#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৭১
Writer তানিয়া শেখ
নৈশভোজের জন্য একত্রিত হয়েছে ম্যাক্সওয়েল পরিবারের সবাই। ডাইনিং টেবিলের মধ্যমণি ম্যাক্সওয়েল বংশের বর্তমান কর্তা প্রবীণ মার্কোভিক ম্যাক্সওয়েল পেট্রব। তাঁর দু’পাশে বসেছেন দুই ছেলে রজার ম্যাক্সওয়েল ও ম্যাক্সিম ম্যাক্সওয়েল। তাঁদের পাশে বসা তাঁদের স্ত্রী। পঞ্চাশ বর্ষী রজারের স্ত্রী দাশার পাশেই মার্কোভিকের তৃতীয় সন্তান আন্না মেরিও ও তাঁর পরিবার বসেছে। ওপর পাশে বসেছে রজার ও ম্যাক্সিমের তিন সন্তান। খাবার টেবিলে এদের কারো মুখে রা নেই। এ বাড়ির নিয়ম খেতে বসে কর্তার অনুমতি ব্যতিরেকে কথা বলা যাবে না। এর অন্যথা করার সাহস আজ পর্যন্ত কেউ দেখায়নি। মার্কোভিক ম্যাক্সওয়েল খুব রাশভারি স্বভাবের লোক। গম্ভীরতার দেয়াল যেন সবসময়ই তাঁর চতুর্দিকে থাকে। সন্তানেরা পিতার বাধ্যগত। পিতার কথাই তাঁদের জন্য অকাট্য। নাতি-নাতনিরাও এসব শিখেই বড়ো হয়েছে। কোনোক্রমে আপন পিতা-মাতার অবাধ্য হলেও পিতামহ/ মাতামহের অবাধ্য তারা হয় না। মার্কোভিক ম্যাক্সওয়েলের এমনই প্রভাব ওদের ওপর। তাতিয়ানা সেকথা আবারও প্রমাণ করেছে। সকলের কথা অমান্য করলেও মাতামহের কথা ও অমান্য করতে পারেনি৷ মার্কোভিকের কিছু আশ্চর্যরকমের বিশেষত্ব আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, না কে খুব সহজে হ্যাঁ করাতে পারেন। কীভাবে পারেন সেটা আপাতত এড়িয়ে গেলাম।
নৈশভোজের আগে প্রার্থনার নিয়ম এ বাড়িতে। সেখানে মৃত পূর্বপুরুষদেরকে স্মরণ করা হয়। শান্তি কামনা করা হয় তাঁদের আত্মার। প্রার্থনা শেষ হতে তিখন কারাতের নির্দেশে দাসীরা টেবিলে খাবার পরিবেশন করে। নিঃশব্দে খাচ্ছে সকলে। নীরবতায় বিঘ্ন ঘটে তাশার কান্নার শব্দে। দোতলার রুমে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল ওকে। মেয়েটা আবার দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেল কি না ভেবে উঠে যাবে বলে নড়ে ওঠে মাতভেই। টেবিলের সকলে এমনভাবে তাকায় যেন বেঠিক কিছু করেছে সে। মাতভেই প্রথমে বুঝতে পারেনি। তাতিয়ানা টেবিলের নিচে হাত বাড়িয়ে রাখল ওর হাতের ওপর। মৃদু চাপ দিতে মাতভেই তাকালো। তাতিয়ানা ইশারায় বুঝায়,”উঠো না।” মাতভেইর ভুরু কুঁচকে যায়। একদিকে ওর মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদছে আর মা হয়ে তাতিয়ানা ওকে উঠতে নিষেধ করছে! মা হিসেবে তাতিয়ানার তুলনা হয় না। কিন্তু আজ মাতভেই রুষ্ট হলো। ওর মুখের রুষ্টতা মার্কোভিকের নজর এড়াল না। চশমার ফাঁকে নির্লিপ্ত চাহনিতে চেয়ে রইলেন। তাঁর মৃদু গলা ঝাড়ার শব্দ সবার দৃষ্টি আর্কষণ করল। স্যুপের চামচ ঠোঁটের মাঝ থেকে নামিয়ে বাটিতে রাখলেন মার্কোভিক। ন্যাপকিনে ঠোঁট মুছতে মুছতে বললেন,
“তোমাকে যেতে হবে না মাতভেই। এখনই ওর কান্না থেমে যাবে।”
ঠিক তাই ই হলো। সকলে এর রহস্য জানতে আগ্রহী। মার্কোভিক কিন্তু চুপ করে গেলেন। ফের হাতে তুলে নিলেন স্যুপের চামচ। এর অর্থ সকলকে খেতে নির্দেশ দিলেন তিনি। মাতভেই চামচ বাটির মধ্যে নাড়াচাড়া করলেও মুখে তুললো। একটু পর পরই ওর চোখ দোতলার দিকে যাচ্ছে। মেয়েকে না দেখে খেতে ইচ্ছে করছে না। তাতিয়ানার অবস্থাও একই। আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেটা প্রকাশিত না হোক। তাশা এ বাড়িতে নিরাপদ। তা জানা স্বত্বেও তাতিয়ানার মন শান্ত হলো না। মার্কোভিক আড়চোখে দুজনকে দেখলেন। চোখ সরাতে গিয়ে তাতিয়ানার পাশে বসা ইসাবেলার ওপর থামে। স্মিত হাসি ওর ঠোঁটে। গালের একপাশে একটা হাত। অন্যটা দিয়ে বাটির স্যুপে চামচ নাড়াচাড়া করছে। হঠাৎ চোখ তুলে পাশে তাকাতে নানার চোখে চোখ পড়ে যায় ইসাবেলার। হাসি নিভে যায় দপ করে। চকিতে বাটির দিকে তাকায়। বুকের ভেতর ধড়াস ধড়াস করছে। নানার কঠোর দৃষ্টিকে ও ভয় পায়। তাশার জন্য আর সবার মতো ও নিজেও চিন্তিত। হঠাৎ নিকোলাসের সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো মনে পড়তে খানিক হেসেছিল। সেটায় এখন বেকায়দায় ফেললো। নিকোলাস যেন খুব গোপনীয় একটা চিঠি। যা কেবল একা ইসাবেলা দেখবে, পড়বে। গোপনে হৃদয়পুরের সিন্দুকে লুকিয়ে রাখবে। অন্য কেউ এর ধারণা পর্যন্ত পাক সেটা ও চায় না। তাতে যে ভীষণ বিপদ ঘটতে পারে। ইসাবেলা মনে মনে প্রার্থনা করে নানা যেন কিছু সন্দেহ না করেন৷ চোখের কোণ দিয়ে সতর্কে চাইল একবার। নানা খাবারের দিকে চেয়ে খাচ্ছেন। গোপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ইসাবেলা। ও বোঝে না ওর এই অতিসাবধানি অঙ্গভঙ্গি আশপাশের মানুষদের মাঝে আরও বেশি সন্দেহের সৃষ্টি করে।
তাশার খিলখিল হাসি শুনে সিঁড়ির দিকে তাকায় মাতভেই। একা একা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা করার সাধ্য তাশার নেই। বয়সের তুলনায় শরীর একেবারে দুর্বল। এখনও ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না। বাড়ির সকলে ডাইনিংএ। রাঁধুনি ছাড়া বাকি কাজের লোকেরাও। রাঁধুনির বাড়ির ভেতর আসার অনুমতি নেই৷ তবে তাশা কার সাথে? শুধু মাতভেই নয় এই প্রশ্ন ডাইনিংএ বসা অনেকের। সকলের প্রশ্নের জবাব একটু পরেই হলঘরে পা রাখে। দশ বা এগারো বছরের একজন বালিকার কোলে চড়ে আছে তাশা। মেয়েটি দেখতে হৃদপুষ্ট, মাথায় বাদামী চুল ও গোলাগাল সুশ্রী চেহারা। মুখটা আনত বলে ওর চোখজোড়া দেখা যাচ্ছে না। কোমলতার নিবিড় ছায়া ওর মাঝে স্পষ্ট। তাশার মাথাটা মেয়েটার বুকের ওপর। মুখে আঙুল দিয়ে পিতা-মাতার দিকে হাসিমুখে তাকায়। তারপর আবার মেয়েটির মুখের দিকে। ওকে দেখে মেয়েটিও মুচকি হাসল। এত অল্প সময়ে কী ভাব ওদের!
“তুমি কে?” মাতভেইর প্রশ্নে সভয়ে চোখ তুললো মেয়েটি। একজোড়া ডাগর বাদামী চোখ। বোবার মতো কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে টেবিলের সোজাসুজি তাকাল। সেখানে তিখন কারাতে দাঁড়িয়ে। শান্ত তাঁর দৃষ্টি। মার্কোভিকের খাওয়া শেষ। মুখ মুছে চেয়ারে গা এলিয়ে বললেন,
“ও হচ্ছে তিখনের নাতনি। নামটা কী যেন মেয়ে তোমার?”
