#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৫৫
Writer তানিয়া শেখ
দাঁতে দাঁত কামড়ে বিছানার কোণায় বসে আছে ভিক্টোরিজা। ড্যামিয়ান এবারো কথা দিয়ে কথা রাখেনি। ওর পাঠানো ফুল ফলদানিতে সাজানো ছিল। রাগ করে সেগুলো জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছে ভিক্টোরিজা। বিড়ালটাকে দু-চোখ সহ্য হচ্ছে না এখন আর। জুজানিকে আদেশ করেছে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলতে। শুধু ড্যামিয়ান নয়, ভিক্টোরিজার বর্তমান ক্ষোভের কারণ কিছুটা নিকোলাসও। এই পুরুষ ওকে আরো বেশি ক্ষিপ্ত করছে। নিকোলাসকে যত পেতে চায়, ও যেন ততই দূরে চলে যায়। নিজের সুডৌল দেহ নিয়ে গর্ব করে ভিক্টোরিজা। যে কোনো পুরুষই আকৃষ্ট হবে। চাতক হয়ে থাকবে একটুখানি ইশারার। অথচ, নিকোলাসের সামনে নিজেকে মেলে ধরলেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না। অজুহাত দেখিয়ে বার বার প্রত্যাখ্যান করছে ওকে এবং ওর চাহিদাকে। প্রত্যাখ্যানে অভ্যস্ত নয় ভিক্টোরিজা। নিকোলাসকে এখন ওর যে কোনোভাবেই হোক চায়। নিজের ইগোকে কিছুতেই ছোটো হতে দেবে না। জেদ চেপে বসল। আসুক এবার নিকোলাস।
দৈহিক সম্পর্ক করা ভিক্টোরিজার প্রাত্যহিক রুটিন। ও জানে আর সবার মতো স্বাভাবিক নয় ওর দৈহিক চাহিদা। এ নিয়ে একসময় খারাপ লাগত। নিজেকে পতিতার সাথে তুলনা করে কত কেঁদেছে। সময়ের সাথে এখন সবটা মানিয়ে নিয়েছে। খুব বেশি মাথা ঘামায় না এ নিয়ে আর। নিত্য নতুন পুরুষের সাথে কাটানো সময় উপভোগ করে৷ দেহ আর মন ভিন্ন জিনিস ওর কাছে। দেহ যাকে তাকে দেওয়া যায়, কিন্তু মন হয় বিশেষ একজনের। ভিক্টোরিজার চাহিদা নিকোলাস হতে পারে, কিন্তু ওর চাওয়া ড্যামিয়ান। ড্যামিয়ানকে ও ভালোবাসে। এই একটা পুরুষের বিরহ ওকে রাতের পর রাত কাঁদায়। সিগারেট, মদের নেশায় ভুলতে চায় সেই বিরহ ব্যথা৷ তবুও যে ভুলতে পারে না। হয়ে ওঠে লাগামহীন ব্যভিচারিনী।
পরনের নাইটির রোবটা খুলে ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে ভিক্টোরিজা। জানুয়ারি মাসের ২৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ঠাণ্ডা এই ঘরে এসে মিইয়ে গেছে ফায়ারপ্লেসের আগুনের তাপে। দেহের তাপটাও ক্ষোভ আর ব্যর্থতায় তিরতির করে বেড়ে যাচ্ছে। টেবিলের ওপর থেকে ভদকার বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে গলায় ঢাললো। অর্ধেকটা সাবার করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“মিথ্যুক, মিথ্যুক।”
