#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:২০
কলমে: ইয়াসমিন
পৃথিবীতে নানা রঙের মানুষের বসবাস। ভালো খারাপ সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। মোটকথা মানিয়ে নিয়ে হয়। পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে মানুষ পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। একে অন্যকে সাহায্য করতে ঐক্যবদ্ধ হয় এভাবেই হয়তো পরিবার এমনিই রাষ্ট্র গড়ে উঠে। এই নানা বর্ণের মানুষের মধ্যে শামীল তালুকদার একটু অন্য ধাচের মানুষ। নিজের যথেষ্ট টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও পরের অর্থ সম্পত্তি দেখে উনার লোভ হয়। হিংসা হয় সেটা পাথর উপলব্ধি করতে পারে। বাবার এহেন চরিত্রের জন্য ও সর্বদা তাঁকে এড়িয়ে চলতে চেয়েছে।বহুদিন থেকে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিয়েছে। বেরিয়ে এসেছিল রাজমহল ছেড়ে ছোট একটা কোয়ার্টারে। যেটা কোম্পানি থেকে ওকে দিয়েছিল। এভাবেই বছর খানেক কেটেছে তারপর হঠাৎ বাবার বয়স আর উনার আবেগপূর্ণ কথাবার্তার জালে নিজেকে জড়িয়ে এখন অবস্থা ওর টাইট। বাংলাদেশের এসে ভেবেছিল একটু স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। ওর পেছনে ভদ্রলোক শতশত চোখ লাগিয়ে রেখেছে। দম ছাড়াও টাইম দিচ্ছে না। কিন্তু সকাল সকাল যে খবরটা শুনলো তাঁতে ওর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। লোকটা স্ত্রী কন্যা নিয়ে বাংলাদেশের আসছে। এখন ফ্লাইটের মধ্যেই আছেন। বিকেলের আগে পৌঁছে যাবেন।কেনো আসছে কি জন্য আসছে ওর জানা নেই। বেলাল হয়তো কিছু জানে কিন্তু বলছে না শুধু মিটিমিটি হাঁসছে। হাসির মতো কি এমন হয়েছে কে জানে। পাথর হাতের ফাইলটা ঘুড়িয়ে সামনে ইলেকট্রিক খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকা বেলালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
> চাকরিটা কি ছাড়তে চাইছো বেলাল?
পাথরের বলা কথাটা ভুমিকম্পের মতো বেলালের মস্তিষ্ক নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। বেচারার মুখটা করুন হয়ে উঠলো। চোখ দুটো বিস্ফোরিত করে ঝটপট উত্তর দিলো,
> এভাবে কেনো বলছেন স্যার? আমার কাজের কি কোনো ত্রুটি আছে? আমি আপনাদের উভয়ের মন রক্ষা করে চলেছি। তবুও কেনো এমন বলছেন?
পাথর ওকে পাত্তা দিলো না। হাতে ফাইল রেখে পা নাচিয়ে বলল,
> তুমি আমার মন রক্ষা কোথায় করেছো বেলাল? তোমার নজর সর্বদা আমার বাবার দিকে। ভদ্রলোকের কথা তুমি যেভাবে পালন করো হয়তো এভাবে তোমার নিজের স্ত্রীর কথাও মানো না। এভাবে তো চলবে না বেলাল।যেকোনো একজনকে তোমার বেছে নিতে হবে। সিদ্ধান্ত তোমার। হয় তুমি আমার কথা শুনবে নয়তো ড্যাডের।
বলালের এবার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত গান “বিধি তুমি বলে দাও আমি কার?” গানটা হয়তো এতদিনে মানে খুঁজে পেয়েছে। কি ভয়ংকর সিচুয়েশন। এই মূহুর্তে পালিয়ে যেতে পারলে শাস্তি হতো। একজন দূরে বসে কলকাঠি নাড়ছে আরেকজন কাছে বসে। বেলাল কাঁদো কাঁদো মুখ করে উত্তর দিলো,
> স্যার এভাবে বলবেন না। পেটের দায়ে পরিবার রেখে বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকি। চাকরিটা স্বাদ করে করছি না। আপনি যদি না বুঝেন তবে কে বুঝবে আমার দুঃখ। বড় স্যার জানেন তো কেমন খিটখিটে টাইপের? যদি আমি আপনার খবরাখবর না বলি তাহলে ঠিকই উনি লোক দিয়ে শুনে নিবেন। তখন আমার উপরে উনি ট্রেন চালিয়ে দিবেন স্যার। তাছাড়া আপনার খবরাখবর আমি ছাড়াও এখানকার ম্যানেজার রবিন সাহেব আপনার বাবাকে ঠিকই বলে দেন। এখন আমি কি করবো বলুন?
