#নিনীকা
#পর্ব_১৫_ও_১৬
#পর্ব_১৫
সেদিন রাতের পর নিনীকা লজ্জায় আর রওনককে ফোন করেনি। কি দরকার ছিল অমন করে অত কিছু আশা করার? রওনক কি ভাবলো? সে কি খারাপ মেয়ে ভেবেছে নিনীকাকে?
এর মাঝে রওনক ফোন করলেও নিনীকা ধরেনি। অন্যরকম আড়ষ্টতা তাকে ঘিরে ধরেছিলো।
তার দুদিন পর অবশ্য একদিন পাপার স্টাডিতে গিয়েছিলো রাত্তিরবেলা। পাপা কি সব পেপারস চেক করতে ব্যস্ত। নিনীকা দেখেই বললেন,
—গুড, তোমাকে পাওয়া গেল মামণি। একটা কড়া করে চা দাওতো আমাকে।
—পাপা চিনি বাড়িয়ে দিই। ব্রেইন এনার্জি পাবে।
—ডাক্তারের কথা তো শুনতেই হয়। দাও একটু বাড়িয়ে।
নিনীকা চায়ের জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলো, পাপা আবার পিছু ডাকলেন।
—তোমাকে এত পিচ্চি দেখাচ্ছে কেন? আলাদা কিছু করেছো?
—স্কার্ট পরে আছি পাপা।
নিনীকা চা নিয়ে এসে দেখে পাপা চোখ বন্ধ করে আছেন। চা টেবিলে রাখতেই বললেন,
—যে জিনিস আমাদের খুব পছন্দের হয়, তার উপর অন্যের অধিকার, প্রভাব আমরা একদম সহ্য করতে পারি না। তাই না নিনী?
—এরকমই তো। তবে মায়ের দিক ছাড়া সবারটা এক পাপা।
—অথচ লজিক্যালি দেখলে কিন্তু তোমার মা’ই ঠিক। পছন্দের জিনিসটায় যদি অন্যের প্রভাবে থাকলে সুরক্ষিত থাকে, তাহলে সেভাবেই রাখা উচিত! তোমার মায়ের কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলেছে এখন।
—এটার সুন্দর আরেকটা নাম আছে পাপা, শুদ্ধতম ভালোবাসা বলে একে।
—এই শুদ্ধতম ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে তোমার মা নিজেকে অসংখ্যবার ছোট করেছে নিকৃষ্ট কীটের কাছে। ওখানেই আমার যত রাগ নিনী।
—প্রথমটা করেছে তোমার জন্য আর পরেরটা আমার জন্য করেছে পাপা। ভেবেছে আমার যদি কোনো অনাদর হয়, কষ্ট হয়!
—এত কিছু বুঝেও কেন তুমি এখন নিজের পছন্দটাকে ছাড়তে চাচ্ছো মামণি? তোমার পরে কেউ এসে যদি তাকে অনাদর করে বেশি!
নিনীকা অবাক হলো, খুব অবাক হলো। পাপা কিভাবে বুঝলো সে দোটানায় আছে?
—তোমার মায়ের ভালোবাসার গল্পটা ছাড়াও কিন্তু আমাদের পরিবারে আরেকজন মানুষের চমৎকার ভালোবাসার একটা গল্প আছে!
নিনীকা পাপার কাছে বসলো। হাতটা কোলে নিয়ে বললো,
—তুমি কিভাবে সব জেনে যাও পাপা?
