#ইস্ক,০৫,০৬
#সাদিয়া
৫
এতদিন কিছু একা থেকে শুধু খেলেছি একাই,
পরাজিত প্রেম তনুর তিমিরে হেনেছে আঘাত
পারিজাতহীন কঠিন পাথরে।
প্রাপ্য পাইনি করাল দুপুরে,
নির্মম ক্লেদে মাথা রেখে রাত কেটেছে প্রহর বেলা-
এই খেলা আর কতোকাল আর কতটা জীবন!
কিছুটাতো চাই- হোক ভুল, হোক মিথ্যো ও প্রবোধ,
অভিলাষী মন চন্দ্রে না-পাক জোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।
আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন- আর কতোদিন?
ভাষাহীন তরু বিশ্বাসী ছায়া কতটা বিলাবে?
কতো আর এই রক্ত তিলকে তপ্ত প্রণাম!
জীবনের কাছে জন্ম কি তবে প্রতারণাময়?
এতো ক্ষয়, এতো ভুল জমে ওঠে বুকের বুননে,
এই আঁখি জানে, পাখিরাও জানে কতোটা ক্ষরণ
কতোটা দ্বিধায় সন্ত্রাসে ফুল ফোটে না শাখায়।
তুমি জানো নাই- আমি তো জানি,
কতটা গ্লানিতে এতো কথা নিয়ে, এতো গান,
এতো হাসি নিয়ে বুকে নিশ্চুপ হয়ে থাকি।
বেদনার পায়ে চুমু খেয়ে বলি এইতো জীবন,
এইতো মাধুরী, এইতো অধর ছুঁয়েছে সুখের সুতনু সুনীল রাত।
তুমি জানো নাই- আমি তো জানি।
মাটি খুঁড়ে কারা শস্য তুলেছে,
মাংসের ঘরে আগুন পুষেছে,
যারা কোনোদিন আকাশ চায়নি নীলিমা চেয়েছে শুধু,
করতলে তারা ধ’রে আছে আজ বিশ্বাসী হাতিয়ার।
পরাজয় এসে কন্ঠ ছুঁয়েছে লেলিহান শিখা,
চিতার চাবুক মর্মে হেনেছো মোহন ঘাতক।
তবুতো পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মুখর হৃদয়,
পুষ্পের প্রতি প্রসারিত এই তীব্র শোভন বাহু।
বৈশাখী মেঘ ঢেকেছে আকাশ,
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়-
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমানে পুড়ে একা আর কতটা জীবন?
কতোটা জীবন!!
তিতিল ঘর গুছিয়ে সবেমাত্র জানলার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশাল বাগান টা স্পষ্ট এখান থেকে দেখা যায়। গাঢ় নীল আকাশ ছেয়ে গেছে স্বচ্ছ সাদা মেঘে। খুব লোভনীয় দেখাচ্ছে ওই আকাশটা। তিতিল আপন মনে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অভিমানের খেয়া কবিতা টা বিড়বিড় করে বলল ওই লোভনীয় নীল সাদাব আকাশের পানে চেয়ে। কবিতা যেন জীবন। জীবন যেন কবিতার প্রতিটা লাইন প্রতিটা শব্দ আর প্রতিটা অক্ষর। তিতিল একটা নতুন রুমে দাঁড়িয়ে আছে। আজই পরিষ্কার করেছে এটা। রুমটায় আগে কখনো আসেনি সে। কিন্তু মন্দ লাগছে না দেখতে। তিতিল আবার দেখল সবটা রুম। সবেমাত্রই নিজের টুকটাক জিনিস গুছিয়ে রেখেছে সে। বিশাল মাপের নয় বলেই হয়তো ঘরটা এত ভালো লাগছে। তাছাড়া ব্যালকুনি দিয়ে সাঁইসাঁই করে আসা বাতাস তাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। তিতিল খানিক হেসে হেটে হেটে ব্যালকুনিতে গেল। এই রুমে আসতে রেহেলা না করলেও সে শুনেনি। যার সাথে জীবন কাটা হবে না তার সাথে এক ঘরে থাকার কি মানে? আরো মায়ায় মুখ থুবড়ে পড়া। তিতিল অনেক কষ্টে এই রুমে পাড় হয়েছে। হয়তো একটু বাদেই ইয়াদ বাড়িতে ঢুকবে। তিতিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেয়। মুহূর্ত যেতে না যেতেই গেইট দিয়ে গাড়ি ঢুকল। মেয়েটা জানে এখানেই তার স্বামী তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটা আছে। সাথে সাথে তিতিল উল্টে পিঠে ঘুরে যায়। বুকের মাঝের মাংসপিণ্ড টা আওয়াজ করে উঠানামা করছে। সেই ধ্বনি যেন তাকে আরো বিব্রত করে তুলছে। তিতিল দৌড়ে রুমের ভেতর চলে গেল। কান্না আটকাতে জোরে জোরে নিশ্বাস ফালতে লাগল। ভেতরে চাঁপা কষ্টের ওজন ক্রমশ অতিশয় হয়ে উঠছে।
ইয়াদ তার মাকে সালাম করে সটান হয়ে দাঁড়ালে তিনি মুগ্ধ নয়নে তাকালেন ছেলের দিকে। বিশাল দেহের চওড়া গ্রীবা। আগের চেয়ে আরেকটু ফর্সা হয়েছে ছেলে। রেহেলা বেগম হাসলেন।
“মা কিছু বলবে না?”
