#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব-২৮
Writer তানিয়া শেখ
নাৎসি সৈন্যদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে ইহুদিরা শহর ছেড়ে পালিয়ে এই বনের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতি মুহুর্তে চলছে জীবন বাঁচানোর লড়াই। এই বিপৎসংকুল বনে খেয়ে না খেয়ে বৃষ্টি মাথায় করে তারা জীবন অতিবাহিত করছে। প্রায় পঞ্চাশ জনের একটা দল গড়েছে তারা। একজন লিডারও আছে। আজ দুদিন হয় সেখানে খাবার শেষ হয়েছে। খেতে না পেরে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে শিশুরা। বাকিদের অবস্থাও করুন। লিডারের কথা মতো তাই আজ বের হয়েছিল খাবার সংগ্রহের সন্ধানে। পথিমধ্যে নিকোলাস আর ইসাবেলাকে ওরা দেখতে পায়। ভেবেছিল এরা জার্মান। কাছে খাবার না থাকলেও অর্থ থাকবে। ক্ষুধা মানুষের হিতাহিত জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়। এদের বেলায়ও ব্যতিক্রম হয়নি। খাবারের জন্য আজ এরা মানুষকে মারতেও কুণ্ঠিত হবে না। জার্মান খ্রিস্টান জানলে তো কথায় নেই। এক হিটলারের কারণে আজ সমস্ত জার্মানির লোক খারাপ বনে গেছে। নিকোলাস জানে সে কথা। ইসাবেলাকে পেছনে লুকিয়ে লিডারকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমরাও জার্মান সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে বনে ঢুকেছি। কিছুই নেই আমাদের সাথে।”
“ইউরো, অলঙ্কার কিছুই না?” লিডার প্রশ্ন করে।
“তাড়াহুড়োতে তেমন কিছু আনতে পারিনি। তবে সামান্য কিছু ইউরো আছে সাথে।” পকেট হাতড়াতে গিয়ে মনে পড়ল কোর্টটা ইসাবেলার গায়ে। পেছন ফিরে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ডান পকেটে দ্যাখো কিছু ইউরো আছে। ওগুলো বের করে দাও আমার হাতে।”
ইসাবেলা তাই করল। ইউরোগুলো পেয়ে খুশি হতে দেখা গেল না লিডারকে। খুব সামান্য ওই অর্থে তিনটে মানুষের একদিনের আহারও যোগাড় হবে না।
“এবার তাহলে আমরা আসি।”
“কোথায় যাবে তোমরা?” প্রশ্নটা করল লিডারের পাশের ঘোড়াতে বসা যুবক। নিকোলাস বলল,
“দেখি সামনে কোনো নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যায় কি না।”
যুবক ঘোড়া থেকে নেমে এলো। বলল,
“এই বনের বাইরে সর্বত্র নাৎসি সৈন্যরা। দেখামাত্রই গুলি করে দেবে ওরা তোমাদের। আমাদের আশ্রয়স্থল কাছেই। চাইলে যেতে পারো।”
নিকোলাস সরাসরি না করে দিলে সন্দেহ করবে ওরা। একটু ভাবতে লাগল। ওদের সকলের চোখ নিকোলাসের দিকে। কয়েকজন অখুশি যুবকের প্রস্তাব শুনে। দুটো লোক বেড়ে যাওয়ার মানে খাদ্য কমে যাওয়া। ইসাবেলা সকলের মুখ দেখে পেছনে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় শুধায়,
“কী বলছে ওরা?”
নিকোলাস সংক্ষেপে সবটা বলার পর ইসাবেলা বলল,
“আমাদের উচিত ওদের সাহায্য করা।”
“মাথা খারাপ তোমার? তোমাকে নিয়ে চিরজীবন এভাবে বনজঙ্গলে ঘোরার ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনা কোনোটাই আমার নেই। তাড়াতাড়ি রাশিয়া পৌঁছাতে পারলে বাঁচি।”
ওর চোখের দিকে চেয়ে রইল ইসাবেলা। নিকোলাস ওকে রাশিয়া পৌঁছে দিতে যাচ্ছে এ কথাটা এখনই জানল। ইসাবেলা ওর কাছে সব সময়ই ছিল আপদ। আপদ ঘাড়ে করে কে ঘোরে? মনটা খারাপ হলো কেন ওর? খুশি হওয়ার কথা সে রাশিয়া পৌঁছাবে। পরিবারের কাছে যাবে। কিন্তু ভ্যালেরিয়ার শেষ কাজ? ওর মৃত্যুর প্রতিশোধ? এসব হবে না বলেই কি মন খারাপ হলো? তাই ই হবে।
“আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তাকে এখানে রাখা উচিত হবে না। দশ মাইল দূরের গ্রামটিতে আমার শ্বশুরালয়। সেখানে এখনও নাৎসি বাহিনি আক্রমণ করেনি। আমরা সেখানেই যাচ্ছি।”
সকলের দৃষ্টি স্থির ইসাবেলার দিকে। বিশেষ করে যুবকটি ওকে আপাদমস্তক দেখল। অস্বস্তিতে পুরোপুরি আড়াল হলো নিকোলাসের পেছনে। সাথে থাকা কিছু লোক নিকোলাসের দিকে এগিয়ে যায়। এখানে খাবার,পরার এবং থাকার কষ্ট। ওই গ্রামে গেলে সকলে ভালো থাকবে। নিকোলাসকে ওরা অনুরোধ করে সাথে নেওয়ার জন্য। নিকোলাস এই বিড়ম্বনা আশা করেনি। লিডার হুঙ্কার করে উঠল,
“থামো বলছি। কোথাও যাবে না তোমরা। আর তুমি।”
লিডার আঙুল তাক করে নিকোলাসের দিকে।
“তুমি যেখানকার কথা বলছ গত পরশু রেড আর্মি দখল করে নিয়েছে সে স্থান। ওদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে মরতে চাইলে যেতে পারো।”
এই খবর নিকোলাসের জানা ছিল না। কীভাবে জানবে গত তিনদিন তো ইসাবেলার সাথে আছে। এবার আর কোন অজুহাতে এদের থেকে নিস্তার পাবে? যুবক বলল,
“আমাদের আশ্রমে দুজন নার্স আছেন। ওঁরা তোমার স্ত্রীর খেয়াল রাখবে। ইতোমধ্যে দুটো শিশুর জন্ম ওখানে হয়েছে। এ নিয়ে চিন্তা নেই। চলো।”
নিকোলাস উপায় না দেখে এদের সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়লে ইসাবেলাকে নিয়ে উধাও হবে সে। ও পারত এদের মেরে এখান থেকে চলে যেতে, কিন্তু কেন যেন ইসাবেলার সামনে আজ ওর নৃশংস হতে ইচ্ছে করল না।
জঙ্গলের একেবারে ভেতরে ইহুদি রিফিউজিদের আশ্রয়স্থল। কোনোরকমে বাঁশ, কাঠ আর পাতার ছাউনি দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছে। আবালবৃদ্ধবনিতার দল খাদ্যের অপেক্ষায় বসেছিল। ওদের দেখে ঘিরে ধরল ওরা। হতাশ হলো যখন শুনল খাদ্যের যোগাড় এখনও হয়নি। মায়েরা সন্তান বুকে নিয়ে ক্রন্দনে ভেঙে পড়ে। বৃদ্ধ নারী পুরুষ দু তিনজন হতাশ মুখে ফিরে গেল ছাইনির নিচে। আশ্রয়স্থলে নতুন দুটো মুখকে ওরা খেয়াল করেনি প্রথমে। ওদের এই করুন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগল ইসাবেলার। মা এবং তাদের কোলের সন্তানদের অনাহারী কান্না চোখে জল এনে দিলো। যুবক ওদের দুজনকে নিয়ে চলল পাশের এক পাতা ঘেরা গৃহে। নার্স দুজনকে খবর দেওয়া হলো। ইসাবেলা জানে না ওদের নিকোলাস কী বলেছে। নার্সদের সৌজন্যের হাসি দিয়ে করমর্দনের জন্য যাচ্ছিল ওমনি নিকোলাস ওর হাত চেপে ধরে।
