#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৬
Writer তানিয়া শেখ
ভাঙা পুরাতন একটি বাড়ির সামনে এসে থামলেন মাদাম আদলৌনা। তাঁকে বেনাসের বাড়ির ধোপানি এখানে নিয়ে এসেছে৷ বলেছে এই বাড়িতে এক কবিরাজ থাকেন। যার কবিরাজির গুনে অনেক লোকের মহাব্যাধি সেরে গেছে। ধোপানির সাথে বেশ কিছুদিন হলো পরিচয় হয়েছে। ব্যক্তিগত অনেক ব্যাপারই ওর সাথে আলোচনা করেছেন মাদাম আদলৌনা। একদিন নিজ কক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। মাতভেইকে দেখে ধোপানি বলেছিল,
“এ তো কবিরাজ মশাইয়ের বা’হাতের কাজ। এমন কত পঙ্গু তিনি সুস্থ করেছেন।”
মাদাম আদলৌনা তাই বিশ্বাস করেছেন৷ ধোপানি জং ধরা বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে ডাকল,
“কই এসো।”
পশ্চিম আকাশে সূর্যটা ডুবে গেছে। সিঁদুর রঙ ছড়িয়ে আছে সেখানে। দিন রাতের সন্ধিক্ষণের সেই সময়ে মাদাম আদলৌনা আশপাশটা আরেকবার দেখে নিলেন৷ লোকালয় থেকে বেশ নির্জনে স্থানটি। এমন পরিত্যক্ত নির্জন স্থানে এসে মাদামের মন কেমন যেন কু গাইছে৷ মাতভেইর মুখটা মনে পড়তে কু চিন্তা দূর করে দরজার দিকে পা বাড়ালেন। ধোপানি দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। ওর আচরণে বোধগম্য এ স্থানে প্রায়ই আসা যাওয়া হয়। মাদাম ওর পথ অনুসরণ করেন। ভেতরের জানালা বন্ধ। দরজার বাইরের মৃদু আলোতে ভেতরটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। পুরোনো ভাঙা আসবাবপত্র এলোমেলো পড়ে আছে। ভেতরটা ধুলোপড়া, ঝুলে ভরা। দেওয়ালে মাকড়শা অবাধে বিচরণ করছে। নাকে ভ্যাপসা গন্ধ এসে লাগতে হাতায় নাক ডেকে ফেললেন মাদাম। ধোপানির সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগোতে লাগলেন। বাইরের মৃদু আলো এ পর্যন্ত এসে পৌঁছাচ্ছে না। কালো অন্ধকারে ঢেকে আছে সামনেটা। ধোপানি থামল এবার। পাশের ঘুনে ধরা মিটসেফের ড্রয়ার হাতরে কিছু খুঁজল। একটু পরে দিয়াশলাইয়ের আগুন জ্বলে উঠল অন্ধকারের মধ্যে। ড্রয়ার থেকে বের করা মোমটা জ্বালিয়ে বলল,
“কবিরাজ মশাই সিদ্ধপুরুষ। সাধারণের মতো জীবনযাপন করেন না তিনি। এই যে বাড়িটা এখানে একাই থাকেন। দিনের বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরে ধ্যান করে কাটান।”
“তাঁর পরিবার পরিজন নেই?”
ধোপানি শব্দ করে শ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল,
“না, নেই।”
ধোপানির মুখের মলিনতা মোমের আলোতে স্পষ্ট চোখে পড়ল মাদামের। হঠাৎ এই মলিনতার কারণ কী? খুব বেশি বয়স না ধোপানির। আর্লি থার্টি হবে। মাদাম আদলৌনা মুখ ফসকে বলে ফেললেন।
“তুমি কী করে চেনো তাঁকে?”
“কাকে?”
