ইস্ক,২৩,২৪

0
555

#ইস্ক,২৩,২৪
#সাদিয়া

২৩
ইয়াদের কান্নার বেগ কমবে বৈ বাড়ছে ক্রমশ। গলা ফাটিয়ে কেঁদে যাচ্ছে ছেলেটা আর একটা মেয়ে হয়ে তিতিল ওভাবে কাঁদতে পারছে না। অথচ তার ওড়না চোখের পানিতে ভিজে একাকার। বুকের ভেতরের প্রবলধারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নিশ্বাস টা থেমে থেমে আসছে। ইয়াদের ওমন কান্না বুকের আগুন আর কষ্ট কে দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ করছে। এ দহন বিরহ সওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করে তিতিল দরজায় ধাক্কা দিল। এবার সে পাগলের মতো ডাকছে ইয়াদ কে। তবে লোকটা না দরজা খুলছে আর না নিজের ওই হৃদয়বেদায়ক কান্না থামাচ্ছে। তিতিল এবার জোরে জোরে কান্না করতে করতে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল। ওপাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ তিতিল খেয়াল করল লোকটা কান্না থামিয়ে দিয়েছে। ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসছে না। ভয়ে আতকে উঠল তিতিল। ভেতরটা একদম জড়সড় হয়ে গিয়েছে। এবার দ্বিগুণ ভয় নিয়ে ডাকতে লাগল সে, দরজায় ধাক্কাল। কিন্তু না কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিতিলের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সে কি করবে? আল্লাহ না করুক কোনো অঘটন ঘটুক তাই মনে মনে দোয়া করে যাচ্ছে।

আচমকা ইয়াদ দরজা খুলল। তিতিল চমকে তাকাল লোকটার দিকে। ইয়াদ তখন ডান হাতের সামনের পিঠ দিয়ে নাকের পানি টা মুছে নিয়েছে। তিতিল তাকিয়ে কষ্টে নেতিয়ে গেল পুরো। মানুষটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। চোখ গুলি ফুলেফেঁপে উঠেছে। আর অসম্ভব লাল দেখাচ্ছে। ফর্সা হওয়ায় নাক গাল সব কিছু লাল হয়ে আছে দেখে তিতিল ঠোঁট ভেঙ্গে এবার কেঁদেই দিল।

“এ জন্যেই দরজা খুলতে বলেছো?”

চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ঝাপসা চোখে তাকাল সে। তবে কোনো জবাবহীন চোখের পানি ঝাড়ছিল।

“আমি তোমার চোখের পানি দেখতে পারব না। এখান থেকে যাও। আর তোমার কান্না করারই কি আছে?”

“আপনাকে ডাকছিলাম না আমি? দরজা খুলেন নি, এভাবে কাঁদছিলেন যে?”
কান্না ভরা ধরে আসা গলায় বলল তিতিল কথাটা যা অনেকটা বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছিল।

ইয়াদ বলল “আমি কান্না করলে তোমার কি?”

নাক টেনে তিতিল জবাব দিল “ঘুমাবেন চলুন।”

“তুমি যাও। আমি বারান্দায় থেকে যেতে পারব। আর এমনিতেও এক ঘরে থাকলে তোমার সমস্যা হবে। আমি এটা চাই’ই না। যাও শুয়ে পরো।”

“যাবেন না আপনি?”

“….

“ঠিক আছে আমিও বারান্দায় আছি।”

ইয়াদ তাকাল তিতিলের দিকে। তিতিল চোখ ফিরিয়ে নিয়ে পানি মুছল।
“তিতিল যাও।”

“বলে দিয়েছি।”

“এখানে ঠান্ডা লাগবে তোমার?”

“তাহলে?”

