তবু মনে রেখো (২৩ পর্ব)
.
– ‘ইলহাম মানে! তুমি ওকে কোথায় পেলে?’
– ‘আমি হেতিমগঞ্জ এসেছি পুষ্পিতা, এই নাম্বার আমার। তুমি এটা সেভ করে ফ্রি হয়ে নক দাও জরুরি কথা আছে।’
– ‘হোয়াট! তুমি এখানে আবার কোন মতলবে এসেছো? তুমি একটা বে*ইমান প্র*তারক। তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। ফোন রাখো।’
ইলহাম উত্তেজনায় হাঁপিয়ে গেছে। শরীর কাঁপছে। সে বড়ো করে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
– ‘পুষ্পিতা তুমি কিছুই জানো না। তোমার অজান্তে অনেককিছুই ঘটে যাচ্ছে। অকারণ ভুল না বুঝে একা হয়ে কল দাও তাড়াতাড়ি।’
কথাটি বলে সে কল কেটে দিল। শরীর ঘেমে একাকার তার। কপালে হাত ঠেকিয়ে বসলো বারান্দার চেয়ারে। বুক ধড়ফড় করছে। বৃদ্ধ মানুষের মতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। তাসনিম ওর পিঠে হাত দিয়ে বললো,
– ‘শান্ত থাক ইলহাম। এখন যোগাযোগ হইছে। এবার পুষ্পিতার উপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
রায়হান মজিদার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিতে গেলে মজিদা টাকাটা নিল না। কেন নিল না মজিদা নিজেও বুঝতে পারছে না। সে আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘লাগবো না আমি এখন গেলাম।’
– ‘টাকা নে মজিদা, তোর মেয়েরে কিছু দিস কিনে।’
টাকা না নিয়ে মজিদা চলে গেল। রায়হান এগিয়ে এসে বললো,
– ‘কিরে তাসনিম। ওর মাথা এরকম ঘামছে কেন?’
– ‘প্রেশারের সমস্যা হতে পারে।’
রায়হান তার বাহুতে ধরে বললো,
– ‘রুমে চলো। মোবাইল কাছে রাখলেই হবে।’
ইলহামকে ওরা রুমে নিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিল। শব্দ করে ইলেকট্রনিক ফ্যান ঘুরছে। ইলহাম তাকিয়ে আছে সেদিকে।
তাসনিম ওর মাথায় হাত রেখে বললো,
– ‘কিরে? কোনো সমস্যা?’
– ‘বুক কেমন ধড়ফড় করছে।’
– ‘আচ্ছা চোখ বন্ধ করে রাখ।’
ধীরে ধীরে ইলহামের শরীর শীতল হয়ে এলো। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল সে।
কল এলো এর খানিক পরেই। তাসনিম ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গেল।
– ‘হ্যালো পুষ্পিতা আপু বলছেন?’
– ‘হ্যাঁ আপনি কে? ইলহামের নাম্বার না এটা?’
– ‘হ্যাঁ, এটা ইলহামের নাম্বার। কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা বলার পর ওর শরীর কেমন করছিল৷ এখন ঘুমিয়ে গেছে।’
– ‘আচ্ছা আমি পরে কল দিচ্ছি।’
– ‘না আপু, সব শুনুন। অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে আপনার নাম্বার জোগাড় করা হইছে।’
– ‘আপনি কে?’
– ‘আমি ওর মামাতো ভাই তাসনিম।’
– ‘ও আচ্ছা, ওর কাছে শুনেছি আপনার কথা৷ বলুন কি বলবেন।’
– ‘আপনি কি জানেন আজ সকালে হেতিমগঞ্জ স্কুলের মাঠে বিচার ছিল? সেই বিচার ইলহাম বসিয়েছে আপনাদের এলাকার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে।’
– ‘না তো, এসব কি বলছেন আপনি?’
