#হলিডে
#পর্ব_১_ও_২
#পর্ব_১
নীরা প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ালো। পার্কিং লটের এই নিরিবিলি জায়গাটা নিশ্চয় পায়জামা ঠিক করার জন্য উপযুক্ত। তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে সে উল্টো পায়জামা পরে চলে এসেছে! এখন একটানে পায়জামা খুলবে, দ্বিতীয় টানে পায়জামা পরে ফেলবে ব্যস… কাজ ফুরুৎ। আশেপাশের কোথাও থেকে একটা আওয়াজ আসছে। কেউ একজন কি ব্যথা ট্যথা পেয়েছে? নীরা সামনে এগিয়ে গেল। একজন স্যূট টাই পরিহিত ভদ্রলোক উহ্ আহ্ করছেন। তার হাত কেটে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। রক্তে নীল স্যূটের বেশিরভাগই মাখামাখি।মেঝেতে পড়ে আছে কিছু এলোমেলো কাগজপত্র। বেশিরভাগেই রক্ত! কিন্তু লোকটা কাটা হাত নিয়ে আহাম্মকের মতো ফাইল ঘেটে কিছু একটা গাড়ির আশেপাশে খুঁজছেন। নীরা বিব্রত এবং বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গেল।
লোকটা কাতর ভঙ্গিতে ছুটে এলো।
—আমি লেফ্টহ্যান্ডার। ডানহাতে কিছুই পারি না।আপনি কি আমার হাতটা বাঁধতে সাহায্য করবেন?
তার ডানহাতে সাদা কাপড়ের ছোট্ট টুকরা। নীরা মনে মনে লোকটাকে অকথ্য একটা গালি দিলো। হাত কেটেছে অনেকখানি, এই ছোট্ট কাপড়ে কিচ্ছু হবে না।
নীরা ভদ্রলোকের টাইটা একটানে খুলে নিয়ে কাটা হাতটায় চেপে ধরে বাঁধলো। রক্তের তোড়ে নীরার হলুদ জামাও মেখে গেছে। ভদ্রলোক ও মাই গড, ও মাই গড বলে গোঙানোর মতো আওয়াজ করছেন।হাতটা বেঁধে দিয়ে নীরা ভদ্রলোকের মেঝেতে পড়ে থাকা ফাইলগুলো কুড়িয়ে গাড়িতে তুলে রাখলো। লোকটা খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাউকে ফোন করে নিলো একটা।
—অনেকটা গভীর কেটেছে আপনার হাত! স্টিচ লাগবে। হাসপাতালে যান।
—আমি একা যেতে পারবো না। আপনি কি আমায় সাথে করে নিয়ে যাবেন? আপনি কি ড্রাইভিং জানেন ম্যাডাম?
বলতে বলতে ভদ্রলোক নীরার হাত চেপে ধরলেন।নীরার দুহাত রক্তে মাখামাখি। ভদ্রলোকের টাই গলে কাটা হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে এই ব্যাটা নির্ঘাত রক্ত শূন্য হয়ে মারা যাবে। এতবড় একটা লোক এমন করে হাত কাটলো কিভাবে? আশেপাশে তো ছুড়ি কাঁচি কিছুই নেই।
নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
—আমি ড্রাইভিং জানি না। আসুন আপনাকে রিক্সা করে নিয়ে যাই।
নীরা ভদ্রলোকের হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো। একি ভদ্রলোকের বুকের ভেতর শার্টেও রক্ত! আরও কেটেছে নাকি?
