#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৩৫)
ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরছে ছন্দ তুলে সেই সাথে বাতাসের তান্ডবও থেমে নেই। ঘড়ির কাটায় রাত তখন সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। আয়নাদের বসার ঘরে এখন রাতের খাবার নিয়ে মেহমানদের সাথে সাধাসাধি পর্ব চলছে। কথা এমন ছিলো না তবুও এমনটাই হয়ে গেল। আবহাওয়া আর মানুষের মন কখন যে কেমন করে বদলে যায় তা কারো বোঝার সাধ্যি নেই। সন্ধ্যার পর মেহমানরা যখন আংটি পরাতে চাইলো তখন আয়নার বাবা অনেকটা বিনয়ের সাথে বাধ সাধলেন। এহসানের মা দমে গেলেও তার ভাবনা ছিলো সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই করবেন সবটা। ছেলে যে এই মেয়েটাকে ভীষণরকম ভালোবেসে ফেলেছে তা তিনি সেদিনই বুঝে গেছেন যেদিন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি নাকি নিজের জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছো ঠিকানা দাও দেখে আসি।”
এহসান হকচকিয়ে গিয়েছিলো মায়ের কথায় সে তো মাকে বলেনি এমন কিছু! পরবর্তীতে খুব নম্র স্বরে বলেছিলো, “মেয়েটি আমার চেয়ে অনেক ছোট আম্মা আর আমি এখনই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই না। নিজেই তাকে ভালোলাগার কথা জানিয়ে তার মতামত জানতে চাই। সে আমাকে পছন্দ করলেই তোমরা যাবে না করলে আর এগোবো না সেদিকে।”
মেয়েটির মনের কথা সে আগে ভেবেছে পরে সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছে এটা খুবই ভালো লেগেছে এহসানের মায়ের। নিজের ছেলে বলে নয় সত্যিই এহসান সততার সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। আর আজ মেয়ে দেখতে এসে কেন জানি মনে হলো মেয়েটির মনে কিছু চলছে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার যে তাদের ছেলেকে পছন্দ করে সেকথা মেয়েটির মামী আর মেয়ের বাবার কথাবার্তায় বোঝা হয়ে গেছে। তাই তিনি আংটি নিয়ে তোড়জোড় করছিলেন। এরই মাঝে আবহাওয়া নরম হলো হঠাৎ করেই। প্রথমে বাতাস কিছুক্ষণ পরেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আংটি বদল পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে কিন্তু এহসানের বাড়ির লোকেরা আর বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। রাত যখন প্রায় নয়টা বাজে তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই এসে হাজির হয় আয়নাদের গেইটের সামনে। সুপ্রভার বড়দাকে ফোন দিয়ে গাড়িও পাঠাতে বলে সে। এহসান যখন তার মাকে ফোন দিয়ে বলল, কোনমতে বেরিয়ে গেইটে আসো তোমরা সোহরাব ভাই গাড়ি পাঠিয়েছে। তখন পাশ থেকে তাসিনের মামীও বোধহয় শুনলেন এহসানের মায়ের কথা৷ সেও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলো না। তিনিই বললেন, “আপা আপনার ছেলেটাই কি আপনাদের নিতে এসেছে!”
এহসানের মা কিছুটা ভড়কে গেলেন তবে জবাব দিলেন ‘হ্যা’ পাত্র নিজেই এসেছে। ব্যস, মামীও শুরু করলেন, “বৃষ্টিতে ছেলেটা বাইরে কেন তাকে ভেতরে আসতে বলুন। এই সুযোগে ছেলে মেয়ে দুটোকে কথা বলতে দেয়া যাক। বিয়েটা তারাই তো করবে আর মেয়ের মাও ছেলে এখনই দেখে নিবে!”