– ‘আমি ঠিকই বলছি। এবং সেই বিচারে আপনার বাবা ছিলেন। অথচ আপনাকে জানানো হয়নি।’
– ‘কিন্তু ইলহাম কেন বিচার বসাবে। সে তো আমাকে রাতের অন্ধকারে রেলস্টেশনে রেখে পালিয়েছিল।’
– ‘যাকে ভালোবাসেন তার প্রতি এইটুকু বিশ্বাস আপনার! অথচ ছেলেটা আপনার জন্য কতকিছু করছে। গত তিন-চারটা মাসে পাগলের মতো হয়ে গেছে।’
ওপাশে অস্থির গলা। পুষ্পিতা তাড়া দিয়ে বললো,
– ‘প্লিজ এত কথা না বলে ক্লিয়ার করে বলুন সবকিছু।’
– ‘তাসনিম ওইদিন পালায়নি। সে বাইরে খাবার নিতে আসার পর কিছু লোক তার উপর আক্রমণ করে। মা*রধ*র করে সবকিছু কেড়ে নেয়। তারপর ওর মায়ের নাম্বার নিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে তাকে বাসে তুলে পাঠিয়ে দেয়। তার সঙ্গে তখন মোবাইল ছিল না। আপনার সাথে যোগাযোগও করতে পারেনি। বাসায় গিয়ে আপনাকে আর কোনোকিছুতে পায়নি খুঁজে। এর কয়দিন পর সে আবার সাহস করে আপনাদের বাড়িতে পর্যন্ত চলে আসে। মজিদা নামে যে কাজের মেয়ে ওর সঙ্গে দেখাও হয়। সে জানায় আপনার বিয়ে হয়ে গেছে। ইলহাম ওইদিনও বাড়িতে এসে শুনে আন্টিকে ফোনে সেই লোকটি আবার হুমকি দিয়েছে।’
– ‘কি বলেন এসব! কে হুমকি দিল৷ এগুলো কি বলছেন আপনি! আর ওইদিন ইলহাম এসেছিল মজিদাও আমাকে বলেনি কেন তাহলে?’
– ‘কেন বলেনি জানি না। ইলহাম এখানে এসে বিচার অবধি বসিয়েছে সেটাও তো আপনাকে পরিবার জানায়নি। আর হুমকি কে দিয়েছে জানেন? বিচারে সেটা প্রমাণও হয়েছে। নাম্বার আমি দেখিয়েছি সবাইকে৷ সেটা ছিল হায়দার নামে এক ব্যক্তির।’
পুষ্পিতা বেলকনির গ্রিল বাঁ হাতে শক্ত করে ধরলো। কথাগুলো গলায় এসে আঁটকে যাচ্ছে। এগুলো কি শুনছে সে। হায়দার চাচা তাহলে এসব করেছেন তার সঙ্গে? অথচ উনিই তাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। কেন এমন করলেন উনি? কেন?
তাসনিম ওপাশ থেকে ব্যঙ্গ করে বললো,
– ‘কি হলো আপনার কি সবকিছু মিথ্যে মনে হচ্ছে।’
পুষ্পিতা ফ্লোরে বসে গেল।
– ‘না, আমার সবকিছু বিশ্বাস হচ্ছে। আমি এখন কথা বলতে পারছি না। রাখছি। প্লিজ এখন রাখছি।’
তাসনিম ‘হ্যালো হ্যালো’ করে ফোন রেখে দিল। মেয়েটির ধাক্কা সামলাতে সময় লাগতে পারে। সে ঘরে চলে গেল। রায়হান এলো খানিক পরেই।
পুষ্পিতা বেলকনির দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। সে মা-বাবাকে বলেছিল ইলহাম নামে একজনকে পছন্দ করি। তাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই না৷ রাজি হয়নি ওরা। উল্টো মিনারের সঙ্গে বিয়ের দিন তারিখ দ্রুত ঠিক করে ফেলেন। কি করবে সে ভেবে পায় না। ইলহামও তখন সংসার জীবনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। পালিয়ে যেতেও দ্বিতীয়বার না ভেবে উপায় নেই। একটাই পথ ছিল হাতে, বিয়ে ভেঙে দেয়া। সেটাও কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। একদিন রাতে হায়দার চাচাকে ধরে সে। ভেবেছিল বাবা-মা উনার কথা শুনবে। হায়দার সাহেবকে সম্পর্কের কথা সবকিছু বলে সে। কিভাবে রিলেশন, ছেলের বাড়ি কোথায়। সবকিছু শুনে বলেন। তোমার বাবাকে বলে লাভ নেই মা। এখন বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়ে গেছে। পুষ্পিতা তখন কান্নাজুড়ে দেয়। হায়দার সাহেব ভেবেচিন্তে বলেন। তুমি পালিয়ে চলে যাও মা। আমি যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো। কিন্তু বুঝোই তো আমি মুরব্বি মানুষ। এগুলো লোকে জানলে মন্দ বলবে। তুমি কাউকে কোনোদিন বলবে না আমি সহযোগিতা করেছি। পালানোর দিনও তিনি তাকে সহযোগিতা করেছেন। স্টেশনে সে যখন ঢুকে যায় তিনি আর আসেননি৷ বলেন ছেলেটার মুখোমুখি হতে চাই না। ঘণ্টা কয়েক পর যখন ইলহাম ফিরছিল না। তখন সে বাধ্য হয়ে হায়দার সাহেবকে ফোন দেয়। তিনি স্টেশনে হন্তদন্ত হয়ে ফিরে যান। পুষ্পিতা সবকিছু খুলে বলে। তিনি সান্ত্বনা দেন। ছেলে মনে হয় প্র*তারক মা। তোমার সর্বনা*শ করে পালিয়েছে। এদিকে পুরো এলাকা জেনে গেছে। সবাই তোমাকে খোঁজাখুঁজি করছে। পুষ্পিতা তখন কাঁদতে শুরু করে। তিনি মাথায় হাত রেখে বলেন, মা এবার বাড়ি চলো। যা হবার হয়ে গেছে৷ পুষ্পিতা যেতে রাজি হয় না। এই মুখ কিভাবে মা-বাবা দেখাবে। হায়দার সাহেব তখন বলেন তাহলে এখানে বসে থাকবে না-কি মা?
