#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫২
Writer তানিয়া শেখ
তারকা খচিত রুপোলী সিংহাসনে বসে আছেন চন্দ্রদেবী। চিরযৌবনার অঙ্গজুড়ে ধূসররঙের ফ্লোরটাচ পোশাক। তাতেও ঝিকমিক করছে পীতবর্ণের তারকা। চন্দ্রদেবীর মাথার মুকুটের ওপর বক্র চন্দ্রটা আয়েশিত ভঙ্গিতে হেলে আছে। তাঁর কান্তিময় মুখশ্রী আগাথার আত্মা প্রসন্ন করে। তিনি বিনীতভাবে দাঁড়িয়েছেন চন্দ্রদেবীর সিংহাসনের সামনে। চন্দ্রদেবীর ডান হাতে চুম্বন করে দু কদম পিছিয়ে বললেন,
“দেবী, আমার অভিবাদন গ্রহণ করুন।”
দেবী প্রসন্নমুখে মাথা নাড়েন।
“আগাথা, বাছা আমার, বলো কী বলতে চাও?”
“দেবী, আমি আজ একবার পৃথিবীতে যেতে চাই।”
“তোমার মনে হয় না এ চাওয়া অপ্রয়োজনীয়? তুমি এবং ম্যাক্স যা চেয়েছ তা হচ্ছে। যে দিন দেখার জন্য শত শত বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলে সেই দিন সন্নিকটে। তোমার তো সেখানে এখন আর বোধহয় প্রয়োজন নেই বাছা।”
আগাথা জানেন দেবীর কথা সত্য। তাঁর পৃথিবীতে না গেলেও চলবে, কিন্তু মনটা যে কেমন কেমন করছে। ইসাবেলা কি নিকোলাসকে ভালোবেসে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে পারবে? মাঝপথে যদি ওর ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় নিকোলাসের প্রতি। পিশাচ আর মানবীর প্রেম যে সমাজ এবং ধর্মে নিষিদ্ধ! কত বাঁধা আসবে ওদের মাঝে। দুজনকে আলাদা করতে মরিয়া হয়ে উঠবে সকলে। ইসাবেলা কি পারবে ধৈর্য ধরতে? পারবে তখনও নিকোলাসকে ভালোবাসতে? যদি হার মেনে যায়? তখন আগাথার শত বছরের সাধনা ফের ধূলিসাৎ হবে। সন্তানদের শাপমোচন করতে না পারলে তাঁর যে স্বর্গে বসেও শান্তি নেই।
দেবী ওঁর মনের উচাটন বুঝতে পেরে বললেন,
“বাছা, আমি বুঝি তোমার চিন্তা। তবে তোমায় উপদেশ দেবো এখন তোমার সেখানে না যাওয়ায় ভালো। কিছু ব্যাপার তাদের ওপর ছেড়ে দাও। ওরা ঠেকে শিখুক। তাতে দুজনের মাঝের দুরত্ব ঘুচবে। নিজেদের ওরা আরো ভালো করে চিনবে, জানবে। তুমি শেখালে তা কিন্তু হবে না। সময় ওদের বুঝিয়ে দেবে ওরা একে অপরের কী। তুমি চেষ্টা করলেও তা পারবে না। উলটো তোমার উপস্থিতি আরো সংকট তৈরি করবে। তাই বলছি এই মুহূর্তে তোমার না গেলে ভালো হয়। আমার ওপর ভরসা রাখো, যা হবে ভালোই হবে।”
আগাথা দেবীর কথা মেনে নিলেন। ফিরে গেলেন তিনি। চন্দ্রদেবী সিংহাসন ছেড়ে নিজের জাদুই সাদা গোলকের সামনে দাঁড়ান। গোলকের ওপর হাত রেখে দুচোখ বন্ধ করে বললেন,
“ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ, আমায় বোলো, চিরমিলন না ট্রাজেডি!”
ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ, আমায় দেখাও, ইসাবেলা, নিকোলাসের পরিণতি।”
ধাতব কণ্ঠের ঝংকারে গোলক জবাব দেয়,
“ওফেলিয়া, ওফেলিয়া।”
দেবী গোলকের জবাবে ভুরু কুঁচকে চোখ মেলতে দেখলেন, গোলকের ধোঁয়াশায় এক স্বর্গীয় শিশুর মুখশ্রী ফুটে উঠছে। ছবিটা যত স্পষ্ট হয় দেবীর কপালে ভাঁজ ততই যেন বাড়ে।
পড়ন্ত বিকেল। আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে নীড়ের দিকে। অদূরের উইলো বনটা দেখতে দেখতে ঘন কুয়াশার চাদরে অস্পষ্ট হয়ে এলো। নিকোলাস নিজ কক্ষের ভেতরের টেবিলের পাশের চেয়ারটাতে বসে আছে। টেবিলটা জানালা মুখি। এক ধ্যানে ও বাইরের সন্ধ্যা নামা আকাশটা দেখছে। আগে ভোর হতে দুপুরের পূর্বপর্যন্ত বাদে বাকি দিনরাতে ও কোনো পার্থক্য দেখেনি। কিন্তু এখন ওর কাছে দিন আর রাতের পার্থক্য বেশ করে ধরা দিয়েছে। সারাদিন ধরে অপেক্ষা করে রাত নামার। ওই একটা সময়ই ইসাবেলাকে ও কাছে পায়। বাকি সময় ইসাবেলা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বেনাসের বাড়িতে গেলেও ইসাবেলাকে যখন তখন কাছে পাওয়া একরকম অমাবস্যার চাঁদ যেন। মেজাজ বরং খারাপ হয় সেখানে গেলে। ভিক্টোরিজার মতো কামুক নারীকে বিনীতভাবে বার বার হতাশ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। নিকোলাসকে বিছানায় নিতে ও যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে এই মেয়েকে নিকোলাস কবেই শেষ করে ফেলত। ইসাবেলা ছাড়া কোনো মেয়ের স্পর্শ এখন ওর কাছে সকালের তপ্ত সূর্য কিরণের মতো। সমস্ত শরীর ঝলসে যায় ঘৃণায়।
অপরদিকে ইসাবেলা মহা জেদি। এই মেয়ে দিনের বেলা কিছুতেই দেখা করতে চায় না। কারো চোখে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত ও। মাঝে মাঝে ইসাবেলা এমন জেদি হয়ে ওঠে যে নিকোলাস বাধ্য হয় ওর কথা মানতে। মনে মনে একরাশ অভিমান জন্মে। ওকে সারাদিন না দেখতে পেয়ে ইসাবেলার কি খারাপ লাগে না? এই যে ভিক্টোরিজার সাথে দিনের পর দিন সময় কাটাচ্ছে, ইসাবেলার কি ঈর্ষা হয় না তাতে?
“ঈর্ষা হবে কেন? ও তো আর আমার মতো করে ভালোবাসে না। ওর মনে একা আমিই না, পিটার আছে, মাতভেই আছে। আর আমার মনে কেবল ও। আমার বিরহ ও কি বুঝবে।”
মনে মনে ভাবলো নিকোলাস। ভেতরে কী যে এক বিষম যন্ত্রণার উদ্রেক হলো তা বুঝি প্রকাশ করা দায়।
“ভাই!” কক্ষে আন্দ্রেই এসে উপস্থিত হয়। নিকোলাস গুম মেরে আছে। একটুখানিও নড়ল চড়ল না। আন্দ্রেই ভাবল নিকোলাস হয়তো শুনতে পায়নি। এগিয়ে এসে আবার ডাকল,
“ভাই, ভাই!”
“হুম?”