নামটা আবার ভুলে গেছেন মার্কোভিক। বালিকাটি তিখনের দিকে তাকাতে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেওয়ার অনুমতি দিয়ে বলল,
“রেইনি কারাতে।” বিনীত অথচ, ভীত কণ্ঠস্বর। মার্কোভিক মাথা দুলিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ, ও হলো রেইনি। তিখনের নাতনি। এখন থেকে ও তাশার সাথে সর্বক্ষণ থাকবে।”
“বেবিসিটার! কিন্তু ও নিজেই তো একটা বাচ্চা মেয়ে।”
মাতভেই বলল। মার্কোভিক সরাসরি তাকালেন এবার মাতভেইর দিকে। নাতনি জামাতা হিসেবে খুব যে ওকে পছন্দ তা নয়। কিন্তু তাতিয়ানার মতো উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভালো ছেলে পাওয়া মুশকিল। নাতনির মাথা থেকে কুমারি মায়ের দুর্নাম ঘুচাতে মাতভেইকে তিনি নাত জামাতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নচেৎ প্রতিপক্ষ দেশের ছেলেকে ঘরে আশ্রয় দেওয়ারই পক্ষপাতি নন।
“মাতভেই, এ বাড়ির কর্তা আমি। কার কীসে ভালো তা আমি তোমার চেয়ে ভালো বুঝি। আমার পরিবার সেটা মানে। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে ওরা। এ নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তোলে না। আমি সেটার অনুমতিও দিই না। তুমি বাইরের লোক। নতুন নতুন আত্মীয়তা হয়েছে। একটু সময় লাগলেও সবটা বুঝে যাবে। ওই যে বসে আছে তোমার হবু শ্বশুর মশাই আর শাশুড়ী। তাঁরা তোমাকে ঠিক সব বুঝিয়ে দেবেন।” মেয়ে এবং জামাতার মুখের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন মার্কোভিক। মাতভেই কাওকে লজ্জিত করতে চাইনি। হবু শ্বশুর ও শাশুড়ীর আনত মুখ দেখে না চাইতেও চুপ করে গেল। নানা শ্বশুরের তিক্ত কথা বেশ ঘায়েল করল ওকে। তাশা ওর মেয়ে। তবে মার্কোভিক কেন কিছু না জানিয়ে তাশার ব্যাপারে একা সিদ্ধান্ত নেবেন? রেইনি নিজেই শিশু। শৈশব উপভোগের সময় এখন ওর। আর এঁরা কি না জোর করে দায়িত্ব চাপিয়ে সেই শৈশবের আনন্দটাকে পিষে মারতে চায়! মাতভেই অনিয়ম, অন্যায় মেনে নিতে পারে না। আপনজনদের মুখ চেয়ে আজ বাধ্য হলো চুপ করে থাকতে। তবে মার্কোভিকের এহেন আচরণে ও মনঃক্ষুণ্ন হয়। ডাইনিংএ বসা সকলে সেটা বুঝতে পেরেও কোনো কথা বলল না। নানাকে ইসাবেলা অপছন্দ করে না৷ কিন্তু তাঁর এমন দাম্ভিক, গম্ভীর স্বভাবকে পছন্দও করে না ও। মাঝে মাঝে তিনি যেন বেশিই নির্দয় আর রূঢ় হয়ে ওঠেন।
খাওয়া শেষে যে যার কক্ষে চলে গেল। তাতিয়ানা ও মাতভেইর সাথে রেইনিকে পাঠানো হয়েছে। ওর আর তাশার জন্য দোতলায় নতুন একটা কক্ষ খোলা হয়েছে। তিখনও গিয়েছে ওদের সাথে।
ইসাবেলার কক্ষটি দাদা-দাদির কক্ষের পাশে। তাদের শুভরাত্রি বলে কক্ষে গিয়ে খিল দিলো। তারপর দ্রুত এলো জানালার কাছে। জানালা খুলে দিতে এক ঝাপটা হিম বাতাস ওর ওপর আছরে পড়ল। কাঁপুনি দিয়ে ওঠে দেহটা। আজ তুষার পড়ছে। যতদূর চোখ যায় যেন শ্বেতশুভ্র ক্যানভাস। যা চোখে ও মনে প্রশান্তি আনে। ইসাবেলার সেই প্রশান্তি বহুগুণ বাড়ে হিম বাতাসে ভেসে আসা সোঁদা মাটির তীব্র গন্ধে। ঠোঁটে হাসি নিয়ে খোলা জানালার কাছ থেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। বুকের ওপর টেনে নিলো কম্বল। পিঠ জানালার দিকে। পুরো কক্ষে মৌ মৌ করছে সোঁদা মাটির গন্ধ। জানালার কবাট বন্ধ হতে শুনলো। তারপর ভারি পায়ের আওয়াজ। ধীরে ধীরে সেটি বিছানার দিকে আসছে। ইসাবেলা ঘুমের ভান করে পড়ে রইল বিছানার ওপর।
