নিনীকা #পর্ব_১৭_ও_১৮

0
390

#নিনীকা
#পর্ব_১৭_ও_১৮

#পর্ব_১৭

নিনীকার কাছ থেকে এসেই রওনক ইলাকে ফোন করলো।
—হ্যালো ইলা…
—-বাব্বা, আমায় ফোন করবার ফুসরত পেলে তাহলে। তোমার বিয়ের শেরোয়ানি বাছাই করতে করতে তো আমি তো মারা যাচ্ছি। নিনীকার শাড়ির সাথে তো ম্যাচ করতে পারছি না।
ইলার কথার প্রসঙ্গ পাল্টে রওনক বললো,
—জানিস ইলা, এই এতটা বছরে আমার জীবনে অনেকজন এসেছে আমি কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। সবসময় ভয় করেছে আমার। অথচ নিনীকার সাথে আজ কথা বলে মনে হলো, সবকিছু অনেক সহজ! অনেকদিন পর আমার ভালো থাকবার সঙ্গী এসেছে। তোকে ধন্যবাদ ইলা।
ফোন রাখতে রাখতে ইলা মনে মনে বললো, আমি জানি তো রওনক ভাই! অনেক বেছে আমি তাকে তোমার জন্য খুঁজে এনেছি। তুমি যখন ও’র পুরো গল্পটা শুনবে, চমকে যাবে। পৃথিবীর সবথেকে ভালো মেয়েটাই হলো নিনীকা।

নিনীকার পাপা ড. আশিকুল হক চৌধুরী নিজের জীবনে সমস্ত কাজ করেছেন স্বচ্ছভাবে। নিনীকার ব্যাপারটাও স্বচ্ছ রাখতে চান রওনকের কাছে। নিনীকা হয়তো সব একদিন বলবে। যদি রওনক সেদিন কোনো দায় ঠেকিয়ে দেয়, আপনি কেন বলেননি? তিনি রওনকের সাথে দেখা করতে এসে গাড়ি থেকে নামলেন না। রওনককে ফোন করে নিচে নামতে বললেন। জানালেন, গাড়িতে বসেই কথা বলবেন। রওনক কি একটা কাজে ছিল, প্রায় ছুটে এলো। রওনকের বুক কাঁপছে। হঠাৎ নিনীকার পাপা কেন দেখা করতে এলো? কি কথা থাকতে পারে তার সাথে? সন্ধ্যায় হলুদ, কালই তো বিয়ে। কোনো ব্যাড নিউজ? না না, এ হতেই পারে না। অনেক বছর আগে ইলাকে হারিয়ে তার জীবন থমকে গিয়েছিলো।এবার নিনীকাকে সে কিছুতেই হারাতে চায় না!

গাড়ির দরজা খুলে বসতে বসতে রওনক বললো,
—কি এমন কথা? যা আপনি ঘরে এসে বলতে চাইছেন না পাপা? এনি প্রবলেম? নিনীকা ঠিক আছে তো? একটু আগেই তো দেখা করে এলাম।
—আগে তো বসো। তুমি হুট করে আমার মামণিকে দেখতে যেতে পারো আর আমি এসেছি বলেই টেনশানে পড়ে গেলে ইয়াং ম্যান!
—না মানে… ডক্টর নিনীকাকে নিয়ে টেনশান।
—কালই মেয়ের জামাই হয়ে যাচ্ছো পরে তো আর রিল্যাক্সে গল্পও করতে পারবো না, তাই একটু এলাম।
রওনক পাশের সিটে বসতেই নিনীকার পাপা গাড়ির দরজাটা আটকে দিলেন।
রওনক হাসলো,
—-আমার রুমেও কিন্তু বসতে পারতেন চাইলে।
—আমি কথাগুলো শুধু তোমাকেই বলতে চাই। ওখানে সোহেলকে সামনাসামনি এভয়েড করাটা কি ঠিক হতো? নিনীকা মামনির মায়ের ব্যাপারে কথা এটা।
—ডক্টর নিনীকা মানুষ হিসেবে আমার পছন্দের কিনা, তা জানতে যতটুকু জানা দরকার তা আমি জানি পাপা। আর কিছু?
—তুমি তাঁর মায়ের কথাটা জানো যে সেটা কিরকম?
—এই যে যতটুকু জানা দরকার; আর মায়ের বিষয়টা হলো, নিনীকার মা আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী। আপনাকে ছেড়ে চলে গেছেন।
—অহো, তুমি তো পাতানো গল্পটাই জানো। তাহলে আমিই বলি। তোমার হাতে সময় আছে তো?
রওনক মোবাইলটা অফ করতে করতে বললো,
—হলুদসন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আছে।