নিকোলাসের গম্ভীরতা নতুন নয় আন্দ্রেইর কাছে। মুখটা দেখতে না পেলেও ভাইয়ের খারাপ মেজাজ টের পেয়ে বিনীত গলায় বলল,
“ড্যামিয়ানের খোঁজ পেয়েছি।”
ড্যামিয়ানের নাম শুনে নিজের মনের অভিমান ভুলে গেল নিকোলাস। আন্দ্রেইর দিকে ঘুরে বলল,
“কোথায় জানোয়ারটা?”
“সূত্রমতে, সুইডেন থেকে আজই রওয়ানা হয়েছে ড্যামিয়ান। কাল লিথুনিয়া পৌঁছাবে। লিথুনিয়া আসলে ভিক্টোরিজার সাথে ও দেখা করবেই। হাজার হোক পুরোনো প্রিয় প্রেমিকা।”
আন্দ্রেই ক্রূর হাসল। নিকোলাস ঠোঁটের কোণও খানিক বেঁকে যায়।
“ব্লাডি সাইকো স্যাডিস্ট।”
“আর ইউ জেলাস, ভাই?”
বলেই জিহ্বা কাটল আন্দ্রেই। নিকোলাস রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“ওই জানোয়ারটাকে নিয়ে আমার কেন ঈর্ষা হবে?”
“ভিক্টোরিজার কারণে।”
“তোর কি ধারণা ভিক্টোরিজা কে আমি ভালোবাসি?”
“কখনোই না। তুমি ভালোবাসা মানে কি বোঝোই না। ওই অনুভূতির সিস্টেম তোমার মধ্যে নেই। হয়তো ভিক্টোরিজার সার্ভিসে অভ্যস্ত হয়ে গেছো। তোমাদের মাঝে ড্যামিয়ান এলে একটু হিংসে তো হবেই। তাছাড়া তোমরা দুজন বহুকালের প্রতিদ্বন্দ্বী।”
আন্দ্রেইর শেষের কথাগুলো উপেক্ষা করল নিকোলাস। রুষ্ট মুখে বলল,
“তুই বলতে চাস, আমার দ্বারা কাওকে ভালোবাসা অসম্ভব?”
“কতকটা তাই।”
“ভুল জানিস তুই। আমার দ্বারা ভালোবাসা সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। তুই নিজে কোনোদিন ভালোবাসিসনি বলে ওই কথাটা তোর মনে হয়েছে।”
“পিশাচরা ধ্বংস জানে ভাই, ভালোবাসতে না। আমি পিশাচ, আমার ভেতর কেবল স্বার্থপরতা, ধ্বংসাত্মক শক্তি আর নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নেই। ভালোবাসা মানুষের অনুভূতি, দুর্বলের অনুভূতি। আমরা মানুষ নই, দুর্বল নই।”
নিকোলাস ক্ষিপ্র হাতে ওর ঘাড় ধরে বলে,
“এই তো সেদিনও এই কথাগুলোর প্রবোধ দিয়েছিলাম নিজেকে। আজ দ্যাখ তোর এই কথার বিরোধিতা করছি, অস্বীকার করছি। আন্দ্রেই, আমরা জীবন্মৃত কিন্তু আমাদের হৃদয় এখনও জীবন্ত। জীবন্ত যা কিছু আছে সব ভালোবাসতে পারে। আমার সেই জীবন্ত হৃদয়ই আমাকে ভালোবাসতে শেখাবে।”
“আর তারপরে? তারপরে কী ভাই? বউ-বাচ্চা, সুখী সংসার? পিশাচের এসব হয়?”
আন্দ্রেইর কথাতে নিকোলাস চুপ করে যায়। আসলে তো! পিশাচের কী মানুষের মতো এসব হয়? বউ-বাচ্চা? সুখী সংসার? ইসাবেলার সাথে ওর ভবিষ্যৎ কী? ওদের ভালোবাসার পরিণতি কী?
