#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৯৫
Writer তানিয়া শেখ
দু’হাতে পেট চেপে ধরে বিছানায় কুঁকড়ে শুয়ে আছে ইসাবেলা। গরমে শরীর ঘামে ভিজে একাকার। চোখ ফেটে পানি পড়ছে। কোনো ওষুধে কাজ হলো না। দিনকে দিন পেটের ব্যথা বাড়ছে যেন। ফুলেও উঠেছে। তবে তা চোখে পড়ার মতো না। তার সাথে যু্ক্ত হয়েছে বুকের ব্যথা। নিকোলাস আসবে বলেও এলো না। ইসাবেলা নিজের ব্যবহারে অনুতপ্ত। কিন্তু যে কষ্ট কথার বাণ ছুঁড়ে দিয়েছে তা লাঘবের উপায় যে আর নেই। নিকোলাস কেন আসে না? ওকে না দেখে ইসাবেলার কষ্ট আরও বাড়ে। এই চরম মুহূর্তে একমাত্র শান্তির স্থান ওর বুকেই তো। ওকে হারানোর ভয়, আপনজনদের বৈরী আচরণে ইসাবেলা দিশেহারা। নিকোলাস আর ওর সম্পর্কের কথা এখন বাড়িসুদ্ধ লোক জানে। আন্না মেরিওর কৃতিত্ব রয়েছে এ ব্যাপারে।
এ বাড়ির সকলে প্রথমে বিস্মিত হয়েছে তারপর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। নানা মার্কোভিক রেগে আগুন, মামা ম্যাক্সিমের চোখে ইসাবেলার জন্য মায়া, স্নেহ কিছুই ছিল না৷ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। সেই কঠিনতা এখনও বহাল রয়েছে। ওলেগ অ্যালেক্সিভ রক্তশূন্য মুখে স্তব্ধ চেয়ে ছিলেন। তারপর হায়! হায় করে উঠেছেন। আদুরে ছোটো মেয়েটির এহেন অধঃপতন তাঁকে শেষমেশ অসুস্থ করে ছাড়ল। ওই অবস্থায় মেয়ের হাতে ধরে অনুনয় করলেন, ইসাবেলা যেন নিকোলাসকে ভুলে যায়। ও ঠিক নয়। পিশাচ আর মানুষের মধ্যেকার প্রেমের সম্পর্ক সমাজে ও ধর্মে নিষিদ্ধ। ইসাবেলার বয়স আর কত৷ বয়সের দোষে ও বাস্তবতা ভুলে যাচ্ছে। এই দোষ কাটলে পস্তাবে কিংবা তার আগে নিকোলাস ওর বড়ো কোনো ক্ষতি করে দেবে। পিশাচেরা হয় নীচ, স্বার্থলোভী। আর তাঁর মেয়ে নিষ্পাপ ফুলের মতো। এমন ফুল পিশাচের স্পর্শে এলে মূর্ছা যাবে, ঝরে যাবে। তিনি তা কখনও হতে দেবেন না। মেয়েকে খুব বুঝালেন। বাবার মতের সরাসরি প্রতিবাদ করেনি ইসাবেলা। দুর্বল হৃদয়ের অধিকারী ওলেগ অ্যালেক্সিভ। পাছে কিছু হয়ে যায়! আর কোনো কাছের মানুষ হারাতে রাজি নয় ও। নীরবে প্রস্থান করেছিল বাবার সামনে থেকে।
ইসাবেলা এখনও অবুঝ। বয়সে, বুদ্ধিতে অপরিপক্ক। নয়তো পিশাচের মায়ায় পড়ে? আর সেটাকে ভালোবাসা বলার ভুল করে? ভ্লাদিমি ও তাতিয়ানাও তাই মনে করল। ইসাবেলা এমন কিছু করবে এ ওদের ধারণার বাইরে ছিল। ভ্লাদিমি তো ইদানীং কড়া নজরদারিতে রেখেছে বোনকে। নিকোলাসকে হাতে পেলে ছাড়বে না। খুব ধার্মিক নয় মোটেও সে। কিন্তু ক্রুশটা আজকাল পকেটে পুরে রাখে। ওর বিধবা মামি ও অনাথ কাজিনদের চোখের বিষ ইসাবেলা। রজারের হত্যাকারী যখন ওর স্বামী তখন ঘৃণার, অপরাধের ভাগ তো নিতেই হবে। এ বাড়ির সকলের চোখে ইসাবেলা অপরাধী। মামার হত্যাকারীকে কী করে প্রেমিক বলে, স্বামী বলে স্বীকার করতে পারল সে! এত নির্লজ্জ, এত নীচ!
