#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৩৬)
আয়নার শর্ত মোতাবেক আংটি বদল লাগবে না আকদ হবে। আবার অনুষ্ঠানাদি হবে মাস ছয় পরে। এহসানের কিছুতেই আপত্তি নেই সে শর্ত মঞ্জুর বলেছে তাই বলে আকদ সে রাতেই হবে তেমনটাতে সায় দেয়নি। আয়না ভেবেছিলো সে রাতেই না আবার কবুল বলতে হয় এ নিয়ে খুব ভয়ে ছিলো সারাটা সময়। তার বয়সের সাথে ভাবনার পরিসরও ছোট ছিলো তাই নিজের ভাবনাগুলোই মূল্যবান তার কাছে। কিন্তু এহসান দুনিয়া দেখেছে, মানুষ চেনার মত ক্ষমতা তার কিছুটা হলেও হয়ে গেছে। চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসের সাথে হরদম বোঝাপড়া করে সেই ছেলে কি এইটুকুনি মেয়ের চোখের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারবে না! আয়না যখন তার শর্ত প্রকাশ করেছিলো তখন এহসান গভীর মনযোগে তাকিয়ে ছিলো আয়নার মুখে, তার চোখে৷ সপ্তদশী কন্যার উথাল-পাতাল আচরণ আর তার চতুরতা একটু হলেও চোখে বেঁধেছে তার। তাই খাওয়া-দাওয়া সেরে কোন কথা না বলেই চলে গিয়েছিলো। কিন্তু আয়নাকে অবাক করে দিয়ে ভোর সকালেই তার ফুপিকে দিয়ে ফোন করিয়েছে আয়নার মায়ের কাছে। সিদ্ধান্ত হলো কালই তারা পাত্রের বাড়ি যাবে এবং সব ঠিকঠাক হলে আরো একবার পাত্রপক্ষ আসবে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। পরেরদিনই আয়না কলেজে গেল আর পথে নিয়মানুসার চোখে পড়লো এহসানকে। এই প্রথম আয়না ভালো করে দেখল তাকে। লম্বা, চওড়া পুরুষ। স্বাস্থ্যটা উচ্চতার কারণে হয়ত খুব একটা চোখে লাগে না লোকটার। চোখ জোড়ায় অন্যরকম এক কাঠিন্য তবে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। লোকটা দেখতে সুদর্শন ভালো লাগলো আয়নার কিন্তু সেই ভালো লাগা তো তাসিন ভাইয়ের মত নয়। তাসিন ভাইকে সে কৈশোরের প্রথম থেকে ভালোবাসে। কোন কিছুর বিনিময়েই সম্ভব নয় তাসিন ভাইকে ভোলা কিন্তু ওই সুপ্রভার জন্যই তো তাসিন ভাই তাকে অপছন্দ করে! সুপ্রভাকেই সে দেখে নেবে। গত রাতে মামীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলা সব কথা সে শুনেছিলো পেছনে দাঁড়িয়ে। ওই মেয়ের জন্যই তাসিন ভাই তাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে তাও কিনা সুপ্রভারই মামাতো ভাইয়ের সাথে! এই লোককে বিয়ে করেই সে ঝামেলা বাঁধাবে। এমন ঝামেলা তৈরি করবে যা কেবলমাত্র সুপ্রভার আত্মীয় হয়েই সম্ভব৷ এহসান আজও একটু দূরত্ব রেখেই দেখছে আয়নাকে। কলেজে ঢুকে আয়না প্রথমেই তার দুই বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে গতরাতের কথা বলল। সেই পুলিশটার সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। আর তাসিন ভাই সেই লোকের বোনের সাথেই প্রেম করে। দু বান্ধবীর একজন খুব করে বোঝালো যা হয় ভালোর জন্য। সেই পুলিশ অফিসারটা বয়সে একটু বেশিই বড় তবুও তাকে খুব পছন্দ করে বলেই মনে হয়। আর গ্রামেও সুনাম লোকটার। অন্য বান্ধবীটির মতামত আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতোই কাজ করলো। আয়নাকে বোঝালো অন্যায় হচ্ছে তার সাথে আর সব দোষ ওই মেয়ের। কোথাকার কোন মেয়ে এসে তাসিন ভাইকে কব্জা করছে এটা তো মানা যায় না। আয়না তার সিদ্ধান্তে অটল ওই লোকটাকেই বিয়ে করবে তারপরই সে সুপ্রভাকে আলাদা করবে তাসিন ভাইয়ের থেকে৷ কাউকেই শান্তিতে থাকতে দেবে না সে।
“কি করছো?”