“কবিরাজ মশাইকে।”
ধোপানি হাসার চেষ্টা করে বলল,
“তাঁকে এ তল্লাটে কে না চেনে৷”
মাদামের মুখ দেখে বোঝা গেল এখনও তাঁর কৌতূহল দমেনি। ধোপানি চট করে ঘুরে সামনে হাঁটা ধরে বলল,
“যে কাজে এসেছি তা না করে কী সব বকবক করছি। চলো তাড়াতাড়ি তাঁর সাথে তোমার দেখা করিয়ে দিই। নয়তো বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।”
ভেতরের তিনটে দরজা পেরিয়ে একটা ছোট্ট স্যাঁতসেঁতে ঘরে এসে থামে ধোপানি৷ পেছনে মাদাম আদলৌনা। ধোপানি বা’দিকে আলো ধরে বলল,
“ওই যে তিনি।”
একগাল হাসি দেখা দিলো ওর মুখে। মোমের স্বল্প আলোয় চেয়ারে বসা মানুষটার পিঠ দেখা গেল। কাঁচাপাকা সোনালী চুলগুলো উসকোখুসকো। মাথাটা চেয়ারে হেলে পড়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে ঘুমিয়ে আছে লোকটা।
ধোপানি মাদামকে দাঁড়াতে বলে আলো হাতে এগিয়ে গেল কবিরাজের দিকে। তাঁর কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলতে নড়ে উঠলেন। সোজা বসে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন। মোমের আলোয় তাঁর ধূসর চোখজোড়া জ্বলজ্বল করতে লাগল। আপাদমস্তক দেখলেন মাদামকে। তাঁর ভাবলেশহীন কঠিন মুখে এক চিলতে হাসি দেখা দিলো। বড্ড অস্বস্তি হলো মাদামের। মন বলল পালিয়ে যেতে। কিন্তু পা নড়ল না। কবিরাজ উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর পরনের কালো আলখেল্লা ময়লা তেল চিটচিটে। মুখভর্তি অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ি গোঁফের কারণে বয়স বেশিই লাগছে। মাদামের অস্বস্তি বোধহয় টের পেলেন তিনি। আন্তরিকভাবে মুচকি হেসে বললেন,
“ভয় পাবেন না মাদাম। আমি আপনাদেরই একজন। আসুন, এখানে এসে বসুন।”
কক্ষের অন্যপাশে বসার গদি। ময়লা কাপড়ে সেটা ঝেড়ে নিলেন কবিরাজ। মাদাম বসতে তিনি একটু আগে বসা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলেন। মাতভেই সম্পর্কে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করতে করতে কী যেন খুঁজছেন। মাদাম খেয়াল করলেন সামনের টেবিলের অনেকগুলো বড়ো ছোটো বোতল, কাগজের বান্ডিল, দোয়াত কালি পড়ে আছে। বোতলে অনেক গাছ-গাছরা আর কীসব যেন রাসায়নিকে মিশিয়ে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ধোপানি চেয়ারের পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। একদৃষ্টে কবিরাজকে দেখছে ও। মাদামের এবার সন্দেহ হলো ধোপানি তাঁকে মিথ্যা বলেছে। কবিরাজের সাথে কিছু তো সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে ওর। ওর চোখের ভাষা অকপটে বলে দিচ্ছে সেই সত্যতা। মাদাম এই ঘরে চোখ বুলিয়ে নিলেন। এই গদি আর চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই এখানে৷ ঘরটাতে একটাও জানালা নেই। পুরো ঘরে অদ্ভুত বিশ্রী গন্ধ। গুমোট গন্ধ নয়। গন্ধটা যে ঠিক কীসের বুঝতে পারলেন না।
“ওহো! সেই ঔষধি ফুলটা শেষ হয়ে গেছে দেখছি।”
কবিরাজের হতাশ গলা শুনে মাদাম সচকিত হলেন। ধোপানির দিকে তাকাতে ধোপানি জিজ্ঞেস করল,”এখন তবে কী হবে? উনি যে বড়ো আশা নিয়ে এসেছেন আপনার কাছে। কিছু একটা করুন কবিরাজ মশাই।”
কবিরাজ বললেন,
“সামান্য ব্যাপার হলে এক্ষুনি একটা উপায় করে দিতাম। তুমি বলেছ ছেলেটার পা’টা একেবারে অকেজো হয়ে আছে। অজেকো অঙ্গ ঠিক করা সহজ কথা নয়। তা ছাড়া এই কাজে যে ফুলটার দরকার সেটা সাধারণ কোনো ফুল না৷ বেজোড় পূর্ণিমার রাতে ফোটে ফুলটা, এখান থেকে অনেক দূরের গহীন অরণ্যে। ভীষণ সুগন্ধি ফুলটার ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে ওটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে বিষাক্ত সাপেরা। পথে আরো অনেক বিপদের আশংকা তো আছেই।”
মাদাম আদলৌনা অনুনয়ের সুরে বললেন,
“আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে দিন কবিরাজ মশাই৷ বিনিময়ে যা চান তাই পাবেন।”
“আমি অর্থের লোভে কবিরাজি করি না।”
“তবে?”