সকলে প্রতিক্রিয়া দেখালেও মাতভেই নীরব ছিল। ইসাবেলা প্রতি সহমর্মিতা ফুটে উঠেছিল ওর চোখে। তাতিয়ানার সন্দেহ হয়। সবার আড়ালে মাতভেই ইসাবেলার কক্ষে গিয়েছিল। বন্ধু ও ছোটো বোন দুটোই ইসাবেলা ওর কাছে। সান্ত্বনা দেয়। ওকে ভীষণ রোগা আর দুর্বল দেখাচ্ছিল। মুখ ছিল ফ্যাকাশে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার আগেই তাতিয়ানা এসে পড়ে। সরাসরি প্রশ্ন করে সে ওর বোনের প্রেমের সম্পর্কের কথা আগে থেকে জানত কি না। ইসাবেলা মাথা দুদিকে নাড়িয়ে ইশারা করে মাতভেইকে। মাতভেই হবু স্ত্রীকে মিথ্যা বলবে কী করে? সত্যি বলেছে। এ নিয়ে দুজনের মনোমালিন্য শুরু হয়। এসব দেখে সেদিন ভীষণ কেঁদেছিল ইসাবেলা। এত অসহায় আর ছোটো লাগছিল নিজেকে। নিকোলাস ওর জীবনে না থাকলে সেদিন ও মরেই যেত। মৃত্যু বোধহয় সত্যি আসন্ন। অসহ্যকর পেট ব্যথায় ছটফট করতে করতে তাই ভাবল। দাঁতে দাঁত লেগে কাঁদত লাগল। অস্ফুটে একটা নামই নিলো কেবল,
“নিকোলাস, নিকোলাস।”
ব্যথা কমে গেল হঠাৎ। এই নাম নিলো বলে কি! অনেক্ক্ষণের ব্যথা উপশমের পরও রগে রগে ঝিমুনি রয়ে গেছে। ইসাবেলা থম ধরে শুয়ে রইল। সমস্ত শরীর ঘামে চিটচিট করছে। উঠে গোসল করলে বেশ হতো। কিন্তু শরীরটা অবশ অবশ ঠেকল বলে আর উঠল না। নাওয়া খাওয়ার ঠিক নেই। একবেলা খায় তো দু’বেলা অভুক্ত থাকে। আজকাল সহজে ক্ষুধা পায় না। যদিও একটু পায় খেতে পারে না। খাবার সামনে দেখলে পেট উগলে আসে৷ বড়ো কোনো অসুখ করল না তো! ওর দিকে কেউ ভালো করে তাকায় না। কেউ ওর খোঁজ নিতে আসে না। এই ম্যাক্সওয়েল মহলের চার দেওয়ালের বাতাস বিষাক্ত লাগে। আপনজন পর হয়েছে। দমবন্ধ হয়ে আসে এখানে ইসাবেলার। এসব ভাবতে ভাবতে কয়েকদিনের নির্ঘুম চোখের পাতা ভারি হয়ে ওঠে। চোখটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ ব্যথাটা ফের পেট কামড়ে ধরে। দু’হাতে চেপে কুঁকড়ে গেল ইসাবেলা আবার।
“আহ!” আর্তনাদ করে কেঁদে উঠল। এবার নিকোলাসের নামেও থামল না। বরং আগেরবারের চেয়ে বাড়ল। আর পারছে না সহ্য করতে। বিছানার চাদর কামড়ে ধরে কাঁদছে।
“মিউ, মিউ…”
