তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৩৫

0
610

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৩৫
Writer তানিয়া শেখ

রৌদ্রদগ্ধ আকাশে হঠাৎ রোদটা বুঁজে এলো। কৃষ্ণ কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হলো সেখানে। নিকোলাস উঠে দাঁড়ায়। বন্য ঔষধি গাছ সম্পর্কে ওর জ্ঞান খুব বেশি নেই। নোভা এসব ব্যাপারে খুব পটু। এখন যেহেতু নোভা নেই ওকেই কিছু একটা করতে হবে। ইসাবেলার সারা শরীরে আচর আর আঘাতের চিহ্ন। নিকোলাস যতবার দেখে ততবার নিজের স্বার্থপর সত্ত্বাকে তিরস্কার করে। এই স্বার্থপর স্বভাবের কারণে সে আরও বেশি করে চায় ইসাবেলাকে দূরে সরাতে। কারণ ইচ্ছেতে হোক কিংবা অনিচ্ছায় সে কষ্ট দেবে ইসাবেলাকে। পিশাচদের কাছে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। কতক্ষণ নিজের সেই সত্ত্বাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে রাখবে? একসময় না একসময় নিজের স্বরুপে ফিরবেই পিশাচ।

দ্রুত বনের মধ্যে হারিয়ে গেল নিকোলাস। ফিরল কিছুক্ষণ পরে। তখন ওর হাতে ঔষধি গাছ-গাছরা। ধুয়ে একটা বড়ো পাতার মধ্যে করে নিয়ে এসে বসল ইসাবেলার পাশে। মেয়েটা এখনো কী শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। ওর মুখের দিকে অপলক চেয়ে রইল নিকোলাস। একদম এই প্রকৃতির মতো হৃদয় কাড়া মুখশ্রী। দেখলেই প্রশান্ত হয় মন। ইসাবেলার মুখের ওপর কিছু অবাধ্য চুল এসে উড়ো উড়ি করছে। সাবধানে আঙুলের ডগা দিয়ে সেগুলোকে সরিয়ে দিলো। অকারণেই এক চিলতে হাসি দেখা দেয় নিকোলাসের ঠোঁটে।
ঔষধি পাতার কয়েকটা হাতের তালুতে রেখে দু’হাতে পিষতে লাগল। একটু আগের গরম বাতাসে খানিক ঠাণ্ডা ভাব এসেছে। নিকোলাস হাতের তালু পিষতে পিষতে আকাশটার দিকে তাকাল। সুউচ্চ গাছের ফাঁকে ফাঁকে আকাশটা ভালো করে দেখার উপায় নেই। তবুও যতটুকু দেখা যায় তাতে বোঝা গেল আজ হয়তো বা বৃষ্টির সাক্ষাৎ মিলবে। ইসাবেলা গরমে এই কদিন বেজায় কষ্ট করেছে। বৃষ্টি হলে মেয়েটার জন্য ভালো হয়। মুখটা ফিরিয়ে আনল ইসাবেলার দিকে। ভুরু কুঁচকে গেল। ঘুমের মধ্যে কেমন যেন করছে ও। একটু পর অস্ফুট গোঙানির শব্দও বের হলো ওর মুখ দিয়ে। হাতদুটো মাটি খামচে ধরে আছে। নিকোলাস উদ্বিগ্ন হয়ে কাছে গেল।

“বেলা, বেলা।”

“উহ! উহ!” ওর শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। নিকোলাস হাতের ঔষধ পাতার ওপর ফেলে ইসাবেলার বাহু ধরে ফের ডাকে,

“বেলা, বেলা।”

“ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না আমাকে।” আতঙ্কে বিড়বিড় করে। নিকোলাসের হাতটা থাপ্পড় দিয়ে সরিয়ে দেয় ঘুমের মধ্যে। ওর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। ঠোঁট কাঁপছে থরথর করে। সেই কাঁপা ঠোঁটের ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো,

“পিটার, পিটার।”

কাওকে না দেখেও যে অপছন্দের লিস্টে ফেলা যায় এই পিটার নামটা না শুনলে নিকোলাস জানত না। ইসাবেলার বাহু ধরে ঝাঁকুনি দিলো। ঘুম ভাঙল ইসাবেলার। দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এলেও ওর ভয় কিছুতেই কাটল না। ঝাঁপিয়ে পড়ল নিকোলাসের বুকের ওপর। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

