#প্রিয়ঃ
চতুর্দশ পর্বঃ
মোর্শেদা রুবিঃ
——————–
শারদ একেবারেই রাজী ছিলোনা ইরার বিয়েতে যেতে।প্রিয়া ওকে বোঝালো যে,কেউ দাওয়াত করলে তা সাধ্যমতো কবুল করতে হয় তাছাড়া সে প্রিয়’র খালামনি।প্রিয়র নানাবাড়ীর দিকের আত্মীয়তাকে এভাবে একেবারে এড়িয়ে যাওয়াটা শোভনীয় হবে না।তখন লোকজন বলবে নতুন বৌ এসে শারদ আর প্রিয়কে তার আপনজনদের নিকট থেকে দুর করে দিয়েছে।এই শেষোক্ত কথাটা শারদকে তার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করলো।
নীরা মারা যাবার পর বিশেষ করে ইরার সাথে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবার পর শারদ ভেবে রেখেছিলো জীবনে আর কখনো ওমুখো হবেনা।কিন্তু আজ প্রিয়ার আগ্রহ আর বাস্তবিক বিবেচনায় ইরার বিয়েতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।বলা যেতে পারে এটা এক ধরনের রি-ইউনিয়ন।ইরার পাগলামীকে উপেক্ষা না করলে এর রেশ সারাজীবনই রয়ে যাবে।প্রিয়’র নানুও আদরের নাতনী থেকে দুর হয়ে যাবে।অনেক ভেবে শারদ নিজেকে নীরার বর হিসেবেই সেখানে উপস্থিত করতে চাইলো।
যখন ওরা কনভেনশন হলে পৌঁছুলো তখনো উৎসব ততটা জমে উঠেনি।লোকজন আসা শুরু করেছে মাত্র!শারদ ঘড়ির দিকে তাকালো।পৌণে নয়টা অথচ বিয়েবাড়ী এখনো খালি খালি।লোকজন আজকাল গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে আনন্দ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।সেকারনেই হয়তো তারা ধীরে ধীরে আসছে।প্রিয় চুপ করে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।সে এখন দাঁড়াতে শিখেছে!কোনো কিছু ধরে দাঁড়াতে পারে।আর আজই প্রথম ওকে হিজাব পড়িয়ে দিয়েছে প্রিয়া।আর তাতেই ওকে বেশ পুতুলের মতো লাগছে।
দুর থেকে শারদকে দেখতে পেয়ে নীরার মা ছুটে এলেন।এসেই নাতনীকে কোলে নিয়ে ওর দুগালে চুমু খেলেন।আনন্দে তার চোখে পানি এসে পড়েছে।আর তা দেখে শারদের মনে হলো এখানে এসে খুব ভুল কিছু করেনি বোধহয়।প্রিয়’র থুতনী ধরে ওর নানু শায়লা বাণু বলে উঠলেন-
-“আরে এ তো একদম নীরা হয়ে উঠছে।”
শারদ প্রিয়া দুজনেই সালাম দিলে তিনি ওদেরকে নিয়ে সাদরে বসালেন।তারপর অন্যান্য অতিথিদের দিকে সাগ্রহে এগিয়ে গেলেন নিজ নাতনীকে দেখাতে।কিছুক্ষণ পর এসে প্রিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন।
উপস্থিত অতিথিদের আগ্রহ নীরার মেয়ে প্রিয়র চেয়ে বেশী নীরার স্থলাভিষিক্ত প্রিয়ার প্রতি! প্রিয়া নিকাব সরিয়ে সবাইকে সালাম দিলো।
