প্রিয়ঃ পঞ্চদশ পর্বঃ

0
498

#প্রিয়ঃ
পঞ্চদশ পর্বঃ
মোর্শেদা রুবিঃ
———————-
‘প্রিয়’ হাসিমুখেই কথা বলছিলো ইরা খালামনির সাথে।অনেক দিন পর খালামনির সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে।বাবার কাছে মায়ের অনেক ছবি দেখেছে প্রিয়।মায়ের চেহারার সাথে ইরা খালামনির অনেকখানি মিল আছে।অথচ খালামনিই বলছেন যে,ও দেখতে ওর মায়ের মতো হয়েছে।

কথায় বিভোর প্রিয় আচমকা পুরুষালি কন্ঠের ডাকে বিষম চমকে গেলো।ওর হাতে ধরা সফট ড্রিংক্সের কিছুটা ছলকে পড়লো ওর কোলে।বা হাতে দ্রুত ঘুমটা দেড়হাত লম্বা করে টেনে রাজস্থানী মহিলাদের মতো করে মুখ ঢেকে বসে রইলো।লোকটাও ওর কান্ড দেখে কিছুটা থমকে দাঁড়ালো।
ইরা প্রথমে প্রিয়কে তারপর ত্বাকীকে দেখে হালকা হেসে বললো-“আরে ও হলো ত্বাকী।আমার ছেলে।তোর কত্ত ছোট ও।এতো লজ্জা পেতে হবেনা।ঘোমটা খোল্!”

প্রিয় কিছু বলার আগেই ত্বাকী হাত দিয়ে মাকে ইশারা করে নিষেধ করলো।তারপর খুরমার বোলটা চাইলো।
ইরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বোলটা দিতেই ত্বাকী বেরিয়ে গেলো রুমটা ছেড়ে।

ত্বাকী চলে যেতেই প্রিয় আস্তে করে ঘোমটা সরিয়ে লাজুক হাসলো।ইরা ওর দিকে কিছুক্ষণ হাসিমুখে তাকিয়ে বললো-“প্রিয়া তোকে একদম অন্যরকম করে মানুষ করেছে! কিন্তু ছোট ভাইয়ের সামনেও কি পর্দা করতে হয়?”
প্রিয় মুখ নামিয়ে বললো-“উনি আমার আপন ছোটভাই তো নন।উনি আমার কাজিন।আমার গায়েরে মাহরাম!আর গায়েরে মাহরামে ছোট বড় নেই।সাবালক হলেই হলো।”

-“গায়েরে মাহরাম ব্যপারটা তোর কাছ থেকে পরে শুনবো তার আগে প্রিয়াকে খুঁজে বের করি!ও সম্ভবত অন্য রুমে আছে!চল্,যাবি আমার সাথে?”ইরা উঠে দাঁড়ালো।

-“না,খালামনি! বাড়ীভর্তি লোকজন গিজগিজ করছে।আমি এখানেই কমফোর্ট ফিল করছি।আমার অত ভীড় ভালো লাগেনা!”

-“আচ্ছা,ঠিকআছে।তুই এখানেই থাক।আমি আসছি!”
বলে ইরা বেরিয়ে গেলো।তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কণের মা হড়বড়িয়ে রুমের মধ্যে ঢুকলো তার সাথে আরেকজন মহিলা।কনের মা ক্ষোভের সাথে তার সাথের মহিলাটিকে বললো-“তোমার ভাই তো আরেক ভ্যান্দা।আমি বারবার বলেছি,মোহরানা পনের লাখের নিচে এক টাকা কমাবা না।আমার একটামাত্র মেয়ে।আমার একটা প্রেষ্টিজ আছে না! নাহ্,তোমার ভাইকে তারা কি ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে দিলো,আর তিনিও দুম করে রাজী হয়ে গেলেন।মোহরানা তিন লাখই কমিয়ে দিলো।এটা একটা কাজ করলো?আমার তো রাগে গা জ্বলছে।আত্মীয় স্বজনের কাছে আমার মানসম্মান আর থাকলো না।”
ইমরান পত্নীর কন্ঠে আক্ষেপ ঝরে পড়লো।

প্রিয় নিরবে ওদের কথা শুনছিলো।কিছু বলতে গিয়েও সামলে নিলো কারন যখন দুজন বড় কথা বলে তখন ছোটদের সেখানে কথা বলাটা বেআদবী!কিন্তু ওর জানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,তের লাখের মধ্যে মোহরানার শোধ করেছে কত টাকা! সবাই মোহরানার অংক নিয়ে মাথা ঘামায় কিন্তু পরিশোধের কথাটা নিয়ে কেউ ভাবে না।কিন্তু এটা বলাটা ঠিক হবে কিনা ভেবে চুপ করে রইলো।

এরই মধ্যে প্রিয়া আর ইরা সেখানে প্রবেশ করলো।ইরা প্রিয়ার হাত ধরে রেখেছে।প্রিয়া বললো-“তুমি যে দেশে এসেছো সেটা তো জানতামই না।আমি তো শুধু আন্টির কথাই শুনেছি!”

ইরা হাসলো-“আমি ত্বাকীকে ছোট নিয়ে আগেও একবার দেশে এসেছিলাম।তবে সেসময় খুব অল্প সময় নিয়ে এসেছিলাম বলে তোমাদের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি!মাঝে আর আসা হয়নি।এতোগুলো বছর পর এবার ত্বাকীর আগ্রহেই দেশে আসা হলো।ওর দাদুর শরীরটা খারাপ অনেক দিন থেকেই।একমাত্র নাতিকে বিয়ে করিয়ে নাতবৌ দেখতে চান উনি!সেজন্যেই আসা।”

-“বাহ্,ভালোই তো!ছেলে বিয়ে করাতেই তাহলে তোমার আসা!”

-“আর বলো না।ছেলেও এক গোঁয়ার।তার নাকি পাক্কা দ্বীনদার বাঙ্গালী মেয়ে চাই।কই পাই আমি এমন মেয়ে বলো?”

প্রিয়া মুচকি হাসলো কিছু বললো না।এমন সময় দিয়া সেখানে ঢুকে মায়ের পাশে অপরিচিত মহিলাকে দেখেই থমকে গেলো।সালাম দিতেই ইরা হেসে বললো-“তোমার মেয়ে, না?”

প্রিয়া মাথা নাড়লো।
বললো-“কতদিনের জন্য দেশে আছো!”

-“তিনমাসের বেশী থাকা হবেনা।ত্বাকীর ফুপুরা আবার ওর জন্য মেয়ে দেখে রেখেছে।কাল মেয়েটা দেখতে যাবার কথা।দেখি ত্বাকীর পছন্দ হলে তো একদম দেরী করবো না।কারন ওর বাবা খুব বেশিদিন এখানে থাকতে চাইবে না।ওর ব্যবসার কাজ বন্ধ হয়ে থাকবে।”

-“ও…যাক তোমার জন্য দুআ করি,তোমার মনমতো মেয়ে মিলুক।বলতে পারো আমাদেরও প্রায় একই অবস্থা।আমাদের প্রিয় দ্বীন জানা দ্বীন মানা ছেলে ছাড়া বিয়ে করব না।অবশ্য আমি বা ওর বাবা সম্পূর্ণই একমত এতে।আমরাও ওকে চাপ দিচ্ছিনা!”

-“হম,আমার ত্বাকীটাও প্রথম থেকেই একটু অন্যরকম ছেলে।সে শর্ত দিয়ে রেখেছে,বিয়ে করতে হলে দ্বীনদার মেয়েকে করবে।নইলে ওখানে লন্ডনে বেশ কিছু ভালো প্রস্তাব আসছিলো।কিন্তু ছেলের তো মত নেই,কি করবো।”

-“তুমি লন্ডণে আছো নাকি এখন?”প্রিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বললো।

-“হ্যাঁ,ত্বাকীর বয়স যখন পাঁচ তখনই ওর বাবা লন্ডনে চলে আসে আমাদের নিয়ে।সেই থেকেই আমরা ওখানেই আছি।ওর বাবার আগ্রহেই ত্বাকী ওখানকার এক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান “আদম একাডেমী”তে ভর্তি হয়েছে।ওখানেই পড়াশোনা শেষ করেছে।বলতে পারো লন্ডনে আমাদের ঐদিকের মুসলিম কম্যুনিটির বেশীরভাগ বাচ্চাই আদমের ছাত্র।পড়াশোনার পাশাপাশি গত দু বছর ধরে ওখানে কাজও করছে ও!আবার এমনিতে বাবার ব্যবসাতেও টুকটাক হাত লাগাচ্ছে।”

-“মাশাআল্লাহ,খুব ভালো তো!তোমার কি এই একটাই ছেলে?”

