#রজনী
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৫
নাকি আরও গভীর রহস্যে তলিয়ে গেল।
তাসকিন সেদিন আয়েশার সাথে কথা বলে ফোনটা রাখল। চুপ হয়ে আনমনে শুয়ে আয়েশার কথা ভেবে চোখটা বন্ধ করল। এমন সময় তার মনে হলো কেউ একজন তাকে ডাকছে। খুব মৃদু মিষ্টি সুরে। কিছুটা অসাবধান হয়েই চোখটা খুলল। দেয়ালে এক নারীর প্রতিবিম্ব ভেসে উঠল। সে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকাল। প্রতিবিম্বের উৎস খুঁজতে লাগল। এমন সময় তাসকিনকে কেউ একজন ডাক দিল। লক্ষ্য করল ছাদ থেকে তুষার ডাকছে। সে সরাসরি উঠে ছাদে গেল। সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করল বন্ধুরা সবাই বেয়ার এনেছে। তাকে এগিয়ে দিলেও সে না নিয়ে হালকা হেসে বলল
– কাল বিয়ে আজ এসব খাওয়া যাবে না। আয়েশা রাগ করবে।
বন্ধু মহলের সবাই হেসে জবাব দিল
– এখনই তো বউ ভক্ত হয়ে গেলি।
তাসকিন মৃদু হেসে বলল
– সে নাহয় একটু হলাম। তোরা থাক বড্ড ঘুম পাচ্ছে আমার।
বলেই চলে আসলো রুমে। আসার সাথে সাথে নিজের মতো একজনকে উপুর হয়ে শুয়ে থাকতে খেয়াল করল। কিছু ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করল
– তুমি কে?
লোকটা উপুর হওয়া থেকে তাসকিনের দিকে তাকাল। তাসকিনের ভয়টা আরও বেড়ে গেল। এতক্ষণ মনে হয়েছিল লোকটা নিজের গড়নের। এখন তো মনে হচ্ছে লোকটা তার মতো চেহারার অধিকারি। সে ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলল
– কে তুমি?
লোকটা খিল খিল করে হেসে কী একটা যেন তাসকিনের দিকে ছুড়ে মারল। তাসকিনের নাকে সাথে সাথে কোনো এক সুঘ্রাণ ভেসে আসলো । তারপর থেকে তার মনে হতে লাগল সে শূন্যে ভাসছে। অদৃশ্য কেউ। এরপর এত সব ঘটনা তার চোখের সামনে ঘটলেও সে বুঝতে পারছে না এসব কী৷ সেদিন নিজের চোখের সামনেই দেখেছিল তার মতো দেখতে লোকটা গলায় দঁড়ি দিয়ে আছে। একটা বাচ্চা এলোপাতারি দৌড় দিচ্ছে ঘরে। বাচ্চাটা কখনও হাসছে কখনও কাঁদছে৷ বাচ্চাটার লোমহর্ষক চেহারা যেন তাকে আরও ভীতু করে দিল। এর মধ্যে তোহার আগমণ ঘটেছে কয়েকবার। তোহা এসে কী যেন বিড়বিড় করে রুম থেকে বের হয়ে যেত। ঐ লোকটা গলায় দঁড়ি দেওয়ার পরও সে ঐ লোকটার হাতে পায়ে কী যেন লিখে পানির মতো ছিটিয়ে গিয়েছিল। তোহার এসব আচরণের কারণ বুঝতে পারছিল না তাসকিন। সে ঘটনার পর থেকেই তাসকিন অদৃশ্য। একবার মনে হচ্ছে সে সত্যি সত্যি বেঁচে নেই আবার মনে হচ্ছে সে বেঁচে আছে।
তাসকিনের ঘটনাটা তূর্ণা আর আয়েশার জানার পর চুপ হয়ে গেল। এটার সাথে তোহা জড়িত তারা দুজনেই বুঝতে পারছে। কিন্তু তোহার লাভটা কী? তূর্ণা আচমকা বলে উঠল
– এমনও তো হতে পারে তাসকিন ভাইকে তোহা পছন্দ করে তাই কালো জাদু করেছে। যাতে করে বিয়েটা আটকে যায় এবং তাসকিন ভাইও তোহার বশে আসে।
তূর্ণার কথা শোনে আয়েশা ভাবার্ত গলায় বলল
– এমন কিছু হওয়ার সম্ভবনা নেই। তোহা বিবাহিত আর তোহার স্বামীর সাথে তোহার বিয়ে হয় ৫ বছরের ভালোবাসার পর। তাদের স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কে যথেষ্ট মিল মহব্বত রয়েছে। আর তাসকিনকে তোহা নিজের ভাইয়ের মতো দেখে। এমনও হতে পারে তোহার মধ্যে অন্য কেউ আছে যে তোহাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। সে বাচ্চাটার সাথে কোনো না কোনো রহস্য তো রয়েছেই।
আয়েশার কথা শোনে তূর্ণা চুপ হয়ে গেল। কী বলবে বুঝতে পারছে না। এ মুহূর্তে করণীয় কি সেটাও তার বোধগম্য হচ্ছে না। কিছুটা অনিয়শ্চয়তার সহিত বলল
– তোহাকে লক্ষ্য করলে হয়তো রহস্যের উদঘাটন করতে পারব। তাসকিন ভাইয়া তো অদৃশ্য আপনি নাহয় ওকে লক্ষ্য করুন।
তাসকিন সব আশায় জল ঢেলে জবাব দিল