কিছুক্ষণ পর শায়লা বাণু জানালেন, খাবার দিয়ে দেয়া হয়েছে প্রিয়ারা চাইলে বসে যেতে পারে।প্রিয় ততক্ষণ তার কাছেই থাক।তাহলে প্রিয়া স্বস্তিতে খেতে পারবে। কিন্তু খেতে বসে প্রিয়া একদমই স্বস্তিতে পাচ্ছিলোনা কারন মহিলাদের খাবারের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আশেপাশে পুরুষরাও খেতে বসেছে।
অগত্যা প্রিয়া এক কোণে বসে কোনোরকম দুটো মুখে গুঁজে উঠে পড়লো।খাওয়া শেষে শারদকে বসিয়ে রেখে সে একফাঁকে ঈরার সাথে দেখা করতে গেলো।ঈরাকে দেখে কিছুটা অবাকই হলো প্রিয়া।সেদিনের তুলনায় আজ সে যথেষ্ট হাসিখুশি।নিজেই যেচে প্রিয়ার হাত ধরে সেদিনের দুর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলো।প্রিয়া ওকে সান্তনা দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
এদিকে অনুষ্ঠান মোটামুটি জমে উঠেছে।লোকজনের সমাগমও বেড়েছে।শারদ চলে আসার জন্য উসখুস করছিলো।কিন্তু প্রিয় সেই যে নানীর কোলে চড়ে উধাও হয়েছে, আর কোনো খবর নেই।শারদ প্রিয়ার মোবাইলে মিসকল দিতে যাবে তখনি ইরার এক কাজিন এসে,’আরে শারদ ভাই, বহুদিন পর দেখা’- বলে হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটা।কথাবার্তার এক পর্যায়ে শারদের থুতনীর দাঁড়ীতে হাত দিয়ে বললো-“এটা কি?”
-“এটা আমাদের শান!”
-“দারুন লাগছে দেখতে।একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে!”
শারদ কেবল হাসলো কোনো মন্তব্য করলোনা।ছেলেটি হঠাৎ বললো-“বিয়ে করেছেন শুনলাম।তা ভাবি এসেছে নাকি?”
-“হম,ও ভেতরে আছে!”
-“ভাবীর সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছে করছে!”
-“আসলে তোমার ভাবী সবার সাথে মানে বাইরের কারো সামনে যায়না তো।ও আসলে একটু ইসলামিক মাইন্ডের! ”
-“ও হো,তাই তো বলি।আপনার চেঞ্জটা তাহলে ভাবীর অবদান!”
বেশ ধৈর্য্য ধরে ইরার খালাত ভাইয়ের সাথে আধাঘন্টা বকর বকর করে কথা শেষ করলো শারদ।এমন সময় প্রিয়াকে দেখা গেলো, প্রিয়কে কোলে নিয়ে আসছে।হঠাৎ ওর কাছে প্রিয়কে একটা সাধারন বাচ্চার মতো লাগতে লাগলো।কারনটা বের করতে গিয়ে শারদের চোখে পড়লো,ওর মাথায় হিজাব নেই!”প্রিয়াকে সেকথা বলতেই ও জানালো,ঈরাদের এক আত্মীয়া বিরক্ত হয়ে প্রিয়র হিজাব খুলে দিয়ে বলেছে,এসব আবার কি ঢং।ছোট বাচ্চার মাথায় হিজাব পড়ানোর কি হইসে!বলে হিজাব খুলে ফেলায় প্রিয়’র সেকি কান্না।আত্মীয়টি স্যরি ট্যরি বলে সেখান থেকে সরে গেছেন।
প্রিয়া কোনো জবাব না দিয়ে ইরার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।শারদ ওদের দেখে হাসলো।তারপর প্রিয়’র কান্নাভেজা বিষন্ন মুখ দেখে বললো-“ও কাঁদছে কেন!”
