পোড়া লাশ-২য় পর্ব
গল্পের ক্যানভাস কল্পনার জগতে
অমাবস্যার রাতে যে মহিলাকে বাচ্চাসহ দেখা যায় সেই মহিলা আরো একবছর আগে মারা গিয়েছে।
শরীর প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায় মাহিমের কথা শুনে।মাথার ভেতর চক্কর দিতে থাকে।কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে, এক বছর আগে মারা যাওয়া একটা মহিলা কিভাবে তার বাচ্চা নিয়ে সবার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে?
মাহিমকে আমার সব ব্যাপারে সাহায্যের কথা বললাম।সে খুব সহজভাবেই আমাকে সাহায্য করতে চাইলো।কিন্তু বারবার বারণ ও করছিলো,কারণ একটা মেয়ে হয়ে নাকি আমি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছি।
কারোর কথা আমার কেয়ার করার টাইম নেই।আমি আমার মতো করে পোড়া লাশের সন্ধান বের করবো।
সেদিন সন্ধ্যায় আবারো মেসেজ আসলো,
-খোলা চুলে লুকিয়ে থেকে, আমাকে দেখে কি লাভ ম্যাডাম?আপনি বরং দাঁড়িয়েই থাকবেন, একদিন আমিই আপনার সাথে দেখা করবো।
লোকটার সাহস মন্দ না।অপরিচিত একটা মেয়েকে এভাবে ম্যাসেজ করে বিরক্ত করার মানে কি?তিনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন?না আমাকে ভালো তার?
এই কদিনে মাথার যে অবস্থা হয়েছে,তাতে কিছুদিনের মধ্যে পাগল হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।রাতের রান্না শেষ করে ঘরে ঢুকতেই দেখি জানালার পর্দার ওপাশে মানুষের আকৃতির কেউ একজন দাঁড়িয়ে।কে কে বলে চিৎকার করলাম,কেউ নেই।
এগিয়ে যাওয়ার মতো সাহস পাচ্ছিলাম না।এক পা এগোতেই কারেন্ট চলে গেলো।আর জানালার ওদিকটা থেকে কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বলছে,
-মৃত্যুর সাধ পেতে চাস সুমনা?পোড়া লাশের পিছনে ছুটতেছিস কেন?
বলার ভঙ্গিমা এতটাই ভয়ানক ছিল যে আমি সেন্সলেস হয়ে যাই।জ্ঞান ফিরতে দেখি আমি মেঝেতে পরে আছি।পুরো রুমে ছাই আর ছাই।কিন্তু এই ছাই আসবে কোথা থেকে?আমি রুমে গ্যাসে রান্না করি।
মাহিমকে ফোন দিলাম।বেচারা এতো রাতে আমার ফোন পেয়ে ভড়কে যায়।আমাকে আয়তুল কুরসি পড়তে বলে।সেদিনের মতো রাতটা পার করি।
সকালে বাড়িওয়ালা চাচাকে সব বলি।তিনি আমাকে এসব বিষয়ে ঘাটাঘাটি করতে নিষেধ করেন।কি দরকার এসব ভূতপ্রেতের পিছনে ছুটে।
চাচার কাছে ছাইয়ের কথা বলতে তিনি এমনভাবে ভড়কে গেলেন, যেন তার সামনে কাউকে খুন হতে দেখলেন!
-ছাইগুলো কি এখনো আছে তোমার রুমে?
-না চাচা,ফেলে দিয়েছি।
-মা, তোমার কপালে কষ্ট আছে দেখতেছি।এর আগে আমাদের গ্রামের দুইটা ছেলে এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিল।দুইটাই ৮ মাস আগে থেকে নিঁখোজ।তাদের সাথে কি হয়েছে আল্লাহ জানে।ছেলে দুটোর ডেডবডি ও পাওয়া যায় নাই।তুমি সাবধানে থেকো।
ভয়!ভয়!আর ভয়,চারিদিকের সবার চোখের ভয় আমাকে আতঙ্কিত করে তুলছিলো।কেন সবাই এতো ভয় পায়?
