রোদ্দুরের_বৃষ্টি #পর্ব_৩৬_ও_৩৭

0
455

#রোদ্দুরের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৬_ও_৩৭

#পর্ব_৩৬

রাতে ডিনারে বসেই লীনা হাসিমুখে বললো,
-বাবা, শোয়েব তো রেগে পুরো বার্স্ট করে গেছে।রিমিকে ফোন করে হয়তো কিছু বকেছে টকেছে। রিমি এখন ইউজার বিজি করে রেখেছে ওকে। সন্ধ্যায় ফোন করে আমায় কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ভাবী আমার কি হবে? রিমি নিজেই তো একটা বাচ্চা! এখন আমি ওকে নিয়ে কই যাবো?
আব্দুস সালাম সাহেব শব্দ করে হেসে উঠলেন। ছেলের নার্ভাসনেসে তাঁর মজা লাগছে। খবরটা যখন তিনি শোয়েবকে বলেন, শোয়েব তব্দা মেরে ছিল পুরো। ফোন রাখার আগে শুধু বিড়বিড় করে বলেছিলো, রিমি এমনটা করতে পারলো বাবা… জীবন শুরুর আগেই এত দায়িত্ব।
-বুঝলে বৌমা, এখন বুঝবে মজা। বাবা হওয়া কি চাট্টিখানি কথা? দায়িত্ব যে কত! শোয়েবের নিজের কাপড় চোপড়ই তোমার শাশুড়ি খুঁজে দেয় এখনো।
রেহেনা বিরস মুখ করে বললেন,
-শোয়েব কি দায়িত্ববান নয়? ক’দিন বা বয়স ছেলটার? বৈষয়িক ব্যাপারে ও’র আগ্রহ হয়তো কম, কিন্তু ও’সম্পর্কের কদর করতে জানে সবসময় এবং সেটা ভালোভাবেই। কাঁধে পড়লে ও’ ঠিক সব সামলে নিবে।
কথাটা রেহেনা লীনার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-মা, আমরা কিন্তু সেটা বলছি না! শোয়েবের জন্য এটা যে কত বড় সারপ্রাইজ। ও’তো রিমিকে গুছিয়ে সংসার করতেই রেডী হওয়ার সময় নিচ্ছিলো। আমার তো মনে হলো, সে পাজলড হয়ে গেছে… ছুটি পাচ্ছেনা বেচারা। পারলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসে।
-আমায় তো বললো, আর বাড়ি আসবোনা বাবা।সব ছেড়ে বনবাসে চলে যাবো। আমিও বলে দিয়েছি, যাও বাবা দোয়া রইলো।
কথাটা বলেই আব্দুস সালাম সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন।
-জানো বৌমা, আমি ঠিক করেছি শোয়েবকে একটা সংবর্ধনা দিবো ঘটা করে। ও’র ভীতু আর নার্ভাস মুখবয়বটা ভেবে এখনি আমার আনন্দ হচ্ছে। আমার সেদিনের ছেলে… এখনো হাফপ্যান্ট পরে, সে কিনা বাবা হচ্ছে…. ভাবা যায়?
আনন্দে আব্দুস সালাম সাহেবের চোখ চকচক করতে লাগলো।
-বাবা, শোয়েবকে আর রিমিকে বর বৌ সাজিয়ে পার্টিটা দিলে কেমন হয়? রিমিও তো মা হচ্ছে, এ ওয়ার্ম ওয়েলকাম পার্টি ফর দেম! রিমি তো কেঁদেই ফেলবে লজ্জায়।
-দারুন আইডিয়া! তুমি তাহলে সব এরেঞ্জ করে ফেলো। হিউজ বাজেট নাও, গ্রান্ড পার্টি চাই। ক্যাপশান হবে, উঁ উঁ দাঁড়াও দাঁড়াও ভেবে নিই। গিফটটা এমন ভাবো, যাতে একটাতেই দুজনের হয়।

