#তনয়া
#পর্ব-১৫
রাতে খাবারের সময় আরাফ ফোন করলো রাফাতকে।কয়েকবার কেটে দেয়ার পরেও আরাফ বারবার ফোন করছে তাই বাধ্য হয়ে ধরলো।
“হ্যালো, ফোন দিচ্ছিস যে এত সবকিছু ঠিকঠাক আছে?”
“কিছুই ঠিক নেই।তুই এত বড় স্বার্থপর কবে থেকে হয়ে গেছিস সেটা আগে আমায় বল?”আরাফের কন্ঠে ক্ষোভ ঝরে পরছে।রাফাত জানত এমনটাই হবে তাই সে বেশি রাগলো না।বলল,
“কি করেছি আমি যে তোর কাছে স্বার্থপর হয়ে গেলাম?”
“তুই আমায় একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?হানিমুনেও তো যাস নাই, সবাইকে নিয়ে ঘুরতে গেছিস অথচ আমি কিছুই জানি না!”
“তোর সাথে কত ঘুরেছি বলত তাই এবার ভাবলাম তোকে আর বিরক্ত না করি।এমনিতেও খালু তোকে অফিস থেকে ছুটি দিতো ভেবেছিস?”
“সেটা আমি বুঝতাম।তবে তোর থেকে এটা আশা করিনি আমি?”
“দেখ তোকে খুলেই বলি,আয়রা আর আমার এটা বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে আসা।জানিস তো তোর ভাবি একটু ইনট্রভার্ট!একা আমার সাথে আসলে তেমন খুশি হতো না।তাই ওর ভাইবোনদের নিয়ে এসেছি।পরের বার তোদের সাথেও ঘুরবো।তাছাড়া তনু আসবে জন্য তোকে আমি ইচ্ছে করেই জানাই নি।পরিস্থিতি তো তুই খারাপ করে রেখেছিস।দুজনের কেউই তোরা স্বাচ্ছন্দবোধ করতি না।বিশেষ করে তনুর খুব অসুবিধা হতো।”
“তোর কি মনে হয় আমি তনুর সাথ হ্যাংলামো করেছি কখনও?”
“যা করেছিস তাতেই অনেক হইছে।তা না হলে তনুর মত নেই জানার পরও তুই ওর আশায় বসে আছিস।এটা কি হ্যাংলামো নয়?”
“আচ্ছা,বাদ দে কোন হোটেলে উঠেছিস? ”
“কেন তুই শুনে কি করবি?”
“আমি আজ রাতের গাড়িতে উঠব।সকালে সিলেট পৌঁছাব।”
রাফাত এবার ঝটকা খেল।আরাফ সত্যি বেশি বেশি শুরু করেছে।আসবে মানেটা কি?
“কি বলছিস, তুই আসবি কেন?”
“তোদের সাথে ঘুরতে।”
“দেখ রাফাত তোকে সবটা খুলে বলার পরও তুই পাগলামি করছিস কিন্তু? ”
“তুই পাগলামির কি দেখলি এখানে?তোরা সবাই ঘুরছিস আর আমি যদি তোদের সাথে যোগ হই তাহলে সেটা পাগলামি?”
“তুই কেন আসতে চাইছিস সেটা বুঝতে পারছি জন্যই তো মনে হচ্ছে পাগলামি ছাড়া কিছুই না।তোকে মানায় না এসবে বোঝার চেষ্টা কর একটু?”
“আচ্ছা ঠিক আছে সিলেটে নেমেই না হয় শুনে নেব কোন হোটেলে উঠেছিস?”
রাফাত চাইলেও কিছু বলতে পারলো না আরাফ ফোন কেটে দিয়েছে।মেজাজ চটে গেল রাফাতের। সবাই ততোক্ষণে সবটা বুঝে গেছে।মিশকাত মনে মনে হাসছে।সে জানতো এরকম কিছু হবে তাই অনেক সমস্যা রেখেও এসেছে।মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল হয় না তার।আরাফ যে সহজে তনুর পিছু ছাড়বে না তাও বুঝে গেছে।তনু তো তার থেকে দূরে এমনকি এখনও দূরে সরে আছে তবু সে এমন হ্যাংলামো করেনি।তনুর ওপর কোনোরকম চাপ প্রয়োগ করে নি।ভালোবাসা তো মনের ব্যাপার জোর করে কখনও হয়না।তনুর সবটা জানার পরেও আরাফের এমন জেদ সত্যি দৃষ্টিকুটু।কারণ বাস্তবতা খুব কঠিন।এত সহজে তনুর ব্যাপারটা মেনে নিয়ে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে তনুকে ভালোবাসতে ভালো রাখতে পারবে?সে নিজেকে দিয়েই তো বুঝে!সবটা জানার পর তো সে খুব সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এতবছর ধরে পুড়ে পুড়ে খাঁটি হওয়া ভালোবাসাও ক্ষনিকের জন্য বিপাকে পরেছিল।তাই তো খুব দ্রুত তাকে অনেক কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হচ্ছে। সেও যদি আরাফের মতন স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটা নিতে তাহলে তনু আরও বেশি দূরে সরে যেত।
“ওকে আসতে দাও ভাই?আসুক না সবাই এক সাথে ঘুরবো মজা করবো ভালোই হবে।”
সবাই চমকালো মিশকাতের কথায়।সবথেকে বেশি তনু অবাক হলো।কি চলছে মিশকাতের মনে সেটা বুঝতে পারছে না।
“কি বলছো ভাই?”
“কেন সমস্যা কি আসলে?তনুকে নিয়ে তো আর পালিয়ে যাবে না।আর যদি পালায় আমরা বেঁচে যাব।ফুপার কত গুলো টাকা বেঁচে যাবে বলতো?
এমন সিরিয়াল সময়ে মিশকাতের এমন ফালতু কথায় তনুর প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। সে হনহনিয়ে চলে গেল নিজের রুমে।
মিশকাত জোরে হেসে উঠল।আয়রা বলল,
“এটা কি করলি?ওমন ভাবে বললি কেন?”
“বললাম কারণ তনু যেন রেগে এখান থেকে চলে যায় আর আমরা সবাই মিলে আলোচনা করতে পারি। ওর সামনে আরাফকে নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।”
“ওয়াও, ভাই তুই তো পুরো জমিয়ে দিচ্ছিস!মারুফ হাত তালি দিয়ে বলে উঠল।
রাফাত জানতে চাইলো,
“কি করতে চাইছো তুমি মিশকাত?”
মিশকাত বলল,
“আরাফকে বুঝিয়ে দেব তনুকে আমি ভালোবাসি।তাই তনুর থেকে দূরে থাকাই ওর জন্য ভালো হবে।আমার জানা মনে আমার আর তনুর বিষয়টা আরাফ এখনও জানে না।জানলে নিশ্চয়ই এতদূর এগোতে চাইতো না?ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে তনুও আমায় ভালোবাসে!যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে অন্যপথ ভাবতে হবে। আমি থাকতে তনুকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া হতে পারে না।”
***
সারারাত ছটফট করেছে তনু।পাশেই শান্তা বেঘোরে শান্তি মতন ঘুমিয়ে আছে।ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তনু বিছানা ছেড়ে উঠল।বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলো পুরো হোটেল কেমন ভুতুড়ে হয়ে আছে।কোথাও কেউ নেই।একটু ভয় করলেও সে হেটে এসে সুইমিংপুলের ধারে বসলো।কয়েক বছর ধরে নির্জনতা খুব পছন্দ তার।এইরকম পরিবেশে সে নিজেকে খুঁজে পায় যেন।সবার মাঝে থেকেও আজকাল খুব একা লাগে নিজেকে।আনমনে হয়ে যায় মন হুট করেই।যেন কারও জন্য অপেক্ষায় থাকে বেহায়া মনটা।সবসময় মনে হয় এই বুঝি কেউ এসে বসবে তার কাছে!পরম আদরে হাতটা ধরে বলবে,
” তনু তুমি একা নও,আমি আছি তেমার পাশে!”
হুট করে পুরুষ কন্ঠ পেয়ে ভয়ে কেঁপে উঠল।পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেছে।তাই দেখে মিশকাত মিটিমিটি হাসছে।
তনুর ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে মিশকাতকে সুইমিংপুলের পানিতে চুবিয়ে মারতে।কি অসভ্যতা শুরু করেছে তার সাথে?এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আর কিভাবে বলল কথাটা?তনুর পাশে থাকবে যেন বাংলা সিনেমার সস্তা ডায়গল!
“শোন,যেটা ভাবছিস সেটা করেই ফ্যাল। ভাবছি ভোরে সুইমিংপুলে নামতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে!”
“তুমি দিন দিন কেমন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো মিশকাত ভাই?”
তনুর কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই মিশকাত তনুর হাতটা ধরে ঝাপ দিলো সুইমিংপুলে।বিষ্ময়ে তনুর চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেছে।এমন অদ্ভুত কান্ড জীবনে কমই হয়েছে তার।
কিছুটা চিৎকার করে বলল,
“এটা কি করলে তুমি?”
“শোনেন, নবাবজাদী এই মিশকাত কখনও কারও খারাপ করে না।সারারাত তো ঘুমাস নাই এখনে কিছুক্ষণ থাক।এরপর ঘরে গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবি দেখবি কতটা ভালো লাগছে।এরপর তো আমরা ঘুরতে বের হবো।তখন ক্লান্ত লাগবে না।”
“আমার হাত ছাড়ো তুমি?”
“আমি তো কখনও তোর হাত ধরতে যাই নি রে!আজ একটু ধরতে দে প্লিজ?”
কি নিঃসংকোচ আদেবন!তনুর শিরদাঁড়া বেয়ে অজানা অনুভূতির শ্রোতা বয়ে গেল।দুজনেই নীল স্বচ্ছ পানিতে দাঁড়িয়ে আছে।কথা নেই কারও মুখেই।শুধু চলছে অনুভূতিদের দৌরাত্ম্য!মিশকাত শুধু তনুর হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।
আরাফ খুব সকালে পৌঁছে গেছে।রাত এগারোটায় গাড়িতে উঠেছিল সাড়ে চারটা নাগাদ সিলেটে পৌঁছেছে।হোটেলে আসতে পাঁচটা পার জয়ে গেছে।এত সকালে চেক-ইন হয় না।রাফাত থাকায় কোনো সমস্যা হবে ভেবেই সে এসেছে।রাফাতকে বারবার ফোন দিচ্ছে হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে।রাফাত ফোন তুলছে না।বিরক্ত হয়ে রাফাত হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের পেছনে চলে আসলো।সুইমিংপুলের কাছাকাছি আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল!
চলবে..
(অসুস্থতার কারণে খুব বেশি লিখতে পারলাম না তবু একটু ছোট আকারে দিলাম।নিয়মিত না দিলে গল্পের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। নিয়মিত লিখলে গল্পের মান উন্নত হয় কিন্তু শারিরীক অসুস্থতার কারনে আমি নিয়মিত গল্প লিখতে পারছি না।দোয়া করবেন যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনাদের জন্য নিয়মিত লিখতে পারি।)