#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ পর্ব–৫৪

0
621

#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৪
Writer তানিয়া শেখ

হাই তুলে বিছানা ছেড়ে উঠে বসল পল। পেছন ফিরে পাশে শায়িত মেয়েটাকে দেখল। মেয়েটির সোনালি চুল বালিশে ছড়িয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখটি গুঁজে রয়েছে বালিশে। কম্বলটা সরে পিঠের খানিক নিচে নেমে গেছে। ফর্সা দেহের লাল ছোপ ছোপ দাগগুলো দেখে মুচকি হাসল পল। এই দাগ ওই দিয়েছে, আদর করে। আজ ভোরে বারে গিয়েছিল। মেয়েটি নাচছিল ওই বারে। বারের এককোণে বসে গলায় মদ ঢালতে ঢালতে নৃত্য উপভোগ করছিল পল। মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হতে মুচকি হাসে। নাচ শেষে মেয়েটিই এগিয়ে এলো। ড্রিংক কিনে দেওয়ার অফার করে। এমন অফার মানা করে না পল। দুজনের নেশা একটু গাঢ় হতে চলে এলো পলের পুরোনো এই বাড়িটিতে। আদিম উন্মত্ততায় কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় টেরই পায়নি ওরা। ক্লান্ত হয়ে দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছিল একসময়।

নগ্ন দেহে বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ালো পল। গা টা কেমন চিটচিট করছে। গোসল না করলেই না। তার আগে মেয়েটাকে বিদায় করতে হবে।

“অ্যাই ছেমরি, অ্যাই, ওঠ।” নিরস গলায় ডাকল মেয়েটাকে পল। মেয়েটা ঘুম ঘুম চোখে আড়মোড়া তুলে সোজা হতে ওর নগ্ন বুকে দৃষ্টি স্থির হয় পলের। মেয়েটা কোনোরকম ঢাকার চেষ্টা না করে বিগলিত গলায় বলে,

“আরেকটু ঘুমাতে দাও না গো।”

“না, এখনই যা।”

মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়েটির গতরাতের পোশাক তুলে ছুঁড়ে দিলো ওর মুখের ওপর। তারপর টাউজার পরে কিচেনে ঢুকলো পানি গরম করতে। স্টোভে পানি বসিয়ে রুমে ফিরে এসে দেখল মেয়েটি উঠে বসে আছে খাটের ওপর। চাদরটা বুকে জড়ানো। পলকে রুমে ঢুকতে দেখে হাসল। পলের বিরক্তিভরা মুখ সে হাসি ম্লান করে দেয়। গত রাতের কথা ভাবে মেয়েটি। কত ভালোবাসা দেখিয়েছিল এই লোক আর আজ! পুরুষ জাতটাই এমন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে বিরক্তি দেখায়। মেয়েটার কাছে এসব আর নতুন না। অভ্যাস হয়ে গেছে পুরুষদের এমন আচরণে। চাদর সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নগ্ন দেহে এগিয়ে আসে পলের সামনে। আড়চোখে মেয়েটাকে দেখছিল পল। মেয়েটা মুখোমুখি এসে গলা জড়িয়ে মিশে দাঁড়িয়ে বলল,

“সত্যি কি চলে যাব?”

পলের এক হাত মেয়েটার কোমর ছাড়িয়ে নিচে নামে। অন্য হাতে গলা ধরলো, খুব জোরে নয়। তারপর বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বলে,

“এখনই না।”

মেয়েটার ঠোঁটে বিজয়িনী হাসি। পল পরনের টাউজারটা খুলবে সেই মুহূর্তে বাইরে ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে থমকে যায়। দ্রুত পায়ে জানালার কাছে এলো। এই বাড়ির সামনের সরু পাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে কালো ফিটন। একটু পরে সেখান থেকে নামল নোভালি। পলের গলা শুকিয়ে চৈত্রের খরা নামে৷ আতঙ্কিত মুখে ফিরে এলো ঘরের ভেতর। বিছানায় আয়েশে শুয়ে থাকা মেয়েটার বাহু টেনে ধরে বলে,

“দ্রুত কেটে পড়।” মেয়েটা নড়ে না। ভুরু কুঁচকে ওর ভীত মুখে চেয়ে রইল। নোভার পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে নিকটে আসছে। মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে ধমকে উঠল পল,

“যেতে বলেছি না? যা!”

মেয়েটি কপট রাগে গজগজ করতে করতে কাপড় পড়ছে৷ ওর ঢিলেমি পলকে রাগিয়ে দেয়। তাড়া দেয় তাড়াতাড়ি কাপড় পড়তে। মেয়েটি এবার ঝাঁজ গলায় বলে,

“বউকে যখন এত ভয় তবে আমাকে আনলি কেন? রাতে বিছানায় আনার সময় বউয়ের কথা মনে ছিল না?”

পল রেগে তাকাতে হঠাৎ পেছন থেকে শোনে,

“বউ?”

পলের সর্ব শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সাহস হয় না নোভালির দিকে ফিরে তাকানোর। নোভালি এগিয়ে এলো মেয়েটি সামনে।

“কার বউ?”

“এই মরদের।”

পলের ফ্যাকাশে মুখে চেয়ে চোয়াল শক্ত করল নোভালি। তারপর হেসে বলল,

“ভুল বললে৷ ওর মতো পতিতা পুরুষের যোগ্যতা কী আমার স্বামী হবে?”

পলের খারাপ লাগলেও নীরবেই রইল। মেয়েটা নোভালির কথা বিশ্বাস করল না। বলল,

“বউ নও তবে নিশ্চয়ই প্রেমিকা হবে। এই মরদের মুখ দেখেই বোঝা যায় এমনই কিছু তুমি। দেখো কেমন ভয়ে মুখ একটুখানি হয়ে আছে। কিছুই যদি না হও তবে ভয় পাবে কেন?”

“কিছুই হই না আমি ওর। ও আমার ভাইয়ের চাকরমাত্র।”

“আর যা তা বুঝাতে এসো না তো। আমি কচি খুকি নই। লজ্জা হওয়া উচিত তোমার। নিজের পুরুষকে যখন তৃপ্ত করতে না পারো ছেড়ে দিলেই হয়। কাল রাতে বিছানায় আমাকে যেভাবে ধরল তাতে বুঝায় যায় তোমার সাথে ও সুখী না। সুখী হলে কি আর আমাকে নিয়ে আসত ঘরে? আমি বাপু তোমাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু যা সত্যি তা বলতে বাধে না আমার। তুমি ওকে ভয় দেখি কাছে রেখে নির্যাতন করছ। এ ঠিক নয়। দেখো কেমন চুপসে আছে তোমার ভয়ে। দেখতে শুনতে তো তুমি মন্দ নও, দুর্বলতা কীসের গো তোমার? একটা পুরুষ তৃপ্ত করতে পারো না কেমন তরো মেয়েলোক তুমি?”

“থাম বলছি।”

ধমক দিলো পল। ওর অগ্নিদৃষ্টি দেখে মেয়েটা ভড়কে যায়। মেয়েটার হাত সজোরে টেনে ধরে সদর দরজার বাইরে বের করে দিতে উদ্যোত হয়। বাধা দেয় নোভালি।

“হাত ছাড়ো ওর।” শীতল কণ্ঠে বলল নোভালি। পল হাত ছাড়ে না।

“পল!”

মেয়েটার হাত ছেড়ে দেয় পল। ওর বুক কাঁপছে। কর্ণকুহরে বিকট শব্দ হয়ে এসে বাজছে হৃৎস্পন্দন। এই কনকনে ঠাণ্ডাতে ঘামছে ও।
নোভালি মেয়েটির বিদ্রুপাত্মক হাসির দিকে শান্ত চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর মৃদু হেসে বলল,

“দুর্বলতা? আমার?” ঘুরে তাকায় পলের নত মুখের দিকে। তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“আমি কি দুর্বল পল?”

“ও আপনার সম্পর্কে না জেনে কথাগুলো বলেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি, রাজকুমারী।”

মুহূর্তে হিংস্র হয়ে ওঠে নোভালির দৃষ্টি। পলের গলা চেপে ধরে বলে,

“কতবার বলেছি আমাকে রাজকুমারী বলবি না? কতবার?”

পলের দমবন্ধ হয়ে আসে, কিন্তু টু শব্দটি করে না। মেয়েটি নোভালির এই রূপ দেখে ভয় পেয়ে যায়। এখন এখানে থাকা সুবিধাজনক নয়। দরজার দিকে পা বাড়ায় ও। বেশিদূর যেতে পারে না। পলকে সামনের দেওয়ালের ঠেলে মেয়েটির চুলের মুঠি চেপে ধরে।

“আমি যে কতটা সবল আজ তোকে হাড়ে হাড়ে বুঝাব।”