এহসানের মা তাকে পুনরায় ফোন করে বললেন ভেতরে চলে আসতে। ছাতা মাথায় থাকলেও এহসান অনেকটা ভিজে গেছে। বসার ঘরে উপস্থিত হতেই আয়নার মা তড়িঘড়ি তাকে একটা তোয়ালে এনে দিলো হাতে। সামনে অনেকগুলো মহিলা বসে আছেন তাই আয়নার বাবা বললেন, “এককাজ করো তুমি পাশের ঘরে বসে একটু ভালো করে মুখ হাত মুছে নাও এসো আমার সাথে।”
এহসানও বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে গেলো আয়নার বাবার সাথে। ভালো করে মাথা মুছে ইউনিফর্মের ওপর দিয়েই হাত, মুখ মুছতে গিয়ে কেমন যেন একটু লাগলো তার। তোয়ালেটাতে কেমন ভিন্ন এক সুবাস। এটা কি শ্যাম্পু কি কোন শ্যাম্পুর সুবাস! তোয়ালেটা কি আয়নার! প্রেমিক মনের ভাবনা বোধহয় এমনই হয়। মিনিট কয়েকের মাঝেই তাসিনের মামী এলেন চায়ের কাপ হাতে এহসানের সামনে। সে তোয়ালেটা বিছানায় রেখে নম্রস্বরে বলল, “আমি বাইরেই আসছিলাম আন্টি।”
“একটু পরেই এসো বাবা। তোমার আম্মু আর মেয়ে পরিবার চাচ্ছে তুমি আর আমাদের আয়না একটু নিজেদের মধ্যে কথা বলে নাও তাই এখানেই নিয়ে এলাম চা’টা। আসলে কি বলোতো তোমার আম্মু আংটি পরাতে চাচ্ছিলেন তাই আমরা ভাবলাম বিয়েটা তোমাদের আলাপটাও তোমাদের হওয়া উচিত।”
এহসানও হয়ত এমন কিছুই ভাবছিলো মনে মনে তাই আর কথা বাড়ায়নি। তার মৌনতা তাসিনের মামি সম্মতি ভেবেই চা দিয়ে চলে গেলেন।
আয়নার ঘরে ঢুকে মিনতি তার চুল মুঠোয় পুরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, “বেহায়াগিরি শেষ হয়ে থাকলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে মুখে পাউডার মেরে ওড়না মাথায় দিয়ে বের হ। ছেলের সাথে এখন দেখা করবি আর অবশ্যই সে যাই জিজ্ঞেস করবে ভালোভাবে জবাব দিবি। আর যদি একটুও কোন ভুল কাজ করিস তবে আজকে রাতেই আমার ম’রা মুখ দেখবি।”
চুল ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আয়নার মা। সন্ধ্যায় যখন এহসানের বাড়ির মানুষগুলো এলো তখনই মিনতি মেয়ের ঘরে এসেছিলেন তাকে পরিপাটি থাকার কথা বলতে। দরজা আলগোছে লাগানো ছিলো আয়নার সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। তার মাথায় ঘুরছিলো তাসিনের বলা একটা কথাই, ” আমি একজনকে ভালোবাসি খুব খুব খুউব ভালোবাসি।”
এই একটা বাক্যই আয়নার ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঝাঁজরা করে দিলো। মুহূর্তেই মনে হলো বেঁ’চে থেকে লাভ কি তার! অল্পবয়সী আবেগি মন তখন আবেগি ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ রইলো। শুধু মনে হলো তাসিন ভাইকে না পেলে ম/রে যাওয়াই শ্রেয়। সে যাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা কেন তাকে ভালোবাসবে না! অযৌক্তিক এক ভাবনা মনকে বিষিয়ে তুলতেই তৎক্ষনাৎ গলায় ফাঁ’স দেওয়ার সহজ ভাবনটাই তাকে গ্রাস করেছিলো। পরনের শাড়িটা খুলে প্রথমেই বন্ধ ফ্যানটায় বাঁধতে চেষ্টা করছিল আর