“বেলা।”
এমন ব্যাকুল ডাক উপেক্ষা করা দায়। মনকে বুঝিয়ে দায়টা পাশে রাখল ইসাবেলা। শিওরের পাশের বিছানা বসে যায়। নিকোলাসের দেহের শীতলতা টের পাচ্ছে ও। তবুও চোখ মেললো না।
“আমি জানি তুমি জেগে আছো বেলা।”
ইসাবেলা একটুও অবাক হলো না। সব জেনেশুনেই ও মিথ্যা ঘুমের ভান ধরে আছে। নিকোলাসকে জ্বালাতে ইচ্ছে করছে কেন যেন। সারাদিন ওকে ছাড়া কম জ্বলেনি ও।
“এসবের মানে কী বেলা? ওঠো বলছি। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করিয়ে এখন আবার ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছো। বেলা, ওঠো।”
নিকোলাস ওর কাঁধ ঝাঁকাল। ইসাবেলা তাতেও যদি চোখ মেলতো! নিকোলাসকে বিরক্ত করে মজা পাচ্ছে। ওর ঠোঁট চেপে হাসি সংবরণের চেষ্টা নিকোলাসের চোখে পড়ে যায়। মনে মনে বলে,
“ওহ! তাহলে এই কথা!”
নিকোলাস মুচকি হাসল। ওর গা এলিয়ে দেওয়া শরীরটা টেনে বসায় সামনে। শব্দ করে হাফ ছেড়ে বলল,
“সারাদিন ধরে ভেবেছি কথাটা তোমার সামনে কী করে বলব! কিন্তু না বললেও তো ধোঁকা হয়ে যাবে। আ’ম সরি বেলা। আমি সত্যি সরি। আসলে মেয়েটা_”
“মেয়েটা! কোন মেয়েটা?” চোখ পাকিয়ে তাকায় ইসাবেলা। গলা সামান্য চড়ে গেল,
“আসলে মেয়েটা কী? বলো?”
নিকোলাস চুপ করে ওকে দেখছিল। ইসাবেলা চোখে চোখ রাখল। বিশ্বস্ততা দেখছে সেখানে। নিকোলাসের আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। শান্ত হলো ইসাবেলা। সরে এলো ওর খুব কাছে।নিকোলাসের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হলো। বুকের ওপর মাথা রেখে ধরা গলায় বলল,
“কেন কাঁদাতে চাও আমায় তুমি?”
“মেবি আমি স্যাডিস্ট?” ইসাবেলা ভুরু কুঁচকে তাকাতে সিরিয়াস গলায় বলল,
“আ’ম সরি৷ আর এমন করব না।”
ইসাবেলার মাথার ওপর চুমু খেলো নিকোলাস। হাতটা তুলে নিলো হাতে। ওর হাতের আঙুলগুলো নিয়ে খেলতে লাগল। অনামিকা আলতো করে বুলিয়ে দেয়। সেখানে একটা আংটি কল্পনা করে। নিকোলাসের নামের আংটি। দারুন এক অনুভূতির স্রোত বয়ে যায় বুকের ভেতর।
“তুমি আমার নিকোলাস। তোমার সবকিছুর ওপর একমাত্র আমার হক, আমার দাবী। বাকি পৃথিবীর সব মেয়ের জন্য তুমি নিষিদ্ধ।” বুকের সাথে আরও মিশে গেল ইসাবেলা। গুটিশুটি মেরে রইল কোলের মধ্যে।
“আর তুমি?” জানতে চাইল নিকোলাস। ইসাবেলা দৃঢ়তার সাথে বলল,
“আমি তোমার, আমৃত্যু তোমারই।”
নিকোলাসের হৃৎস্পন্দনের গতি তীব্র হয়। ইসাবেলা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। বা’পাশের বুকের ওপর হাত রাখল।
“বলো এই হৃদয় কেবল আমার জন্য স্পন্দিত হয়। বলো নিকোলাস।”
“তোমার জন্য বেলা, শুধু তোমার জন্য।”
চলবে,,