নেহাৎ মানুষের রক্ত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে বলে মেয়েটিকে ও সঙ্গে সঙ্গে মারল না। এত তাড়াতাড়ি মারলে শান্তিও যে পাবে না। দেওয়ালে বার কয়েক বাবারের বলে মতো ছুঁড়ে রক্তাক্ত করল মেয়েটাকে। পল চুপচাপ বসে বসে দেখল। মেয়েটা সাহায্যের জন্য ডাকলেও সাড়া দেয় না। সেই সাহস নেই ওর। নোভালির রাগকে ও ভয় পায়। মেয়েটা ওসব বলে মৃত্যু ডেকে এনেছে। খামোখা বাজে কথা কেন বলল? চাকরকে জড়িয়ে ওমন কথা কোন মনিবই সহ্য করবে? তা ছাড়া নোভালি ওকে ঘৃণা করে। আর বোকা মেয়ে কি না ওকে বউ বানিয়ে দিয়েছে। নোভালি আর বউ। পল প্রহসন মনে করে হাসতে গিয়েও হাসতে পারল না। আড়চোখে নোভালির কুপিত মুখে তাকাল৷ এই মেয়ে ওকে পতিতা পুরুষ বলেছে। তেমনই তো সে। তবে নোভালির মুখ থেকে শুনে এত খারাপ কেন লাগল? মেয়েটার আর্তনাদে সামনে তাকাল। আহত মেয়েটির দিকে আঙুল তুলে নোভালি পলকে বলল,

“তোমার প্রেমিকাকে এক্ষুনি প্রাসাদে নিয়ে চলো, পল। বেশ সমাদরের সাথে ওর আতিথেয়তা করব আজ আমি।”

“ও আমার প্রেমিকা_” পলকে কথা শেষ করতে দেয় না নোভালি। এক হাতে ওর মাথার পেছনের চুল টেনে ধরে অন্য হাতে চোয়াল সজোরে চেপে ধরলো। ব্যথা গিললো দাঁতে দাঁত কামড়ে। চোখে চোখ রাখতে বাধ্য করে নোভালি। পলের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ নোভালির চোখে রাখা। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। নোভালি মুখটা খুব কাছে এনে পৈশাচিক হাসি হেসে বলে,

“কথা দিচ্ছি, তোমার প্রেমিকার আতিথেয়তা খুব উপভোগ্য করে তুলব তোমার সামনে। এতটা যে যতবার প্রেমিকাকে স্মরণ করবে শিওরে উঠবে তুমি, পল। শিওরে উঠবে।”

গোপন খবর মোতাবেক ড্যামিয়ানের আসার কথা ছিল আজ। নিকোলাস ওকে বন্দি করার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে। ওঁৎ পেতে ছিল ওকে সুযোগমতো আক্রমণ করার। কিন্তু আসেনি ড্যামিয়ান। বোধহয় বিপদ টের পেয়ে গেছে। নিকোলাস খবর পেয়েছে সে আবার ফিরে গেছে সুইডেন। প্লান ভেস্তে যাওয়ায় মেজাজ চড়ে গেল নিকোলাসের। এত নিখুঁত প্লান ভেস্তে যাওয়ার কথা তো নয়! আন্দ্রেই, পল আর নোভা ছাড়া এই প্লান সম্পর্কে কেউ জানে না৷ আন্দ্রেই আর নোভা ওকে ধোঁকা দেবে না৷ বাকি থাকল পল। পলকে সন্দেহ করার মতো কিছু খুঁজে পেল না। সে মনিবের বিশ্বস্ত। নিকোলাসের এক কথায় প্রাণটা দিতেও কুণ্ঠা করবে না। ড্যামিয়ান কারণ ছাড়া ভিক্টোরিজার সাথে দেখা না করে সুইডেন ফিরে গেছে এটা মানতে পারছে না নিকোলাস। নিশ্চয়ই ও কিছু টের পেয়েছে। আর যদি নিকোলাসের সন্দেহ সঠিক হয় তবে চিন্তার বিষয় ওর জন্য। বিপদ আশেপাশে ঘাপটি মেরে আছে। সুযোগ খুঁজছে ওকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার। ড্যামিয়ানকে সিরিয়াসভাবে না নেওয়ার উপযুক্ত শিক্ষা নিকোলাস পাচ্ছে এখন। শত্রুকে কখনো ছোটো করে দেখতে নেই। বিপদ উপেক্ষা করলে আরো বাড়ে। বাড়তে বাড়তে একসময় এতটা প্রভাবশালী হয় যে দমানো অসাধ্য হয়ে যায়। বিপদ বাড়তে দেবে না নিকোলাস। প্রথমে খুঁজে বের করবে ঘরের শত্রু বিভীষণকে। ধোঁকাবাজ, বিশ্বাসঘাতকদের ঘৃণা করে ও। কার এত সাহস ওকে ধোঁকা দেয়? কে সে? মগজ টগবগ করে ফুটছে এই মুহূর্তে। নীল চোখজোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ হিংস্র হয়ে উঠেছে মুখ।

“আন্দ্রেই, আন্দ্রেই।”

গর্জন করে ওঠে নিকোলাস। নিমেষে নিকোলাসের সামনে এসে হাজির হয় আন্দ্রেই।

“ভাই?”