“যেয়ো না।”
চোখের ইশারায় ইসাবেলা কারণ জিজ্ঞেস করতে বলে,
“ওরা টের পেয়ে যাবে তুমি গর্ভবতী নও।”
ইসাবেলার চোখদুটো বড়ো হয়ে যায়। গর্ভবতী আর সে! নিকোলাসকে রেগে কিছু বলত কিন্তু তার আগে নিকোলাস বলল,
“পরে সব বলছি আপাতত এমন ভান করো তুমি শুনতে এবং বলতে পারো না।”
প্রথমে গর্ভবতী তারপর বোবাকালা! করছে কী নিকোলাস ওর সাথে? অন্য সময় হলে বিরোধ করত, কিন্তু এই মুহূর্তে চুপচাপ শুনল নিকোলাসের কথা। এত সহজে ইসাবেলা মানল দেখে একটু যেন অবাক হয়। পরক্ষণেই হাঁফ ছাড়ে নিকোলাস। তারপর নার্সদের উদ্দেশ্যে বলে,
“আমাদের একটু সময় দেবেন প্লিজ।”
নার্স দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়। ওরা যেতে ইসাবেলা তেতে ওঠে,
“আপনার বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে নিকোলাস? কেন ওসব বলেছেন ওদের?”
“উপায় ছিল না। ভেবেছিলাম মিথ্যা বললে ওরা আমাদের যেতে দেবে।”
“কিন্তু দিলো না।”
“হুম।”
“এখন কী করবেন? নার্স পরীক্ষা করতে এলেই তো ধরা খাব দুজন। আজ মৃত্যু নিশ্চিত আমাদের।”
“আমার ভয় নেই। আমাকে মারবে সাধ্য কার? তবে তোমাকে ওরা সহজে মেরে ফেলবে।”
এই পরিস্থিতিতেও ইসাবেলার সাথে মজা করতে ইচ্ছে হলো ওর। ইসাবেলা বুঝল। এই ক মাসে বেশ চিনেছে সে নিকোলাসকে। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,
“আপনি আবার ওই বাজে মজা করছেন আমার সাথে? সিরিয়াসলি এবার আমার ভয় করছে কিন্তু।”
“ভয় নেই। যা বলি মন দিয়ে শোনো। খবরদার যদি পাকামো করেছ?”
ইসাবেলা রেগে তাকায়। পাকামো করেছ মানে কী? ও কি সব সবসময় পাকামো করে? নিকোলাস গা এলিয়ে বাঁশের খুঁটিতে পিঠে লাগিয়ে এক হাতে ইসাবেলার কাঁধ টেনে কাছে নিয়ে এলো।
“ছাড়ুন।”
“হুশ, এই বাঁশ, পাতারও কান আছে। যা বলব কানেকানে। আরো সরে এসো।”
উপায়ন্তর না দেখে আরো সরে বসে ইসাবেলা। নিকোলাসের কথা শুনতে ওর সমস্যা হচ্ছে। একে তো এত নিকটে ওরা। তার ওপর নিকোলাসের হাত কাঁধ শক্ত করে জড়িয়ে আছে। একটু পর নার্সদের সাথে করে যুবকটি আবার ফিরল। যুবক বলল,
“আমরা শহরে যাচ্ছি খাদ্য সংগ্রহের জন্য। তুমিও চলো।”
“আমার স্ত্রীকে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না। তোমরা বরং যাও।”
যুবক ভুরু কুঁচকাল। নিকোলাসের এই স্ত্রৈণতা এবার বেশ বিরক্ত করল যুবককে। কটাক্ষের সুরে বলল,
“তোমার বউকে কেউ নিয়ে যাবে না। চলো।”
নিকোলাস উঠল না। যুবক রেগে বলল,
