হলিডে #পর্ব_৩৭_ও_৩৮

0
461

#হলিডে
#পর্ব_৩৭_ও_৩৮

#পর্ব_৩৭

তামিম আসছে আজ। সেলিনা মহা আয়োজন করে ছেলেকে রিসিভ করতে এসেছেন। তামিম অবশ্য বারবার করে বলেছে,
—এসে কোনো লাভ নেই মা। প্রথমে আমাদের অফিসের গাড়ি করে ব্যুরোতে যেতে হবে। সেখানে ছোটো সেমিনারের পর বাসায়।
সেলিনা ছেলের কথা শুনেননি। তিনি গাড়ি, ব্যন্ডপার্টি, মালা সব কিছু নিয়ে এসেছেন। সবথেকে বড় কথা সারপ্রাইজ হিসেবে নীরাকেও নিয়ে এসেছেন।
হাজার হোক ছেলে তাকে নীরার মতো বউমা উপহার দিয়েছে। নীরা অবশ্য আপাদমস্তক বোরকা পরে বসে আছে।
এয়ারপোর্টে নেমে তামিম রাগারাগির চূড়ান্ত করলো।সেলিনা তাতেও রাগ করলেন না। ছেলেটা দেখাক না একটু রাগ! বিয়ের কথা শুনবার পর তিনিও তো ছেলেকে কম কথা শোনান নি।
নীরাকে দেখেই তামিম আরো ক্ষেপে গেল।
—এই মহাবিশিষ্ট হিরোইনকে কে এনেছে? কে? আমি বললাম না, বউ মরে গেছে আমার।
রিতু গম্ভীরমুখে বললো,
—শোন ভাইয়া, আমাদের একদম ধমকাধমকি করবি না। আমরা কেউ আনিনি তোর বউকে, তোর বউ ধেই ধেই করে চলে এলো। আমরা বারবার করে বললাম, এসো না এসো না। সে বলে কিনা, আমার স্বামী অধিকার কই?
তামিম এরপর আর একটা কথাও বলেনি। সেমিনার শেষে অফিসে কিছুক্ষণ তামিম সোফায়ই শুয়ে ছিল। বাড়ি ফিরতে একদম ইচ্ছে করছিলো না। এত চ্যালেঞ্জিং কেন লাগছে লাইফটা? সে তো কাউকে ভালোবাসতে চায় নি? নীরা হুট করে কেন তার জীবনে এলো। কেন নীরার বিলবোর্ডের ছবির দিকে তাকালে তার ভেতর হু হু করে। এত ইনসিকিউরড কেন লাগে তার? তবে কি সে তুখোড় মানসিকতা ধারণ করে না। ব্যাকলেস, স্লিভলেস এই মেন্টালিটি ধারণ করা সেও কি একটা পুরুষ শুধু? তার মাঝেও কি নীরাকে বেঁধে ফেলার বোধ কাজ করছে? না না, তা কেন? সে ভালোবাসে বলেই বুঝি অসহায়। নীরার জীবনে কি কেউ আসবার ভয়? সে তো আসবার হলে সাধারণ নীরার জীবনেও আসতে পারে। এত কেন কষ্ট হয় কি দরকার ছিল ভালোবাসার? একা তো সে বেশ ছিল। ভালো ছিল। আচ্ছা, সেও কি টিপিক্যাল লাভার বা টিপিকাল হাজবেন্ড হয়ে গেছে? তা কেন হবে? সেরকম চিপ সে কখনোই হতে পারে না। শুধু একটা ব্যাপারই, আর তা হলো নীরা একটা পজিটিভ ফিলিংও দেখায়নি কখনো তাকে। এর মানে কি? নীরা তামিমের মতো কাউকে জীবনে চায়নি? দুর্নিবারের মতো কি কাউকে চেয়েছে কিংবা তাঁর থেকেও বেস্ট? নাকি নীরার অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা? তামিম কি বিয়ে নামক দায়বদ্ধতা দিয়ে আটকে ফেলেছে তাকে? কেন সে কখনোই তৃষ্ণার্ত হয়ে তাকায়নি তামিমের দিকে? ঋণবদ্ধ মনে করছে কি নিজেকে?

বাসায় ফিরে তামিম আরো হতচকিত হয়ে গেল। মা এসব কি করেছেন?
—এরকম সাজানোর মানে কি মা? আমি আজ প্রথম বাইরে থেকে ট্রেনিং করে আসিনি।
—আমরা করিনি। তোর বউ এসেছে। বাড়ি আপনাআপনিই সেজে গেছে।
—বউ এসেছে মানে কি? কে তাকে এলাউ করেছে, মা? কে? কোথায় সে?
—তোর বউ তোর ঘরে।
—মা, ভালো করে শুনে রাখো আমার কোনো বউ নেই। আর আমার কোনো বউয়ের দরকারও নেই।

তামিম রাগে গরগর করতে করতে ঘরে এলো।
—তুমি এখানে কেন নীরা? তোমার তো দুর্নিবারের সাথে থাকার কথা। তোমার জন্য এই জায়গা নয়।
—আমি আসতে চাইনি। আপনার মা জোর করলেন ।
নীরার না আসতে চাওয়ার ব্যাপারটা সত্যি। নীরার লজ্জা করছিলো খুব। তারপর অনেক জোর খাটিয়ে নীরা নিজেকে স্বাভাবিক করে এসেছে।
তামিম কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় বসে পড়লো। গোলাপী সাদার মিশেলে একটা পিওর কটন জামা পরেছে নীরা। কোনো অর্নামেন্টস নেই। তারপরও যেন চোখ ধাঁধানো লাগছে দেখতে। এরকম সুন্দর হবার কি দরকারটা ছিল? নাকভোঁতা, উটকোমুখো হলে তো আর ফিল্মের হিরোইন অন্তত হতো না। বাহ্ নখ বড় রেখেছে, জামার সাথে মিলিয়ে পেইন্ট। হেয়ার কাটটা কি বদলেছে? চুলে ব্রাউন হাইলাইট। বাব্বা। তবে পায়ে সাধারণ ঘরের চটি।
এর মানে কি? এত সাদামাটা হয়ে তামিমের কাছে আসার মানে কি? তামিমের কি কোনো দাম নেই?যতই ভালো দেখাক, তামিমের কাছে আসতে কেন সাজগোজের দরকার নেই? শুধু দুর্নিবারের সাথেই সেজেগুজে অভিনয় করবে আর তামিম কিছু নয়?
এতদিন পর হাজবেন্ড এসেছে অথচ উনার ভাব দেখো? ভালোবাসার কোনো ছিঁটেফোঁটাও নেই। কান্নাকাটিও নেই, আক্ষেপও নেই। তামিম শুধু শুধু এসব চাইছে, এসব কিছু তো তার প্রথম থেকেই ছিল না। আর এখন তো বৃহস্পতি তুঙ্গে।