“বেনাসের বাড়ির সবকটাকে আজ শেষ করব। কমিউনিটির সকলকে জানিয়ে দে কথাটা।”

আন্দ্রেই মাথা নাড়িয়ে বলে,

“ঠিক আছে।”

হঠাৎ কী ভেবে আবার বলল,

“ইসাবেলাকে কি করবে?”

নিকোলাসের রাগ এই এক নাম শুনতে পড়ে যায়। রাগের মাথায় ভুলেই বসেছিল ও বাড়িতে ইসাবেলাও আছে। ওর প্রিয়তমা। রক্তিম চোখজোড়া শান্ত নীল সমুদ্রে পরিবর্তন হয়। গলা ঝেড়ে বলে,

“আজ তবে থাক। আমি পরে তোকে জানাচ্ছি।”

ইসাবেলার নাম শুনে নিকোলাস এতবড়ো সিদ্ধান্ত এক মুহূর্তে বদলে ফেললো! এই মেয়ের কারণে পরে কত কী না বদলাবে। এত গুরুত্বপূর্ণ কেন হয়ে উঠল এই মানবী ওর ভাইয়ের কাছে? আন্দ্রেইর মোটেও ভালো লাগল না। সে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,

“ইসাবেলা তোমাকে বদলে দিচ্ছে। নরম হচ্ছো তুমি। পিশাচদের নরম হতে নেই ভাই।”

“আমি নরম হইনি আন্দ্রেই। না আমি বদলেছি।”

“ভুল। ওই তুচ্ছ মানবী তোমাকে বদলে দিচ্ছে। যে তুমি কোনোদিন কারো পরোয়া করোনি, আজ সেই তুমি ওই তুচ্ছ মানবীর কথা ভেবে এতবড়ো সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছ। ওই মেয়ে তোমার জন্য ভালো নয় ভাই। বিপদে পড়বে ওর কারণে তুমি। ও এক মোহমায়া, ফাঁদ। ভুলে যেয়ো না ওর দেহে কার রক্ত বইছে। শত্রুর বংশধরকে ভালোবেসে মহা ভুল করছো তুমি। নিজের ধ্বংস নিজে ডেকে আনছো। দুর্বলতায় আমাদের ধ্বংসের কারণ। ওই মেয়ে তোমার দুর্বলতা হয়ে উঠছে। একদিন তোমার ধ্বংসের কারণ হবে ও।”

নিকোলাসের সহ্যাতীত হয়ে যায় কথাগুলো। আন্দ্রেইর গলা চেপে ধরে। তারপর ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। চোখের পলকে ওর কাছে গিয়ে মাথাটা মেঝেতে ঠেসে ধরে। মেঝেতে ফাটল দেখা দেয়। আন্দ্রেইর মনে হয় মাথাটা বুঝি ধড় থেকে আলাদা হওয়ার পথে। একটা সামান্য মানবীর জন্য ভাইয়ের এই আচরণে ভীষণ কষ্ট পায় সে। মানুষ হলে হয়তো ওর চোখে জলের ফোঁটা পড়ত।

“তুই যাকে তুচ্ছ মানবী বলে অপমান করছিস তাকে আমি ভালোবাসি আন্দ্রেই। ওর সম্পর্কে কোনো বাজে কথা আমি সহ্য করব না। শেষবার সতর্ক করছি তোকে। এরপর ওকে নিয়ে অসম্মানজনক কথা বললে আমি ভুলে যাব আমাদের সম্পর্ক। কথাটা মনে রাখিস।”

আন্দ্রেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

“আমাদের সম্পর্ক! হাসালে তুমি। ইসাবেলা ছাড়া আর কেউ তো কিছু হয় না তোমার। যদি হতো তবে তাদের আঘাত দিতে দু’বার ভাবতে।” গলা থেকে জোর করে নিকোলাসের হাত ছাড়িয়ে মেঝের গর্ত থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“আমার মা ঠিকই বলেছিল, তুমি আমাদের কোনোদিন আপন ছিলে না, হবে না। তোমার কাছে আমি কিছু না। বার বার নিজেকে প্রবোধ দিয়েছি মায়ের কথা ভুল। আজ আর প্রবোধ দিতে পারছি না। দুদিনের চেনা এক মানবীর সম্মানের জন্য তুমি আমাকেই অপমান করলে আজ। বুঝিয়ে দিলে আমার মায়ের কথা ঠিক। আমি তোমার কাছে কমিউনিটির আর পাঁচ জনের মতো ছাড়া কিছু না। পস্তাছছি আজ আমি। পস্তাছছি তোমার জন্য এই অভিশপ্ত জীবন বেছে নিয়েছি বলে।”