লীনা অতি উৎসাহে পার্টির প্লান ভাবতে লাগলো।
রেহেনা খাওয়ায় মন দিলেন। তিনি ভয়ে ভয়ে আছেন। শোয়েব এসে কোন কাহিনী করে কে জানে?
ছেলের ফোন তিনিও ভয়ে ধরছেন না, ফোন না ধরায় শোয়েব বোধহয় আরো ফুলছে। ফুলুক… ফোন ধরলেই মহা আহাম্মকের মত বলে, এই বাচ্চা কেন হয় মা? আমার খুব ভয় করে এসব….
রেহেনা একা একাই মৃদু হাসলেন, পাগল ছেলে একটা। ভয়ের কি আছে এতে? কত খুশির সংবাদ!
আচ্ছা, রিমির যেন এটা কতসপ্তাহ চলছে? আলট্রাসনোগ্রাফি করানো দরকার। মেয়েটা যে কি? অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল করলো, তাও একা একা.. এত এত ভুগছে অথচ কোনো সারাশব্দটি নেই। অনেক আগেকার দিনের মহিলাদের মত সহ্য ক্ষমতা দেখাচ্ছে। এ যুগে এমন মেয়ে আছে নাকি, যে বাবু হওয়া নিয়ে আদিখ্যেতা দেখায় না? শোয়েবটার আসলেই ভাগ্য ভালো। রেহেনা এবার সত্যিই সংসারের ভার বুঝিয়ে দেবার মত কাউকে পেলেন! এই সংসার সামলাতে সামলাতে কাহিল তিনি, আর কত? রিমি আসুক শুধু একবার! সব সামলে নিবে সে। এই মেয়ে দায়িত্ব থেকে পালাবে না।
রেহেনা তখনই ভেবে নিলেন, রিমিকে গিয়ে দেখে আসতে হবে একবার! আস্তে আস্তে সম্পর্ক গভীর করতে হবে রিমির সাথে।

আব্দুস সালাম সাহেব, হঠাৎ বললেন,
-রেহানা, কি ব্যাপার বলোতো তোমার? চুপচাপ কি ভাবছো? শোয়েবের বাবা হওয়া নিয়ে তুমি খুশি না নাকি? আপসেট দেখাচ্ছে….
রেহেনা চমকে তাকালেন।
-আসলেই তো মা ভাতের পাতে আঁকিবুকি করছেন শুধু। কিসের এত চিন্তা আপনার? শোয়েবকে নিয়ে?
রেহেনা জবাব না দিয়ে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন। রিমিকে ভালো ডাক্তারে চেকআপ করাতে হবে। আলাপ করা দরকার।
লীনা আবার পুরোদমে পার্টি প্লান করছে!

ডাক্তারের সাথে কথা বলে রেহেনা স্বস্তিতে শুয়ে পড়লেন। রেহেনার আসলে কোনো চিন্তাই নেই, রিমির মত একটা মেয়ে শোয়েবের পাশে আছে ভাবতেই নিশ্চিন্ত লাগে! তাঁর তো বরং বড় ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা। বৌয়ের কর্মচারী হয়ে গেছে পুরো। শুধু একটাই ভয়, শোয়েব এসে যেন বোকামীতে তুলকালাম না করে। হানিমুনের আগে বাচ্চা কেন হলো, এই প্রশ্ন করে করে হয়তো মেরেই ফেলবে রিমিকে… উফ্!
রেহেনার মুখ ফসকে আদুরে গলায় হঠাৎই বেরিয়ে এলো, “বোকা ছেলে একটা আমার”!

#পর্ব_৩৭

নাসিমা ভাতের প্লেটটা বিছানায় রাখতে রাখতে বললেন,
-ইলিশ মাছের ডিম ভেজেছি রিমি। একটু তো মুখে দিবি নাকি?
রিমি ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়েই বললো,
-প্লেট সরাও মা, এক্ষুণি, বমি করে দিবো। বিশ্রী গন্ধ লাগছে।
-আমি ভেজেছি রিমি। তোর পছন্দমত করে, লেবুর রস দিয়ে; দেখ না, একটু…
রিমি হাত দিয়ে ঠেলে নিজেই প্লেটটা সরিয়ে রাখলো।
-কত্তবার বলেছি মা, মাছের কিচ্ছু সামনে আনবে না।
গা গুলায় আমার।
নাসিমা পা গুটিয়ে বসলেন রিমির পাশে। এতদিনের অল্প সময়ে রিমি কি অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে গেছে, নাকি বড়?
-সিমি আপা পড়াশোনা স্টার্ট করছে আবার। আংকেলই জোর করে ভর্তি করালেন… আজ ফোন করে বললেন! আপার কাছে বেড়াতে যাবে মা?
নাসিমা জবাব দিলেন না। এই মুহূর্তে রিমিকে একলা ছেড়ে আর কোথাও তিনি যেতে চান না। শোয়েবের হাতে সঁপে দিয়ে তবেই তাঁর মুক্তি। নিশ্চিন্ত হবেন তিনি।
-শুভকে দেখে আসো মা, অনেকদিন ধরে যেতে পারছি না আমি। কিছু জিনিসপত্র আমি কিনে রেখেছি, দিয়ে আসোনা মা.. আমার এখন যাওয়া ইম্পসিবল।
-সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসবো আমি।
-তাও যাও প্লিজজজজজ…. আপা ঘ্যান ঘ্যান করে সারাক্ষণ। মা পৃথির জন্যও কিছু জিনিস কিনে রেখেছি, একটু দেখে নিও, পাঠিয়ে দিবো। আমার না হয় শত্রু, তোমার তো মেয়ে। দায়িত্ব আছে তো নাকি?
-এতকিছুর পর ও’র কথাটা আসছে কেন আবার?
-ক্ষমা চেয়ে মেইল করেছে আমায়। ও ফিরবেনা মা আর। ওখানেই বিয়ে করছে। আমি বলেছি, বিয়ের আগে যাতে তোমায় ভিসা করে নিয়ে যায়।
নাসিমা রেগে গেলেন।
-তলে তলে এতসব? ছি রিমি… তোর সাথে কত বড় অন্যায় করতে যাচ্ছিলো?
রিমি ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে এবার মায়ের দিকে তাকালো।
-অপরাধটা কি ও একা করেছে? যারা জানলো, আমরা দুজন একই মায়ের মেয়ে তারা এলাউ না করলে কি করতে পারতো? যদি একপক্ষকে আমি অভিযোগ মওকুফ করতে পারি, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারি, শোয়েব ভাইকে ভালোবেসে। তবে তোমাকে ভালোবেসে পৃথিলাকে নয় কেন?
আমি জানি মা, মা হলে সন্তানের জন্য কত ভেতর কাঁপে! আমার সাথে ও’র সম্পর্ক, এটা আমার ব্যাপার। তুমি মা, তোমার কাছে কোনো হিসেব নেই, থাকতে পারেনা। সন্তানকে ভালোবাসা তোমার দায়িত্ব।
কথাটা রিমি বেশ শক্ত সুরেই বললো।
-তুই আমায় দায়িত্ব শেখাচ্ছিস?
-হু মা, শেখালে অসুবিধাটা কই? একটা মজার ব্যাপার কি জানো? পুরো বিষয়টাতেই আমরা সবাই পৃথিলাকে ভিলেন ভাবছি, দোষী ভাবছি। আদৌ কি সে দোষী? ভালো করে ভেবে দেখো, এখানে পুরো অন্যায়টা কিন্তু শোয়েব ভাই’র সাথে উনার পরিবার করেছে। তারাই তো পৃথিলাকে ভেবেছে যোগ্য; বরং পৃথিলারটা যৌক্তিক। ও’র অবস্থান ও’র শিক্ষাদীক্ষায় ও এটাই তো ডিজার্ভ করে। আমি তো কিছুই না।
-তুই শুধু শুধু শোয়েবদের পরিবারকে দোষ দিচ্ছিস। ওরা কিন্তু সামাজিক অবস্থান ভেবে, সমাজের কথা ভেবে উচচশিক্ষিত বড়লোক ঘরের…
-মা, এই যে “সমাজ” বললে, সমাজটা আসলে কে? আমি তুমিই কি সমাজ নই? যেই চিন্তা অন্য লোককে সবার চোখে ভিলেন বানিয়ে দেয়, তা সমাজের দোহাই দিয়ে ঢেকে ফেলা কি ঠিক? পৃথিলা যেটা করেছে সেটা আরো অশোভন হয়েছে তোমার এই সো কলড সমাজের জন্য। তাই বলে ভেবোনা, পৃথিলাকে ভালো ভাবছি আমি। ও’কে শুধু মওকুফ করছি মা। একটু ডিপলি ভেবে দেখো মা, পুরো খেলাটাই কিন্তু অফস্ক্রিন থেকে শোয়েব ভাই’র পরিবারই খেলেছে। আমিই গুলিয়ে দিয়েছি।
নাসিমা কথা বাড়ালেন না আর। রিমির সাথে তর্কে তিনি পারেন না একদম। পৃথিলার সুত্র ধরে এখন আবার না অন্য মানুষটাকে টেনে আনে! যেই মানুষের জন্য আজকের সব পরিস্থিতি এরকম…
প্লেটটা হাতে নিতে নিতে বললেন,
-জানিস রিমি, এসময়ে ইলিশ মাছের ডিম খেলে বাবু নাকি ডাগরচোখের হয়.. তুই যখন পেটে আমি খেয়েছিলাম। দেখ তোর চোখটা কেমন বড় বড় আর..
রিমি মায়ের কথায় তাকালো। হাত বাড়িয়ে প্লেট নিলো। ডিমভাজায় চোখ বন্ধ করে একটা আলতো কামড় দিতে দিতে বললো,
-বড় বড় আর কেমন মা?
নাসিমা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।মেয়েকে তিনি বাকিটা বলতে চান না। রিমির চোখ দুটোতে ভারী দুঃখের ছাপ স্পষ্ট। বাচ্চা হবে মেয়েটার; চেহারা খুলে যাবার কথা অথচ রিমির মুখটা শুকিয়ে চুপসে গেছে যেন! রিমির বোধহয় ছেলেই হবে। রিমির দাদী তো প্রায়ই বলতেন,
“মাইয়া পেডে সুন্দরী
পোলা পেডে বান্দরী”
নাসিমা নিজের ক্ষেত্রে কথাটার প্রমাণ ভালোভাবেই পেয়েছেন।
রিমি কিছুটা খেয়েই বললো,
-বমি করবো মা।
বিছানা থেকে পুরোপুরি নামতেও পারলো না রিমি, বমিতে ঘর ভেসে গেল!
নাসিমা বিরক্তমুখে বললেন,
-কি পেটে ধরেছিস বলতো? সবসময় পেটে ১৪৪ধারা জারি রাখে। ওটার বাপকে বল, এখন এসে পরিস্কার করতে।
রিমি নিজেই ধুয়ে মুছে সব সাফ করলো, নাসিমা ঘুমের ভান করে শুয়েছিলেন। মেয়ের এত অসুস্থতা নিয়ে কাজ করা তাঁর ভালো লাগছেনা। এতটুকু বয়স থেকে খালি দায়বদ্ধতা.. খালি অন্যের জন্য করা।নিজের কথা মেয়েটা কবে ভাববে?
রিমি বিছানায় এসে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।
নাসিমা রেগে বললেন,
-তোর জামাই কবে আসবে?
রিমি জবাব দিলোনা।
-কি হলো? কবে আসবে বলেনি?
-আসবেনা মা, রোজই ঝগরা হচ্ছে। আজ বললো, আমার মুখ দেখতে চায়না। হুট করে বাচ্চা কেন হলো? সারাক্ষণ হামকি ধামকি। ট্রিপ প্ল্যান করেছিলো, সব নাকি আমি ভেস্তে দিলাম।
-তুই এত অসুস্থ, বলিসনি?
-আবার বলা… যেটুকু শুনেছে তাতেই বলেছে, যা খুশি করো; ১০০টা বাচ্চা হওয়ায় মরে যাও… আমি তোমার সাথে নেই… মানুষটা এত পাগল মা… পৃথিবীতে বোধহয় উনিই প্রথম স্বামী যার বৌয়ের বাচ্চা হবে বলে রেগে আছেন! বাবুর উপর তো এখনি রাগ। বাবাকে জিজ্ঞেস না করে চলে আসা, মাকে কষ্ট দেওয়া… বলে কিনা, আসুক দুনিয়াতে, সবকথার জবাব নেবো… এসে যে শারীরিক অবস্থা দেখে কি বকবে আমায়… আমার তো ভেবেই ভয় লাগছে মা…
-তা, কবে আসবে বকাবকি করতে?