আশিকুল সাহেব হাসলেন। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলেন। রওনকের আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বলতে শুরু করলেন।
—আমাদের বিয়ের পরপর, মাহবুবার একটা কঠিন অসুখ হয়। সেই অসুখে জটিল অপারেশন করাতে হয়। এতে মাহবুবা সুস্থ হয়ে গেলেও সন্তানধারণের ক্ষমতা পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাপারটা আমরা কাউকে জানালাম না। মাহবুবা পরবর্তীতে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় যে আমাকে বিয়ে দিবে। আমার পক্ষে দ্বিতীয় বিয়ে অসম্ভব ছিল। পারবো না বললাম। বাধ্য হয়েই মাহবুবা সন্তান নেবার অন্য উপায় খুঁজতে থাকলো। এর মাঝে মহান করুণাময় আমাদের প্রতি সদয় হলেন। মাহবুবা কিন্তু ফ্যামিলি প্ল্যানিং এ জব করতো। সেই সূত্র ধরে মাহবুবার কাছে একদিন একটি কেইস আসে, এক উঠতি গায়িকা অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ করেছেন। তিনি গোপনে এবরশান করাতে চান। মেয়েটি খুব ভালো গান গাইতো। উঠতি শিল্পীর উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরার দরুণ
অঘটন। মেয়েটি টাকার জন্যই মূলত গানের পাশাপাশি… বুঝতেই পারছো। সেই উঠতি শিল্পীকে মাহবুবা নিজের সন্তান আকাঙ্খার কথা বললো। মেয়েটি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিজেই অফার করলো। আমরাও রাজি হয়ে গেলাম। এই বাচ্চা আমাদের চাই। শর্ত দিলো আমরা বন্ড পেপারে লিখিত দিবো কোনোদিন এই কথা প্রকাশ করবো না। তাঁর ক্যারিয়ার ধ্বসে যাবে এতে। এরপরের ঘটনা হলো, মাহবুবা চাকরি ছেড়ে দিয়ে সেই উঠতি শিল্পীকে নিয়ে বিদেশ চলে যায়।
আত্মীয়স্বজনকে আমি জানাই মাহবুবা মা হচ্ছে।
দুই বছর পর, মাহবুবা ফিরে আসে বাচ্চা সমেত। সবাই জানলো, এ আমাদের সন্তান। পরবর্তিতে সেই উঠতি শিল্পীকে টাকা দিয়ে গানের সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যাকিং দিতো মাহবুবা। এতটুকু বলে আশিকুল সাহেব থামলেন।
রওনক বললো,
—আপনি কি পানি খাবেন?
—না। সেই উঠতি শিল্পী কয়েকবছরের মাঝে নামী হয়ে গেলেন এবং আমাদের ভুলে গেলেন। শুধু ভুলেই গেলেন না বরং আমাদের যে কখনো চিনতেন তাও অস্বীকার করলেন। কিন্তু মাহবুবা ভাবতো, নিনীকার আদর কোনো অংশে কম হচ্ছে কিনা! মাঝে মাঝে নিনীকাকে কোলে করে তাঁর কাছে গিয়েছিলো দেখাতো। শত হোক মা তো, একটু আদর করলে হয়তো বুকটা ঠান্ডা থাকবে। এর ফল দাঁড়ালো ভয়ংকর! তিনি বন্ডপেপার দেখিয়ে কেইস করবার হুমকি দেন। এরপর আর যায়নি।
রওনক ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে আছে। তার মাথার ভেতর ভোঁ ভোঁ শব্দ করছে! কোনোমতে বিড়বিড় করে সে বললো,
—নিনীকা জানে?
—জানে, তবে একটু অন্যরকমভাবে। সে জানে যে, তাঁর বর্তমান মা, মানে আমার স্ত্রীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা ছিল না বলে, মাহবুবা লুকিয়ে আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। সেই বিয়ের কথা আমি আর তাঁর মা ছাড়া কেউ জানে না। আমার সেই দ্বিতীয় স্ত্রী মানে তাঁর মা জন্মের পরপর তাকে ফেলে পালিয়ে যায়! তাঁর সেই মা ভালো গান জানতো। নিনীকা জানে সে আমার মেয়ে কিন্তু মা শুধু আলাদা। এই ধরনের সমস্ত কথাবার্তাগুলো জানি আমরা ৪জন, নিনীকা, মাহবুবা, আমি আর তাঁর শিল্পী মা! এর বাইরে আজ তুমি জানলে।
—নিনীকা কখন জানলো?
—নিনীকা জেনেছে অনেক পরে। যখন ডাক্তারি পড়ছে তখন। ও’র মায়ের অসুখটার পেপারস ঘেটে জানতে পারে। আমাকে চেপে ধরলে, বাধ্য হয়ে আমি ঘটনাটা ওভাবে বলি।
রওনক কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো,
—আমায় কেন বললেন?
—একটা বিশেষ কারণে। নিনীকা ভীষণ বুদ্ধিমতি মেয়ে। যে কথা পৃথিবীর আর কেউ-ই জানে না, সে কথা নিনীকা ঠিকই জেনে গেছে। এবং আমি শিওর
সে তাঁর নিজের বুদ্ধি দিয়ে বাকি ব্যাপারটা একদিন ঠিক জানবে। সেদিন তাঁর সবথেকে কাছের মানুষ হিসেবে তাকে তুমি তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে যাতে আগলে রাখতে পারো, সেই কারণে!
রওনক শার্টের হাতায় চোখ মুছলো,
—ইলাকে নিনীকা তাঁর মায়ের কথাটা বলেছে, আমার মাকেও বলেছে। যে গল্পটা সে জানে সেটাই বলেছে, পাপা। নিনীকা খুবই স্বচ্ছ মেয়ে, তাঁর মনের জোর খুবই প্রবল!
আশিকুল সাহেব এবার গাড়ি থেকে নামলেন। রওনক বসেই রইলো। গাড়ি দরজাটায় একটু ঠেস দিয়ে আশিকুল সাহেব দাঁড়ালেন,
—জানো রওনক নিনীকা যখন জন্মালো, তাঁর একটা সিরিয়াস সমস্যা ধরা পড়লো। সবই ঠিকাছে শুধু চোখের পাতা মেলছে না। ডক্টররাও বললেন, বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ, চোখের পাতাও ঠিকাছে। চোখ খোলার জন্য ডক্টরেরা সব ধরনের সায়েন্টিফিক কায়দা কসরত করলো, কাজে দিলো না। ৫দিন পেরিয়ে গেল। ডক্টররা বললো, অপেক্ষা করতে। এধরনের সমস্যা তাদের কাছে এই প্রথম। বাধ্য হয়ে ছুটি নিয়ে আমি সেখানে গেলাম। মাহবুবা একাধারে কেঁদে যাচ্ছে। নিনীকাকে দেখতে গিয়ে আমি প্রথম কোলে নিলাম তাকে। চোখের পাতা বন্ধ! সরু লম্বা হাত-পায়ের খাড়া নাকের, ফুটফুটে মেয়ে। আমি ফিসফিস করে ডাকলাম, মামণি। এবং আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে আমার মেয়ে চোখ মেললো। গাঢ় কালো মণিকার অপূর্ব চোখ। ডাক্তারদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল। তারা বলতে থাকলো, ইট’স এ মিরাকেল! ইট’স এ মিরাকেল। জানো রওনক তখনি আমার মনে হলো, নিনীকা আমাদেরই মেয়ে; শুধু নিষিক্ত হয়েছে অন্য কারো শুক্রাণু-ডিম্বানুতে। নাহলে বলো, এই মেয়ে আমায় দেখে চোখ খুলবে কেন? সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল এটাই। আমার সেই ফুটফুটে মেয়েটির আমি নাম দিলাম নিনীকা। গহীন কালো অন্ধকার থেকে ঝলমলে আলোতে ফিরে আসবার সিস্টেমের নাম “নিনীকা”!
—জন্মের পর ও’র মা কি ওকে দেখেছে?
—দেখেছে, তবে ডিলে সে ছিল শক্ত। তাঁর পেমেন্ট নিয়ে সিজারিয়ান সেকশানের ঠিক ২দিন পরপরই ও’র মা ওখান থেকে রিলিজ করে অন্য হসপিটালে চলে যায়।