“আমি মানুষের সেবা করাকে ধর্মকর্ম মানি। দুস্থ অসহায়কে সাহায্য করলে মনে শান্তি পাই। জগতে মনের শান্তির বড়ো অভাব। আপনার ছেলের চিকিৎসা আমি এমনিতেই করে দিবো, কিন্তু তার জন্য যেই ফুলটা দরকার ওটা আপনাকে এনে দিতে হবে।”
“ওই ফুল আমি কোথায় পাব? আমি তো ফুলটা দেখিওনি কবিরাজ মশাই।”
কবিরাজ কিছুক্ষণ চুপ করে বললেন,
“ওই ফুল পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দিলে আনতে পারবেন তো?”
মাদাম নির্দ্বিধায় বললেন,
“অবশ্যই পারব। আপনি শুধু আমাকে পথটা দেখিয়ে দিন।”
“ঠিক আছে। আগামীকাল বেজোড় পূর্ণিমার রাত। ধোপানিকে আমি বলে দেবো কখন, কোথায় আসতে হবে। আজ তবে আসুন।”
মাদাম উঠে দাঁড়ালেন। ধোপানি এক পলক তাকাল কবিরাজের দিকে। তাঁর নির্লিপ্ত মুখে রহস্যময় ক্ষীণ হাসি খেলে গেল। তারপর চেয়ারে বসে মাথা এলিয়ে দিলেন। ধোপানি মুচকি হেসে এ ঘরের বাইরে পা বাড়ায়। মাদাম আদলৌনা চুপচাপ ওকে অনুসরণ করছে। তাঁর ভাবনারা অস্থির। ফুলটা কি আনতে পারবেন তিনি? সফল হবেন এবার মাতভেইকে সুস্থ করতে? পারতেই হবে তাঁকে। ছেলে দু’পায়ে দাঁড়ালে মাদাম আদলৌনা মরেও যে শান্তি পাবেন।
গভীর রাত। মাতভেই আর মাদাম আদলৌনা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল ইসাবেলার। গত এক বছরে এমন অনেকবার হয়েছে। রাশিয়াতে মাদামের বাড়ির সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, ভ্যালেরিয়ার মৃত্যু এবং তারপরে ঘটে যাওয়া দুঃসহ সকল স্মৃতি দুঃস্বপ্ন হয়ে রাতের ঘুম বিনষ্ট করে। আজ ইসাবেলা দেখেছে নিকোলাসের প্রাসাদের সেই গত হওয়া সেই দিনটি। যেদিন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল নিকোলাসের কফিনে। নিকোলাসকে পুড়তে দেখা আজ ওর কাছে দুঃস্বপ্ন। নিকোলাসের ক্ষতি হোক ও চায় না।
তখন রাগের মাথায় চড় দিয়েছে, ঘৃণা করে বলেছে। ইসাবেলার মন জানে ওসব মিথ্যা। নিকোলাসকে চাইলেও ও আর ঘৃণা করতে পারবে না। ও যেমন তেমনই ভালোবেসেছে। পিশাচ, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর জেনেও মনে ঠাঁই দিয়েছে। মন দেবে না, দেবে না বলেও মন দিলো। ভালোবাসা হয়ে যায়। ইসাবেলারও নিকোলাসের প্রতি ভালোবাসা হয়ে গেছে। অথচ, নিকোলাস দূরে ঠেলে দিতে চায়। ওর ভাগ্যটাই বুঝি মন্দ। কেউ চায় না ওকে। প্রথমে পিটার ছেড়ে গেল। আর এখন নিকোলাস। ইসাবেলার খুব কান্না পায়। বালিশে মুখ গুঁজে