– আমি তোহার আশে পাশের ঘেষতে পারব না। এ কবরস্থানের বাইরেও যেতে পারব না। শুধুমাত্র রাতে আয়েশার সামনে দৃশ্যমান হতে পারব। সারাদিন আমি চাইলেও কিছু করতে পারব না। কারণ আমি ঘুমন্ত হয়ে পড়ব হয়তো। সারাদিন কীভাবে কাটবে বলতে পারব না।
আয়েশা চুপ হয়ে আছে। এখানে বেশিক্ষণ থাকাও তার জন্য শুভ নয়। কারণ এ রহস্য উদঘাটন তাকে একাই করতে হবে। এ রজনীর/রাতের রহস্য বের করতে তাকে অনেক ভাবতে হবে। তোহার উপর নজর দিতে হবে। এখন কী তাসকিনদের বাসায় যাবে নাকি নিজের বাসায় সেটাই ভাবছে সে। আয়েশার নীরবতা টের পেয়ে তূর্ণা বলে উঠল
– তোর কী হয়েছে আয়েশা। এত চুপচাপ কেন? কিছু বল।
আয়েশা বেশ নির্জীব গলায় উত্তর দিল
– এখন এখানে আর নয়। চল বাসায় যাই। বাচ্চাটা বারবার আক্রমণ করবে এটা আমি জানি। ঐ বাচ্চাকে ঘিরেই রয়েছে এ রাতের রহস্য।
তারপর তাসকিনের দিকে তাকিয়ে বলল
– তুমি এখানে থাকো। কালকে আবার দেখা হবে। কিছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
বলেই আয়েশা তূর্ণাকে নিয়ে বাসায় আসলো। বাসায় আসার সময় তেমন কোনো ভৌতিক কাহিনি ঘটল না। ঘরে বসে সে হজারটা কথা ভাবতে লাগল। তোহার সাথে বাচ্চাটার সম্পর্ক কী! তোহাকে কী কেউ বশে নিয়ে এমন করছে নাকি তোহা নিজেই কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন করছে। তোহা তাসকিনের ক্ষতি করতে পারবে সেটা আয়েশা ভাবতে পারছে না৷ যতই চিন্তা করছে ততই সে যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। চিন্তার এক পর্যায়ে সে বেশ কড়া একটা ঘুম দিল। সকালে তার ঘুম ভাঙলো তূর্ণার ছটফটানি ডাকে। সে তাড়াহুড়ো করে শুয়া থেকে উঠে বসে তূর্ণাকে জিজ্ঞেস করল
– কী রে কী হয়েছে তোর? এভাবে ডাকছিস কেন? আর এত হাঁপাচ্ছিস কেন?
তূর্ণা বেশ জোরে জোরে দুইটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– তোহা আত্মহত্যা করেছে।
তূর্ণার মুখে এমন কথা শুনে আয়েশা চুপসে গেল। তোহা আত্মহত্যা কেন করবে বুঝতে পারছিল না। বেশ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল
– আর কিছু শুনেছিস?
– আমি লাশও দেখে এসেছি। তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই তোকে ডাক দেইনি। তাসকিন ভাইয়ের ঘরেই আত্মহত্যা করেছে। কেন করেছে কোনো কারণ জানা নেই।
– লাশ কোথায়?
– পুলিশ নিয়ে গেছে।
আয়েশার দম যেন বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। সব আশার আলো একেক একেক করে নিভে যেতে লাগল। তোহাকে নিয়ে যে ভাবনা ছিল তা নিমিষেই যেন মলিন হয়ে গেল। সন্দেহের দৃষ্টি তোহার দিকে থাকলেও সে এখন সন্দেহের তালিকায় মৃত। এ ঘটনার উদঘাটন করতে অবশ্যই তাকে তাসকিনদের বাসায় থাকতে হবে। তবে তার বাবা মা থাকতে দিবে বলে মনে হয় না। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। কোনোরকম নিজেকে সামলে মোবাইলটা নিয়ে সনিয়াকে কল দিয়ে বলল
– আমি রাত ১২ টার পর আসলে আমাকে কী তোমার বাসায় ঢুকাতে পারবে? অনেক প্রয়োজন।
তারপর ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল।
সনিয়া বেশ আশ্চর্য হলো। তার কাছে যেন সব ঘটনা রূপকথার ভৌতিক গল্প মনে হচ্ছে। তবে এটাই বাস্তবতা। সে হালকা গলায় জবাব দিল
– অবশ্যই পারব। আসার আগে আমাকে কল দিও। আজকে কী আসবে?
– হ্যাঁ আসব।
বলেই কলটা কাটল। সারাদিন বেশ অস্থির অস্থির করতে লাগল। দিন যেন অস্থিরতায় তার কাটছে না। অনেক অস্থিরতা নিয়েই দিনটা পার করল। রাত ১১ টা ৪৫ এ তূর্ণাকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বের হলো। তারপর তাসকিনদের বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে লাগল। গা ছমছম করছিল দুজনের। বারবার মনে হচ্ছিল কেউ একজন পেছনে। এমন সময় আয়েশার মুখ কেউ চেপে ধরল। আয়েশা ওপাশ ফিরে তাকাতেই বরফের মতো হয়ে গেল ভয়ে আর তূর্ণা অসাড় হয়ে যেতে লাগল।
(কপি করা নিষেধ)