পাথর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। বেলালের কথা ফেলে দেওয়া যায় না। তবুও মুখটা কঠিন করে বলল,
> আচ্ছা কাঁদতে হবে না। বলতে তো পারবে সেই ভদ্রলোক এখানে কোন মতলবে আসছেন? লাভ ছাড়া তো উনি নড়াচড়েও বসেন না সেখানে একেবারে জার্মান থেকে বাংলাদেশ আসছেন। ভাবতে পারছি না। বিষয়টা বলো।
বেলাল ভয়ে দুমড়ে গেলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যিটা খুব তিক্ততা মেশানো। কোনো বাবা লোভের জন্য এরকম করতে পারে বলে ওর ধারণা ছিল না। পাথরের জন্য ওর বেশ মায়া হচ্ছে। বেলালকে চুপচাপ দেখে পাথর ওকে ধমক দিয়ে অর্ডার দিলো সবটা বলার জন্য। বেলাল নিরুপায় হয়ে মুখ খুলল,
> স্যার আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সুলতান জুবায়ের ফারুকীর মেয়ের সঙ্গে। শুনেছি মেয়েটা এখনো নাবালিকা। বয়স সবে ষোলো তবে চেহারা নাকি আগুন সুন্দরী। সুলতান পরিবারের যা কিছু আছে সবটার মালিক ওই মেয়েটা। আপনার বাবা চাইছেন আপনি ওই বাড়ির জামাই হয়ে সবটা দখল করেন। তবে স্যার মেয়েটা কিন্তু বধির বোবা।
পাথর যেনো পাথরে পরিণত হলো। ওর অনুমতি ছাড়া বাবা কিভাবে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারলো? তাছাড়া শুধুমাত্র টাকার জন্য একটা বোবা মেয়েকে ওর ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছে। হোক সুন্দরী হোক আসমানের পরি তাতে ওর কি? যার সঙ্গে মনের ভাব ভালোবাসার কথা সেয়ার করতেই পারবে না তার সঙ্গে কিসের সংসার? এটা কখনও সম্ভব নয়। দরকার হলে পাথর পালিয়ে যাবে এমনকি বাবার বিপক্ষে যাবে তবুও কোনো বোবা মেয়ের সঙ্গে নিজের জীবন জড়াতে পারবে না। ওকি এতোটাই ফেলনা যে শর্ত মেনে টাকা নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বউ নিয়ে ঘর করবে? সঙ্গীর জন্য কতটা ভালোবাসা জমা আছে হৃদয়ের কোণে সেগুলো প্রকাশ না করলে যে সেই অনুভূতিগুলো প্রতিনিয়ত গুমড়ে গুমড়ে কাঁদবে। তা সহ্য করার ক্ষমতা পাথরের নেই। কথাগুলো ভেবে ও হাতের মুঠো শক্ত করে টেবিলে ঘুসি বসিয়ে দিলো। বেলাল ভয়ে চমকে উঠে পিছিয়ে গিয়ে বলল,
> স্যার শান্ত হোন জাষ্ট কথাবার্তা চলছে এখনো কিছু ঠিক হয়নি। বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ে হয়না।। তাছাড়া শুনেছি সুলতান পরিবারের খুব নামডাক আর প্রভাত প্রতিপত্তি। ওরা বিয়ের আগে খোঁজ না নিয়ে বিয়ে দিবে না। তখন আপনি নয়তো ভেঙে দিয়েন বিয়ে? রাগ করলে ঝামেলা বাড়ে তাই বুদ্ধি দিয়ে চলতে হয়।
পাথর ওর কথার উত্তর করলো না। থপ করে চেয়ারে বসে হুকুম দিলো,
> একা থাকতে চাই। যতক্ষণ না বলবো কক্ষের দরজায় যেনো কেউ নক না করে। বেরিয়ে যাও।
বেলাল ঢোক গিলে ফাইল হাতে বেরিয়ে আসল। স্যারের জন্য ওর ভীষণ খারাপ লাগছে। এতো সুন্দর একটা মানুষের জীবন কতটা বিষাদের। দূর থেকে সবাইকে কেমন সুখী সুখী মনে হয় কিন্তু কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় সে কতটা অসুখি জীবনে।
***************
থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে জুবায়ের। কিছুক্ষণ আগে আহিরকে দেখতে গিয়েছিল। ছেলেটাকে কৌশলে মা*র্ডার করা হয়েছে কিন্তু কে এমন করতে পারে? শরীরে মা*র বা কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। মেঝেতে পড়ে ছিল শরী*র। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে লেখা ধাঁধা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ক্লু নেই এটা সত্যি খু*ন কিনা। খু*নি ইচ্ছা করলে এই একটা ক্লু না ছেড়ে যেতে পারতো কিন্তু যায়নি। ছেলেটার পকেটে ছিল গোলক ভর্তি এ*সি*ড। যেটা কাউকে ছুড়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার উপযোগী। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। জুবায়েরকে চিন্তিত দেখে অধরা এগিয়ে আসলো। ও এতোক্ষন ঐশ্বর্যের কক্ষে ছিল। আদি ওর সঙ্গে কথা বলছে না দেখে মেয়েটা কান্নাকাটি করছিল তাই ওকে শান্ত করতে। ঘরে ফিরে জুবায়েরকে এভাবে ভাবতে দেখে ও প্রশ্ন করলো,
> কোনো সমস্যা?