নীরা এগিয়ে এসে বসলো বিছানায়।
—আপনি বিদেশে চলে যাবার পর আমার মনে হয়েছে আমি ভালো থাকবো! কিন্তু…..
—নিচে বেলালকে দেখলাম, সে কি তোমার পি এস?
—ঠিক পি এস না। আসলে কিছু কাজ আছে, যেগুলো আমি ম্যানেজ করতে পারি না। সেগুলো ও দেখে নেয়। যেমন প্রডিউসারদের সাথে কথা বলা, মিটিং ফিক্স করা, শিডিউল মেলানো এসব।
—তুমি দুর্নিবারের সাথে আরো দুটো মুভি সাইন করেছো অথচ ফার্স্ট মুভিটাই রিলিজ করেনি এখনো। দুটো কম্পানির ব্রান্ড এম্বাসাডর হচ্ছো কাপলে, এর মানে কি নীরা?
—মানে হলো, প্রডিউসার-ডিরেক্টরদের ডিমান্ড। আমরা ভালো কাজ করছি। তাছাড়া দুর্নিবার স্যার নিজেও খুব হোপফুল আমাদের জুটিটা নিয়ে। তিনি বলেছেন, যাস্ট ইতিহাস ঘটে যাবে।
তামিম উঠে দাঁড়ালো। হাতঘড়িটা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,
—নীরা…..
—হুঁ!
—তুমি এক্ষুণি দুর্নিবারকে ফোন করবে। ফোন করে বলবে, তাঁর সাথে সবকাজ তুমি ক্যানসেল করছো। এখন অন্য হিরোদের সাথে কাজ করবে!
—দুর্নিবার স্যারের সঙ্গে আমার সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক। আমার কাজ যেখানে ক্লিক করবে, আমি সেখানেই কাজ করবো। আই নিড দ্য নক। আই নিড দ্য হিট।
—তার মানে তুমি আমার কথা শুনবে না??
—আমি একদমই তা বলিনি। আমার প্রফেশনাল ফিল্ড ওটা, আমি সবসময় বেস্ট কাজটাই করতে চাই। আপনার সাজেশন আমি অবশ্যই শুনবো, যদি সেটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হয়! এই মুহূর্তে দুর্নিবার স্যার লিড করছেন, বাদ দেয়াটা আমার কাছে লজিক্যাল মনে হচ্ছে না।
তামিম শার্ট ছাড়লো।
—আপনি যদি শুধু আমার প্রতি রাগ থেকে মাথা গরম করে এটা বলে থাকেন, তাহলে কিন্তু…
—আমি রাগ করবো কেন? হোয়াই? তোমার ক্যারিয়ার তোমার লাইফ।
—আপনি আমাকে মিসআন্ডারস্ট্যান্ড করে আছেন কিনা, আমি আসলে বুঝাতে এসেছিলাম। মিডিয়ার লাইফটা নিয়ে লোকে যেরকম ভাবে… এই যেমন ধরেন সবাই ভাবে, এখানে সব নোংরামো… মোটেও সেরকম নয়। ব্ল্যাক ফিল্ড কিন্তু সবজায়গাতেই আছে। ধর্ম থেকে রাজনীতি, সাহিত্য থেকে মঞ্চ সবজায়গাই কিন্তু একটা অন্ধকার জগত আছে। আপনি হয়তো ভাবছেন গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে…
—নীরা, আই ডোন্ট নিড এনি এক্সপ্লেনেশন! তুমি চলে যাও, আমি টায়ার্ড! প্লিজ লিভ।
নীরা থমকে গেল হঠাৎ। সে শুধু রাগ ভেবে নিয়োছিলো কিন্তু এটা তো নিষ্ঠুরতা। নীরা ঠিক প্রথম দিনের নীরা হয়ে মানুষটার কাছে এসেছে, ফিল্মের হিরোইন হিসেবে নয়। অথচ উনি শুরু থেকেই মুভি নিয়ে কথা বলছেন। উনি কি জানেন না, ওটা নীরার স্বপ্নের জায়গা আর উনি ভালোবাসার।
—আচ্ছা, আমরা পরে কথা বলবো। আপনি রেস্ট নিন।
—আমার কোনো কথা নেই নীরা। তুমি চলে যাও।
—আমি অপেক্ষা করছি নিচে। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।
তামিম শার্টটা ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে।
—আই সে লিভ নীরা। ডোন্ট ওয়েট…
তামিম প্রায় চিৎকার করে উঠলো।

নীরা ব্যাগটা তুলে কাঁধে নিলো। এই কোন মানুষকে দেখছে সে? আজ সে কি বলতে এসেছিলো? কত কিছু গুছিয়ে রেখেছিলো! নীরার কি ভুল হয়ে গেছে কোথাও? তার যে সাধারণ জীবনে মানুষটা এসেছিলো, সে সেরকম সাধারণ হয়ে মানুষটার কাছে এসেছিলো। এই যে জামাটা সে পরে এসেছে, এটা তার শরবত ভ্যানের প্রথম রোজগারে কেনা। নীরার এই পরিচয়ের জীবনে মানুষটা এসেছিলো, ওইরকম শূন্য নীরার জীবনে, ক্ষুদ্র নীরার জীবনে! সে কত হেনস্তাই না করেছে মানুষটাকে। আজ সে বলতে এসেছিলো, মানুষটাকে পাশে পেয়ে তার এখন দুটো ডানা নয়, মোট চারটে ডানা। তার স্বপ্ন পূরণের সবকিছু অনেক সহজ! কিন্তু এ যে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। তার জীবনেও কি শফিক ভাইয়ার মতো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে?
দরজায় গিয়ে নীরা ফিরে তাকালো। তামিম উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে। পিঠ চুইয়ে ঘাম বেয়ে একাকার! এত শীতেও ঘাম। এত রাগ! রিভলভার কোথায় উনার? দিক না গুলি করে নীরাকে!
নীরা আর দাঁড়ালো না।
নীরা চলে যেতেই তামিম ফিরে তাকালো।এত এক্সপ্লেনেশন নীরা কেন দিচ্ছে? সে কি আজ তামিমকে ভালোবেসেই এসেছে নাকি অন্য দায়! ভালোবেসে আসলে এত কথার দরকার হয় না, কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুটো নিঃশ্বাস ফেললেই তো এই বুক বেঁচে উঠে! তবে সে কি সেই রাতের কথা ভেবেই দায় থেকে এসেছে? তামিম কি বলবে, সেই রাতে কিছুই হয়নি। মাতাল প্রেমিকার সুযোগ তামিম নেয়নি৷ তিলের ব্যাপারটা তামিম নীরার সিক্রেট ডায়রী পড়ে জেনেছিলো। সেদিন রাতে নীরার পাগলামো সামলাতে, তামিম তাকে কোমরে বেঁধে সামলেছিলো। যেভাবে তাকে রুড ক্রিমিনাল সামলাতে হয় সেভাবে। সে চাইলে সেই রাতে অনেক কিছুই করার ছিল। কিন্তু তামিম তা চায়নি। সে যেমন প্রতিমুহূর্তে নীরাকে ভেবে ঘেমে যায়, দিশেহারা হয়, তামিম চেয়েছিলো, নীরাও সেরকম করবে। আর চেয়েছিলো নীরা নিজে থেকে সমপর্ন করবে নিজেকে। কাতর হয়ে তাকাবে, পাগল হয়ে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলবে, ভালোবাসি গো ভালোবাসি…..
তা হবার নয়। এর আগেই নীরার জীবনে অন্য আলোর ঝলকানি। যেখানে তামিমের থেকেও বেস্ট কিছু এসেছে! হুহ্… ভালোবাসা ব্যাপারটা বুঝি তামিমের জন্য অধরাই থেকে গেল। ব্যাক ক্যারিয়ার থেকে রিভলভারটা বের করে রাখার আগে এর নলের মাথায় তামিম লম্বা একটা চুমু খেলো। আর মনে মনে বললো, তোমাকে ভালোবাসার থেকে এই বুলেটকে ভালোবাসা বেশি সহজ নীরা! বুলেটেও এত ব্যথা নেই যত ব্যথা তোমায় ভালোবেসে।