নীরা ভয়ার্ত চোখে তাকালো। ভদ্রলোক ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে অস্পষ্ট কণ্ঠে বললেন,
—-ম্যাডাম, আমার শরীরের আরও বিভিন্ন জায়গায় কেটে আছে। আপনি দয়া করে আমায় আশেপাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে চলুন।
বলেই লোকটা বাঁ হাতে নীরার কাঁধ চেপে ভর করে হাঁটতে চাইলো।
একরাশ বিরক্তি আর উৎকণ্ঠা নিয়ে নীরা লোকটাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হলো।
হাসপাতালে এসে অবধি দু-ঘন্টা নীরা বসে আছে।এরা যেতে দিচ্ছে না। বলছে, রোগীর ডিটেল বলে ফর্ম ফিলাপ করে কিছু এডভান্স করতে। নীরার সাথে এগারোশো পঞ্চাশ টাকা ছিল, ড্রেসিং এবং মেডিসিনের জন্য পুরো টাকাটাই সে দিয়ে দিয়েছে। সাথে আর কোনো টাকা নেই। নীরা অপেক্ষা করছে নিয়ে আসা লোকটা হয়তো টাকার ব্যাপারে কিছু বলে তাকে বিদায় দিবে। কিন্তু সেই লোক অজ্ঞান। কেবিনে দুতিনবার উঁকি মেরে দেখেছে সে। নীরা মনে মনে লোকটাকে আরেকটা ভীষণ ভয়াবহ গালি দিলো। লোকটার জন্য আজ তার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
দুপুর ১২টা থেকে তার শরবত ভ্যানে বসার কথা। এখন বাজছে দেড়টা। তার মানে বেচাকেনার পুরোটাই মাটি। দুপুরের কড়া রোদে শরবত যতটা চলে, পরে আর ততটা নয়। আজ বাবা নিশ্চয় তার থেকে ডাবল বিক্রি করবে। নীরাদের শরবতের ভ্যান মোট তিনটা। বাকি দুটোও তার বাবার তত্বাবধানে আছে।
তবে নীরা বসে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভূগোলও পরিবেশ বিদ্যা ভবন বরাবর গেটের সামনে। সবসময়ই বাবার দুটো ভ্যান থেকে তার ব্যবসা ভালো হয়। এখন আবার এডমিশন টেস্ট চলছে। ১২টা থেকে দুটোর মধ্যেই প্রায় তিনহাজার টাকার বেচাকেনা করতে পারতো সে।
নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
—আপনার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। ৪০৬ এর এটেনডেন্ট না আপনি? আপনার রোগী যন্ত্রনা করছে। একে নিয়ে বিদেয় হোন এক্ষুনি।
বয়স্ক একজন নার্স এসে প্রায় নাক কুঁচকে কথাটা বললো।
নীরা উঠে দাঁড়ালো। লোকটা আবার কি ঝামেলা বাঁধিয়েছে?
নীরার যেতে হলো না, হাতে গলায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ভদ্রলোক চেঁচাতে চেঁচাতে এগিয়ে আসছেন।
—এটা কোনো পরিবেশ হলো? এরকম করে এরা রোগীদের রাখে! ভালো মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আপনি দেখে দেখে এই হাসপাতালেই আনলেন?
নীরা ভদ্রলোকের হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে বাইরে এলো।
—আমার দু-হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টাকাটা দিন, আমি চলে যাবো। আপনার জন্য আমার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।
—এরকম একটা বাজে হাসপাতালে এনে দু-হাজার টাকা?
বলতে বলতে ভদ্রলোক নীরার হাতে দু-হাজার টাকার দুটো নোট গুঁজে দিলো।
নীরা ঠান্ডা গলায় বললো,
—আপনাকে সাহায্য করতে গিয়ে আমার ব্যবসারও অনেক ক্ষতি হয়েছে। নিজের লস করে আপনাকে এখানে এনে চিকিৎসা করিয়েছি। একটা ধন্যবাদ দিন আমায়।
ভদ্রলোক ধন্যবাদ দিলেন না। নীরা হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে এলো। আজ আর শরবতের ভ্যানে যাবে না সে। এখান থেকে সোজা বাসায়। রক্তারক্তি জামা পাল্টাতে হবে!
#পর্ব_২
নীরাকে দেখামাত্রই লাবণী প্রায় চিৎকার দিয়ে বললো,
—অ্যাক্সিডেন্ট করেছিস! কখন? ও মাই গড! সিরিয়াস কিছু? ওহো নীরা, আমি ভাবলাম তুই ফিরে রান্না করবি। তুই তো অ্যাক্সিডেন্ট করে সারা গায়ে রক্ত মাখিয়ে এসেছিস! দেখি কোথায় কেটেছে?
লাবণী উৎসুক হয়ে নীরার পায়ের দিকে তাকালো।
—আমিই রান্না করবো ভাবী। তুমি বরং ফ্রিজ থেকে একটু মুরগীর মাংস নামিয়ে রাখো।
—তার মানে তুই বেশি একটা আহত হসনি?
