#ইস্ক,০১,০২
#সাদিয়া
১
“বিয়ের ২ দিন পর ছেলে বিদেশ চলে গেছে আর সেই বউ কে আপনি লক্ষ্মী বলছেন?”
“আপনার ছেলের বউ পছন্দ হয়নি বলে ২ বছর হতে চলে ছেলে দেশে আসে না। আর সেই বউ কে নিয়ে এত প্রশংসা আপনি কি করে যে করতে পারেন তা কে জানে।”
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠলেন “সত্যিই মিসেস রেহেলা বেগম আপনার দ্বারাই শুধু এটা সম্ভব। আমি হলে তো বউ কে আনতামই না।”
মিসেস রেহেলা বেগম কি বলবেন কে জানে? কিছু বলতেও পারছেন না। হঠাৎ খেয়াল করলেন তিতিল উপরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার পানি। হয়তো সব কথাই শুনেছে সে। এসব কথায় রেহেলা বেগম কষ্ট পেলেও নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললেন “আপনাদের ডেকেছি কি এসব কথা শুনানোর জন্যে? এসব আমাদের পারিবারিক বিষয় আমরা দেখে নিব। এসব নিয়ে আপনাদের আলোচনা না করলেও চলবে।”
উত্তরে আরেকজন বললেন “এসব আপনাদের বিষয় তা তো আমরা জানিই। নিহাত আপনি ওই মেয়ের এত প্রশংসা করছিলেন তাই বললাম।”
“মা তোমাকে কে বলেছে অপাত্রে দান করার জন্যে?”
কথা অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেল ইনা এসেছে। সে এগিয়ে গিয়ে রেহেলা বেগম কে বললেন “কেউ মর্ম না বুঝলে তাকে কেন বুঝাতে যাবে তুমি?”
মহিলাদের মাঝ থেকে একজন বলে উঠলেন “মিসেস রেহেলা বেগম আপনার মেয়ে কিন্তু আমাদের ইনস্লাট করছে।”
“ইনস্লাটের কি দেখলেন এখানে আন্টি? কিন্তু আপনার মেয়ে কে আপনি দেখে শুনে রাখেন তো? আপনি কি তার ব্যাপারে উদাসীন নন? সে যে কত ছেলের সাথে ফ্লট করছে। প্রেমের অভিনয় করছে, লাইট ক্লাবে যাচ্ছে তা কি খেয়াল করেন না আপনি?”
মহিলা কে কোনো জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ইনা আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আন্টি আপনার ছেলের বিষয়ে কি আমরা কিছু জানি না? আপনি তো নিজের পছন্দে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু কি লাভ হলো? আপনার ছেলে তো বউ কে প্রতিদিন মারধর করে। অনেক রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকে। শুনেছি সে নাকি অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত। সে হিসেবে আমার ভাই খুব ভালোই আছে তাই নয় কি?”
ইনা আবার বলতে লাগল,
“আর শিলা আন্টি শুনেছি আপনার মেয়ে কয়েক দিন আগে এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর কয়েকমাস পর ফিরেও এসেছে। সত্যি আন্টি এসব আপনার দ্বারাই হবে। কই আমরা তো ওসব নিয়ে কথা বলি না।”
সবাই উঠে গেল। রেহেলা বেগম মেয়ে কে বললেন,
“ইনা এবার থাম। এসব কি বলছিস?”
ভদ্র মহিলাদের থেকে একজন বলে উঠলেন “মিসেস রেহেলা আপনি আমাদের ডেকে এই অপমান করার মানেই হয় না।”
“এটা অপমানের কি আছে আন্টি? যা সত্যি তাই বললাম।”
“আমরা আর কোনোদিন আপনার বাড়ি আসব না রেহেলা বেগম।”
সবাই হনহন করে চলে যেতে লাগলেন। রেহলা বেগম নিজের মেয়ে কে বললেন “এসব বলার কি দরকার ছিল ইনা?”
“দরকার ছিল আম্মু এসব মানুষের মুখের উপর কথা বলতে হয়।”
“আমার যা কপালে ছিল। মেয়ে টা বোধহয় এখন কাঁদছে।”
“তিতিল কি এসব শুনেছে?”
“হুম।”
“কতবার করে বলেছি কিছু কিছু মানুষের কথার জবাব তাদের মতো করেই দেওয়া টা জরুরি। কিন্তু এভাবে আর কত? মেয়েটার জীবন তো এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না।”
“তুই আর কি করবি?”
“যা দরকার তাই করব। তুমি দেখো গিয়ে ওকে।”
রেহেলা বেগম দ্রুত পায়ে উপরে গেলেন।
তিতিল তখন বিছানায় উবু হয়ে কান্না করছে। সত্যিই তো সে একটা অলক্ষ্মী অপয়া মেয়ে। বিয়ের পর স্বামীর মুখটাও দেখতে পেল না। আর এখনো তিনি দেশে আসবেন না। তাহলে কেন এই বাড়ি পড়ে আছে সে নিজেও জানে না। মায়ের বোনের অভাবটার জন্যেই এখানে আছে। নাহলে যার স্বামী থেকেও নেই তার আবার শ্বশুর বাড়ি কিসের? তার স্বামীই তাকে মেনে নেয় নি। নিজেকে খুব ছোট নজরে দেখতে লাগল তিতিল। কেন জীবনের তাল বেসামাল হয়ে গেল? গ্রামের মেয়ে বলে তার স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছে। কিন্তু কোন দিক থেকে সে কম? রূপে গুণে হাজারে একটা। তিতিল মনে করে তার ভাগ্যই এটা। দরজায় শব্দ পেতেই সে চোখের পানি মুছে নিল। রেহেলা বেগম তার পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন
“মন খারাপ করে কাঁদছিস?”
“….
“ওমন মানুষের কথায় কান দিতে নেই। আর ইনা তাদের কথা শুনিয়েও দিয়েছে।”
“আম্মা আমি বাড়ি যাবো।”
হঠাৎ তিতিলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে খানিক অবাক হলেন রেহেলা বেগম।
“হঠাৎ বাড়ি যাবি কেন?”
“আব্বা কে দেখতে মন চাইছে।”
“….
“আপনি না করবেন না আম্মা।”
“তুই কি মন খারাপ নিয়ে এমন কথা বলছিস?”
“মন খারাপ করে বলব কেন আম্মা? আমি কিছুদিন থেকেই চলে আসব।”
“….
“আপনি দয়া করে না করবেন না। আমার মন টানছে অনেক বাড়ি যেতে। গ্রামের আবহাওয়ায় হয়তো মন টাও ভালো হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা ইনা কে বলে দেখি।”
“….
—-
অফিসের ফাইল নিয়ে ইনা বসে আছে থম মেরে। ইয়াদ কে কল করবে কি না তাই ভাবছে। তার জন্যে একটা মেয়েকে সারাজীবন কষ্ট পেতে হোক তা ঠিক হবে না। তিতিলেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে। মনে মনে যা করার প্রয়োজন তাই ভেবে নিয়েছে সে। হঠাৎ ফোনে কল আসতেই ইনা ভয়কে গেল। তাকিয়ে দেখতে পেল ইয়াদ কল করেছে। অনেকটা অবাক হয়েছে সে। ৩ মাস হতে চলে সে কল দিচ্ছে না। এখন কল দিল কেন তাই ভাবছে ইনা। ভাবনা রেখে কল রিসিভ করল। স্কিনে ইয়াদের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠল।
“আপু কেমন আছো?”
“ভালো তুই?”
“রাগ করছো বুঝি এতদিন কল দিতে পারি নি বলে?”
ইনা মুখে মেকি হাসি দিয়ে মাথায় না সূচক জানাল।
“জানি তুমি রাগ করছো।”
“ইয়াদ তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।”
“কি কথা আপু?”
“তুই দেশে আয়। একটা জরুরি কাজ আছে।”
“কি কাজ?”
“তোর জন্যে আরেকটা জীবন নষ্ট হোক তা আমরা কেউ চাই না।”
“আরেকটা জীবন মানে?”
“তিতিলের।”
ইয়াদ বুঝতে পেরেছে যাকে বিয়ে করেছিল তার কথা বলছে। কারণ ইনা, হিমা আর তার মার মুখে প্রায় এই নাম টা শুনেছে সে।
“কিরে কথা বলছিস না কেন?”
“আপু আমি কিছুদিনের মাঝেই দেশে আসব আর সেটা জানাতেই আমি তোমাকে কল করেছিলাম।”
ইনা তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল টা কেটে দিল। আর ইয়াদ বোকার মতো বসে রইল ল্যাপটপের সামনে। “স্ট্রেঞ্জ” বলে ইয়াদ উঠে দাঁড়াল। কাপে গরম পানি ঢেলে তাতে দুই চামচ কফি আর আধা চামচ চিনি মিশিয়ে কাপ হাতে নিয়ে কাঁচের দেওয়ালের সামনে গেল। সে বুঝতে পারছে না ইনা এত টা সিরিয়াস আর রাগি হয়ে কথা বলল কেন? আর কেনই দেশে যেতে বলছে।
—-
ইনা গিয়ে দেখতে পেল তিতিল মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ইনা রুমে গিয়েই বলল “মা ভাই কে দেশে আসতে বলেছি।”
চমকে উঠল তিতিল। শুয়া থেকে উঠে বসল সে। রেহেলা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন আসতে বললি?”
ইনা তিতিলের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। মায়ের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,
“তিতিল আর ভাইয়ের ডিভোর্সের জন্যে।”
চলবে♥
#ইস্ক
#সাদিয়া
২
পদ্ম ফোটানোর জন্যে একটা পুকুর কেটেছিলাম।
ঝর্নার মতো জল উঠবে তার পাতাল থেকে।
ভালোবেসে নিজের হাতে কেটেছি হাজার কোয়া মাটি।
কিন্তু পাতাল চিরে উঠে আসেনি স্বচ্ছতোয়া নদী,
দু’কূল ছাপিয়ে উঠেনি স্বর্গীয় মদে ফেনা।
দিন শেষে দেখি পদ্মের মৃণালে শুধু মৃত্যু ফুটে আছে।
মনমরা হয়ে বসে আছে তিতিল। নির্মলেন্দু গুণের কবিতা টা মনে মনে আওড়াচ্ছে সে। এটা তার কেমন জীবন সে বুঝতে পারছে না। আসলেই কি জীবন? শ্বাস নিয়ে পৃথিবীতে চলা ফেরা করার নামই কি জীবন? যদি এর নাম জীবন না হয় তাহলে সে জীবিত থেকেও মৃত। এই জীবনের কোনো মানেই হয় না নিজের কাছে। স্বামী হিসেবে ইয়াদ কে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে সে। ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকবে কি করে সে? এখন তো নিশ্চিত তাকে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই মিথ্যে সম্পর্ক টাও শেষ হয়ে যাবে। তখনো কি করে জীবিত লাশ হয়ে এই দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াবে সে? এ কেমন জীবন দিল তার সৃষ্টিকর্তা? অভিমানী চোখ নিয়ে তিতিল মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভেতরে চাঁপা একটা কষ্ট তাকে বিষাদের অতল সাগরের দিকে আস্তেআস্তে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এখনি বুঝি নিশ্বাস আটকে সেই সাগরে জীবন ত্যাগ করতে হবে।
পিছন থেকে ইনা তাকে ডাকতেই সে মাথা নামিয়ে নিল। চোখের কোণায় আসা নোনাপানি টা মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করল সে। ইনা তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কাঁদছো?”
“….
“তুমি কষ্ট পাচ্ছো আমি জানি। অন্য কেউ জানুক বা না জানুক আমি জানি তুমি ভাই কে ভালোবেসে ফেলেছো। কিন্তু তিতিল তুমি কি মনে করো তুমি এভাবেও সুখে আছো? তিতিল আমি বা মা কেউ চাই না তুমি কষ্টে থাকো। তোমার একটা ভবিষ্যৎ আছে তিতিল। আমার ভাইয়ের জন্যে আমরা তোমার জীবন টা নষ্ট করতে পারি না। আমি আর মা ভেবেছি তোমাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিব।”
বুক চিঁপা দিয়ে উঠে তিতিলে। কষ্টে দম আটকে আসছে। ভেতরটা রুরু করছে। অন্তরের গভীরে কেউ যেন অনবরত আঘাতের উপর আঘাত করে তাকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। চোখের বাঁধ ভেঙ্গেছে তার। কি করে বলবো ওই মানুষটা ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারি না আমি। বাঁচব কি করে? আমি যে তোমার ভাই কে খুব করে চাই ইনা আপু। মনে মনে আরো অনেক কিছু ভাবছে সে। কিন্তু মুখ ফুটে বলা হচ্ছে না তার।
“তিতিল আমি জানি তুমি কষ্ট পাবে খুব। কিন্তু আস্তেআস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যা করছি তোমার ভালোরই জন্যে করছি তিতিল।”
বহু কষ্টে তিতিল বুক চিড়ে বের করল “আ আপু আমি বাড়ি যাবো।”
“হ্যাঁ মা বলল এটা। কিন্তু এখন বাড়ি যেয়ে কি করবে বলো তো?”
“….
“খুব যেতে ইচ্ছা করছে?”
মুখে বলার মতো শক্তি পাচ্ছে না সে তাই মাথায় জানাল। ইনা মুচকি হেসে তার গালে হাত রেখে বলল,
“ঠিক আছে কাল ড্রাইভার কে বলে দিব যেন তোমাকে গ্রামের বাড়ি দিয়ে আসে।”
ইনা চলে যেতেই তিতিল ধপ করে নিচে বসে পড়ল। পা দুটি নিজের খুব কাছে এনে হাতে জড়িয়ে ধরল। শামুকের মতো গুটিয়ে বসে তিতিল চাঁপা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
—-
গাড়িতে বসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের দিকে নির্বাক ভঙ্গিতে চেয়ে তিতিল কত কিছুই না ভাবছে। আম্মা কে ইনা আপু কে হিমা কে খুব মনে পড়ছে তার। আসার সময় তার শাশুড়ি তো কেঁদেই দিয়েছেন। হিমা তো আসতেই দিতে চাইছিল না। ইনা আপুও বলল তাড়াতাড়ি চলে যেতে ওবাড়ি। কিন্তু আর তো সে যেতে চায় না। করুণ ভাগ্যের খেলায় সে হেরে গেছে আগেই। যা হবে শুধু মেনে নিতে হবে নিভৃতে। মুখ ফুটে দোষারোপ সে করবে কাকে? যেখানে উদ্ভিদের মূল শাখাটাই দূর্বল নড়বড়ে একেবারে ভিত্তিহীন।
‘আমি আর যেতে চাই না আম্মা। আপনার ছেলের সাথে ডিভোর্স আমার আজ না হোক কাল হবেই। আপনার ছেলের বুকে হয়তো এতদিনে কোনো সুন্দরি রমনী তার শান্তির নিবাস স্থাপন করে ফেলেছে। আমি আর আপনার বাড়ি ফিরতে চাই না আম্মা। কি হবে ওই কৃত্রিম বাড়ি গিয়ে? যেখানে সুখ নেই শান্তি নেই। আমি গ্রামেই থাকতে পারব। আপনার ছেলের ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিতে আমার খুব একটা আপত্তি হবে না। কিন্তু আমার মন? আমার মনের আহাজারি করুণ হৃদয় বিষাদের কান্না কি শুনতে পাবে না ও? একবারও কি ফিরে তাকাবে না এই বিষাদ সাগরের ডুবন্ত এই আমার দিকে?’
ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই তিতিল ব্যাগপত্র নিয়ে নেমে গেল। ৫ মিনিটের মাটির রাস্তা পেরিয়ে সে বাড়ি ফিরল। তার সৎ মা এগিয়ে এলো।
“কিরে তিতিল তুই আইবি আগে জানাইতি না?”
“সময় হয়ে উঠে নি খালা।”
“আয় ঘরো আয়। তর বাপে এহোনো আইছে না।”
“শান্ত, কলি ওরা কই?”
“শান্ত কি আর ঘরে থাহনের ছেড়া? কই টইটই কইরা ঘুরতাছে। আর কলি ঘরো আছে। তুই ঘরো যা আমি আইতাছি।”
তিতিল ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল। খালার ভাবমূর্তি খুব একটা খারাপ না। হয়তো সে আসাতে খুব একটা বিরক্ত হন নি তিনি। কিন্তু মায়ের মতো আহামরি খুশিও নন। “মায়ের সুখের মাসি তে কবুও মিলে না।”
তিতিলের মা ছোট বেলায় মারা যান। অনেক দিন যক্ষ্মা রোগ আর চিকিৎসা হীনতা নিয়ে মারা যান তিনি। তখন তিতিলের মোটামুটি বুঝ আছে। তার আব্বা আবার বিয়ে করেন। ঘরে সৎ মা আসেন। উনার গর্ভে দুই সন্তানের জন্ম হয়। শান্ত আর কলি। সৎ মায়ের প্রতি তার অনুভূতি কেমন তা না জানলেও শান্ত আর কলিকে নিজের ভাই বোনের মতো করে ভালোবাসে সে।
কলিকে নিয়ে তিতিল ধান খেতের পাড়ে এসে বসে আছে। চারিদিকে সবুজের বন্যা। ধানের শিশ দেখা দিতে শুরু করেছে ফুলের কলির মতো উঁকি দিয়ে। এলোমেলো বাতাসে ধান তালে তালে নৃত্যে মেতে উঠেছে। এক অন্যরকম সুন্দর দৃশ্য। তিতিল এক মনে তাকিয়ে আছে সেই খেলায়। ‘আমার জীবন টাও কেন সবুজে সবুজে ভরে উঠল না? কেন সবুজ সজীব খেলায় আমিও মেতে উঠতে পারলাম না। কি এমন হতো জীবনের ধূসর রং কে রঙ এ রাঙ্গিয়ে তুলতে পারলে?’
তিতিল ডাটা অন করল। বাড়িতে একটুও নেট পাওয়া যায় না। যদি পিছনের ঝোপে যাওয়া যায় তবে একটু দেখা মিলে। তিতিল ফেসবুকে ঢুকে ইয়াদের আইডিতে চলে গেল। নতুন কোনো ছবি আপলোড করেছে কি না দেখতে। ফেসবুক ইন্ট্রাগ্রামে সবসময় সে ইয়াদ কে ফলো করে। সব ঘেটেও যদি একটা ছবি পায় তিতিলের মন টা ঠান্ডা হয়। সেদিন রাত টা ইয়াদ কে নিয়ে কল্পনায় কেটে যায়। কিন্তু ইয়াদ পিক দিতে অনেক লেট করে। ইয়াদের সাথে কখনো সে কোনো মেয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়া পিক দেখেনি। যদি চোখে পড়ে তখন এই নয়ন গুলি কি করে তা গ্রহণ করবে সে জানে না।
তিতিল আইডিতে গিয়ে দেখতে পেল ইয়াদ ছবি আপলোড করেছে। গাড়িতে বসে আছে এক পা ভাঁজ করে। গায়ে সাদা পাতলা একটা শার্ট। সাথে নীল কালারের জিন্স। সূর্যের আলোয় আলোকিত হওয়া চমকপ্রদ একটা ছবি যা তিতিল কে বারংবার ঘায়েল করে দিতে পারে। তিতিল অপলক চেয়ে রয়েছে ইয়াদের দিকে। মনে হাজারো ইচ্ছার প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে এগিয়ে ওদিক করে। অনুভূতিরা পাখির মতো ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে আপন মনে। হঠাৎ নিজের নাম শুনে তিতিল পিছন ফিরে তাকাল। বিস্ময়ের চরম আকাশে উপনীত হওয়ার অভিপ্রায়। শরীরের ভেতরের মাংসপিণ্ড টা এত টা শব্দ তুলে আওয়াজ করছে যা তাকে মুখরিত করে তুলছে ক্রমশ। উথালপাতাল ঝড়ের মতো ভেতরটা কেঁপে চলছে। সামনে যে ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে..
চলবে♥