-ছুটি পাচ্ছে না, একটা প্রমোশন হবে বোধহয় উনা’র। কি জানি বললো, ঢাকার অফিসেও চলে আসার চান্স পেতে পারে। আটকে আছে তাই… নাহলে সেই কবে এসে তুলকালাম বাঁধাতো! এমনিতেই এক ডাক্তার বন্ধুকে পিছনে লাগিয়েছে আমার। সকাল বিকাল খোঁজ নিতে এসে জালাচ্ছে আমায়।
নাসিমা গাঢ় মমতার দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালেন। তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন এই মেয়ের কপালভর্তি সুখ।
-তোকে খুব ভালোবাসে, নারে? এই যে প্রতিমাসে টাকা দেয়, একগাদা জিনিস পাঠায়!
-ওসব তো মা ভালোবাসা না… এগুলো উনার রাগ। এর সত্যিকার মানে হলো, এই জিনিসগুলো আর টাকাটা তোমার দরকার; তুমি কেন বুঝোনা?
নাসিমা শোয়া থেকে উঠলেন। রিমির কাছে বসলেন। রিমির চুলের খোপাটা খুলে নিয়ে চুলোগুলো গোছা গোছায় আলাদা করতে থাকলেন। অনেকদিন তিনি মেয়ের চুল আঁচড়ে দেন না। রিমি ল্যাপটপ বন্ধ করলো। মায়ের দিকে পেছন বাঁক ঘুরে থেকেই বললো,
-আমার খুব ভয় করে মা, খুবববব… ইঞ্জিনিয়ার বড়লোক বাড়ির হ্যান্ডসাম ছেলে, কি ভালো পরিবার! কি ভালো সামাজিক অবস্থান! এ যুগের রাজপুত্র… আমার শিক্ষা দীক্ষা নেই, আহামরি ভালো গুণ নেই, স্মার্ট নই, আর কত অভাবে বড় হওয়া! কোনোদিনও যদি এক মুহূর্তের জন্য ভাবে ঠকে গেছেন উনি? মাঝে মাঝে ভয়ে বুক কাঁপে মা। জানো মা, আমায় যখন আদর করে, লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমার! নিজেকে দাসী দাসী মনে হয়… এত তুচ্ছ একটা মেয়েকে রাজপুত্র পুরো নর্দমা থেকে টেনে তুলে বুঝি মাথায় নিলো?
রিমির গলা ধরে এসেছে।
-বিজনেসটা শুধু পুষিয়ে দিতে করছি আমি। অন্তত টাকার বেকআপটা যদি থাকে! কিন্তু আমি জানি, কোনো ভাবেই আমি যোগ্য নই উনার। বাবু হবে যখন জানলাম, অপরাধে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। এত বড় মানুষ, আমি কিনা বলবো… মানুষটা কি দেখে যে ভালোবাসলেন আমায়?
নাসিমা পেছন থেকেই গভীর মমতায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,
-তোর বিজনেস খুব ভালো চলছে তাই নারে?
-খুব বেশি ভালো মা। চারলাখ টাকায় শুরু….. এই কটা মাসের পর ক্যাপিটাল ১০গুণে দাঁড়িয়ে যাবে মনে হচ্ছে। শোয়েব ভাই কিন্তু শুরুতেই বলছিলেন, কিছু জিনিস আছে যা শিখিয়ে পড়িয়ে হয় না, ওটা ভেতরে থাকতে হয়! এরকম একটা জিনিস হলো, “বোধ”। এখন মনে হচ্ছে এরকম আরেকটা জিনিস হলো “বিজনেস আইডিয়া”। বিজনেসের মূল ট্রিকটা আমি ধরে ফেলেছি মা।
নাসিমা মেয়ের মাথায় চুমু খেলেন।
-তুই অনেক ভালো থাকবি রিমি, সব বদলে যাবে দেখিস। সব সমান সমান হয়ে যাবে। শোয়েবের মা ফোন করেছিলেন, তিনি এখানে এসে তোর কাছে থাকবেন বললেন। শোয়েব চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে খুব। সে-ই বলেছে থাকতে।
-দেখেছো মা, এই -ই করে মানুষটা!
রিমির কপট রাগ হলো শোয়েবের উপর! সব একা একাই ভেবে ফেলবে নাকি, যত্তসব!

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here