নীরা বিরক্ত হয়ে লাবণীর দিকে তাকালো।
—আমি আহত না হওয়ায় তুমি কি খুব দুঃখ পেয়েছো ভাবী?
লাবণী মৃদু হাসলো।
—এত রক্ত কেন?
—একটা মানুষ কাটতে ইচ্ছে হলো, কেটে এলাম! প্রতিদিন শরবতের লেবু কাটি, আজ মানুষ কাটতে ইচ্ছে হলো। মনের ইচ্ছা বলে কথা!
লাবণী হেসে ফেললো।
—মায়ের কি অবস্থা?
—ঘুমুচ্ছেন এখন। ডক্টর বলেছেন, প্রেশার ঠিকই আছে। তবু কেন তিনি এত দুর্বল বুঝতে পারছেন না। কিছু টেস্ট দিয়েছেন।
—আর ছোটভাইয়া?
লাবণী জবাব না দিয়ে নীরার সামনে থেকে সরে গেল।
লাবণী নীরার বড় ভাবী। নীরার বড় ভাই মারা গিয়েছেন তিনবছর হতে চললো। কিন্তু লাবণীকে দেখলে এখনো নতুন বউ বউ লাগে! স্বামীমৃত্যু জনিত গভীর কষ্টের কোনো ছাপই যেন তাঁর চেহারা স্পর্শ করতে পারেনি।
নীরা নিজের ঘরের দিকে যাবার আগে ছোটভাইয়ার ঘরে উঁকি দিলো। শফিক কাঁদছে। মেয়েদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নীরা এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো।
—কিরে ভাইয়া, ভাবী আজও আসলো না?
—না। বলে দিলো ফের যদি আমি তাকে আনতে যাই, আমি নাকি তার মরা মুখ দেখবো।
শফিকের কান্না এবার বিলাপে পরিণত হলো!
—ভাবী বলেছে তো কি হয়েছে? তুমি আবার যাবে, গিয়ে তার পা ধরে বসে থাকবে। আমার মনে হয় প্রতিদিন বিকেলে গিয়ে একঘন্টা করে তাঁর পা ধরে বসে থাকলে একমাসের মধ্যেই ভাবী ফিরে আসতে রাজি হবে।
শফিক চোখ মুছে কৌতুহলী কণ্ঠে বললো,
—সত্যি বলছিস? পা ধরে বসে থাকবো?
—হুঁ! বড়লোকের মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাবু করে বিয়ে করেছো, কষ্ট তো করতেই হবে একটু।
—তোর ভাবী যদি আবার পুলিশে দেয় আমায়?
—দিলে দিবে। একবার তো তোমার জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছেই। অত কষ্ট আর হবে না।
শফিকের চোখ চকচক করে উঠলো!
—তুই সাথে যাবি একবার! তুই চেষ্টা করলে হয়তো আরও ভালো হবে। দাঁড়া, আমি তোর ভাবীকে এক্ষুণি ফোন করে জানাচ্ছি।
শফিক টেবিলের উপর রাখা খেলনা মোবাইলটা কানে দিয়ে ব্যাকুল সুরে ডাকতে লাগলো।
—বর্ষা, শুনছো.. হ্যালো শুনছো বর্ষা… নীরা বললো, আমি যাতে প্রতিদিন গিয়ে তোমার পা ধরে বসে থাকি। হ্যালো…
নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। নীরার এই ছোটভাইয়া যে কিনা ঢাকা মেডিকেলের সেরা ছাত্র ছিল, তাঁর আজ এ অবস্থা!
নীরা দরজার কাছে যেতেই শফিক পিছু ডেকে বললো,
—তুই এমন উল্টো সালোয়ার পরে হাঁটছিস যে? তোকে দেখে আমার খুব লজ্জা লাগছে।
—এটা এখনকার ফ্যাশন ভাইয়া। কেন ভালো লাগছে না?
শফিক হাসলো!