ভেজা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল সামনে। তাশার পোষা রুপালী রঙের বেড়াল ভোলইয়া। চকচকে ধূসর বিড়ালটি তাকিয়ে আছে ইসাবেলার দিকে। বেশ আদুরে একটা বেড়াল। কিন্তু এখন আদর করার ইচ্ছে জাগল না ইসাবেলার। অদ্ভুত একটা অনুভূতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শুকনো গলায় বার কয়েক ঢোক গিললো। জিহ্বা বের করে শুষ্ক ঠোঁট ভিজালো। বিড়ালটি ওর লোলুপ চোখ দেখে পালাতে গেলেই ওটাকে এক লাফে ধরল ইসাবেলা। তারপর কামড় বসিয়ে দিলো গলায়। চাপা গোঙানি তুলে নিস্তেজ হয়ে গেল বেড়ালটি। রক্তমাখা ঠোঁটে পরম তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে ইসাবেলা। মৃত বেড়ালটিকে কোলের ওপর রেখে খাটের একপাশে হেলান দিয়ে থম ধরে আছে। দূর থেকে দেখলে ঘুমন্ত মনে করে ভ্রম হতে পারে। কিছুক্ষণ এভাবে অতিবাহিত হলো। এর মধ্যে ইসাবেলা আর ব্যথায় কাঁদল না। ওর চেহারার রঙ ফিরে এলো, খসখসে হয়ে যাওয়া ত্বকে আগের মতো কোমলতা ফিরে এলো। সুস্থ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখ খুললো। ভুরু কুঁচকে গেল সাথে সাথে। বিছানায় শুয়ে ছিল, এখানে এলো কীভাবে? সেই ব্যথা আর নেই। যেন কোনোদিন ছিলই না। মাথার ভেতর কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা টের পাচ্ছে। কিছু ঘটেছে কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছে না। কেমন খাপছাড়া, ঝাপসা সব। হঠাৎ ওর হাতটা কোলের ওপর পড়তে নরম লোমশ কিছু স্পর্শ করতে আঁতকে উঠল। এবং এই আঁতকে ওঠা রীতিমতো ভয়াল আতঙ্কে রূপ নিলো বেড়ালের মৃত দেহ দেখে। রক্তাক্ত ছেঁড়া গলা ও ওর হাতের রক্ত ওকে ধাঁধায় ফেললো। সামনেই আয়না। তাকাতে শিউরে ওঠে। মুখে লেগে আছে তাজা রক্ত। কী বিভৎস দৃশ্য! বমির উদ্রেক হয় সাথে সাথে। মুখে হাত দিয়ে দৌড়ে গেল ওয়াশরুমে। বমি হলো। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল। ভোলইয়ার নিথর দেহ বার বার ভেসে উঠছে চোখে। থরথর করে কাঁপতে লাগল। এমন নিষ্ঠুর, ঘৃণিত কাজ কী করে হয়ে গেল! ফের বমি করল। দুর্বল শরীরে ওয়াশরুমের মেঝের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসল। কিছুই মনে করতে পারছে এই মুহূর্তে। কখন ভোলাইয়া এলো, কখন ইসাবেলা ওর..
“ছি!ছি!” মাথার দুপাশে সজোরে চেপে ধরে। আর ভাবতে পারছে না। কী হচ্ছে এসব? কেন হচ্ছে?
