পোড়া লাশ -৩য় পর্ব

0
383

পোড়া লাশ -৩য় পর্ব
গল্পের ক্যানভাস কল্পনার জগতে

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কফি হাতে করে বেলকনিতে দাঁড়াতেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় খেলাম।হাতের মগটা ছিটকে পড়ে গেল।থাপ্পড়টার আঘাত এতো জোরে লাগলো যে আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার মুখে ৫ টা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।এটা কি করে সম্ভব।দোতলার উপরে বাসা,এখানে আমি একা।কেউ থাপ্পড় দিবে কিভাবে?

দরজা, জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে উঠে দেখি ভীষণ জ্বর।সেই জ্বর ২দিন পর্যন্ত থাকলো।কিন্তু থাপ্পড় কে দিলো এটার উৎস খুঁজে পেলাম না।জিনিসটা নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না,কারণ আমার লক্ষ্য থাপ্পড়ের লোক নয়।

অমাবস্যার আর মাত্র ১ দিন বাকি আছে।আমাকে যে কোনো ভাবে ওই ছেলেটা এবং তার বন্ধুকে খুঁজে বের করে শুনতে হবে তারা কিছু করেছিলো কিনা!
আমি অফিস থেকে এসে ওই ছেলেটার খোঁজে গেলাম।কিন্তু যা আন্দাজ করতেও পারিনি সেটাই হয়েছে।ছেলেটা আগের রাত থেকেই নিখোঁজ।এই প্রথম কারো জন্য মায়া হচ্ছিলো।সাথে ব্যর্থতার একটা গ্লানি ছিল,এতোটা কাছে এসে এভাবে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে ভাবতে পারিনি।

বিষন্ন মনে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।আজ কেমন জানি অনুভব হচ্ছে।চারিদিকের সুনসান পরিবেশটাই এর জন্য দায়ী।তার উপর একলা একটা মেয়ে,ভয় একটু বেশি হওয়ারই কথা।একটা রাস্তার মোড় ঘুরতেই দেখি রাস্তার মাঝখানে একটা অবয়ব।হ্যাঁ, এতো সেই অবয়বটা।বাচ্চাটার অবয়ব,
বাচ্চাটা আমার দিকে মুখ করে তাকিয়ে একটা কুৎসিত হাসি দিলো। যেই হাসিতে ছিল কারো উপর বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ।মুহুর্তের মধ্যে আমার সামনে এসে সে আমার গলা টিপে ধরলো এবং বলতে লাগলো,

-কাউকে বাঁচাতে পারবি না।নিজের জীবনের মায়া নেই তোর।

আমাকে ছেড়ে দাও,ছেড়ে দাও বলতে বলতে সে আমাকে ছেড়ে দিলো।আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যেটা সেটা হলো,সামনে তাকিয়ে দেখি আমি আমার বাসার সামনে।
যেটুকু পথ ছিলো সেটুকু আসতে মিনিমাম ২০ মিনিট লেগে যাওয়ার কথা।কিন্তু সে পথ চোখের নিমিষেই কিভাবে আসলাম সেটা ভাবার মতো বুদ্ধি আমার মাথাতে সেই সময়ে আসছিলো না।

রুমে গিয়ে দেখি সেদিনের মতো পুরোটা রুম ছাই দিয়ে ভরা।সেই ছাইয়ের ভিতর থেকে একটা উদ্ভট মাংস পোড়া গন্ধ আসছে।
মা কে ফোন দিয়ে বললাম, আমার সাথে আবোলতাবোল কিছু হচ্ছে।তিনি আমাকে একটা হুজুরের সাথে কথা বলতে বললেন।কিন্তু ভাবলাম,হুজুরের সাথে কথা বললে তো আমার রহস্য উদঘাটন করা হলো না।

পরেরদিনের আশায় থাকলাম,এই রাতে যেভাবেই হোক আমি মন্দিরের কাছে যাবো।একাই যাবো আর ভয় পেলে মাহিমকে ডাকবো।
সেদিন অফিস থেকে ফিরে নীচের ভাবিদের সাথে আবার কথা বললাম।ভালো করে শুনতে চাইলাম এই মা-মেয়ের রহস্য কি।
একজন আমাকে বললো এক রাতে এই দুজনের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো ওই মন্দিরের ধারে।কিন্তু কারা মারছে কেউ জানেনা,মহিলাটির স্বামী বা আপন কেউ নাই।সে ওই ধারটাই একলা একলা মেয়ে নিয়ে থাকতো।কিন্তু কারা যে তাকে মারলো।

আমার মাথায় তখন কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক করতে থাকলো,
১.মহিলা ও মেয়েকে কেন মারা হলো?
২.ওই দশ বন্ধুকে কেন বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে?
৩.অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে আমাকে কে ম্যাসেজ দিচ্ছে?
৪.আর অমাবস্যার রাতে গরু ডাকার রহস্য কি?আর কেনই বা তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে?
৫.৯মাস আগে মারা যাওয়া একটা লোক কেন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেলকনি থেকে দেখবে?

মাথাটা আউলিয়ে গেলো, আমি জানি আমার ছোট মাথা এতো প্রশ্নের উত্তর একসাথে দিতে পারবে না। কিন্তু আমি এর পিছনে ছুটবোই।যতক্ষণ না আমি এই পোড়া লাশের হত্যাকারীকে খুঁজে পাচ্ছি।

রাতে গরু ডাকা শুরু হলো।পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকলাম।রাস্তা দিয়ে কিছু পথ এগোতেই মোবাইলে সে প্রাইভেট নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসলো।

-নন্দীনি, একা একা এতো রাতে ওদিকটাতে যেও না।নিজের ভালো চাইলে ফিরে যাও!
গল্পটা ভালো লাগলে পেইজটি ফলো করে রাখুন তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করলে আপনার কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে।
মোবাইল থেকে চোখ সরাতেই দেখি একদম মুখের সামনে সেই মা ও মেয়ে।এরচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য আমি আমার জীবনে কোনোদিন দেখিনি।দুজনের গা থেকে মাংস খসে পড়ছে এবং তাদের শরীর দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।

তারমানে এদের দুজনকে কি কেউ পুড়িয়ে হত্যা করেছে?না অন্যকিছু?

মাটিতে ধপাস করে পড়ে গেলাম।ওদিকটা বীভৎস গরুর ডাক,মনে হচ্ছে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে।আর এদিকে দুইটা পোড়া লাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা কথা বের হলো,

-আপনারা কারা?কেন আমার সাথে এমন করছেন?

এরপরে আমার মাথা আর প্রেশার সহ্য করতে পারে নি।আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি সকাল ১০ টা।আমি আমার রুমে,পাশে বাড়ির মালিক নীচের তলার ভাবি আর মাহিম বসে আছে।আমার জ্ঞান ফিরছে দেখে মাহিম এগিয়ে আসলো।সে অনেককিছু জানে তাই বাড়ির মালিক আর ভাবিকে নিষেধ করলো যেন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে।

সবাই চলে গেলো।শুধু মাহিম আমার পাশে।২মিনিট পর সে বলতে শুরু করলো,

-মাথা ঠিক আছে তোমার?একলা একটা মেয়ে এসব করার মানে কি?মেয়েদের ব্রেইন এমনিতে এসব চাপ সহ্য করতে পারে না।আর তুমি তো যা করে দেখিয়েছো তাতে স্যালুট জানাতে মন চাচ্ছে।কিন্তু তোমাকে এটা আর করতে দেয়া যাবে না।

-ছেলেটা কি মারা গিয়েছে?

সে এতো সময় ধরে আমাকে নিয়ে প্যাঁচাল পারছে।আর এই সময় আমি করতেছি এই প্রশ্ন।আমার প্রশ্ন করা দেখে কিছুটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো,

-হ্যাঁ, এই ছেলেটাকেও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।সকালেই পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে।

-আচ্ছা,পুলিশ এখানে পাহারা বসায় না কেন?জানেই তো প্রত্যেক অমাবস্যাতে একটা করে হত্যা হয় এখানে।

-সবারই জানের মায়া আছে সুমনা।সবাই তো আর তোমার মতো না।নিজের খেয়ে, পরের হত্যার রহস্য খুঁজে বেড়াবে।

-তবুও পুলিশের উচিত এখানে পাহারাদার নিযুক্ত করা।।

-করেছিলো।তবে সেই পুলিশ দুইদিনের বেশি থাকতে পারে নাই।সে মন্দিরের বারান্দাতে ঘুমিয়ে থাকতো।কিন্তু প্রথমদিন সকালে উঠে দেখে সে বটগাছের মগডালে।প্রথমদিন সে ভাবছে হয়তোবা সে ঘুমের ঘোরে উঠে আসছে।

কিন্তু দ্বিতীয় দিন সবচেয়ে বাজে ঘটনা ঘটেছিলো। সেইদিন ৩ জন পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো।কিন্তু মাঝরাতে সবাই দেখে একিটা বাচ্চা মেয়ে তাদেরকে ধরে শুন্যে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আর তাদের নিয়ে গিয়ে নদীর ধারে ফেলে রেখে আসে।
তারপর থেকে কেউ আর সাহস করে ওখানে যাই নাই।খুব পুরোনো মন্দির হওয়াতে পুলিশ সিলগালা করেও সাহস পায় না।

-আমি আরেকটিবার ওই মন্দিরে যাবো।তুমি কি আমাকে নিয়ে যাবে মাহিম?

-তা যাওয়া যাবে।তবে সুস্থ হও।

আমার জন্য কিছু খাবারে ব্যবস্থা করে সেদিনের মতো মাহিম চলে গেল।

সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে আমি মাহিমকে ফোন দিলাম মন্দিরে যাওয়ার জন্য।এতদিনে সবাই জেনে গেছে আমি এই ব্যাপারে কিছু করছি।তাই মন্দিরের পথে যেতে দেখেই সবাই আমাকে বারবার বারণ করলো।যাতে ওদিকটাই আমি না যাই।কিন্তু কে শোনে কার কথা!

আমি গেলাম মন্দিরে।ভালো করে চারিদিক ঘুরলাম।মন্দিরের সাথে যে বটগাছটা আছে সেটার কাছে যেতেই লক্ষ্য করলাম বটগাছের ভেতরে একটা গুহা মতো।অল্প একটু ভেতরে জানালার মতো করে গাছ কাটা।

ভয়ে গা ছমছম করার মতো পরিবেশ।সেখান থেকে বের হয়ে মন্দিরের পিছনটাতে গেলাম।পাশের দিকে একটা গরুর খামার।তারমানে কি কেউ গরু ডাকার ফায়দা নিয়ে এই মানুষ গুলোকে পুড়িয়ে মারছে?।
কিন্তু শুধু অমাবস্যার রাতেই গরু ডাকবে কেন?ওরকম করুন সুর করে?

গরুর খামারের মালিকের কাছে গিয়ে শুনলাম, তার গরু নাকি কোনো সময় ডাকে না।সবাই এসে নাকি ওনাকে এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞাসা করে।কিন্তু সে ওই খামারেই থাকে।মন্দিরের দিকটাই গরু ডাকে কেন জিজ্ঞাসা করতেই সে ঘাবড়ে গেলো।

মা ওখানে গরু ডাকে ঠিকই কিন্তু গরু দেখা যায় না।আমি একদিন রাতে গিয়েছিলাম।তবে কোনো গরু দেখতে পাই নি।পরে ভয়ে চলে এসেছিলাম।পরেরদিন সকে ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা পোড়া লাশ নগ্ন অবস্থাতে পরে আছে।

খামার থেকে আবারো মন্দিরের পুরোহিতের কাছে আসলাম।সে কিছু জানে কিনা জোর করে জিজ্ঞাসা করলাম।তবুও সে বললো,সে কিছু জানে না।

-“তোমার সব প্রশ্নের জবাব আগামী অমাবস্যাতে পাবা।”

প্রাইভেট নাম্বার থেকে এই ম্যাসেজটা আসলো।আমি সাথে সাথে মাহিমকে দেখালাম।মাহিম দেখে অবাক।

-মাহিম,আমি এখানে সবকিছু জানতে এসেছি এই নাম্বারের লোকটা জানলো কিভাবে?
তাহলে তিনিই কি সব মানুষ গুলোকে পুড়িয়ে মারছেন?
কিন্তু লোকটা হত্যা করলে এই মহিলা ও মেয়ে কেন আমার সামনে আসছে?

মাহিম প্লিজ হেল্প মি!

চলবে………………!!!

এরকম ইন্টারেস্টিং ভোতিক গল্প প্রতিনিয়ত আমার এই গ্রুপে পোস্ট করা হয় আপনারা পড়তে চাইলে এই গ্রুপে যেয়ে পড়তে পারেন👇

https://facebook.com/groups/441730410822557/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here