আশিকুল সাহেব এবার পানির বোতলটা হাতে নিলেন, বেশ অর্ধেকটা পানি খেলেন।
—আমার বিশ্বাস, নিনীকার যে যত্ন আমি করেছি তার দশগুণ বেশি যত্ন তুমি করবে। তারপরও বলছি, নিনীকা খুবই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মেয়ে। সে তোমার আন্তরিকতা এবং অনান্তরিকতা দুটোই ধরতে পারবে।
রওনক গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো,
—সেই উঠতি শিল্পীর এখন কি খবর?
আশিকুল সাহেব হেসে বললেন,
—সে তো দেশের ফার্স্ট ক্যাটাগরির শিল্পী এখন। তোমার অনেক নায়িকা তাঁর গানে লিপসিং করেছে।
রওনক বিড়বিড় করে বললো,
—সামটাইমস রিয়েলিটি ইজ স্ট্রেঞ্জার দেন ফিকশান!
—নিনীকা কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রাণ দিয়ে আমাদের ভালোবাসে। তাঁর ভালোবাসার একটা ছোট্ট উদাহরণ শুনো, আমি চিংড়ি খেতে পারি না। ওতে এলার্জি আমার। নিনীকা নিজেও চিংড়ি খাওয়া বন্ধ করে দিলো। আমি শুধু একবার বলেছিলাম, মা কখনো প্রেম-ট্রেম করোনা, আগে পড়াশোনা। আমার মেয়েটি প্রেম তো দূরে কোনোদিন কোনো ছেলেবন্ধুর সাথে আলাদা করে ঘুরতে পর্যন্ত যায়নি। লোকজন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নিয়ে কত চিন্তিত, নিনীকাকে নিয়ে বরং আমাদের চিন্তা হলো উল্টো। ও সব কিছুতেই ফার্স্ট হয়, যেখানেই ভর্তি পরীক্ষা দেয় চান্স পায়। ডাক্তারি যে পড়লো, তাও আমাকে খুশি করতে। নিনীকার গানের গলা চমৎকার, শুধু মাহবুবা পছন্দ করে না বলে গান সে ভালোবাসেনি। ও’র সমস্ত জীবনজুড়ে ও’র পরিবার।
রওনক হেসে বললো,
—নিনীকার প্রপার যত্ন আমি করতে পারবো তো? যোগ্য তো আমি তাঁর?
আশিকুল সাহেব রওনকের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—-এত কেন টেনশান করছো? নিনীকার চারপাশে কি একটা অদৃশ্য ভালোবাসার জাল আছে বুঝলে! যখন কাছে থাকবে, দেখবে টানছে তোমায় খুব। ‘নিনীকা’ আমাদের জীবনের প্রদীপ। এরাবিক ফ্যান্টাসিতে যাকে বলে, দ্য জুয়েল অব প্যালেস! সেই জিনিস আমি তোমায় দিয়েছি রওনক। তাও একটা বিশেষ কারণে, যে কারণে একদিন তুমি তোমার মায়ের জন্য সব ছেড়েছিলে। ভালোবাসবার ক্ষমতা কিন্তু তোমার অসাধারণ!