“পিটার, ও আবার এসেছে পিটার। ড্যামিয়ান ফিরে এসেছে।”

পিটারের নামটা শুনে জ্বলছিল নিকোলাস, কিন্তু দ্বিতীয় নামটা শোনামাত্র জ্বলা, পুড়ার সিস্টেমই যেন থমকে গেল। দু’হাতে ইসাবেলার বাহু ধরে সরিয়ে মুখোমুখি এনে অবাক কণ্ঠে বলে,

“ড্যামিয়ানকে তুমি চেনো?”

এবার ঘোর কাটল ইসাবেলার। ভয়ার্ত মুখটা স্তম্ভিত। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে নিকোলাসের মুখের দিকে। পিটার নয় নিকোলাস ওর সামনে। ধাতস্থ হতে সময় লাগল। পুরাতন সেই দুঃস্বপ্ন আজ হঠাৎ ফিরে এসেছে ড্যামিয়ানকে দেখে। ইসাবেলার মনে পড়েছে জানালায় দাঁড়ানো লোকটি কে ছিল! ড্যামিয়ান ছিল। অতীতের সেই দুঃসহ ঘটনা আবার ওর স্মৃতিতে ফিরে এসেছে। ড্যামিয়ান আবার ফিরে এসেছে!

“বেলা?”

“হুঁ?”

“ড্যামিয়ানকে তুমি কী করে চেনো?”

হাত ছাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে ইসাবেলা। ড্যামিয়ান ওর অতীতের এক গোপন অধ্যায়। যা কেবল ভুলে থাকতে চায় ইসাবেলা। ভুলে যেতে চায় ওই অসহ্য নামটা। দুহাতে চোখ মুছে বলে,

“কে ড্যামিয়ান? আমি ড্যামিয়ান নামে কাওকে চিনি না।”

নিকোলাস শতভাগ সিওর এই মেয়ে মিথ্যা বলছে। ও স্পষ্ট শুনেছে ইসাবেলা একটু আগে ড্যামিয়ানের নাম নিয়েছে। ইসাবেলার চোয়াল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“মিথ্যা বলবে না বেলা। আমি স্পষ্ট শুনেছি ড্যামিয়ানের নাম নিয়েছ। সত্যি করে বলো ওকে তুমি কী করে চেনো? ও কি তোমাকেই খুঁজতে লিভিয়ার গৃহ পর্যন্ত এসেছিল?”

আর্ত হয়ে ওঠে ইসাবেলা। বিড়বিড় করে,

“আমাকে খুঁজতে? আমাকে?”

ভয়টা যেন আরও বাড়ে ওর। নিকোলাস দেখতে পায় সেটা। চোয়াল ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বসায়। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,

“আমি থাকতে ভয় কীসের তোমার?”

“আপনি তো সব সময় থাকবেন না আমার সাথে নিকোলাস, তখন?”

ইসাবেলার সিক্ত চোখ জোড়া নিকোলাসকে আনমনা করে তোলে। সত্যি তো ও চিরজীবন থাকবে না ইসাবেলার পাশে। তখন কী হবে ওর? এই না থাকতে পারার যন্ত্রণা ওকে একটু কেমন করে দিলো। কিন্তু ড্যামিয়ানের ভাবনা সব ভুলিয়ে দেয় পরক্ষণেই।

“ড্যামিয়ানের সাথে তোমার সম্পর্ক কী? কেন এত ভয় ওকে তোমার?”

ইসাবেলা ঘাবড়ে যায়। অস্থিরতা প্রকাশ পায় হাবভাবে। নিকোলাসের কপালে একটার পর একটা ভাঁজ পড়ে।

“বেলা?”

“ও আমার দূর সম্পর্কের মামা।” আস্তে আস্তে বলল ইসাবেলা। নিকোলাসের কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। সেখানে দপ করে ওঠে রগ। বিস্মিত শোনাল গলা।

“তোমার দূর সম্পর্কের মামা!”