পুষ্পিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে আমাকে আজ রাত কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দেন চাচা৷ আমি কাল যেদিকে ইচ্ছা চলে যাব।
হায়দার সাহেব মাথায় হাত রেখে বলেন। এই বয়সে আমাকে সবার কাছে বেইজ্জত করবে নাকি মা। মানুষ যদি জানে আমি তোমাকে সহযোগিতা করছি কি হবে বুঝতে পারছো? পুষ্পিতা বলে কেউ জানবে না চাচা। তিনি আমতা-আমতা করে বলেন আমার দোকানের কর্মচারি আছে না। ওর আত্মীয় একজনের বাসায় নিয়ে আজ রাখা যাবে। কিন্তু মা তোমার মোবাইলটা অফ করতে হবে। তোমার বাবা পুলিশের কাছে যাচ্ছেন। জানোই তো মোবাইলের মাধ্যমে মানুষ বের করা যায় আজকাল। যদি তোমাকে গিয়ে সেখানে পায়। আমার উপর সব দোষ চলে আসবে। পুষ্পিতা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। হায়দার সাহেবের সঙ্গে সেখানে চলে যায়। দু’দিন পরে সে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি যাবে। হায়দার সাহেব তাকে একা একা বাড়িতে পাঠান। সবকিছু দু’দিনে একেবারে ঘোলাটে হয়ে যায়। রটিয়ে পড়ে নানান গল্প। মিনারও তাকে আর বিয়ে করেনি। তখন হায়দার সাহেব আর বাবা মিলে তাকে ইমাদের সঙ্গে বিয়ে দেন। হায়দার সাহেব লোভী, বিয়ের পর এটা সে টের পেলেও এতদিন একবারও ভাবেনি উনি এই সবকিছুর পেছনে দায়ী৷ কিন্তু উনার স্বার্থ কি? কেন এসব করেছেন। পুষ্পিতার আর বুঝতে বাকি থাকে না। সবই লোভে। এতকিছু করেও স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় উনি পাগল হয়ে গেছেন। ইমাদ এসে ঘরে ঢুকেছে। পুষ্পিতা বুদ্ধি করে আইস্ক্রিম আনার জন্য তাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাকে এভাবে বসা দেখে সে এসে বাহুতে ধরে বললো,
– ‘কি হয়েছে তোমার? কোনো সমস্যা?’
পুষ্পিতা ইমাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বসা থেকে উঠে গেল। বিছানায় গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
ইলহামের ঘুম ভাঙার পর বাইরে কাকের ‘কা কা’ ডাক শুনতে পেল। এতো জোরে ডাকছে যে। ইলহাম বুঝতে পারছে না উঠে শুনেছে না-কি কাকের ডাকের কারণে ঘুম ভেঙে গেছে। ঘরে সে একা। মনটা কেমন বিষণ্ণ লাগছে। উঠে বাইরে গেল সে। রায়হান আর তাসনিম বারান্দায় বেঞ্চে বসা। তাকে দেখে ওরা ডাকলো। সে চেয়ার টেনে বসলো গিয়ে। রায়হান উঠে বললো,
– ‘এখানে বসে লাভ নেই। ইলহাম তুমি মোবাইল সঙ্গে নাও। ওদিকে হেঁটে আসি।’
তাসনিম তাচ্ছিল্যের গলায় বললো,
– ‘এদিকে গিয়ে কি হবে। একটা দোকান নেই আশেপাশে।’
রায়হান হেঁসে বললো,
– ‘আরে না, পশ্চিম পড়ার রাস্তার মোড়ে আছে চা স্টল আছে।’
ইলহাম মোবাইল পকেটে রেখে বললো,
– ‘কিন্তু ও তো কল দিল না।’
তাসনিম একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– ‘দিয়েছে আমি কথা বলেছি।’
ইলহাম বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বললো, ‘মানে! ও কল দিছে আর এতক্ষণ পর বলছিস। ডাক দিলি না কেন।’ কথাটি বলে সে কল ব্যাক করার জন্য মোবাইল বের করলো।
তাসনিম থামিয়ে বললো,
– ‘আমি কথা বলেছি।’
– ‘কি কথা বলেছিস?’
