#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#অন্তিম_পর্ব
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“ইশান হনহন করে এগিয়ে এসে মৌ’কে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঠাস করে একটা চ’ড় মে’রে দিলো। মৌ তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো। চ’ড়ের বিকট শব্দে মৌ এর সব বন্ধুরা কেঁপে উঠলো। মৌ গালে হাত দিয়ে ভীতু চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান মৌকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মৌ এর হাত ধরে টেনে তুললো”। মৌ কিছু বলতে চাইলো কিন্তু মৌ’কে থামিয়ে দিয়ে ইশান বলে উঠলো….
‘স্টপ মৌ, যাস্ট স্টপ। তুমি এতো নিচে নেমে গেছো ছিঃ। আমি কখনো ভাবি নি তুমি এমন কাজ করবে। তুমি আমাকে পেতে একজন’কে খু’নও করতে পারো। আমি রোদেলাকে ভালোবাসি কতবার বলেছি তোমাকে’?
‘আর আমি যে তোমাকে ভালোবাসি ইশান’?
‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না মৌ। তুমি আমার মোহে পড়ে আছো। তুমি আজকে আমার পিছনে পড়ে আছো, আমার থেকে বেটার, বড়লোক কাউকে পেলেই তুমি তার কাছে চলে যাবে। আর এটাকে ভালোবাসা বলে না। আমার যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তুমি তখন একবারও আমাকে দেখতে গিয়েছিলে? যাও নি। কারন আমি ম’রে গেলেও তোমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু রোদেলাকে দেখেছো? ওর অবস্থা কি হয়েছিলো দেখেছো? এটাকেই বলে ভালোবাসা’।
‘মৌ কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে’।
‘শুনো মৌ, তুমি রোদেলার ক্ষতি করতে চেয়ে যেই কাজটা করছো সেটা একদম ঠিক করো নি। এর শাস্তি তুমি পাবে। তোমাকে আমি পুলিশে দিবো’।
‘মেকি হাসি দিয়ে মৌ বললো, আমি এই কাজ করেছি তার প্রমাণ কি? তুমি প্রমাণ ছাড়া আমাকে পুলিশে দিবে ইশান? হাউ ফানি হাহাহা’।
‘তোমার লজ্জা করে না মৌ?এখনো মুখ দিয়ে এতো কথা বের হচ্ছে কিভাবে? আর আমাকে কি তোমার এতোই বোকা মনে হয় যে প্রমাণ ছাড়াই আমি এতো কথা বলছি’?
‘মানে? কি বলতে চাইছো তুমি’?
‘আমি তোমার বলা সব কথা আমার ফোনে রেকর্ড করে নিয়েছি। আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রমাণ’।
‘ইশান স্যরি। আমি রাগের মাথায় এসব কাজ করে ফেলেছি। আর কখনো করবো না। তুমি প্লিজ পুলিশে দিও না আমাকে। আমার লাইফ’টা শেষ হয়ে যাবে। প্লিজ ইশান’।
‘আই ডোন্ট কেয়ার। এসব তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো’।
‘ইশান প্লিজ’।
‘কখনো না। তোমাকে আজকে ছেড়ে দিলে তুমি কালকে আমার রোদেলার কোনো ক্ষতি করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি রোদেলার প্রতি কোনো রিস্ক নিতে পারবো না। ওকে হা’রা’লে আমি ম’রে যাবো। তাই ওর সেফটির কথা আমার ভাবতেই হবে’।
“মৌ’কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওকে টেনে কলেজের মাঠে নিয়ে গেলো। সেখানে সব স্টুডেন্ট সহ রোদেলাও ছিলো। সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের দেখে রোদেলা আর ইশানের বন্ধুরা এগিয়ে এলো। ইশান ওদের বললো, পুলিশে ফোন করতে”। ওরা বিনা বাক্যে পুলিশে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো…
‘কি হয়েছে? পুলিশে ফোন দিতে বললি কেন? আর তুই এতো রেগে আছিস কেন’?
‘পুলিশ এলেই সব বুঝতে পারবি’।
“ইশান রাগে গজগজ করছে। মৌ কাঁদছে আর বারবার মাফ চাইছে ইশানের কাছে। রোদেলা সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এর মাঝেই পুলিশ চলে এলো। পুলিশ আসতেই ইশান সব ঘটনা পুলিশকে খুলে বলে প্রমাণসহ মৌ’কে পুলিশের হাতে উঠিয়ে দিলো। সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে তবে রোদেলা বেশি অবাক হয় নি কারন ও আগে থেকেই মৌ’কে সন্দেহ করেছিলো। পুলিশরা মৌ’কে নিয়ে চলে যেতেই ইশান সবার সামনে দাঁড়িয়ে ওর আর রোদেলার বিয়ের কথা’টা বলে দিলো। সবাই অনেক খুশি হলো, ওদের শুভেচ্ছা জানালো”। অতঃপর ইশান সবার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে রোদেলাকে আবার প্রপোজ করলো….
‘আমি জানি না কখন, কিভাবে তোমাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি। বসন্তের এক সন্ধ্যায় তুমি আমার জীবনে এসেছিলে। তুমি আমার জীবনে আসার পরেই আমার জীবনটা পাল্টে গেছে। আমি খুঁজে পেয়েছি আমার বেঁচে থাকার সম্বল। আমি হয়তো সেভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না কিন্তু এতটুকু বলতে পারি, আমি তোমার চোখে কোনোদিন পানি আসতে দিবো না। কোনোদিন তোমার মুখ থেকে সেই মিষ্টি হাসি যেতে দিবো না। কোনোদিন কোনো কিছুর জন্য অভিযোগ করতে দিবো না। নিজের সবটুকু দিয়ে তোমায় আগলে রাখবো। আমি নিজেকে তোমার নামে করে দিলাম। ইশান শুধুই তার রোদু পাখির। তুমি আমার সম্পূরনাঙ্গিনী। আমি জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে আমার পাশে চাই। পাবো কি’?