আদৌও কি এসব ভুতের কাজকারবার। না অন্যকিছু?
এসব কিছু জানার আগে আমাকে মহিলা ও তার বাচ্চার সমস্ত কিছু জানতে হবে!কিন্তু কিভাবে?
আবারো ভরসা মাহিম।ওকে নিয়েই থানার ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করলাম।পুলিশ ম্যাডাম তেমন কিছুই বলতে পারলো না।শুধু বললো,
নদীর সাইডে লাশ পাওয়া গিয়েছিল।তেমন কিছু জানিনা।আমি তখন এখানে ছিলাম না।তবে অফিসের পুরাতন ফাইল ঘাটলে কিছু জানা যেতে পারে।
-আপনি প্লিজ সেইটা করেন। আমার এসব ঘাটতে খুব ভালো লাগছে।
-ভালো লাগছে ভালো কথা।কিন্তু খুব সাবধান।
-ঠিক আছে।
যার পিছনে ছুটছি সেই মন্দিরটাতেই এখনো যাওয়া হয়নি।মাহিমকে সাথে নিয়ে মন্দিরে চলে গেলাম।একটা বয়স্ক পুরোহিতকে সব বললাম।পুরোহিতের চোখে-মুখে আতঙ্ক।
-তুই মরবি!নির্ঘাত মরবি।এরা শয়তান,শয়তানে এমন করে।তুই চলে যা!
-আজব লোক।কিছু না বলে চলে গেল।আরো ভয় দেখিয়ে গেল।
মাহিম আমার কথা শুনে বললো,
-সবাই এতো করে বারণ করছে। তবুও তুমি এটার পিছনে ছুটবেই?
-তোমার ভালো না লাগলে তুমি যাও!আমি ছোটবেলা থেকেই জেদী।এই রহস্য উদঘাটন করতে না পারলে শান্তি মিলবে না।
-না, আমি তোমার সাথে আছি।
আমি আর মাহিম হাঁটা শুরু করতেই বটগাছের একটা বিশাল ডাল আমাদের সামনে ভেঙে পড়ে।অল্প একটুর জন্য আমরা দুজনেই প্রাণে রক্ষা পাই।এটা দেখে দৌঁড়ে পুরোহিত মশাই চলে আসে।
-তুই চলে যা!তোকে সাবধান করছি,এসবে নাক গলাস না।
ওখানে আর সময় নষ্ট না করে চলে আসলাম।অমাবস্যা আসার অপেক্ষায় থাকলাম।আরো ২৫ দিন হাতে আছে।আপাতত এসব কিছু মাথা থেকে ব্যাহত রাখি।গল্পটা ভালো লাগলে পেইজটি ফলো করে রাখুন তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করলে আপনার কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে।
রাতে ঘুমিয়ে আছি।হঠাৎই অনুভব করি,আমার গায়ের উপর থেকে পাতলা চাদরটা কে যেন বারবার টান দিচ্ছে।আমি দুই তিনবার করে উঠিয়ে নেয়া সত্ত্বেও সেম কাজ হচ্ছে।মাথার কাছে থাকা বাল্বের সুইচে চাপ দেওয়ার পরেও আলো জ্বলছে না।
চাদরটা টান দিচ্ছে একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চা মেয়ে।আমি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে এগোতে থাকলো।পোড়া লাশের গন্ধ এবার আমি হাড়ে হাড়ে পাচ্ছি।বাচ্চাটার মুখ মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর হয়ে গেলো।এটা দেখে আমি প্রথম ভয় পেলাম।
তুমি কে? তুমি কে? বলে চিৎকার করলাম।ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।
-আমাদের মাঝে এসো না।(ফিসফিসিয়ে বলার ভঙ্গিমাটা সবাই কল্পনা করুন)
অদ্ভুত, ভয়ংকর একটা হাসি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটা গায়েব হয়ে গেল।
সে রাতে ঘুম হলো না।কোনো সুস্থ মানুষ এটা দেখার পর ঘুমোতে পারবেও কিনা সেটা বলা মুশকিল।
মাহিমকে এবারো সব বললাম।সে আমাকে একটা সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে নিয়ে গেলো।যা জানতাম তাই বললো,
-এটা আমার হ্যালুসিনেসন।
ঘুমের ট্যাবলেট দিলো সাথে, যাতে ঘুমোতে পারি।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে পুলিশ ম্যাডামকে ফোন দিলাম।তিনি ফাইলটা নিয়ে আসলেন।
মজার ব্যাপার, সব ভালো করে ঘেটে দেখলাম মেয়ে ও তার মায়ের লাশ পোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো।
হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।কোনোভাবে কি বাকি যে দুইবন্ধু আছে ওরা আমাদের এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে?
মাহিম বললো,
ওই দুজন যদি নেক্সট টার্গেট না হয়।দেখা গেলো তারা কিছু জানেই না!
-কিছু তো একটা পাওয়া যাবেই ওখানে গেলে।চলো যাই।
-এক্সচুয়ালি,আমার একটা কাজ আছে।তুমিই যাও!
-হুম সেটাই ভালো হবে।আমার কাজ আমি একাই করি।
মাহিমকে বিদায় দিয়ে সেই কলেজের পথে ছুটলাম।কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের স্টুডেন্ট সবাই।সেখানকার ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে সবার নাম্বার যোগাড় করলাম।
যে দুইটা ছেলে এখনো বেঁচে আছে।তাদের নাম্বারে ফোন দিতেই বন্ধ দেখালো।
এতো কষ্ট করে এতকিছু করছি।আর এখন যদি এভাবে চলে যেতে হয়,তাহলে কি কিছু হলো।নিজের মনকে এভাবে বারবার বোঝাচ্ছিলাম।
একটু বেশি ঘাটাঘাটি করে বাকি দুইটা ছেলের নাম্বার পেলাম।
কথা বললাম ফোনে।একটা বয়স্ক মহিলা ফোন ধরেছে।আমি ঠিকানা সংগ্রহ করে চলে গেলাম।
ছেলেটার রুমে ঢুকতেই দেখি অন্ধকারে বিছানার এক কোণে বসে আছে।আমাকে দেখে প্রথমত ঘাবড়ে গেলো।ভাবছে আমি পুলিশের লোক।আমি কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবো,তখনি তা মা বলে উঠলো
-ওরে কিছু জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই।ও খুব ভয়ে আছে।আপনি চলে যান।
-আন্টি আমি শুধু কয়েকটা কথা বলেই চলে যাবো।
-কিছুই বলা লাগবে না, চলে যান।
-আন্টি ওর ক্ষতি হতে পারে।ওকে দেখে রাখবেন।
অমাবস্যার আর ৪ দিন বাকি।এর মাঝেই আমাকে ছেলেটার কাছ থেকে শুনতে হবে কি হয়েছিলো তাদের সাথে।যার ফলস্বরূপ সবাইকে এভাবে জান কোরবান দিতে হচ্ছে।
এই কদিনে আর প্রাইভেট নাম্বার থেকে কোনো টেক্সট আসে নি।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কফি হাতে করে বেলকনিতে দাঁড়াতেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় খেলাম।হাতের মগটা ছিটকে পড়ে গেল।থাপ্পড়টার আঘাত এতো জোরে লাগলো যে আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার মুখে ৫ টা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।এটা কি করে সম্ভব।দোতলার উপরে বাসা,এখানে আমি একা।কেউ থাপ্পড় দিবে কিভাবে?
দরজা, জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
চলবে……..?
গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না আর
এরকম ইন্টারেস্টিং ভৌতিকর গল্প প্রতিনিয়ত আমার এই গ্রুপে পোস্ট করা হয় আপনারা পড়তে চাইলে এই গ্রুপে যেয়ে পড়তে পারেন👇
https://facebook.com/groups/441730410822557/