– ‘হাঁটতে হাঁটতে বলি। নে সিগারেট ধরা। রায়হান এদিকে খেয়ে গেলে কি কোনো সমস্যা?’
– ‘না কেউ খেয়ালই করবে না।’
তিনজন হাঁটছে। তাসনিম সিগারেটে টান দিয়ে বললো,
– ‘অস্থির হবি না। ওইদিকে ম্যাডামও অস্থির হয়ে গেছে শুনে।’
কথাটির মধ্যে কিছু একটা ছিল। ম্যাজিকের মতো তার মনে ভালো করে দিল ইলহামের। তবুও ব্যগ্র গলায় বললো,
– ‘বল সবকিছু শোনার পর কি বললো?’
– ‘আমি রেকর্ড করেছি। সবই শুনতে পারবি। তোর ফোনেই আছে।’
– ‘তাই না-কি।’
ইলহাম বের মোবাইল করতে চাইল। তাসনিম আবার থামিয়ে দিল।
– ‘রাতে শুনিস। খাওয়া ঘুম ছাড়া তোর শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। অস্থির হবি না।’
– ‘আচ্ছা বল সে শুনে কি বললো।’
– ‘সবকিছু শুনে সে বিশ্বাস করেছে। কিন্তু বললো এখন কথা বলতে পারবে না। বুঝতেই তো পারছিস অনেক বড়ো ধাক্কা খেয়েছে৷ বলেছে কল দিবে পরে।’
ইলহাম ডায়ালে টাইম দেখে বললো,
– ‘কিন্তু অনেক্ষণ তো হলো কল দেয় না কেন?’
– ‘আরে ভাই দিবে সময় দে। তাছাড়া সে তো জেনে গেছে সব। এখন তো ও কি করবে ওর ব্যাপার। তোর কোনো হাত তো নেই এখানে।’
– ‘কিন্তু আমার সঙ্গে তো কথা হয়নি।’
– ‘শা*লা বিশ্বাস না হলে শুনে ফেল রেকর্ড।’
ইলহাম তাড়াতাড়ি মোবাইলের লক খুলে নিল। তার শুনতে হবে। রায়হান থামিয়ে বললো,
– ‘ওইখানে গিয়ে বসি।’
তিনজন খোলা একটা মাঠের দিকে গিয়ে সবুজ ঘাসে বসে পড়লো।
পুষ্পিতার এমন আচরণে ইমাদ বিস্মিত হয়ে যায়। কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। পুষ্পিতার কান্নার তোড় ক্রমশই বাড়তে থাকে। কান্না শুনে সাবিনা বেগম এসেছিলেন। তিনি মাথায় হাত রেখে বললেম,
– ‘কি হয়েছে রে মা? বল আমাকে?’
– ‘আমাকে মা ডাকবে না একদম। তোমরা সবাই একেকজন মু*খোশধারী শয়*তান। রুম থেকে বের হও। বের হও বলছি।’
সাবিনা বেগম ইমাদকে ইশারা করে নিয়ে বের হলেন। কল দিলেন মহসিন সাহেবকে। সবকিছু খুলে বললেন। তিনি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। সাবিনা বেগম এসে ডেকে বললেন,
– ‘মা তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলো।’
পুষ্পিতা মোবাইল কানে নিয়ে গালাগাল শুরু করলো, ‘তুমিও শ*য়তান। তোমরা সবাই আমার সঙ্গে প্র*তারণা করেছো। আরেক ছেলের জীবন নষ্ট করেছো।’
– ‘মা বলতে তো হবে কি হয়েছে। বল বাবাকে।’
– ‘আমি বলবো কেন? ইলহাম এসেছে গ্রামে। তুমি বলেছো আমাকে সে কথা?’