এই তিরস্কারের তির বর্ষিত হয় ড্যামিয়ানের নামে। তারপর ধীরে ধীরে নিকোলাস হয়ে সমস্ত পুরুষজাতির দিকে ধেয়ে যায়। মনের বিরহে ক্রমশ যেন দুর্বল হয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে। চাদরে মুখ গুঁজে খুব কাঁদে। এই কান্নার কারণ ড্যামিয়ান, ওর দুর্দমনীয় কামুক স্বভাব আর নিকোলাসের প্রত্যাখ্যান। কিছুক্ষণ কেঁদে থম মেরে যায়। বহুক্ষণ একনাগাড়ে বৃষ্টি শেষে প্রকৃতি যেমন হয় তেমনই। তারপর উঠে বসে জানালার বাইরে তাকায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। যুদ্ধের এই সময়ে আশেপাশের কোনো বার কি খোলা আছে? বাইরেটা এখন অনিরাপদ। কিন্তু আর যে থাকতে পারছে না ভিক্টোরিজা। আজ রাতে একটা সঙ্গী ওর ভীষণ প্রয়োজন, নিজের দেহটাকে শান্ত করতে, মনের ব্যথা ভুলতে । সিল্কের অফ সোল্ডার লাল ফ্রক পরে নিলো। ফ্রকটা হাঁটু পর্যন্ত ঝুলে আছে। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, কানে একজোড়া সাদা দামি পাথরের দুল, গলায় চিকন সাদা মতির মালা। সুগন্ধির মাখল অঙ্গে। চুলটা খোলা ছেড়ে দেয় পিঠের ওপর। আয়নায় শেষবার নিজের যৌবনের জৌলুশ দেখে নিলো।পশমি সোয়েটার ফ্রকের ওপর জড়িয়ে বুট জুতো পরে বেরিয়ে এলো রুমের বাইরে। নিচতলায় নামতে মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। মেয়ের আপাদমস্তক দেখে জাস্টিনা বেনাস নীলসন বললেন,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“হুম।”
পঞ্চাশবর্ষীয়া জাস্টিনা লক্ষ্য করলেন ভিক্টোরিজা ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। মায়ের প্রশ্ন ও বুঝতে পারেনি কিংবা মনোযোগ দেয়নি। মেয়েকে আরো কিছু বলবেন তার পূর্বে সে সদর দরজার কাছে চলে গেল। দেশের পরিস্থিতি সুবিধার নয়। বাইরে যখন তখন বেরোতে নিষেধ করেছেন বেনাস। জাস্টিনা মেয়েকে সেকথা স্মরণ করানোর আগেই ভিক্টোরিজা বাড়ির বাইরে চলে গেল। মেয়ের এহেন ঔদ্ধত্য আর বেয়াদবি মোটেও পছন্দ করেন না তিনি। রেগে দ্রুত পদে সদর দরজার বাইরে এলেন। ভিক্টোরিজা ততক্ষণে গাড়িতে উঠে বসেছে। জাস্টিনা মেয়েকে কড়া গলায় নিষেধ করলেন বাড়ির বাইরে যেতে। ভিক্টোরিজা মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে রাস্তায় নামল। পেছনে মায়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে। চাকরদের আদেশ করছেন গাড়ি ঠেকাতে। গাড়ির গতির সাথে চাকরগুলো পেরে উঠল না। ভদকা একটু বেশিই খেয়েছে বোধহয়৷ চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসছে। রাস্তা একেবারে অন্ধকার আর জনমানবশূন্য। নেশার ঘোরে ভয় টয় পেল না অবশ্য। কাছাকাছি বারটাতে যেতে পনেরো মিনিট লাগে৷ ভিক্টোরিজা বেরিয়েছে দশমিনিট হলো। একটা আর্মির গাড়ি পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে নজরে এলো না। একটু যেন অবাক হলো ও। পরক্ষণেই ভাবনাটা ঝেড়ে ফেললো। আর্মি নেই তাতে ভালোই