নীরা মেইন ডোর পেরিয়ে বেরোবার সময় সেলিনা পিছু ডাকলেন,
—না, আসলে আমার জরুরি কাজ পড়ে গেছে হঠাৎ। তাই চলে যাচ্ছি।
—কাজ যখন পড়েছে। অফকোর্স যাবে। সবার আগে তোমার কাজ। তবে গাধাটা যদি তোমার সিনেমার কাজ নিয়ে কিছু বলে না, একদম শুনবে না। সিনেমায় অনেক নাম করতে হবে তোমাকে। ক্যারিয়ার নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ!
—সেরকম কিছুই নয়। একটা হুট করে কাজ এসে গেছে।
রিতু ডাইনিং এ চা খাচ্ছিলো ওখান থেকে ডেকেই বললো,
—নীরাপু তোমার জীবনের রাজা তুমি। তুমি যেটা পছন্দ করো, সেটা যদি ছেড়ে দাও তাহলে নিজের সাথে সবথেকে বড় অন্যায় করা হবে। এই অন্যায়ের কোনো বিচারও নেই। বিকজ নিজের মনের কোনো আদালত নেই।
—তোমার ভাইয়া ভাবছেন, আমি গ্রিডি বেস্টের জন্য।
—তুমি বলোনি তাকে ভালোবাসায় এর থেকে বেস্ট বলে কিছু নেই। মানুষের কাছে যেটা বেস্ট, সেটাকেই সে ভালোবাসে। যেমন তুমি যাকে ভালোবাসলে, কেন বাসলে? সেটা বেস্ট বলেই তো?
সেলিনা চেঁচিয়ে বললেন,
—তুই কি ভালোবাসাবিদ? এত জ্ঞান দিচ্ছিস! চুপ!
—মা প্লিজ! থামবে তুমি। ভালোবাসোনি তো তাই এদের ক্রাইসিসটা বুঝবে না। শোনো নীরাপু তুমি ভাইয়াকে স্ট্রেইট জিজ্ঞেস করবে, তাঁর কাছে তুমি কেন বেস্ট? যদি বলতে পারে, তাহলে বুঝবে!
নীরা হাসলো।
—নায়িকা বউ বোধহয় কারও পছন্দ না। তাই না রিতু?
—একদম না। এ বাড়ির মেয়ের জামাই যদি অভিনয় করতে পারে, বউ তো আরো আগে অভিনয় করবে। তাছাড়া আমরা কেউ তোমার অথরিটি নই। ইউ আর দ্য ম্যানেজিং ডিরেক্টর। আই রিপিট ইউ আর দ্য ম্যানেজিং ডিরেক্টর অফ ইওর মাইন্ড এন্ড ইওর উইশেস! আর পয়েন্ট টু বি নোটেড নীরাপু, তোমার গুণধর হাজবেন্ড কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেয়েও সবাইকে কাঁদিয়ে তা ছেড়ে বন্দুকধারী গোয়েন্দা হয়েছে। সে যদি তাঁর ক্লিকটাই স্ট্রিক্ট করে বেছে নেয়, হোয়াই নট ইউ? আর সত্যিকারের ভালোবাসায় ছেড়ে যাওয়া বলে কিছু নেই। যেটা আছে তা হলো, বিরহ বা ভালোবাসার বিরতি। যেটাকে আমরা মাঝে মাঝে অভিমান বলে জানি।
সেলিনা আবার চেঁচালেন।
—সে কখন এ বাড়ির জামাই হলো? কখন?
—হয়নি, হবে। একই তো কথা। আমার আঠারো হোক।
—তোর থেকে দশ-বারো বছরের সিনিয়র একটা লোক। তোর ভয় করে না? চুপ….
রিতু মনে মনে বললো, আমি কেনো ভয় পাবো মা, সেই তো বরং ভয় পায়। আন্ডার এইটিন শুনে কিস করতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে ঘেমে একাকার। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললো, আজ থাক রিতু। তুমি এইটিন হয়ে এসে বরং গেটিসটা দিয়ে দিও। আমি পারবো না।
রিতু তখন শব্দ করে হেসেছিল, আর বেচারা নার্ভাস হয়ে কফিতে কলা ডুবিয়ে চাবাচ্ছিলো।

—নীরাপু ভাইয়া তোমার থেকে কত বছরের বড় বুঝিয়ে বলোতো মা’কে। সবসময়ই আমার বরের বয়স নিয়ে কথা। ছিঃ মা। বেচারা শুনলে কষ্ট পাবে তো! মা নেই, তোমাকেই ও’কে মায়ের মতো ভালোবাসতে হবে।

নীরা তাৎক্ষণিক বেরিয়ে গেল। এরা দুই ভাই বোনে ভালোবাসার কি যম! আবার কষ্ট দিতেও যম!

নীরাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠা হয়েছে আজ। নীরা অবশ্য চাইলে আগেও উঠতে পারতো। এতদিন তামিমের দেশে আসার ওয়েট করেছে।
আজকের ডিনারটাও তার জন্য বিশেষ। তামিমের সাথে দুর্নিবার স্যারকে মিট করানোর ছোট্ট আয়োজন।
রাত নটা নাগাদ সেলিনা এলেন রিতু সহ। ইতু আসেনি, সে পড়ছে। নীরা আশাহত হয়ে পড়লো। এত জেদ কেন মানুষটার?
সেলিনা খুবই ব্যস্ত হয়ে বললেন,
—ইতু আর তামিমের বাবার খাবারটা আগে প্যাক করে ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠাও তো। আমি কিছু রেঁধে আসিনি বাসায় ।
নীরা শেষমেশ থাকতে না পেরে বলেই ফেললো,
—রিতু, তোমার ভাইয়া যদি আজকের ডিনারটা ক্যানসেল করে এর ফল খুব খারাপ হবে। বাই দ্য ওয়ে শাড়িতে তোমাকে স্নিগ্ধ লাগছে।
—সে আসবে। না যদি আসে ফল শুধু খারাপ না নীরাপু, খারাপেস্ট হবে। আর শাড়ি তো বয়স্ক দেখাতে পরেড়েছি। বয়স্ক লাগছে কিনা সেটা বলো৷
—সেটা আমি বলবো না রিতু, সেটা অন্য কেউ বলবে।

দুর্নিবার এলো সাড়ে ন’টা নাগাদ। তামিম তখনো আসেনি। শফিক ক্ষেপে গিয়ে বললো,
—নীরা এবার তো অন্তত খেতে দে! আমি ক্ষিধে পেটে একদম পড়তে পারি না। তামিম এলে তুই একা খাওয়াস!
নীরা বিড়বিড় করে বললো,
—ভাবীকে বল।
সোবহান সাহেব খেতে বসলেন না। তিনি তামিমের জন্য অপেক্ষা করবেন।
লাবণীই সব সার্ভ করলো। নীরার কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না তখন। মুখ তেতো হয়ে গলা ভেঙে শুধু কান্না পাচ্ছিলো।
মানুষটাকে সে আলাদা ভেবেছিলো। নীরার-ই ভুল। মানুষ আবার আলাদা হয় কি করে? সে সাধারণ কেউ কিন্তু ওই মানুষটার কামনা দেখে ভেবেছিলো, সে অসাধারন। সম্পূর্ণ ভুল ছিল সব…

খাওয়ার মাঝখানে রিতু ফট করে বলে উঠলো,
—মা, আমার বোধহয় শাড়ি খুলে গেছে।
দুর্নিবার তক্ষুনি বিষম খেয়ে গেল।
শফিক বিস্মিত হয়ে বললো,
—শাড়ি খুললো রিতুর এতেই আপনি বিষম খেয়ে গেলেন। আশ্চর্য! বাচ্চা মেয়ে, শাড়ি তো খুলতেই পারে।
সেলিনা পানি এগিয়ে দিলেন দুর্নিবারকে।
—নাও বাবা, পানি খাও। এই বিষম খাওয়াটাকে অভ্যাস করে নাও বুঝলে, তোমার তো এখন সকাল বিকাল বিষম খেয়েই কাটবে। আরেকটা খবর জানো বাবা, রিতু প্ল্যান করেছে আল্লাহপাক চাইলে সে বিয়ের পর আটটা বাবু নেবে। একটা আমার মতো,
একটা ওর বাবার মতো। একটা রিতুর নিজের মতো, আরেকটা তো ওর হাজবেন্ডের মতো। মোট চারটে। এরপর একটা তামিমের মতো, একটা ইতুর মতো, একটা নীরার মতো আর একটা রিতু আর ও’র হাজবেন্ড দুজনের মতো। কিরে রিতু, কেউ বাদ পড়ে নি তো?
দুর্নিবার একথা শোনবার পর অবশ্য আর বিষম খায়নি। ননস্টপ হেঁচকি তুলে যাচ্ছিলো শুধু। আটটা বাবু। ভাগ্যিস দুর্নিবারের নিজের বাবা-মা বেঁচে নেই। থাকলে আরো দুটো বাড়তো। আর যদি দুর্নিবারের কোনো ভাই-বোন থাকতো, তবে? দুর্নিবার আর ভাবতে পারলো না।
শফিক তখন আবার কথা বললো,
—হিরো সাহেব, আপনার কি ব্রিদিং প্রবলেম আছে? না থাকলে একটু হাত-পা ছেড়ে বসুন। হেঁচকির সাথে সাথে শরীর কাঁপছে মানে শরীর প্রপারলি অক্সিজেন সাপ্লাইটা পাচ্ছে না বোধহয়।
দুর্নিবার মনে মনে বললো,
—আর শরীরে অক্সিজেন… শরীরটা থাকে কিনা সেটাই তো চিন্তার বিষয়। আটটা বাচ্চা, শরীর তো আর শরীর থাকবে না। ঝাঁঝরা হয়ে যাবে!

তামিম এলো রাত এগারোটায়। ততক্ষণে সবাই চলে গেছে। সোবহান সাহেব ফোন করে আনলেন বলে। এসে সে খুব স্বাভাবিকভাবেই খেয়েছে। সহজভাবেই কথা বলেছে। খাবার পর নিজেই বলেছে,
—নীরা তোমার ঘর দেখাবে না?
নীরা কেঁপে উঠেছিলো তখন,
—অবশ্যই…
তামিমের অবশ্য অন্য প্ল্যান। নীরাকে সে সব ধরনের দায় থেকে মুক্তি দিতে চায়। সেই রাতের কথাটা ক্লিয়ার করতে চায়।
—আপনি বসুন গিয়ে, আমি আসছি।
নীরার ভেতরে তখন তোলপাড়। হাজার কাঁপুনি। ইশ্ শুকিয়ে গিয়ে মানুষটার চোখদুটো আরো কেমন বড় বড় হয়ে গেছে। ও চোখে তাকিয়ে আজ সারারাত সে কথা বলবে।
কফি নিয়ে এসে নীরা দেখলো, তামিম বারান্দায়।বারান্দার আবছা আলোতে দু’হাত পকেটে ঢুকিয়ে তামিম স্থির বাইরে তাকিয়ে। নীরা নিঃশব্দে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র দু-ফিটের দুরত্ব দুজনের মাঝে। উফ্ নিঃশ্বাসের এমন শব্দ কেন হচ্ছে? এটাই কি তাহলে তার জীবনের ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট?
তামিম পেছনে না তাকিয়েই বললো,
—নীরা…
—হুঁ
—সেই রাতে তোমার আমার মাঝে কিছু হয়নি। তোমার শরীরের তিলের ব্যাপারটা আমি এই ডায়েরি পড়ে জেনেছি। তামিম পকেট থেকে একটা মিনি ডায়েরি বের করে বারান্দার রেলিং এর উপর রাখলো।
নীরা অনুভূতিতে কাঁপছে, তখন দিশেহারা সে।
মানুষটা আগে কেমন হুটহাট চুমু খেয়ে নিতো। আজ ফিরে তাকাচ্ছেও না। নীরা তো সেই রাতের জন্য কিছু জানতে চায়নি।
—তুমি যদি ভেবে নাও একটা শারীরিক সম্পর্কের জন্য তুমি আমার কাছে বাঁধা পড়ে গেছ, সেটা একবারেই এবসার্ড ভাবনা হবে তোমার।
—আপনার কফি।
নীরা মগ বাড়িয়ে ধরলো। তামিম সেটা হাতে নিলো এবং তাৎক্ষনিক মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললো। নীরার শাড়ির কুঁচির অনেকটাতেই কফি পড়েছে। নীরা উবু হয়ে কুচি ঝারতে ঝারতে বললো,
—আপনি আমাকে ভালোবাসেন এই ব্যাপারটা আপনি কনফার্ম তো?
—-মানে?
—মানে হলো, আমার মনে হচ্ছে আপনি অনিশ্চিত।
—তাহলে আমার কষ্ট, অনুভূতি এসব?
—এসব হলো আপনার পাগলামো।
—তুমি বলতে চাচ্ছো আমি পাগল?
—বলতে চাচ্ছি না বলছিই!
নীরা এগিয়ে এলো তামিমের কাছে,
—সবকিছুকে কেন এত জটিল করছেন? আমি গুছিয়ে বলতে পারি না বলে গুছিয়ে ভালোবাসতে পারি না বলে আপনি কেন হাল ছেড়ে দিবেন?
নীরা হাত বাড়িয়ে তামিমের শার্টের একপাশটা ধরে শক্ত করে টানলো।
—এই হালকা শক্তিতেই কাছে চলে যাবো আমি তোমার? আমি কিছুই জানি না এখন।