“মায়ের মুখে শুনেছি নানুর এক চাচাত ভাই ছিলেন। অন্যসব ভাইদের থেকে চারিত্রিক দিক দিয়ে আলাদা ছিলেন তিনি। খুব উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের ছিলেন। ঘর -সংসারের প্রতি আগ্রহ ছিল না। রোজ পতিতালয়ে যাতায়াত ছিল। ওই পতিতালয়ের এক মেয়ের সাথে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়। ড্যামিয়ান ওই মেয়েটার গর্ভে এলে উনি ওকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। এরপর আস্তে আস্তে ওখানে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। পরিবারের সকলের জোরাজুরিতে একসময় বিয়ে করতে রাজি হন মায়ের সেই চাচা। সময়ের আবর্তে আগের জীবনের সব ভুলে যান। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। কিন্তু হঠাৎ একদিন নানু বাড়ির দরজায় পনেরো বছরের এক কিশোর এসে হাজির হয়। তখনও আমি মায়ের গর্ভে। মা সাক্ষী ছিলেন সেই ঘটনার। নানু ছিলেন তখন পরিবারের কর্তা। নানু কিশোরের নাম জিজ্ঞেস করলে চুপ থাকে সে। বাড়িয়ে দেয় সঙ্গে থাকা একটি চিঠি। যেন সেটাই ওর পরিচয়। নানু চিঠিটি পড়ে জানতে পারেন কিশোরটি তাঁর ছোটো ভাই ভলকোভের ঔরসজাত সন্তান। যার মা ছিল ওই পতিতা মেয়েটি। কঠিন রোগে ভুগে মেয়েটির মৃত্যু হলে কিশোরের আর যাওয়ার কোনো স্থান থাকে না। মৃত্যুর পূর্বে মেয়েটি ভলকোভকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে যায়। সন্তানকে স্বীকৃতি না দিলেও যেন একটু আশ্রয় দেন সেই অনুরোধ করেন চিঠিতে। কিন্তু তিনি সেদিনও সন্তান বলে অস্বীকার করেন কিশোরটিকে। গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বাড়ির বাইরে। পরিবারের বড়োরা তাঁকে বুঝায়। হাজার হোক তাদের বংশের রক্ত বইছে ওর শরীরে। সুতরাং সকলে সিদ্ধান্ত নিলো কিশোরকে বাড়িতে রাখার। কিন্তু ভলকোভ বেঁকে বসলেন। তিনি কিছুতেই নিজের নাম ওকে দেবেন না। নানুকে বললেন হয় ওই কিশোর থাকবে নয়তো তিনি। কিশোরের মুখ চেয়ে নানুর করুণা হলো। ভাইকে বুঝালেন কিন্তু বুঝলেন না ভলকোভ। রাগে সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন মস্কোতে। এদিকে কিশোরের নাম পরিচয় নিয়ে ক্রমে ক্রমে কথা উঠল। অনন্যোপায় এবং দয়াপরবশ হয়ে নানু ওর নাম রাখলেন৷ সাথে বংশের নামও ওকে দিলেন। নামহীন কিশোরের হলো- ড্যামিয়ান ম্যাক্সওয়েল পেট্রভ । কিন্তু __”

ইসাবেলার কথা অসম্পূর্ণ রয়ে যায় নিকোলাসের প্রশ্নে।

“কী নাম বললে?”

“ড্যামিয়ান।”

“মিডেল নেম কী বললে?”

“ম্যাক্সওয়েল। কেন?”

নিকোলাসের চেহারার রঙ বদল ইসাবেলাকে কৌতূহলী করে। নিকোলাস বজ্রাহতের ন্যায় বসে রইল কিছুক্ষণ। আকাশে বজ্রনির্ঘোষ বেজে ওঠে। গাছের শাখায় শাখায় লাগে ঝড়ো হাওয়ার ঝাঁকুনি। বাতাসে বেপরোয়া ভাব। উড়িয়ে নেয় শুকনো পাতা আর খড়কুটোদের। ইসাবেলা দু’হাত চোখের ওপর রাখে। ঝড় ওর চোখের কৌতূহল মুছে দেয়।

“নিকোলাস ঝড় উঠেছে। চলুন উঠা যাক।”

“তোমার নানুর নাম কী?” কাঁপা মৃদু গলায় বলল নিকোলাস। ঝড়ো হাওয়ার শো শো শব্দে ইসবেলা শুনতে পায় না ওর কথা। নিকোলাসের হাত ধরে বলে,

“চলুন উঠা যাক।”

“তোমার নানুর নাম কী বেলা?”