প্রিয়া চেপে গিয়ে ওর মাথায় পুনরায় হিজাব পড়িয়ে দিয়ে বললো-“চলুন,বেরোনো যাক্।রাত এগারোটার মধ্যেই ওরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।
প্রিয়া জানে দ্বীনের পথে চলতে গেলে কিছু বাধা আসবেই।কোনো বাচ্চা যদি এক হাতা অলা জামা পড়ে যার অপর হাতা নাই সেটা আজকের দিনে অনেকের চোখেই দৃষ্টিকটু ঠেকে না কারন ওটা ওদের কাছে ফ্যাশন।কিন্তু একটা বাচ্চাকে ইসলামী পোশাকে অভ্যস্ত করানোর ইচ্ছেতে একটা ছোট্ট হিজাব মাথায় পড়িয়ে দিলে সেটা তাদের কাছে হয়ে যায় ‘ঢং’! ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিয়া মনটা অন্যদিকে ফেরাতে চাইলো।
তবে যে যাই বলুক সে প্রিয়কে সাধ্যমতো দ্বীনি তরবীয়ত দিয়ে মানুষ করতে লাগলো প্রিয়া।
যার ফলে প্রিয় খুব অল্প বয়স থেকেই লাজুক,নম্র আর বিনয়ী হয়ে বেড়ে উঠতে লাগলো।ওর বয়স যখন আট বছর তখন থেকেই প্রিয়া ওকে পর্দার গুরুত্ব বোঝাতে শুরু করলো।দশ বছর বয়সে এসে রীতিমত কান্নাকাটি করে সে মায়ের মতো বোরকা পড়ার আবদার ধরলো।
শারদ নিজেও এরই মধ্যে আপাদমস্তক বদলে গেছে।ভরাট চাপ দাড়িতে তার আউটলুক যেমন বদলেছে তেমনি প্রিয়ার পারিবারিক দ্বীনচর্চার কারনে শারদ নিজেও অনেকখানি বদলে গেছে।আসলে পরিবেশের প্রভাব মানুষের উপর অনিবার্য।যে যে পরিবেশে থাকে তার কিছুটা হলেও প্রভাব মানুষের উপর পড়ে।শারদ এখন পাঁচ ওয়াক্তের পাক্কা নামাজী।এর মধ্যে গত বছরই সে মা আর প্রিয়াকে সাথে নিয়ে হজ্জও করে এসেছে।
হজ্জ করে আসার পর প্রিয়া আরো ভালোভাবে পর্দা করা শুরু করলো যেটাকে বলে খাস পর্দা।আগে পর্দার ব্যপারে যতটুকু ছাড় দিতো এখন সেটাও করেনা।পরিপূর্ণ পর্দা করে চলে সে।বলা যায় সুনিপূণ গৃহিনী প্রিয়ার গুণপনায় শারদের সংসার এখন আরো বরকতময় হয়ে উঠেছে।
প্রিয়ার গর্ভে একে একে জন্ম নিয়েছে ওদের আরো দুই কন্যা সন্তান হিয়া আর দিয়া।তবে প্রিয়ার কাছে প্রিয়ই তার প্রথম এবং আদরের সন্তান। ওর প্রতি নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে তাই প্রিয়া কখনো কার্পন্য করেনা।
“প্রিয়’র আজ চব্বিশতম জন্মদিন।ক্যালেন্ডারের হিসেব মতে আজ তার জন্মদিন।কিন্তু প্রিয় কখনো আর দশজনের মতো করে নিজের জন্মদিন পালন করেনা,কখনো করেওনি।যখন থেকে জেনেছে রাসুল সাঃ তাঁর জন্মবারের দিন রোজা রেখেছেন তখন থেকে প্রিয় নিজেও প্রতি সপ্তাহে ওর জন্মবারের দিন রোজা রাখে।কিন্তু জন্মতারিখ মেনে বিজাতীয় রীতিতে কখনোই জন্মদিন পালন করেনা।সেদিনই মাদ্রাসার খালামণি ওদের বলছিলেন-“রাসুল সাঃ নাকি বলেই গেছেন যে তাঁর একদল উম্মত ইহুদি নাসারাদের অন্ধ অনুকরন করবে।এমনকি ইহুদী নাসারার দল যদি সাপের গর্তেও প্রবেশ করে তাহলে তারা সেখানেও প্রবেশ করবে।এমনটিই ভবিষ্যত বাণী করে গেছেন রাসুল সাঃ।প্রিয় আরো জানে যে ,হাদিসটি সহীহ মুসলিমের হাদিস।
তারপর থেকে সে জন্মদিন সংক্রান্ত সকল প্রচলিত রীতিকে উপেক্ষা করে এসেছে।আর এ ব্যপারে সে বরাবরই বাবা মা’র সাপোর্টও পেয়ে আসছে।