হয়েছে। যাত্রাপথে বাধা পায়নি। এই নির্বিঘ্নতায় মুচকি হাসল। হাসিটুকু দীর্ঘস্থায়ী হলো না। আচমকা কোথা থেকে একটা কালো বড়ো বাদুড় এসে আছড়ে পড়ল গাড়ির সামনের কাচে। ব্রেক ফেল করল ভিক্টোরিজা। গাড়ি রাস্তার পাশের খাদে গিয়ে পড়ে। খাদটা খুব বেশি বিপজ্জনক ছিল না। ঝোপঝাড় আর নর্দমায় ভরা। মাথায় আঘাত পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য অচেতন হয়ে পড়ল। জ্ঞান ফিরল ঘাড়ের ত্বকের কাছে সূচলো কিছুর স্পর্শে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে দেখল গাড়ির অর্ধেক ডুবে আছে খাদের নর্দমায়। ভিক্টোরিজা পাশ ফিরতেই চমকে উঠল। সুদর্শন এক যুবক বসে আছে পাশের সিটে। পরনে সাদা শার্ট আর কালো টাউজার। গলায় প্যাঁচানো সাদা হোয়াইট জাবত। ঠোঁটের কোণে সম্মোহনী হাসি। হাসিটা চেনা লাগল। কার সাথে মিল আছে এই মুখ। ভিক্টোরিজার দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এলো। সামনের যুবকের মুখটাও। তবুও বুঝতে পারে যুবক ঝুঁকে আসছে ওর দিকে। গালের দু’পাশে যুবকের হাত টের পেল। ব্যথায় উহু করে উঠল সাথে সাথে। শুধু গাল নয় সর্ব শরীরের ব্যথা তখন উপলব্ধি করে ভিক্টোরিজা।
“একটু পরে সব ব্যথা চলে যাবে, রিজ। সকল জরা, ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে তুমি।”
“কে,,কে তুমি?” ভয়ার্ত গলায় বলল ভিক্টোরিজা। যুবক হাসল সামান্য শব্দ করে। হাসিটা শুনতে চমৎকার লাগল। যুবক কানের কাছে মুখ এনে বলল,
“আমি?”
“হুম, তুমি। কে তুমি?”
“আন্দ্রেই।” গলার একপাশে যুবক আলতো করে চুমো দিতে শিওরে ওঠে ভিক্টোরিজা। ঢোক গিলে বলে,
“আন্দ্রেই?”
“হুম, আন্দ্রেই। তোমার আন্দ্রেই। আমাকে তুমি চাও না রিজ? বলো?”
ভিক্টোরিজার মস্তিষ্ক নয় নম্বর মহা বিপদ সংকেত জানান দেয়। কিন্তু ওর লোভী দেহটা সব উপেক্ষা করে। জোর করল ভিক্টোরিজাকে হ্যাঁ বলতে। ও বলে,
“হ্যাঁ, চাই।”
“গুড, গার্ল।”
“আমি গার্ল নই। আহ!”
গলার কাছের ত্বক ছিদ্র করে সূচালো কিছু ঢুকে যেতে ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল। ছাড়াতে চাইল যুবককে৷ কিন্তু পারল না। অসুরের মতো শক্তি যুবকের গায়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। ভিক্টোরিজার দেহ একসময় নিস্তেজ হয়ে এলো। দেহটা মরণ যন্ত্রণা কাতরাচ্ছে। ঝাপসা সিক্ত চোখে যুবকের মুখ দেখল। এই মুখের আদল ও চিনেছে। নিকোলাসের সাথে ভীষণ মিল এই মুখের। এখন এই মুখ সুন্দর নয়, ভয়ংকর বিভৎস লাগছে। মুখে লেগে আছে রক্ত। মৃত্যু ভয়ে কাঁদতে লাগল ভিক্টোরিজা। যুবক ওর গালের একপাশে হাত রেখে বলল,
“হুশ, কাঁদে না বেবি। এখনই সব ব্যথা চলে যাবে। তাই তো চাও তুমি, হুম?”
“প্লিজ মেরো না আমায়।”
“বাঁচতে চাও?”
