।”
দ্বিতীয় সত্তা বলল। আবার কান্না পায় ইসাবেলার। ক্রোধ বাড়ে নিকোলাসের ওপর। কাঁধে ইসাবেলার হাতের চাপ বাড়তে গতি শ্লথ করে নিকোলাস। কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ইসাবেলা বলে ওঠে,
“ওই যে একটা গুহা দেখা যায়।” বলেই জিহবা কামড়ে ফেলল। নিকোলাসকে সাহায্য করছে সে! ইচ্ছে হলো নিজের গলা নিজে টিপে ধরতে। নিকোলাস ওর অবস্থা বুঝে মুচকি হাসল। গুহার সামনে যেতে তাড়াতাড়ি গলা ছেড়ে দেয়। কোমর ছেড়ে মাটিতে পা রাখে ইসাবেলা। নিকোলাস একপলক তাকালেও কিছু বলল না। গুহার দিকে এগোতে থেমে গেল। বলল,
“তুমি এখানেই দাঁড়াও। আগে গিয়ে ভেতরটা দেখে আসি। এসব গুহার ভেতরটা সচরাচর নিরাপদ হয় না।”
ইসাবেলা মাথা নাড়িয়ে আশপাশে তাকানোর ভান করে। নিকোলাস চোখের পলকে গুহার ভেতর ঢুকে গেল। গুহার সামনে বেড়ে উঠেছে ঝোপঝাড়। চাঁদের আলো স্নাত এদিক। ঝোপঝাড় থেকে আগত ঝিঁঝিপোকার ডাক থেমে গেল হঠাৎ। ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকায় ইসাবেলা।
“ইসাবেলা”
ডাকটা ঠিক বা’পাশ থেকে এলো। আগাথা ডাকছেন। বেঁটেমতো অজানা এক বুনো গাছের আড়াল থেকে। গাছটাকে জড়িয়ে ধরেছে অনেকগুলো গুল্মলতা। আগাথা গুহার দিকে চেয়ে একটু যেন ভেবেচিন্তে এগিয়ে এলেন।
“আগাথা! কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? নিকোলাস আমাকে_”
“হুশ, আমি সব দেখেছি।”
“এখন আমি কী করব? কিছু একটা উপায় করুন এখান থেকে যাওয়ার।”
“এখান থেকে যাবে না তুমি।”
“কী বলছেন? ওই পিশাচটার সাথে গুহায় থাকতে বলছেন আমাকে?”
“হ্যাঁ”
“তবে ওকে শেষ করার কৌশল বলে দিন।”
“এখনই না।”
“এখনই না?”
আগাথা মাথা নাড়ায় দুদিকে।
“মনে নেই আমি কী বলেছি? আগে সেসব করতে হবে তোমাকে। তারপর__” আগাথা থেমে গেলেন। সতর্ক হয়ে তাকালেন গুহার মুখের দিকে। ইসাবেলা অধৈর্য হয়ে বলল,
“তারপর?”
“আমি পরে আবার আসব ইসাবেলা। এখন আর কোনো কথা নয়। নিকোলাস যেভাবে বলবে তাই করবে। আপাতত এই তোমাকে উপদেশ দিলাম। চলি।”
চোখের নিমেষে উধাও হলো আগাথা। ইসাবেলা হতাশ, বিরক্ত গলায় বলল,
“আবার উধাও হলো।”
“কে আবার উধাও হলো?”
নিকোলাসের গলা শুনে চকিতে তাকায়। আগাথার উধাও হওয়ার কারণ তাহলে এই! প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিকোলাস। ইসাবেলা দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইল, কেউ না। নিকোলাস অপলক চেয়ে রইল। হঠাৎ ওর ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসি জেগে ওঠে। গুহার মুখের দিকে ঘুরে বলল,
“ভেতরে সব ঠিক আছে। এসো।”
মাকড়সার অভয়ারণ্য, শ্যাওলা ধরা গুহার চতুর্দিক, বন্য প্রাণীর বিষ্ঠাভরা উৎকট গন্ধ গুহার ভেতরে। পেট উগলে বমি আসার উপক্রম হলো ইসাবেলার। এ পর্যন্তই চাঁদের আবছা আলো পৌছেছে। গুহার আরো ভেতরে ঘুটঘুটে আঁধার। থেমে দাঁড়ায় ওরা। নিকোলাস ঘুরে বলল,
“তুমি দুপুর পর্যন্ত এখানেই থাকবে। এখানে মানে এখানে।” তর্জনী তুলে ওদের দাঁড়ানোর স্থানটা নির্দেশ করে। এই বিশ্রী গন্ধভরা, পোকামাকড়ের অভয়ারণ্যে কী করে থাকবে ইসাবেলা? সবাইকে নিজের মতো অমানুষ, জানোয়ার ভেবেছে নিকোলাস? দেখছে নাক মুখ চেপে আছে সে তারপরও বলছে এখানেই থাকতে হবে। নেহাৎ কথা বলবে না বলে পণ করেছে নয়তো ঝগড়া হয়ে যেত।
“হুম, তারপর আবার তোমাকে আচ্ছা মতো দিতো।”