পাপা মৃদু হাসলেন।
—আগে তো গল্পটা শুনবে! গল্পটা তোমার দাদীমা’র! বাবা যখন মা’কে বিয়ে করেন তখন মায়েদের দিকের সবাইকে বাবার প্রথম বিয়ের ব্যাপারটা লুকানো হলো। মায়েদের বনেদী ঘর। দ্বিতীয়া শুনলে মা’কে বিয়েই দিবে না হয়তো! এমনকি বিয়ের চারমাস কেটে গেলেও বাবা মাকে নিজ থেকে বললেনও না। মা লোকমুখে শুনলেন ব্যাপারটা। জানলেন বাবার আগের স্ত্রী ২সন্তান রেখে মারা গেছেন। সন্তানরা থাকে তাদের নানুবাড়িতে। কষ্ট পেলেন, ভীষণ কষ্ট! বাবাকে প্রতারক নামকরণ করে মায়ের বাপের বাড়ির লোক এসে সালিশ বসিয়ে মা’কে নিয়ে চলে গেলেন। তখন আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাবা তখন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। মিলিটারির লোক বাবার স্কুলে গিয়ে অফিস ঘরে একটি সুন্দর ছোট নৌকা টাঙ্গানো পেলো।আসলে বাবার স্কুলের এক ছাত্র হাতের কাজরূপে সুন্দর করে একটি নৌকাটি বানিয়ে দিয়েছিলো। মিলিটারিরা বাবাকে ধরে নিয়ে গেল। খুব মারধর করলো। মা সেই খবর পেলেন। যেদিন সন্ধ্যায় পশুগুলো বাবার মতো আরো অনেককে লাইন ধরে দাঁড় করালো গুলি করে মারতে, সেই সন্ধ্যায় আমার অসীম সাহসী মা গিয়ে সেই লাইন থেকে বাবাকে টেনে নিয়ে এলেন। দৌড়ে পালাবার সময় পিশাচরা গুলি করলো, গুলি পড়লো মায়ের ডানপায়ের উরুতে। বাবা কোনোরকমে মা’কে কোলে করে পালিয়ে এলেন।গুলিটা নিয়ে মা দীর্ঘদিন ভুগলেন, অচল হয়ে গেলেন। তখন যুদ্ধকালীন লুকিয়ে চিকিৎসা বলতে ছিল মবিল গরম করে প্রলেপ দেওয়া। দেশ স্বাধীনের পর বাবাকে বড় চাকরির জন্য সচিবালয়ে ডাকা হলো। বাবা কিন্তু তখনকার দিনের এম.এস.সি, এম.এড। বাবা গেলেন না বড় চাকরিতে। বাড়ি থেকে পীড়াপীড়ি করলে বাবা সাফ জানিয়ে দিলেন, “আমি আমার এই অসুস্থ বউকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। সে যদি আমায় গিয়ে লাইন থেকে টেনে না আনতো, আমার বাঁচার আর কোনো কারণই ছিল না।”
গুলিবিদ্ধ ঘা হওয়া মায়ের পায়ের চিকিৎসা করালেন।মা ভালো হলেন প্রায় দেড় বছর পর। সুস্থ হয়েই তিনি আমাদের নানুবাড়ি থেকে আমাকে আর তোমার বড়ফুফুকে নিয়ে আসেন।
নিনীকার চোখ ছলছল করে উঠলো। আবেগঘন ভাবে বললো,
—আমার কত সাহসী দাদীমা!
—সাহসটা কিন্তু ভালোবাসার ছিল মামণি। যাকে ফেলে মা চলে গিয়েছিলেন তাঁর প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা মা করেননি! মহান সৃষ্টিকর্তার মমতার কত রূপ দেখেছো?
নিনীকা হাতের উল্টো পিঠে বারবার চোখ মুছছে।
—তারপরও যদি তোমার মনে হয় এই সম্পর্ক বইতে পারবে না তুমি, আমি সব ক্যানসেল করে দিবো।
নিনীকা ফিসফিস করে বললো,
—এতে মায়ের অনেক অসম্মান হবে পাপা। আরেকটা বিশেষ মানুষেরও অসম্মান হবে। সে অনেক দায়িত্ব নিয়ে সিলেক্ট করেছে আমায়। আমি ঐ অসম্মানের দায় বইতে পারবো না পাপা। বরং এর থেকে ভালোবাসাহীন একটা সম্পর্ক বয়ে বেড়ানো অনেক সহজ!
