বৃষ্টির_রাতে #রূবাইবা_মেহউইশ (৩২ )১ম অংশ

0
311

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৩২ )১ম অংশ

সবুজ ঘাসের গালিচায় পা ফেলতেই যেন পা হড়কায়! এত মোলায়েম, কোমল আর সতেজ ঘাসে পা ফেলতেই ইচ্ছে করে না সুপ্রভার৷ তবুও ফেলতে হচ্ছে পাশে তাসিন আছে বলে। যার পেছনে ওড়াল দিয়ে মনটা ছুটছিলো বাড়ির পথে সেই মানুষটা নিজেই উড়ে এসে হাটছে তার পাশাপাশি। বিধাতার পরিকল্পনা এমনই হয় যা আমরা ভাবি তা হয় না। আর যা হয় তা আমরা কল্পনায়ও আনতে পারি না। তাসিনকে দেখতেই সৌহার্দ্য আর মেহরিন অবাক হয়েছিলো তবে তারচেয়েও বেশি তারা কৌতূহলী হয়েছিলো এই সৌম্য পুরুষটির একবার বলাতেই বিনা বাক্যে সুপ্রভার বিদায় নেওয়ায়। দু জন মানুষ হা হয়ে তাকিয়েছিলো তাদের দিকে সুপ্রভা টের পেয়েও মাথা ঘামায়নি। পরে তাদের কিছু একটা বলে দেওয়া যাবে। তাসিন হাটতে হাটতে প্রথম কথাটি বলল, “স্যরি এভাবে তোমাকে বন্ধুদের মাঝখান থেকে নিয়ে আসার জন্য।”
সুপ্রভা শুনলো কথাটা তবে চুপ রইলো। তাসিনই আবার বলল, “কথাটা জরুরি না হলে ফোনেই বলতাম৷ আমাদের এলাকার এস আই এহসান কি তোমার রিলেটিভ?”

এবার আর চুপ থাকা গেল না। সুপ্রভা তৎক্ষনাৎ নিজের ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে একটা ছবি বের করলো।

“দেখুন তো এনার কথা জিজ্ঞেস করছেন?”

সুপ্রভাসহ আরো চার-পাঁচ জনের একটা গ্রুপ সেলফি দেখালো সুপ্রভা। তাসিন মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলতেই সুপ্রভা জবাব দিলো, “আমার মামাতো ভাই সে। আপনি কি করে চেনেন?”

“আমাদের এলাকায়ই তো থাকছেন। কথা সেটা না উনি কি বিবাহিত বা কারো সাথে কমিটেড?”

তাসিন সরাসরিই কিছু কথা জেনে কিছু কথা বলতে চাইছে। বিকেলের রোদের নরম আলো গায়ে মেখে দুজন তখনও সামনের দিকে হেঁটে চলছে। সুপ্রভা ভীষণরকম কৌতূহলী হয়ে তাকালো একবার। তাসিনও চোখে চোখ রাখলো আর অপেক্ষা করলো তার প্রশ্নের উত্তর শোনার। সুপ্রভার কেন জানি মনে হলো তাসিনের সাথে যেকোন কথাই দ্বিতীয়বার না ভেবেই বলা যায়। তাই কোন প্রশ্ন ছাড়াই জবাব দিলো, “না, ভাইয়া অবিবাহিত। চাকরির পাশাপাশি মাস্টার্স করছিলো। রেজাল্ট আউট হতেই মামী মেয়ে দেখা শুরু করেছেন ভাইয়াকে বিয়ে করানোর জন্য। পরবর্তী আর কোন আপডেট আমার জানা নেই৷ আপনি কেন জানতে চাইছেন!”

পা থামিয়ে সুপ্রভার দিকে ফিরে তাকালো তাসিন থেমে গেল সুপ্রভাও। নিশ্চুপ কয়েক সেকেন্ড সুপ্রভার মুখে তাকিয়ে থেকে খুব গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “প্রেমের বসন্ত এসেছে।”

“মানে!”

“বললাম, এহসান সাহেবের মনে প্রেমের বসন্ত এসেছে। তার বসন্তের কোকিল আমার ফুপাতো বোন।”

এবার যথেষ্ট ফানি স্বরে বলে তাসিন নিজেই হেসে ফেলল৷ কিছু সময়ের জন্য হলেও সুপ্রভা চমকেছিলো তাসিনের মুগ্ধ দৃষ্টি আর গম্ভীর কণ্ঠে বলা, ‘প্রেমের বসন্ত এসেছে ‘ কথাটা শুনে। কয়েক সেকেন্ডেই যেন তার পাগলী মনটা অন্যকিছু ভেবে বসেছিলো।

মীর বাড়িতে আজ দু’দিন ধরে একটুও শান্তির হাওয়া নেই। কাল সারাদিন মা, ছেলের কলহ চলেছে বিয়ে নিয়ে। আয়নার প্রতি তাসিনের যতটুকু স্নেহ ছিলো সবটাই উবে গেছে কাল রাতের একটুখানি কথোপকথনে। মায়ের সাথে ঝামেলার পর তাসিন রেগে বাড়ি থেকে বের হতেই আয়না ডেকে উঠলো। জলন্ত মেজাজে ঘি ঢালার কাজ করলো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা আয়না। তাসিন তাকে দেখতেই প্রশ্ন করলো, “তুই কি নিজেকে বদলাবি না আয়না?”