“আন্দ্রেই!” বিস্ময়াহত হয়ে চেয়ে আছে নিকোলাস। আন্দ্রেই ঘুরে দাঁড়ায়।

“তুমি আমায় যা শাস্তি চাও দাও। কিন্তু সত্যি আমি বলবোই। ওই মেয়ের মায়াজালে তুমি ভুল করছো। ভুলে যাচ্ছো পিশাচ আর মানুষে কেবল শত্রুতা হয়, প্রেম না। সময় থাকতে সজাগ হও ভাই। নয়তো চরম মাশুল গুনতে হবে একদিন তোমাকে, সাথে আমাদেরও। মনে রেখো কথাগুলো। চলি।”

নিকোলাস বাকরুদ্ধ হয়ে রইল। আন্দ্রেই ওর কাছে আর সবার মতো নয়। বড়ো আপন ও। মুখ ফুটে হয়তো কোনোদিন আন্দ্রেইকে বলা হয়নি,”তুই আমার বড়ো আপন রে আন্দ্রেই, বড়ো কাছের।” মুখ ফুটে বলেনি বলে কী আজ আন্দ্রেই এত সহজে পর বলতে পারল? রাগের বশে আগেও তো কত কী বলেছে। কই তখন তো এমন কঠিন কথা শুনিয়ে যায়নি। আন্দ্রেই কেন বোঝে না নিকোলাসের ভালোবাসা! কেন আস্থা নেই ওর ওপর? কেন সবাই বিপক্ষে যাচ্ছে ওদের? ইসাবেলা মানুষ বলে? ওরা বলে, পিশাচ ভালোবাসতে পারে না, মানুষের সাথে পিশাচের প্রেম হয় না। তবে নিকোলাসের কেন হলো? আন্দ্রেই জানে না, কতশতবার ইসাবেলাকে, ওর প্রতি ভালোবাসাকে নিকোলাস অস্বীকার করেছে। আঘাতের পর আঘাত করেছে মেয়েটার মনটাকে। দূরে ঠেলে দিয়েছিল। এত কিছু করেও প্রেমটা ওর হয়েই গেল। ইসাবেলাকে কাছে টানতেই হলো। স্বীকার করতে হয়, সে ভালোবাসে। আন্দ্রেই জানে না, ভালোবাসা দুর্বলতা নয় দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী। দুর্দমনীয় এক অনুভূতি। নিকোলাস আজ চাইছে, আন্দ্রেই প্রেমে পড়ুক, কোনো এক মানবীর প্রেমে পড়ুক। প্রমাণিত হোক আরেকবার, প্রেম সবার হয়, পিশাচেরও।
সেদিন ও উপলব্ধি করবে ইসাবেলা মায়াজাল না। প্রেম মায়াজাল না। প্রেম শত্রু মিত্র দেখে না। ইসাবেলাকে নিকোলাস বিশ্বাস করে। সমস্ত পৃথিবী ওর বিপক্ষে গেলেও ইসাবেলা যাবে না।

“আর যদি যায়?” পিশাচ সত্ত্বা প্রশ্ন তোলে। নিকোলাস মাথা নাড়ায়। পিশাচ সত্ত্বা তবুও একই কথা বলে,

“আর যদি যায়?”

“যাবে না।”

“যদি যায়?”

“কোনোদিন না।”

“যদি যায়?”

পিশাচসত্ত্বার একই প্রশ্নে তিক্ত হয়ে ওঠে নিকোলাস। চোখ বন্ধ করে। কপালে দপদপ করে ফুলে উঠেছে রগ। অস্ফুটে বলে,

“পুরো পৃথিবী বিনাশ করে ফেলব আমি, ইসাবেলাকেও, প্রেমকেও।”

চলবে,,,
(অনেকের অভিযোগ বিশেষ মুহূর্তে এসে পর্ব শেষ করি কেন। কারণ বাকিটা আপনাদের ভাবনার ওপর আমি ছেড়ে দিই। পরেরটুকু নিজেদের মতো করে ভেবে নেবেন❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here