—তুই এত সুন্দর কেন হয়েছিস বলতো নীরা? মাঝে মাঝে তোকে অবিকল মায়ের মতো লাগে।
নীরা জবাব দিলো না। তার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
রান্নাঘরে ঢুকেই নীরা দেখলো, পেঁপে কাটা হচ্ছে। পেঁপে নীরার সবথেকে অপছন্দের সব্জি।
—পেঁপে কেন কাটছো ভাবী? মুরগী রান্না করবো বললাম না।
—ঘরে মুরগী নেই।
—নেই মানে? পরশুদিনই তো আনা হলো।
—বাবা খেতে চাইলেন, তাই গতকাল সকালে রান্না করে খাওয়া হয়ে গেছে। তুই ছিলি না তাই জানতে পারিসনি। এখন পেঁপে ভাজা করে ফেল না!
একটা প্লেট ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে নীরা কঠিন গলায় বললো,
—কিচ্ছু রান্না হবে না আজ এ বাড়িতে।
নীরা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
লাবণী চেঁচামেচি শুরু করেছে।
—-মুরগীর মাংস কি আমি একা খেয়েছি? এতগুলো পেট বাড়িতে। শুধু যেন আমারই মুখ! স্বামী নেই বলে আজ খাবার দাবারের হিসেবও হচ্ছে। যা খাচ্ছি খেটেখুটে খাচ্ছি। এমনি তো না!
ঘরে এসে নীরা তার সবথেকে প্রিয় সবুজ শাড়িটা বের করলো। সে এখন সাজগোজ করবে, তারপর বাড়ির সবাইকে নিয়ে বাইরে খেতে যাবে।
শাড়ি পরে নিচে নামতেই নীরা দেখলো বাবা ফিরেছেন। তবে তাঁর মুখের সামনে বালতি ধরা। তিনি অবিরত বমি করে যাচ্ছেন। তার মানে তিনি আজও মদ খেয়েছেন।
নীরা নিচে এসে বাবার কাঁধে হাত রাখলো। নীরার বাবা সোবহান আহমেদ আর দেরি করলেন না।নীরার দিকে ফিরে তাকালেন এবং গলগল করে বমি করে নীরার শাড়ি ভাসিয়ে দিলেন। নীরা দুঃখিত চোখে বাবার দিকে তাকালো।
—ঘরের ভিতর এত ভালো শাড়ি কেন পরেছিস মা? তার উপর শাড়ি গায়ে ধরতে এলি আমায়। আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি।
—বাইরে যাবো ভাবছিলাম বাবা। তোমাদের সবাইকে নিয়ে বাইরে খেতে যাবো।
বাইরে খাবার কথা শুনে লাবণী বেশ বিরক্ত হলো।
—ঘরে মুরগীর মাংস না থাকলেই বাইরে খেতে হবে? এটা কোন ধরনের ঢং নীরা? তোরা গেলে যা, আমি যাবো না।
বমি মাখা শাড়ি নিয়ে নীরা কলতলার দিকে রওনা হলো। আজ তার হয়েছেটা কি? সকাল থেকেই দিন শুরু হয়েছে খারাপভাবে। প্রথমে রক্ত, তারপর বমি! খারাপ জিনিসটা কি চেইন রিয়েকশানের মতো? একটার পর একটা। আজ তার জন্য একটা বিশেষ দিন অথচ এ বাড়িতে সবাই তা ভুলে গেছে। সকালে সে একটা নতুন হলুদ জামা পরে সেজেগুজে বের হলো। কেউ একটু তাকালোও না। নীরা একমনে গায়ে পানি ঢালতে লাগলো।
রাতে খেতে বসেই নীরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।পেঁপে ভাজার বদলে ঝোল করা হয়েছে, একগাদা পানির মধ্যে ফ্যাকাশে পেঁপের টুকরো ভাসছে।
এই তরকারিই সবাই বেশ মজা করে খাচ্ছে। নীরা ওয়াক বলে একটা বিশ্রী শব্দ করে উঠে দাঁড়ালো।শফিক হেসে ফেললো।
—কিরে বমি পাচ্ছে নীরা বাবার মতো? এই নে বাটি, করে ফেল বমি। সামটাইমস ভমিটিং ইজ ভেরি হেল্পফুল ফর স্টমাক। দ্যাখ হিউম্যান বডিতে সবচাইতে ব্যস্ত আর হার্ডওয়ার্কিং পার্ট হচ্ছে…
নীরা শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
—নো ডাক্তারি ভাইয়া। আই হেইট পেঁপে।
—ডাক্তারি আর কিইবা করতে পারলামরে নীরা। তোর ভাবী সব ভেস্তে দিয়ে দিলো। ফার্স্ট ইয়ারে আমার রেজাল্টের পর বারী স্যর তো আমায় ডেকে নিয়ে…
শফিকের গলা ধরে এসেছে।
নীরা মমতায় আর্দ্র হওয়া গলায় বললো,
—ভাত খাও ভাইয়া। একদম কাঁদবে না। ভাত ঠিকমত না খেলে তো চেহারা শুকিয়ে যাবে। ভাবী রাগ করবে তো!