“প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি সাহসী পুরুষ। এখন দেখছি সেই ভাবনা ভুল ছিল। খামোখা তোমাকে এখানে আনলাম। থাকো বউকে কোলে করে। ভীরু, কাপুরুষ কোথাকার।”
নিকোলাস বেজায় লাগল। ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে ওর দেহ খন্ড বিখন্ড করতে। ইচ্ছেটা দমাল ইসাবেলার মুখ চেয়ে। যুবক বেরিয়ে যেতে নার্স দুজন এগিয়ে গেলেন ইসাবেলার দিকে। ভীত হওয়ার ভান ধরে নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে আছে সে। মুখটা লুকিয়েছে ওর কাঁধে। নার্স অভয় দেওয়ার পরও ইসাবেলা নিকোলাসের গলা ছাড়ল না।
“এমন করলে পরীক্ষা করব কীভাবে?” মধ্যবয়সী নার্সটি অভিযোগ করে। নিকোলাস তখন বলল,
“চোখের সামনে অনেক ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছে আমার স্ত্রী। খুব কোমল মন ওর। এখনও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। নতুন কারো কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে তাই হয়তো। আপনারা কিছু মনে না করলে ওকে একটু সময় দেবেন? এই ধরুন আজকের দিনটা।”
কম বয়সী নার্সটি সাথে সাথে সম্মতি জানায়। ক্ষুধা পেটে কারো সেবা করতে ইচ্ছে করছে না ওর। অন্যজনও আর কিছু বলেন না। দুজনে বেরিয়ে যেতে ইসাবেলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা, ওই ছেলেটা ওমন রেগে গেল কেন? কী বলল ও আপনাকে?”
“বউ পাগলা।” মুচকি হেসে ইসাবেলাকে এক চোখ টিপল। তৎক্ষনাৎ ইসাবেলার খেয়াল হলো নিকোলাসের গলা জড়িয়ে ধরে আছে এখনও। গলা ছেড়ে দূরে বসল লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে। নিকোলাস নিঃশব্দে হাসছে। নিজেকে সামলে অন্যদিকে মুখ করে ইসাবেলা বলল,
“কেন ওই কথা বলল ও? কিছু বলেছেন আপনি ওকে?”
যুবকের কথাগুলো বলতে ইসাবেলা বলল,
“আপনার যাওয়া উচিত ওদের সাথে। স্রষ্টার সৃষ্টিকে সাহায্য করলে স্রষ্টাও আপনাকে সাহায্য করবে। যান না প্লিজ।”
“একদম না। স্রষ্টাকেই যখন মানি না তখন তাঁর সৃষ্টির সাহায্য করব এটা কী করে আশা করলে? ওসব সাহায্য ফাহায্য নিকোলাস করে না। চুপচাপ মুখবন্ধ করে রাতটুকু বসে থাকো।”
নিকোলাসের এই স্বার্থপরতা, কাঠিন্য ইসাবেলাকে আবার মনে করিয়ে দেয় সে কোনো মানুষের সাথে নেই। নিকোলাস আর সবার মতো সাধারণ মানুষ নয় একজন পিশাচ।
“ব্লাডি ব্লাড সাকার কোথাকার!” আস্তে বললেও নিকোলাস শুনল সে কথা। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলল,
“কী বলেছ?”
“বলেছি আপনি একটা হৃদয়হীন, পাষাণ রক্তচোষা। ঘৃণা হয় আপনাকে দেখলে।”
নিকোলাস ওর চোয়াল চেপে ধরে।
“এতকিছু করলাম তবুও আমার প্রতি তোমার এই ঘৃণা কমলো না? তবে তো হৃদয়হীনা তুমিও, বেলা।”
দুজনের দুজনের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। ইসাবেলা হঠাৎ ওর বুকে সজোরে দুহাত ঠেলে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“কোথায় যাচ্ছ?”