“হ্যাঁ।”
যুবকের হাসির শব্দ আবার শুনতে পেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ভিক্টোরিজার। চোখ বন্ধ করে ফেললো। হঠাৎ ঠোঁটের কাছে নোনতা ভেজা কিছু টের পায়।
“ঠোঁট আলগা করো, রিজ। পান করো অমৃতসুধা। এই তোমাকে সকল ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে। আর আমাকে চিন্তা থেকে।”
ভিক্টোরিজা কিছু বুঝল না। বুঝার মতো অবস্থাতেও নেই এই মুহূর্তে। ঠোঁট আলগা করে জিহবা দিয়ে গিলে ফেললো আঠালো ভেজা জিনিসটা। তারপর একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
মেয়ের ওপরের রাগ বাড়ির চাকরদের ওপর উসুল করলেন জাস্টিনা। সবগুলোকে বকেঝকে কাঁদিয়ে ছাড়লেন। মাতভেইর পায়ের জন্য স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে গিয়েছেন মাদাম আদলৌনা। রান্নাঘরে ইসাবেলা একা ছিল। জাস্টিনা এসে অকারণে ওকে বকতে আরম্ভ করলেন। ওর নীরবতা দেখে পাশে রাখা পানি ভর্তি জগটা ছুঁড়ে মারলেন। সারা গা ভিজল সাথে গলার কাছটা জগের কোণাতে খোচা লেগে কেটে গেল। এত অপমানে কেঁদেই ফেললো ইসাবেলা। জাস্টিনার বিন্দুমাত্র মায়া হলো না। কান্না শুনে কঠিন মুখে ধমকাতে লাগলেন। বাইরে গাড়ির হর্ণ বাজতে বেরিয়ে গেলেন কিচেন ছেড়ে। ইসাবেলা দুহাতে মুখ ঢেকে এক ছুটে চলে এলো ওদের থাকার রুমের সামনে। দরজা কাছে এসে থেমে যায়। ওকে কাঁদতে দেখলে মাতভেই কষ্ট পাবে। ইসাবেলা রুমে ঢুকলো না। ফুপাতে ফুপাতে একটু দূরের অন্ধকারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইল। দুহাতে মুখ ঢেকে খুব কাঁদল। ইচ্ছে করলে জাস্টিনার অপমানের প্রতিবাদ করতে পারত, কিন্তু পরে কী হতো? এ বাড়ি থেকে ওদের বের করে দিতেন বেনাস। ইসাবেলার ভয় মাতভেইকে নিয়ে। ও বেচারা এ বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়ে উঠবে! কাছের মানুষদের জন্য কত কী সইতে হয় মানুষকে।
“বেলা!”
ইসাবেলার গলায় কান্না আঁটকে গেল নিকোলাসের গলা শুনে। চোখ তুলতে সামনে দৃশ্যমান হলো নিকোলাস। হাঁটু ভেঙে বসল ওর সামনে। আঁজলা ভরে ওর মুখটা তুলে উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
“কী হয়েছে?”
ইসাবেলা মুখ সরিয়ে নেয় ওর আঁজলা থেকে। গত দুইদিন নিকোলাস ওর সাথে দেখা করতে আসেনি। পলকে দিয়ে গোপনে চিঠি পাঠিয়েছিল, জরুরি কাজে আটকা পড়েছে তাই আসতে পারবে না। ইসাবেলার কেন যেন বিশ্বাস হয়নি চিঠির কথাগুলো। ওর মন বলেছে ইচ্ছে করে আসেনি নিকোলাস। নিকোলাস হাঁপ ছেড়ে বলে,
“আ’ম সরি।”
“কেন? আমাকে এখন আর ভালো লাগছে না বলে?”
“বেলা!”
“ডাকবে না ওই নামে। তুমি ভেবেছো আমি বোকা? কিছু বুঝি না? পলকে চিঠি লিখলে সত্য গোপন করতে পারবে? ভুল তুমি। আমি তোমায় মন দিয়েছি। আমার সেই মন সব বলে দিতে পারে। তুমি দূরে সরে যেতে চাচ্ছো, তাই না?”
নিকোলাসের নীরবতায় ইসাবেলার বুকের বা’পাশে চিনচিনে ব্যথার উদ্রেক হয়। আহত মুখে চেয়ে বলল,
“সত্যি তুমি দূরে সরে যেতে চাইছ, নিকোলাস?”