“….
“রেগে আছো?”
“ছেলের উপর রাগ করব কেন?”
উত্তরে ইয়াদ কিছু বলল না। রেহেলা বললেন,
“ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খেতে।”
“মা তাকাও আমার দিকে।”
রেহেলা না তাকানোতে ইয়াদ উনাকে জড়িয়ে ধরল। মায়ের মন গলে পানি। ছেলে কে চুমু দিয়ে মুখে হাত বুলালেন।
—-
চিংড়ি দিয়ে লাউ, পুইশাক, গরুর কালো ভোনা, দেশি মুরগীর ঝোল, ডিমওয়ালা সর্ষে ইলিশ আর রুই মাছের ঝোল সব একা রান্না করেছে তিতিল। যদিও প্রতিদিন সে নিজেই রান্না করে কিন্তু আজ অনেক আগ্রহ আর মনোযোগ দিয়ে রান্না করেছে। ইয়াদ সর্ষে ইলিশ টা পাতে চেটেপুটে খেয়ে লাউ চিংড়ি নিয়েছে। চোখ বন্ধ করে মুখের ভাবই বদলে নিয়েছে সে। মুখে স্বাদের শব্দ তুলে বলল,
“মা লাউ চিংড়ি টা যে বানিয়েছো না। ইশশ অনেক সুস্বাদু হয়েছে।”
কেউ কিছু বলল না। রেহেলা হিমা ইনা একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দিকে চোখ বুলাল। ইয়াদ আবার বলল,
“মা তোমার রান্না এখন যে আরো মজা হয়েছে তা জানতামই না। আগে জানলে তো কবেই চলে আসতাম দেশে।”
ইয়াদ আর কথা না বলে নিজের মতো করে খাচ্ছে। আজ অনেক বেশি খাচ্ছে সে।
ইনা মুখের ভাব শক্ত করল আর বলল,
“ভাই এই গুলি মা রান্না করে নি।”
ইয়াদ তাকাল ইনার দিকে। তারপর মায়ের দিকে। তিনি নিজের মতো খাবার গিলছেন।
ইয়াদ ভ্রুকুটি করে আবার ইনার দিকে তাকাল।
“আমাদের বাড়িতে এখন মা রান্না করে না ভাই।”
খানিকটা অবাক হলো ইয়াদ। ফরিদা আন্টির করা রান্না এ বাড়িতে খাওয়া হয় না। আর উনার রান্না এতো টা ভালো তো কখনোই না। ইয়াদ জিজ্ঞাস করল,
“তবে রান্না করল কে?”
“….
“কি হলো আপু? মা রান্না না করলে কে করল? তুমি নিশ্চয় না।”
“তিতিল।”
স্তব্ধ হলো ইয়াদ। খানিক নড়েচড়ে বসল সে। নিজের অবস্থা এক রেখে আশপাশে চোখ দিল। কোথাও কেউ নেই তারা ছাড়া। টেবিলের কোণায় তো শুধু ফরিদা আন্টি খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন।
ইনা বলল,
“খাবার তিতিল রান্না করেছে।”
“….
“তিতিল এত ভালো রান্না করে জানলে কি তুই আরো আগে চলে আসতি ভাই?”
“….
কথার সাথে খাবারও আটকে এলো ইয়াদের। এই উত্তর কি হবে সে তো জানে না। কোনো রকম পাতের ভাত গুলি নিশ্চুপে খেয়ে উঠে গেল সে। সোজা নিজের রুমে গেছে। ইনা মা আর বোনের দিকে তাকিয়ে খাবার ছেড়ে উঠে গেল।
—-
জানলার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিতিল। বৃষ্টির কণা এসে তাকে ডাকছে। বিন্দু বিন্দু পানি গুলি তিতিল অন্য হাতে স্পর্শ করল। মন টা আজ ভীষণ খারাপ। কারণ জানে না খুঁজতেও চায় না। তার ঘর থেকে ছাদ খুব একটা দূরে নয়। তিতিলের ঠোঁটের কোণায় হাসি দেখা যায়।
ইয়াদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকুনিতে। দমকা হাওয়ার সাথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি তার শরীর কে অর্ধেক ভিজিয়ে দিয়েছে। সেদিকে কোনো হুশ নেই তার। সে চিন্তা করছে তিতিল নামের মেয়েটি কে নিয়ে। যাকে কিনা সে বিয়ে করেছিল। স্বেচ্ছায় নয় মায়ের কথায়। গ্রামের মেয়ে আর কেমনই বা হবে? গ্রামের ওমন সেকালের এক মেয়েকে নিয়ে কি করে সে জীবন কাটাবে? মুখও দেখেনি সে। বিয়ের আগে গ্রামে গিয়ে কবুল বলেই গাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল একা। তার পর দিন সেই যে বাসা ছেড়েছিল আর মেয়েটার কথা তার মনে হয়নি। কিন্তু এখনো যে মেয়েটা তার বাড়ি থাকবে বা থাকতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি। এদিকে তার বোন তো বলল তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তখন হয়তো নতুন করে শুরুর কথা চিন্তা করবে সে।
ইয়াদ যখন নিজের দিকে খেয়াল দিল তখন প্রায় ভিজেই গিয়েছে সে। মাথার হাল্কা ভিজে চুল গুলি ঝাঁকিয়ে ছাদে ছুটল বৃষ্টির পানি শরীরে মাখবে বলে।
ইয়াদ ছাদের শেষ সিঁড়িতে পা দিতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। চোখ গুলি তার যেন ঠিক ওখানেই আটকে আছে। চোখের সামনে এক তরুণী উল্টো পিঠে হাত প্রসারিত করে উর্ধমুখে দাঁড়িয়ে আছে। শূন্য আকাশে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকা সেই তরুণীর আকর্ষণীয় দেহে ভিজে কাপড় একদম লেপ্টে আছে। তরণীর লম্বা কালো কেশ গুলি যেন ভিজে অঙ্গ ঢাকতেই পাহারাদার হয়েছে। তার ওমন দৃষ্টি থেকে রক্ষা করতেই যেন চুল গুলি এক সাথে লেগে ওই দেহ আড়াল করছে। ইয়াদ স্তম্ভিত। চোখের পাতা স্তব্ধ। হৃদয় নামক যে মাংস স্তূপ টা আছে সেটার স্পষ্ট কম্পন তাকে মুখরিত করে তুলছিল।
চলবে♥
#ইস্ক
#সাদিয়া
৬
ইয়াদের মনে কিছু একটা প্রবল বেগে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। কোথাও যেন সে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে আটকে আছে। বৃষ্টির ঝাপটা চোখ অস্পষ্ট করে দিচ্ছিল বলে ইয়াদ ডান হাতে চোখ মুছে আবার অপলক দৃষ্টে তাকাল সেই তরুণীর দিকে। ভেতরের এমন নাম না অনুভূতির ছুটাছুটিতে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে সে।
তিতিলের মনে হচ্ছিল কেউ তার পিছনে আছে। কিছুক্ষণ ধরেই এমন টা মনে হচ্ছে। তিতিল হঠাৎ করে পিছন ফিরতেই দেখতে পেল সুদর্শন সেই যুবক কে। যাকে ফোনের ছবিতে দেখে এসেছে। প্রতিরাত স্বপ্নে এসেছে। এটা তো সেই পুরুষ। তিতিলের চোখ বেয়ে দুই ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরল। কিন্তু তা বুঝার সাধ্যি কারো নেই। বৃষ্টি ভেজা চোখ মুখে দুই ফোঁটা নোনা পানি খুঁজ কে নিবে?
ইয়াদ তখনো শ্বাসবন্ধ হয়ে আসা পরিবেশে আটকে আছে। সামনের সেই তরুণীর চোখ গুলি হৃদয়ে ঢেউ তুলে দিচ্ছিল বারবার। চুল দিয়ে গাল ঠোঁট ঢাকা। চুল গুলি যে মেয়ের মস্তবড় পাহারাদার এতক্ষণে সে এটা বেশ বুঝেছে। মুখ বলতে ওই চোখ গুলিই যা অবলোকন করেছে সে। হঠাৎ খেয়াল করল মেয়েটি আবার উল্টো পিঠে ঘুরে ভিজে ওড়নাটা মাথায় তুলে নিল। ইয়াদের কপালে কয়েকটা ভাঁজ পরল তখন।
তিতিলের হৃদয় টা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই বিরহের যন্ত্রণা অসহনীয়। কেউ যেন তার পিঠে ছুড়িঘাত করার কষ্ট অনুভব করছে সে। দম টা আটকে আসছিল তার।কোনো রকম ইয়াদের পাশ কাটিয়ে আসার সময় লোকটা বলল,
“কে তুমি?”
পা আটকে আসল তার। বরফে একদম জমে যাওয়ার অভিপ্রায়। নিশ্বাস তার নাকের ঢগায় এসে আটকেছে। শরীর টা সামনে এগুনোর মতো শক্তি অবশিষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে না। মাথা টাও ঘুরছে। মাথা ঘুরে না পরলেই হয়। ঘনঘন ভিজে চোখের পাতি ফেলল তিতিল তবে ফিরে তাকাল না।
ইয়াদ আবার জিজ্ঞেস করেছে,
“কি হলো কে তুমি?”
তিতিলের বলার মতো শক্তি নেই। আর গলায় এসে সব যেন দলা পাকিয়ে গেছে। শরীর গুলোচ্ছে তার। দেরি না করে তিতিল কোনো রকম সেখান থেকে চলে এলো। ইয়াদ পিছন থেকে কয়েকবার ডাকল। কিছু না বলে চলে যাওয়াতে খানিক রাগ হলেও থামিয়ে নেয় সে। মেয়েটা কে সে জানতে চায়। চোখ গুলি বারবার ভেসে উঠছে কি না!
হিমা দৌড়ে ইনার রুমে গেল। আজ তো সে বাসাতেই আছে ইয়াদ আসছে বলে। গিয়ে দেখতে পেল ইনা ফোনে কথা বলছে। ‘আপু আপু’ বলে হিমা একদম তার কাছে গেল। হিমা কে ব্যস্ত হয়ে আসতে দেখে ইনা কল কেটে তাকে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে?”
“….
“কিরে বল কি হয়েছে?”
“আ আপু ভাইয়া..”
“কি হয়েছে ভাইয়ের?”
দম নিল একটু হিমা। তারপর বলল,
“বৃষ্টি হচ্ছিল বলে আমি তিতিল আপুর রুমে গেলাম গোসলের কথা বলতে গিয়ে দেখি নাই। তারপর ছাদে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম ভাইয়া আর তিতিল আপু ভিজে শরীরে দাঁড়িয়ে ছাদের মাথায় কি যেন বলছি। আপু ভাইয়া যদি তিতিল আপু কে..”
ইনা কতক্ষণ নিজের মতো করে কিছু একটা চিন্তা করল। তারপর হিমা কে কড়া গলায় শাসন করল ওদের বিষয়ে নাক না গলাতে। হিমা হেসে চলে যাওয়ার পর ইনা ভাবতে লাগল কিছু। হুট করে ঠোঁটের এক পাশ খানিক প্রসারিত হলো তার।
—-
মাঝরাত হয়ে গেলেও ইয়াদের চোখে ঘুম আসছে না। চোখের পাতায় ওই ঘন কালো ভিজে পাপড়ির দুটি চোখ ভেসে উঠছে। হৃদয়ের একটা অনুভূতি বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলছে বারবার। ও কেমন মোহিনী? হৃদয় নাড়া দেওয়া কি মুখশ্রী। যদিও দেখা হয় নি। ছটফট না করে ইয়াদ উঠে গেল। মুহূর্ত গুলি বড্ড বিরক্তিকর আর অস্থির লাগছে।
তিতিলের ঘরে আলো জ্বলছে। হাতে তার হুমায়ূনের “হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম” বইটা। হিমু চরিত্র টা তার কেমন যেন ভালো লাগে না তবুও পড়ছে। হিমু কে ভালো না লাগার একমাত্র কারণ হলো হলুদ পাঞ্জাবি পরা। যেখানে ইসলাম ছেলেদের জন্যে হলুদ রঙ হারাম করে দিয়েছে। কিন্তু হিমুর ওমন উদাসীন ভাব টা কেমন যেন লাগে। কিছুতে হয়তো লোকটা তেমন গুরুত্ব দেয় না, আবার হয়তো দেয়। শেষের অংশটা তার হৃদয়ে একটা অনুভূতির নাড়া দিয়ে উঠল। বইটা বন্ধ করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। ঠোঁট উল্টে উপরে তাকাল। ঘাড়টা খুব ধরেছে এতসময় নুয়ে বই পড়ায়। বইটা নিয়ে বসেছিল ইয়াদের ওমন মায়ামাখা সুদর্শন মুখটা ভুলার জন্যে। মায়ায় পড়তে চায় না সে। কষ্টই পাবে এতে।
তিতিল লাইট নিভাতে যাবে তার আগে দরজায় টোকা পড়ল। তিতিল ধীর গলায় জিজ্ঞেস করল “কে?”
তিতিলের মিষ্টি কন্ঠে বিস্মিত হলো ইয়াদ। এই রুমে কে থাকে জানতে ইচ্ছা হলো বলে এসেছে সে। ভেবেছিল হিমার ঘর। ইয়াদ কিছু বলতে পারছে না। টোকাও দিতে পারছে না।
তিতিল জিজ্ঞেস করল,
“কে ওখানে? আম্মা?”
আৎকে উঠল ইয়াদ। তার মানে এটা তিতিল নামের মেয়েটার রুম? অনেক কিছু ভাবতে লাগল সে কপাল কুঁচকে।
ইয়াদ শান্ত গলায় বলল,
“দরজা খুলো।”
কেঁপে উঠে তিতিলের শরীর। মন টা এখনো কাঁপছে। তার দরজার সামনে কি ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে? নয়তো কি? এবাড়িতে সে ছাড়া কোনো পুরুষ তো আর নেই। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে সে। এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কি করবে কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে। শরীর টা এমন অবশ লাগছে কেন বুঝতে পারছে না। ঠোঁট গুলি এখনো মৃদু কাঁপছে তার।
“কে তুমি?”
কি উত্তর দিবে সে? কি বলবে সে তার বউ? নাকি দরজা খুলে দিবে? মাথায় তো কিছু আসছে না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাই মেরে। চারপাশ শূন্য লাগছে তিতিলের। গলাটা শুকিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে গেছে।
“কি হলো? কে তুমি? দরজা খুলো।”
তিতিল কিছু বলতে পারছে না। লাইট টা কোনো রকম অফ করে ছুটে বিছানায় চলে গেল সে। বুকটা কাঁপছে শব্দ তুলে। নিশ্বাসের গতি বেড়েছে তার তবুও চুপ করে আছে।
ইয়াদ তখনো দুইবার ডাকল দরজায় দাঁড়িয়ে। আবার ডাকতে যাওয়ার আগে শুনা গেল,
“এখানে কি করছিস ইয়াদ?”
খানিক চমকে ইয়াদ পাশ ফিরে তাকাল। কণ্ঠস্বর চিনে তিতিলও শুয়া থেকে উঠে বসল।
ইয়াদ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই রুমে কে থাকে মা?”
“কেন কোনো দরকার?”
“ন না কোনো দরকার না। রাত ১ টা ২৫ বাজে এখনো লাইট জ্বালানো দেখে ভেবেছিলাম হিমা থাকে। কিন্তু ভেতর থেকে অন্য..”
“হিমার রুম ওদিকে।”
“তাহলে এখানে..”
“এখানে তিতিল থাকে।”
“….
আর কিছু বলতে পারল না ইয়াদ। চুপচাপ মায়ের পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিজের রুমে। ভেতরটা এমন অস্থির হওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। নিজেকে খুব উদগ্রীব লাগছে।
রেহেলা বেগম একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে আবার দরজায় তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। এমনো হতে পারে যে ছেলে বউয়ের মুখ দেখেনি সেই ছেলেই বউয়ের জন্যে পাগল হতে পারে। উনার কেন যেন এমনটাই মনে হচ্ছে।
ইয়াদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পায়চারি করছে। মুখে স্পষ্ট উদ্বিগ্নতার ছাপ এঁটে আছে। ভেতরটা অস্থির লাগছে ওই মোহনীয় তরুণী কে দেখার স্পৃহায়। নিজেকে ব্যাকুল লাগছে যে। যতক্ষণ না তরুণীর মুখশ্রী চক্ষুদ্বয়ের সামনে স্পষ্ট ভাবে অবলোকিত না হচ্ছে হৃদয় ব্যাকুলতার গহ্বরে যে আটকে রইবে!
চলবে♥