আন্দ্রেইর বিদ্রুপের হাসিতে হুঁশ ফেরে নিকোলাসের। কিন্তু ভাবনার সুতো তখনো জড়িয়ে ধরে আছে।
“জবাব পেলে না তো! পাবেও না। তুমি ভুল করছ ভাই, চরম ভুল করছ। তোমার কাছে এই ভুল আশাতীত।” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল আন্দ্রেই। নিকোলাসের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু নিরুত্তর রইল।
ইসাবেলা নিকোলাসের প্রণয় এখন পিশাচ কমিউনিটির সকলের মুখে মুখে। প্রকাশ্যে না বললেও আড়ালে এই নিয়ে সকলে ক্ষুব্ধ। ঠিক এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে শত্রুপক্ষ। নিকোলাসকে ধ্বংস করার মতলব আঁটছে ওরা। অথচ, নিকোলাসের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে দিনরাত ইসাবেলার ধ্যানে মগ্ন। আন্দ্রেইর এসব লক্ষণ মোটেও ভালো লাগছে না। আজ সে ইচ্ছে করে খোঁচা দিয়েছে নিকোলাসকে। নিকোলাসের এই পরিবর্তন মানতে পারছে না ও। এই পরিবর্তন আতঙ্কের। ভাই কোনো মানবীর প্রেমে পড়বে এ রীতিমতো আশ্চর্যের ব্যাপার ওর কাছে। প্রথমে বিশ্বাসই করেনি। কিন্তু এখন সবটা পরিষ্কার। নিকোলাস ইসাবেলাকে ভালোবাসে। ভাইয়ের চোখেমুখে সেই ভালোবাসা আজ আন্দ্রেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। নিকোলাস কোনোরূপ রাখডাকের চেষ্টাও করছে না। কেন করবে? ওর ভয় কীসের? নিকোলাস কাওকে ভয় পায় না। কিন্তু আন্দ্রেইর অনেক ভয়। এই ভাইয়ের জন্য ও পিতার এক কথাতে মায়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে পিশাচ হয়েছে। ভাইয়ের দিকে আগত সকল বিপদের মোকাবেলা করেছে। আজ আবার চোখের সামনে ভাইয়ের দিকে ধেয়ে আসা বিপদ ও দেখতে পাচ্ছে। ভাইকে সময় থাকতে মিথ্যা প্রেমের মোহজাল থেকে বের করে আনতে হবে। আন্দ্রেই সব সময়ই নিকোলাস আর ওর দিকে আগত বিপদের মাঝে ঢাল হয়ে অবস্থান করেছে।
সোফিয়া ছেলের কারণে নিকোলাসের ক্ষতির চিন্তা করতে শতবার ভাবে। কিন্তু পিতা রিচার্ডকে আন্দ্রেই বিশ্বাস করে না। এই লোক যে কাওকে ম্যানুপুলেট করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে নিকোলাসের বিপক্ষে উসকাচ্ছেন আন্দ্রেইকে তিনি। ভেবেছেন আন্দ্রেইকে আর সবার মতো ম্যানুপুলেট করতে পারবেন? আন্দ্রেই মনে মনে হাসল রিচার্ডের অভিসন্ধি ভেবে।
নিকোলাস আস্তে আস্তে গিয়ে বসল চেয়ারটাতে। আন্দ্রেইর কথা ওকে ভাবাচ্ছে। ভাইয়ের ভাবুক মুখ দেখে আন্দ্রেই বিরক্ত হলো। সামান্য একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে ভাই যেন নিজের লক্ষ্য ভুলে গেছে। নিজের ধ্বংস নিজে ডেকে আনছে। আন্দ্রেই ঠিকই ভেবেছে, ভালোবাসা দুর্বলতার নামান্তর। এই যে ওর সামনেই সেই প্রমাণ। এই প্রেমিক নিকোলাসকে ধ্বংস করা খুব সহজ শত্রু পক্ষের জন্য। কিন্তু আন্দ্রেই কি তা হতে দেবে? ভাইয়ের মুখের দিকে শেষবার চেয়ে কক্ষের ভেতর থেকে অদৃশ্য হলো আন্দ্রেই। একটু পরে নিকোলাস সোজা হয়ে বসে। নীরবতা ভেঙে আপনমনে বলল,
“পরিণতি ভেবে কেউ ভালোবাসে রে আন্দ্রেই। তুই কি পরিণতি ভেবে আমাকে ভালোবেসেছিলি? সেই শিশু বয়সে ভেবেছিলি আমাকে ভালোবাসার কারণে একদিন তোকে পিশাচ হতে হবে? ভালোবাসা এমনই রে আন্দ্রেই, এমনই। আজ আমি ভেবে ভেবেও আমার আর বেলার ভালোবাসার পরিণতির কূল পাইনি, কিন্তু তাতে কী? আমি বেলাকে ভালোবাসা ছেড়ে দেবো? না, কোনোদিন না।”
মাতভেই ও মাদাম আদলৌনা ঘুমাতে ইসাবেলা বাগানে এসে দাঁড়ায়। আজ থেকে থেকে তুষার বৃষ্টি পড়ছে। পরনের মোটা শীতবস্ত্র স্বত্বেও ঠকঠক করে কাঁপছে ইসাবেলা। মাথার স্কার্ফের ওপরে তুষার জমছে। সেগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলছে একটু পর পর। প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেল তবুও নিকোলাসের দেখা নেই। এমন তো হয় না। সবসময় নিকোলাসই আগে উপস্থিত থাকে৷ আজ তবে কী হলো? ভীষণ চিন্তা হতে লাগল ওর। কী করবে এখন? বিড়বিড় করে বারকয়েক নিকোলাসের নাম নিলো। তাতেও এলো না। পাঁচ মিনিট পঁচিশ মিনিট গড়ায়। ইসাবেলা ওখানেই হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইল। দুহাতে হাঁটু জড়িয়ে কাঁপছে ঠাণ্ডায়। দাঁতে দাঁত লেগে যায়। সারা শরীর তুষারে ঢেকে গেলেও ও ওঠে না। ঠাণ্ডায় রক্ত জমে যাচ্ছে। শরীর অবশ অবশ হয়ে এলো। চোখজোড়া ঢুলছে। সেই সময় সামনে একজোড়া কালো জুতো দেখতে পেল আবছা আবছা চোখে। মুখ তুলে দেখল ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে নিকোলাস। কম্পনরত ডান হাতটা বাড়িয়ে বলল,
“নিকোলাস।”
নিকোলাস ওর দিকে চেয়ে রইল একদৃষ্টে। ইসাবেলার গোলাপি পাতলা ঠোঁট ঠাণ্ডায় কালো হয়ে গেছে। কাঁপছে থরথর করে। চোখের পাতা, মুখের এখানে ওখানে জমে আছে তুষার। তীব্র অপরাধবোধের দহনে পুড়তে লাগল। ইসাবেলার হাতটা ধরে বসল ওর সামনে। মাথাটা বুকের ওপর জড়িয়ে নিয়ে সারা গায়ের তুষার পরিষ্কার করল। পাশের ছাউনির তলে নিয়ে বসায়। নিজের পরনের গরম সোয়েটার ওর গায়ে জড়িয়ে দুহাত ঘষে তপ্ত করে ওর ঠাণ্ডা গালে, হাতে তাপ দিতে লাগল। নিচু গলায় বলল,
“আমাকে ক্ষমা করো বেলা, ক্ষমা করো।”
ইসাবেলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরল নিকোলাসকে। জমে যাওয়া শীতল দেহ উষ্ণ হয়। নিকোলাস ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমো খেলো। ইসাবেলা স্মিত হেসে বলে,
“আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে এমনটা করোনি।”
নিকোলাসের অপরাধবোধ আরো বেড়ে যায়। ও ভুল করেছে। ভালোবাসাকে নিক্তিতে চড়িয়ে ভুল করেছে।
চলবে,,,