বৃষ্টির_রাতে #রূবাইবা_মেহউইশ (৩২) এর পরের অংশ

0
280

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৩২) এর পরের অংশ

ভু’ল যা করার তাতো করেই ফেলেছে এখন তা যে করেই হোক শোধরাতে হবে। ঢাকায় চলে আসার পর আরো এক সপ্তাহ কেটে গেল তাসিনের বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ না করে। এরই মাঝে আয়না ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাসিনের রাগের মাথায় দেওয়া চ্যালেঞ্জ বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। এতে যে ব্যপারটা তাসিনের আর তার মধ্যে ছিলো সেটা এখন পারিবারিক পর্যায়ে চলে গেছে। তাসিনের মা একা এতদিন বিয়ে নিয়ে জোর করেছেন এখন বাকিরাও তাল মেলাচ্ছে। সবার এক কথা, ঠিকাছে তাসিন যদি যোগ্য পাত্র আনতে পারে তবে আমরা তার কথাই মেনে নেব। এখন কথা হলো এক মাসের মধ্যে যোগ্য পাত্রটা পাবে কোথায়? তারওপর এক সপ্তাহ ধরে সুপ্রভা আছে নেটওয়ার্কের বাইরে। ভাগ্য নিয়ে আজকাল প্রায়ই মন্দ কথা বলে তাসিন আজও বিড়বিড় করে বলছে, “শা’লা নর্দ’মামার্কা কপাল একটা আবর্জনা কিছুতেই পরিষ্কার করা যায় না। সুপ্রভা মেয়েটাও কত্তো খারাপ হলে এতগুলো দিনে একটাবার খোঁজ নেয় না। সে কি জানে তার এই নিখোঁজ হওয়া একটা ছেলের প্রাণপাত ঘটাতে পারে!”

ডেস্কের সামনে এসে সেই কখন দাড়িয়েছে হাবীব চাচা অথচ তাসিনের দৃষ্টিগোচরই হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই চাচা ডাকলো, “কি ব্যাপার মিয়া এত কি ভাবছো?”

ধ্যান ভাঙলো, মন জায়গায় ফিরলো যেন সবে। নড়েচড়ে বসলো তাসিন, “কিছু ভাবছি না তো!”

“মিথ্যে বলে কি লাভ বেটা বয়সটা আমিও পার করে আসছি।”

ব্যস, এইটুকুতেই তাসিন বুঝলো এখন আর উপায় নেই লুকানোর। চাচা ঠিক খুঁটিয়ে খুটিয়ে সবটা শুনবেন তারচেয়ে ভালো নিজেই শেয়ার করা। একটু সময় নিয়ে তাসিন আয়নাকে নিয়ে বাঁধা সমস্যাটাই বলল প্রথমে। তারপর জানিয়ে দিলো এহসান আর সুপ্রভার কথা। হাবীব চাচা বয়সটা মধ্যবর্তী হলেও মনের দিক থেকে তিনি এখনো যুবকই রয়ে গেছেন যেন৷ চোখ মুখ কুঁচকে কিছুটা সময় নিয়ে বললেন, “সুপ্রভার সাথে যোগাযোগ করো এবং তারে দিয়েই পুলিশের সাথে কথা বলাও। প্রয়োজনে তুমি নিজের কোন লোক থাকলে ছেলের ব্যপারে খোঁজ নাও। ছেলের ব্যপারে পজেটিভ খবর পেলে সুপ্রভাকে দিয়েই ছেলেকে প্রস্তাব পাঠাতে বলো বাড়িতে।”

তাসিন চুপচাপ সবটা শুনে বলল, “এতসবেও তো মাস পেরিয়ে যাবে চাচা। হাতে সময় আছে মাত্রই একুশ দিন।”

“আরে ধ্যুর মিয়া, ওসব চ্যালেঞ্জ হলো কথার কথা। বাবা মা কি ঘাস খেয়ে বড় হয়েছে? ছেলে মেয়ে কি এক চ্যালেঞ্জ দিছে তা নিয়ে মাথা ঘামাবে?তুমি আগে ভালো পাত্র সামনে আনো বাবা মা নিজেরাই সময় নিয়ে এগোবে। আর তুমি তো বললা মেয়ে কয়েক মাস পর পরীক্ষা দিবে তারা নিশ্চয়ই এই মুহুর্তে মেয়ে বিয়ে দিবে না!”

অফিসের ছুটির টাইম হয়নি অথচ হাবীব চাচা আর তাসিন কাজ ফেলে কিসব আলোচনায় বসেছে। তাদের ফ্লোরের পিয়ন ছেলেটা এসে বলে গেল বস বেরুবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের এভাবে দেখলে নিশ্চয়ই ঝামেলা করবে। হাবীব চাচা চলে গেছেন নিজের ডেস্কে। তাসিন আপাতত কাজে মনোনিবেশ করলো। অফিস ছুটির পরই সে মনস্থির করলো সুপ্রভা যা খুশি ভাবুক আজ সে একটু ডেস্পারেট হয়েই সামনে যাবে। নিজেকে লুকিয়ে লাভ নেই এমনিতেও তার ধারণা সুপ্রভাও তাকে পছন্দ করে। যদি তাই হয় নিশ্চয়ই তাসিনের হেল্পটুকু করবেই। আজ তার পরনের সাদা শার্ট আর নীল টাই। সারাদিনের অফিসবন্দী সময়ের পর চোখদুটো খুব ক্লান্ত তার কিন্তু মস্তিষ্ক আপাতত বিশ্রাম চায় না। মাথার ওপর ঝুলে থাকা বিপদঘন্টি সরাতে যা করা দরকার সেটাই করতে প্রস্তুত। আজ আর হেঁটে নয় বরং রিকশা নিয়েই চলে গেল সুপ্রভার হোস্টেল এর সামনে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো তাসিন৷ মাগরিবের আজান হতে এখনো আধঘন্টা বাকি। দিনের অনুজ্জ্বল আলোয় মনটা হঠাৎই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো। এই উচ্ছ্বাস কি সমূহ বিপদ থেকে উঠার পথ পাবে বলে নাকি অনেকগুলো দিন বাদে সুপ্রভাকে দেখতে পাবে সেই আনন্দে!

মাত্রই ঘুম থেকে জেগে মেহরিনকে ডাকতে যাচ্ছিলো সুপ্রভা অমনি তার ফোনটা বেজে উঠলো। ওহ বলা হয়নি, দু বান্ধবীর ঝামেলা মিটিয়ে সৌহার্দ্যই হেল্প করেছে আর ঝামেলা নেই বলেই মেহরিন হোস্টেলে ফিরেছে। মেহরিনকে তার ডাকার কাজটা ফোন রিংটোনই করে দিল৷ জোরালো টোন কানে ঢুকতেই বিরক্তিতে চোখ মেলল মেহরিন৷ সুপ্রভা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। সে ভেবেছিলো তাসিনের কল তুলবে না কিন্তু মনটা বড্ড বেহায়া তাই বারণ মানলো না। রিসিভ করে চুপ করে রইলো কয়েক সেকেন্ড। ওপাশ থেকেই আওয়াজ এলো, “সুপ্রভা তুমি বিশটা মিনিট সময় দিতে পারবে এখন৷ খুব আর্জেন্ট।”

“কি প্রয়োজন!”
বড্ড রুক্ষ, শুষ্ক শোনালো কণ্ঠস্বর সুপ্রভার। তাসিন খেয়াল করলো না সেদিকটা সে আবারও বলল, “প্লিজ সম্ভব হলে একটু বাইরে এসো।”

কল কেটে দিল সুপ্রভা। তাসিন অবাক হয়ে তাকালো। কল কেন কাটলো তাই সে বুঝলো না। সে কি চলে যাবে নাকি অপেক্ষা করবে! আবার কল দিবে নাকি মেসেজে জিজ্ঞেস করবে আসছে কিনা! দোটানায় পড়ে মিনিট দুয়েক পেরিয়ে গেলেও তাসিন বুঝতে পারলো না কি করা উচিত। আরো কিছু সময় যখন তার অস্থির পায়চারীতে কাটলো তখন এসে উপস্থিত হলো সুপ্রভা। তাসিন থমকে গেল ফোলা ফোলা দু চোখের তীক্ষ্ণ নজর দেখে। এই নজর দেখেই খেয়াল হলো ফোনে সুপ্রভার রুক্ষ কণ্ঠস্বর৷

“ইয়ে মানে তুমি কি কোন কারণে রেগে আছো?” অনেকটা থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো তাসিন। সুপ্রভা আগের মতোই কঠিন চেহারায় দাঁড়িয়ে জবাব দিলো, “কেন ডেকেছেন?”

এই প্রশ্নে আবারও তাসিন লক্ষ্যচ্যুত হলো। কখন কি বলবে তাই ভুলে যাচ্ছে সে। প্রথমে এলো এহসানের খোঁজটা নিতে সুপ্রভাকে দেখে কিয়ৎক্ষণের জন্য তা মাথা থেকে সরে গিয়েছিল। এখন আবার সুপ্রভার প্রশ্নে তার রাগের কথা ভুলে আবার প্রথম টপিকে মন স্থির হলো।

“আমি আসলে তোমার সেই কাজিন সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। একটু ডিটেইলস না বললে বুঝবে না।”

দ্বিরুক্তি না করে সুপ্রভা এগিয়ে চলল সামনের দিকে৷ তাসিন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সুপ্রভা সেই হোস্টেলের পাশের রেস্টুরেন্টে ইশারা করলো৷ দুজনে সেখানে বসলো আর কথা শুরু হলো।

সমস্যাটা ঠিক ভাবে উপস্থাপনের খাতিরেই তাসিন ঘটনার শুরুটা থেকে শুরু করলো। প্রথমেই বলল, “আমি আসলে নিজে ঝামেলায় পড়ে পাত্র খুঁজছি আমার ফুপাতো বোনের জন্য। আমার ফুপাতো বোন আয়না আমাকে ভালোবাসে।”

একদমই শান্ত শীতল হয়ে বসা সুপ্রভা আচমকাই চমকে গেল তাসিনের কথাটা শুনে। চোখ, মুখের রঙ আপনাআপনি বদলে গেল তার। কানের ভেতর শা শা শব্দে জোরালো বাতাস বইয়ে গেল। আশপাশে কোথাও বুঝি বজ্রপাত হচ্ছে!

চলবে

(খুব একটা বাকি নেই গল্পটা। দুঃখিত আপনাদের এত বেশি ধৈর্য্য পরীক্ষার নিয়ে বিরতিতে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই, বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিন কাটছে তাই আমার জন্যও দোয়া করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here