নিকোলাসের প্রশ্নের জবাব ইসাবেলা দেয় না। গৃহ ছেড়ে বেরোতে গেলে নিকোলাস ওর হাত টেনে ধরে পুনরায় শুধায়,
“কোথায় যাচ্ছ?
“ওদের সাথে খাবার সংগ্রহে। আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও আমি করি। আর আজ আমি প্রমাণ করে দেবো কে হৃদয়হীন।”
“পাগলামি করো না। নাৎসি বাহিনির হাতে পড়লে রাশিয়া আর ফেরা হবে না তোমার।”
“আমার মা যখন শুনবেন এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে দেখেও আমি চুপচাপ রাশিয়া ফিরে গেছি কষ্ট পাবেন। তিনি আমাকে প্রশ্ন করবেন এই কি শিক্ষা ছিল তাঁর? কোন মুখে জবাব দেবো তখন? নিকোলাস, আমি ওই অসহায় মা, শিশু আর বৃদ্ধদের মুখে একটু অন্ন তুলে দিতে মৃত্যুঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত।”
ইসাবেলা হাত ছাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। যুবক এবং লিডার সহ কয়েকজন তৈরি হয়েছে শহরে যাওয়ার জন্য। ইসাবেলা সেদিকে হাঁটতে লাগল। সকলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে কৌতূহলে। যুবক আর লিডারের সামনে দাঁড়িয়ে বার কয়েক শ্বাস নিলো। তারপর ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাল ও সাথে যেতে চায়। লিডার মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়। বাকিরাও তাই করে। ইসাবেলা এবার একাই চলতে লাগল সামনে। যুবক দৌড়ে ওর হাত চেপে ধরে,
“এই অবস্থায় একা কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়। এসো আমার সাথে।”
ইশারা করে কথাটা বুঝিয়ে দিলো ইসাবেলাকে। ইসাবেলা মাথা নাড়ায়। সে কারো কথা শুনবে না। যুবক ওর হাত ছেড়ে কাঁধ ধরে বলে,
“তুমি খুব ভালো মেয়ে। তোমাকে প্রথম দেখে সেটা বুঝেছি আমি। কিন্তু এভাবে বিপদের মুখে একা যেতে দেবো না তোমাকে।” এবার সে ইশারা করেনি। সুতরাং ইসাবেলা বুঝল না।
“ওর কাঁধ ছাড়ো।”
পেছনে দাঁড়িয়ে চাপা ক্রোধের সাথে বলল নিকোলাস। যুবক ঘুরে দাঁড়ায়। ইসাবেলা রেগে আছে এখনও। নিকোলাসের রাগকে আমলেও নিলো না। যুবকের হাত কাঁধ থেকে ছাড়িয়ে সে আবার হাঁটতে লাগল। নিকোলাস দৌড়ে ওর হাত টেনে ধরে,
“তুমি জিতেছ আমি হেরেছি এবার থামো।”
“তার মানে আপনি যাবেন ওদের সাথে?”
অনিচ্ছাকৃতভাবে মাথা নাড়ায়,
“হ্যাঁ, যাব।”
ইসাবেলা খুশি হয়। নিকোলাস লিডারকে নিজের যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আবার ফিরে আসে ইসাবেলার কাছে।
“আমাকে কথা দাও কোনো প্রকার বোকামি করবে না তুমি। আমি না ফেরা পর্যন্ত চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে।”
নিকোলাসের হাতে হাত রেখে ইসাবেলা বলে,
“কথা দিলাম। আপনি না আসা অব্দি নিজেকে নিরাপদ রেখে অপেক্ষা করব।”
ইসাবেলার কপালে চুমু দিয়ে কিছুক্ষণ ওর চোখে চেয়ে রইল। নিকোলাস ওকে ছেড়ে যুবকের পেছনে ঘোড়ায় চড়ে বসল। বিদায়ের পূর্বে শেষবার একে অপরকে দেখল ওরা। নিকোলাস চোখের আড়াল হতে ইসাবেলার মনটা কেমন যেন করে। ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না তা।
চলবে,,,