—তোমায় কিন্তু নিজের সব কষ্ট লুকিয়ে রওনককে সামলাতে হবে, তোমার মা যেভাবে আমায় সামলেছে।
—আমিতো সবাইকে বুঝাতেই চাই, আমি মাহবুবা চৌধুরীর মেয়ে। আমি একদম তাঁর মতো হয়েছি।নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে যে সব করতে পারে।
—কাজটা একটু কঠিন মামণি কিন্তু অসম্ভব নয়।
নিনীকা দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
—এই কঠিন কাজটাই আমাকে করতে হবে পাপা।মায়ের ভালোবাসার দাম আমি এক্যুরেট দিতে চাই।
এরপর একদিন রাতে রওনক বাসায় এসেছিলো অবশ্য। বসেছিলো ঘন্টাখানেক। নিনীকা ক্লিনিক থেকে ফিরে চেইঞ্জ করবে বলে সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বেরোয়নি। আসলে ইচ্ছে করেনি তার। নাসিদা খালা দুবার ডেকেছেনও, নিনীকা দরজাই খোলেনি।বসে থাকুক রওনক। নিনীকার জন্যতো আর আসেনি। ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে এসেছে, করুক।
#পর্ব_১৬
হলুদ যেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেদিন খুব সকালে এসে রওনক হাজির। নিনীকা বিছানা ছাড়েনি তখনও! রওনক সোজা উপরে তার ঘরে চলে এলো। নিনীকা শর্টস পরে শুয়েছিলো। রওনককে দেখে কাথা মুড়িয়ে বসলো। রওনক অবশ্য তাকায়ওনি নিনীকার দিকে। নিনীকাই নীরবতা ভাঙলো।
—কিছু হয়েছে? এত সকালে?
—আমি সেদিন অপেক্ষা করে গেলাম, নিচে নামেননি পরে। ফোনকলসও তো রেসপন্স করছেন না। কেন? বিয়েটা আপনার মতেই হচ্ছে তো?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে, দুঃখী চেহারা করে নিনীকা বললো,
—আমার আবার মত! এত বড় হিরো আপনি!
মুখে বিরক্তিকর অাওয়াজ করে রওনক বললো,
—প্রফেশন কি সবসময় একটা মানুষকে মূল্যায়নের মাপকাঠি নাকি? ব্যক্তি আমি আপনার কাছে পছন্দের নাও হতে পারি তো!
নিনীকা মুখ ভেংচি করে বললো,
—আমি অবলা নারী। আপনি তো বলেছেনই ডাক্তার আপনার পছন্দ না তাও আমি বিয়ে বসতে রেডী।
—দেখুন বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে সব জায়গায় বিভিন্ন নায়িকার বিবৃতির যে নিউজগুলো হচ্ছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।
—আমি বা আমার পরিবারের কেউ কি কিছু জানতে চেয়েছে?
—জানতে চাইলেই যে বলতে হবে এর আগে বলা যাবে না, এমন তো কোনো কথা নেই! আমারও অনেক মন্দ থাকতে পারে।
—আমার ওসব নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। মানুষ কিন্তু কোনো জড়বস্তু নয় যে এর খারাপটা কেটে ফেলে দিয়ে শুধু এর ভালো অংশটুকুই ব্যবহার করা যাবে। ভালো-মন্দ মিশিয়ে সব গ্রহণ করার ক্ষমতা আমার আছে কিন্তু। আপনার মধ্যে সেটা না থাকলে আমি তৈরি করে দিবো।
—কিভাবে?