– ‘মা এসব তোকে কে বলেছে। তাছাড়া এখন তোর বিয়ে হয়ে গেছে। পেটে সন্তান আছে। এগুলো তোকে বলে লাভ কি মা?’
– ‘আমাকে তোমরা সবাই ষ*ড়য*ন্ত্র করে বিয়ে দিয়েছো। হায়দার চাচা আমার সঙ্গে প্র*তারণা করেছেন। উনি নিজে আমাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। আবার নিজে ইলহামকে মা*রধ*র করে মোবাইল সোনা কে*ড়ে নিয়েছেন। সবার চোখে খারাপ বানিয়েছেন ইলহামকে। এভাবে প্র*তারণা করে এই বিয়ে দিয়েছে লোকটা।’
– ‘কি বলিস মা এগুলো? আমি তো এসব জানি না। তাছাড়া বিচারে হায়দারের হু*মকি দেয়ার কথা শুনেছি। কিন্ত আমি তো এগুলো তাকে করতে বলিনি।’
– ‘তোমরা সবাই এক। এগুলো তোমাদের ষ*ড়য*ন্ত্র ছিল।’
– ‘বোকা মেয়ে। তোকে পালিয়ে যেতে যদি হায়দার সাহায্য করে তাহলে কিভাবে আমরা সঙ্গে থাকলাম। আচ্ছা মোবাইল ইমাদ বাবার কাছে দাও।’
পুষ্পিতা বিছানায় রেখে দিল মোবাইল।
ইমাদ হাত বাড়িয়ে মোবাইল কানে নিল। মহসিন সাহেব বললেন,
– ‘সবকিছু শুনলে তো বাবা৷ আর গ্রামেও ওই ছেলে এসেছে। চেয়ারম্যানের বাড়ি সে। বড়ো মুসিবতে পড়লাম। তোমার বাবার কাছে কি সোনা মোবাইল এগুলো দেখেছিলে।’
– ‘না না, এগুলো কিছুই তো আমি জানি না। আমি এসবে ছিলাম না।’
পুষ্পিতা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– ‘কে ছিল না ছিল আমি জানি না। এই বিয়ে আমি মানি না। আমার জন্য
নির্দোষ একটা ছেলের জীবন নষ্ট হচ্ছে। সব দোষ তোমাদের।’
সাবিনা বেগম মেয়ের মুখ চেপে ধরে বুকে টেনে নিলেন,
– ‘এসব কথা মুখেও আনবি না মা। তোর পেটে আল্লাহ একটা সন্তান দিয়েছে।’
ইমাদ মহসিন সাহেবের সঙ্গে কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি ইমাকে কল দিল। ইমা রিসিভ করলো ওপাশ থেকে।
– ‘ইমা তুই একটা কাজ কর তো।’
– ‘কি?’
– ‘বাবার রুমটার সবকিছু খুঁজে দেখতো সোনা আর টাকা কোথাও আছে কি-না।’
– ‘কি বলো এসব!’
– ‘যা বলছি তাই কর।’
ইমা ফোন রেখে বাবার রুমে গেল। সবকিছু তন্নতন্ন করে সে কিছুই খুঁজে পেল না। একটা সিন্দুক আছে খাটের তলায়। সেটা তালা দেওয়া। ইমাদকে কল দিল সে। জানালো কিছুই পায়নি। শুধু খাটের নিচের সিন্দুক তালা। এটার চাবি পাচ্ছে না। ইমাদ বললো ইট এনে ভেঙে ফেলতে। ইমা হা*তুড়ি দিয়ে অনেক্ষণ চেষ্টা করে ভাঙলো। ভেতরে একটা ব্যাগ দেখে সেটা খুলে সোনা দেখে বিস্মিত হয়ে যায় সে। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করে বললো। একটা ব্যাগে সোনা পেয়েছি। ইমাদ কল কেটে দিল। বসে পড়লো সোফায়। সাবিনা বেগম বললেন কি হয়েছে বাবা। ইমাদ ধরা গলায় বললো হ্যাঁ আন্টি বাবার রুমে সবকিছু পাওয়া গেছে। সাবিনা বেগম মহসিন সাহেবকে জানালেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে হায়দার সাহেবের বাড়িতে চলে গেলেন। ইমা বের করে দেখালো তাকে। তিনি দেখে চিনে ফেলেন।
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম
বি:দ্র: অসুস্থতার কারণে গল্পটা বড়ো করে লিখতে চাচ্ছি না। লিখলে ভালো নাও হতে পারে। আজ পর্ব আরও বড়ো দেয়ার ইচ্ছা ছিল।