-“হম…আমার মতো জালিমের ঘরে আল্লাহ কিভাবে যে একজন আলিম দান করলো।ভাবতে অবাকই লাগে।ওর দাড়ী জোব্বা দেখলে অনেকেই ওকে বয়স্ক মনে করে!অথচ ও আমাদের প্রিয়’রও তিন/চার বছরের ছোট হবে!”

প্রিয়া মৃদু হেসে বললো-“বয়স দিয়ে কি হবে।ও যে ওরকম একটা পরিবেশে এতো অল্প বয়সে দ্বীনের পথে চলতে পারছে! এটা তো বেশ সৌভাগ্যের কথা!”

-“আসলেই!আমি নিজেও ভাবি,ওর মনটা আল্লাহই এমন করে দিয়েছেন।ধর্মীয় বিষয়বস্তুর উপর ওর আগ্রহ সীমাহীন।আমি তো ভেবেই পাইনা।ও এমন হলো কিভাবে!”
ইরা হঠাৎ আরো কিছু একটা বলতে গিয়েও কি ভেবে চুপ মেরে গেলো।এরিমধ্যে বাকিরা এসে পড়ায় ওদের পারিবারিক প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেলো।

রাতে খাবার দেয়া হলে শুরু হলো আরেক বিপত্তি।প্রিয় সবার সাথে বসে খাবেনা।প্রিয়া নিজেও প্রিয়কেই মনে মনে সমর্থন করছিলো।ইমরান সাহেবের স্ত্রী প্রথমেই ব্যপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন তাই তিনি প্রিয়ার তিন মেয়ে সহ ইরা আর তার মা’কে ভেতরের ঘরে একটা রুমে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন।ইরা খাবার ফাঁকে ফাঁকে বারবার প্রিয়কেই দেখছিলো।
চলে আসার আগে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়ার হাত চেপে বললো-“আবার কবে দেখা হবে জানিনা!তবে ভালো লাগলো দেখে, আমাদের প্রিয় টা একদম তোমার মতো হয়েছে।ও তো আসলে তোমারই মেয়ে!”

-“আরে,এভাবে বলছো কেন?প্রিয় তোমারও মেয়ে।যতদিন ঢাকায় আছো।মন চাইলে চলে আসবে!ভাগ্নিকে দেখে যাবে!”

-“আসবো,অবশ্যই আসবো।আরেকটা অনুরোধ করতাম কিন্তু…..শারদ ভাইয়ের কথা ভেবে সাহস পাচ্ছিনা!””

-“কি বলো…?”

-“বলতে চাচ্ছিলাম,তুমি তোমার মেয়েদের নিয়ে একদিন আমার বাসায় এসো না।আমার খুব খুবই ভালো লাগবে!”

প্রিয়া খানিক ভেবে হাসলো-“তোমার শারদ ভাইকে বলবো,আশাকরি ও হয়তো বারণ করবেনা।”

-“হমম….দুর থেকে শারদ ভাইকে দেখলাম।হি হ্যাজ আ লট অফ চেঞ্জেস।ওনাকে দেখলে বেশ মুরুব্বীদের মতো মনে হয়।তিন মেয়ের পার্ফেক্ট বাবা হয়ে গেছেন।”ইরার কথায় প্রিয়া হেসে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠলো।


ইরা বাড়ী ফিরে ত্বাকীর বাবার সাথে বিয়েবাড়ীর বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করছিলো।এমন সময় ত্বাকী ঢুকলো রুমে।ইরা হাসিমুখে তাকালো-“কিছু বলবি আব্বু?”

-“হমম….একটা জরুরী কথা ছিলো!”

-“বল্,কি জরুরী কথা!”

-“আম্মু,তোমরা আমার জন্য মেয়ে দেখাদেখি স্টপ করে দাও।মেয়ে নির্বাচন করা হয়ে গেছে।তুমি বরং সেখানে কথা বলো!”
ত্বাকী কোনোরকম দ্বিধা না করে সরাসরি বলে বসলো।ইরা আধশোয়া হয়ে বসেছিলো,ছেলের কথায় সোজা হয়ে বসলো!-“এরি মধ্যে তুই মেয়ে পেলি কোথায় যে একেবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললি?”

