#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১৩)
বৃষ্টিমুখর এক শীতল, স্নিগ্ধ সকাল। ঘুম ভেঙেছে ঝুম বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে মনে হলো আজ ক্যাম্পাসটা নিশ্চয়ই কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে আছে! বৃষ্টি এলেই ফুল গুলো ঝরে লাল গালিচার মত রঙিন সাজে সেজে উঠে ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকটা। সুপ্রভা তড়িঘড়ি উঠে দেখলো মেহরিন এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে৷ আজ ক্লাসে কজনই’বা যাবে তবুও সুপ্রভা মিস করবে না। উহুম, ক্লাস করতে নয় বরং বৃষ্টিতে ভিজতে। এক পশলা বৃষ্টির মাঝে নিজেকে মিশিয়ে হারিয়ে যাওয়ার প্রবঞ্চনা পায় সুপ্রভা সবসময়ই৷ আজও ভিন্ন নয় তাই তড়িঘড়ি পোশাক পাল্টে চুলগুলো খোলা রেখেই বেরিয়ে পড়লো৷ রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এসে কাজলটা নিয়ে চোখে দিলো। কাজল ছাড়া বৃষ্টিবিলাস তার বড্ড ফিকে লাগে। বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রসাধনীবিহিন মুখটা তার বড্ড জীবন্ত লাগে নিজের কাছেই কিন্তু চোখের নিচে লেপ্টে থাকা কাজল ছাড়া তা অপূর্ণ। মেহরিনকে ডাকার ভুল সে কিছুতেই করলো না কারণ মেহরিনের তো বৃষ্টিতে ভিজলেই সমস্যা দেখা দেয়। কি জানি বাপু তার কেমন রোগ বৃষ্টিতেও যে কারো এলার্জি হতে পারে এ যেন খুব আশ্চর্যজনক ঘটনা। সুপ্রভা বেরিয়ে পড়লো প্রিয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। হোস্টেলের গেইট পার হতেই তার চোখ দুটো বিড়ালের চোখের মত ছোট আর গোলাকৃতি হয়ে গেল। দুই ভ্রুর মধ্যিখানে হালকা কুঞ্চন৷ কালো রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটা তার খুব পরিচিত৷ এই ঢাকা শহরে পা দিতেই সে প্রথম দূর্ঘটনায় পড়েছিলো এই গাড়িতেই। মনে হতে আজও গা শিউরে উঠলো এই ভেজা হাওয়ায়। তারপরই মনে হলো এদিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার মত সময় তার হাতে নেই। সে পথের এদিক ওদিক তাকালো রিকশার খোঁজে। ক্যাম্পাসে নয় বরং টিএসসির দিকে যাবে রিকশায় চড়ে৷ আজ ঘুরে ঘুরে ভিজবে বৃষ্টিতে এতে নিশ্চয়ই তার মনটা ফ্রেশ হবে। চারপাশ খুঁজেও একটা রিকশা চোখে পড়লো না ততক্ষণে গাড়ির মালিকটি একটা ছাতা হাতে গাড়ি থেকে নেমে এলো৷ লোকটার পা ফেলার ভঙ্গিতেই স্পষ্ট সে পানি থেকে পোশাক বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছে। এতেই যেন সুপ্রভার চোখ-মুখ আরো কুঁচকে গেল৷ প্রকৃতিকে দু চোখ মেলে দেখা, উপভোগ করার মজাটাই জানে না এই শহুরে বড়লোক বাপের বিগড়া ছেলেটা। শুধু জানে মিষ্টি মুখে সুন্দরী মেয়েদের কতোটা বশ করা যায় তারপর একবাক্যে নিজের ঘরে কিংবা হোটেলে৷ ঘৃণার একটা ঢেউ পাকিয়ে উঠলো সুপ্রভার বুকের ভেতর। সে গেইটের ভেতর ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সৌহার্দ্য ডাকলো, “প্রভা শোনো, চলো আমার সাথে।”
“কোথায় যাবো হোটেলে?” চেঁচিয়ে উঠলো সুপ্রভা। এতক্ষণ বৃষ্টি ঝিরিঝিরি ছিলো এখন একটু বাড়ছে। সেই বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে যাচ্ছে সে। সৌহার্দ্য এগিয়ে ছাতাটা তার মাথার ওপর ধরতে এলে ধমকে উঠলো আবারও সে, “দূরে দাঁড়াও।”
“কেন এমন করছো বলো তো? কে বলেছে আমি মেয়েদের নিয়ে হোটেলে যাই! ওই মেহরিনের কথা ধরে বসে আছো তুমি?” সৌহার্দ্য ব্যকুল হয়ে নিজের পক্ষে কথা বলতে চাইলো। সুপ্রভার মেজাজ বিগড়ে গেছে প্রচণ্ডরকম। সে এই মুহুর্তে কথা বলতে গেলেই নির্ঘাত বাজে কিছু বলে বসবে তাই চাইছে এড়িয়ে যেতে। আর সে মুহুর্তেই তার ফোনটা বাজলো। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ফোন তোলা যাবে না ভেবে সে গেটের ভেতরে ঢুকে গেল। সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়ে ফোন তুলে কানে ধরলো। সৌহার্দ্য বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার গাড়িতে উঠে পড়লো। সকালের চমৎকার মুডটটা বৃষ্টির পানির সাথেই ভেসে গেল সুপ্রভার। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে বৃষ্টিবিলাস না করেই।
“আজকের সকালটা এত দারুণ চাচা কি বলবো!” কফি হাতে নিয়ে তাসিন হাবিব চাচাকে বলল কথাটা। একটু আগেই অফিসের কাজে বসের সাথে মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সঙ্গী হাবিব চাচা আর বসের এসিস্ট্যান্ট ওয়াহিদও ছিল। চারজনেই এসেছে বসের গাড়িতে করে৷ আর তখনই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। গাড়ির এসি অফ আর জানালার কাঁচ নামানো থাকায় তাসিন জানালায় তাকিয়ে ছিল। বৃষ্টির ছাঁট তাকে একটু একটু করে অনেকটা ভিজিয়ে দিলো। শীতল করে দিলো ভেতর বাহির সবটা সেই সাথে তাকে করে দিলো কাব্যিক। সে বসে বসে দু চার লাইনের ছন্দ লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়লো তার সেই বৃষ্টির রাত, সেই ভেজা আবছা মুখটা। কি আশ্চর্যজনক কথা, সেদিন তো মুখটা খেয়ালই করেনি সে অথচ আজ ছন্দের তালে সেই মুখটাই মনে পড়লো! মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো তাসিন আর তা দেখেই হাবিব চাচা বললেন, “হাসছো কেন বেটা?”
জবাবে তাসিন বলল, আজকের সকালটা এত দারুণ চাচা কি বলবো!”
“সকাল দারুণ বলে এই হাসি! আমার তো মনে হচ্ছে এই দারুণ সকালে দারুণ কাউকে অথবা কোন ঘটনা মনে করে হাসছো।”
বস আধঘন্টা সময় দিয়েছেন তাদের একটু রেস্ট নিতে তারপর কাজ শুরু। সেই সময়টা তাসিন আর হাবিব চাচা অফিস ক্যান্টিনে এসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে সেই সাথে ক্যান্টিনের লম্বা জানালার কাঁচে জমে থাকা ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টিকে দেখছে৷ হাবিব চাচা শুধু বয়সেই মুরুব্বি মনের দিক থেকে তিনি এখনো তরুণ। তাসিন তার অফিসের সময়টা উপভোগ করতে পারে শুধুমাত্র এই মানুষটার জন্যই। এই বৃষ্টিমুখর সময়টাতে সেই মেয়েটাকে মনে পড়ছে খুব করে। আচ্ছা, তাকে কি একটু কল করে রাগিয়ে দেয়া যায়! যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। তাসিন মনে মনে ঠিক করলো মেয়েটিকে কল দিবে। রিসিভ হতেই সে এমন ভাণ ধরবে যেন অন্য কাউকে দিতে গিয়ে ভুলে তাকে দিয়েছে। কল ঢুকলো, বাজলোও একবার। সংকোচ হলো তাসিনের আর না দেওয়াই ভালো। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে কফিতে শেষ চুমুক দিতেই মনে হলো দেই আর একবার এই শেষ! সত্যিই সে দ্বিতীয়বার কল দিলো এবং তাকে বিষ্মিত করে দিয়ে ওপাশ থেকে একটা ঝড় বয়ে গেল। কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থেকে তাসিন আবার তার কাজে বসে পড়লো কিন্তু মন বসলো না সেদিকে।
“আমার আকাশটা যেমন মেঘাচ্ছন্ন তোমারও কি তেমন!
আমার মনের ঘরে ধূসর বিষন্নতার পরত
তোমার মনেও কি চলে এমন শরত!!”
“কি বলছো একা বিড় বিড় করে আয়না? একটু জোরে বলো আমিও শুনি।” মেঘলা আকাশটার দিকে চেয়ে আয়না লাইন দুটো নিজের অজান্তেই আওড়ালো চলতে চলতে৷ চায়ের দোকান থেকে সিগারেট হাতে রায়হান বেরিয়ে এলো। তার বখাটেপনা সবচেয়ে বেশি চলে বাজারের এই চায়ের দোকানে বসেই। আর প্রত্যেকটা দিন এখানটায় সে নিয়ম করে বসে, আয়না কলেজে যায় বলে। আয়না তাকে খুব একটা ভয় পায় না কিন্তু তার কথা বলার ধরণটা খুব অশ্লীল লাগে। কেমন যেন সব কথাতেই একটা হি হি ভাব থাকে তার। আজ আয়না একদম একা যাচ্ছে অন্য সময়ে তুহিন থাকে। দুজনের কলেজ আলাদা হলেও পথ একটাই তাই দুজন একসাথে যেতে পারে। বলা যায় ইচ্ছে করেই তুহিনের সাথে যায় যেন রায়হান এগিয়ে এসে কিছু না বলতে পারে। কিন্তু তুহিনের খুব জ্বর বলেই আজ সে একা। আয়না কোন জবাব না দেওয়ায় রায়হান তার পিছু আসতে আসতেই আবার বলল, “আজকে শালা সাহেব আসে নাই সাথে? যাক ভালোই হলো এবার অন্তত শান্তিতে দুটো কথা বলা যাবে। ”
“একদম আসবেন না আমার পিছু পিছু। কি পাইছেন যখন তখন এমন পিছনে লাগবেন। অসভ্যদের মতো সারাক্ষণ মেয়েদের পেছনে পড়ে থাকেন কেন !”
রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে আয়না চেঁচিয়ে উঠলো। বাজারের পথ ছেড়ে সে অটোর জন্য দাঁড়িয়েছে। রায়হান পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলা থামাচ্ছেই না তাই অতোটা ক্ষেপে গেছে আয়না। আয়নার চেঁচিয়ে ওঠা শুনেই একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এহসান ভ্রু কুটি করে তাকালো। আজ ডিউটি নেই বলেই বাজারের দিকে এসেছিল। নাশতাটাও হোটেলে করেছে এখন ফিরতি পথে সে ছেলে মেয়ে দুটোকে এক নজর দেখে আবারও চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু মেয়েটির চিৎকার তার কাছে কোন একটা সংকেত দিলো বোধহয়। এবার আর ফিরে না গিয়ে সে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো, “কি হচ্ছে এখানে?”
রায়হান চেনে এই অফিসারকে; সে কোন ঝামেলায় পড়তে চায় না বলে বলল, “কিছু না”
এহসান খেয়াল করলো ছেলেটার চোখ আর কপালের রেখা। খুব যদি ভুল না হয় তবে ছেলেটা প্রচণ্ডরকম স্মোক করে, বখাটে টাইপ, উগ্র স্বভাবের হবে। সে ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে আয়নাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আয়না এহসানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো অচেনা লোককে বলে আবার ঝামেলা না বেড়ে যায় তাই সেও ‘কিছু না’ বলে অটো দেখতে পেয়ে উঠে গেল। এহসান বোকার মত তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড অটোর দিকে তারপরই বলল, “তোমাকে আমি চিনি মনে হচ্ছে।”
রায়হানও জানে এহসান তাকে চেনে কিন্তু আপাতত এড়িয়ে যাওয়াটাই তার জন্য মঙ্গলময়৷ সে বলল, ” আমার বাড়ি এখানেই।”
কথাটা শেষ করে সেও আর দাঁড়ালো না। এহসান বোকার মত একটু হেসে ফেলল। আজকালকার ছেলে মেয়েগুলো একটু বেশিই উশৃংখল নাকি রোমান্টিক সে বুঝতে পারে না। পথেঘাটেও তাদের লড়াই, ঝগড়া, কত কি চলে। অথচ তার পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে কাউকে ভালো লাগলেও বলার সাহস করতো না পাছে আবার বাবার কানে যায় কথাটা সেই ভয়ে। ভার্সিটিতে পড়ে পছন্দ হলেও প্রেম করার উদ্দীপনা পেতো না তখন অবশ্য নেভিতে ঢুকতে হবে এমন এক নেশায় পেয়ে বসেছিল তাকে৷ দূর্ভাগ্যবশত তা হয়নি শেষ পর্যন্ত বাবার জোরের মুখে পুলিশে এন্ট্রি নিলো। এ কাজটাও তার খারাপ লাগে না আবার ভালোও লাগে না। না চাইতেও এখানে ঘুষটুস ব্যাপার হয়ে যায় আর এটাই খারাপ লাগে তার।
সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে তাসিন প্রথমেই মামীর কাছে বায়না ধরলো বাইরে খাবে আজ। মামী কপট রাগ দেখালেন এই নিয়ে। সেদিনও মামা ভাগ্নে বাইরে খেয়ে পরদিনই গ্যাসের ব্যথা এই সেই কি বিপদেই না ফেলেছিলো। তাসিন শুনতে চাচ্ছে না বলে মামী বললেন, “ঠিক আছে আমি ভুনা খিচুড়ি রান্না করছি কম তেল মশলা দিয়ে। বাইরে খাওয়া চলবে না।” সকালের বৃষ্টি সকালে থামলেও বিকেলের পর আবার শুরু হয়েছে এখনো চলছে ঝিরিঝিরি। তাসিনের মনে হচ্ছে মামীকে এখন তার জন্য আবার কিচেনে ঢুকতে হবে! তাই বারণ করলো খিচুড়ি লাগবে না সে ভাত খাবে বলেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আগে যে ঘরে সে থাকতো সেটাতে বারান্দা ছিলো না। বড় ভাইয়া আর ভাবী বিদেশে স্যাটেল হওয়ার পর মামীই তাকে এ ঘরটাতে আসতে বলেছে৷ ডিম্বাকৃতি বড় একটা বেলকোনি আছে এ ঘরটাতে তাই সেও আসতে আপত্তি করেনি। বরং খুশিই হয়েছে মামী তার মনের কথা বুঝতে পেরেছে বলে। অফিসের পোশাক বদলে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার নিলো৷ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে আজ গায়ে দু দফায়। সকালে একবার এখন আবার তাই গোসলটা করাই ঠিক মনে হলো৷ গোসল শেষে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়াতেই কানে এলো ফোন বাজছে। ফিরে এসে বিছানা থেকে ফোন নিলো তাসিন। খালি গলায় বিষম খেলো নাম দেখেই। সকালে যা করলো তারপর এখন ফোন করছে কি তাকে সত্যিই পুলিশে দিতে! রিসিভ করবে না করবে না করেও ধরলো। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সুপ্রভা সালাম দিলো। তাসিন জবাবে “ওয়ালাইকুম আসসালাম” বলতেই সুপ্রভা আবার বলল, “স্যরি সকালের জন্য আমি না অন্য একজনকে বকতে গিয়ে আপবাকে বকেছি কিছু মনে করেবন না প্লিজ। এক্সট্রিমলি স্যরি।”
“দম নিয়ে বলো। বুঝলাম রং নাম্বার ছিল হয়ত।”
তাসিন স্বাভাবিকভাবেই বলল।
“রং নাম্বার না সৌহার্দ্য.. ”
সুপ্রভা থেমে গেল নামটা বলতে গিয়ে। কথা ঘোরাতেই আবার বলল, “কোন দরকারে কল দিয়েছিলেন?”
তাসিন ভড়কে গেল এবার। সে তো কোন প্রয়োজনে ফোন করেনি তখন৷ এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কয়েক মুহুর্ত ভেবে আবার বলল, “হ্যাঁ দরকারেই। তুমি সেদিন ফোন নাম্বার চাইলে মুরাদের।”
সুপ্রভার মনে পড়লো সে চেয়েছিল ফোন নাম্বার। টিয়ার সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ না করতে পেরে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তো তাদের যোগাযোগ হয়েছে। টিয়া নিজেই তাকে ফোন করেছিলো। সুপ্রভা বলল, “লাগবে না কথা হয়েছে টিয়ার সাথে।”
“ওহ” বলে তাসিন চুপ হয়ে গেল। আর কি বলবে সে! সকালে যে দুষ্টুমির একটা খেয়াল ছিলো মাথায় এখন সেটাও নেই। সুপ্রভাও চুপ হয়ে গেছে। দুজনেই নিস্তব্ধতায় নিজেদের মধ্যে বলার মত কথা খুঁজে পেলো না। সকালে যখন সৌহার্দ্যকে দেখে সুপ্রভা রুমে ঢুকে গেল তখন সৌহার্দ্য তার নাম্বারে অসংখ্য কল করলো। সুপ্রভা তার কল ধরে অনেক বকাবকি করলো কিন্তু সৌহার্দ্য শুনলো না। বাধ্য হয়েই সুপ্রভা তার নাম্বার ব্লক করলো আর তার মিনিট পাঁচেক পরই এসেছিল তাসিনের কলটা। সুপ্রভার মনে হয়েছে সৌহার্দ্য বুঝি অন্য কোন সিম দিয়ে কল দিয়েছে। আগেও এমন করেছে সে আর তা ভেবেই সুপ্রভা কল ধরে চিৎকার করে বলেছিল, “অ’সভ্য, লু’চ্চা তুই আর একবার যদি কল দিস আমি তোকে, তোর চৌদ্দগুষ্টিকে জেলে পাঠাবো মনে রাখিস।” ব্যস এক বাক্যেই সে সব বলে কল কেটে দিয়েছিলো। তাসিনের মনে হয়েছিলো কেউ বুঝি তার কানের কাছে বোমা ফাটালো। পুনরায় আর কল করার মত এনার্জি সে খুঁজে পায়নি নিজের মধ্যে। মেয়েটা সত্যিই এক তুফান, বজ্রপাত, বোমা যাই বলুক কম হবে। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলো কেউ মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করছে তাই ওরকম বলছিলো। কিন্তু এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছে না তাসিন হুট করে কি বলা যায়! তারপরই বললো, “ডিনার শেষ?”
“হ্যাঁ, হোস্টেলে নয়টার মধ্যেই ফিনিশ।” তাসিন ফোন কাঁধ দিয়ে কানে চেপে ধরে ট্রাউজার পরে নিলো। টি শার্ট পরবে বলে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে বিছানায় রেখে টি শার্ট পড়ছে। তারই মাঝে সুপ্রভাও প্রশ্ন করলো, “আপনি ডিনার করেছেন?”
তাসিন মজা করেই বলল, “না করলে কি এসে তুমি করাবা?”
তাসিন কথাটা বলেই হা হা করে হাসছিলো৷ সুপ্রভাও কিছু একটা বলেছে কিন্তু সে কথাটা খেয়াল করতে পারেনি৷ তার নজর আটকালো দরজার নিচে৷ কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে একটুখানি সেই সাথে স্যান্ডেলের খসখস আওয়াজ। দ্রুত ফোন কেটে সে দরজা খুলল। কি আশ্চর্য কেউ নেই সেখানে৷ টেনশনে পড়ে গেল তাসিন মামা ছিলো নাতো! ওহ মাই গড! এ ঘরের দরজাটা নিচ থেকে একটু ফাঁকা বলে ঘরের ভেতর কথাবার্তা কান পাতলে ভালোই শোনা যায়। মামা বা নুর আপা দুজনের কেউ একজন যদি কথাগুলো শুনে থাকে তাহলে নিশ্চিত তার কপালে শনি আছে৷ আবার মনে হলো মামিও হতে পারে হয়ত খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিল! আহ্ কি কান্ড এই তুফান এলেই তার বিপদ ঘটে এমন কেন! নিজেই নিজেকে ইচ্ছেমত গালি দিতে লাগলো তাসিন৷ কোন দূর্দশায় যে এই মেয়েটাকেই সে ফোন করেছিল সকালে!
“সুপ্রভা, তোমার বাড়ির ঠিকানা কি জানে সৌহার্দ্য?”
মেহরিনের হঠাৎ প্রশ্নে সুপ্রভা চমকে তাকালো। একটু আগেই তাসিনের কথা শুনে আর হুট করে কল কেটে দেওয়ায় তার মেজাজ সকালের মতোই বিগড়াচ্ছিলো। কিন্তু মেহরিনের কথায় সে অবাক হলো।
“কেন বলোতো?”
“সৌহার্দ্য আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে তুমি তার ফোন তুলছো না কেন? সে তোমাদের বাড়ি যাবে কাল।”
“কিহ!”
চলবে