নীরা অপলক তাকিয়ে আছে।

#পর্ব_৩৮

তামিম দাঁড়ানো থেকে এবার বারান্দার কোণের দোলনায় বসলো।
—দেখুন, আপনি হয়তো ভাবছেন ভালোলাগাটা খুব সহজ ব্যাপার। মিডিয়ার যে কাউকেই আমার ভালো লেগে যাবে, আসলে কি তাই? একদমই নয়। যেটা যার ভালো লাগবে তা আগে থেকেই সেট করা থাকে। এই যে আপনার আমাকে পছন্দ… কেন পছন্দ? কারণ কি??
—তোমাকে আমার পছন্দ নয় নীরা। আমার হিরোইন নীরাকে চাই না।

লাবণী দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে তখন।
—নীরা, তোমার ফোন এসেছে। ডিরেক্টর জামাল সাহেব নাকি লাইনে আছেন। বেলাল কি বলবে?
—ওকে বলে দাও কালকের পরে যাতে সময় দেয়।
নীরার কথা শেষ হবার আগেই লাবণী একটা চাপা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
—ও মাই গড! নীরা কফির মগ ভাঙলো যে, তোমরা কি ঝগড়া করছো? কখন থেকে?
—তোমার কি মনে হয় ভাবী তোমার ভাই ঝগড়া করবেন আমার সাথে?
নীরার প্রশ্নে লাবণী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
—না মানে বলছিলাম, তোমার শাড়িও তো মাখামাখি। আহা… খুলে ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে দাও। লেবুর রস দিয়ে উঠবে তো?
নীরা কফির মগের ভাঙা টুকরোগুলো গুছিয়ে লাবণীর হাতে দিতে দিতে বললো,
—ভাবী আমি যদি দুদিন বাড়ি না ফিরি, তুমি বাবাকে ম্যানেজ করতে পারবে না?
—মানে? কোথায় যাবে তুমি? আউটডোর আছে?
বলোনি তো আগে। সে কি কথা, আগে থেকে জানাও না কেন? রনি দাওয়াত রাখলো আমাদের দুজনের, ও’র বন্ধুর ওখানে।
নীরা জবাব দিলো না। তামিম পুরোপুরি চুপ মেরেই আছে।
লাবণী এবার তামিমকে ডাকলো,
—ভাই, কোনো সমস্যা? আপনার কি মন খারাপ?
দুম খিঁচিয়ে বসে আছেন যে!
তামিম অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,
—নীরা খুব খারাপ! খুববববব…. আই হেইট হার! তাকে বলুন সে যাতে আমার সাথে একদম কথা না বলে।
—সেটা তো আপনিও খারাপ। যাকে হেইট করেন তাকে নিয়ে অন্ধকার বারান্দায় বসে কি এমন জপতপ করছেন বলুন তো? আসুন, নিচে আসুন। আমি নতুন করে কফি করে দিচ্ছি ভাই।
তামিম উঠে দাঁড়ালো। নীরা আবার শার্ট খামচে ধরলো তামিমের। তামিম বিরক্ত চোখে তাকালো।
—এত টেনো না নীরা। ইন খুলে যাবে। কচলে যাচ্ছে তো… যাস্ট ভাঁজ খোলা শার্ট!
নীরা আরো টেনে ইনটাই খুলে দিলো। শার্টটা মুঠো করে খানিকটা কচলে দিলো।
—এটা কি হলো নীরা? ছাড়ো উনাকে। ভাই আসুনতো….
—আমি বলছি তো ভাবী উনি যাবেন না এখন!
—যাবেন না মানে? এক্ষুণি যাবেন। উনি যেতে চাইছেন, তুমি আটকাবার কে?
নীরা এবার তামিমের হাত টেনে ধরলো।
—আমি আটকাবো। একশবার আটকাবো। উনি যাবেন না, যাবেন না যাবেন না। ব্যস…
নীরা আরেকটু আঁকড়ে ধরলো তামিমকে।
—ছাড়ো তো নীরা, কি পাগলামো! উনি কি ভাবছেন বলুনতো?
—ছাড়বো না আমি, একদম ছাড়বো না। কথা আছে আমার উনার সাথে, কাজ আছে।
লাবণী নীরার হাতটা ছাড়ানোর জন্য টানলো।
—ইশ্। কেমন জড়িয়ে ধরে আছো! এভাবে কেউ কাউকে ধরে বুঝি?
নীরার চোখ বন্ধ তখন। তামিমকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে সে কাঁপছে।
—আমার স্বামী, আমি একশবার তাকে ধরবো। যেভাবে খুশি ধরবো, ধরে আটকাবো। আমার ইচ্ছা…. উনাকে আমার কথা শুনতেই হবে।
লাবণী হেসে ফেললো। তামিম কিছুটা বিব্রত আর লাজুকভাবে তাকিয়ে আছে।
—-ভাই, বউ কেমন পাগল আপনার। ছিঃ!
একটু দরজা টরজা বন্ধ করুন। হিরোইন মানুষ, নিউজ লিক ফিক হলে তো ঘেটে যাবে। এইটুকুই তো চাইছিলেন, টেনে যাতে আটকায়! নিন জীবন ধন্য করুন এবার!
লাবণী বেরিয়ে গেল।

লাবণী চলে যেতেই তামিম দু-হাতে ঠেললো নীরাকে।
—উনার সামনে এমন করতেই হতো বুঝি? কি ভাবলো বলোতো?
—আপনি আমার কথা শুনছিলেন না একদম।
নীরা সরে দাঁড়ালো; হুট করে করা পাগলামোতে ঘাবড়ে গেছে সে। তামিম মুখটা তুলে ধরলো তার!
—তোমায় কেন পছন্দ তা আমি জানি না। জানলে ভালো হতো। সেই কারণ তোমার থেকে কেটে নিয়ে নিতাম! এই যে এখন চোখ বন্ধ করা তুমি, ঘেমে একাকার হওয়া তুমি… একে দেখে মনে হচ্ছে, তোমাকেই কোনো এক বর্ষার রাতে আমি খুঁজেছিলাম। রিক্সার হুড ফেলে তুমি হয়তো পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলে আর আমি তখন থেকেই অপেক্ষা করছি!
নীরা বিড়বিড় করে বললো,
—আমায় একটু কোলে করে বিছানায় নিয়ে যান তো, পা ঝিন ঝিন করছে আমার। হাঁটতে পারছি না।
—কোলে মানে? আমি নিতে পারবো না। কত কেজি তুমি? ৫০এর কম তো হবে না। কোমর ভেঙে যাবে, মাই গড!
নীরা কিছু না বলে তামিমের গলা ধরে ঝুলে পড়লো প্রায়!
—নীরা, কি হলো তোমার? বেহুঁশ হয়ে যাওনি তো? কি হলো তোমার? নীরা……
নীরা সত্যি সত্যিই গা ছেড়ে দিয়েছে একেবারে।

তামিম পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো নীরাকে। ফিসফিস করে বললো, আমাকে এত এত কষ্ট দেওয়া, এত এত অপেক্ষা করানো, এখন আবার বেঁহুশ হয়ে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। দাঁড়াও….
নীরাকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে তামিম আবার ডাকলো,
—নীরা, নীরা….ও মাই গড! সত্যিই সত্যিই…..
তামিম পানিরছিটা দিলো। নীরা তাও সাড়া দিচ্ছে না।
তামিম বন্দুক বের করে নীরার নাক বরাবর ধরে বললো,
—গেট আপ নীরা। আদারওয়াইজ আই’ল শুট!আই সে গেট আপ।
নীরা বন্দুকের নলটা তার বুকের কাছে নিয়ে বললো,
—প্লিজ শুট মি। প্লিজ…. পায়ে ধরি আপনার। দেখি পা দিন তো!

দুর্নিবার ঘড়ি দেখলো, সাড়ে বারোটা। এত রাতে আবার কে? এই মাত্র সে শুটিং থেকে ফিরেছে, শাওয়ার নেওয়া হয়নি এখনো।
দুর্নিবার বিরক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
—তুমি দেখোনি কে? গাড়ি দেখেই এলাউ করে ফেললে গেটে?
—না স্যার দেখার উপায় নেই। গাড়ির কাঁচটা তোলা৷ শুধু আপনার সাইন করা এই কার্ডডা বাড়িয়ে দিলো।
দুর্নিবার কার্ডডা হাত বাড়িয়ে নিলো এবং দেখে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। রিতু! এত রাতে রিতু!
ও মাই গড!
—কামাল, বাইরের সব আলো নিভিয়ে দাও। আমি নিজে যাচ্ছি ওকে আনতে। কতক্ষণ হলো এসেছে?
—বেশিক্ষণ নয় স্যার! আপনি এভাবে গেস্ট রিসিভ করতে যাবেন? শর্টস পরে, খালি পা!
দুর্নিবার দ্রুত ছুটলো। এতরাতে রিতু কেন এসেছে? ফোন করলেই তো পারতো? আশ্চর্য ব্যাপার তো? বিকেলেও তো কথা হলো, আসবে বলেনি তো! কোনো সমস্যা নয়তো?

দুর্নিবার হাঁপাতে হাঁপাতে এসে গাড়ির ডোরটা খুললো।
—তুমি ড্রাইভ করতে জানো, বাহ্। এ বিউটিফুল লেডী উইথ দ্য স্টিয়ারিং হুইল।
—আমি আরো অনেক কিছুই জানি যেটা আপনি জানেন না।
—এত রাতে এখানে? ফোন করলে না যে!
—ফোন করলে আসতে দিতেন না। জরুরি দরকার ছিল, তাই ডিরেক্ট চলে এলাম।
—এরকম জ্যাকেট, টুপি মুড়িয়ে… তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। বরফের দেশের মানুষ লাগছে। হাতমোজা পর্যন্ত পরে এসেছো।
—আসলে কেউ যাতে চিনতে না পারে তাই। আমি বাড়িতে বলে আসিনি।
দুর্নিবার এটা শুনে যেন একটুও বিস্মিত হলো না।
ড্রয়িংরুমে এসেই রিতু খুবই নার্ভাস ভঙ্গিতে বললো,
—এখানে বসবো না।
দুর্নিবার কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। বাড়ি ভর্তি কাজের লোক। তার উপর কামাল আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে।
—দরকারটা তো আগে বলবে!
—বললাম তো এখানে বসবো না। এখানে কথা নেই।
—তাহলে বারান্দায় বসি, চলো। তুমি কফি খাবে তো? এই রিতু কামরাঙার জুসের একটা দারুণ প্রিপারেশন আছে, টেস্ট করবে তো?
রিতু কাঠ কাঠ হওয়া গলায় বললো,
—আমি আপনার ঘরে যাবো। বেডরুমে। যে ঘরের বিছানায় আপনি শুয়ে ঘুমোন, সে ঘরে।
দুর্নিবার কিছু বলবার আগেই রিতু সিড়ির গোঁড়ায় এসে বললো,
—-উপরের ডান পাশের দিকে না?
দুর্নিবার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
দুর্নিবারের ঘরে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েই রিতু মাথার টুপিটা খুলে ফেললো। সমস্ত চুল ভেজা তাঁর। টুপ টুপ পানি পড়ছে। মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে বোধহয়।
—গোসল করে এলে বুঝি?
—হুঁ…. আপনার শোবার ঘর এত বড়! বাব্বা, দুটো বেড। আপনি কোনটায় ঘুমোন বলুন তো? উইন্ডো সাইডে নাকি এটায়?
—শুধু চাঁদ উঠলে জানালার ধারে।
দুর্নিবার হাসলো।
তার ভেতরে উথাল পাথাল চলছে।
কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে কেন?হৃদপিণ্ডটা কি বেড়িয়ে যাবে? ওহ নো……