“পরীক্ষা নেই পড়তেও ইচ্ছে করছিলো না তাই মেহরিন আর সৌহার্দ্যকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে চা আড্ডা দিচ্ছি।”
তাসিন মেসেজটা পড়ে কয়েক সেকেন্ড ভাবলো সৌহার্দ্যটা কে! কিছু সময় মস্তিষ্কে জোর দিতেই মনে পড়লো সুপ্রভার বন্ধু সে। ওই যে সেই প্রথম দেখার রাতে সুপ্রভা তার ভাইকে বলেছিলো সে সৌহার্দ্যকে বিয়ে করবে না। মনটা খচখচ করতে লাগলো মেসেজটা পেয়ে কিন্তু তা অপ্রকাশিত। সবাই কাজে মনযোগী শুধু তাসিনই কাজ আর চ্যাটিং একসাথে করছিলো। সুপ্রভার মেসেজটা আপাতত আর তাকে চ্যাটিং করতে দিলো না। ফোনটা রেখে কম্পিউটারে তাকালো। ওপাশে রিপ্লাই না পেয়ে সুপ্রভা একটু ঘাবড়ালো কি! তার মনে হচ্ছে সৌহার্দ্য নামটা দেখেই মেসেজ সিন করেও রিপ্লাই দেয়নি তাসিন। রোদ আর মেঘ আজ পাশাপাশি। রোদে চারপাশ ঝলমলে অথচ আকাশে কালো মেঘও ভেসে বেড়াচ্ছে। সবুজ ঘাসের ওপর জুতো রেখে তার ওপর বসে আছে সুপ্রভা তার পাশে সৌহার্দ্য। মেহরিন মাত্রই বসা থেকে ওঠে গেছে গেইটের দিকে। একটা গাজরার মালা হাতে বাচ্চা মেয়ে ছিল ওদিকটায় নিশ্চিত মেহরিন মালা কিনবে। সৌহার্দ্য অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছিলো কিছু একটা বলার জন্য। মেহরিন চলে যেতেই সে সরাসরি তাকালো সুপ্রভার দিকে।
“শেষ পর্যন্ত তোমারও প্রেমিক জুটে গেল!”
বক্রচোখে তাকালো সুপ্রভা সাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, “কি বলতে চাইছো?”
“যার সাথে আজকাল প্রায়ই হোস্টেলের সামনের রেস্টুরেন্টে আর নিউ মার্কেটে ঘুরতে যাও তার কথাই বলছি। প্রেম ছাড়া নিশ্চয়ই এমনি এমনিই ঘুরে বেড়াও না তোমরা!”
“তুমি কি করে জানলে আমি কারো সাথে রেস্টুরেন্টে যাই!”
“এ মাসেই প্রায় তিনদিন আমি মেহরিনের সাথে দেখা করতে গিয়ে তোমাদের দেখেছি সেখানে। আর ওই সেদিন তো ভদ্রলোক তোমার জন্য ক্যাম্পাসেই এলো।”
“এ্যাই এ্যাই তুমি মেহরিনের সাথে দেখা করতে যাও মানে! কি লুকাচ্ছো বলো তো!”
সৌহার্দ্য প্রাণোচ্ছল হাসলো মেহরিন তখন মাত্র ফিরে এসেছে তাদের কাছে। সে বসতে বসতে জানতে চাইলো কি হলো! সুপ্রভা কপট রাগের সুরে বলল, “হারামি তোরা আমাকেই কাঁটার মত তুলে ফেলে দিয়ে গোপনে কত কি করছিস তাই না!”
মেহরিন অবাক হয়ে বলল, “কি বলছিস এসব?”
“রাখ তোর ঢং!”