মাহবুবা ইলার কথা জানবার পর অস্থির হয়ে পড়েছেন। তাঁর এত সাধনার মেয়ের কিনা বরের প্রেমিকার পছন্দে বিয়ে। যেই ছেলে তাঁর পুরোনো প্রেমিকার পছন্দে বিয়ে করে, সে আবার কেমন ছেলে?
মাহবুবা অসহায় হয়ে রওনকের মা’কে ফোন করে জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে বললেন। তিনি তাঁর মেয়ের কিছুতেই এ বিয়ে হতে দেবেন না। তাঁর মেয়েকে তিনি কোনো কমতিতে পড়তে দেবেন না। এই মেয়ের জন্য তিনি সব ছেড়েছেন, প্রয়োজন হলে প্রাণও দিবেন।

রওনকের মা এলে নিনীকাই কথা বললো,
—এই বিয়েটা সে মন থেকেই করছে। মাহবুবা এই কথা শুনবার পর থেকে আরো রেগে গেছেন।
রওনকের মা চলে যাবার পর নিনীকা পুরো বিকেলটা মায়ের ঘরে বসে কেঁদেছে। মা শক্ত হয়ে ছিলেন। নিনীকা বারবার করে বললো,
—আমার কষ্ট হচ্ছে না। মানিয়ে নিতে পারবো আমি। রওনককেও বুঝিয়ে বলেছি মা। আমি ভালো আছি মা।
মাহবুবা তাকালেন পর্যন্ত না। দৃঢ় গলায় বললেন,
—কেন মানিয়ে নিবি তুই? তোর দাদীমা নাহয় বিয়ের পরে শুনেছে, আমাকে না হয় বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে; তুই কেন? তোর কিসের অযোগ্যতা? সব ব্যথার দায়িত্ব কি তোর একার? তোকে আমি আরো অনেক বেছে বর এনে দিবো, যার জীবনে তুই হবি প্রথম নারী।
—তুমিও কিন্তু পাপার জীবনে প্রথম নারী ছিলে মা! তুমি কি সুখী? কত কষ্ট তুমি আর পাপা বয়ে বেড়াচ্ছো এখন! মা, ইলা মেয়েটা আমার হাত ধরে খুব কাঁদলো। বললো, রওনককে যাতে আমি ভালো রাখি। ও নিজেও ভালো নেই মা।
—তুই বড্ড খারাপ মেয়ে নিনী! সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে মরে যাচ্ছিস যে, তা কি বুঝতে পারছিস? তোর দাদীমা, তারপর আমি, এবার তুই! এত ভালোবাসার দায় নিয়ে আমরা কেন জন্মেছিলাম বলতে পারিস? মাঝে মাঝে তো মনে হয়, গায়ে পেট্রোল দিয়ে পোড়ালেও বোধহয় এত জ্বলতো না।তোর দাদুভাইকে ভালোবেসে তোর দাদীমা পুড়লো, তোর পাপাকে ভালোবেসে আমি পুড়লাম, এখন তুই পুড়তে যাচ্ছিস!
—পুড়বো না মা। অত ধারালো আগুন আছে নাকি যে তোমার মেয়েকে পোড়াবে?
—নিনী শোন, তোকে একজন ভালোবাসে না এটা জেনে তাকে ভালোবাসা অনেক সহজ। কিন্তু মানুষটা অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে এটা জেনে সেই মানুষটাকে ভালোবাসা অসম্ভব!
নিনীকা অস্পষ্ট গলায় বললো,
—আমি পারবো মা। শুধু অনুরোধ, পরের কোনো ফাংশানে বিয়ে পর্যন্ত তুমি আর পাপা আমার সামনে কাঁদবে না। এ আমার অর্ডার মা।
মাহবুবা অঝোরে কাঁদতে থাকলেন।

নিনীকা কি করে বুঝাবে, সে মাকে কারো কাছে হারতে দেখতে চায় না। বিয়েটা এই মুহূর্তে ভেঙ্গে দিলেই পাপা-মায়ের সম্মানহানি। দূর থেকে বসে কোনো এক কুৎসিত মহিলাতো তা দেখেই হাসবে। এতদিনের যে যুদ্ধ নিনীকা একা করলো, আর জিতবে কি-না কোনো নোংরা নারী? এ হতেই পারে না।
নিনীকার যে এই বিয়ে করতে গিয়ে নিজের ভেতর ভেঙ্গে গড়তে হয়েছে আবার। আচ্ছা, এখন মরে গেলে কি হয়? মরে যেতে ঠিক কতটুকু সাহস লাগে? এই সাহস তার নেই কেন?
রওনক ফোন করে যাচ্ছে।নিনীকা ফোনটা সুইচড অফ করে দিলো। বিয়ের আগ পর্যন্ত নিনীকা নিজের মতো থাকতে চায়।

হলুদের অনুষ্ঠানের পুরো সময় পাপা এবং মা যতটা পেরেছেন, নিনীকার দৃষ্টি লুকিয়ে ছিলেন। চোখাচোখি হলেই নিনীকার কাজল লেপ্টে যায়, এই ভয়ে। এই সমস্ত কঠিন সময়ে পাপা একটুও চোখ ভেজাননি!
হলুদের ফটোসেশানের এক ফাঁকে ইলা পাশে বসেছিলো একবার। নিনীকা ইলার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
—প্লিজ আপনি কাঁদবেন না আজকে; কাঁদলে আমিও কেঁদে ফেলবো কিন্তু! মেক-আপ নষ্ট হয়ে যাবে আমার। রওনকের কত সেলিব্রিটি গেস্ট এসেছে দেখেছেন?
ইলার চোখের জল অনবরত পড়ছেই। জোর করে হাসি এনে নিনীকার হাতে একটু হলদু মাখাতে মাখাতে বললো,
—তোমায় কি দিই বলো তো? অত দামী কিছু তো নেই আমার!
নিনীকা হ্যান্ড পার্সে রাখা এনগেজমেন্টের আংটিটা ইলার হাতে দিয়ে বললো,
—এনগেজমেন্টে রওনক পরিয়ে দেবার পর খুলে রেখেছিলাম এটা। ভীষণ ভারী লাগছিলো। আপনি মনথেকে একটু হেসে পরিয়ে দিলে ওটা আর আমার কাছে ভারী মনে হবে না।
ইলা চোখ মুছতে মুছতে বললো,
—আমার বেবী হবে আবার। আমি চাই আমার তোমার মতো একটা মেয়ে হোক। একটু ছুঁয়ে দেবে আমার পেটের এখানটাতে। একটু হাত বুলিয়ে দোআ করে দাও না। এমন একটা নিনীকাই যেন আমার হয়! আমি যদি আমার মেয়ের নাম ‘নিনীকা’ রাখি, তুমি কি রাগ করবে? কই হাতটা দাও, রওনক যেন কোনো আঙ্গুলে পরিয়েছিল?

এবার নিনীকা কেঁদে ফেললো। কাজল ধু্য়ে কালো পানিতে গাল লেপ্টে যাচ্ছে তার। কেউ একজন টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,
—হলুদেই কান্না। বিয়েতো বাকি! হায় হায় মেক-আপ ব্লান্ডার হয়ে যাচ্ছে।
রওনকের মা ধমক দিলেন তাকে। কাঁদুক মেয়েটা।বিয়ের কনে না কাঁদলে ফটোতে চার্ম আসে না।

(চলবে)

#পর্ব_১৮

হলুদের রাতে নিনীকা এক ফোঁটাও ঘুমানোর সুযোগ পেলো না। শেষরাতে ঘরে একটু একা থাকবার সুযোগ পেয়েছিলো অবশ্য; বড়ফুফু এসে বাগড়া দিলেন। নিনীকার বিছানায় শুয়েই বললেন,
—-নিনীকা দরজাটা ভিজিয়ে দিয়ে তুই অন্য ঘরে যা তো। আমি তোর ফুফার সাথে একটু কথা বলবো ফোনে।
—কথা বলবে তো আমার সামনেই বলো না। আমি ডিস্টার্ব করবো না।
নিনীকা শুয়ে পড়লো পাশেই। রাত জাগনা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। পেট পাকাচ্ছে, ক্ষুদা নষ্ট হয়ে গেলে যেমন লাগে। মাথা বিশ্রী জ্বালা করছে। নিনীকা উঠে গিয়ে একটা ৭.৫ মিলিগ্রামের মিরটাজ গিলে নিলো। ব্যস এখন দু-ঘন্টা ঘুমিয়ে নিলেই সারাদিনের ধকল নেয়ার জন্য শরীর রেডী হয়ে যাবে।
নিনীকা ঘুমোনোর চেষ্টা করলো। কিন্তু বড়ফুফু এত হাই টোনে কথা শুরু করলেন যে ঘুমানো ইম্পসিবল। নিনীকা উঠে বাথরুমে গেল। মুখে-চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে নিজের দিকে তাকালো একটু। ক্লান্ত, দুঃখী চেহারা। নিনীকা হাসার চেষ্টা করলো। আচ্ছা সব মেয়েরই কি বিয়ের সময় এমন ক্লান্ত লাগে?

অবসাদ ভাঙতে নিনীকা গুণগুণিয়ে উঠলো,
“পুরোনো এক প্রেমের গল্প সত্য কিংবা মিছে,
সম্পর্কের এই ভাঙ্গা গড়া আতস কাঁচের নিচে…”

না গান ভালো লাগছে না। ওষুধের একশান শুরু হয়ে গেছে, চোখের পাতা ভারী লাগছে। কমোডের ঢাকনা
ফেলে তার উপর ফ্লাশে হেলান দিয়ে বসলো সে। এভাবে একটু ঘুমিয়ে নিলে কেমন হয়? এরকম তো সে অনেক ঘুমিয়েছে আগে।

নিনীকার ঘুম ভাঙলো বড় ফুফুর চেঁচামেচিতে। তিনি দরজায় দড়াম দড়াম শব্দ করে ধাক্কাচ্ছেন। নিনীকা দরজা খুলতেই বললেন,
—কিরে নিনী পেট খারাপ করেছে নাকি? পেট খারাপ কি করে হলো? ওষুধপাতি খেয়েছিস কিছু?
নিনীকা জবাব দিলো না। গাঢ় ঘুমটা ভেঙ্গেছে তার।শরীর টলছে। টালমাটাল শরীর টেনে নিয়ে সে কোনোক্রমে বিছানায় এসে ধপাশ করে শুয়ে পড়লো।
বড়ফুফু আঁৎকে উঠলেন। প্রায় চিৎকার করেই বললেন,
—ও মাই গড! তোর তো সিরিয়াস অবস্থারে নিনী।শরীর তো পুরো ছেড়ে দিয়েছে। ক’বার হলো? বেশি পাতলা?
নিনীকা জবাব দিলো না। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তার। এক রাজ্যের ঘুম!

দশমিনিটের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বড় ফুফু ব্যাপারটা মোটামোটি সারা দুনিয়া করে ফেললেন। নিনীর পেট খারাপ, শরীরের পানি শুকিয়ে গেছে। সে শোয়া থেকে উঠতেই পারছে না। মাহবুবা এবং নিনীকার পাপা চিন্তিত হয়ে নিনীকার ঘরে গেলেন। এর ফাঁকে ফুফু বুদ্ধি করে রওনককেও একটা ফোন করে দিয়েছেন।হাজার হোক হবু বউ বলে কথা। ছেলেটার তো জানা দরকার! রওনক এই খবর শোনবার পর দিশেহারা। নিনীকার ফোন বন্ধ। সে কি একবার দেখতে যাবে? অনেক ভেবে সোহেলকে পাঠালো।
সোহেল এসেই বললো,
—স্যার ম্যামের সাথে ২মিনিট কথা বলতে চান।এখন ম্যাডামের কি কন্ডিশন?
বড়ফুফু রেগে বললেন,
—মেয়েটা লাশ হয়ে পড়ে আছে, তুমি এসেছো ফোন করাতে! গাধাছেলে।
সোহেল কাচুমাচু মুখে দাড়িয়ে থাকলো। এই রওনক স্যারের বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে সে সমানে ধমক খেয়ে যাচ্ছে।

নিনীকার পাপা’ই গেলেন দেখতে। নিনীকা ঘুমিয়ে আছে। তিনি পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। নিনীকা নড়ে উঠলো হালকা। বিড়বিড় করে বললো,
—পাপা ১০মিনিট ঘুমাবো আমি। এরপর তুমি বিয়ের কনেকে ডাকতে আসবে।
—তোমার কি শরীর খারাপ মামণি? ওষুধ খেয়েছো? স্যালাইন খেয়েছো?
নিনীকা ধরফর করে উঠে বসলো। সবাই তার ঘরে। সে বিস্মিত।
লজ্জিত মুখে বললো,
—আমার খুব ঘুম পেয়েছিলো মা পরীক্ষার আগের রাতের মতো। বড়ফুফু ভেবে নিলো অন্যকিছু।
দাদীমা বড়ফুফুর দিকে রাগী চোখে তাকালেন,
—বুইরা গাধী। এ হলো বিয়ের ‘কালঘুম’! যার বিয়েতে এমন কালঘুম পায়, সে সারাজীবন স্বামী সোহাগী হয়।
এদিকে তোর জামাই তো তাঁর ম্যানেজারকে পাঠিয়েছে খোঁজ নিতে।