—-বিয়ের পর কিন্তু আমি সবসময় জানালার পাশে ঘুমোবো। বুঝলেন হিরো?
—বিয়ের পর তো এখানে থাকাই হবে না। আমাদের নতুন বাড়িতে থাকবো রিতু।
—হেই, আপনার কয়টা বাড়ি বলুন তো? এত টাকা কেন আপনার? আই হেইট মানি। এই বাড়িটা ভালো লেগেছিল আমার ।
রিতু এবার গায়ের জ্যাকেটটাও খুলে রাখলো। অফ শোল্ডার থিন রিবনের একটা পার্পেল রঙের নি লেংথ নাইটি পরে আছে সে। তাও টপের দুটো হুকই খুলে আছে। দুর্নিবার নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে রিতুর দিকে পেছন ফিরে একগ্লাস পানি নিলো। রিতু বিছানায় বসে পায়ের কেডসটা খুলে নিলো। তারপর উঠে এসে দু-হাতে পেছন থেকে আচমকা দুর্নিবারকে জড়িয়ে ধরলো।
—পড়তে বসে হঠাৎ ভালো লাগছিলো না আমার। মাথা খারাপ হয়ে গেল আপনার জন্য। এই যে এরকম।
রিতু ডান হাতটা দুর্নিবারের টিশার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো। লম্বা করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
—-আমার ভালো লাগছিলো না, একদম কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না। এরকম সব চিন্তা আসছিলো। আমি থাকতে পারছিলাম না।
দুর্নিবার রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি পাগলামি রিতুর? সে রিতুর সাথে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত থাকতে চায়, একদম শেষ পর্যন্ত! তবে রিতু কি চায়? এটা কি? অল্পবয়সী আবেগ নয়তো? যার জন্য একসময় সে ব্যাকুল হয়ে কাঁদবে বা ব্যথায় অসহায় হয়ে কুঁকড়ে কুঁকড়ে জীবনে অনুশোচনা করবে?
—কি হলো আপনার? এত কেন স্টাক হয়ে আছেন?
রিতু পেছন থেকে এবার সামনে এলো।
—আমরা তো বিয়ে করবোই, তাহলে? আমার এক্ষুণি চাই। আপনি কি ভাবেন আমি ছোট, জানিনা কিছু? আমি সব জানি। ইশ্ আপনার গায়ে কি মিষ্টি গন্ধ! কোন ব্র্যান্ড বলুন তো? নাইস ফ্রাগরেন্স!
রিতু এবার দুটো হাতই দুর্নিবারের টিশার্টের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। দুর্নিবারের কানের ভেতরের আওয়াজটা এবার মাথার ভেতরেও হচ্ছে। প্রথমে শোঁ শোঁ ছিল, এখন সেটা গোঁ গোঁ করছে।
দুর্নিবার কপাল মুছে ঘাম ফেললো। হাটু কি কাঁপছে?

—তোমার বয়স কত রিতু? ১৬না ১৭?
—কেন? সেদিন আপনিই তো বললেন, আপনি কিছু পারবেন না সব আমি করবো। কথা হয়ে গিয়েছিলো তো আমাদের৷
—বলেছি কিন্তু সেটা এখনি নয়। তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে… এভাবে হয় না। কয়েক বছর পর তোমার হয়তো এটাকেই ভুল মনে হবে। তখন যদি আমাকে ক্ষমা করতে না পারো?
—স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার তো? এখানে ক্ষমা করার কথা আসছে কেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্রচন্ড ভালোবাসি!
রিতু বিছানায় বসে এক টানে গায়ের নাইটিটা খুলে নিলো।
দুর্নিবারের চোখ ঝাঁ ঝাঁ করছে।
—ভালোবাসায় অত হিসেব করলে হয় না। নাকি হিরো সাহেব ভয় পাচ্ছেন? ভালোবাসি বললাম তো?
হয়নি আপনার?
দুর্নিবার কাছে এসে বসলো রিতুর।
—ভালোবাসো তো? ইউ হ্যাভ টু প্রুভ ইট ফার্স্ট। তোমার যখন বিশ বছর হবে, মেডিকেলে যখন চুটিয়ে পড়াশোনা করবে তখন এসে যদি এরকম বলতে পারো, আমি সত্যি বুঝবো ভালোবাসো!
—না আমি অতদিন ওয়েট করতে পারবো না৷ মরে যাবো।
—ভালোবাসায় মরে যাবো বলে কথা নেই। ভালোবাসাটাই জীবনে প্রধান নয়। ভালোবাসাটা ঠিকঠাক হলে জীবন আনন্দের হয়। এর মাঝে একটু ভুলটুল হলে কিন্তু পুরো জীবনটাই বিগড়ে যায়!
তোমার এডোলেসেন্সের ইমোশন একসময় মনে হবে পাপ। তুমি কি তা চাও? তোমার যখন নিজের দায়িত্ব নেবার মতো মানসিক শক্তি তৈরি হয়ে যাবে, সে সময় তুমি আমাকে যদি না চাও?
দুর্নিবার বেডের পাতলা ব্ল্যাঙ্কেটটা রিতুর গায়ে মুড়িয়ে দিলো।
রিতু ‘থ’ হয়ে তাকিয়ে আছে।
—তার মানে এখন কি মিথ্যে বলছি আমি? আমার এত রাতে আসাটা মিথ্যে?
—তা নয়। আমি ভয় পাচ্ছি রিতু। আমি ভীতু প্রকৃতির! তোমাকেই এখন আমাদের ভালোবাসাটাকে সামলাতে হবে।
রিতু এবার কেঁদে ফেললো।
—আপনি আমাকে তাহলে ভালোবাসেন না?

দুর্নিবার রিতুর চশমাটা খুলে নিয়ে চোখ মুছিয়ে দিলো।
—ভালো না বাসলেই ভালো হতো রিতু। এখন হয়তো তোমার কথা রাখতে পারতাম। অনেক বছর পর যাতে এই রাতের কথা ভেবে তুমি আমার উপর রাগ না করো, সেজন্য কষ্ট পাচ্ছি।
রিতু গলা জড়িয়ে ধরলো দুর্নিবারের। দুর্নিবার এর থেকে অনেক কঠিন সিচুয়েশানেও নিজেকে সামলেছে, কিন্তু আজ এই মেয়েটার জন্য তাঁর ভেতর কেমন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে। এত অস্তিত্বশূণ্য কেন লাগছে নিজেকে?
—আপনার শারীরিক সমস্যা আছে। বাইরে থেকে হিরো দেখতে অথচ কোনো অনুভূতি নেই। ডাক্তার দেখানো দরকার। কোনো একটা হরমোন ল্যাক করে গেছে মে বি।
—সেই পরীক্ষা তো আমি এখন কিছুতেই তোমাকে দেবো না। তুমি যখন বড় হয়ে আসবে, তখন দেবো। তখন যদি তোমার মনে হয় হরমোন ল্যাক করে গেছে, ডাক্তার দেখাবো। দরকার হলে চার-পাঁচটা অপারেশন করিয়ে নেবো।
রিতু আরো শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলো।
—এখন আমার খুব লজ্জা করছে। ছিঃ। কেমন জামা খুলে ফেললাম তখন। এত মাথা গরম কেন হলো? শিট! শিট! শিট!
—আমি তো তাকাইনি।
—সত্যি?
—সত্যি!
—কসম?
—কসম বলা যাবে না। একটু তাকিয়েছি।
—উঁহুহুহু… আপনার তাকানো ঠিক হয়নি।
—দুটো বেজে যাচ্ছে! বাসায় দিয়ে আসি।
—না, আপনি তাকিয়েছেন তখন। স্যরি বলুন।
এবার দুর্নিবার চেপে ধরলো রিতুকে,
—কম্বলটা তাহলে পুরো সরাও। ভালো করে তাকিয়ে স্যরি বলি।
রিতু নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
—ইশ্ কি সাহস! এখন থেকে আপনারও পরীক্ষা। আর যদি আমার কখনো বলতে ইচ্ছে না করে তখন বুঝবেন। অপেক্ষা তো…৷
—ততদিনে আমি থুরথুরে বুড়ো হয়ে যাবো।

রিতু উঠে কাপড় পরে নিয়েছে ততক্ষণে। ক্যাডসের ফিতেটা বাঁধতে বাঁধতে বললো,
—হিরোরা বুড়ো হয় না। আমি জানি।
—আমার তো মনে হয়, আমি এখনি বুড়ো। একটু আগেই কেমন বকলে তুমি!
তারপর দুর্নিবার নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ি পৌঁছে দিলো রিতুকে। বাড়ির দরজায় নামার সময় রিতু গম্ভীর মুখ করে বললো,
—শুধু যে গার্লজদের ফার্স্ট টাইম বুঝা যায়, তা কিন্তু নয়। ছেলেদেরও বুঝা যায়। আমি সব ট্রিকস জানি। যদি ততদিনে আপনি চুরি করেন, আমি ঠিক ধরে ফেলবো।
—আর যদি আগে চুরি করে থাকি সেটার কি হবে?
—সেটা করেননি আপনি। ভালো অভিনেতারা আগে ভালো মানুষ হয়!
—কে বললো?
—অক্ষয় কুমারের ইন্টারভিউতে দেখেছি আমি।
—আর তুমি বিশ্বাস করে ফেললে? মিথ্যেও তো হতে পারে!
রিতু ফিরে এসে দুর্নিবারের হাতে চুমু খেলো একটা।
—আপনি একটা গাধা! ধরে ফেললাম তো।
তারপর গটগট করে ভেতরে চলে গেল। দুর্নিবার পিছু ডাকলো,
—রিতু…
রিতু থামলো তবে পেছন ফিরে তাকালো না।
—এই যে আজ এতরাতে একা একা ড্রাইভ করে চলে এলে। অনেক বছর পর তোমার এই সাহস থাকবে তো, এমনি করে আমার কাছে চলে আসবার?
—তার উত্তর তো আমি এখন দেবো না। অনেক বছর পরই সেটা জানা যাবে। তবে আমার ধারণা ভালোবাসায় সাহস কমে না কখনো।
দুর্নিবার বিস্মিত আর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। এরকম সুখের মুহূর্ত আসবে বলেই কি সে এতটা দিন একা ছিল?
সে ফিসফিস গলায় বললো,
—আমি তোমার জন্য সবসময় অপেক্ষা করে থাকবো রিতু। শুধু এই একটা জীবন নয়, আরও যদি হাজার জীবন আমার হয়, তাও আমি শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো। তোমার জীবনে যা তোমার পছন্দের, তাই যেন তোমার হয়!

সকাল সকাল হারুন একগাদা ফুল আর নাশতা নিয়ে হাজির হলো। তাঁর প্রমোশন হয়েছে। যতই হোক, সে তো আর স্যারের উপর রাগ করে থাকতে পারে না। নাশতা অবশ্য সে কিনে আনেনি। নীরা মা তৈরি করে দিয়েছেন।
নাশতার টেবিলে গম্ভীরমুখে তামিম খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে আছে। সেলিনা চেঁচামেচি শুরু করলেন,
—তোর ব্যাপারটা কি বলতো তামিম! বেচারা এতগুলো নাশতা নিয়ে এসেছে, প্রমোশন বলে কথা। তুই পেপারে কি এমন পড়ছিস বলতো?
—দুর্নিবারের খবর বেড়িয়েছে, সেটাই দেখছি। দেখো। হেই মি. হারুন! কনগ্রাচুলেশন্স! আপনার মায়ের কি করা যায় বলুন তো? এভাবে কতদিন? নামী হিরোইনের ছেলে হয়ে পরে যদি ভুলে যান।
—কি যে বলেন না স্যার! এই তো স্যার আর কটা দিন। নীরা মায়ের মুভি রিলিজ করে গেলেই গ্র্যান্ড করে একটা রিসিপশান যাবে আর তখন সব ঠিকঠাক। তার আগে স্যার আমার বিয়েতে…
হারুন কথা শেষ করতে পারলো না।
সেলিনা চিৎকার করে উঠলেন,
—এই যে তোর বোন এত দুর্নিবার দুর্নিবার করে মরে যাচ্ছে, এখন পেলো তো… হলো তো… থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো তো! রাত একটার সময় নায়ক দুর্নিবারের বাড়ির ভেতর রহস্যময় গাড়ি। ওই দেখ গেটের ভেতরে গাড়ির ছবিও এরা ছেপে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটা কোনো নায়িকার গাড়ি। যার সাথে দুর্নিবারের ইটিস পিটিস চলছে নাকি। গোপন সূত্র আরো বলছে, এই ব্যাপারে….. রিতু… রিতুওওওও…. আয় দেখে যা…. তোর প্রাণের মানুষের চরিত্র বেরিয়ে এলো তো….. রিতু…
তামিম বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
—-প্লিজ মা, আস্তে! চেঁচাবে না। ভালো করে দেখো, এটা তোমার গাড়ি মা। পেছনে দেখো লাল স্টিকারে ‘এস’ ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে। ভাগ্যিস রাতের ছবি। ঠিকঠাক জুম হলে, তোমার সাইন করা সেলিনা নামটাও জ্বলজ্বল করতো।
সেলিনা হতভম্ব মুখ করে খবরের কাগজটা আবার দেখলেন।
—ওহ আল্লাহ! এটা কি হলো?
সেলিনার মুখটা বিশাল হা হয়ে গেল।
হারুন সান্ত্বনার গলায় বললো,
—দেখলেন তো স্যার, আপনি আমার নীরা মা’কে নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন আর শেষে কিনা আপনার মায়ের গাড়ি পাওয়া গেল। একেই বলে বিধির নির্মম পরিহাস!
সেলিনা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন হারুনের দিকে। তাঁর দৃষ্টি বলছে, তোকে এক্ষুণি পিষে মারবো আমি।
রিতু ঘুমঘুম চোখে উঠে এসে দাঁড়িয়েছে।
—উফ্ মা। সকাল সকাল এত ডাকছো কেন?
তামিম বিরস মুখে বললো,
—তোর হিরোকে বল, গাড়ি কিনে পাঠাতে তোকে। মাঝরাতে মায়ের গাড়ি নিয়ে এদিক ওদিক চলে যাচ্ছিস, এতে মায়ের রেপুটেশন খারাপ হচ্ছে!
হারুনের মাথায় হাত পড়লো।
—স্যার, তার মানে রিতু ম্যাডাম! ও মাই গড! ও মাই গড!
—পানি খান হারুন সাহেব, গলায় আটকে যাবে তো….

তামিম হাসছে। তাঁর ঠোঁটে রহস্যময় মিষ্টি হাসি।তামিমের আজকের দিন শুরু হলো চমৎকারভাবে!

(শেষ পর্ব বাকী)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here