“তিতিল” বলে বেশ জোরে ধমক দিল ইয়াদ এতে যে মেয়েটা খুব একটা ভয় পেয়েছে কি না বুঝা গেল না। তার দিকে আর তিতিল তাকাল না। নিজের মতো করে বারান্দার এক কোণায় এসে দাঁড়িয়ে রইল। রাত বাড়তি। তাই মৃদু হীম হাওয়া বইছে চারিপাশে। ইয়াদ বুঝতে পারল তিতিলের ঠান্ডা লাগছে। নরম গলায় সে তিতিল কে বলল “তিতিল প্লিজ ঘরে যাও দেখো ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার।” তার কথাতে তিতিল কোনো উত্তর দিল না। ইয়াদ বুঝল এভাবে কাজ হবে না। তাই আর কিছু না বলে সে তিতিল কে কোলে তুলে নিল। তিতিল বেশ কড়া গলায় বলল “আমার সাথে কোনো রকম প্রতারণ করতে যাবেন না। আপনি ঘরে না গেলে আমিও ঢুকব না। আমার ঠান্ডা লাগলে আপনার কি?” ইয়াদ তিতিলের কথায় জবাব দিল না। শক্ত মুখের আঁচে সে তিতিল কে নিয়ে ঘরে গেল।

নামিয়ে দিয়ে বলল “ঘুমাও।”

“না।”

“যাও ঘুমাও গিয়ে আমি ফ্লোরে থেকে নিব। ঘরেই আছি। এবার যাও।”

“বিছানা থাকতে নিচে কেন থাকতে হবে?”

“তুমি কি বলতে চাইছো আমি তোমার সাথে এক বিছানায় থাকব? শরীর ঘুমের মাঝে লাগলেই তো..” কথাটা থামিয়ে দিয়ে আবার বলল “যাও ঘুমাও গিয়ে।”

“আজ বিছানাতেই থাকবেন। মাঝে না হয় কো কোলবালিশ দিয়ে দিবো।”

তিতিলের কথা শুনে ইয়াদ তাচ্ছিল্যের সুরে হাসল। তিতিল সেই হাসি না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নিল। ইয়াদ আর কথা না বাড়িয়ে বিছানার এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

—-
ঘুম ভাঙ্গল জানালা দিয়ে আসা সূর্যের কিরণে। কাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে ছিল বলতে পারে না। সারারাতে টের পর্যন্ত পাওয়া গেল না। এক টানা এক ঘুম। রাত কিভাবে ঘুমে পাড় হয়ে গেল তা বুঝা গেল না। রাতে কান্নার ফলে বোধহয় এমন হয়ে থাকবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানালার বাহিরে তাকাল ইয়াদ। শরীরটা কেমন ম্যাচম্যাচ করছে। মাথাটাও বেশ ধরা। হঠাৎ তিতিল রুমে এলো। ইয়াদ একবার তিতিলের দিকে তাকিয়ে আবার জানালার বাহিরে মুখ ফিরাল। তিতিল কেমন করে যে তাকাল তার দিকে পরে মুখে হাসি প্রসারিত করে হাতে কফি নিয়ে এগিয়ে গেল ইয়াদের দিকে। সেটা বিছানার পাশের টিটেবিলে রেখে বলল,
“খেয়ে নিলে মাথা ধরাটা কমে যাবে।”
ইয়াদ এবার তাকাল তিতিলের দিকে। শুধু “হু” শব্দ তুলল মুখ দিয়ে।

“কফি টা ঠান্ডা করে ফেলছেন।” কথাটা শুনে ইয়াদ সেটা হাতে তুলে নেয়। “কষ্ট করার দরকার ছিল না” বলে দম নেয়। তিতিলের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে জানালার বাহিরে তাকিয়েই কফির মগে চুমুক লাগায়। তিতিল বুঝতে পারছে লোকটা তাকে কালকের কথার কারণেই কঠিন ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। তিতিলের কেমন যেন কষ্টে হতে লাগল বলে সে উঠে গেল। দরজার কাছে আসতেই ইয়াদ পিছন থেকে বলল “রেডি থেকো একটু পর আমরা বের হয়ে যাচ্ছি।” কপাল কুঁচকে তিতিল ইয়াদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল “কোথায়?” ইয়াদও সোজাসুজি জবাব দিল “বাসায়।”

তিতিল কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। বের হওয়ার পূর্বে দরজায় দাঁড়িয়ে বলল “আমি আজ যাবো না।” ইয়াদ তাকালে দেখতে পেল তিতিল নেই। আনমনে ইয়াদের বাহিরে তাকিয়ে কফির মগ কে আপন করে নিল।

দুপুরের রান্নার তোরজোড় দেখে ইয়াদ বেশ বুঝতে পারল মেয়েটার যাওয়ার নিয়ত নেই। তবুও তলিয়ে দেখতে বলল “এত রান্না করার কি আছে? যাওয়ার সময় রাস্তায় খেয়ে নিতাম।” তিতিল তরকারি নেড়ে একবার তাকিয়ে আবার ফিরে গেল জবাবহীন।

“তিতিল বললাম তো রেডি হয়ে নাও।”

“আপনার যাওয়ার খুব ইচ্ছা?”

“থাকার তো কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না।”

“তবে চলে যান।”

“আর তুমি?”

“আমি এখন যাবো না। দেরি আছে।”

“কি চাইছো তিতিল?”

“এই যে থাকব এখানে।”

ইয়াদ আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে ল্যাপটপ ছেড়ে কাজে মন দিল।

—-
আকাশ টা আজ ভালো নেই। রোদের দেখা নেই যে! মন খারাপের আভাস দেখা যাচ্ছে। ইয়াদের মতো আকাশেরও বুঝি আজ মন ভালো নেই। বারান্দার এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ। ভবিষ্যৎ কি হবে সে ভেবে পায় না। তিতিল কে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব প্রায়। সে কি করে জানত এই মেয়েটার প্রেমেই একদিন হুমড়ি খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়তে হবে!

ইয়াদের ভাবনা কেটে গেল চোখের সামনে কফির মগ দেখে। পিছন ফিরতেই দেখতে পেল তিতিল আর একটু কাছে এসে তার দিকে মগ এগিয়ে দিয়েছে। ইয়াদ নির্বাক ভঙ্গিতে কফির মগে একবার তাকিয়ে তিতিলের চোখে চোখ রাখল। তিতিল একটু নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা মগটা মৃদু নাড়িয়ে বলল “কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।” ইয়াদ চুপচাপ কফির মগটা হাতে তুলে নিল। তাকিয়ে দেখতে পেল তিতিল তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিজের কফিতে চুমুক দিয়েছে। ইয়াদ এমন মাতালো দৃশ্য দেখে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল “কষ্ট করার কি দরকার ছিল?” তিতিল কথার প্রক্ষিতে তাকাল ইয়াদের দিকে। লোকটা তখন মনমরা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিল ইয়াদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুচকি হাসল। হঠাৎ বলল “আকাশে আজ মনখরাপের ভীড় জমেছে।” ইয়াদ তখন নির্লিপ্ত। ধোঁয়া উঠা গরম মগে ঠোঁট স্পর্শ করে উদাস মনে বিড়বিড় করল “ঠিক যেন আমারই অনুরূপ।”

আরো কিছুক্ষণ নীরবতা চলল সেখানে। এর মাঝে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করল। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামতে পারে। তিতিলের মুখে হাসির দেখা মিলল। ইয়াদ মগে শেষ চুমুক দিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে দেয়। তিতিল বলল,
“বৃষ্টি নামতে পারে।”

“….

“গোসল করবেন?”

“কি” বলে তাকাল ইয়াদ তার দিকে।

“বললাম বৃষ্টিতে গোসল করবেন?”

“একদম না। এই বেলায় ঠান্ডা লাগতে পারে।”

“আমি অনেকদিন বৃষ্টিতে গোসল করি না।”

ইয়াদ তাকাল তিতিলের দিকে। এর মাঝে ঝপঝপ করে টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই ইয়াদ খেয়াল করল মেয়েটার চোখে খুশিতে ঝলঝল করে উঠল। তিতিল ঠিক তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইয়াদ এমন খুশিতে খুশি হয়ে বলতে গেল “ঠিক আছে” তার আগেই মেয়েটা খানিক হেসে তার হাত ধরে বারান্দা পেড়িয়ে বাহিরে পৌঁছে গেল। আকাশ থেকে ঝপঝপ করে নামা পানিতে মুহূর্তেই দুজন ভিজে গেল। তিতিল মুচকি হেসে আকাশে মুখ তুলে চাওয়ার চেষ্টা করল। তবে বৃষ্টির পানির ভারে তাকাতে পারছিল না। মেয়েটার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ইয়াদ ধ্যান ধরা অটল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বৃষ্টির পানিতে মেলে দিয়েছে নিজের হাত। আনন্দে সেই পানি নিজের গায়ে মেখে নেওয়ার অভিপ্রায়ে মেয়েটা যেন নাচতে লাগল। এমন হাসিখুশি তিতিল কে দেখে ইয়াদের মনে শতশত আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। ইয়াদ বেশ খেয়াল করল তিতিল লাল একটা থ্রীপিজ পরেছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে একদম লেপ্টে আছে শরীরে। ইয়াদের মাথা ধরে আছে। এই সময়ে নিজেকে আটকে রাখা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার জন্যে। কারণ সে অনুভূতির সাগরে ভাসতে ভাসতে শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যার পরিনতি ভয়াবহ! নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে দাঁত কিটে দাঁড়াল সে। বৃষ্টির পানি চুল দিয়ে বেয়ে টপটপ করে চোখের উপর পড়ছিল আর প্রেয়সী কে মোহনীয় রূপে উপস্থাপন করছিল। ইয়াদ বুঝতে পারছে এভাবে আর নিজেকে প্রিয়তমার থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ বৃষ্টির হীম শীতল শরীরে প্রিয়তমার উষ্ণতা খুঁজছে। উথাল পাগলামো মন বারবার বলছে “ভালোবাসা কে আজ চাই। পূর্ণ ভালবাসায় চাই।”

চলবে….

#ইস্ক
#সাদিয়া

২৪
টিপটিপানো বৃষ্টি সন্ধ্যার পরিবেশটা কে আরো মাতাল করে তুলছে ইয়াদের জন্যে। সামনে প্রেয়সী বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। শরীর ভিজে এঁটে আছে কাপড়। স্বীয় স্ত্রী কে এমন রূপে দেখেও নিজেকে সংযত রাখা কোনো স্বামীর কর্ম হয়। এটা ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার মতো। ইয়াদের চোখ তিতিলের দিকে। লাল জামার ভেতরের ক্রীম কালার বিকিনি একদম ফুটে উঠছে যা ইয়াদের মন কে আরো দ্বিগুণ হারে উথাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বুকে। ইয়াদ চোখ সরিয়ে নিল। শরীরের শিরা হীম হয়ে আসছে। ভেতরের পুরুষত্ব বারবার তাকে কিছু ইঙ্গিত করছে। ইয়াদ নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠছে না। ভেতরের এই দাবানলের চাঁপে সে ভয়ংকর কিছু একটা করে ফেলতে পারে এই মুহূর্তে। নিশ্বাস তার আটকে আসছে। ছেলেটা বেশ করে বুঝতে পারছে এখানে আর এক সেকেন্ড থাকলে সে যে কিছু করে ফেলতে পারে। যেটা সে চাইছে না। ইয়াদ মনস্থির করল চলে যাবে। উত্তপ্ত এক লম্বা শ্বাস ফেলে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই মেয়েটা তার হাত ধরে কাঁপা গলায় বলল “চলে যাচ্ছেন কেন? আর একটু থাকুন।” তিতিলের স্পর্শে শিউরে উঠে ইয়াদ চোখ বুজে ফেলল। তিতিল তখনো তার হাত ছাড়েনি। তপ্ত স্পর্শ পেয়ে ইয়াদ আর মুহূর্ত নষ্ট না করে উল্টো দিকে ফিরেই তিতিল কে ঝাপটে ধরে বুকের ভেতর। আকস্মিক কান্ডে তিতিল হকচকিয়ে যায় চোখ বড় করে। তিতিল বুঝতে পারছে লোকটা তাকে আরেক ধাপ নিজের সাথে চেঁপে ধরেছে। লোকটা যে কাঁপছে তা টের পেতে সময় লাগেনি তার। লোকটার উষ্ণ বুক পেয়ে তিতিল পরম শান্তিতে চোখ বুজে ফেলে। ওই উষ্ণ বুকের ধুকবুক করা শব্দ তিতিল কে মাতিয়ে তুলছিল এক অন্যরকম পরিবেশে। সেই বুক সাগরে যে বেসামাল ভাবে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তা তিতিলের অজানা নয়। আলতো হাতে তিতিল নিজেও যেন ইয়াদের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে।

অনেকটা সময় তিতিল কে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে ইয়াদ তার হাতের বাঁধন ঢিলে করে আনল। তিতিল সেই উষ্ণতার রেশ লেশমাত্র কেটে নিজের হাত নামিয়ে নিল লোকটার বুঝার আগে। চোখ খুলে তিতিল নিচের দিকে নুয়ে রয়েছে রক্তজবার মতো। ইয়াদ নিজের কোমল হাতে আলতো করে তিতিলের গালের উপর রাখল। তিতিল ত্রাস গতিতে তাকাল লোকটার চোখের দিকে। সে লোকটার চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করল। অপলক সে দুই চোখের ভাষা বুঝার অযথা চেষ্টা করতে লাগল। ইয়াদ আস্তে করে নিজের মুখ এগিয়ে দিল। তিতিলের নিশ্বাসের ঘনত্ব তখন বাড়তে থাকে। ওই উষ্ণ নিশ্বাস টুকই ইয়াদ কে মাতিয়ে তুলার জন্যে যথেষ্ট ছিল। ইয়াদ একটুএকটু করে তার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তিতিলের ভেতরও তখন ঢেউ উদিত হয়। ভেতরে কিছু একটা প্রবল ভাবে ছুটাছুটি করছে তার। চোখের পাতা দুটো বন্ধ করে সে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে। ভেতরে আজ তার ঝড় উঠেছে। ইয়াদ নামক ভালোবাসার ঝড়!

নিজের মুখের উপর লোকটার গরম নিশ্বাস চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে তিতিল। লোকটার গা থেকে মাতাল করা একটা সৌরভ ভেসে আসছে। তিতিল নাক টেনে সেই মাতাল করা ঘ্রাণে তাল মিলিয়ে মাতলামো করছে। ইয়াদ তার সাথে কি করতে চাইছে সে বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু আজ যে সে লোকটাকে বাঁধা দিতে চায় না। যে চায় লোকটা একেবারে তার সাথে মিশে যাক। তার প্রতিটা নিশ্বাসে স্পর্শে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাক। সে নিজেও চায় ইয়াদের অস্তিত্ব। তার স্পর্শ। তাই আজ বাঁধা নয়। সে মানুষ টা কে বাঁধা দিতে চায় না। যা মন চায় করুক না হয়। সে নিজেও লোকটার ওই গরম নিশ্বাসে মাতাল হতে চায় আরো বেশি করে।

কিন্তু তার সব ধারনায় মানুষটা ভুল প্রমাণ করে কপালে প্রথম উষ্ণ ভিজে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। ওই ঠোঁটের স্পর্শ বেশ সময় ছিল। তারপর ধরে আসা আবেগ মিশানো করুণ কন্ঠে বলল “আমার ভালোবাসা পবিত্র। তুমিও আমার পবিত্র সম্পদ। কিন্তু কোনো মোহে পড়ে আমি এই পবিত্র ভালোবাসা কে অপবিত্র নামক শব্দের সাথে মিলিয়ে দিতে পারি না। আমি চাই আমার প্রতিটা কোমল স্পর্শ তুমি মন থেকে উপলব্ধি করো। আমার নিশ্বাস গুলি তুমি ভালোবেসে মেখে নাও নিজের শরীরে। উদ্বিগ্ন হয়ে নিজ থেকে মিশে যেতে চাইবে তুমি। মনের সায়, ভালোবাসা, তৃপ্তি,পরম সুখ সব থাকবে যেখানে। অপেক্ষা করব। আমি সেই দিনের জন্যে অপেক্ষা করব তিতিল। সেই দিন তোমাকে সমস্ত সুখ এনে দিব। নিজের খুব গভীরে টেনে নিব তোমায় তিতিল।”

ইয়াদ নিজের কথা শেষ করে তিতিলের গাল ছেড়ে দিল। জায়গা ত্যাগ করতে চাইলে তিতিল আবার তার হাত ধরে নিজের দিকে ফিরাল। মেয়েটার চোখে আজ রাগ স্পষ্ট। ইয়াদ বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার এই রাগের কি কারণ? কপাল কুঁচকে সে তিতিলের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মেয়েটার হাত পা সাদা হওয়ার পথে। ইয়াদ নিচু গলায় বলল,
“তিতিল এবার উঠে পড়ো জ্বর আসবে।”
ইয়াদের কথা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তিতিল এমন এক কান্ড করে বসল যা ইয়াদ কল্পনাও করতে পারে নি। এখনো সবটা তার কাছে স্বপ্ন কিংবা ভ্রম লাগছে। এটা সম্ভব হতে পারে ইয়াদ বিশ্বাস করতে পারছে না। স্তব্ধ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিল পা উঁচু করে করে নিজের দুই হাত ঘাড়ের পিছনে দিয়ে টেনে এনে ইয়াদের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। ইয়াদ বিশ্বাস করতে পারছে না মেয়েটা এখনো তার ঠোঁট দখল করে আছে। সবটা কেমন তার কাছে ধোঁয়াশা। অনেকটা সময় অতিক্রম হওয়ার পর তিতিল তাকে ছেড়ে দিল। বেশ কড়া গলায় বলল “এরপর থেকে যদি আর কোনো দিন তিতিল কে এড়িয়ে যাবেন তাহলে বুঝবেন পরে। এতদিন কিছু বলি নি কিন্তু এখন থেকে আর চুপ থাকব না। আপনার যা যখন ইচ্ছা হবে তাই হবে এমনটা নয়।” বেশ রাগেই কথা গুলি বলে তিতিল ভিজে কাপড় নিয়ে চলে গেল ভেতরে। ইয়াদ তখনো ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আকস্মিক ঘটনা সত্যি কিনা ভাবতেই ঠোঁট জ্বলে উঠল। ইয়াদ আনমনে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতেই আতকে উঠল। অনুভব করল ঠোঁট ফুলে গেছে। তারমানে আচমকা হওয়া ঝড়টা তবে সত্য। কিভেবে যেন ইয়াদ ঠোঁট স্পর্শ করে স্মিত হাসল।

—-
কাপড় চেঞ্জ করে ইয়াদ আর তিতিলের সামনে যায় না। জানেও না মেয়েটা ঘরে একা কি করছে। এখন তার যেতে ইচ্ছা লাগছে না। সে চিন্তায় মগ্ন। বারান্দায় বসে অন্ধকার রাত দেখছে। হঠাৎ ভেতর থেকে বিকট শব্দ আসতেই চমকে গেল ছেলেটা। ভেতর আত্মা কেঁপে উঠল যেন অজানা ভয়ে। ভ্রু কুঁচকে দরজায় তাকিয়ে না থেকে তড়িৎ গতিতে ভেতরে প্রবেশ করল। স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল সে। তিতিল কে কেমন রক্ত ছাড়া মানুষ লাগছে। তাছাড়া ইষৎ কাঁপছেও মেয়েটা। ইয়াদ উন্মাদের মতো গিয়ে ঝাপটে ধরল তিতিল কে। তিতিল কিছুক্ষণ শান্ত টি থেকে পরক্ষণেই হাতাহাতি শুরু করল। এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ইয়াদ কে সরিয়ে নিয়ে বলল “একদম ছুবিনা আমায়। যা সর।” তিতিলের এহেন কথায় বোকা বনে গেল ইয়াদ। হা করে তাকিয়ে রয়েছে তিতিলের দিকে। আপনি থেকে সোজা তুই’এ চলে গেল মেয়েটা? বিষয়টা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ছেলেটার। সে নিবার্ক। তিতিল আবার লেগে আসা গলায় বলল “তুই যা আমায় কত কষ্ট দিছোস তুই জানোস? তোর তোর সাথে আমার আড়ি। কথা বলব না কোনো। কাছে আসলে না একদম দা দিয়ে দিব এক কোপ।”

ইয়াদ বুঝতে পারছে না তিতিলের ব্যবহার এমন পরিবর্তনের কারণ। শুকনো ঢোক গিলে সে শুধালো,
“তিতিল কি হয়েছে তোমার?”

“তোর কি?”

“তিতিল তুই তাকারি করছো কেন?”

“যাবি নাকি দা আনব।”

“তিতিল এদিকে এসো। শান্ত হোও।”

“আপদ যা তো।” বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল তিতিল।

ইয়াদ বুঝল ওকে কথায় কাজ হবে না কৌশলে তিতিল কে নিজের কাছে আনতেই আতকে উঠল সে। আগে তাড়াহুড়ায় খেয়াল হয় নি তিতিলের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে একেবারে। কি মহা বিপদ জ্বরে ঘোরে তিতিলের এমন পাগলামি সামলাবে কি করে!

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here