রজনী #লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব- ২

0
428

#রজনী
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২

সনিয়া বলা শুরু করল। সনিয়ার কথা যত শুনছিল ততই আয়েশার বুক কেঁপে উঠছিল।

তাসকিনদের বাসায় তিনটে রুম, দুটো বাথরুম। একটা রুমের সাথে এটাচ বাথরুম থাকলেও অন্য রুমগুলোর সাথে কোনো এটাচ বাথরুম নেই। অন্য রুমগুলোর জন্য একটা কমন বাথরুম দেওয়া। কমন বাথরুমটার অবস্থান তাসকিনের রুমের সাথেই । এটাচ বাথরুম যে রুমে সেখানে সনিয়ার বাবা মা থাকে। আর কমন বাথরুমটা মূলত বাকি দুই রুমের জন্য। সুতরাং সনিয়ার রুম থেকে বাথরুমে যেতে হলে তাসকিনের রুম পার হয়ে যেতে হয়।

রাত তখন আড়াইটা। সনিয়া বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠল। তাসকিনের রুমের দরজাটা তখন খোলা ছিল। তাসকিনের রুম পার হতেই তার মনে হলো কোনো অশরীয় আওয়াজ আসছে রুম থেকে। তাই সে কিছুটা ভয়ে ভয়ে গলা ছাড়িয়ে বলতে লাগল

– ভাইয়া…ভাইয়া….

কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করা উচিত না তাই রুমে আর প্রবেশ করল না। ব্যপারটা তেমন পাত্তাও দিল না। বিয়ে বাড়ি সুতরাং হয়তো কেউ মজা করে এমন আওয়াজ করছে। ছেলেরা সব ছাদে আছে। রাতে তারা সেখানেই থাকবে। মেয়েরা সব সনিয়ার রুমে। তবে সারাদিন এত কাজ করেছে এখন ক্লান্ত হয়ে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে সব। বাইরে এতক্ষণ গান বাজলেও সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িটাতে বেশ ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সে নিজেকে সামলে বাথরুমে প্রবেশ করল। সেখানে ঢুকার পর তার বারবার মনে হচ্ছিল কেউ একজন তার কানে এসে কান্নার আওয়াজ তুলছে। সে ভয় পেতে লাগল। বুকের ভেতরটা তার কেঁপে যেতে লাগল। ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়েও কাউকে পাচ্ছিল না সে। তাড়াহুড়ো করে বাথরুম সেড়ে বাইরে বের হলো। বাইরে বের হতেই তার মনে হলো তাসকিনের রুম থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। সনিয়া কিছুটা ভীত হয়ে রুমে উঁকি দিল। লক্ষ্য করল তাসকিন মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। সনিয়ার বোধগম্য হচ্ছিল না তাসকিন কেন এমন করছে। কিছুটা অনিশ্চয়তা নিয়ে রুমের ভেতর এগুতে নিলেই ধমকা একটা বাতাসে দরজাটা আচমকা লেগে গেল। ফলস্বরুপ নাকে দরজা লেগে খুব ব্যথা পেল সনিয়া। নাকটা চেপে ধরে ড্রইং রুম পার হয়ে নিজের রুমে এগুতে নিলে অদ্ভুত আরেকটা আওয়াজ আসলো। তার ভয়ে গা ছমছম করতে লাগল। বেশ সাহস করে দরজায় নক দিয়ে বলল

– ভাইয়া… কিছু কী হয়েছে? কিসের শব্দ?

ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। বিরক্ত নিয়ে পেছন তাকাতেই সনিয়ার ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল। কারণ তাসকিন তার পেছনে তাহলে এতক্ষণ ঘরে কে ছিল? কেই বা উপুর হয়ে শুয়ে ছিল? ভয়ে ঢুক গিলতে লাগল। তাসকিন সনিয়ার ভয়ার্ত চেহারা দেখে হালকা হেসে বলল

– দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কী করছিস?

সনিয়া কিছুটা আমতা আমতা করে বলল

– নাহ মানে এমনিতে। তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ?

– কেন ছাদে। কিছু কী হয়েছে?

– নাহ! তেমন কিছু না। আচ্ছা আমি গেলাম।

সনিয়া ভয়ে ভয়ে রুমের দিকে এগুতে লাগল।।এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেল। সে পেছন তাকাল। লক্ষ্য করল তাসকিন দরজা খুলে বের হয়েছে। সনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

– কী রে ডাকছিলি কেন? গরমে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মেঝেতেই।

সনিয়া অবাক হলো। তাসকিনের সামনে গিয়ে বলল

– তুমি রুমে ছিলে?

তাসকিন কপাল কুঁচকে বলল

– তাহলে থাকব কোথায়?

সনিয়ার তাসকিনকে ভালো করে লক্ষ্য করল। হাতের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করল নখের অগ্রভাগ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে। বেশ ভয়ে ভয়ে বলে উঠল

– ভাইয়া তোমার নখে কী হয়েছে?

তাসকিন নিজের নখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল

– একটু কেটে গেছিল। যা রুমে যা।

সনিয়া রুমের দিকে এগুলো। তাসকিন দরজাটা লাগিয়ে দিল। সনিয়া আবার পেছন এসে দরজার সামনে কৌতুহল নিয়ে দাঁড়াল। ভেতর থেকে কতগুলো অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। কখনও কুকুর, বেড়ালের কান্না,কখনও বাচ্চার কান্না,কখনও ব্যাঙের শব্দ,কখনও বা বাস ট্রাকের হর্ণের শব্দ। তার অবচেতন মনে প্রশ্ন জাগছে শব্দগুলো কিসের? প্রায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে সে। এত শব্দ হচ্ছে তবে আশেপাশের কেউ ঘুম থেকে কেন উঠছে না । সনিয়ার ভয়ে গা হাত পা কাঁপতে শুরু করল। প্রায় আধা ঘন্টা যাবত এমন শব্দ আসছে। আচমকা দরজাটা খুলে গেল। সে লক্ষ্য করল তাসকিন শূন্য ভাসছে। তার গলায় দঁড়ি দিয়ে পেঁচানো। তার গা, হাত,পা কাঁপতে শুরু করল। চিৎকার করলেও যেন গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিল না। তাসকিনের শরীর আপনাআপনি ফ্যানের সাথে ঝুলে গেল। একটা বাচ্চা শুধু হামাগুড়ি দিয়ে বের হতে দেখল সে। তার বুক ভার হয়ে গেল। ভয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। এমন সময় তার চাচাত বোন তোহা তাকে ধাক্কা দিয়ে বলল

– কী রে সনিয়া কী হয়েছে? এমন করছিস কেন? খারাপ লাগছে নাকি।

সনিয়া ঘুম থেকে আচমকা উঠল। তাহলে কী সে স্বপ্ন দেখছিল! সে হতচকিয়ে উঠে বসল। তোহা সনিয়ার হাত ধরে বলল

– কী রে কাঁপছিস কেন? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস নাকি?

সনিয়া তোহার হাত ধরে ঢুক গিলে বলল

– অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। মনে হয়নি এটা স্বপ্ন। শরীর খারাপ লাগছে অনেক। তাসকিন ভাইয়ার রুমে চল একটু।

– এত রাতে যাওয়া কী ঠিক হবে? উনি তো ভুল বুঝতে পারেন। রাগ ও করতে পারেন। বিরক্তও হতে পারেন।

– প্লিজ চল। ভাইয়াকে না দেখা পর্যন্ত আমার শান্তি লাগবে না।

তোহা অগত্যা সনিয়ার সাথে যেতে বাধ্য হলো। তাসকিনের রুমটা খোলা ছিল। রুমটায় পর্দাটা সরানো। রুমটার ভেতরে তাকিয়ে দেখল তাসকিনের লাশটা ঝুলছে। তার মানে সনিয়ার এটা স্বপ্ন ছিল না, সত্যি ছিল। সনিয়া আর তোহা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল। নিজের অজান্তেই কাঁদতে লাগল। তখন রাত সাড়ে তিনটে বাজে। তাদের চিৎকার শুনে বাকিরা ঘর থেকে বের হয়ে আসে। সনিয়া কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে। এমন সময় তার চোখে পরিলক্ষিত হলো একটা বাচ্চা হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। সে আরও জোরে কেঁদে উঠল। সে সাথে তোহার দিকে নজর দিয়ে দেখল তোহার মুখ অবয়বে কেমন জানি জালের মতো আবরণ। চোখগুলো কেমন লাল। সে সময়টায় বাকিরা এসে তাসকিনের এ অবস্থা দেখে চমকে উঠে। তাসকিনের বাবা, মা দুজনেই জ্ঞান হারায়। এখন পর্যন্ত তাদের জ্ঞান ফিরে নি।

সনিয়ার ঘটনাটা শুনার পর থেকে আয়েশার মাথায় এটাই জাগছে এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু না। এ মৃত্যুর পেছনে কোনো রহস্য অবশ্যই আছে। সনিয়া সবটা বলে ততক্ষণে চুপ হয়ে চোখের জল ফেলছিল। আর আয়েশা পাথরের মতো বসে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল। সবকিছুর উত্তর মেলাতে গেলেও যেন পারছিল না। নিজের অজান্তেই বুক কেঁপে উঠছিল বারবার। সহুরা বেগম আয়েশার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগল

– চল মা আর কত বসে থাকবি।

আয়েশা মায়ের কথায় তেমন কর্ণপাত করল না। নিজের ভেতরে থাকা প্রশ্নের ঘূর্ণিপাকে তলিয়ে যাচ্ছিল। পাশ ফিরে তাকিয়ে তোহাকে লক্ষ্য করল। তোহার মুখ অবয়ব দেখে আয়েশার বুকটা ছেদ করে উঠল। একে কেন জানি না স্বাভাবিক লাগছে না। তোহার হাতের দিকে তাকাল সে। মুঠো করে কিছু একটা হাতে রেখেছে। সন্দেহ আয়েশার আরও বেড়ে গেল। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে। কোনো শব্দ নেই। আস্তে আস্তে তোহার কাছে যেতে ঘটে গেল একটা আশ্চর্য ঘটনা।

কপি করা নিষেধ

( বড় বড় পর্ব দেওয়া সম্ভব না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here