মাহবুবা সোহেলকে ভেতরে ডাকলেন। সোহেল বিনীতভাবে মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—ম্যাম, স্যার লাইনে আছেন। নিনীকা ফোনটা হাতে নিয়ে বড়ফুফুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।বড়ফুফু চট করে বেরিয়ে গেলেন।
নিনীকা হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে চিন্তিত কণ্ঠে রওনক বললো,
—আপনি এখন কেমন আছেন ডক্টর?
—আপনাকে কে খবরটা দিলো?
রওনক জবাব দিলো না। নিনীকা হতাশ গলায় বললো,
—এত চিন্তা করবেন না নায়ক সাহেব। বিয়ের টাইমের কোনো নড়চড় হবে না। প্রেসের কাছে লজ্জা পাবেন না আপনি। দরকার হলে ডায়াপার পরে আসবো, তাও ডিউটাইমে বিয়ে হবে আমাদের।

পাপা হেসে ফেললেন। সোহেলের হাসি পেলেও সে সামলালো নিজেকে। রওনকের চিন্তা আরো বেড়ে গেল। ডায়াপার পরে মানে? এত খারাপ অবস্থা হলো কি করে মেয়েটার! ডাক্তার হয়েও নিজের শরীর নিয়ে এত লা-পরোয়া কেউ হতে পারে? নিজের বিয়ের দিনে অসুস্থ! রওনক কি একবার দেখতে যাবে? যাওয়া কি ঠিক হবে?
সকাল ৮টা নাগাদ রওনক এসে হাজির হলো। নাসিদা খালা এসে অত্যন্ত আনন্দিত মুখে খবর দিলেন,
—ও ছুডু মেডাম। স্যার আসছেন আপনারে দেখতে। সাথে দুনিয়ার মিষ্টি! আমারে দিলেন এক গাড়ি কালো মিষ্টি। এত মিষ্টি খাইবার টাইম কই আমার?
খবরটা শুনে বিরক্তিতে নিনীকার মুখ তেতো হয়ে গেছে। পেট খারাপ শুনলেই আসতে হবে? এত বড় নায়কের বুদ্ধির এই হাল! বাড়িভর্তি গেস্টরা কি ভাবছে? স্লিভলেসের উপর কুর্তিটা চাপিয়ে নিয়ে নিনীকা চূড়ান্ত মেজাজ খারাপ করে নিচে নামলো। নিচের হলে সবাই রওনককে ঘিরে বসে আছে। রওনক আজ এ বাড়িতেই সকালের নাশতা করবে।

রওনক এসে পড়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে। এরকম জানলে সে আসতোই না। রওনক এসেই শুনছে, নিনীকার অসুস্থতার খবরটা ভুয়া। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে এখন। সে চিন্তাই করতে পারছে না, ফুফুশাশুড়ি শ্রেণির কেউ তার সাথে এমন ধরনের মজা করতে পারে! এখানে তাকে সকালের নাশতা খেয়েই যেতে হবে। রওনক একটা জরুরি ফোনকলের কথা বলে সবার সামনে থেকে সরে একটা নিরিবিলি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য ঝটপট একটা সিগারেট খেয়ে নিতে হবে, তাহলেই মাথা ঠান্ডা।পরিস্থিতি সামলানো যাবে ঠান্ডাভাবে।