“ভোল, ভোল?” ওই যে ডাকছে তাশা। ও এদিকেই আসছে। ইসাবেলা এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। ছুটে যায় ঘরে। তাড়াতাড়ি ভোলইয়ার মৃত শরীর জানালা দিয়ে যতটা সম্ভব দূরে ফেললো। তারপর রক্তাক্ত মেঝে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। প্রায় শেষ তখন দরজায় এসে দাঁড়ায় রেইনি। ওর হাত ধরে আছে তাশা। রেইনি কক্ষে চোখ বুলিয়ে বলল,
“ইসাবেল, তুমি কি ভোলকে দেখেছ? সারা বাড়ি খুঁজেও ওকে পাওয়া যাচ্ছে না।” হাতের রক্তভেজা কাপড়টা ঠেলে খাটের নিচে লুকিয়ে ফেললো ইসাবেলা। ওদের দিকে না তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না, দেখিনি।”
“ওহ! চলো প্রিন্সেস ভোলকে আমরা বাগানে খুঁজি গে।”
“আচ্ছা।”
রেইনি ঘুরে আবার থেমে যায়। ইসাবেলার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি কি অসুস্থ ইসাবেলা? তোমার হাত ওমন কাঁপছে কেন?”
“না, না তো। ও কিছু না।”
“হুম।” রেইনি যেন বিশ্বাস করল না। প্রশ্নও করে না আর। তাশার হাত ধরে চলে গেল। ইসাবেলার স্বস্তির নিঃশ্বাস ভেতরে আঁটকে যায় দরজায় দাঁড়ানো এ বাড়ির পালিত কালো বেড়াল কার্লকে দেখে। বড়ো বড়ো চোখ করে একবার ওর দিকে আরেকবার খাটের নিচে তাকায়। ও কী বুঝতে পেরেছে কিছু? ইসাবেলা ওর দিকে যেতে ভয় পেয়ে গেল কার্ল। ভূত দেখে পালানোর মতো পালিয়ে গেল সেখান থেকে। নিজেকে এই মুহূর্তে ঘৃণিত কোনো পিশাচিনী মনে হচ্ছে ওর। একটা নিষ্পাপ জীবকে মেরেছে। বিবেকের দংশনের জ্বালাও কম না।
শরীরটা অবসন্ন লাগছে। বিছানায় গা দিতে ঘুম নেমে এলো ইসাবেলার চোখে। সারাদিন আর হুঁশ ছিল না। সন্ধ্যায় যখন ঘুম ভাঙল নিকোলাস ওর শিওরে বসে। দুজনের কেউ-ই কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। তৃষ্ণিত চোখে পরস্পরকে দেখল। এই কয়েকদিনের বিরহে সমান ভাবে জ্বলেছে ওরা।
ইসাবেলার ইচ্ছে হলো ওর বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে। কিন্তু চাপা অভিমান তেমন করতে বাধা দিলো। মুখ ফিরিয়ে নিলো নিকোলাসের দিক থেকে। নিকোলাস বিমর্ষ গলায় বলল,
“এখনও রেগে আছো আমার ওপর তুমি, প্রিয়তমা। বলবে না কথা, তাকাবেও না?”
ইসাবেলা ঠোঁট শক্ত করে আছে। নিকোলাস অনুনয় করে বলল,
“এভাবে শাস্তি দিয়ো না, বেলা। আমি নিরপরাধ, বিশ্বাস করো। এই বিরহকাল আর যে সহ্য করতে পারছি না। কথা বলো, তাকাও একটিবার। দোহাই।”
কেউ যেন খুব জোরে চপেটাঘাত করল ইসাবেলাকে। আস্তে আস্তে উঠে বসল। টলমল চোখে তাকাল নিকোলাসের দিকে। অভিমান নিয়ে বলল,
“এই কদিন এলে না কেন? আমি রোজ পথ চেয়ে ছিলাম৷ তোমার বিরহের ব্যথা আমাকে আধমরা করে ছেড়েছে নিকোলাস। আমার অভিযোগ দেখলে কিন্তু তার পরের অনুশোচনা দেখলে না। আমি পাগলি, নির্বোধ, না বুঝে রেগেমেগে যা বলেছি মনে নিয়ে চলে গেলে। আর এলে না। ফিরে দেখলে না তোমার নির্বোধ বেলা তোমাকে কষ্ট দিয়ে অনুতাপে জ্বলেপুড়ে খাক হচ্ছে।”
নিকোলাস ওকে জড়িয়ে ধরল।
“আমার বড়ো ভুল হয়েছে। ক্ষমা করো। রজারের মৃত্যুর দায় আমার ওপর। আমাকে দেখলে যদি তোমার কষ্ট বাড়ে। তাছাড়া নিজের ওপর রাগও কম ছিল না। আজ আমার জন্য এত কিছু সইতে হচ্ছে। তুমি বরং আমাকে ভুলে গেলেই ভালো হয়৷ পারবে না?”