নীরবে কাঁদল কতক্ষণ। মিনিট খানেক পরে উঠে বসল বিছানা ছেড়ে। গলা শুকিয়ে এসেছে। হাতের কাছের বোতলটাতে পানি নেই। নিঃশব্দে রুমের বাইরে এলো। কিচেনে গিয়ে পানি পান করে বোতলটা ভরে নেয়। রুমের দিকে ফিরবে ভেবেও সিদ্ধান্ত পালটে ফেলে। বাড়ির পেছনের দরজার কাছে বোতলটা রেখে দরজা খুলে বাগানে পা রাখে। হাঁটু সমান বরফে আবৃত বাগানটা। আপেল, পিচসহ সকল গাছগাছালি শাখা প্রশাখা তুষারে ঢেকে গেছে। ইসাবেলা বরফ মাড়িয়ে বাগানের মাঝের ছাউনির ভেতর গিয়ে বসল। পরনের ফ্লোরাল সুতি ফ্রকের ওপর পাতলা একটা সোয়েটার। ঠাণ্ডায় দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়। ইসাবেলা তবুও বসে রইল সেখানে।
আকাশের চাঁদটা মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে। চারপাশে ঘন কুয়াশা। এই কনকনে ঠাণ্ডায় উপভোগ করার মতো অবস্থায় নেই ইসাবেলা। ওর মস্তিষ্ক সতর্ক করে বলছে,”ঘরে যা, ঘরে যা।”
ইসাবেলা জেদ করে বসে রইল। শরীর কুঁজো হয়ে এলো। ঠোঁট কালো হয়ে যায়। আর পারছে না বসে থাকতে৷ বেশ শাস্তি দিয়েছে নিজেকে। এর বেশি হলে মরবে। মরবে! ইসাবেলা মনে মনে হাসল। মরণ এত সহজে হবে না ওর। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে দুহাতে নিজেকে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ায়। ছাউনির বাইরে পা রাখবে তখনই থমকে গেল। বাতাসে সোঁদা মাটির গন্ধ ভাসছে। জমে যাওয়া কালো বর্ণ ধারণ করা ঠোঁটের কোণ বেঁকে যায়।হাঁটু ভেঙে সেখানে বসে পড়ল। খুব বেশিক্ষণ কষ্ট করতে হলো না। মিনিট খানেক পরেই গায়ে ভারি গরম কাপড় অনুভব করে। কমে এলো দেহের কাঁপুনি। দুবাহু ধরে ওকে টেনে তুললো নিকোলাস। রাগত গলায় বলল,
“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? এত ঠাণ্ডায় এই সময়ে কী করছিলে এখানে?”
ইসাবেলা মুখ তুলে তাকায় ওর দিকে। ওর চোখ ছলছল করে ওঠে।
“অপেক্ষা। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি নিকোলাস।”
“আমি আসব বলেছি?”
“না, আমার মন বলেছে তুমি আসবে। দেখো, তাই হয়েছে। তুমি এসেছো।”
“আমায় তো ঘৃণা করো তুমি। তবে কেন এই অপেক্ষা বেলা?”
ইসাবেলা মুখ নামিয়ে নেয়। নিকোলাস ওর থুতনি তুলে দেখল চোখের জলে মুখে ভেসে গেছে।
“কাঁদছ কেন বেলা?”
“আমি কি খুব খারাপ নিকোলাস? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? এতটাই ভালোবাসার অযোগ্য আমি?”
“বেলা!”