নিনীকার এখনিই রওনকের সাথে কথা বলা দরকার। লোকটার কি বুদ্ধি কিছু নেই? আসবার আগে নিনীকাকে জিজ্ঞেস করতে পারতো একবার! রওনককে পাওয়া গেল পাপার স্টাডিরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে কফিমগ। ধোঁয়া কেন? সিগারেট ফুঁকছে নাকি?
নিনীকা যেতেই রওনক থতমত খেয়ে গেল। আধখাওয়া জ্বলন্ত সিগারেটটা ডুবিয়ে দিলো কফিমগে। নিনীকা যেন দেখতেই পায়নি এমনভাবে বললো,
—বিয়ের দিনে শ্বশুরবাড়িতে সকালের নাশতা করতে এসেছে এমন বর বোধহয় ইতিহাসে আপনি প্রথম।
নোবেল দেয়া দরকার আপনাকে। মেডেল কি স্বর্ণের চাই?
রওনক মাথা চুলকালো। নিনীকা রওনকের আরো একটু কাছে দাঁড়ালো। চোখের দিকে স্ট্রেট তাকিয়ে বললো,
—-আমায় বলে আসলে কি হতো? সবাই কি ভাবলো?
—আপনার ফোন বন্ধ ছিল ডক্টর। আমি ভাবলাম বেশি অসুস্থ!
—এই জন্য পুরো এক দোকান মিষ্টি নিয়ে চলে এসেছেন। এত বুদ্ধি আপনার!
রওনক চুপ করে থাকলো। এই মেয়েটা এমন কেন? বিয়ের দিন বরকে কেউ এমনভাবে ধমকায়? ডক্টর নিনীকার মাথা কি ঠিক আছে? সেদিন দেখা গেল, কাঁথা মুড়িয়ে ছিলেন। আজ দু’পায়ে দু’রকম জুতো। পরনের কুর্তিও তো উল্টো মনে হচ্ছে, পেছনের গলা সামনে।
রওনক যথাসম্ভব সিরিয়াস ভাব করে বললো,
—আমায় বলা হয়েছে আপনার এক্সট্রিম কন্ডিশন। মিনিমাম কার্টেসি রক্ষার্থে এসেছি।
—আর এসে আমার সাথে দেখা না করে এখানে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছেন। কফি খাওয়া শেষ করে সোজা বাসায় যাবেন। নাশতা বাদ। বাড়িময় গেস্ট, সবাই হাসছে।
—কফি শেষ তো আমার।
নিনীকা মুখ বাড়িয়ে বললো,
—কই দেখি?
রওনক এক চুমুকে সিগারেট সুদ্ধু কফি গিলে নিলো। নিনীকা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
—এরকম কপাল কুঁচকে আছেন কেন? কফি ভালো হয়নি?
রওনক চোখ গরম করে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। এই মেয়েটার এখন অনেক অধিকার। ভুল বুঝার অধিকার, রাগ করার অধিকার! ফট করে আবার ঝামেলা বাঁধাবে।
নিনীকা বিরক্তি ঝরা গলায় বললো,
—আপনার বুদ্ধি যে ভালো না আমি জানতাম। কিন্তু এই লেভেলের তা জানতাম না!
রওনক আহত গলায় বললো,
—আমার অন্যসব নিয়ে কথা বলুন ঠিক আছে কিন্তু আমার আইকিউ লেভেল নিয়ে কথা বলবেন না, প্লিজ ডক্টর! ছাত্র হিসেবে আমি কিন্তু খারাপ ছিলাম না। হিস্ট্রিতে এম.এ ফার্স্ট ক্লাস আমার।
নিনীকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আমার সাথে তর্ক করা। এখনি আই কিউ শেখাচ্ছি তোমাকে, ওয়েট!
খুব শান্ত গলায় নিনীকা বললো,
—হিস্ট্রিতে এত ভালো! ওহ আই সি। তাহলে ইতিহাসের একটা ছোট্ট টেস্ট নিই আপনার নায়ক সাহেব?
রওনক মাথা নাড়লো।
নিনীকা রওনকের হাত থেকে কফিমগটা নিয়ে এর ভেতর দেখতে দেখতে বললো,
—একটা সহজ প্রশ্নের উওর দিন তো। বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে এমন একটি বর্ণ আছে, যেটিতে আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের একজন রাজা এবং রাণীর নাম হয়। বর্ণ একটাই! দেখি বলুন।
রওনক হতভম্ব গলায় বললো,
—এখনি বলতে হবে?
—আচ্ছা আপনাকে ভাববার সময় দেয়া হলো।
যখন বলতে পারবেন তখনি বিয়ে হবে। শর্ত হলো, নো গুগলসার্চ, নো হেল্পলাইন। নিজে ভেবে উত্তর দিবেন। না পরলে ‘পাস’ বলবেন, প্রশ্ন বদলে দিবো।
—এনি ক্লু?
—প্রশ্নটা আরো সহজ করে দিলাম, এই বর্ণে একটা ছেলের ও একটা মেয়ের নাম চাইলে রাখা যেতে পারে। এবার ভাবুন।
রওনকের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এই প্রথম তার মাথা বুদ্ধি শূন্য লাগছে। ইতিহাসে তো এসব পড়েনি সে? তাহলে?

নিনীকা হাই তুলতে তুলতে চলে যেতে গিয়ে ফিরে তাকালো। রওনক একটা সবুজ টি-শার্ট পরে এসেছে।ক্লিন শেভড! মনে হয় যাস্ট শাওয়ার নিয়ে এসেছে।ফ্রেশ লুকিং। পায়ে ঘরে পরার দিন-রাত্তিরের নরমাল স্লিপার। ফর্সা পায়ের নখগুলো পর্যন্ত ঝকঝকে। কি সুন্দর সমান শেপে কাটা! নিনীকা নিজের পায়ের দিকে তাকালো, তার দুইপায়ের নখ দুরকমভাবে কাটা। ডানপায়েরটা বাঁকা হয়ে কোণা উপরে উঠে আছে। পায়ের নখদুটো এখনি সমান করে কাটতে হবে। তার পায়েও দুটো ভিন্ন জুতো। একটা পাপার আর একটা কার? বিয়ে বাড়িতে জুতোরও হদিস নেই। উফ!
নিনীকা দ্রুত বেড়িয়ে এলো। এত গুছানো নায়কের বউ উল্টো জামা গায়ে। ওহ্ হো…

রওনকের জোড়া ভ্রু আরো কুঁচকে গেল। বিয়ের দিনে ছেলেরা নাকি একদিনের বাদশা বনে! সে বনেছে ছাগল। মহা ছাগল! একটু আগে সে খেলো সিগারেট মেশানো কফি। এখন তাকে ধাঁধার উত্তর খুঁজতে হচ্ছে। কি এমন বর্ণ! যাতে রাজা রাণীর নাম লুকানো? রওনক বিড়বিড় করে পড়তে লাগলো,
অ আ ই ঈ… ও মাই গড! ক খ গ ঘ তো সে সব ভুলেই গেছে!
সর্বনাশ!
বর্ণ পরিচয় কিনতে হবে একটা।

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here