#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
কলমে: ইয়াসমিন
পর্ব:১৯
শামীর তালুকদার পায়ের উপরে পা রেখে গভীর ভাবনায় লিপ্ত। পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে কিছুটা চতুর হতে হয়। ঐশ্বর্য আর অর্থ বিত্ত এসব কিছু হাতের নাগালে এমনি এমনি ধরা দেয়না। উনার নিজের ভাইবোনদের কথায় ধরলে তাদের অবস্থা খুব একটা উন্নত না। উনি যথেষ্ট সাহায্য করেছেন তবুও সেই এক। কিন্তু উনি নিজে ছোট থেকে এই অবস্থানে আসতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন সঙ্গে ছিল নিজের মেধাশক্তি। উনার ধ্যান ভাঙলো উনার কাছের বন্ধু রমেশ মজুমদারের কথা শুনে। এই ভদ্রলোকের বাসা ছিল ইন্ডিয়াতে। সনাতন ধর্মীয় তবে যথেষ্ট ভালো মনের মানুষ। জার্মানিতে ছেলের সঙ্গে থাকে। জগিং করতে গিয়ে আলাপ তারপর থেকে নিয়মিত কথাবার্তা হয়। বন্ধুর মতো বলা যায়। আজ জগিং করতে এসে দেখা হলো তাই পাশের একটা বেঞ্চে বসে পড়েছে দুজন গল্প করতে। ভদ্রলোক মুখটা কিছুটা নামিয়ে এনে কণ্ঠ চাপিয়ে বললেন,
> তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী সুলতান পরিবারের সম্পর্কে কিছু খোঁজ খবর রাখো? শুনেছো কি সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছে?
শামীর তালুকদার ভ্রু কুচকে ফেললেন। শত্রুর খবরাখবর জানা অতি জরুরি কিন্তু নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখলেন , পাছে তা প্রকাশ পেয়ে যাবে তাই কিছুটা গম্ভীরভাবে বললেন,
> বেশ তো আছে। শুনেছি বাংলাদেশ গিয়ে আরও কি সব বিজনেসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। টাকা ইনকামের মেশিনে পরিণত হয়েছে।
> তুমি জানো ওদের সব সম্পত্তির মালিক কে? জুবায়ের ফারুকীর একমাত্র কন্যা কহিনুর ফারুকী। ভেবে দেখো ভাইয়া যে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে তার কপাল কিভাবে খুঁলে যাবে? আমি সনাতন ধর্মীয় না হলে নিশ্চয়ই ছেলের জন্য ওই মেয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠাতাম। আমি বলছিলাম তোমার ছেলেটা তো বেশ কর্মের। দেখতে শুনতে ভালো আবার অমায়িক ব্যবহার। ওর জন্য যদি বিয়ের কথাবার্তা বলি কেমন হবে?
শামীর তালুকদারের মন খুশীতে নেচে উঠলো। আহা সুলতান পরিবারের মেয়ে এই বাড়িতে আসলে প্রতি পদে ওরা শামীর তালুকদারের পায়ের কাছে পড়ে থাকবে ভাবতেই উনার মনে পৈশাচিক আনন্দ খেলা করছে।কিন্তু কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। উনি হতাশ হয়ে বললেন,
> ওরা কি মানবে প্রস্তাব? তাছাড়া জুবায়ের ফারুকী বড্ড ত্যাড়া টাইপের লোক। উনার সঙ্গে আমার মিলমিশ হবেনা। ওরা অপমান করবে তারথেকে এসব ভেবে লাভ নেই।
মজুমদার লোকটা অখুশি হলেন। তবুও হাল ছাড়লেন না। উনি বললেন,
> আমি প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা করবো তুমি শুধুমাত্র রাজি হয়ে যাও আর ছেলেকে রাজি করাও।
> পারবে তো?
> নিশ্চয়ই পারবো। আমার কথা হয়েছে জামসেদ ফারুকীর সঙ্গে। উনি ভাইজির জন্য একটা উপযুক্ত ছেলে খুঁজতেছেন। তাছাড়া সম্পত্তির দলিল পযর্ন্ত দেখিয়েছে।তুমিও দেখতে পারো।
শামীর তালুকদার খপ করে মজুমদার বাবুর হাত ধরে ফেললেন। উনি ছেলের বিয়ের জন্য রাজি। যেভাবেই হোক ছেলের বিয়ে উনি এই ছেলের সঙ্গেই দিবেন। উনার অর্থ চাই আর কিছুই দরকার নেই। পথির্ব সকল সুখের মূল হচ্ছে অর্থ। অর্থ ছাড়া ব্যক্তির সম্মান ব্যক্তিত্ব কিছুই থাকে না। আরাম আয়েশ করে চলতে হলে আবেগপূর্ণ হতে নেই।
********
অধরার রিসোর্টে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। মূলত কয়েকদিনের ঘটনার জন্য রিসোর্ট বন্ধ ছিল তাই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আবার নতুন করে খোলা হবে। মোটামুটি সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অধরা এই প্রথমবার কহিনুরকে সঙ্গে নিয়ে রিসোর্টে যাচ্ছে। চৌধুরী বাড়ি থেকেও কয়েকজন যাচ্ছে। অধরা কহিনুরকে খুব সুন্দর একটা কালো গাউন পরিয়ে সাজিয়ে দিলো। খোলা চুলগুলো ওড়নার মধ্যে ভালোভাবে ডেকে দিলো। মেয়েটাকে ওর সব রঙেই ভালো মানিয়ে যায়। কহিনুরের উচ্চতা অতিরিক্ত লম্বা না আবার অতিরিক্ত খাটোও না। বেশ আকর্ষণীয় আর লবণ্যময় চেহারার অধিকারী মেয়েটা। অধরার ওর দিকে তাঁকালে কেমন চোখ লেগে যায়। মনে মনে গর্ভ হয় এই মেয়েটার জন্মদাত্রী হতে পাওয়ার আনন্দে।
ওকে রেডি করে অধরা দ্রুত নিজের কক্ষে ফিরে আসলো। জুবায়ের এখনো ওয়াশরুমে বসে আছে বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই। অধরা বিরক্ত হয়ে কয়েকটা টোকা দিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ পরে চিৎকার করতে করতে বিরক্ত হয়ে জুবায়ের দরজা খুঁলে বেরিয়ে আসলো। অধরা সোফায় পা তুলে বসে ছিল হঠাৎ ওর দিকে তাঁকিয়ে চিৎকার করে পিছু ফিরে ফেলল। লোকটার লজ্জা শরম দিনকে দিন কমছে। গোসল শেষ করে অধরার ওড়না ভাজ করে লুঙ্গির মতো পরে বেরিয়ে এসেছে। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> কি ধরণের ভদ্রতা এটা? লাজ লজ্জা কোথায় আপনার? এতকিছু রেখে আপনি আমার ওড়না পড়েছেন ছিঃ।
অধরা উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলে থামলো। জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> আরে ওয়াশরুমে টায়েল ছিল না। তোমার ওড়না ঝোলানো ছিল পরে নিয়েছি আর তুমিও বা কি এইটুকুতে এভাবে রিয়েক্ট করছো কেনো? তাছাড়া এই ঘরে তুমি ছাড়া কে আছে। বিরক্ত করো না আমি বিজি আছি। ঠিকঠাক গোসল পযর্ন্ত করতে দাও না। বরের মুখ না দেখলে তোমার শান্তি আসে না। সব বুঝি। থাকতে পারো না আমাকে ছাড়া।
> ফালতু কথাবার্তা বলে নিজে টাইম নষ্ট করছেন কেনো? আমার ওড়নাটা এখুনি খুঁলে দিন। এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করাবেন না। আমি কিন্তু খুলে নিবো আসলে। তখন বুঝবেন।
জুবায়ের ওকে এড়িয়ে গিয়ে গায়ে একটা সার্ট চাপিয়ে দিলো। রেডি হতে হতে বলল,
> তুমি দিনদিন আমাকে আঁড় নজরে দেখতে শুরু করেছো কেনো বলতো? বরের সঙ্গে কেউ এমন আচরণ করে? দ্রুত তৈরী হবে সময় অধা ঘন্টা। ড্রেস বা শাড়ি ওসব পরতে হবে না। বোরখা পরো ভালো লাগবে। লোকজন চলে আসলে কিন্তু লজ্জায় পড়তে হবে। নিমন্ত্রণ করে আমাদের দেখা নেই
জুবায়ের কথা বলতে বলতে তৈরী হয়ে গেলো। অধরা চুপচাপ ওর কথাগুলো শুনলো তবে প্রতিবাদ করলো না। ভেবেছিল জুবায়েরের সঙ্গে যখন থাকবে তখন থেকে বাইরে ঘুরতে গেলে খুব সাজুগুজু করবে শাড়ি পরবে কিন্তু লোকটা হিংসুটে টাইপ। ঝামেলা করে বসবে দরকার নেই। বরং সময় নষ্ট হবে ওসব করে। অধরা বোরখা পরেই বেরিয়ে আসলো। ঐশ্বর্য পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে সেই অনুযায়ী ওর পোশাক একদম আলাদা। তবুও ভদ্রতা করে ড্রেস খুব একটা খারাপ পরেনি। শশুর বাড়ির লোকজন থাকবে। পাছে কেউ কিছু বলে। আদির শরীর মোটামুটি ভালো আছে। অনুষ্ঠানে আসার উপযোগী হয়তো আসবে সেটা শুনেই ঐশ্বর্য যাওয়ার জন্য লাফিয়েছে। শুধুমাত্র কহিনুর নির্বাক আছে। সব পরিস্থিতিতে ও নিজেকে শান্ত রাখার অপরিসীম ধৈর্য্য রাখে। সুলতান ভিলা থেকে পরপর দুটো গাড়ি বেরিয়ে পড়লো সুলতান রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। অনুষ্ঠান শুরু হবে রাত আটটার পর থেকে। রাতে খাওয়া দাওয়া হৈচৈ হবে তারপর ফিরবে।
************
প্রচণ্ড রাগে ফুলছে আহির। মেজাজ চরম খারাপ। ওর বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। বহু কষ্টে বেল করানো হয়েছে কিন্তু ওর শিরাতে এখন প্রতিশোধের আগুন ধাবিত হচ্ছে। কহিনুরকে নিয়ে সুলতান পরিবারের যে আদেক্ষেতা ও তা ঘুচিয়ে দিবে। ওর সামনে টেবিলের উপরে অতি যত্নে রাখা কাচের বাল্বের মধ্যে রাখা এ*সি*ডের গোলকটা পড়ে আছে। অহির সেটা তুলে নিয়ে বাঁকা হাসলো আর ভাবলো, ওই সুন্দর মুখটা যদি আর সুন্দর না থাকে তখন কি হবে সুলতান জুবায়ের ফারুকী? মেয়েকে নিয়ে খুব দম্ভ না! আমি আহির আসছি তো আজকের রাতটা কহিনুরের জন্য জাহান্নাম হয়ে যাবে। বাচ্চা মেয়েটার জন্য কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। প্রতিশোধের নেশা অতি ভয়ংকর নেশা। অপমানের শোধ তুলতে না পারলে যে শান্তিতে ঘুম হবে না। কথাটা ভেবেই আহির সেটা পকেটে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। পাশাপাশি রিসোর্ট হওয়ার দরুন ওর আসতে সময় লাগলো না। তাছাড়া অনুষ্ঠানে ও নিমন্ত্রিত অতিথি। প্রতিশোধ সেতো এখন সময়ের অপেক্ষা।
মৌসুমী পাথরকে নিমন্ত্রণ করেছিল কিন্তু ছেলেটা আসবে না বলে জানিয়েছে। সেটা শুনে ওর মন খারাপ। ছেলেটা ওকে এড়িয়ে চলছে নাকি বুঝতে পারছে না। আসলে কি এমন ক্ষতি হতো কে জানে। সারাদিন কাজ করে আবার রাতেও। একপাশে দাঁড়িয়ে মৌসুমী কথাগুলো ভাবছিল হঠাৎ সেখানে আহির গিয়ে উপস্থিত হলো। দুজন কুশলাদি বিনিময় করে আহির ওকে বলল,
> তুমি একা কেনো বাকীরা কোথায়?
মৌসুমী লাজুক হেঁসে বলল,
> ওরা ভেতরে আছে। আপনি গিয়ে আলাপ করে আসুন। আমি একটু একা থাকতে চাইছি।
> আচ্ছা।
মিহির দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে ভেতরে গিয়ে ঢুকলো। লোকজনে ভরপুর। পা ফেলার জায়গা নেই। তার মধ্যে আবার এক পাশে সাউন্ড বক্সে গান বাজানো হচ্ছে। মিষ্টিরা গানের তালে তালে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে। কহিনুর দূরে একা একা বসে আছে। মেয়েটার সামনে একটা জুসের গ্লাস রাখা। প্রতিবারের মতো এবারও ওর বুকটা ধক করে উঠলো। কিছুতেই এই চেহারা ন*ষ্ট করতে মন সাড়া দিচ্ছে না তবুও কিছু কারার নেই। সুলতানরা কখনও ওকে জামাই করবে না। যা ওর না তার উপরে মায়া করে কিসের লাভ? কাজটা করতে হবে। কথাটা ভেবে ও কহিনুরের সামনে গিয়ে বসে পড়লো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল
> আফসোস তোমার রূপের মোহনাই অবগাহন করার সৌভাগ্য কোনো যুবককে হলো না। আমি খুব করে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার বাবা সেটা হতে দিলো কোথায়? যা আমার না তা আর কারো না।
আহিরের চোখমুখ কঠিন হয়ে উঠলো। কপালের রগ খাড়া হয়ে উঠেছে। কোনোরকমে নিজেকে শান্ত করে মেয়েটার সামনে হাত নেড়ে বলল,
> এখানে একা থাকতে তোমার ভালো লাগছে? আসো আশেপাশের সবটা তোমাকে দেখাই।
কহিনুর ওর কথা শুনতে পেলো কি জানা নেই। তবে মেয়েটা কোনো ঝামেলা ছাড়া মুখে একরাশ হাসি নিয়ে উঠে পড়লো। পিছু পিছু এগিয়ে গেলো আহিরের সঙ্গে। আহির ওকে কৌশলে রিসোর্টের পেছন দিয়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো। পূর্ব আকাশে থালার মতো চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। সমুদ্রের শনশন বাতাসে শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। চাঁদের উপছে পড়া জোছনা আর সঙ্গে থাকা অপরূপা সুন্দরী তরুণী সব মিলিয়ে আহির কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। মনের মধ্যে শুধু কু চিন্তার উদয় হচ্ছে যেটা আগে হয়নি। এক মন বলছে এসি*ডের গোলকটা ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যা আরেক মন বলছে না। এই রূপের অমৃত অবগাহন করে তারপর ওকে মুক্তি দিবি নয়তো তোর মুক্তি নেই। অহির ভেতরে ভেতরে সিদ্ধান্তহীনতাই ভুগতে থাকলো। কহিনুর থামছে না সমুদ্র যেনো একে টানছে। আহির ভাবতে ভাবতে পিছিয়ে পড়লো। যখন ধ্যান ভাঙলো দেখলো কহিনুর বেশ কিছুদূরে এগিয়ে গেছে। আহির দৌড়ে গিয়ে ওর পিছু ধরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। যতই ও দৌড়ে যায় কহিনুর ওর থেকে ততই দূর চলে যায়। এক সময় ও ক্লান্ত হয়ে গেলো। রাগে হচ্ছে মেয়েটার উপরে। ভাবলো কোনো ভাবাভাবি নেই। ওখানে গিয়েই সোজাসুজি কাহিনী খতম করে ফেলবে। কথাটা ভেবে ও পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলো। এক দৌঁড়ে গিয়ে কহিনুরের পাশে গিয়ে থামলো। ও থামতেই অদ্ভুত সুরেলা কন্ঠে কোনো মেয়ের হাসির শব্দ ওর কানে বেঁজে উঠলো। কি চমৎকার সেই হাসি। কিন্তু সেই হাসিটা আর চমৎকার থাকলো না। হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো। তারপর চারদিক থমকে গিয়ে নির্জনতা ছেয়ে গেলো সমুদ্রের পাড়। দূর থেকে নোনা পানির ঢেউ এসে ওর পায়ের উপরে আছড়ে পড়ছে। আহির এবার কৌতূহলী হয়ে কহিনুরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। পকেটে হাত দিয়ে এসি*ডের গোলকটা বের করে ধরতেই মনে হলো কহিনুর হাসছে। আহির কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে হাতের গোলকটা কহিনুরের দিকে ছুড়তে যেতেই ওর হাত থমকে গেলো। সেই সঙ্গে গোলকটা ওর হাতের সঙ্গে আটকে গেছে। প্রচণ্ড ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েলী সেই হাসিটা আবারও দ্বিগুণ হয়ে ফিরে এসেছে। যদিও কহিনুর হাসছে কি আহির সেটা বুঝতে পারছে না। এখানে কি হচ্ছে সবটা কেমন রহস্য। ওর কৌতূহল চমকে পরিণত করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনী বলে উঠলো,
> আমি সুলতানা কহিনুর ফারুকী, সুলতান জুবায়ের ফারুকীর কন্যা। আমার জন্ম রহস্য আজ অবধি আমার পিতামাতার কাছেও ধোয়াসা। আমি কি চাই সেটা আমি নিজেও জানিনা। তোর কি ক্ষমতা ওই সামান্য এ*সি*ড দিয়ে আমার রূপ ঝলসে দেওয়ার? বরং আমার এই রূপ আর ক্ষমতা দেখে তোর কলিজা ঝলসে যাবে এটা তুই নিশ্চিত থাক। ছল চাতুরী দিয়ে আমাকে পেতে চেয়েছিস সেই লোভ তোকে ধ্বংস করবে। আমি কহিনুর ফারুকী সুলতান বংসের উত্তরাধিকারী তোকে বলছে। তোর তুচ্ছ হৃদপিন্ডে আমার নাম লিখতে চেয়েছিস না?আচ্ছা সেই ইচ্ছে আমি তোর পূরণ করে দিবো। দেখি কেমন সহ্য ক্ষমতা।
কহিনুরের কন্ঠ বজ্রপাতে ন্যায় আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিলো। আহিরের চোখেমুখে আতঙ্ক খেঁলা করছে। যাকে এতদিন জেনে এসেছে বোবা বধির সে আজ কথা বলছে কিভাবে সম্ভব? আর মেয়েটা ওকে কিসব আজেবাজে কথা বলছে। ও আর ভাবতে পারলো না বলল,
> দেখো তুমি একা মহিলা মানুষ আমার সঙ্গে পারবে না। ভেবেছিলাম শুধুমাত্র এসি*ড দিয়ে চলে যাবো কিন্তু না তোমার দেখি খুব মুখ চলে। আমিও দেখবো তোমার কতটা সখ আমার সঙ্গে লাগতে আসার। বাচ্চা মেয়ে তুমি। আমার মতো শক্তিশালী যুবকের সঙ্গে পারবে ভেবেছো?
আহির ভয় পাত্তা দিলো না। বরং উপরক্ত কথাগুলো অনায়াসে বলে দিলো কিন্তু তাতে কহিনুরের কি হলো?বরং মেয়েটা আরও শব্দ করে হাসলো। তারপর বলল,
> বিদাইয়ের বেলা মস্তিষ্ক কাজ করেনা মিস্টার আহির। যাইহোক আমি কিন্তু খু*নি নয়। আমি জাষ্ট আমার নামটা ওই উষ্ণ নরম হৃদপিন্ডে লিখে দিব। ব্যক্তির ধারণক্ষমতার উপরে বেঁচে থাকা নির্ভর করছে। তাহলে শুরু করি?
কহিনুরের চোখেমুখে কঠিন্যতা ফিরে এসেছে।মুখে হাসি আর সরলতার বিন্দু পরিমাণ চিহ্ন নেই। আহির পিছিয়ে গিয়ে বলল,
> একদম ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে না । আমি খারাপ কিছু করে ফেলবো কিন্তু।
> এটাইতো চাই।
আহিরের ভয় করছে। সমুদ্রের পাড়ে কেউ নেই। বাতাসে গায়ের শার্ট উড়ছে। ও দৌড়ে পালিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কহিনুর পেছনে থেকে ওকে টেনে নিয়ে আস্তে আস্তে নিজের হাতটা ওর বুক বরাবর এগিয়ে দিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিজের নামটা ওর বুকের উপরে আঁকিবুকি করতেই থাকলো। আহির চিৎকার করে ওর হাতের মধ্যে ছটফট করতে করতে এক সময় শান্ত হয়ে গেলো।
*********
চমৎকারভাবে পার্টি শেষ হলো। জুবায়ের সবটা নিজ হাতে সামলাতে পেরে বেশ খুশি। অধরা ওকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করেছে। সবাইকে বিদায় করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেলো। চৌধুরী বাড়ির ছেলেমেয়েরা এসেছে ওরা কহিনুর আর অধরার সঙ্গে খাবে তাই অপেক্ষা করছিল। কাজ শেষ হতেই অধরা এগিয়ে গেলো কহিনুরকে নিতে। মেয়েটা চুপচাপ জুস মুখে নিচ্ছে আর অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে। অধরা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে ওকে উঠিয়ে নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো। আদি আজ চুপচাপ বসে আছে। বারবার দৃষ্টি কহিনুরের দিকে পতিত হচ্ছে কিন্তু ওতো অন্য একজনের নামে হয়ে গেছে। ভাগ্য হয়তো ওর সঙ্গে ছিল না ভেবেই ওর খারাপ লাগছে। এতো সুন্দর মেয়েটা ওর হতে গিয়েও হলো না। সব কিছুই জন্য ওই বুড়ো লোকটা দোষী। আদির রাগ হচ্ছে। ঐশ্বর্যকে ওর সহ্য হচ্ছে না। গায়ে পড়া মেয়ে কিভাবে জানি ওকে বিয়ে করে নিলো। খাওয়া শেষ করে জুবায়ের ওদেরকে বিদায় জানিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরি আসলো। মধ্য রাত হয়ে এসেছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই আযান হয়ে যাবে। বাড়িতে পৌঁছে ফ্রেস হয়েই রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো চোখের পাতায়। পরদিন সকালে ফোনের শব্দে জুবায়েরের ঘুম ভাঙলো। ওপাশ থেকে পুলিশের কন্ঠ ভেসে আসলো। উচ্চারিত হলো,
> আপনার পাশের রিসোর্টের বন্ধ কক্ষ থেকে আহির নামের এক যুবকের লা*শ উদ্ধার করা হয়েছে। কক্ষের আয়নার গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে,
> বধির বোবার রূপের মোহে আগুন জ্বলে বোকার দেহে।
জুবায়ের দ্রুত উঠে বসলো। মনে প্রশ্ন জাগ্রত হলো আবারও একটা খু*ন! কে করছে এসব?
চলবে