“ইশান এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে এসব বলছিলো। চোখ খুলে রোদেলার দিকে তাকাতেই দেখলো রোদেলা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান উঠে দাঁড়িয়ে রোদেলার চোখের পানি আলতো হাতে মুছে দিতেই রোদেলা ইশানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে উঠলো। ইশান কিছু না বলে প্রিয়তমাকে পরম যত্নে বুকে আগলে নিলো। সেই মুহুর্তে ওদের ভালোবাসা দেখে সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। রোদেলা লজ্জা পেয়ে ইশানকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো আর ইশানও মাথা চুলকে বোকা বোকা হাসি দিলো৷ ইশানের বন্ধুরা দুষ্টুমি করে ইশানের পিঠে কয়েকটা কি’ল দিয়ে বললো…’হয়েছে বন্ধু। আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর তো, আমরা সবাই দাওয়াত খাই। ইশানও ওদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে সবার আড়ালে রোদেলাকে একটা চোখ মে’রে দিলো। রোদেলা ইশানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। এভাবেই খুনসুটি করতে করতে ওদের দিন পার হতে লাগল।
………
“কে’টে গেছে ৫ বছর। এই ৫ বছরে সবার জীবনেই অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইশান পড়াশোনা শেষ করে এখন বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে। ইশানের বাবা গত হয়েছেন বছর দুয়েক আগে। এখন ইশান’ই ওদের সংসারের হাল ধরেছে। রোদেলা এখন অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছে। খুনসুটি, ঝগড়া, মান-অভিমান, ভালোবাসা এসবের মধ্যে দিয়েই কখন যে ৫ বছর কে’টে গেছে কেউ বুঝতেই পারে নি। এখন সময় এসেছে ইশানের ঘরের রানী করে সবসময়ের জন্য রোদেলাকে নিয়ে যাওয়া। সবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হলো এক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠান হবে। দেখতে দেখতে কে’টে গেছে ৭ দিন। আজকে রোদেলা আর ইশানের গায়ে হলুদ। ইশান পড়েছে হলুদ আর লালের কম্বিনেশনের একটা পাঞ্জাবী। রোদেলা পড়েছে হলুদ আর লালের কম্বিনেশনের একটি শাড়ি, শাড়ির উপরে স্টোনের কাজ করা। আর কাঁচা ফুলের অলংকার, ভারি মেকাপ। অপরূপ লাগছে রোদেলাকে। ইশান তো রোদেলার দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছে না। তা দেখে কাজিনরা সবাই হাসাহাসি করছে আর রোদেলা লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। সবাই একে একে রোদেলা আর ইশানকে হলুদ মাখিয়ে দিলো। এতো হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে সবার চোখের আড়ালে ইশান টুক করে রোদেলাকে একটু হলুদ মাখিয়ে দিলো। রোদেলা ইশানের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসি দিলো। এভাবেই সবাই আনন্দ করতে করতে হলুদের পর্ব শেষ হলো। পরেরদিন সবার সম্মতিতে খুব সুন্দর করেই ইশান আর রোদেলার বিয়েটা হয়ে গেলো। রোদেলা এখন বাসর ঘরে বসে আছে”। কিছুক্ষণ পর ইশান রুমে ঢুকলো….
‘আসসালামু আলাইকুম’।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’।
‘রোদ পাখি চলো আমরা দুই রাকাত শুকরিয়া নামাজ আদায় করে নতুন জীবনে পা রাখি’।
‘ঠিক আছে’।
“দু’জন ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করলো। তারপর রোদেলা গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো”। রোদেলাকে বেলকনিতে দেখে ইশানও সেখানে রোদেলা পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বললো….
‘আমরাই মনে হয় একমাত্র দম্পতি যাদের দুই, দুইবার বাসর হচ্ছে হাহাহা’।
‘ইশান তুমি কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে আছো’।
‘ওমা যা হওয়ার তো তা আগেই হয়ে গেছে। এখন এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে’?
‘ধ্যাত যাও তো’।
‘আজকে গেলে তো হবে না জানু। আজকে আমি একটা জিনিস চাই দিবে’?
‘আমি ছোট্ট একটা রোদেলাকে চাই। উইল ইউ বি মাই বাবুর আম্মু’?
“বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো রোদেলার। অদ্ভুত এক অনুভুতির সাথে পরিচয় হলো সে। লজ্জায় নুইয়ে পড়লো প্রেমিক পুরুষের চওড়া বক্ষে। লজ্জাবতীর লজ্জা দেখে ইশান হাসলো এবং নিজ থেকে বুঝে নিলো নিরবতা সম্মতির লক্ষণ”।
“ভালোবাসা’টা কিছু সময়ের জন্য না হোক। ভালোবাসাটা হোক অনন্তকালের জন্য। পূর্ণতা পাক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা। ইশান আর রোদেলা ওদের নতুন জীবন নিয়ে ভালো থাকুক অনেক অনেক দিন”।
~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~
[এটা আমার লেখা প্রথম ধারাবাহিক ছিলো। আমি জানি না গল্পটা কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। তবে যারা প্রথম থেকে আমার পাশে ছিলেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। গল্পটা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে রিভিউ গ্রুপে গিয়ে ছোট্ট একটা রিভিউ দিবেন প্লিজ। নতুন কোনো গল্প নিয়ে আবার আপনাদের মাঝে হাজির হবো। ততদিন সবাই ভালো থাকবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ🖤]