শফিক সাথে সাথে হাসলো এবং খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
লাবণী কোলের মধ্যে গম ভাজা ভর্তি বাটি নিয় বেশ আয়েশ করে টিভি দেখছে। ফাঁকে ফাঁকে একটা দুটো করে গম মুখে পুড়ছে। নীরার ইচ্ছে করলো সে লাবণীর সাথে বসে একটু গল্প করে।
—মায়ের ঘরে খাবার দিয়েছো ভাবী?
—খাবার দিতে হয়নি। তিনি এসে সবার আগে ডিম ভাজি করে খেয়ে নিয়েছেন।
—খেয়ে নিয়েছেন?
—হুঁ
—ওহ.. আমি শুতে গেলাম। কাল সকাল আটটার আগে কিন্তু ডাকবে না আমায়।
লাবণী নীরার কথা শুনলো না। সে গভীর মনোযোগে সিরিয়ালের হিরোর মায়ের চেঁচামেচি শুনতে ব্যস্ত।
নীরা আবার ডাকলো,
—শুতে গেলাম ভাবী।
নীরার দিকে না তাকিয়েই লাবণী বললো,
—নীরা আমার ঘরের আলমারীটা খুলছে না। লকটা জ্যাম হয়ে গেছে একটু দেখবি?
বিরক্তিতে নীরার গলায় একগাদা থুথু পাকিয়ে এলো।
মনে মনে লাবণীকে একটা কঠিন গালি দিতে গিয়েও নিজেকে সামলালো।
লাবণীর ঘরে আলমারী খুলে নীরা ছোটখাটো একটা শক খেলো। সামনের তাকে সুন্দর একটা হাতের কাজ করা জামা ঝুলানো। বেগুনী কাপড়ে লাল সাদা শেড শুতোয় লতানো ফুলের কাজ। নীরা বিড়বিড় করে বললো, “ওয়াও”
জামায় পিন করে উপরে বেশ বড় কাগজে লিখা,
“শুভ জন্মদিন নীরা
আঠারো হলো তো..
এবার তো বিয়ে দিতে হয় নাকি?”
তামিম প্রায় হুংকারের মত করে বললো,
—এখনো ডিটেক্ট করা যায়নি মানে কি? ওয়ান এন্ড হাফ এন আওয়ার হেজ পাসড। হসপিটালের সিসিটিভি ফুটেজ জুম করুন। যাস্ট জুম ইট!
—স্যার, আর দু-ঘন্টা দিন স্যার। আমি দ্রুত চেষ্টা করছি।
—প্লিজ সেন্ড মি দ্য ভিডিও।
—কিছু ফর্মালিটিস করতে হচ্ছে স্যার।
—তো করুন না। হারি আপ! আই নিড এভরি সিংগেল ডিটেইল এবাউট হার। রাত দশটার মধ্যে সব কালেক্ট করে তাঁর প্রোফাইল রেডী করুন। ইট’স এন ইমার্জেন্সি। বুঝতে পারছেন না এরা কোনোরকম কিছু ঘটালে পুরো ইনসপেকশানটাই মাটি হয়ে যাবে।
তামিম ফোনটা কেটে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো।
রাগে তাঁর সমস্ত গা কাঁপছে। এই কোন হাদারাম অফিসারদের নিয়ে কাজ করে সে? একটা মেয়ের ডিটেইল খুঁজতে এদের দিন পেরিয়ে যায়!
শিট শিট শিট…
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা