#ছত্রিশ_ঝামেলা
#পর্ব_৬
নিশাত ক্লিনিকে পৌঁছে বেশ অবাক হলো। পিয়াসার মাথা ঠুল্লা বান্দর দেখতে অমায়িক শান্ত-ভদ্র চেহারার।লম্বা গড়নের উজ্জ্বল শ্যামলা মানুষ। নাকটা বেশ ধারালো। তার মাথার দুই তৃতীয়াংশ চুল অমসৃণভাবে কামানো। তবুও তাকে দেখতে ভালো লাগছে। গায়ের ধূসর বর্ণের শার্টটা তাকে অদ্ভুতরকম মানিয়েছে৷ ডান কানের গোড়ায় ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি আহত চেহারায় প্যাসেজে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু দূরেই পিয়াসা বসে কাঁদছে।
ভদ্রলোক নিশাতকে দেখেই ছুটে এলেন। অসহায় স্বরে বললেন,
-“আপনার বান্ধবী তো ভয়াবহ কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে।”
-“ভয়াবহ কান্ড পরে শুনবো। আগে আপনি রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে দিন।”
-“কতটাকা ভাড়া?”
-“ভাড়া ঠিক করে উঠিনি। ভাড়া ঠিক করতে আমার বিরক্ত লাগে। আপনি জিজ্ঞেস করে দিয়ে আসুন।”
ভদ্রলোক ভাড়া মিটিয়ে এসে আহত চেহারায় দাঁড়ালেন।
নিশাত মিথ্যেমিথ্যি ঘাড়টা এদিক ওদিক কাত করে ক্লান্তির ভাব করলো।
-“এবার বলুন বান্ধবী কী করেছে?”
-“আমার কান কেটে গেল বলে, সে তার হাত কেটে ফেলেছে। বলছে স্টিচ নেবে না। বলছে এই হাত দিয়ে আমি তোমাকে কেটেছি এই হাত আমি চাই না।”
-“একজন না চাইলে তাকে জোর করা তো ঠিক নয়।”
-“আমি আপনার কাছে হাত জোড় করছি। বেচারিকে আপনি একটু বুঝান। অনেকক্ষণ ধরে রক্ত ঝরছে।”
-“ঝরতে দিন। অতিরিক্ত রক্ত ঝরে গেলে রক্তের তেজও কমে যাবে।”
ঠুল্লা ভদ্রলোক নিশাতের সামনে হাতজোড় করে মাথা নিচু করে ফেললেন।
নিশাত ছুটে গেল। পিয়াসা কাটা হাত ওড়নায় মুড়িয়ে শান্ত চেহারায় বসে আছে। তার চোখে-মুখে একদম কিছু হয়নি ভাব। রক্ত ওড়না ভিজে টপটপ করে মেঝেতে পড়ছে।
নিশাতকে দেখেই পিয়াসা নির্বিকার গলায় বললো,
-“ঠুল্লাটাকে একটা সেলুনে নিয়ে যা তো নিশু। মাথাটা ঠিকঠাক কামিয়ে দে। ঠুল্লার কাল থেকে অফিস আছে। এই আধছিলা মাথা নিয়ে তো অফিস যেতে পারবে না। মানুষ ক্যাশ তুলতে এসে দেখবে ক্যাশিয়ারের মাথার কেশ হন্তদন্ত!”
নিশাত পিয়াসার হাত চেপে ধরলো।
-“আগে চল তোর হাতটা সিলাই দিয়ে আনি।”
-“আমি হাত সেলাই করবো না।”
-“কেন করবি না?”
-“আমার এই হাত অপরাধী। অপরাধীর শাস্তি পাওয়া উচিত।”
-“তুই হাত সেলাই না করলেই তোর অপরাধ কমে যাবে না পিয়া। তুই যদি ভেবে থাকিস এই করে তুই তোর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছিস তাহলে তুই ভুল লজিকে আছিস।”
-“আমি ভুল লজিকে আছি?”
-“অবশ্যই ভুল লজিকে আছিস।”
-“তোর শুদ্ধ লজিক কী বলে? আমার করণীয় কী?”
-“তোর এখন যেটা করতে হবে, নিজে ডাক্তার দেখাতে হবে। তারপর ঠুল্লাটার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে ঠুল্লাটাকে সঙ্গে করে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। তার আগে এই আধছিলা মাথা ঢাকবার জন্য সুন্দর কয়েকটা ক্যাপ কিনে দেওয়া উচিত। যাতে ক্যাপ পরে সে অফিস যেতে পারে। তারপর তোর হাত যখন ভালো হবে, তখন তার পুরো মাথাটা তুই যত্ন করে কামিয়ে দিবি।”
-“আমি ওর মাথা কামাবো?”
-“অবশ্যই কামাবি। যে মন্দ কাজের শুরু তোর হাতে হয়েছে, সে কাজের সমাপ্তিও তুই টানবি। ভালো কাজের দায়িত্ব মাঝপথে অন্যকে দেওয়া যায়, মন্দ কাজের দায়িত্ব আরেকজনকে দেওয়া যায় না। চল… ডাক্তারের কাছে চল।”
পিয়াসা কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলো। তার হাতের তালু কেটেছে। স্টিচ লাগলো পাঁচটা। নিশাত রসিকতার সুরে বললো,
-“প্রায়শ্চিত্ত তো একদম মাপে মাপে করেছিস। একটু বেশিও কাটিসনি। খাপে খাপ, প্রায়শ্চিত্র আর পাপ।
আমি তো রক্ত দেখে ভেবেছিলাম কয়েকমাইল কেটেছিস!”
পিয়াসা এত ভয়ংকর রাগী চোখে তাকালো যে, নিশাত রসিকতা আর বাড়ালো না।
স্টিচ নিয়ে ক্লিনিক থেকে বেরোবার সময় পিয়াসা মৃদুস্বরে বললো,
-“ক্ষমা কিভাবে চাইবো বুঝতে পারছি না।”
-“ব্যান্ডেজ করা হাত দিয়ে পা ধরে বসে পড়্।”
-“পা ধরবো? এত প্রেম তো হয়নি!”
-“যা ধরার মতো প্রেম হয়েছে তা ধর।”
পিয়াসা ঠুল্লা সাহেবের হাত ধরে কাঁদতে থাকলো।
ভদ্রলোক নিশাতের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন।
লজ্জিত গলায় কাচুমাচু হয়ে বললেন,
-“ইশ ইশ! এখানে স্যরি বলার কী আছে? ভুল তো ভুলই। আমি হাঁচি না দিলে তো এই অঘটন ঘটতো না।”
নিশাত ভদ্রলোককে আরো অপ্রস্তুত করে দিলো।
-“শুনুন ঠুল্লাভাই, এর পর যখন আপনি পিয়াসার কাছে মাথা কামাতে বসবেন, হাঁচি দেবার আগে তার কাছে অনুমতি চাইবেন। বিনা অনুমতিতে হাঁচি দেওয়া ঠিক না। এবার কেটেছেন এক কান। তখন কাটবেন আরেকটা। লোকে কী বলবে? দু-কান কাটা!”
পিয়াসা নিশাতকে চোখ রাঙালো। নিশাত চোখ রাঙানোর তোয়াক্কা করলো না। সে হাই তুললো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঠুল্লা সাহেব নিশাতদের রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে বললেন।
নিশাত মানা করলো।
-“আমার কাজ আছে। আমি আপনাদের সাথে যেতে পারবো না। এখানে এসে এমনিতেই আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। ভাড়া দে পিয়া চলে যাই।”
পিয়াসা হতাশ চোখে তাকালো।
-“তুই না গেলে আমি খাবো কী করে? হাতে তো ব্যান্ডেজ।”
-“রেস্টুরেন্টে গেলেই খেতে হবে না কি? না খেয়ে বসে থাকবি৷ তারপরও বেশি খেতে ইচ্ছে করলে, উনাকে বলবি খাইয়ে দেবে। কি আপনি খাওয়াতে পারবেন না?”
ঠুল্লা ভদ্রলোক আরো কাচুমাচু হয়ে পড়লেন। কাচুমাচু ভঙ্গি লুকোতে এদিক ওদিক পিটপিট করে তাকাতে লাগলেন। পিয়াসার মুখ দেখে মনে হলো সে এই মুহূর্তে নিশাতের মাথা ফাটিয়ে দিতে পারলে বেঁচে যেত। নিজের রাগকে চাপা দিতে না পেরে পিয়াসা মুখ ফসকে বললো,
-“জাহিদ আমাকে খাওয়াবে কেন? আমি চামচ দিয়ে খাবো। রেস্টুরেন্টে একগাদা লোকের সামনে আমি ওর হাতে কেন খাবো? আমার কি কোনো সেন্স নেই?”
-“কেন জাহিদের হাতে তোর খেতে সমস্যা কী? নাকি জাহিদ সাহেবের মানচিত্রেও স্থলভাগ বেশি। কি জাহিদ সাহেব, আপনার জলভাগের খবর কী?”
জাহিদ প্রশ্নাতুর চোখে তাকালো। বেচারার দৃষ্টি ঝুলে গেছে। তিনি বিভ্রান্তের মতো তাকিয়ে আছেন।
-“ইয়ে মানে কিসের মানচিত্র?”
-“আশ্চর্য! আপনি পিয়াসার কাছে মাথা কামাতে বসে গেলেন, অথচ ওর মানচিত্র থিওরিই জানেন না?”
-“মানচিত্র থিওরিটা কী?”
-“মানচিত্র থিওরি হলো এমন একটা থিওরি যাতে আপনার মনের সব চিপাচাপা অলিগলির জল এবং স্থল পরীক্ষা করা হবে। জল বেশি হলে আপনি পাশ! স্থল হলে ফেইল। একবার যদি মানচিত্র থিওরিতে আপনি ফেইল করেন, তাহলে মাথা কামিয়েও লাভ হবে না। পিয়াসা যে কোনো সময় আপনাকে ক্রস কেটে চলে যাবে। আপনি তাড়াতাড়ি আপনার মানচিত্র ঠিক করুন।”
জাহিদ সাহেব হতভম্ব হয়ে পিয়াসার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার দৃষ্টি বলছে তিনি ভীষণ ঘাবড়ে গেছেন।
নিশাত ব্যাগ থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট বের করে জাহিদ সাহেবের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
-“আপনি এক কাজ করুন এই বিরিয়ানির প্যাকেট দুটো নিয়ে পিয়াসাকে সাথে করে কোনো চিপায় ঢুকে যান। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে খাওয়াতে মানচিত্র থিওরিটা বুঝে নিন।”
পিয়াসা বিরিয়ানির প্যাকেট নিতে ইশারায় মানা করলো। ঠুল্লা সাহেব ইশারার মানা শুনলেন না।বিরিয়ানির প্যাকেট দুটো আগ্রহ করে নিলেন।
এগিয়ে এসে নিশাতকে রিকশা ঠিক করে দিলেন।
নিশাত দুজনকে ক্লিনিকের গেটে দাঁড় করিয়ে রেখেই চলে এলো। হাতকাটা, কানকাটা দুটো এবার যেদিকে খুশি যাক। তাদের মানচিত্রের জলে ভাসুক।
মা বারবার ফোন করছেন। এত ফোন করার পেছনে কী কাহিনি কে জানে? এই মোবাইল ফোনের তো ভীষণ যন্ত্রণা! যখন তখন যেখানে সেখানে ডাক পড়ছে।মোবাইল ফোন কি তবে নিশাতের ইচ্ছেমতো চলাফেরার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে?
নিশাত ফোনকল ব্যাক করলো।
-“হ্যালো মা, এতবার ফোন করছো কেন? ফোন বাজতে শুনলেই আমার কেমন মাথা দপদপ করে।”
-“মাথা দপদপের অভ্যাস কর। এখন থেকে প্র তিমুহূর্তে মাথা দপদপ নিয়ে তোকে বাঁচতে হবে। শোন্, তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমরা আজই বাসা চেঞ্জ করবো।”
-“আজই?”
-“এডভান্স করে এসেছি। বিকালেই মালপত্র নিয়ে গোয়িং। তুই এলেই গোছগাছ শুরু হবে। হালিম ভাই বাসার চাবি নিয়ে অপেক্ষা করছেন।”
-“মা নতুন বাসায় কটা ঘর?”
-“তিনটা। তোর আর সোহেলের আলাদা আলাদা ঘর। আমি আর তোর দাদী একঘরে। বুড়ো মানুষ! একা তো ছেড়ে দিতে পারি না। সারাক্ষণ কাশছেন। কখন কেশে টেশে বুকে বান লাগিয়ে কী ঘটান! তুই তাড়াতাড়ি আয় তো! ইশ্ এখনো তো সোহেলটাও এলো না।”
রাবেয়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোন কেটে দিলেন।
আনন্দে নিশাতের চোখে পানি এসে গেল। নতুন বাসাতে উঠলেই সে গশাকে চা খেতে ডাকবে।
বলবে, আপনার যেদিন খুশি সেদিন বিকেলে চলে আসবেন। এক বয়াম চা-পাতা চিনি দুধ সব সে আলাদা করে লুকিয়ে রেখে দেবে। মায়ের বিশ্বাস নেই। সবসময় চা-পাতা চিনি শেষ করে বয়াম খালি করে রেখে দেন। দেখা গেল গশা চা খেতে এসেছেন অথচ চা-পাতা নেই। এক টিন নোনটা টোস্টও এনে রাখতে হবে। টোস্ট ছাড়া চা খেলে চা তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।গশা আস্তে ধীরে চায়ে বিস্কিট ভিজিয়ে খাবেন নিশাত বসে বসে মুগ্ধ হয়ে দেখবে।
নিশাত কল্পনায় দেখতে লাগলো, এক ঝিরিঝির বৃষ্টির সন্ধ্যায় শাকিব কালো শার্ট পরে নিশাতদের বাসায় এসেছে। বৃষ্টিতে তার শার্ট ভিজে গেছে। একটু একটু শীত করছে উনার। নিশাত নিজের গা মোছার গামছাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলবে,
-“নিন মাথা মুছুন। বৃষ্টির পানি মাথায় বসে গেলে জ্বর আসে।”
শাকিব তোয়ালেতে মাথা মুছতে মুছতে বলবে,
-“এক ফ্লাস্ক আগুন গরম চা দাও তো নিশাত। সাথে একটা মগ নিয়ে আসবে। আমি এখন এক ফ্লাস্ক চা খাবো।”
নিশাত তখন বিরক্ত হবার ভান করবে।
-“এ কী শাকিব ভাই? যখন তখন চা খেতে চলে আসেন? আমাদের বাড়ি তো চায়ের স্টল না? আমার এখন চা বানাতে ইচ্ছে করছে না। আমি এখন বসে বসে বৃষ্টি দেখবো।”
শাকিব তখন রাগ আর ধমক মেশানো দৃষ্টিতে তাকাবে। কিন্তু তার কণ্ঠে থাকবে স্বাভাবিকতা। শীতল স্বরে বলবে,
-“চা বানাতে ইচ্ছে না করলেও বানাতে হবে। তোমার হাতের চা না খেয়ে আমি উঠছি না নিশাত। এর জন্য যদি আমায় অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হয় করবো।”
নিশাত তখন আরো বিরক্ত হবার ভান করবে৷ আঁচল ঝারতে ঝারতে বলবে,
-“আপনি তো ভালো যন্ত্রণা করেন শাকিব ভাই। সবসময় তো আমি এত চায়ের মেকিং নিয়ে বসে থাকবো না। চলেন আমার সাথে রান্নাঘরে চলেন।
আপনাকে চা বানানো শিখিয়ে দিই। এরপর থেকে চা খেতে ইচ্ছে করলে নিজে বানিয়ে খাবেন!”
নিশাত শাকিবকে নিয়ে রান্নাঘরে যাবে ঠিকই। কিন্তু চা বানানো শেখাবে না। ভুল রেসিপি বলবে। এক কাপ চায়ে এক চামচ হলুদ দিন, আর দু-চামচ মরিচ।
শাকিব তখন খুব রেগে যাবেন।
-“চায়ে হলুদ মরিচ দেবো কেন? চা কি তরকারি?”
নিশাত তখন এর চেয়েও বেশি রেগে বলবে,
-“চা বানাবেন তরকারী
আপনি আমার দরকারি।
চায়ের ভেতর হলুদ-মরিচ
আপনি আমি কাপ-পিরিচ।”
নিশাতের এই ভুলভাল কবিতায় শাকিব স্যারের তখন হাসি পাবে। কিন্তু তিনি তার গাম্ভীর্যের জন্য হাসবেন না। মুখে আরো কাঠিন্য চলে আসবে।
কাঠিন্য লুকাতে তিনি মনোযোগ দিয়ে চায়ে চুমুক দেবেন। ইশ্ মানুষটার চা খাওয়া এত সুন্দর কেন?
রিকশাওয়ালা পেছন ফিরে তাকিয়েছে। তার চোখে উৎকন্ঠা! সে রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
-“আম্মাগো আপনে কানতাছেন কেন? কোনো দুইশ্যংবাদ?”
নিশাত চোখ মুছতে মুছতে বললো,
-“কোনো দুঃসংবাদ নেই। সুসংবাদ চাচা। সুসংবাদ পেয়ে কাঁদছি। আপনি রিকশাটা একটু সাইড করুন।এই সুসংবাদ উদযাপন উপলক্ষে আপনাকে এখন বিরিয়ানি খেতে হবে।”
নিশাত ব্যাগ থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট বের করলো।
-“নিন। ঝটপট খেয়ে ফেলুন।”
রিকশাওয়ালা বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে নিয়ে দোটানায় পড়ে গেলেন।
-“এখনি খামু?”
-“হু, এখনি। প্যাকেটের ভেতরে চামচ দেয়া আছে। হাত ধুতে হবে না। আপনি চামচ দিয়ে খান। আমি অপেক্ষা করি।”
রিকশাওয়ালা বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রাস্তার এক পাশে বসলেন। নিশাত রিকশা থেকে নেমে পাড়লো।
-“আপনি সিটে বসে খান। আমি বরং এই সুযোগে আপনার জন্য এক বোতল পানি কিনে নিয়ে আসি।
আপনি ভাববেন না আমি ভাড়া না দিয়ে চলে যাবো। এই যে আপনার রিক্সায় আমার ব্যাগ রেখে যাচ্ছি।”
নিশাত রিক্সার হ্যান্ডেলে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে টাকা নিয়ে চলে গেল।
রিকশাওয়ালা জমির বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। তার দীর্ঘ দরিদ্রময় দুঃখভর্তি জীবনে এই প্রথম তিনি এমন অপ্রত্যাশিত আনন্দময় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। সেই আনন্দ সামলাতে তার সময় লাগছে। তিনি বারবার বিরিয়ানি মুখে তুলতে যাচ্ছেন হাত কেঁপে উঠে তা এলোমেলো ভাবে পড়ে যাচ্ছে।
নিশাত পানি নিয়ে এসে জমিরের পাশে বসলো।
-“চাচা, আপনি তো ঠিক করে খেতে পারছেন না। বাচ্চাদের মতো ফেলে দিচ্ছেন। এভাবে চামচ ধরলে তো হবে না। ঠিক করে ধরুন। দিন আমার হাতে দিন, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
জমির ঠিক করে খাবার চেষ্টা করতে লাগলো। চামচ দিয়ে খাওয়া তো বড় যন্ত্রণার! তার চোখে বারবার পানি চলে আসছে। নিশাত ফিসফিস করে বললো, বাবা তুমি কি দেখতে পাচ্ছো, আমরা ভালো থাকতে শুরু করেছি।
~চলবে~
#তৃধাআনিকা