মন্দ্রকণ্ঠে বলে উঠল নিকোলাস। ইসাবেলা কেঁপে ওঠে ওর গলার স্বরে। ওর দিকে ভালো করে তাকায়। হিংস্র হয়ে উঠেছে নিকোলাসের চেহারা। দু কদম পিছিয়ে যেতে নিকোলাস ওর বাহু ধরে কাছে নিয়ে এলো।

“জবাব চাই আমার, বেলা। বলো?”

“আমার হাতে ব্যথা লাগছে নিকোলাস। প্লিজ ছাড়ুন।”

নিকোলাসের শ্বদন্ত বেরিয়ে এসেছে। দুচোখে সেই ভয়ানক পৈশাচিকতা। পিশাচ ফিরে এসেছে স্বরুপে। এক হাত বাহু ছেড়ে ইসাবেলার ঘাড় চেপে ধরে কর্কশ গলায় বলে,

“নাম বলো তোমার নানুর বেলা। নাম বলো?”

আঁতকে ওঠে ভয়ে ইসাবেলা। ভীত কণ্ঠে বলে,

“মার্কোভিক ম্যাক্সওয়েল পেট্রভ ।”

ক্রুর হাসি জেগে ওঠে নিকোলাসের ঠোঁটে। ভাগ্যের পরিহাসে উন্মাদের মতো হাসতে লাগল। ইসাবেলা ভয় পেয়ে যায়। নিকোলাস রক্তিম চোখে তাকায় ওর দিকে। ম্যাক্স! যে নাম নিকোলসের এই অভিশপ্ত জীবনের কারণ, যে নাম ওর সকল ভালোকে মন্দতে পরিণত করেছে, নিকোলাসের সকল যন্ত্রণার কারণ যে নাম, বহু বছরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আজ ফুঁসে ওঠে সেই নাম শুনে। ক্রোধে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে নিকোলাস। সামনে যেন ইসাবেলা নয় ম্যাক্সের সেই রূপ দাঁড়িয়ে আছে যাকে ও ঘৃণা করে। ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইসাবেলাকে অদূরে। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল ইসাবেলা। নিকোলাস হাওয়ায় উড়ে গিয়ে ওর গলা চেপে শূন্যে তোলে। আতঙ্কে বিস্ফোরিত ইসাবেলার চোখ। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ছটফট করছে শ্বাস নেওয়ার জন্য।

“ম্যাক্সওয়েল, হুম? দ্য গ্রেট ধোঁকাবাজ ম্যাক্সের বংশধর তুমি? তুমি জানো বেলা তোমার নানুর বংশের প্রতিষ্ঠা পুরুষ কে? জানো?”

নানুর বংশের প্রতিষ্ঠা পুরুষের নাম মনে নেই ইসাবেলার। ছোটো বেলায় বেশ যাতায়াত ছিল সেখানে। তারপর অনেক বছর যাওয়া হয় না। কেউ যে এখন আর বেঁচে নেই। নানু বাড়িতে তাঁদের পূর্ব পুরুষদের পোট্রের্ট আছে। এর মধ্যে প্রথম জনই ছিলেন পেট্রভদের প্রতিষ্ঠা পুরুষ। তাঁকে মহান ব্যক্তিত্ব বলে মনে করে ওর নানুরা। প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন পালন করা হতো আগে। চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হতো। এটাই বংশ পরম্পরায় চলে এসেছিল। সেই সম্মানীয় ব্যক্তির নাম শুনে কেন এমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠল নিকোলাস? নামটা মনে করার চেষ্টা করল ও। পোট্রের্টের নিচে নামটা লেখা আছে। ইসাবেলা চেষ্টা করল স্মরণ করার। অনেক চেষ্টার পর ওর স্মৃতিতে ভেসে উঠল পোট্রের্টের নিচে লেখা নামটা। মনে পড়ল নানুর মিডেল নামই তাঁর বংশের প্রতিষ্ঠা পুরুষের নামে। ম্যাক্সওয়েল পেট্রভ। কিন্তু এই নামটাকে নিকোলাস ম্যাক্স কেন বলল? ধোঁকাবাজই বা কেন বলল?
ওর প্রশ্ন গুলিতে যায় নিকোলাসের হাতের চাপ গলায় বাড়তে।

“নিকোলাস আমার কষ্ট হচ্ছে। নিকোলাস!”