প্রিয় ইতোমধ্যে এটাও জেনে গেছে যে,প্রিয়া তার মা নয়।সে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী।কিন্তু প্রিয়াকে মা ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারেনা প্রিয় কারন মায়ের যাবতীয় আদর সে প্রিয়ার কাছ থেকেই পেয়ে আসছে।
ওর সামান্য মলিন মুখ দেখলেও এই মা চিন্তিত হয়ে যান।
আজ সকাল থেকেই প্রিয় চুপ করে শুয়ে আছে।তার ঠান্ডা লেগে প্রচন্ড মাথা ধরেছে।সে ঠিক করেছে আজ মাদ্রাসায় যাবেনা।শারিরীক অসুস্থতার কারনে রোজাও রাখতে পারেনি।তাই একটু আগেই মাদ্রাসার বড়আপাকে ফোন করে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে দিয়েছে।গত কয়েক বছর আগে এই মাদ্রাসা থেকেই ফারেগ হয়েছে প্রিয়।ওর চমৎকার ফলাফলের দরুন বড় আপাই ওকে অফার করেন এখানে শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করতে।সেই থেকে “প্রিয়” মাদ্রাসাতুল বানাত আল আরাবিয়্যাহ’র শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করে আসছে।
প্রিয়’র মাদ্রাসা না যাবার কারনে প্রিয়া এসে বড় মেয়ের কপাল ছুঁয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন-“তোমার কি বেশী খারাপ লাগছে মামনি?”
প্রিয় মুচকি হেসে মা’কে আশ্বস্ত করে বলে
-“না,আম্মু শরীর ঠিকই আছে।”
-“তাহলে মাদ্রাসায় গেলেনা যে..?”
-“মাথাটা খুব ব্যথা করছে আম্মু!”
-“সে কি?পেইন কিলার খাও একটা”।
-“ঔষধ খেতে ইচ্ছে করেনা!”
-“আচ্ছা,তুমি শুয়ে থাকো।আমি গরম চা করে দিচ্ছি।খেলে হয়তো ভালো লাগবে!”বলে প্রিয়া উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
মেয়েকে চা দিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় শারদ ডাকলো।প্রিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে স্বামীর ডাকে সাড়া দিতে উঠে পড়লেন।
শারদ ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।প্রিয়াকে দেখে ইশারায় দাঁড়াতে বললো।ফোনে কথা শেষ করে শারদ জানালো যে ইমরান ভাই ফোন করেছিলো।সন্ধ্যায় ওনার বাড়ীতে যেতে হবে।আজ ওনার একমাত্র মেয়ে কিন্নরী’র আকদ রেখেছেন তিনি।শারদকে বারবার বলছেন স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে যেতে।
প্রিয়া শারদের পাঞ্জাবীতে আটকে থাকা সুতোর টুকরো সযত্নে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো-“প্রিয় তো যেতে চাইবেনা!”
-“কেন?ও যাবে না কেন!”
-“আপনার বড় মেয়েকে আপনি চেনেন না?সে তো সবসময়ই অনুষ্ঠান, এসব ভীড় টিড় পছন্দ করেনা!”
-“ওকে বুঝিয়ে বলো যে,এটা ইমরান আঙ্কেলের বাসার অনুষ্ঠান।না গিয়ে পারা যাবেনা।আর তুমি তো জানো গত দুটো বছর ধরে আমরা প্রিয়’র জন্যে কিভাবে হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছি।ইমরান জানালো,সে যে পাত্রটার কথা বলছে সেও নাকি তার বাবা মা সহ অনুষ্ঠানে আসবে।”
-“তারা কি প্রিয়কে দেখার উদ্দেশ্যেই আসবে?”
-“না,ইমরান এখানে একটা চালাকি করেছে।সে জানে প্রিয় খুব সেনসিটিভ তাছাড়া ও একটা মেয়ে।পছন্দ অপছন্দের ইফেক্টটা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপর পড়ে বেশী!তাই ও পাত্রপক্ষকে প্রিয়’র যাবার কথা কিছুই আগেভাগে জানায়নি।ইমরানের কথা হচ্ছে,তুই আগে দেখে পছন্দ কর তারপর নাহয় ওদেরকে প্রিয়ার কথা জানানো যাবে!”
-“হমম…ভালো করেছে।তাছাড়া আমাদের প্রিয়’র জন্যে তো পাত্রের অভাব নেই কিন্তু আমাদের মেন্টালিটির দ্বীনি ছেলে না পেলে তো যার তার হাতে ওকে তুলে দিতে পারিনা।দেখলেন না,এর আগের এক দ্বীনদার ছেলে কি বললো?প্রতি সপ্তাহে নাকি হাইকোর্টে যেয়ে নামাজ পড়ে!শুনেই তো আপনার মেয়ে বেঁকে বসলো।”
-“যাক্,ওকে এতো কথা বলার দরকার নেই।তুমি ওকে বলো,এখানে গেলে ওর নানুর সাথে দেখা হবে।জানো তো,ইমরান ভাই নীরার বড় চাচার ছেলে।ওদের সবার সাথে দুরত্ব তৈরী হলেও ইমরান ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা সবসময়ই অন্যরকম।সেই উনি এতো করে বলেছেন,না গেলে খুবই খারাপ দেখাবে।”
-“তাই নাকি,আন্টি ঢাকায় এসেছেন।কবে এলেন?”
-“সেটা সঠিক জানিনা তবে বিয়েতে আসবেন শুনলাম।”
-“আচ্ছা,আমি প্রিয়কে বলবো।অবশ্য নানুকে দেখার লোভে রাজী হতেও পারে।আসলেই কতদিন ধরে প্রিয়’র নানুর সাথে দেখা হয়না।উনি শেষ যখন এলেন তখনও তো আমরা দেখা করতে গেলাম প্রিয়কে নিয়ে।সেও তিন বছর আগের কথা।ওনাকে আমার খুব ভালো লাগে।ওনার প্রতি আমি বেশী কৃতজ্ঞ একারনে যে আমার দুই মেয়েকেও তিনি প্রিয়’র মতোই স্নেহ করেন।প্রিয়র জন্য যা পাঠান তা দিয়া আর হিয়ার জন্যেও পাঠান।সত্যি ওনার মতো মানুষ হয়না!”
-“হমম,সে জন্যেই বললাম।প্রিয়কে বলো!”
-“আচ্ছা,আমি প্রিয় কে বলছি।”
সন্ধ্যের অনুষ্ঠানের কথা শুনে হিয়া আর দিয়া নেচে উঠলেও প্রিয় বিরস মুখে বললো-“আমি না গেলে হয়না আম্মু!”
প্রিয়া বসে মেয়েদের কাপড় বেছে দিচ্ছিলেন,কে কোনটা পড়বে।সেভাবেই বললেন-“হবে না কেন,খুব হয়।তবে তোমার নানু তোমাকে না দেখতে পেলে মন খারাপ করবে।এতোবছর পর উনি দেশে ফিরেছেন।তুমি কি ওনার সাথে দেখা করতে চাও না?”
প্রিয় এবার থমকে গিয়ে মৃদু স্বরে বললো-“চাই তো!…আচ্ছা যাবো।কিন্তু কোন বোরকাটা পড়বো আমি?”
প্রিয়া হাসলেন।মেয়ের মুড ফিরেছে।তিনি ডিপ পার্পেল কালারের নতুন আবায়াটা বের করে মেয়ের সামনে রাখলেন।
-“এটা পড়ে নিও! কি, সুন্দর না?”
প্রিয়র মনটা হঠাৎ ভাল হয়ে গেলো বোরকার রংটা দেখে।তার পছন্দের রংগুলোর একটি।খুশিমনে মাথা নাড়লো সে!
সন্ধ্যের পরপরই “ডেন” নামক বাড়ীটায় পৌঁছুলো ওরা।শারদের ছোট্ট সুবারুটা ওদের গাড়ী বারান্দায় থামলে ইমরান নিজেই ছুটে এলেন শারদ পরিবারকে স্বাগত জানাতে।সাথে তার স্ত্রী হুমায়রা।
হুমায়রা প্রিয়াকে আলিঙ্গন করে ভেতরে নিয়ে গেলেন।তার পিছু পিছু তিন মেয়েও তার সাথে গেলো।
হুমায়রা ওদের ভেতরের রুমে নিয়ে গেলেন।সেখানে আগে থেকেই কিছু লোকজন বসা ছিলো।হুমায়রা জানতেন প্রিয়া তার নিজের ও কন্যাদের ব্যপারে যথেষ্ট পর্দা মেইনটেন করে তাই সেখানে উপস্থিত ছেলেগুলোকে সবিনয়ে অনুরোধ করলেন অন্যরুমে চলে যেতে।
এদিকে ‘প্রিয়’কে দেখতে পেয়েই শায়লা বাণু ছুটে এলেন।জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন -“কত্ত বড় হয়ে গেছো তুমি নানুমনি!”
বলেই তার সম্বিত ফিরলো দিয়া আর হিয়াকে দেখে।ওদেরকেও তিনি জড়িয়ে ধরে আদর করলেন-“আরে আমার দেখি,তিনটা নানুমনি!”
শায়লা তিন নাতনীর কপালেই চুমু খেলেন।
প্রিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে নিজের ভেতর থেকে উঠে আসা আবেগটাকে চাপলো।
হুমায়রা ওদেরকে বোরকা ছেড়ে আরাম করে বসতে বললেন।আশ্বস্ত করলেন যে এদিকে কোনো পুরুষ মানুষ নেই।
মেয়েরা সবাই হিজাব নিকাব আলগা করে বসলো।
এরই মধ্যে আকদ পর্ব শুরু হওয়ায় হুমায়রা সবাইকে ডেকে নিয়ে গেলেন সেখানে।প্রিয় জানালো,সে এখানেই থাকবে! ঐ ভীড়টিড়ে যাবেনা।
অগত্যা ওকে রেখেই দিয়া আর হিয়া বিয়ে পড়ানো দেখতে গেলো।
প্রিয় চুপচাপ বসে মোবাইলে বই পড়ছিলো।এমন সময় সেখানে দুজন মহিলা হুড়মুড় করে প্রবেশ করে বললো-“এই রুমে তো একজন মাত্র আছে।সাথের মহিলাটি তার হাতে ধরে রাখা পাত্র থেকে কিছু খুরমা এগিয়ে দিয়ে বললেন-“তুমি এখানে একা কেন আম্মু ?ঐদিকে আকদ পড়ানো হয়ে গেছে।নাও খুরমা খাও!”
বলেই প্রিয়’র মুখের দিকে তাকিয়ে স্থির গেলেন।প্রিয় সালাম দিলে তিনি বললেন-“আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে তুমি ‘প্রিয়’! ঠিক না?”
প্রিয় কিছুটা অবাক হয়ে হাসলো-“জ্বী,আপনি ঠিক বলেছেন!”
ইরা হাতের বাটিটা টেবিলে রেখে প্রবল আবেগে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়কে।
-“ইস্,মামনিটাকে কতদিন পরে দেখলাম।কত্ত বড় হয়ে গেছো তুমি।তোমার আম্মু কোথায়?আসেনি?”
-“জ্বী,এসেছেন তো!”
-“ও,আচ্ছা।তা কেমন আছো মা তুমি?”
-“জ্বী,আলহামদুলিল্লাহ!”
-“কি যে ভালো লাগছে তোমাকে দেখে।মনে হচ্ছে নীরাপিকে দেখছি।”বলতে গিয়ে চোখ ভিজে উঠল ইরার।প্রিয়র কপালে চুমু খেলেন ইরা।
এমন সময় ছেলে ত্বাকী’র দরাজ গলার আওয়াজ পেয়ে মুখ ফেরালেন।
চলবে…….