গলার স্বরটা নামিয়ে গল্প বলার মত করে নিনীকা বললো,
—ম্যাজিক করে। আই হ্যাভ এ ম্যাজিক বক্স। কেউ জানে না সেকথা, শুধু আমি জানি। এই যেমন আমি ম্যাজিক করেই জেনেছি আপনার প্রথম পছন্দ ছিল যে মেয়েটি, তাঁর নাম “বিলা”। বিলাই থেকে”বিলা”। প্রমিত বাংলায় যাকে বলে বিড়াল।
রওনক রেগে গিয়ে প্রায় চিৎকার করে বললো,
—তাঁর নাম ইলা। বিলা বলার মানে কি? এসব ঠাট্টার মানে কি? মুখ সামলান আপনার।
নিনীকা হাসলো। খুব মিষ্টি করে। সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে ‘মধুর হাসি’।
রওনক দাঁড়িয়ে ছিল। নার্ভাসভাবে ফ্লোরে বসে পড়লো। ঘামছে সে।
নিনীকা নরম স্বরে বললো,
—আংটি বদলের অনুষ্ঠানে এক মহিলা আমার শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে কেঁদে ফেললেন।আমি হতভম্ব! আমার সিনিয়র একজন মহিলা তাও আবার ছেলেপক্ষের, মেঝেতে বসে আমার পায়ের কাছে কুচি ধরে কাঁদছে। এটা আমায় খুব লজ্জা দিলো। কান্নারত সেই মহিলাকে আমি তুলে ধরে দাঁড় করালাম। সেই মহিলাটির চোখ মুছিয়ে দেবার সময় তিনি বললেন, তাঁর নাম ইলা।
রওনক প্রায় টেনেটুনে একটু সাউন্ড করে বললো,
—কাউকে বলুন আমায় একগ্লাস পানি দিতে।আমার খুব গলা শুকিয়ে আসছে।
নিনীকা কাঁথাটা পেঁচিয়ে নিয়েই রওনককে
পানি এগিয়ে দিলো। রওনক একবারে সম্পূর্ণ পানিটা শেষ করলো। নিনীকা বলে যেতেই থাকলো,
—উনার ধারণা, আপনি উনাকে ভালোবেসে এখনো কষ্ট পাচ্ছেন। নিজেকে উনি কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছেন না। আমি জানি, ভালোবাসা এমন একটা ব্যাপার যা কারো পারমিশন নিয়ে করা যায় না।তারপরও আমার মনে হয়, আপনার তাকে বুঝিয়ে দেয়া উচিত আপনি ভালো আছেন।
—আমি তো তাকে বলিনি যে, আমি কষ্ট পাচ্ছি।
—কষ্ট যে নেই, তাও কিন্তু মুখ ফুটে বলেননি।
রওনক চুপ করে থাকলো।
নিনীকা আবার বলতে থাকলো,
—একটা মজার ঘটনা শুনেন, আমি পাশ করে সবে প্রফেশনালি ক্লিনিক জয়েন করেছি। নিউলি ডক্টর! ঐ সময়ে আমার ক্লিনিকে এক শিশুকে ভর্তি করা হলো।সিভিয়ার ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া। বাচ্চাটির বয়স, দেড় বছর! মা নেই। বাবাই ভর্তি করেছেন। বাচ্চার সাথে এসেছে দাদী। আমার নাইট ছিল তখন। বৃদ্ধা দাদী একা সারারাত জাগতে পারেন না।এদিকে বেবিটার ক্যানোলা নাড়া পড়লেই, স্যালাইন বন্ধ হয়ে রক্ত উঠে যায়। সারাক্ষণ হাতের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। আমার কি যে হলো তখন! আমিই বেবিটার পাশে রাত জাগতে থাকলাম। ন্যাপি পর্যন্ত বদলে দিতাম। ঘুমের মাঝে বেবিটার কপালে চুমু খেতাম, হাত বুলিয়ে দিতাম। মনে মনে চাইতাম, জেগে উঠে ‘মা’ বলুক আমায়! এরপরও আমার কাছে অনেক এরকম বয়সের অসুস্থ বেবি এসেছে। তাদের দুঃখে, অসুখে, ব্যথায়, ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে আমি কেঁদেছি অনেকবার। আদর করেছি প্রাণভরে।
তবে ওই শিশুটির মতো করে নয়। এতে কিন্তু কোনো বেবি হিংসে করেনি আমাকে। ব্লেইম করেনি যে, তুমি তো এর আগে ওই বেবিটার জন্য বেশি আন্তরিক হয়ে কেঁদেছো! এবং আমি নিশ্চিত অনেক বছর পর যখন আমার বেবি হবে, তারাও ওই বেবিটাকে হিংসে করবে না। এতে বকবে না আমায়! রওনক সাহেব, ভালোবাসা এত তুচ্ছ নয় যে একজন কাউকে ভালোবাসলেই আপনার আর কাউকে ভালোবাসা যাবে না। ভালোবাসা কোনো ক্রাইম নয় যে কাউকে ভালোবাসা মাত্র আপনি অপরাধী হয়ে গেলেন।
ভালোবাসা একটা সম্মানিত দায়িত্বের নাম। এক ভালোবাসা দিয়ে যেমন আরেক ভালোবাসাকে মুছে ফেলা যায় না, তেমনি মিথ্যে করাও যায় না।
—সব ভালোবাসা কি এক?
—একই তো। শুধু মানুষভেদে আর সময়ভেদে ভালোবাসার ধরণ আর প্রেক্ষিতটা বদলায়। যেমন প্রেমিকাকে একভাবে, স্ত্রীকে আরেকভাবে, সন্তানকে আরও একভাবে। নাম কিন্তু ওই একটাই “ভালোবাসা”!
—সব এত সহজ?
—অবশ্যই সহজ! শুধু ইন্টারমিডিয়েটের ক্যালকুলাসটা কঠিন।
নিনীকা মৃদু হাসলো।
—আমি তো এটা ভেবে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি কিভাবে আপনাকে ইলার ব্যাপারটা বলবো।
—আমাকে কিছু বলতে হবে না। আপনি বরং ইলাকে বুঝিয়ে বলুন যে আপনি ভালো আছেন। উনি খুব কষ্টে আছেন। অপরাধবোধ থেকে ঠিক করে নিজের জীবনটাকে উপভোগ করতে পারছেন না।সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকছেন নিজেকে পাপী ভেবে।
আপনি নিশ্চয় এটা চান না?
—আপনি এত গুছিয়ে কথা বলতে পারেন, একটু গুছিয়ে দিন না কি বলবো।
—আপনিই পারবেন।
রওনক আর কিছু বললো না। আজ তার বুক থেকে পাথর নেমে গেছে। নিনীকার মতো কাউকেই তো সে হয়তো চেয়েছিলো, যে সব বুঝবে। রওনক মনে মনে ভেবে ফেললো, বিয়ের রাতে নিনীকাকে সে প্রথম যে কথাটা বলবে তা হলো, “আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্টগুলো, প্রবলেমসগুলো আমি আপনাকে বলতে চাই নিনীকা। ভীষণ ভারী হয়ে আছে বুকটা আমার। ছুঁয়ে দিন না এখানে, ভ্যানিশ হয়ে যাক সব।”
দরজার কাছে যেতেই নিনীকা ডাকলো,
—শুনুন, আপনি এরকম আমাদের বাসায় আসবার সময় বডিগার্ড নিয়ে আসবেন না। আমরা কি আপনাকে খেয়ে ফেলবো নাকি? হিরোগিরি বন্ধ! একদম বন্ধ। এবাড়ির জামাইমানুষ আপনি। আসবার সময় দু-হাত ভর্তি করে মিষ্টি আনবেন তা না, গাড়ি ভর্তি করে বডিগার্ড নিয়ে এলেন। এই যে আজকে সকালে হুট করে চলে এলেন, মিষ্টি এনেছেন? সাদা না কালো? কালো মিষ্টি ছাড়া নাসিদা খালা খায় না আবার। দাদীমার এক্সট্রিম ডায়াবেটিস, সুগার ফ্রি লাগে তাঁর। এরপর থেকে মনে রাখবেন।
রওনক হেসে ফেললো।
নিনীকার মুখের বিরক্তি দেখে মনে হলো, এই মুহূর্তে সে সবথেকে কালো মিষ্টি নিয়ে চিন্তিত। রওনকের হঠাৎ করে এই নিনীকা মেয়েটাকে ভীষণ আপন মনে হলো। ভীষণ।
রওনক এবার নিনীকার একটু কাছে গিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—আপনি কি অসুস্থ ডক্টর? এমনভাবে কাঁথা মুড়িয়ে আছেন যে?
দুষ্টামির হাসিতে নিনীকা বললো,
—কাঁথা খুলবো? ভেতরে জটিল জিনিস আছে, দেখবেন?
রওনক দ্রুত বেড়িয়ে চলে গেল।
এই মেয়ের কাছে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ানোও ঠিক হবে না।
নিনীকা মনে মনে বললো, কত ভড়ং! সারাক্ষণ তো অর্ধউলঙ্গ মেয়ে নিয়ে খেলাধুলা! নিজের বউকে তাকিয়ে দেখতেও লজ্জা! হুহ….
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা