ইস্ক,০৩,০৪

0
753

#ইস্ক,০৩,০৪
#সাদিয়া


তিতিল ধীর গলায় বিড়বিড় করল “ইয়াদ।”

ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল সে। ভেতরটা কেমন করছে সে বুঝাতে পারবে না। কাঁপা গলায় বলল “আ আপনি এসেছেন?”

তিতিলের কাজে কলি পিছন ফিরে তাকাল। তার মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠে। সে তার আপা কে বলল “আপা এইহানে কেউ নাই।”
কপালে ভাঁজ তুলে তিতিল সামনে তাকাতেই চারিদিক শূন্য দেখতে পায়। বুক টা মোচড় দিয়ে উঠে। চোখের পানি টা এবার টুপ করে পড়েই গেল। তিতিল নিচে ধপ করে বসতেই কলি চেঁচিয়ে বলে উঠে “আপা।”

মানব শূন্য জায়গায় তিতিল চিৎকার করে কাঁদছে। তার কান্নার হৃদয় কাঁপা শব্দে কিছু পাখি উড়ে যায় ওখান থেকে। কলি পাথরের মতো তাকিয়ে আছে। হাটু ভাঁজ করে তিতিল কেঁদেই চলেছে। গলা ছেড়ে চিৎকার করে মনের চাঁপা যন্ত্রণা টা ঝেড়ে ফেলছে সে। বুকের ভেতরটা ভারি হয়ে এলেও অদ্ভুত রকম একটা শান্তি পাচ্ছে সে। চুপচাপ বসে আছে তিতিল। ভাবমূর্তি বলছে প্রাণ শূন্য একটা বস্তু পড়ে আছে। কলি ভয়ে ভয়ে ডাকল তিতিল কে। বার কয়েক ডাকার পর সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল কলির দিকে। কলি আতকে উঠল। ভয় পেয়ে সে বুকে থুথু দিল। তিতিল আবার আগের মতো করে শূন্যে তাকিয়ে আছে ফোলা ঢলে পড়া চোখ দুটো নিয়ে। সবুজ খেতটা তার কাছে ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল।

কলি দৌড়ে তার মা কে নিয়ে এলো। রাস্তায় সখিনা অনেক বকলেন মেয়েকে এখানে নিয়ে আসার কারণে। কলি সেই জায়গায় সখিনা কে নিয়ে যাওয়ার আগেই দেখতে পেল তিতিল হলুদ কাপড়ে এগিয়ে আসছে। সখিনা কলি দুজনে দাঁড়িয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। মৃদু গলায় সখিনা ডাকলেন “তিতিল।”

“আমি ঠিক আছি একেবারে। বাড়ি চলো।”
তিতিল আবার ধীর পায়ে হাটতে লাগল। তাকে বেশ অদ্ভুত দেখাচ্ছে। সখিনা তিতিল কে নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। রাগে মেয়ের পিঠে এক ঘা দিয়ে তার পিছু ধরল।

তিতিল নিজের ঘরে এসে সেই যে ঘুমিয়েছিল রাতে আর উঠেনি। সকালে তার বাবা তাকে ডেকে তুলে।

“আম্মা ওতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাও তুমি?”

“সকাল হয়ে গেছে খুঁজই পাই নি আব্বা।”

“হাত মুখ ধুইয়া আও এক লগে খাইয়াম।”

“আচ্ছা।”

তিতিল ঘরে গিয়ে ব্যাগ থেকে ব্রাশ বের করল। সত্যিই কাল রাতের মতো ঘুম বিয়ের পর থেকে হয়নি তার। কালকের ওই চিৎকার করা কান্নায় চাঁপা কষ্টটাকে আকাশে বাতাসের সাথে উড়িয়ে দিয়ে খানিক মন হালকা হলো। স্মিত হেসে তিতিল কলপাড়ে গেল হাত মুখ ধুতে।

—-
আজও যখন তিতিল কলিকে বলল হাটতে যেতে তখন কলি সুন্দর করে না করে দিয়েছে। তবুও সে জোর করে নদীর রাস্তা ধরে হাটছে। টলটলে পানির ধ্বনিতে মৃদু হেটে উঠল তিতিল। কোথা থেকে যেন রাজিব হাজির। হঠাৎ সামনে আসায় তিতিল ভরকে গেল। কপাল কুঁচকে সামনে তাকাতেই পথ কাটিয়ে যেতে চাইলেও রাজিব তার পথ আটকায়।

“তিতিল তুই কি এহোনো ওই বাড়ি পইড়া থাকবি?”

“….

“তিতিল ফিরা আই না আমার কাছে। খুব ভালা রাহাম তোরে।”

“পথ ছাড়েন রাজিব ভাই।”

“আমারে কেরে কষ্ট দিতাছোস তুই? তুই জানোস না আমি তোরে কতটা ভালোবাসি। আর তুই..”

পাশ থেকে কলি বলে উঠল “ওই বেটা আপা কইতাছে না পথ ছাড়তে?”

“একদম বেশি কথা কইবি না কইলাম কলি।”

“কতা না হুনলে তো কওন লাগবই রাজিব ভাই।”

তিতিল কড়া গলায় কলি কে ডাকল। চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলল। তারপর শান্ত গলায় রাজিব কে বলল,
“দেখেন রাজিব ভাই আমার জীবন টা উল্টপাল্ট হয়ে গেছে। আমার এই ছন্নছাড়া জীবনের ধারেকাছেও আসবেন না আপনি। আপনাকে একটা কথা আবারো পরিষ্কার করে বলে দেই আমার বিয়ে একবার হয়ে গেছে সেটা যেমনি হোক। মৃত্যুর আগের আর বিয়ে করব না আমি। আমার আশা না করে আপনি বিয়ে করে সুখী হন। আপনি খুব ভালো মানুষ আর আপনার জন্যে গ্রামের অনেকে পাগল। অনেকের বাবা আপনার সাথে মেয়ে বিয়ে দিতেও রাজি। যেটা হবার নয় তার আশায় বসে থাকা নিহাতই নির্বোধের কাজ। আপনি শিক্ষিত হয়েও অবুঝের মতো কাজ করবেন না। আমাকে আর বিরক্ত করতে আসবে না রাজিব ভাই। ভালো থাকুন।”
তিতিল দ্রুত পায়ে সে স্থান ত্যাগ করল।রাজিবের চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে। তিতিল যদি তাকে আশা না দেখাত তাহলে কি সে দেখত? মন ভাঙ্গার কষ্ট সহ্য করা দুষ্কর। অনেক ভালোবাসে সে তিতিল কে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে করুণ চোখে তিতিলের যাওয়া দেখল তারপর নাক টেনে নিজের রাস্তা ধরল।

মাটির রাস্তা ধরে হাটছে তিতিল। মুখে তাচ্ছিল্যের আভা। রাজিব নামের ছেলেটা তাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে তা সে জানে। অনেকবার তার মনের কথা বলেছে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে কয়েকবার। উত্তরে সে বলেছিল “রাজিব ভাই আপনি এত অস্থির হবেন না। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আমার যদি আপনার ঘরে যাওয়ার থাকে এমনি যাবো। আপনি প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব বলে আমাকে বিব্রত করবেন না। আপনার যা বলার আব্বা কে গিয়ে বলবেন।”
কিন্তু রাজিব তো সময় পেলোই না। তার আগেই তো রেহেলা বেগম এসে ছেলের জন্যে নিয়ে গেলেন। কিন্তু সেই ছেলেই ছেড়ে চলে গেল। তাচ্ছিল্যের হাসি বড় হয় তার। মনে মনে বিড়বিড় করে ‘কি অদ্ভুত ভাগ্যের লিলাখেলা। যে আমাকে ভালেবাসে তাকে আমি চাই না। আর যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকেই চায় না। কি সুন্দর সমীকরণ।”

তোমাকে দেখার লাগি
পথ চেয়ে আমি বসে আছি,
আসবে কবে তুমি প্রিয়,
তৃষ্ণায় আমার হৃদয় চূর্ণ।
বুক পিঞ্জরে জ্বলছে আগুন পুড়ছি আমি
বৃষ্টি হয়ে এসো তুমি সুহৃত্
নিভাও আগুন ডালো বারি।
তৃপ্ত করে চুপটি করে বসাও ক্রোরে
আদর সোহাগে টুইটুম্ভুর করে তুলো মোরে।
শুধাও কেন ওমন করি,
ভেতরে ভেতরে জ্বলে মরি
প্রতিবাক্যে আমি বলব হেসে,
তোমাকে দেখার তৃষ্ণা বুঝি রইবে আমার আমৃত্যু ধরে।

তিতিল বাড়িতে এসেই আৎকে উঠল। ভেতরটা কেমন রুরু করছে। ছলছল চোখ নিয়ে স্তব্ধ হয়ে পা এটে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়েও অবাক হওয়াটা অনৈসর্গিকই বৈকি। এমনটা তো হওয়ারই ছিল!

চলবে♥

#ইস্ক
#সাদিয়া


তিতিল তো আগে থেকেই জানত না চাইতেও তাকে আবার ও বাড়ি ফিরতে হবে। রেহেলা বেগম এসেছেন বাড়িতে। বেশ কিছুদিন হলো সে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে না বলেই এসেছেন। কাল থেকে নিজের ফোন টাও বন্ধ করে রেখেছে মেয়েটা। আর যে ও বাড়ি ফিরতে চায় না। অগোছালো জীবন টা না হয় এমনি থাক।
ত্রাসগতিতে তিতিল এগিয়ে গেল। আজকালকার যুগে এমন শাশুড়ি পাওয়া দুষ্কর। এমনটা বোধহয় স্বামী ঠিক নয় বলেই হয়তো পেয়েছে। কিন্তু মায়ের মতো শাশুড়ির মুখে মুখে কি করে না করবে সেটা নিয়েই নানান চিন্তায় এতটা নুয়ে গেছে পা সামনে এগুচ্ছে না। তিতিল কে দেখতে পেয়ে রেহেলা ডাকলেন।
“আমার তিতিল মা।”

সংবিৎ হয়ে এলো সে। টান হয়ে দাঁড়িয়ে স্নেহের তৃষ্ণায় চাতক পাখির সুরে বলল “আম্মা।” রেহেলা হাত বাড়িয়ে দিতেই অশ্রু ভরা নয়নে তিতিল খানিক ঝাপটে ধরল গিয়ে। জিজ্ঞেস করল
“কেমন আছেন আম্মা?”

“তোকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারি বল?”

তিতিল জবাব দিল না। দম নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল “ইনা আপু কেমন আছে?”

“ভালো আছে। আসার সময় বারবার বলে দিয়েছে তোকে না নিয়ে যেন না ফিরি।”

“….
মুখ কালো হয়ে এলো মেয়েটার। মুখের ভাষা উবে গেছে যেন। রেহেলা বেগম বললেন,
“ইনা অফিসের জন্যে আসতে পারে নি। কিন্তু তোকে মিস করছে।”

স্মিত হাসল তিতিল। বলল,
“হিমা কেমন আছে আম্মা?”

“হিমার কথা আর বলিস না মা। এই শরীর নিয়েও আসার জন্যে যা পাগল হয়ে গিয়েছিল। আমিই না করেছি গ্রামের রাস্তার ঝাঁকিতে আরো কষ্ট হবে ওর। তুই তো জানিসই প্রতিমাসের এই সময়টা পেটের কতটা তীব্র ব্যথা সে সহ্য করে।”

“ভালো হয়েছে আম্মা আনেন নি। নয়তো আরো কষ্ট হতো।”

“হ্যাঁ। যা তুই এবার তৈরি হয়ে নে মা। অনেকটা পথ যেতে হবে তো ড্রাইভার অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।”

জোর করে হাসি তুলা মুখটা শুকনো পাতার মতো শুকিয়ে গেছে। একটু ছোঁয়া পেলেই বুঝি মচমচ করে ভেঙ্গে যাবে। তিতিল কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সখিনা বলে উঠলেন,
“বিয়াইন আইজ যাইবান গা কিতা কইন? আইজ থাকবাইন আমরার বাড়িত। কাইল যাইবাইন।”

তিনি হেসে জবাব দিলেন “এটা সম্ভব না বেয়ান। আমাকে আজই ফিরতে হবে। হিমা অসুস্থ একা বাড়িতে। তিতিল আসছিল না ফোনটাও বন্ধ ছিল বলে তাড়াতাড়ি চলে এলাম। অন্য দিন এসে অনেক দিন থেকে যাবো।”

তিতিলের বাবা কাঁধ থেকে গামছা টা নামিয়ে বললেন,
“বিয়াইন এমনে আপনি যাইবাইন গা এইডা আমি মানতারতাছি না। আপনি খাইয়া পরে যাইবাইন।”

“বেয়ান তাহলে খুব দেরি হয়ে যাবে। আমি অন্য দিন সবাই কে নিয়ে আসব।”

“একটুআধটু দেরি হইলে কিছু হইত না বিয়াইন। আমি বাজারো যাইতাছি। এহনি আইয়া পরাম।”

তিতিলের বাবা যাওয়ার আগেই তিতিল বলল,
“দাঁড়াও আব্বা। তোমাদের সবার সাথে আমার কথা আছে একটা।”

সবাই তিতিলের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে কি বলে তার আশায়। তিতিল কে চুপ থাকতে দেখে তার বাবা বললেন,
“কি কথা আম্মা?”

“…

রেহেলা বেগম বললেন,
“তিতিল কি বলবি তুই?”

তিতিল তখনো চুপ। এক পাশে আগ্রহী চোখে তাকিয়ে রয়েছেন সখিনা। তিতিল সবার দিকে তাকাল। তারপর মাথাটা নুয়ে বললো,
“আম্মা আমি আর ঢাকা ফিরব না।”

চমকে উঠল তার কথায় সবাই। রেহেলা বেগম সঙ্গেসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি বলছিস এসব তিতিল?”

“….

রব্বানি মিয়া কপালে অনেক গুলি ভাঁজ নিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
“আম্মা কি কইতাছো তুমি? কিছু হইছে?”

“….

“কিরে তিতিল বল কিছু।” বললেন রেহেলা বেগম।

নীরবতা ভেঙ্গে তিতিল বলল,
“এখানে বলার কি আছে আব্বা? সবটাই তো সবার জানার। আমি ও বাড়ি গিয়ে কি করব? এতদিন ছিলাম আম্মা আর ইনা আপু হিমার জন্যে। এখন আম্মার ছেলে আসবেন দেশে। উনি এসে ডিভোর্স দিলেই তো শেষ। তাহলে আমার ও বাড়ি যেতে হবে কেন। সাইন টা না হয় এখান থেকেই দিয়ে অধ্যায় টা চুকালাম।”

ধমক আর রাগান্বিত স্বরে রেহেলা বেগম ডাকলেন “তিতিল।”
মেয়েটা ভয় মিশ্রিত নয়নে রেহেলা বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নত করে আনল। তারও কি আর কম কষ্ট হচ্ছে?

“আমার ছেলে তোমায় ডিভোর্স দিবে কি দিবে না সেটা আমার ছেলেই বুঝবে তুমি না। আর তোমার সাথে আমার ছেলের ডিভোর্স এখনো হয় নি। হলে সেটা পরে দেখা যাবে। এখনো তুমি আমার ছেলের বউ আমার পুত্রবধূ। আর সময় নষ্ট না করে যাও তৈরি হয়ে নাও। এখনি রওনা হবো আমরা।”

রেহেলা বেগমের মুখে কড়া কথার আভাস পেয়ে তিতিলের বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। বুক উপচে কান্না এলেও চেঁপে রাখার বহু চেষ্টা করছে সে। ধরে আসা গলায় সে শুধু বলল “আ আম্মা।” তিতিল কে কথা বলতে না দিয়ে রেহেলা বললেন,
“যা বললাম তা করো।”

তিতিল ঠাই দাঁড়িয়ে আছে মাথা নুয়ে। তখন রব্বানি বললেন,
“বিয়াইন আমার আম্মা এইতা কিতা কয়? ডি ডিফোসের কথা? এইডা মানে তো তালাকনামা না? ওহন তো অনেকের মুহে হুনি এই কতা। কিন্তু আমার ছেড়ি এইতা কি কয় বিয়াইন?”

রেহেলা বেগম মুখের আগের সেই কঠিন রাগী ভাব বজায় রেখে বললেন,
“আপনাকে আমি পরে বলছি সবটা।”
কথা থামিয়ে তিনি তিতিলের দিকে তাকালেন। বললেন,
“তোমাকে কি বললাম তিতিল? যাও তৈরি হয়ে নাও।”

চোখের পানিটা আড়াল করে তিতিল চুপচাপ তার ঘরে চলে গেল। কান্নায় ফেটে পড়ল আবার চাঁপা কষ্টে। ভেতরের তার এই উত্তপ্ত যন্ত্রণা টা কেউ দেখতে কেন চায় না? চোখের পানি একের পর এক বাঁধাহীন গড়াচ্ছে।

গাড়িতে রেহেলা বেগম একটা কথাও বললেন না তিতিলের সাথে। শক্ত কঠিন একটা আবরণে উনার মুখ আবৃত। তিতিল কয়েক বারই চেয়ে দেখেছে, কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সাহসে ধরে নি।

—-
বাড়ি ফিরার দুইদিন পর তিতিল সাহস করে রেহেলা বেগমের ঘরে গেলেন। উনার হাতে রবীন্দ্রনাথের “চোখেরবালি।” হঠাৎ বুকটা আতকে উঠল উপন্যাসটার দিকে চোখ পড়ে। আশালতার মতো হয়ে যাবে না তো তার জীবন টা? সত্যি কি মহেন্দ্রের মতো ইয়াদের জীবনেও কোনো বিনোদিনী এসে তার জায়গাটা আস্তেআস্তে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসবে ছলনাময়ীর মতো? ভাবতেই শিউরে উঠল সারা শরীর। অবশ্য মহেন্দ্র তো প্রথম দিকে নিজের স্ত্রী কে ভালোবাসত। পরে না বিনোদিনী মহেন্দ্রের মাথা আর মন দুটোই দখলে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ইয়াদ তো আর তাকে ভালোবাসে নি। তাই আশালতা হওয়ার কি আছে? এমনিতে সে আশালতার স্বভাবেরই। কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে চিন্তায় মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে।

রেহেলা তিতিল কে শূন্যে তাকিয়ে মুখে অদ্ভুত হাসির আভা দেখে ডাকলেন।
“তিতিল।”

তিতিল বাস্তবে ফিরে। এগিয়ে গেল উনার কাছে। বলল,
“আম্মা।”

“কিছু কি বলবি?”

“আম্মা আপনি আমার উপর রেগে আছেন?”

“….

“মাফ করে দেন আম্মা। আমি তো কষ্টে..”

“তিতিল মা তোর উপর আমি রাগ করি নি। কষ্ট পেয়েছিলাম। আর আমার সবসময়ই মনে হয় তোর কষ্ট গুলি আমার কারণেই।”

“এমন না আম্মা।”

“আড়াল করার দরকারই বা কি তিতিল? তুইও তো জানিসই। আর শুন আল্লাহ কখন কি চায় কে জানে বল তো? ভবিষ্যৎ কি হবে তা একমাত্র মহান আল্লাহ তা’য়ালাই ভালো জানেন। এত অগ্রিমও ভাবতে নেই।”

“কিন্তু আম্মা এবার তো ডিভোর্স টা হয়েই যাবে। তারপর তো আমি…”

“হয়নি তো? কে বলতে পারে আমার ইয়াদ তোকে ডিভোর্স দিতেই চাইল না।”

মুখে তার কার্টুন হাসি ফুটে উঠে। রেহেলা বেগম তার গালে হাত দিয়ে বললেন,
“মনে আশা রাখ মা। মনের নিবে আশা প্রদীপ কে আঁকড়ে ধর ঝড়ো হাওয়ার থেকে। দেখবি ঝড় কমে গেলে এই নিবে আসা প্রদীপই আলোকিত করবে তোকে।”

“….

“চিন্তা করিস না। তোকে একটা কথা বলার আছে।”
বলে মুচকি হাসলেন রেহেলা। আর তিতিল কপালে দাগ কেটে তাকিয়ে রয়েছে সেই কথা শুনার চেষ্টায়।

দৌড়ে তিতিল নিজের ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেই নোনাজল এসে ভিড় করেছে। বুকের ভেতর ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সত্যি এবার কি সময় ফুরিয়ে এলো এখানে? তিতিল অস্পষ্ট চোখে ঘরের দিকে চোখ বুলাল। ঘরটা তো ইয়াদের। এতদিন তার রুমেই তো সে ছিল। এবার বুঝি প্রহর শেষ হলো। দুই বছরে তো মায়াই জন্মে গেছে এই ঘরের প্রতি। এবার গিয়ে অন্য কোথাও সে রইবে কি করে। ভেবেই আরো কান্নায় চোখ দুটি চিপচিপে হয়ে এলো তার। আর তো এই ঘরে তার আর থাকা হবে না। কাল ইয়াদ আসছে যে।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here