ইসাবেলা পারবে বললে নিকোলাস শেষ হয়ে যাবে। নিজের জন্য ধরে রাখতে গিয়েও যে ওই বেচারিকে শেষ করে ফেলছে। ওর ভালোর জন্য শেষ হতেও বাধা নেই আজ নিকোলাসের। দুহাতে ঠেলে সরিয়ে দিলো ইসাবেলা। রাগে জ্বলছে ওর ভেজা চোখ।
“তোমাকে ভুলে গেলে ভালো হয়। কিন্তু ওই ভালোটাই আমার দরকার নেই নিকোলাস। তুমি ছাড়া কিছুই আমার দরকার নেই। আমার তো সব তুমিই, তোমাতেই।”
“বেলা!” নিকোলাস ইসাবেলার বাধা সত্ত্বেও জোর করে আবার জড়িয়ে ধরল। ভালো লাগে ওকে বাহুডোরে নিলে, বুকের ওপর রাখলে। এভাবেই যদি রাখা যেত। ইসাবেলা মান করে বুকে মৃদু আঘাত করল। তারপর একসময় শান্ত হয়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
“আর বলো না ওই কথা। একবারো না। আমরা পরস্পরকে কথা দিয়েছি কখনও একে অপরকে ছাড়ব না, কোনো পরিস্থিতিতেই না।”
নিকোলাস চুপ রইল। ইসাবেলা কিছুক্ষণ নাক টেনে শান্ত হয়। দুজনে নীরবে একে অপরের সান্নিধ্য উপভোগ করল। ইসাবেলা গুটিশুটি মেরে থাকল নিকোলাসের বাহুর বেষ্টনীতে। মাথা রাখল ওর বুকের ওপর। বড্ড শান্তি এখানে। একটু পর নিকোলাসকে ডাকল,
“নিকোলাস।”
“হুম?” আলগোছে ইসাবেলার চুল নিয়ে খেলছিল নিকোলাস।
“আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে।” বলল ইসাবেলা। নিকোলাস বলল,
“আজই?”
একটু ভাবল ইসাবেলা। তারপর বলল,
“না, আজ থাক। কাল এই সময় এসো। আমি তৈরি থাকব।”
নিকোলাস সরে বসল। মুখোমুখি হয়ে ওর হাতটা মুঠোবন্দি করে বলল,
“আমি চাই না জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত নাও তুমি। এরা তোমার আপন…”
“এরা আমার আর আপন নেই নিকোলাস। পর করে দিয়েছে। আমার মুখ দর্শন করতেও বাধে ওদের৷ এই মহলে দমবন্ধ হয়ে আসে নিকোলাস। প্লিজ এখান থেকে নিয়ে যেয়ো। নয়ত মরে যাব।”
নিকোলাস ওর গালে হাত রাখল।
“শান্ত হও। তুমি যা চাও তাই হবে। কাল আসব আমি।”
“ওয়াদা?”
“ওয়াদা।”
ইসাবেলা এই কয়েকদিনে আজ হাসল। দু বাহু নিকোলাসের গলায় জড়িয়ে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন দিলো। একে অপরের কাছে এলে সব যেন ভুলে যায় ওরা। ইসাবেলা ভুলে গেল সেই ব্যথা, ভোলাইয়াকে হত্যা করে রক্ত খাওয়ার কথা। নিকোলাস ভুললো রিচার্ডের বিশ্বাসঘাতকতা, পলের মৃত্যু, নোভার লাপাত্তা হওয়ার কথা। আর দেখল না সদর দরজার পাশে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে একটি মনুষ্য ছায়া। ওদের নজরে আসার আগে যা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
চলবে,,