তখনি তার মা প্রবেশ করেন ঘরে। বলতে নেই এক মুহূর্তে মিনতির আত্মাটা দেহ ছেড়েই যেন বেরিয়ে যাচ্ছিল একমাত্র সন্তানের এমন অবস্থা দেখে। কয়েক সেকেন্ড এর স্তব্ধতার পর যখন তার হুঁশ এলো তখনি সে আয়নাকে টেনে খাট থেকে নামিয়ে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় মেরেছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আয়নার মধ্যে একটুও পরিবর্তন হয়নি অথচ মিনতি থরথর করে কেঁপে যাচ্ছিলেন৷ থাপ্পড়ে আয়নার গাল লাল হয়ে উঠেছে তবুও এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেনি। নিজেকে সময় নিয়ে ধাতস্থ করে মিনতি যখন ঘর ছাড়ছিলেন তখন বলেছিলেন মুখে ভালো করে মেকাপ দে। একটু পরই তোর মামী এসে নিয়ে যাবে। একটু আগের ঘটনা কেউ যেন টের না পায়। তাই হয়েছিলো, কেউ গাল, মুখ দেখে কিছু বুঝতে না পারলেও এহসানের মায়ের মনে হলো মেয়েটা একটু রূঢ় স্বভাবের তবে ছেলের পছন্দ বলে বেশি একটা ভাবেননি। আর এখন যখন এহসানের সামনে যেতে হবে তখন মিনতির মনে হলো মেয়ে এবার নিশ্চয়ই ঝামেলা করবে তাই একটু সাবধান করার চিন্তায় রাগ প্রকাশ করে মেয়ের চুলের মুঠি ধরেছিলেন । কিন্তু না তাকে অবাক করে দিয়ে মেয়ে সত্যিই কোন ঝামেলা করেনি বরং প্রথমবারের মেকাপের ওপর আরো এক প্রস্থ ফাউন্ডেশন আর পাউডার মিলিয়ে গালের লালচে আভা দূর করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ এখনো আসেনি বৃষ্টিও কমার বদলে যেন আরো বেড়ে গেল। এবারও তাসিনের মামিই নিজ উদ্দোগে এগিয়ে আসছিলেন আয়নাকে নিয়ে এহসানের সামনে যেতে। তখনি মামির ফোন বাজল। আয়নার ঘরে না ঢুকে সামনেই বারান্দার মত জায়গায় দাঁড়িয়ে মামি কল ধরলেন। এদিকটাতে মোমবাতি কিংবা চার্জার বাতি কিছুই নেই বলে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও চোখে পড়ছে না। মামি ফোন রিসিভ করে নিচু স্বরে বললেন, “বল তাসিন।”
“ওদিকের কি অবস্থা মামী? ”
“সব ঠিকঠাকই আছে আর মেয়েটাও কোন পাগলামি করেনি। আল্লাহ ভরসা এখনও কোন ভুল করবে না। ও জানিস, পাত্র এসেছে এখন সবাইকে বলেছি মেয়ের সাথে তাকে আলাদা কথা বলতে দিতে।”
“কিন্তু মামী আয়না যদি এহসানকে কিছু বলে!”
চিন্তিত স্বরে বলল তাসিন।
“কি বলবে! আয়না তো আর একদমই বাচ্চা মেয়ে না। আর সুপ্রভা না তোকে বলল তার ভাই খুব ভালোবাসে আয়নাকে! ভয় পাওয়ার কিছু নেই দেখবি আয়না সুখী হবে ছেলেটার সাথে। সত্যি বলতে কি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নিজের একটা মেয়ে থাকলে আমার মেয়ের জামাই করে নিতাম তাকে।” হেসে উঠলেন মামী। কথাবার্তা খুবই ধীরস্বরে বলছিলেন দুজনে। তারা কথার মাঝেই সুপ্রভাকে নিয়েও কথা বলে খুব হাসছিলেন। মামীর হঠাৎ মনে হলো তাঁর পেছনে কেউ আছে। বোধহয় কারো নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলেন। ঘাড় ফিরিয়ে ফোন তাক করলেন। ফ্ল্যাশের আলোয় কাউকেই দেখতে পেলেন না। আবার মনে হলো এত বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের মাঝে নিঃশ্বাস শোনা ভ্রম ছাড়া কিছুই নয়। তাসিনকে ফোন রাখতে বলে তিনি আয়নার রুমে ঢুকলেন। সে ঘরেও বাতি নেই আয়নার ফোনের টর্চ জ্বলছে। মৃদু আলোতেও আয়নার মুখটা মিষ্টি লাগছিলো দেখতে। মামী মনে মনেই বলে বসলেন, “মেয়েটা খুবই সুন্দরী তাসিন কি হতো এই মেয়েটাকেই যদি ভালোবাসতি! তাহলে এইটুকুনি মেয়ের আবেগ অল্প বয়সেই যন্ত্রণায় ঝলসাতো না।”
কারো হাতেই কিছু নেই। ভাগ্যের সাজানো গল্প মানুষ বদলাতে পারে না। মামী আলতো হাতে আয়নার মাথায় হাত রেখে বললেন, “চলো আম্মু ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।”
আয়না চুপচাপ বেরিয়ে এলো মামীর সাথে। বসার ঘর পেরিয়ে পরের ঘরটাতে মামী আয়নাকে নিয়ে ঢুকতেই এহসান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। তার হাতে চায়ের কাপটা খালি। মামী সেদিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “কাপটা আমাকে দাও তোমরা একটু কথা বলো। জড়তা রেখো না কেউই নিঃসংকোচে কথা বলাটাই জরুরি। ”
মাঝারি সাইজের এল ই ডি সাদা চার্জার বাতি জ্বলছে খাটের পাশে টেবিলের ওপর। বাতিটা তাসিন এনেছিলো চট্টগ্রাম থেকে কয়েক মাস আগেই। সামনেই মাইশার মেট্রিক পরীক্ষা আর এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই অনেক সময় ধরে কারেন্ট থাকে না কখনো দিনে কখনো রাতে। সেকারণেই এই বাতি আনা আজ কাজে লাগছে আয়নার মুখ দেখার। গাঢ় দৃষ্টিতে এহসান তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। একটুও ভালো দেখাচ্ছে না আজ তাকে অথচ কালও যখন রাস্তায় দেখেছিলো তখনও কতোটা স্নিগ্ধতা ছিলো এই মুখে। তার দেখা আয়নার সাথে এই আয়নার অনেক পার্থক্য কিন্তু সেটা কি তা বুঝতে পারছে না এহসান। কয়েক মিনিট পর আয়না যখন নিজেই চোখ তুলে তাকালো এহসানের দিকে তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না পরিবর্তনটা। খুব স্বাভাবিকভাবেই এহসান বলল, “এত মেকাপ না করলেও হতো৷ তোমাকে সম্ভবত মেকাপহীন খুব স্নিগ্ধ লাগে।”
আয়নার অভিব্যক্তিতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি এহসানের কথা শুনে। এহসান আবারও বলল, “তোমার যা কিছু বলার, জানার বা জিজ্ঞেস করার আছে করো।”
সরাসরি এমন কাটকাট কথায় আয়না এবার একটু চমকালো। পাত্রী দেখতে এলে কি পাত্র এমনকিছুই বলে নাকি! কিন্তু তাসিনকে নিয়ে মনের যে বিধ্বস্ততা এ অবস্থায় অন্য ভাবনা বেশিক্ষণ মনের ভেতর টিকতে পারলো না। তবে স্থানুর মত দাঁড়িয়ে থাকারও কোন মানে হয় না৷ আর এমনিতেও এ ঘরে আসার কয়েক মিনিট পূর্বেই সে কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে৷ হোক তার সেসব সিদ্ধান্ত বেহায়াপনা অথবা অসভ্যতা তবুও সে বাস্তবায়ন করবেই সেসব৷ এহসান আরো কিছু বলার আগেই আয়না বলল, “আজ আংটি পরাতে চেয়েছিলো আমায় কিন্তু আমি চাই আকদ হোক।”
বৃষ্টি কমে এসেছে এখন কারেন্টও এলো । আয়না এ ঘরে এসেছে মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আর কয়েক মিনিটের মধ্যে কেউ তাকে নিতে আসবে! এই ভেবেই সে দ্রুত নিজের কথাগুলো শেষ করতে চাইলো। কিন্তু সে একটাবারও তাকিয়ে দেখলো না তার কথা শুনে সামনের মানুষটার মুখে খুশির বদলে ভিন্ন এক ছায়া নেমেছে৷ আয়না আবারও বলল, “আমার ফাইনাল পরীক্ষা আর মাস ছ’য়েকের ভেতর তারপর অনুষ্ঠানাদি হবে এটাই শর্ত।”
বোকা মেয়ে লোকমুখে শুনেছে এহসান মাহমুদ তার প্রেমে পাগল দিওয়ানা৷ সে নিজেও দেখেছে লেকটাকে তার পেছনে এদিক ওদিকে কাজের বাহানায় দাঁড়িয়ে থাকতে। ধরেই নিয়েছে যে লোক তার জন্য পাগল সে লোক নিশ্চয়ই তার সব শর্ত মেনে নেবে। অপরিপক্ক মস্তিষ্কের ভাবনায় ঘাটতি কিছু নয় অনেকটাই ছিল তাই অল্পক্ষণেই নিজের মত ভেবে নিলো সবটা। এহসান মাহমুদ বয়সের চেয়েও এক কাঠি বেশিই চতুরতা দেখাতে পেরে সাধারণ পুলিশ থেকে পদবী অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে। কর্মদক্ষতা তার নিপুণ বুদ্ধি দিয়েই প্রতি পদে প্রমাণ করে আসা লোকটাকে পুচকে মেয়েটা কি ভেবে নিজের সাজানো ড্রামা দেখাতে চাইলো! আয়না প্ল্যান করেছে এহসান তাতে সম্মতিও দিলো৷ সে মিনিট দুই সময়ও না নিয়ে বলল, “শর্ত মানলাম। আর কিছু বলতে চাও?”
আয়না নিজেই অবাক হলো এবার৷ লোকটা কোন প্রশ্ন ছাড়াই তার কথা মেনে নিলো! সে মাথা নাড়িয়ে না বলতেই এহসান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আয়নার মা আর মামী মিলে রাতের খাবারের আয়োজন করে ফেলেছেন মোটামুটি রকমের। এহসান শুনতে না চাইলেও সকলের জোরাজুরিতে রাতের খাবার খেয়েই উঠলো৷ এহসানের মা যাওয়ার সময় বলে গেলেন তারা কবে যাবে যেন দ্রুতই জানায়৷
মামীর সাথে কথা শেষ হওয়ার পর থেকেই সুপ্রভার সাথে চ্যাটিং চলছে তাসিনের। যাই করছে কাজের ফাঁকেই একের পর এক মেসেজ আর জবাব দেওয়া চলছে অনবরত৷ খাবার খেতে বসে সুপ্রভাকে লিখেছিলো, “রাতের খাবার খেয়েছো?”
“কপাল মন্দ খাবো না।” সুপ্রভার রিপ্লাই।
“কেন?”
“ব্যাঙ্গের স্যুপ আর তেলাপোকার চাটনি আছে খাবারে আজ তাই।”
মাত্রই ভাতের লোকমা মুখে পুরে বা হাতে টাইপ করছিলো তাসিন৷ সুপ্রভার থেকে আসা মেসেজ দেখে মুখের ভাত গলায় আটকে গেল। তার পাশে আজ ডাইনিংয়ে কেউ নেই৷ আজকাল ফোনে ব্যস্ত থেকে প্রায় ডাইনিংয়ে লেট আসে তাসিন৷ সে কারণেই আজও সে একা খাচ্ছিলো। কিন্তু এই মুহুর্তে গলায় আটকে থাকা ভাত ওয়াক ওয়াক করতে করতে টেবিল, প্লেট সব ভরে ফেলল সে। ছিহ, মেয়েটা এসব কি লিখল! তাসিনের রিপ্লাই না পেয়ে সুপ্রভা আবারও লিখলো, “কি হলো রিপ্লাই দিচ্ছেন না কেন! তেলাপোকার চাটনির কথা শুনে কি জিভে জল এসে গেছে? খাবেন নাকি একটু! বলেন তো দেই একটুখানি।” লিখেই পাশে হা হা ইমোজি।
চলবে