#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৮
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“আজ আকাশে জ্বলজ্বল করছে পূর্নিমার চাঁদ। আর সেই চাঁদের আলো গাঁয়ে মাখছে দু’জন কপোত-কপোতী। বেলকনিতে বসে রোদেলা আর ইশান চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে”। হঠাৎ নীরবতা ভে’ঙে রোদেলা বলে উঠলো…
‘ইশান’?
‘হুম’।
‘ভালোবাসি’।
“ইশান কিছু না বলে রোদেলা’কে বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়তমার বলা ‘ভালোবাসি’ কথাটা অনুভব করছে। ভালোবাসা এতো সুন্দর কেন? যাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না তাদের ভালোবাসার কথা বললে বিষাদে ছেঁয়ে যায় আর যাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় তাদের কাছে ভালোবাসার মতো সুন্দর কিছু আর নেই। সবার ভালোবাসা পূর্নতা পায় না কেন? কি হয় পূর্নতা পেলে? সবার’ই তো ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে। ইশান যদি রোদেলাকে হারিয়ে ফেলতো তাহলে ইশান কি নিয়ে বাঁচতো। ওর তো এখন বেঁচে থাকার সম্বল একমাত্র রোদেলা”। ইশান এসব ভাবছিলো, হঠাৎ ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে রোদেলা বলে উঠলো…
‘এই ইশান এতো কি ভাবছো বলো তো’?
‘ভাবছি, আমার তিনবছর আগে দেখা সেই ছোট, মিষ্টি মেয়েটা আজ আমার পাশে আমার স্ত্রী হিসেবে’।
‘তুমি আমাকে কিভাবে দেখেছিলে’?
‘বসন্তের এক সন্ধ্যায় আমি আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম। জ্যামে আটকে পড়েছিলাম। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ এক বেলকনিতে আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো। সেখানে দুষ্টু-মিষ্টি একটা মেয়ে কিছু ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলছিলো। কখনো হাসছিলো, কখনো রাগী রাগী চেহারা করছিলো। সেই মেয়েটার স্নিগ্ধতা দেখে একমুহূর্তের মধ্যে আমার সব বিরক্ত লাগা চলে গিয়েছিলো। সেদিন থেকে রোজ এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম, যদি এক পলক আমার স্নিগ্ধরানীর দেখা পাই। রোজ আমার স্নিগ্ধরানীকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম। তার ব্যাপারে সব খোঁজ-খবর নিলাম। সে কোন স্কুলে পড়ে জানতে পারলাম। তার এক বান্ধবীকে চকোলেট ঘুষ তার ব্যাপারে সব ডিটেইলস জানলাম। চোখ বন্ধ করলেই যেনো তার চেহারা ভেসে উঠতো। এমন করতে করতে একসময় বুঝতে পারলাম তাকে আমি প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে আমার যেকোনো মূল্যেই চাই। এভাবে লুকিয়ে ভালোবাসতে ভালোবাসতে যে কখন তিন বছর কে/টে গেলো বুঝতেই পারলাম না। তারপর একদিন তাকে হঠাৎ দেখি আমার কলেজে। প্রথমে মনের ভুল ভাবলে পরে দেখি সত্যি সে আমার কলেজে। সেদিন আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারবো না। তারপর থেকে যা ঘটেছে সব আমার স্নিগ্ধরানী জানে’।
“এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে ইশানের প্রতিটা কথা শুনছিলাম। ইশান কথা শেষ করে আমার দিকে তাকাতেই দেখে আমার চোখের কোণে অশ্রু। সে খুব যত্নসহকারে আলতো হাতে আমার চোখ মুছিয়ে দিলো। আমি কোনো কথা না বলে ইশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ইশানও আমাকে পরম যত্নে আগলে নিলো”। কিছুক্ষণ পর বুক থেকে আমার মাথা তুলে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বললো…
‘আজকে কোনো কান্নাকাটি হবে না। আজকে শুধু ভালোবাসা হবে। আমার তিন বছরের অপেক্ষার অবসান হলো আজ। আজ কি আমি আমার রোদু রানী’কে পূর্ণ ভাবে পেতে পারি? আজ যদি আমার রোদু রানী’কে ছুঁয়ে দেওয়ার মতো অপরাধ করে ফেলি তার জন্য কি শাস্তি পাবো’?
‘শাস্তি তো অবশ্যই পাবে’।
‘কি শাস্তি পাবো শুনি’?
‘আমি লজ্জায় ইশানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বললাম, শাস্তি হিসেবে এভাবেই রোজ ছুঁয়ে দিতে হবে’।
“ইশান কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে আমাকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
(বাকিটা আপনারা কল্পনা করে নিন। আমি আর কিছু জানি না🙈)
…….
“নতুন একটি সকাল। সূর্যের আলো চোখে-মুখে পড়তেই ইশানের ঘুম ভে’ঙে গেলো। আড়মোড়া দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো তার স্নিগ্ধময়ী’কে। নীল ড্রেসে রোদেলাকে নীল পরীর থেকে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না। ইশান রোদেলার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। পিছন থেকে রোদেলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর চুলে মুখ গুঁজে দিলো”। রোদেলা হালকা কেঁপে উঠে বললো….
‘সকাল সকাল কোনো দুষ্টুমি করবা না বুঝছো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। কলেজ যেতে হবে তো নাকি’।
‘বউকে ছেড়ে এখন কোনো কলেজে যাবো না’।
‘যেতে হবে। কয়েকদিন পর আমাদের পরীক্ষা এখন কলেজ কামাই করা যাবে না। তাড়াতাড়ি যাও’
“ইশানকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলাম। তারপর দুজনেই রেডি হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম। কলেজে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে আমাদের দু’জনকে একসাথে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে তেলে-বেগুনে জ্ব’লে উঠলো মৌ। সে ভাবতে লাগলো যে করেই হোক রোদেলাকে ইশানের থেকে দূরে করতে হবে।
সেদিন কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এসে সবাইকে বললেন যে তারা একটা স্ট্যাডি ট্যুর এর আয়োজন করতে চাচ্ছে। এখন সবাই যেখানে যেতে চায় সেখানেই যাওয়ার প্লানিং করছে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তারা পাহাড়ে বেড়াতে যাবে। এটা শুনে সবার সাথে রোদেলা ইশানও অনেক খুশি। অন্যদিকে মৌও তার রোদেলাকে ইশানের থেকে দূরে করার একটা রাস্তা পেয়ে গেল ভেবে ডেভিল হাসি দিচ্ছে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো কালকে ভোরে সবাই পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হবে”।
#চলবে…
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ)