তবু মনে রেখো (১৯ পর্ব)

0
300

তবু মনে রেখো (১৯ পর্ব)
.
তাসনিম সেদিন ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল। সে সাহায্য করবে। যতটুকু করা যায় অবশ্যই করবে। তবে ওদের প্রেমের ইতিবৃত্ত শুনতে চায় সে।

ইলহাম আশার আলো দেখতে পেয়ে বলতে শুরু করে সব। তাসনিমও মনযোগী শ্রোতা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুটিনাটি প্রশ্ন করে। কিছুই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইলহাম সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে ডুবে যায় অতীতে৷ ডুবুরির মতো ডুব দিয়ে তুলে আনে একেকটা সুন্দর মুহূর্তের গল্প। ব্রিজের ওপর দিয়ে কত গাড়ি যায়, গোধূলি আসে, তাদের পেছনের পশ্চিম আকাশে রক্তিম সূর্য মেঘে লাল সিঁদুর ছড়িয়ে দিয়ে হরিয়ে যায় দূরের ওই গ্রামের অরণ্যের আড়ালে। ইলহাম বা তাসনিম সেদিকে খেয়াল করে না। চেয়ে দেখে না ব্রিজের নিচ দিয়ে গোধূলি বেলায় নৌকা যাওয়া-আসার অপরূপ সৌন্দর্য। ইলহামের এই বেপরোয়া, অসীম ভালোবাসার গল্প শুনে তাসনিমের চোখ ভিজে আসে। একটা ফেইসবুক প্রেম এতটা প্রগাঢ় হয় জানা ছিল না তার। স্পর্শ নেই, সশরীরে সাক্ষাৎ নেই৷ তবুও প্রেম হয়। ইলহামেরও যেন কথা ফুরোতে চায় না। বুকভর্তি কথা, আকুতি, পুষ্পিতার জন্য নির্ঘুম রাত। পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত। তাকে আক্রমণ সবই বলে ফেলে সে। তাসনিমকে স্পর্শ করে সবকিছু। সে যে এই অনুভূতি, বিরহ, বেদনাগুলোর সঙ্গে বড়োই পরিচিত।
তাসনিম সব শুনে বললো,

– ‘আমার কি মনে হয় জানিস? পুষ্পিতার মোবাইল-টোবাইল কেড়ে নিয়ে ওরা ওকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে।’

ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

– ‘আমার দু’টাই মনে হয়। হতে পারে পুষ্পিতা আমাকে ভুল বুঝে বিয়েতে রাজি হয়েছে। ওর বাবাই হয়তো লোক পাঠিয়েছিল। আমাকে মা*রধ*র করে সোনা টাকা মোবাইল সহ সব নিয়ে গেছে৷ শেষে এসব লুকিয়ে রেখেছে। পুষ্পিতা স্বাভাবিকভাবেই ভেবে নিয়েছে আমি এগুলো নিয়ে পালিয়েছি।’

– ‘তোর মোবাইল নিবে কেন?’

– ‘পুষ্পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার জন্য হতে পারে।’

– ‘ওরা কি বুঝে না বাসায় গিয়েও অন্য মোবাইল দিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব।’

ইলহাম হেঁসে বললো,

– ‘বাসায় এসে পারিনি তো যোগাযোগ করতে। জানিস কারও সঙ্গে চাইলেও যোগাযোগ করতে না পারার কষ্ট কি য*ন্ত্রণার। আমি সেদিন টের পেয়েছিলাম৷ দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল যেন।’

তাসনিম ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

– ‘এভাবে আরও প্রেমের গভীরতা বাড়ে। বাঁধা পেলে প্রেম বেপরোয়া হয়ে যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তখন বেশি দেখতে, কথা বলতে ইচ্ছা করে। এই অস্থিরতা থেকেই হয়তো মানুষ নিজেকে র*ক্তাক্ত করে। কেউ কেউ আ*ত্মহ*ত্যা করে।’

ইলহাম ম্লান হাসলো৷ তাসনিম খানিক ভেবে বললো,

– ‘স্যরি, আমি তোর ব্যাপারটা এভাবে বুঝতে পারিনি৷ অনুভব করতে পারিনি। দূর থেকে আসলেই সবকিছু বুঝা যায় না। প্রথমে তোর সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করেছি।’

ইলহাম ব্যগ্র গলায় বললো,

– ‘এগুলো ব্যাপার না। তুই আমাকে শুধু সাহায্য কর তাসনিম।’

– ‘কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। তোর তো ভুলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

– ‘কেন ভুলে যাব? তুইই তো বললি ওরা ওকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে হয়তো। যদি এমন হয় আমার কি হাত গুটিয়ে বসে থাকা ঠিক হবে। কাগজে কলমে শুধু বিয়ে হলেই কি হলো?’

– ‘তো কি করবি। তুই গেলেই কি আর ডিভোর্স দিয়ে চলে আসবে না-কি?’

– ‘না এলে নাই। আমি একবার দেখা করে ওর মুখ থেকে সবকিছু শুনতে চাই। কেন বিয়ে বসলো। তাছাড়া যদি ভুল বুঝে থাকে, সেটাও বলতে চাই। পুষ্পিতা আমাকে ভুল বুঝে আছে এটা মনে হলেই আমার অসহ্য লাগে, অসহায় লাগে। আমরা একই আকাশের নিচে থাকি, একই দেশ, একই ভাষা, অথচ আমি ওকে বলতে পারছি না৷ পুষ্পিতা আমি ওইদিন পালাইনি….।’

তাসনিম ওকে থামিয়ে দিল,

– ‘আচ্ছা ওয়েট আমি রায়হানকে কল দেই।’

তাসনিম নাম্বার বের করে কানে লাগায়। ওপাশে কয়েকটা রিং হতেই রিসিভ হলো,

– ‘হ্যালো।’

– ‘রায়হান কি অবস্থা, কি করছিস।’

– ‘আর বলিস নারে ভাই। তুই গিয়ে বেঁচে গেছিস। নিজেই রেঁধে খেতে হবে। খালা আসতে পারবে না কিছুদিন। ওর মেয়ের বিয়ে লাগছে।’

– ‘তাহলে তো ভালোই ঝামেলা।’

– ‘হ্যাঁ, তুই কোথায় আছিস?’

– ‘গাজিপুর এসেছি ফুপুর বাসায়। এখন তোকে কল দিলাম দরকারে।’

– ‘বল কি দরকার।’

– ‘দোস্ত তোদের হেতিমগঞ্জের মানুষ কি জং*লি?’

– ‘এই কথা কেন বলছিস?’

– ‘সাক্ষাৎ হলে বিস্তারিত বলবো। এখন এতটুকু শোন। আমার ফুপাতো ভাই প্রেম করেছিল হেতিমগঞ্জ।

– ‘তাই না-কি?’

– ‘ হ্যাঁ আগে শোন, মাঝখানে কথা বলবি না।’

– ‘ওকে বল। আমি লাউডে দিয়ে রেখে মাছটা কা*টি।’

– ‘না, আগে শোন, সব কথা। ওদের রিলেশন ফেইসবুকে। কিন্তু খুবই সিরিয়াস ছিল ওরা। দুই পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল না। তাই ওরা পালিয়ে যেতে চায়। ইলহাম তোদের রেলস্টেশনে গিয়েছিল রিসিভ করে একসঙ্গে আসতে। ওর প্রেমিকা এসেই ওর কাছে সোনা টাকা-পয়সা দেয়। ইলহাম খাবার নিতে রেলস্টেশনের বাইরে একটু দূরে যায়। হঠাৎ কিছু লোক তাকে বে*ধড়ক মা*রধর শুরু করে। লাইট হাতে ছিল একজনের মাঝ পিঠে মেরেছিল এখনও ওর ব্যথা করে। এরপর সে চিৎকার করতে চাইলেও বলে চুপ থাকতে। ওর থেকে তখন সবকিছু কেড়ে নেয়। তারপর মুরব্বি একজন বলে তোর বাড়ির নাম্বার বল। সে বলতে না চাইলে আরও মারতে শুরু করে। টেনেহিঁচড়ে একটা গ্রামের রাস্তায় নিয়ে যায়। ভয়ে সে নাম্বার বললে, বাড়িতে কল দিয়ে অ*শ্রাব্য ভাষায় ফুপুকে গা*লাগা*ল করে। উনি জানতেনই না ইলহাম মেয়ে পালিয়ে আনতে গেছে। এরপর ফুপুকে বলে কোথায় এসেছে তোমার ছেলে। এখন যদি কে*টে নদীতে ভাসিয়ে দেই কি হবে? বিয়ের আগের রাতে এলাকার মেয়ে পালিয়ে নিতে এসেছে শুনলে গ্রামের লোকও গণপি*টুনি দেবে। ফুপুতো কাঁদতে শুরু করছে। তখন লোকটা বললো মনে রাখবা এখন অল্প মা*রধ*র দিয়েছি। চাইলে কিন্তু ছু*রি পেটে ঢুকিয়ে দিতে পারতাম। ছেলেকে বাসে তুলে দিব এখান থেকে এরপর যেন এদিকে আর না আসে। বুঝতে পারছেন আপনার ছেলে কি কাজ করতে আসছে। মানুষের মান-সম্মানে আ*ঘাত লাগলে মে*রে ফেলতে কি দ্বিতীয়বার চাইবে? ছেলেকে সামলাবেন। ফুপু ওদের কথায় সম্মতি দেয়৷ কাতর হয়ে বলে পাঠিয়ে দিতে। না হলে এখনই বলেন পারবেন না। কে*টে নদীতে ফেলে দেবো। এসব শুনে ইলহামও ভয় পেয়ে যায়। বুঝিসই তো ঢাকা থেকে সিলেট। তাও রাতে একটা গ্রাম এলাকা। সে ভয়ে কাঁপতে থাকে। ওরাই একটা বাসে তুলে দেয়। চুপচাপ আপাতত চলে আসে বাড়িতে। এরপর আর ওই মেয়েকে ফোন দিয়ে পায় না। ফেইসবুকেও পায় না। দুদিন পর আবার সাহস করে যায়। গিয়ে শুনে বিয়ে হয়ে গেছে। তখনও কিছুটা ভয়ে আর কি মনে করে গ*ণ্ডগোল না করে চলে আসে। ভাইরে ভাই, সেদিনও ওই লোকগুলো কিভাবে যেন জেনে যায়। আবার ফুপুকে কল দিয়ে নাকি একটা লোক গা*লাগা*ল করে বলেছে। তোর ছেলে আবার এসেছিল। এরপর আর খুঁজে পাইনি৷ পেলে সত্যিই আজ কে*টে ফেলতাম। তোকে বলেছিলাম কানে যায়নি না? এবার আরেকবার পেয়ে যাই। ছেলের কামাই শেষ হয়ে যাবে। এই হলো অবস্থা। এখন বলতো দোস্ত কি করা যায়। ইলহাম তো একেবারে শেষ রে ভাই। ও এক সময় অন্যরকম ছিল। এখন দেখে চেনাই যায় না। সারাদিন পড়ে থাকে ঘরে। হাত-টাত কে*টে ফেলে যাতা অবস্থা।’

রায়হান ওপাশ থেকে বললো,

– ‘এখন কি বরবি। মেয়েটার তো বিয়ে হয়ে গেছে বললি।’

– ‘ইলহামের ধারণা জোর করে না হয় ভুল বুঝিয়ে বিয়ে দিছে।’

– ‘ও বুঝেছি, কিন্তু এখন কি করতে চাও।’

– ‘কিছু কি করার নেই? তার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিল। মা*রধ*র করলো। হুমকি দিল।’

– ‘সেটা তো গ্রামের বিচার বসলে মাফ-টাফ চাইয়ে শেষ করে দিবে। আর ওর যা যা নিয়েছে ফেরত দেওয়াইবে না হয় ক্ষতিপূরণ দেবে। এগুলোর জন্য এতকিছু করবা?’

– ‘কিন্তু ওই মেয়ের কি সামনা-সামনি হতে পারবে না ইলহাম? কথা বলতে পারবে না?’

– ‘কি যে বলিস। গ্রামে আরেকজনের বউয়ের সঙ্গে লোকে প্রেমিককে কথা বলার পরিবেশ করে দেবে বুঝি? এগুলো এমনিতে সমাধান করে শেষ করে দেবে।’

– ‘মেয়ে যদি বলে তাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। বা মিথ্যে নাটক সাজিয়ে আলাদা করেছে তাদের।’

– ‘এরকম বললে ঠিক আছে। যদি বলে ওই বিয়ে মানে না৷ তাহলে এলাকার মানুষ ভাবতে পারে কি করবে। তাছাড়া এর চাইতে ভালো ওরে পালিয়ে নিয়ে যাক আবার।’

– ‘ওদের যোগাযোগই করার সুযোগ নেই। আচ্ছা দোস্ত, তোর আব্বা কিছু করতে পারবেন না?’

– ‘তা তো পারবে। কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে তো কিছু করতে চাইবে না।’

– ‘আরে ভাই তুই তোর আব্বার কাছে আমাদের নিয়ে চল। হয়তো উনি অনেক কিছুই করতে পারবে। ফলাফল কি আসবে পরে দেখা যাবে। তোর যতটুকু করার কর দোস্ত। ওর ইচ্ছা একবার মুখামুখি হতে।’

রায়হান হেঁসে বললো,

– ‘আব্বা আমাদের দেখে সিরিয়াসলি নিবে না তো। ভাববে পোলাপাইনদের কারবার। তবে যদি সিরিয়াসলি নেয় তাহলে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে দেওয়ানোরও ক্ষমতা আছে তাদের। এগুলো ব্যাপার না।’

– ‘তুই বলবি তোর ফ্রেন্ড। তাহলে সিরিয়াসলি নিবে না কেন?’

– ‘আচ্ছা ইলহামের আম্মুকে দিয়ে কথা বলাতে পারবি? আমরা আব্বুর কাছে গেলাম সবকিছু বলার পর বলবো ওর আম্মু পাঠিয়েছে এলাকার চেয়ারম্যান হিসাবে উনার কাছে। বিচার চায় সে। আর আমিও বলবো আমার পরিচিত।’

– ‘হ্যাঁ পারবো দোস্ত।’

– ‘ও হ্যাঁ, ওই মেয়েরে চিনবো কি করে। ঠিকানা, বাবার নাম এইসব বল।’

– ‘আচ্ছা ওর কাছে মেয়ের বিয়ের কার্ড আছে। ছবি দিচ্ছি।’

কথাটা বলে কল কেটে দিল তাসনিম। ইলহাম নিজের মোবাইল থেকে ওর হোয়াটসঅ্যাপে কার্ডের ছবি সেন্ড করে বললো,

– ‘তাসনিম, ও কেমন অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মনে হয়। ওর বাবা এলাকার চেয়ারম্যান। সেও ওই এলাকার ছেলে।’

– ‘কি জানি, ও তো এরকম না। আচ্ছা দেখি কি করে।’

– ‘এক কাজ কর না ভাই। ওকে বল মেসে যেহেতু খালা নাই। এর চাইতে বাড়িতে চল। আমরা তার সঙ্গে চলে গেলাম।’

– ‘এটা ঠিকই বলেছিস। কিন্তু ও কয়েকমাস থেকে ছুটিতেও বাড়ি যায় না কেন যেন।’

– ‘তোর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?’

– ‘অনেক ভালো।’

– ‘তাইলে একটু জোরাজোরি করলেই হবে।’

– ‘মনে হয় ওর বাড়িতে কোনো সমস্যা। থাকে না রাগারাগি টাইপ কিছু। এক কাজ করি। ওকে বলি ঢাকায় চলে আসতে। আমরা গিয়ে রিসিভ করে তোদের বাড়িতে আনবো। একটু সম্পর্ক হবে তোর সঙ্গেও। ফুপুকে আমি আজ সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। তাকেও তুই রাজি করাতে হবে। সেও যদি বলে বিষয়টা গাঢ় হবে।’

– ‘ঠিকই বলেছিস। ও যদি বাবাকে বলে তার ফ্রেন্ড আমি। বাবা কি ছেলের বন্ধুদের জন্য এটুকু করবে না। তাছাড়া যদি এভাবে কাজ না হয়। ওর এলাকা যেহেতু তার ফ্রেন্ড সার্কেল আছে ওদের মাধ্যমে কোনোভাবে পুষ্পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। রায়হানই আসল। আগে ওকে লাইনে আনতে হবে।’

আচ্ছা আমি কার্ডের ছবি সেন্ড করেছি। এবার কল দিয়ে দেখি। তাসনিম কল দিল। দুইবার রিং হতেই রিসিভ করলো রায়হান।

– ‘হ্যাঁ দেখেছি কার্ড।’

– ‘চিনতে পারলি দোস্ত?’

– ‘না দোস্ত, হেতিমগঞ্জ আসলে অনেক বড়ো এলাকা। ওরা হেতিমগঞ্জ আর আমরা পশ্চিম হেতিমগঞ্জ। দুই ওয়ার্ড এখানে।’

– ‘তোর বাবা ওই এলাকার চেয়ারম্যানই তো।’

– ‘হ্যাঁ, আমরা একই ইউনিয়নের অবশ্য।’

– ‘তাহলে তো তোর বাবার কাছে দিলে উনি মিনিটের ভেতরে বের করে ফেলবেন। ওই এলাকার মেম্বারকে বললেই চিনে ফেলবে।’