“সেই কারণেই চুপচাপ সয়ে যাচ্ছি।” দাঁত কিড়মিড় করে মনকে জবাব ইসাবেলা। একবার নিকোলাস ঘুমিয়ে যাক। তারপর গুহা থেকে বেরিয়ে যাবে। দুপুরে ও জেগে ওঠার আগে এখানে ফিরে আসবে। আগাথার পরামর্শে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে থাকতে হচ্ছে নিকোলাসের সাথে। ভ্যালেরিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে সে। এর জন্য যা সহ্য করা হয় করবে, মরতে হয় মরবে।
নিকোলাস অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার আগে পুনরায় ফিরে আসে। ভেবেছিল খুব কড়া করে চূড়ান্তভাবে সাবধান করবে। ভয় দেখাবে যেন ওর অনুপস্থিতিতে গুহা ছেড়ে না বেরিয়ে যায়। এই মেয়ের ভরসা নেই। দেখা গেল আবার নতুন একটা বিপদের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সকল কথায় নিকোলাস ভুলে গেল ইসাবেলার ঠোঁটে তাকাতে। ভাবুক মুখে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে আছে ইসাবেলা। গুহার ছোট্ট ছিদ্র গলে চাঁদের আলো পড়েছে ওর মুখে। নিজের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণ হারালো নিকোলাস। প্রসঙ্গ ভুলে গেল। ইসাবেলা ভুরু কুঁচকে তাকাতে ঝুঁকে যায় ওর মুখের দিকে। এতটা ঝুঁকে যায় যে ওদের ঠোঁটের মাঝে অতি সামান্য ফাঁক থাকে। ইসাবেলা সম্মোহিত হয় নিকোলাসের চোখে চোখ রাখতে। চাপা সম্মোহনী গলায় নিকোলাস বলে,
“তোমার পাতলা গোলাপি ঠোঁটদুটো বড়ো প্রলুব্ধ করে আমায়। যেন বলে, এসো প্রিয়, দখল করো আমাকে। স্বৈরাচারের মতো অধিকার করো আমায়।” থামে নিকোলাস। গভীর নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো নাক টানে। আরো ঝুঁকে আসে। ইসাবেলা টের পাচ্ছে ওর বুকের বা’পাশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। সে সরে দাঁড়াতে চায়, ঠেলে সরাতে চায় নিকোলাসকে। কিন্তু কীভাবে করবে? সমস্ত শরীর ওই নীল সিন্ধু আঁখির মোহে মোহাচ্ছন্ন। চেতনা থেকেও তা যেন অসাড়। আজ যদি নিকোলাস ওকে চুমু খায় ও ছাড়বে না নিকোলাসকে। কঠিন শাস্তি দেবে। ভেতরটা ক্রোধে ফেটে পড়ছে। প্রার্থনা করছে নিকোলাস দূর হয়ে যাক, এই মোহে কেটে যাক। কিন্তু তা এত সহজে নিকোলাস হতে দেবে না বোধহয়। ঠোঁট দু’টো ঈষৎ ফাঁক করতে ওর মুখের শীতল বায়ু আছড়ে পড়ে ইসাবেলার ঠোঁটে। না চাইতেও ঠোঁট জোড়া খুলে যায়। দুজনের শ্বাসবায়ু একসাথে জড়াজড়ি করে দু’জোড়া ঠোঁটের মাঝে। ইসাবেলা সব ভুলে যায়। চোখ মুদে ফেলে। বশীভূতের ন্যায় সমর্পণ করে। ঠিক তখনই উপলব্ধি করে মুখে আর সেই শীতল বায়ু পড়ছে না। নেমে এসেছে কানের লতিকায়। চাপা স্বরে নিকোলাস ওর কানে কানে বলল,
“আমাকে প্রলুব্ধ করার শাস্তি কত ভয়ানক হয় জানে না তোমার ওষ্ঠ জোড়া। সাবধান করে দিয়ো তাকে। অঘটন ঘটে গেলে দোষী করতে পারবে না তোমার প্রথম চুমু চুরির দায়ে।”
ইসাবেলা স্তম্ভিত। মুখে রা নেই। নিকোলাস ঘুরে দাঁড়াতে দু’হাতে ঠোঁট ঢেকে ফেলল। সত্যি কী ওর ঠোঁট প্রলুব্ধ করেছে? কখন? কীভাবে? হতবুদ্ধি হয়ে গেল। একটু আগে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যা বলেছিল তা কতকটা নিকোলাসের দূর্বলতাকে প্রকাশ করে। নিজের সেই দুর্বলতা ঢাকতে বলল,
“বেলা, আমি চোর নই ডাকাত। ডাকাতেরা বড়ো নিষ্ঠুর হয়। কোনো দায়ের ধার ধারে না। সুতরাং এমন কিছু করবে না যেন ডাকাতির পর্যায়ে নামতে হয় আমাকে। ক্ষতি কিন্তু তোমারই হবে। তাই ভালো মেয়ের মতো যা বলেছি শুনবে আশা করি।”
ইসাবেলা কিছু বলার বা ভাবার আগেই নিকোলাস সামনের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
চলবে,,,