“এটাই হয়তো আমাদের জন্য ভালো, বেলা।”
স্তব্ধ হয়ে গেল ইসাবেলা। নিকোলাসের মুখের ভাষা বোঝা দায়। দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছে। ইসাবেলা আর সহ্য করতে পারল না। কষে চড় দিলো নিকোলাসের চোয়ালে।
“দূরে সরে যাবি? এত সোজা? তবে কাছে কেন এসেছিলি? আমাকে ব্যবহার করতে? চুমো খেতে? চুমো খাওয়া শেষ এখন মন উঠে গেছে? পিশাচ, জানোয়ার। এই ছিল তোর মনে?”
নিকোলাসের বুকে আঘাত করে কান্নাসিক্ত গলায় বলল। ওর হাত ধরে ফেলে নিকোলাস। রেগে বলে,
“কী বললে? আবার বলো?”
“কেন বলব? বলব না। ছাড় আমার হাত।”
“যা বলেছে আবার বলো বেলা।”
“না বললে কী করবি? রক্ত খাবি? খা।”
নিকোলাসের মুখের সামনে উন্মুক্ত গলা বাড়িয়ে দেয় ইসাবেলা। গলার কাটা স্থানের রক্ত নিকোলাসের পিশাচটাকে উন্মাদ করে তোলে। রাগে ইসাবেলার কোনোদিকে খেয়াল নেই। দুচোখ বন্ধ করল নিকোলাস। নিজেকে সংযত করতে বিড়বিড় করে বলে,
“ঘাড় সরাও বেলা, ঘাড় সরাও।”
“কী হলো খা। মেরে ফেল আমাকে। একেবারে শেষ করে ফেল, প্রতারক, মিথ্যাবাদী।”
শেষ শব্দ দুটো শুনে রেগে তাকায় নিকোলাস। কিন্তু রাগটা পড়ে যায় ওর রক্তনেশার স্বভাবের দৌরাত্ম্যে। ইসাবেলা রাগের বশে গলা একেবারে মুখের কাছে এনেছে। নিকোলাসের দু’ঠোঁটের পাশ দিয়ে সাদা শ্বদন্ত বেরিয়ে এলো। নিজেকে সংযত করার আগেই দাঁত দুটো বসিয়ে দিলো ইসাবেলার গলায়। ব্যথা হিসহিসিয়ে ওঠে ইসাবেলা। পরক্ষণেই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। নিকোলাস যখন বুঝতে পারল কী করেছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। রক্তমাখা মুখে ইসাবেলার গলা থেকে মুখ তুলে অস্ফুটে বলল,
“এ আমি কী করলাম! বেলা!”
ইসাবেলা নিশ্চুপ হয়ে আছে। ওর দু-চোখে জল। নিকোলাস হাত বাড়িয়ে ওকে ছুঁতে গেলে আঁতকে ওঠে। ছিটকে সরে যায় দূরে।
“স্বার্থপর, রক্তপিশাচ, স্পর্শ করবে না আমাকে তুমি। ঘৃণা করি তোমাকে আমি, ঘৃণা করি।”
ইসাবেলা ঘাড় চেপে উঠে দাঁড়িয়ে এক ছুটে নিকোলাসের চোখের সামনে থেকে পালিয়ে গেল। অসহায়ের মতো সেদিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল নিকোলাস। তারপর হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে চলে এলো পাহাড়ের সেই বাড়িটাতে। দুহাতের মুষ্টিতে কাঠের দেওয়ালে একটার পর একটা আঘাত করে৷ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কাঠের দেওয়াল। বাড়ির ভেতরের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে। ধারালো নখে দেহে আঘাত করল, কিন্তু কোনো ব্যথাবোধ নেই। একটু পর সব আগের মতো। আঘাতের চিহ্ন পর্যন্ত নেই কোথাও। পিশাচরা ব্যথা, জরা, মৃত্যু সব থেকে মুক্ত। নিকোলাস আজ মাথা কোটে মেঝেতে। ঘৃণার সাথে উচ্চারণ করে,
“পিশাচ, পিশাচ। বেলার ঘৃণার আগুনে পুড়ে ছাই হ তুই। ধ্বংস হ।”
চলবে,,,