“কষ্ট হচ্ছে, হুম? কতটা?” নিকোলাস আরো জোরে চেপে ধরে ওর গলা। মৃত্যু সামনে দেখছে ইসাবেলা। চোখের সামনে ঝাপসা এসে আসে। গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে লাগল।

“এতটা?” ঝুঁকে এসে চাপা গলায় বলল নিকোলাস। তারপর ইসাবেলার গলা ছেড়ে দিলো। খুব কাশতে লাগল ইসাবেলা। শ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। নিকোলাস ঘুরে দাঁড়ায়। আজ ইসাবেলার স্থানে অন্য কোনো পেট্রভ বংশীয় থাকলে বিনা দ্বিধায় শেষ করে ফেলত। কিন্তু ইসাবেলাকে ও মারতে পারল না। এই ব্যর্থতা ওকে আরও বেশি কুপিত করে। ইসাবেলা দিকে ফিরে কর্কশ গলায় বলে,

“ব্লাডি ম্যাক্স অ্যান্ড ম্যাক্সওয়েল ফ্যামিলি। পৃথিবীতে এত জায়গায় থাকতে আমার সামনে কেন এসে পড়ো তোমরা? কেন?”

ইসাবেলার নিষ্পাপ ব্যথাতুর দৃষ্টি নিকোলাসের পিশাচ সত্ত্বাকে চুপ করিয়ে দেয় ক্ষণিকের জন্য। একটু আগে যা করেছে তা ভেবে মুষ্টিবদ্ধ করে। সে আবার ব্যথা দিয়েছে ইসাবেলাকে। আবার! নিকোলাসের অপরাধবোধ ম্লান হয় ম্যাক্সের সাথে ইসাবেলার সম্পর্ক মনে করে। ম্যাক্সের কারণে ইসাবেলাকে আজ ও ত্যাগ করবে। অবশ্যই করবে। ম্যাক্সকে নিকোলাস ঘৃণা করে। ওর বংশের প্রতিটি জীবকেই সে ঘৃণা করে। ওদের সানন্দে হত্যা করতে রাজি কিন্তু ভালোবাসতে নয়। নিকোলাস একদন্ড সেখানে আর দাঁড়াল না। হারিয়ে গেল হাওয়ায় মিশে। ইসাবেলা যেন এতক্ষণে কিছু বুঝল।

“ম্যাক্স! ম্যাক্স!”

নামটা কয়েকবার নিতে সব পরিষ্কার হয়ে এলো। মনে পড়ল আগাথার জীবন কাহিনি। হতবুদ্ধি হয়ে অস্ফুটে বলল,

“আগাথা, ম্যাক্স, ম্যাক্স, আগাথা?”

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল জমিনে। সেই কাঁদা মাটির মধ্যে ভিজে বসে রইল স্তব্ধ মুখে ইসাবেলা। ও যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না এই সত্যি।

“নিকোলাসের কোথাও ভুল হবে। ওর ম্যাক্স বাবা আমার মায়ের বংশের প্রতিষ্ঠা পুরুষ কী করে হয়? সে তো নেকড়ে আর আমরা মানুষ। অবশ্যই ভুল আছে।”

ইসাবেলা উঠে দাঁড়ায়। চিৎকার করে ডাকে,

“নিকোলাস, নিকোলাস।”

কোথাও নেই নিকোলাস। ইসাবেলা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে আবার।

“আপনার ভুল হয়েছে নিকোলাস। ম্যাক্স আর ম্যাক্সওয়েল এক ব্যক্তি নয়। আপনার ম্যাক্স বাবা আমাদের কিছু না, কেউ না। নিকোলাস ফিরে আসুন, নিকোলাস।”

নিকোলাস আর ফিরবে না এই ভাবনা ওর মনকে ক্ষত বিক্ষত করে তোলে। শরীরের ব্যথা মনের ব্যথাকে ছাড়িয়ে যায় তখন৷ ভাগ্য কেন বার বার বিরূপ হয় ওর প্রতি? কোন পাপে এমন করে ছেড়ে যায় ভালো লাগার মানুষগুলো?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here