“আসলে আমরা নিজেরাও এখনো ঠিকঠাক বুঝতে পারছি না আমাদের তাই তোমাকে এখনও কিছু বলা হয়নি প্রভা। মেহরিন অবশ্য বলেছিলো তোমার সাথে শেয়ার করবে আমিই বারণ করেছি। আমরা আসলে ইন আ রিলেশনে নই তবে মেহরিনের অনুভূতি তো আমি জেনেছি। তোমাকে ভালো লাগে আমার এ নিয়েই তো কত ঝামেলা করলাম। কিন্তু তুমি আমাকে কখনো সেরকমভাবে দেখোনি আর আমিও এখন চাই আমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে আমাকে চাইবে। তাই…”
বলতে বলতে থেমে গেল সৌহার্দ্য। সুপ্রভা খেয়াল করলো সৌহার্দ্যের মুখের পরিবর্তন। তার মনে হলো মাস খানেক আগেও তার সাথে ঝামেলা বাঁধানো ছেলেটা এটা নয়। সে সত্যিই বোধহয় মেহরিনের অনুভূতির কদর করতে চাইছে কিন্তু তাই বলে কি জোর করে মনে ভালোবাসা তৈরি করতে পারবে! তাসিনের পরিবার যদি এখন জোর করে তাকে আয়নাকে বিয়ে করতে! সে কি করবে তারপর আয়নাকে ভালোও বাসবে একসময়! আহ্ এত অস্থির লাগছে কেন তার এ কথা ভাবতে? তাসিন তো কখনোই তাকে ভালোবাসি বলেনি৷ কখনোই বলেনি ভালো লাগার কথা তাহলে সে কেন এত আশা পুষে রাখছে মনে কিসের ভরসায়! ভালো লাগছে না কিছুই এখন আর। কেন এসব কথা ভাবছে সে এখন! মেজদা ফোন করে বলেছিলো আজ আয়নার বাড়ির মানুষ যাবে এহসান ভাইয়াদের বাড়িতে। তাদের পক্ষ থেকে পজেটিভ জবাব এলে শিগ্রই আকদ করবে বলেছে৷ যদি জবাব নেগেটিভ হয়! না না এসব ভাবনা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। তার এই ভাবনার মাঝে চাপা পড়ে গেল মেহরিন, সৌহার্দ্যকে নিয়ে আলাপ আর তাসিনকে নিয়ে সৌহার্দ্যের জানার আগ্রহ। সুপ্রভা বসা থেকে উঠে পড়লো। ব্যাগ কাঁধে সে হোস্টেলের দিকে রওনা দিলো। মেহরিনদের বলল শরীরটা খারাপ লাগছে। বাড়ি ফিরে সে তার ব্যাগ গোছাবে ভাবছিলো পরে মনে হলো তাসিনকে জিজ্ঞেস করুক বাড়ি যাবে কবে!
মাছুমা আজ সকাল থেকে ভালোমন্দ আয়োজনে লেগেই আছে৷ তার বড়ভাবী অনেক বছর পর এসেছে তার বাড়িতে। খুব সম্ভবত মাইশা দ্বিতীয় কি তৃতীয় জন্মদিন ছিলো তখন এসেছিলেন শেষবার এরপর আর আসেননি। ছোট ভাই আর ভাবীও তখন এসেছিলেন। ছোট ভাবী তখন নতুন বউ ছিলেন ননদের বাড়ি এসে কি যে নাক মুখ সিটকেছে পাকা দালান আর গাড়ি নেই বলে। তাসিন যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো চট্টগ্রামে তখন সে শখ করে ড্রাইভিং শিখলো৷ মামাদের সবার নিজস্ব গাড়ি আছে তাই ভেবেছিল সে চাইলেই ব্যবহার করতে পারবে৷ ড্রাইভিং শেখার নতুন অবস্থায় একবার ছোট মামার গাড়ি নিলো চালাবে বলে আর প্রথম দিনই ছোট্ট একটা দূর্ঘটনায় গাড়ির লাইট আর বনেটে ক্ষতি হলো। মামী খুব করে সেদিন তাসিনকে কথা শোনালো কারণ গাড়িটা তার বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া৷ তাসিনের বাবার ক্ষমতা নেই গাড়ি কেনার আবার গাড়ির শখ থাকবে কেন তার! এ ধরনের অনেক কথা বলেছিলেন আর সবটা তার ছোট মামার ছেলেই ফোনে ফুপিকে বলে দিলো৷ আর যাইহোক তাসিন ভাই তাদের খুব প্রিয় মানুষ তাই নিজের মায়ের আচরণ একটুও না লুকিয়ে সবটা বলল ভিডিও কলে আর তা সবটাই দরজায় দাঁড়িয়ে শুনলো সরল- সহজ মানুষ আফছার মীর। তারপরই লোকটা কেমন প্রচণ্ড রাগলো জীবনে প্রথমবার এবং সেই প্রথমবারই ছেলেকে কষে দু থাপ্পড় মারলেন৷ এরপর জমিজমা বিক্রি, ব্যবসায়ের লাভের অংশ সব মিলিয়ে ছেলেকে গাড়ি কিনে দিলেন। এখনো জমিজমা অনেক আছে টাকাকড়ি আছে তবে কুব বেশি নয়। আরে জমিয়ে রাখছেন বাকি দুই সন্তানকেও তাদের প্রাপ্য দেবেন৷ আর আজ মাছুমার চোখ ছলছল করছে সেসব পুরনো কথা ভেবেই। কাজের ফাঁকে আঁচলে চোখ মুছে নিচ্ছেন৷ বড় ভাবীও বুঝতে পারছেন স্মৃতিচারণ করেই তার ননদ চোখের জলে গাল ভাসাচ্ছে৷ কিন্তু এখানে আসার উদ্দেশ্য এখনি খোলাসা করা দরকার। কালকের মধ্যেই আবার তিনি ফিরে যাবেন চট্টগ্রাম।
“কান্না শেষ হলে বোলো ননদিনী আমি কিছু কথা বলব এবং তা খুব সিরিয়াস বিষয়।”
মাছুমা চোখ মুছে ভাবীর দিকে তাকালো। হাতে তার চালের গুঁড়ো সন্ধ্যায় চিতুই পিঠা বানাবে ভেবে রেখেছে। গরুর মাংস কষিয়ে চিতুই পিঠা আর ছিটা পিঠা নামক পিঠা তৈরি করবে। কিন্তু আপাতত ভাবীর মুখের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে তাকালো। তারও কাল সন্ধ্যায় ভাবীকে দেখতেই মনে হয়েছিলো কিছু একটা হয়েছে নইলে এভাবে হুট করে এখানে এলেন কেন? তিনি তো ভয়েই এদিকে আসতে চান না তারওপর এখন বাড়িতে নুর একা আছে। জামাই গত সপ্তাহেই বিদেশ গেল ব্যবসার সুবাদে। বোঝা গেল কথাটা সত্যই খুব সিরিয়াস তাই সে কাজ রেখে ভাবীর দিকে মনোযোগ দিলো, ” কি কথা ভাবী?”
“তুমি তাসিনকে জোরাজোরি কেন করছো বলোতো!”
মাছুমা প্রথমে বুঝলেন না তার ভাবীর কথার অর্থ। সে কি নিয়ে জোরাজোরি করলো! পরমুহূর্তেই মনে পড়লো এমন ভঙ্গিতে বলল, “ওহ এই কথা! মন্দ কি আছে এতে? নিজেদের মেয়ে নিজেরাই রাখবো। পরের চেয়ে আপন ভালো তাই না ভাবী! আর এমনিতেও বাড়ির বড় বউদের অনেক দ্বায়িত্ব থাকে আর তা পরের মেয়ে পালন নাও করতে পারে।”
মাছুমা কথা শেষ করতেই ভাবী বললেন, “আমি কি দ্বায়িত্বে খুব হেলা করেছি মাছুমা!”
মাছুমা লজ্জা পেল এ কথায়। বড় ভাবী তাদের প্রতি সকল দ্বায়িত্ব বড় নিষ্ঠার সাথেই পালন করে এসেছে সবসময়। কিন্তু সেও তো কথাটা বড় ভাবীর উদ্দেশ্যে বলেনি বরং বর্তমান সময়টা ভেবে বলেছে। ভাবী আবারও বললেন, “পর আপন পরের কথা আগে বলো তো মনের সাথে মনের মিল ছাড়া সংসারটা কেমন হয়!”
” প্রাণহীন।”
এক শব্দেই বলল মাছুমা। ভাবী বুঝতে পারলেন তাঁর কথাটা মাছুমার খুব করে লেগেছে কিন্তু এখন এই লাগাটাই কাজের।
“তুমি তাসিনের সাথে আয়নাকে জুড়ে দিতে চাইছো তার কারণ আয়না ঘরের মেয়ে। তোমার সংসারে ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার ভয়টা কম থাকবে। কিন্তু একটাবারও ভাবছো না যে ছেলেটা আয়নাকে বোনের বাইরে অন্যকোন ভাবে ভাবতেই পারছে না সে বিয়ে করে সংসারটা কি করে করবে! বিয়ে পবিত্র জিনিস হয়তো দৈহিক টানে এক হবে তারপর তাদের অস্তিত্ব দুনিয়ায় এলে না চাইতেও দুজন বছরের পর বছর একসাথে কাটিয়ে দিবে। একসময় হয়তো মায়ার একটা বাঁধন কিংবা অভ্যাসের টান থাকবে। অথচ ভালোবাসার ছিঁটেফোঁটাও থাকবে না তাদের মাঝে। স্বস্তির কখনো নিঃশ্বাস ফেলা হবে না তাদের।”
একটু আগের ছলছল চোখের মাছুমার এবার পুরো দুনিয়াই যেন ঘুরে গেল। এক মুহূর্তে তার নিঃশ্বাসটা বুকের ভেতর কোথাও আটকে রইলো। ভাবী কি তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার সারাটা জীবন দেখিয়ে দিলো। ভাবী যা যা বলল ঠিক তা তাই ঘটেছে তার জীবনে। আফছার তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সে টের পায় অথচ সে নিজেই লোকটাকে ভালোবাসতে পারেনি। দেহের টানে তাদের অস্তিত্ব দুনিয়ায় এসেছে কিন্তু মনের টানে কখনো তারা পাশাপাশি বসে দুটো কথা বলেনি। ঝুম বৃষ্টির রাতে কিংবা পূর্ণিমার রাতে দুজনের আলিঙ্গন গভীর হয়েছে অথচ সে কখনো আফছারকে মন থেকে অনুভব করতে পারেনি৷ আবার আফছার যখন অসুস্থ হয় তখন সে কাতর হয়ে কত সেবা শুশ্রূষা করে তাও কিনা মায়া হয় বলে। বাড়ি ছেড়ে দু রাত বাপের বাড়ি থাকলে সে ছটফট করে শুধু মাত্র নিজের দ্বায়িত্ব গুলোতে অবহেলা মনে করে। অথচ সেই ছটফটানির মূল কারণ তার দ্বায়িত্ব পালন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে। আজ ভাবীর কথাগুলো শুনে তার হঠাৎই খুব অপরাধবোধ হতে লাগলো। নিজের জীবন দিয়ে সবটা ভোগ করেও সে সন্তানের ওপর তার মতোই এক জীবন চাপাতে চাইছিলো! কান্নার বেগ বেড়ে গেল মাছুমার। ভাবী তার পাশেই পিঁড়ি পেতে বসেছিলো। তিনি একহাতে মাছুমাকে জড়িয়ে নিলেন।
“এখনো দেরি হয়নি মাছুমা। আয়নার বয়স কম আবেগে পাগলামি করছে একটা সময় পর এসব থাকবে না। আর যদিও থাকেও তা এখনকার মত থাকবে না। আয়নাকেও জোর করে কোথাও বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। পাত্র দেখছো দেখো আজ নয়ত কাল অন্য কাউকে তার ভালো লাগবেই। এমন কাউকে তাদের জন্য সিলেক্ট করো যার কাছে যাকে ভালো লাগে। আমাদের তাসিন একজনকে পছন্দ করে মেয়েটিও তাকে পছন্দ করে কিন্তু মুখ ফুটে বলেনি কেউ কাউকে। ”
মাছুমা একেকবার একেকটা বিষ্ময়কর কথা শুনে অবাক হতেও ভুলে যাচ্ছে। সে কিছু বলতে চাইছে না এখন অথচ পেছন থেকে আফছার মীর বলে উঠলেন, “মাইয়ার পরিচয় আর ঠিকানা জোগাড় কইরা দ্যান ভাবী।”
চলবে
(ভুলগুলো ক্ষমা করবেন)