-“গতকাল বিয়ে বাড়ীতে তোমার সাথে অনেক ক্ষণ গল্প করছিলো যে মেয়েটা আমি ওর কথা বলছি।নাম সম্ভবত ‘প্রিয়’ যদি আমি ভুল না করে থাকি!
তুমি ওর খোঁজখবর করো।”

বিস্ময়ে প্রায় বাকরুদ্ধ হবার যোগাড় হলো ইরার।কোনোমতে বললেন-“তুই কি পাগল হলি? না জেনে না শুনে ফট করে একজনের কথা বলে দিলেই হলো?তুই যার কথা বলছিস,ও তোর নীরা খালামনির মেয়ে প্রিয়।তোর থেকে কমসে কম চার পাঁচ বছরের বড় হবে!”

-“তো কি হয়েছে।বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করা যাবেনা এমনতো কোনো নিয়ম নেই বরং এটা একটা সুন্নাহ পালন করা হবে কারন রাসুল সাঃ নিজেই মা খাদিজা রাঃ থেকে পনের বছরের ছোট ছিলেন!”

-“কিন্তু ওর বাবা মানে শারদ ভাই রাজী হবে না হয়তো!”ইরা ইতস্তত করে বললো।আসলে গতকাল প্রিয়কে দেখার পর ওর প্রথম যে কথাটা মনে হয়েছিলো, সেটা হলো,প্রিয়কে যদি ত্বাকীর বউ বানানো যেতো!কিন্তু বয়সের পার্থক্যের কথা চিন্তা করে সে তখনই চিন্তাটা বাতিল করে দিয়েছে।তার উপর শারদতো আছেই।এখন ছেলে ও দেখি একই কথা বলছে।
ইরা ছেলের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো-
-“তুই কি প্রিয় কে দেখেছিস?না দেখেই পছন্দ করলি কিভাবে?”

-“তার চেহারা তত ভালো করে দেখিনি বাট তাকে আমি গোটা সন্ধ্যা ফলো করেছি সে বাইরে কারো সামনে আসেনি।ইভেন গাড়িতে ওঠার সময়ও তার যে গেটআপ দেখেছি তাতে আমার যা দেখার দেখা হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া ওকে বিয়ের কথা ভাবার পর নানুকে ওর ব্যপারে জিজ্ঞেস করলাম।নানু ওর সম্পর্কে যা বললো তা আমার চাওয়ার সাথে হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্লিক করে।কাজেই আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম,বিয়ে করলে ওকেই করবো!”

-“হ্যাঁ….বিয়ে করলে ওকেই করবো।তুই বললি আর হয়ে গেলো না? ওর বাপ যে ঘাড়ট্যাড়া! সে দেবে নাকি তার মেয়ে? ”

-“দেবেনা কেন?আমি তার মেয়ের উপযুক্ত হলে না দেবার কি আছে?তুমি কথা তো বলো!নতুবা নানুকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাও।আর বেটার হয় আমাদের দেখা সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা করো!”

ইরা হতাশ চোখে স্বামীর দিকে তাকালেন-“তুমি হা করে শুনছো কি।তোমার ছেলে কি বলছে শুনেছো?ও যেভাবে বলছে তাতে মন হচ্ছে এটা কোনো ব্যপারই না।এমনিতেই ওর বাপ আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। সে দেবে ওর মেয়েকে আমার ছেলের কাছে বিয়ে? তাও মেয়ের কমবয়সী!”

-“মা,প্লিজ।এই বয়সের প্রেজুডিসটা মন থেকে একদম ঝেড়ে ফেলো।আমি যদি বয়স্ক মেয়ে বিয়ে করতে চাই ওনার সমস্যা কি।তোমরা না পারলে বলো ,আমি নিজেই ওনার সাথে সরাসরি কথা বলবো!”

ইরা কিছু বলতে যাবার আগে ওর স্বামী বাধা দিয়ে বলে উঠলো-“শোনো,আমি এতক্ষণ তোমাদের মা ছেলের কথা শুনছিলাম।তুমি যেটা বলছো সেটা আমার বুঝে আসছে না।যতদুর মনে পড়ে মেয়েটির বাবা তোমার ব্রাদার ইন ল, তাহলে তোমার সাথে ওর শত্রুতা কিসের?আর তিনি মেয়ে দিবেন না,এটাই বা হলফ করে বলছো কিভাবে?”

ইরা চুপ মেরে গেলো।ত্বাকীও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ইরা মিনমিন করে বললো-“আচ্ছা,আমি আম্মুকে দিয়ে ওর মায়ের সাথে আগে কথা বলে দেখি!”

ত্বাকী আর কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলো।ইরা মোবাইলটা বের করে মা’কে ফোন করলো।

দুপুরে খাবার দাবারের পর বিশ্রাম নিচ্ছিলো শারদ।প্রিয়া কানে ফোন ঠেকিয়ে চুপচাপ কথা শুনছিলো কারো কথা।শারদ ওর উরুর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।ঘুমুচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা।প্রিয়া হুঁ হাঁ জ্বী করে কথা শেষ করলো।
ফোন রাখতেই শারদ চোখ বন্ধ করেই বললো-“,কে ফোন করেছিলো?”

প্রিয়া শুকনো মুখে বললো-“ইয়ে…প্রিয়’র নানু।”

-“ওহ্,কি জন্যে ফোন করলেন হঠাৎ।গতকালই তো দেখা হলো!”

-“আপনাকে একটা কথা বলবো প্রিয়’র ব্যপারে।চট করে রেগে যাবেন না।মেয়ে যখন আছে তখন সব ধরনের কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে।”

-“আসল কথা বলো না।হয়েছে টা কি?”

-“কি আবার হবে?আমাদের প্রিয়’র একটা ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।ছেলের সবদিক তো ভালোই শুনলাম যেমনটা আমরা বরাবর চেয়ে আসছি।ধার্মিক, শিক্ষিত,ওয়েল ম্যানার্ড।আপনি হয়তো গতকাল দেখে থাকবেন।”

-“তুমি কার কথা বলছো বলো তো?”শারদ প্রিয়ার দিকে তাকালো!

-“ছেলেটা ইরার একমাত্র ছেলে ত্বাকী জামিল।আমাকে ইরা দুর থেকে দেখিয়েছে।লম্বামতন ঘন চাপদাড়ী।দুর থেকে তো ভালোই দেখলাম।

-“যত ভালোই দেখে থাকো কোনো লাভ নেই।আমার মেয়ে ও বাড়ীর বউ হবেনা।ইরার ছেলের সাথে তো ইমপসিবল।যার ছায়াকেও আমি অপছন্দ করি তার ছেলের কাছে দেবো মেয়ে বিয়ে?মাথা ঠিক আছে তোমার?তাছাড়া ও প্রিয়র বয়সে অনেক ছোটও।যদিও এটা আমার আপত্তির কারন না।আমার আপত্তি ইরাতে।ওদের সাথে নতুন করে আত্মীয়তা করার কোনো খায়েশ নেই আমার!”

প্রিয়া অধোবদনে বসে রইলো।শারদ ফের ওর উরুতে মাথা রেখে বললো-“চুলটা টেনে দাও তো।মাথাটা ঝিমঝিম করছে!”
প্রিয়াকে চুপচাপ দেখে শারদ ফের চোখ তুলে তাকালো-
-“তোমার আবার কি হলো।মাথার চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে দিতে বললাম না!একটু ঘুমুবো আমি।”

-“আপনাকে তো আসল কথাই বলা হয়নি।কি বলবো,কথার আগেই তো রেগে যান!”
-“আসল কথা আবার কি?”
-“প্রিয়’র নানু ইরার স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে আজ এ বাড়ীতে আসতে চাচ্ছে।মানে ইরাও আসবে।ওরা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে।এদিকে প্রিয়’র নানু আম্মাকে ফোন করে কি বুঝিয়েছে কে জানে।আম্মাই ওদের আসতে বলে দিয়েছে।”

-“আম্মা বলেছে মানে? উনি তো অসুস্থতার কারনে আমাদের সাথে যায়ইনি।”

-“প্রিয়’র নানু তাকে ফোনে সব কথা বলেছে।”

শারদ উত্তেজনায় উঠে বসলো।
-“আশ্চর্য্য,এটা কেমন ভদ্রতা! বলা নেই কওয়া নেই গায়ে পড়ে তারা আসবে কেন?”

প্রিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললো-“আসতে চাচ্ছে আসতে দিন।ছেলে যদি প্রিয়’র মনমতো হয় তাহলে…..!”

প্রিয়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো শারদ-“তুমি কি আমার কথা শোনো নি?ওই পরিবারে আমার মেয়ে যাবেনা।ব্যাস,কথা শেষ।আম্মা যখন আসার কথা বলে ফেলেছে আসুক বাট বিয়ের ব্যপারে আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘না’! একে হ্যাঁ করানোর চেষ্টা করে লাভ হবেনা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here