– ‘তা চিনবে। কিন্তু আমি বলি কি৷ বাবাকে বাদ দে। আমি পালিয়ে আনিয়ে দিতে পারি কি-না দেখি। কারও মাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তারপর সে চাইলে তোদের সঙ্গে ট্রেনে তুলে দিয়ে দিলাম।’

– ‘এরকমও হয়। তবে ডিভোর্স হতে হবে তো। অনেক ব্যাপারই আছে। তোর বাবার মাধ্যমে হলে কোনো ঝামেলা হতো না৷ রিস্কও নাই। তুই এক কাজ কর।’

– ‘কি কাজ।’

– ‘খালা নাই যেহেতু ঢাকা চলে আয়। ইলহামদের বাড়িতে থাকবি কয়েকদিন। তিন বন্ধু মিলে আড্ডা হবে। ছুটিতে মেসে হুদাই কি করবি।’

– ‘না দোস্ত, সমস্যা নেই আমি রেঁধেই চালিয়ে নেব।’

– ‘কিরে শালা তুই এত মিনমিনে করতেছিস কেন? তোর এলাকায় সমস্যা। বন্ধু হয়ে হেল্প চাচ্ছি৷ তুই লাফ দিয়ে উঠার কথা। অথচ তুই বিড়ালের মতো মিউমিউ শুরু করছিস। বুঝলাম না কিছু।’

রায়হান হেঁসে ফেললো।

– ‘আচ্ছা দোস্ত বল কি করতে হবে।’

– ‘আমরা কি জানি না, এলাকায় চেয়ারম্যানের কি প্রভাব থাকে৷ তুই চাইলে অনেক কিছুই করতে পারিস৷ কিন্তু তুই বন্ধু নামে ক*লংক দেখছি।’

– ‘আচ্ছা আচ্ছা বল কি করবি এখন।’

– ‘কাজটা তোর বাবার মাধ্যমে কর একটু। বলবি তোর বন্ধুর সমস্যা। পোলা আ*ত্মহ*ত্যা করার অবস্থা। এভাবে সিরিয়াসলি নে বিষয়টা।’

– ‘আচ্ছা বুঝেছি, এখন আমি কি আসবো ঢাকা।’

– ‘হ্যাঁ রাতের বাসেই উঠে পর। একেবারে গাজিপুর চলে আয়।’

– ‘আচ্ছা শোন, আমি বুঝেছি সবকিছু। আর ইলহামদের বাড়ি গিয়ে কি হবে। বাসেই শুনতে পারবো বাকিসব। আমি বাসে আসছি৷ তোরাও রেডি হয়ে যা৷ একেবারে সিলেট চলে যাব। কথা হবে বাসে।’

– ‘ধন্যবাদ দোস্ত৷ এইতো লাইনে এসেছিস। ঠিক আছে তুই আয়।’

ফোন রেখে দিল তাসনিম।

– ‘চল এবার বাড়িতে যাই, ফুপুকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে।’

দু’জন ব্রিজের ওপর থেকে নেমে গেল। রাত আটটা বেজে গেছে। ইলহাম আরেকটা সিগারেট ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

– ‘তা তুই কি বলেছিলি। তোর প্রেমিকা আমাকে চিনে?’

– ‘হ্যাঁ চিনে তো। তোর কত গল্প করেছি ওর সঙ্গে।’

– ‘তোদের তো শুনেছি বহু বছরের রিলেশন৷’

– ‘স্কুল লাইফের।’

– ‘বিয়ে করবি কবে?’

তাসনিম আকাশের দিকে তাকালো। ঝাপসা চোখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লো সেদিকে। তারপর বললো,

– ‘করোনায় ও মারা গেছে।’

ইলহামের গায়ের লোমগুলো কেন যেন হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেছে। তার মনে হলো তাসনিম বাইরে কাঠিন্যের খোলস পরে হাঁটছে। ভেতর টলটলে জলের দীঘির মতো। তার খেয়াল হয়নি এতক্ষণ৷ পৃথিবী এত অদ্ভুত কেন। কার কাছে সে বিরহের গল্প এতক্ষণ বলেছে। ও তো নিজেই বিরহবিধুর। তার থেকেও অসহায়। কিছুই করার নেই। ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
আকাশে চাঁদ উঠেছে। ইলহাম সেদিকে তাকালো। তাসনিম তাকে আর কিছুই বলেনি। সেও জিজ্ঞেস করে না। তবুও ইলহামের গাল বেয়ে দু’ফোঁটা জল বেয়ে পড়লো তাসনিনের কথা ভেবে।

__চলবে__
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here