জুবায়ের হাসলো। কিছু বলার মতো খুঁজে না পেয়ে বলল,
> অনেক কিছু হয়েছে। বর বাড়িতে ফিরলে তার সেবাযত্ন করতে হয় জানোনা? চা কফি কিছু দাও সকাল থেকে এতো ঝামেলা চলছে খাওয়া হয়নি।
অধরা ফ্লাক্স থেকে কফি ঢালতে ঢালতে মিষ্টি করে হাসলো। লোকটা ফিরে এসেই কফি চাইবে এটা ওর জানা ছিল তাই আগে তৈরী করে রেখেছে। খাবার তৈরী করা আছে কাজের মেয়েকে ডেকে গরম করে রুমে পৌঁছে দিতে বলেছে। এই বাড়িতে পূর্বেকার মতোই নিয়ম আছে। বাড়ির বউ মেয়েদের কাজকর্ম করতে যাওয়া লাগে না। অধরা এসব মানে না। কারো উপরে ভরসা নেই। নিজে পরের রান্না খেলেও স্বামী আর মেয়েদের জন্য নিজে রান্না করে। ওর অভ্যাস সম্পর্কে সবাই জানে তাই কেউ আর ওকে এটা নিয়ে কিছু বলেনা। তাছাড়া এই বাড়িতে কার এতো সময় আছে যে বউকে নিয়ে কুট কাচারী করবে। জুবায়েরের মম সেতো কক্ষ থেকে তেমন বের হয়না। বই নিয়ে বসে থাকে নয়তো টিভি দেখে। ওর বোনেরা জার্মানি ফিরে গেছে দুদিন আগে। ফিরবে দলবল নিয়ে। কার সঙ্গে না কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বরেরা বছরে একবার শশুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসে। তারপর টানা একমাস বা তার অধিক সময় শশুর বাড়ির অন্ন ধ্বংস করে তবে দম। শুধু অন্ন ধ্বংস না দৃষ্টির অগোচরে আরও কি কি করে আল্লাহ মালুম। অধরা সেসব চিন্তা করতেও পারে না। কবে যে এইসবের শেষ হবে কে জানে। আল্লাহ রহমত কি কখনও এই পরিবারের উপরে পড়বে না? কথাটা ভেবে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল অধরা। জুবায়ের ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে উঠে গিয়ে কফি সমেতো অধরাকে কাছে টেনে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। কফি টলকে গিয়েও পড়লো না। অধরা আতকে উঠে রাগি দৃষ্টিয়ে তাঁকিয়ে বলল,
> এখুনি পুড়ে যেতাম এমন অধৈর্য কেনো আপনি? বাচ্চাদের মতো অশান্ত হয়ে থাকেন সব সময়।
জুবায়ের আয়েশ করে কফির কাফে মুখ ডুবিয়ে স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত। অধরার কথা কানে নিলো না তবে ঢোক গিলে বলল,
> যখন ছিলাম না তখন মিস করতে না? এমনিতেই আমি খারাপ বর ছিলাম তোমার। কত কত অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে বাপবা। খুব আফসোস জানো? আমার সঙ্গেই কেনো এমন হলো বলোতো?
জুবায়েরের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কি ভয়ংকর দিনগুলো পার করে তবেই এতদূর আসতে পেরেছে। ভেবেছিল কখনও হয়তো সুখের দেখা হবে না। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজারো শুকরিয়া। অধরার কথা শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো।
> আপনি জুহির জন্য এখনো ভাবেন?
