রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-২৯

0
672

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-২৯

৫০।
রিকশা থেকে নেমেই স্বস্তিকা পেছন ফিরে তাকালো। তার চোখ দুটি ছলছল করছে। সে এক দৃষ্টিতে মাফিনের দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু মাফিনের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো স্বস্তিকা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

মাফিন ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“বাসায় যাবে না?”

স্বস্তিকা মাথা নেড়ে বলল, “না।”

“কেন?”

“এমনিতেই।”

“পাগল হয়ে গেছো নাকি? তাড়াতাড়ি বাসায় যাও।”

“আপনি আমাকে শুধু পাগল ছাগল বলেই ডাকেন। আমার এসব ভালো লাগে না।”

মাফিন তার ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বুকে হাত গুঁজে ভালোভাবে স্বস্তিকার দিকে তাকালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কি কাঁদছো?”

স্বস্তিকা চোখের পানি মুছে বলল,
“না, কাঁদবো কেন? আমার বর তো আমার অনেক খেয়াল রাখে। সারাদিন আমার সাথে কথা বলে। আমি ফোন করলে একটুও বিরক্ত হয় না। আর বাইরের কোনো মেয়ের সাথেও কথা বলে না।”

মাফিন বুঝতে পারলো স্বস্তিকা কি বোঝাতে চাইছে। সে স্বস্তিকার হাত ধরে বলল,
“তোমাকে তো আমি বলেছি, আমার এসব আদিখ্যেতা ভালো লাগে না। আর সারাদিন কি কথা বলবো তোমার সাথে? আমি আসলে বলার মতো কোনো কথায় খুঁজে পাই না। আর তুমি এমন সময়ে ফোন দাও, যখন আমি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি।”

“আর শেষটার কোনো ব্যাখ্যা আছে?”

মাফিন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাফিনকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তিকা বলল,
“রিকশায় যতোক্ষণ আমার পাশে ছিলেন, ততোক্ষণই আপনি মেয়েটার সাথে চ্যাটিং করেছেন। আর তার সাথে কি সব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছিলেন!”

“দেখো, স্বস্তিকা। মেয়েটা আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড। আর বয়সেও আমার চেয়ে বড়। আমার কোনো কুচিন্তা থাকলে তোমার পাশে বসে আমি মেয়েটার সাথে চ্যাটিং করতাম না। আড়ালে গিয়েই করতাম। তোমাকে আগেও বলেছি, আজ শেষ বার বলছি, আমার মেয়েঘটিত কোনো কিছুই নেই। আর আমি এখন তোমার বর হওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। হয়তো আমাদের কাগজে-কলমে বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মতো মন-মানসিকতা আমার এখনো আসে নি। আমাকে কিছুদিন নিজের মতোই থাকতে দাও। দেখবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“কিন্তু আমি এসব মেনে নিতে পারছি না।”

মাফিন স্বস্তিকার কথা শুনে এবার রেগে গেলো। চেঁচিয়ে বলল,
“শুধুমাত্র এসব বিরক্তির কথাবার্তা না শোনার জন্য আমি বিয়ে করতে চাই নি। কিন্তু মা আমার ঘাড়ে…”

স্বস্তিকা মাফিনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমাকে চাপিয়ে দিয়েছে, তাই তো?”

মাফিন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“তুমি বাসায় যাও।”

স্বস্তিকা মাথা নেড়ে সামনে পা বাড়ালো। হঠাৎ পেছন ফিরে মাফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আর আপনাকে বিরক্ত করবো না। নতুন নতুন বর পেয়েছি তো, তাই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। দুঃখিত।”

কথাটি বলেই স্বস্তিকা চলে গেলো। মাফিন এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তার স্বস্তিকাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু বিয়ে নামক সম্পর্কটাকে সে সহজ করে নিতে পারছে না। তার কাছে একা একা থাকাটাই বেশি শান্তির মনে হয়। স্বস্তিকার সাথে যতোবার কথা বলতে গিয়েছে, ততোবারই তাদের মতের অমিল হওয়ায় ছোটখাটো ঝামেলা বেঁধে গিয়েছিলো। তাই মাফিন এখন স্বস্তিকা থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলে। তবে তার মানে এই নয় যে, সে স্বস্তিকাকে পছন্দ করে না। সে এখন আপতত নিজেকে নিয়েই থাকতে চাই।

এদিকে বাসায় আসার পর থেকে প্রহর কোনোভাবেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। নিজের চোখের দেখাকে ভুল প্রমাণিত করার জন্য একবার ফোন হাতে নিয়ে মহুয়ার বান্দরবানে তোলা ছবিটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো, আবার মারিয়ার আক্দে তোলা ছবিটি দেখলো। সে বুঝতে পারলো, দুজনকে আলাদা করার শুধু একটাই উপায় আছে, আর তা হলো তাদের চোখ। মহুয়ার চোখগুলো বড় বড় আর স্বচ্ছ। আর মারিয়ার চোখ দুটি ছোট আর অস্বচ্ছ, তবে চোখের পাপড়িগুলো ঘন।

প্রহর মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। আর মনে মনে বলল,
“মায়াবিনীর কন্ঠ, চোখ এই দুইটা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল, কিন্তু আমি তাকে চিনতেই পারলাম না?”

প্রহর এবার চেঁচিয়ে মা আর প্রিয়াকে ডাকলো। তারা প্রহরের চেঁচামেচি শুনে দৌঁড়ে ঘরে এলো। ছেলের চোখেমুখে রাগ দেখে মাসুমা আকতার অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। এর আগে কখনো তিনি ছেলেকে এমন দেখেন নি। তিনি যতোদূর জানেন, প্রহর যথেষ্ট শান্ত আর ভদ্র ছেলে।

মাসুমা আকতার নরম কন্ঠে বললেন,
“কি হয়েছে তোর?”

প্রহর শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি জানতে মারিয়া আর মহুয়া জমজ বোন?”

“হ্যাঁ, জানতাম। যেদিন তোকে দেখতে গিয়েছিলাম, সেদিনই তো বেয়াইন বলেছিলো।”

প্রিয়া অবাক কন্ঠে বললো,
“ভাবীর জমজ বোন আছে? তুমি তো আমাকেও বলো নি। আর আমি তো তাকে দেখলামও না।”

“মেয়েটা তো তার মামার বাসায় ছিলো, তাই তুই যেদিন গিয়েছিলি সেদিন দেখা হয় নি।”

প্রিয়া এবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া, তোর কি হয়েছে?”

প্রহর ধীর কন্ঠে বললো,
“আমি যাকে পছন্দ করতাম, আমি যার ছবি দেখিয়েছিলাম, মেয়েটা মহুয়া ছিল।”

মাসুমা আকতার আর প্রিয়া দু’জনই কথাটি শুনে বড়সড় ধাক্কা খেলো। মাসুমা আকতার এবার ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“কি বলছিস? কিন্তু তুই তো বললি মেয়েটার নাম মারিয়া নাওয়াল।”

প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি বলি নি, মা। তোমার এই বোকা মেয়েটা আমাকে এই তথ্য দিয়েছে।”

প্রিয়া ভাইয়ের পাশে বসে বলল,
“ভাইয়া, আমি তো তাকে নিজের চোখে দেখেছি, তারপরই তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

“তুই যাকে দেখেছিস ও মারিয়া ছিল। সেদিন মারিয়ার কলেজ থেকেই বান্দরবান ট্যুরে নিয়ে গিয়েছিল। আর সাথে মহুয়াও গিয়েছিল। তাই এতো বড় একটা কানফিউশন হয়েছে।”

“এখন কি করবি, ভাইয়া?”

মাসুমা আকতার বিচলিত কন্ঠে বললেন,
“কি করবে মানে? শোন প্রহর, বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না। তোর সাথে মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তুই এসব মাথা থেকে বের করে মারিয়ার সাথেই সংসার করবি।”

প্রহর মলিন মুখে বললো,
“মা, তুমি আমাকে বুঝতেই পারলে না।”

মাসুমা আকতার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এই কথা নতুন বউ মা যাতে জানতে না পারে। অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। আর এই বিষয় নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি না করলেই ভালো হবে।”

কথাটি বলেই মাসুমা আকতার চলে গেলেন। কিন্তু তিনি মনে মনে অনেক আঘাত পেয়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন, একমাত্র ছেলের বিয়ে ছেলের ইচ্ছেমতো দেবেন। কিন্তু আজ তার ছেলের ইচ্ছেরই মৃত্যু ঘটেছে।

এদিকে প্রিয়া ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ভাইয়া, মারিয়া ভাবী কিন্তু অনেক ভালো মনের মেয়ে। তুই আর..”

প্রহর প্রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আমি আর কি? এতো সহজে আমি সব ভুলে যাবো? আমার সাথে ধোঁকা হয়েছে। আর প্রকৃতিই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমার ভাগ্য আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। এখানে কারো হাত নেই। আমি কার উপর দোষ চাপাবো? আমার তো এখন মাথায় কাজ করছে না। আর মারিয়া? ও আমার জন্য উপযুক্ত নয়। ওর চিন্তাভাবনা আমার চেয়ে অনেক আলাদা। ওর কথাবার্তায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যা মুখে আসে বলে ফেলে। এমন মেয়ে এট লিস্ট আমি পছন্দ করি না।”

“তাহলে কি ছেড়ে দিবি?”

“ছেড়ে দেওয়া কি এতো সহজ?”

“সেটাই তো ভাইয়া। তোর একপাক্ষিক ভালোবাসার জন্য কি এতোগুলো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে?”

“তাহলে আমি কি করবো এখন?”

“মারিয়া ভাবীর সাথেই সংসার করবি।”

“মেয়েটা আমার মনের মতো না রে। যতোক্ষণ আমার পাশে ছিল, আমার অসহ্য লাগছিল। আমি ওর সাথে পুরো জীবন কিভাবে কাটাবো?”

কথাটি বলতে বলতেই প্রহর ফুঁপিয়ে উঠলো। প্রিয়া ভাইকে এই প্রথম এমন বিষন্ন দেখেছে। আক্দের প্রথম দিনেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে এই সম্পর্কের পরিণতি কি?

৫১।

মাঝরাতে সূচনার হাতের স্পর্শে মাহাথির ঘুম ভেঙে গেলো। পাশ ফিরে দেখলো, তার বউ তার হাতটা একেবারে তার নাকের উপর চড়িয়ে দিয়েছে। খুব জোরেই হাতটা এসে পড়েছিলো, তাই নাকটা ঝিনঝিন করছে। সূচনার হাতটি সরিয়ে দিয়ে মাহাথি উঠে বসলো। এবার শুরু হলো বউয়ের স্পর্শের প্রতিফলন। পাঁচ-ছয়বার টানা হাঁচি দেওয়ার পরই এখন মাহাথির কিছুটা শান্তি লাগছে। হাঁচির শব্দ শুনেও সূচনার কোনো নড়ন-চড়ন নেই। সে আরো ভালোভাবেই মাহাথির জায়গাটা নিজের করে নিয়ে ঘুমাতে লাগলো। এদিকে রাতে অল্প করে খেয়েই মাহাথি ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাই এই মুহূর্তে তার ক্ষিধে পেয়েছে। সে ভাবলো, কিছু খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু যেই বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে, তখনই সূচনা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, “কে?”

মাহাথি সূচনার গাল টেনে দিয়ে বলল,
“তোমার মাহা।”

সূচনা ব্যথা পেয়ে গাল ঘঁষতে ঘঁষতে উঠে বসলো। তারপর বিরক্তির সুরে বলল,
“তুমি আমার গাল টেনে দিয়েছো কেন? আমি ব্যথা পাই নি? এতো রাতে কেউ এমন করে? অত্যাচারী বর একটা। সরো।”

মাহাথিকে সরিয়ে দিয়ে সূচনা আবার ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। মাহাথি এবার সূচনার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“আর তুমি যখন তোমার এক কেজি হাত আমার নাকে উপর ছুঁড়ে দাও, তখন কি আমার ব্যথা লাগে না?”

সূচনা কথাটি শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে মাহাথির দিকে তাকালো। মাহাথি আবার বলল,
“তুমিও একটা অত্যাচারী বউ।”

সূচনা মলিন সুরে বলল,
“সরি। বাকি কথা সকালে হবে। গুড নাইট।”

মাহাথি মুচকি হেসে রান্নাঘরে চলে গেলো। সেখানে এসে দেখলো মাফিন আর মারিয়া ফ্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন করছে।

মাহাথি বলল,
“তোরা কি করছিস?”

মাহাথির কন্ঠ শুনে দুজন একসাথেই ফ্রিজটা বন্ধ করে দিল। মারিয়ার গালটা ফুলে আছে, আর মাফিনের হাতে ক্রিম মাখানো।

মাফিন মাহাথিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“ভাইয়া, তুমি? আমরা ভেবেছি মা এসেছে।”

“কি খাচ্ছিস?”

মারিয়া মুখে থাকা মিষ্টিটা খেয়ে বলল,
“ভাইয়া ফ্রিজে কতোগুলো মিষ্টি পড়ে আছে। আমরা ভাবছিলাম কি, খেয়ে ফেলি। নয়তো আবার নষ্ট হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা, তা একদিনেই কি সব খেয়ে ফেলবি? এতো মিষ্টি একসাথে খেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি।”

মাফিন মাহাথিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“মাত্র ছয়টা খেয়েছি। আরো তিন চারটা খেয়ে চলে যাবো।”

মাহাথি বলল,
“তুই কি এখনো ছোট? ওকে এসব বাজে অভ্যাস কেন শেখাচ্ছিস?”

মাফিন বলল,
“আমি বাজে অভ্যাস শেখাতে যাবো কেন? ও তো আমার চেয়ে এগিয়ে গেছে। এক প্যাকেট মিষ্টি শুধু ও একাই খেয়েছে।”

মারিয়া গাল ফুলিয়ে বলল,
“ভাইয়া, এগুলো আমার বিয়ের মিষ্টি। এই মিষ্টির উপর সবার আগে আমার অধিকার।”

মাহাথি তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোরা এতো রাতে কি শুরু করেছিস?”

মারিয়া এবার ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“ভাইয়া, তুমিও কি আমাদের মতো মিষ্টির উপর হামলা চালাতে এসেছো?”

“জ্বি, না। আমার ক্ষুধা লেগেছে। তাই কিছু খেতে এসেছি। আর এই সব মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে আমি নিজেকে রোগী বানাতে চাই না।”

“হুম, মিষ্টি ভাবী থাকলে তোমার আবার এসব মিষ্টি খাওয়ার কি দরকার?”

মারিয়ার কথা শুনে মাহাথি চোখ বড় বড় করে মারিয়ার দিকে তাকালো। মাফিন মারিয়ার মাথায় ঠোকা দিয়ে বলল,
“বিয়ে হয়েছে এক দিনও হয় নি, তুই এসব উল্টোপাল্টা কথা বলাও শিখে গেছিস?”

মারিয়া মুখে হাত দিয়ে মাহাথির দিকে তাকিয়ে বলল,
“সরি ভাইয়া, স্লিপ অব থাং।”

এরপর মারিয়া পা টিপেটিপে নিজের ঘরে চলে গেলো। এদিকে মাফিন মুখে হাত দিয়ে মাহাথির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। মাহাথি চেঁচিয়ে বলল,
“যাবি, নাকি মার খাবি?”

মাফিন ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“আচ্ছা, যাচ্ছি যাচ্ছি। আরেকটা মিষ্টি খেয়ে যাই?”

“তুই এখনই এখান থেকে যা।”

মাফিনও এবার মাথা নেড়ে চলে গেলো। আর মাহাথি চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো, আর আনমনে হাসতে লাগলো।

নিবিড়ের জীবনটা হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গেলো। যখন থেকেই সে শুনেছে মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে, তখন থেকেই সে না ঠিকমতো খেতে পারছে, আর না পারছে ঠিকভাবে ঘুমাতে। নাহিদ হোসেন ছেলের এই অবস্থায় অনেক চিন্তিত। কিন্তু তারও করার কিছু নেই। তিনি কখনোই ভাবতে পারেন নি, তার ছেলে তারই প্রাক্তন ভালোবাসার মানুষটির মেয়েকেই ভালোবেসে ফেলবে। এসব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা কেন যে তার সাথেই হয়, সেটিও নাহিদ হোসেন বুঝতে পারছেন না।

নিবিড়ের পাগলামো দেখে তার ইচ্ছে করছে, তাকে বেধড়ক মারধর করতে। আবার ছেলে মা হারিয়েছে তাও বেশিদিন হয় নি। এখন যদি ছেলেকে সান্ত্বনা না দিয়ে মারধোর করেন, তখন সে না জানি, কি করে বসে। তাই তিনি চুপচাপ নিবিড়ের পাগলামোগুলো সহ্য করছেন।

নিবিড় বাবার দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বললো,
“বাবা, আমি এই বিয়ে মানি না। আমার মারিয়াকেই লাগবে। তুমি আন্টিকে বলো, মারিয়াকে ওই ঘরে না পাঠাতে। মারিয়া ফিরে আসলে আমি এখনই ওকে বিয়ে করবো। ওর বিয়ে হোক, বাচ্চা হোক, ডিভোর্স হোক, যা ইচ্ছে হোক, আমি ওকে যে-কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেবো। আমার শুধু ওকেই লাগবে।”

নাহিদ মনে মনে বলল,
“তোর বয়সে আমিও বলেছিলাম, আরিয়ার বিয়ে হোক বা বাচ্চা হোক, আমি ওকেই বিয়ে করবো। কিন্তু এখন তোর মাকে বিয়ে করেছি। আর এতোবছর সুখেও ছিলাম। আমার কিছুই হয় নি। বেঁচে ছিলাম, এখনো বেঁচে আছি।”

“বাবা, কিছু তো বলো।”

“নিবিড়, বাবা। ছেলেদের এতো দুর্বল হলে চলে না। ছেলেদের উপর অনেক দায়িত্ব। তোর একটা ছোট ভাই আছে। আজ তোর এই অবস্থা দেখে ও কি শিখলো? ও শিখলো, প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেলে প্রেমিক পুরুষ দেবদাস হয়ে মেঝেতে লুটোপুটি খায়। এইটা কি ভালো কিছু শিখলো, বল?”

“বাবা, তুমি আমার সাথে মজা করছো?”

“মজার ছলেও যদি তুই আরিয়া ফেরদৌসের মেয়েকে কিছু সেকেন্ডের জন্য ভুলতে পারিস, তাহলে তো ভালোই।”

নিবিড় বাবার কোল থেকে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“নিরব কোথায়?”

“স্কুলে চলে গেছে।”

“বাবা, আমি আর কলেজে যাবো না।”

“কেন যাবি না?”

“মারিয়াকে দেখলে আমি আর ভালো থাকবো না।”

নাহিদ হোসেন এবার কড়া ভাষায় বললেন,
“সামনে তোর টেস্ট পরীক্ষা। আমি উল্টোপাল্টা রেজাল্ট দেখলে, বাসায় অনেক ঝামেলা হবে। তাই এসব উদ্ভট জিনিস মাথা থেকে ফেল।”

নিবিড়কে এখন বেশি আস্কারা দেওয়া যাবে না। এখন তাকে একটু কঠোর হতে হবে। নয়তো ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here