“বদলানোর প্রয়োজন তো নেই তাসিন ভাই। ভালোবাসা ভুল কিছু না আর আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমি কি দেখতে খারাপ বলো! আমাকে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?”

জীবনে এই প্রথম বোধহয় তাসিন অবাক হওয়ার ঘটনায় স্তব্ধ হয়েছিলো। এই সেই আয়না যাকে কত কোলে, কাঁধে নিয়ে সারা পাড়া ঘুরতো। যেখানেই যেত বাড়ি ফিরতি পথে যার জন্য একটা হলেও কিছু হাতে নিয়ে তবেই ফিরতো সেই আয়না আজ তাকে ভালোবাসার জ্ঞান দিচ্ছে! একটা মূহুর্ত পর স্তব্ধতা কাটিয়ে তাসিন সহজ গলায় বলল, “ভালোবাসার জ্ঞান আমায় দিতে আসিস না আয়না। আমি তোকে মাইশার চেয়ে ভিন্ন কখনো দেখিনি।”

“আগে দেখোনি এখন থেকে দেখলেই হবে।” আয়না মুখের ওপর কথাটা বলতেই তাসিন এই অন্ধকারে থাপ্পড় মেরে বসলো আয়নার গালে। সে সত্যিই আশা করেনি আয়নার মুখে এমন চটাং চটাং কথা। সত্যি তো এই সে কয়েকবার চেষ্টা করেছিলো আয়নাকে নিয়ে ভাবতে কারণ সেও বুঝতো আয়নার পাগলামির জন্য নিজেদের পরিবারেই কোন ঝামেলার সৃষ্টি হবে। কিন্তু সে কিছুতেই আয়নাকে তার মনে অন্য কোন স্থান দিতে পারেনি আর এখন তো তা একেবারেই অসম্ভব যখন তার হৃদয়পটে সুপ্রভা আঁচর কেটে গেছে। তাসিনের থাপ্পড়ে আয়না একটুও টলেনি বরং উল্টো তাকে রাগিয়ে দিয়ে বলেছিলো, “আমি বিয়ে একমাত্র তেমাকেই করবো।”

তাসিনও তখন কেমন গোঁয়ার্তুমি করে বলে বসলো এক মাসের মধ্যে আমি তোর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে ছাড়ব।”

রাগ আর জেদ মানুষকে কি পরিমাণ যে উদ্ভট আর পাগল করে দেয় তা যেন তাসিন এখন টের পাচ্ছে৷ আয়নাকে কেমন চ্যালেন্জের মত কথাটা বলে রাতে আর বাড়ি ফেরেনি৷ রিমনের কাছে গিয়েছিলো রাতটা থাকতে তখনই কথায় কথায় এহসান সম্পর্কে জানতে পারে তাসিন৷ আরো একটু জানতে পারে এহসান সম্পর্কে তা হলো শিকদার বাড়ির আত্মীয় সে। ব্যস, আর কিছু না ভেবে সকালেই রওনা দেয় ঢাকায় আর আসতে পথে এই প্রথম একটা অন্যায় করে তা হলো বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছে সে৷ সকাল থেকে অনেকবার মা আর তুহিন কল করেছে সে একবার তুহিনকে জানিয়েছে ঢাকায় চলে যাচ্ছে। এরপর আর কোন কলই রিসিভ করেনি। এখন মনে হচ্ছে সে যা করছে তা শুধুই বাচ্চামো আর টিনএজারদের মত ভাবনা। জীবন তো তিন ঘন্টার সিনেমা নয় যা ভাবলাম তাই হবে শেষ পর্যন্ত! আর আয়নার বিয়ে সে বললেই তো হবে না। সুপ্রভার সাথে কথা বলে আসার পর থেকে যেন আরো বেশি ভাবনাগ্রস্ত হচ্ছে সে৷ এভাবে সুপ্রভাকে এহসান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাটা কি ঠিক হলো! গত দু দিনের চেয়েও দ্বিগুণ পরিমাণ চিন্তায় মাথায় নিয়ে ঘুমালো আজ তাসিন।

চলবে
(যেখানে মাইগ্রেন আছে সেখানে আর কি লাগে? মাসের অর্ধেকের বেশি সময় এর সাথেই কাটে। গল্পের পরের অংশ কাল লিখবো🥺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here