কথাটা বলেই অধরা ঠোঁট উল্টে ফেলল। চোখে পানিতে ভরপুর। এখুনি বুঝি টুপ করে ঝরে যাবে। জুবায়ের ওকে দেখে শব্দ করে হেসে ফেলল। কফির কাপ পাশে রেখে ওকে দুহাতে ঝাপটে ধরে বলল,
> আরে বাবা আমি ওর জন্য বলছি না আমি কথাটা তোমার জন্য বলেছি। কি বোকা ছিলাম ভাবলেই অবাক লাগে।
> আপনি এখনো সেই বোকাই আছেন। শুধু বয়সের সংখ্যাটা বেড়েছে। যাইহোক দাদু ডেকেছেন কি এক পরামর্শ করবেন। এই ভদ্রলোকের মতলব কি বলতে পারেন? চলুন না কথা বলে আসি।
জুবায়েরের অধরার কাধে থুতনি রেখে চুপচাপ বসে থাকলো। অধরার কথায় উত্তর বা যাওয়ার কোনো তাড়া দেখালো না। অধরা অধৈর্য হয়ে উঠেছে। দাদুর কি বলতে চাইছে? আবারও কোন ঝামেলায় ওদেরকে ফেলতে চাইছে কে জানে।
**********
ডাইরী অধ্যায়নরত দাদুর মুখের দিকে চেয়ে জামসেদ ফারুকী আনমনে পা নাচিয়ে চলেছে। মনে মধ্যে হাজারো প্রশ্ন দোলা দিচ্ছে। শামীর তালুকদার টোপ গিলেছে বিষয়টা নিয়ে ওর হৃদয় আন্দোলিত হচ্ছে। সুলতান পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করতে লোকজন মুখিয়ে থাকে না কারার কোনো মানেই হয়না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আরেক জায়গায়। মানব নিষিদ্ধ মানবির জন্য যদি কোনো মানবকে নির্বাচন করা হয় তবে অর্ধমানোবেরা কি ওদেরকে ছেড়ে দিবে? ওরাও যে কালো যাদুর উপাসোক। চারদিক থেকে কালো ছায়া এই পরিবারের উপরে নেমে আসবে। ওদেরকে শান্ত করতে কতশত মানুষকে উৎসর্গ করতে হবে তার ঠিক নেই। ওরা তো নারী লোভী। ইচ্ছে করে ওদের সবাইকে ধ্বংস করে ফেলতে। কিন্তু কিছু করার নেই। ওরা অধারের বাসিন্দা মানুষের চাইতে হাজারগুণ শক্তিশালী। কিভাবে পারবে ওদের সঙ্গে? দাদুর কথা শুনে জামসেদ চমকে উঠলো। ভদ্রলোকের মুখে সেই রহস্যময় হাসি। উনি দাড়ি নাড়িয়ে বললেন,
> এতো চিন্তা কিসের শুনি? বিয়ের আয়োজন করো। আমি জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলবো। তাছাড়া বিয়েতে না বলার মতো কিছু নেই। আমরা বরং কহিনুরের উপকার করছি। তুমি ভাবো ওরা জানার আগেই যদি বিয়েটা হয়ে যায় কত ভালো হবে? বিয়ের পরে যা হওয়ার হবে। কহিনুর মরবে না সিউর থাকো তবে পাথর নামের ছেলেটার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে সিউর। আমাদের কাছে রত্নাটা নেই। শুধু কহিনুর আছে। কহিনুরের শক্তি পরিক্ষা করার জন্য হলেও কিন্তু বিয়েটা জরুরী। একদিকে ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলো অন্যদিকে কহিনুরের রহস্য সামনে আসলো। অর্ধমানবেরা যখন ঠিক পাবে ততক্ষণে আমাদের কাজ শেষ। বুঝলে কিছু?
জামসেদ দাদুর কথা শুনে মাথা নাড়লো। বুঝতে পারছে সব। এই প্রথমবার এই পরিবারের কোনো মেয়ের বিয়ে কোনো মানুষের সঙ্গে হচ্ছে ভয় যে করছে না এমন না। কালো শক্তির কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিল সেটা ভঙ্গ হতে যাচ্ছে। টেনশনে ঘাম ছুটে যাওয়ার অবস্থা। প্রতিবার এই পরিবারে যখন কোনো কন্যার জন্য হয় সেই ক্ষণেই ওদের মধ্য থেকে বাগদানের জন্য কাউকে না কাউকে প্রস্তত করা হয়। ওরা আসে বিয়ের কথা বলতে। যদিও সেই বিয়ে কোন রীতিমত হয় সেটা ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানেনা। জামসেদ কথাগুলো ভেবে চুপচাপ বসে থাকলো কিছুক্ষণের মধ্যেই জুবায়ের আর অধরা ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদেকে বসতে দেওয়া হলো।। দাদুর মুখে এবার হাসি নেই উনি মুখটা কিছুটা গম্ভীর করে বললেন,
> কহিনুরকে যদি কোনো অর্ধমানবের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তাঁতে তোমাদের প্রতিক্রিয়া কি?