ইসাবেলা সরে দাঁড়ায়। নাক টেনে বলে,
“আমি আজ বুঝেছি নিকোলাস। আমার বোন ঠিক ছিল। আমি সত্যি এই যুগে বেমানান। মহল্লার মেয়েরা ঠিকই বলেছে, আমার মতো মেয়েকে কোনো পুরুষ চায় না। আমি কারো যোগ্যই না। বড়ো অসুন্দর, সেকেলে আমি। তুমি যাও নিকোলাস। আর আমি অপেক্ষা করব না। আর তোমায় করুণা করে আসতে হবে না।”
ইসাবেলা এক হাতে মুখ চেপে কান্না রুদ্ধ করে দৌড় দেয় বাড়ির দিকে৷ কিছুদূর যেতে নিকোলাস ওকে ধরে ফেলে। দু’বাহুতে জড়িয়ে ধরল। ইসাবেলা ওর বুকের কাপড়ে মুখ গুঁজে কাঁদছে। নিকোলাস আঁজলা ভরে ওর মুখটা তুলে বলে,
“তাকাও আমার দিকে। এই চোখে চেয়ে বলো, তুমি অসুন্দর, অযোগ্য? না, বেলা, তুমি অমূল্য সম্পদ আমার কাছে। ভোরের শিশির দেখেছ বেলা? বসন্তের কচি কিশলয়? কিংবা চাঁদনি রাত, বৃষ্টি শেষের রংধনু? আমি তোমার মাঝে ওই সুন্দর, প্রীতিকর মুহূর্তগুলো দেখি। পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য তোমার দু’জোড়া বাদামী চোখ, গোলাপি ঠোঁটের মাঝে খুঁজে পাই৷ তুমি বলছ, তুমি অসুন্দর। আমার চোখে সুন্দর বলতে কেবলই তুমি, বেলা। তোমাকে যেমন করে চাই তেমন করে কখনও কিছু চাইনি আমি।”
“তবে কেন দূরে ঠেলে দিতে চাইছ?”
“তোমার ভালোর জন্য। আমি পিশাচ, অভিশপ্ত, বেলা। তখন দেখলে তো কী করলাম। আমি তোমার ক্ষতি করে বসব। তা ছাড়া আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই। আমার সঙ্গ তোমাকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে।”
“তুমি ছাড়া আমার পৃথিবীটাই আঁধার নিকোলাস।”
“আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না, বেলা।”
“তুমি ছাড়া পুরো জীবনটাই কষ্টের হবে, নিকোলাস।”
“না, সময় সব ভুলিয়ে দেয়। আমাকে ভুলে যাবে একদিন। চেষ্টা করলেই পারবে।”
ইসাবেলা রেগে গেল। দু’হাতে ওর বুকে আঘাত করে বলে,
“তুমি ভীরু, কাপুরুষ। ভালোবাসতে ভয় পাও বলে এসব বলছো। চাই না তোমাকে। যাও তুমি, যাও।”
ইসাবেলা বাড়ির দিকে ঘুরতে নিকোলাস পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“বেলা, প্লিজ বোঝো আমাকে।”
“তুমি তো বুঝতে চাইছ না আমাকে। তবে কেন আশা করছো তোমাকে বোঝার? জোর করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছো। আর আমার মতের কী?”
ইসাবেলা ঘুরে দুহাতে নিকোলাসের বুকের কাপড় খামচে ধরে। পায়ের পাতায় ভর করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখল। তীব্র সে চাহনি। দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
“তোমার প্রেম বিষ,
আমি সানন্দে সেই বিষ সর্বাঙ্গে ধারণ করতে চাই।
তুমি পাপ,
আমি স্বেচ্ছায় পাপী হতে চাই নিকোলাস।”
দুবাহুতে নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন দিলো। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে ইসাবেলাকে দুবাহুতে বেষ্টন করে শূন্য তোলে নিকোলাস। এরপরে ইসাবেলাকে দূরে ঠেলে দেওয়া অসাধ্য হয়ে যায় ওর জন্য। সব মান-অভিমান ভুলে আবারো নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় দুজন।
চলবে,,,