কথাটা শোনা মাত্র অধরা আতকে উঠলো। চাপা উত্তেজনাই শরীর মৃদু কাঁপছে। জুবায়েরের চোখে রাগ।ও হাতের মুঠো শক্ত করে বলল,
> দরকার হলে আজীবন মেয়েকে ঘরে রাখবো তবুও এহেন কাজ আমি জীবন থাকতে করবো না।
জুবায়েরের দাদু এবার হাসলন। বললেন,
> শান্ত হও আমি এমনটা করবো না। ওরা বোঝার আগেই কহিনুরের শাদির ব্যবস্থা করতে চাই আমি। মেয়েটার বয়স কম কিন্তু উপযুক্ত হতে হতে ওরা ঠিক কহিনুরের খোঁজ পেয়ে যাবে। কি চাও তোমরা? মেয়ের ভালো নাকি খারাপ।
অধরা জুবায়ের হাত ধরে ফেলল। কি বলবে মাথায় কিছু আসছে না। জুবায়ের কিছুক্ষণ ভেবে বলল আমি রাজি তবে শর্ত মানতে হবে।
জামসেদ বিরক্ত হয়ে বলল,
> কিসের শর্ত? মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত নাও এখন ফিরে যাও। অযথা শর্ত দিয়ে ঝামেলা করো না।
জুবায়ের মুখটা কঠিন করে বলল,
> দাদু যেহেতু বলেছে সেহেতু এই বিয়েটা হবেই তাই আমি শর্ত রাখলা। কহিনুর যতদিন উপযুক্ত না হবে ততদিন আমাদের সঙ্গে থাকবে। ওকে কেউ জোর করবে না। বা ওই ছেলেটা কহিনুরের আশেপাশেও ঘেঁষতে পারবে না। আমি এক মূহুর্ত্তের জন্যও আমার মেয়েকে কাছ ছাড়া করবো না। শর্ত মানতে পারলে জানিয়ে দিও।
কথাটা বলে জুবায়ের যেভাবে এসেছিল অধরার হাত ধরে তেমনিভাবে বেরিয়ে গেলো। জামসেদ ধপ করে সোফায় হেলান দিয়ে বলল,
> এটা কার মতো দাদু? আমাদের বংশে এমন পিচ আর একটাও আছে? কি শর্ত দিলো ! এমন শর্তে কোনো শত্রুও বিয়ে করবে না। আমি এর মধ্যে নেই। তোমার বুদ্ধি, তুমি ভাবো কিভাবে ঘাড় ত্যাড়া জুবায়েকে সোজা করবে। জাষ্ট বিরক্তিকর।
জামসেদ চোখ বন্ধ করে নিলো। মেজাজ চরম খারাপ। নিজে বউ ছাড়া থাকে না আবার জামাইকে শর্ত দিয়ে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে।পাগলামীর শেষ কোথায়?
***********
শনশন বাতাসে সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে আছে আধার। গতকাল এক রূপসীকে দেখে চোখের ঘুম উড়ে গেছে ওর। কি অপূর্ব সেই দৃষ্টি । এখনো চোখে চোখে ভাসছে। কিছু বোঝার আগেই মেয়েটা ওর দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো। চোখের ভূল তো কিছুতেই হতে পারে না। এক পলকের দেখা তারপর থেকে ওর গলা বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু একবার যদি মেয়েটাকে পেয়েছে তবে আধার কখনও আর কোনো নারীর প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করবে না। ওকে নিয়ে হৃদয়ের গহিন অরণ্যে বাসর সাজাবে। সেখানে রানী করে রাখবে ওকে। গতকাল মেয়েটাকে ও যেখানে দেখেছিল আজও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তফাৎ আজকে সেই অপূর্ব রমণীর দেখা নেই। চোখের ঘুম শরীরের উম্মাদনা সব কেড়ে নিয়ে ওকে অশান্ত করে পালিয়ে গেলো। অধার হূদয় পটে ওর ছবিটা খুব ভালো করে এঁকে নিয়েছে। পৃথিবীর কোন প্রান্তে সে লুকাবে? আধার ওকে ঠিক খুঁজে নিবে।
চলবে