#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_১০
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“ইশান নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো রোদেলা একটা গাছের ডাল ধরে ঝুলছে আর চোখ বন্ধ করে কাঁদছে। ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ও প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে। গাছের ডালটাও ভে’ঙে যাবে, ভে’ঙে যাবে মনে হচ্ছে। ইশান এমন দূশ্য দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলো। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় ক্রমশ গ্রাস করতে লাগলো। ইশানের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন সময় ইশানের বন্ধুরা সেখানে চলে এসেছে। ইশানকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে আসে। তারাও এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেছে। কিন্তু বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করতে হয়। মাথা গরম করলে সহজ কাজও অনেক কঠিন লাগে। তাদের মাঝখান থেকে এক বন্ধু দৌঁড়ে চলে গেলো বড় একটা দড়ি জোগাড় করতে এবং জোগাড় করেও নিয়ে আসলো। দড়িটা নিয়ে ইশানের হাতে দিলো। ইশান কোনো দিকে না তাকিয়ে দড়িটা নিজের কোমরে বেঁধে নিচে নেমে পড়লো আর উপর থেকে তার বন্ধুরা শক্ত করে দড়িটা ধরে রাখলো। ইশান রোদেলাকে একটু ছুঁতেই রোদেলা একটু পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো এটা ইশান। ইশানকে দেখেই জাপটে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। ইশান কিছু না বলে উপরে আওয়াজ দিলো। উপর থেকে তারা টেনে টেনে ইশান আর রোদেলাকে তুললো। উপরে উঠে ইশান কোনো কথা না বলে রোদেলাকে বুকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোদেলাও ইশানকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ইশান যেনো এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আল্লাহর রহমতে একটুর জন্য সে তার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলে নি। আজকে যদি রোদেলার কিছু হতো তাহলে তার কি হতো। এতকিছু মধ্যে মৌ ভাবছে, একটু জন্য বেঁচে গেলি। তোর ভাগ্য অনেক ভালো। এতকিছু করেও তোকে মা’র’তে পারলাম না। এসব ভেবে রাগে ফে’টে পড়ছে মৌ। রোদেলা অনেকক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে এখন চুপ করে ইশানের বুকে লেপ্টে আছে”। কিছুক্ষণ পর ইশানের বুক থেকে মাথা তুলে ইশানের দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে বললো…
‘ইশান’।
‘ইশান কোনো কথা না বলে আমার দিকে তাকাতেই ওর চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু ধরে পড়লো’।
‘আমি অস্তির হয়ে বলতে লাগলাম, এই ইশান কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? আমার তো কিছু হয় নি দেখো’।
‘তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি কি নিয়ে থাকতাম? তোমাকে কেন এখানে এসে দাঁড়িয়েছো? আর পড়ে গেলেই কিভাবে’?
‘ইশান আমি নিজে থেকে পড়ে যাই নি, আমাকে পিছন থেকে কেউ ধা’ক্কা দিয়েছে’।
‘কি বলছো তুমি’? তুমি শিওর’?
‘হ্যা ইশান আমি একদম সত্যি বলছি নাহলে কি কেউ এভাবে এভাবে পড়ে যায় তুমি বলো’?
‘কে ধা’ক্কা দিতে পারে তোমাকে’?
“রোদেলা মনে মনে সন্দেহ করলো এই কাজ মৌ করলেও করতে পারে কারন মৌ তো চায় ইশানের জীবন থেকে রোদেলাকে সরিয়ে ফেলতে আর এখানে আসার পর থেকে মৌ রোদেলার দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো রহস্যজনক হাসি দিয়েছে সেটা আর কেউ খেয়াল না করলেও রোদেলা খেয়াল করেছে কিন্তু এখন এসব ইশানকে বললো না, এমনিতেই বেচারা ভয় পেয়ে আছে তাই এখন আর এসব বলে টেনশন বাড়াতে চাইলো না তাই এসব বাদ দিয়ে ইশানকে বললো ‘চলো আমরা সবার কাছে যাই, এখন তো আমাদের ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে’। ইশানও রোদেলার কথায় সম্মতি প্রকাশ করলো”৷
“এদিকে মৌ অনেক ভয়ে ভয়ে আছে যদি কেউ কোনোভাবে জানতে পারে ও এসব কাজ করেছে তখন কি হবে? আচ্ছা রোদেলা কি ওকে দেখেছে, যে ও এই কাজ করেছে? রোদেলা যদি দেখে থাকে আর ইশানকে বলে দেয় তখন তো ও আর কখনো ইশানকে পাবে না। ও লাইফ’টা তো একদম শেষ হয়ে যাবে। এসব ভেবে মৌ এর কিছুই ভালো লাগছে না”।
“সবাই ঢাকায় ফিরে এলো। মাঝে কে’টে গেছে বেশ কিছুদিন। এখন ইশান রোদেলার প্রতি আরও যত্নশীল হয়ে উঠেছে। ওকে একদম একা ছাড়ে না। কলেজে আসার সময় রোদেলা বাসা থেকে ওকে নিয়ে আসে আবার ছুটি হলে বাসায় দিয়ে আসে। ওই ঘটনার পর থেকে ইশান রোদেলাকে একদম কাছ ছাড়া করে না৷ ইশানের এসব কাজে রোদেলার ইশানের প্রতি আরও মুগ্ধতা বাড়ে। ইশানের প্রতি ভালোবাসা’টা আরও গাঢ় হয়৷ ওই ঘটনার পর থেকে দু’জন যেনো আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। দু’জনের ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে”।
“এদিকে মৌ কিছুদিন চুপ থাকলেও এখন আবার রোদেলাকে ইশানের জীবন থেকে সরানোর জন্য প্লান করতে লাগলো। রোদেলার প্রতি ইশানের এতো কেয়ার, ভালোবাসা মৌ এর সহ্য হচ্ছে না। তাই ও নিজের বন্ধুদের সাথে একটা ফাঁকা ক্লাসে বসে প্লান করতে লাগলো কিভাবে রোদেলার ক্ষতি করা যায়”। হঠাৎ মৌ এর এক বন্ধু বলে উঠলো…
‘তুই কি রে? কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারিস না? পাহাড়েই তো রোদেলাকে শেষ করে দিতে পারতি’।
‘আরে আমি তো ওকে পাহাড় থেকে ফেলেই দিয়েছিলাম কিন্তু ও কিভাবে বেঁচে গেলো কিছুই বুঝলাম না। রোদেলার হচ্ছে কৈ মাছের জান তাই মৃ’ত্যু’র মুখ থেকেও ফিরে এসেছে কিন্তু এখন এমন প্লান বানাবো যাতে রোদেলা আর বাঁচতে না পারে, আর আমার ইশানের জীবনেও কোনোদিন ফিরতে না পারে। ইশান শুধু আমার’।
“ওদের ক্লাসরুমের পাশ দিয়েই ইশান যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় মৌ এর কিছু কথা ইশানের কানে যায় তাই ও সব কথা শুনার জন্য আরও ভালো আঁড়ি পাতে এবং মৌ এর বলা সব কথা শুনতে পায়। ইশান বুদ্ধি করে মৌ এর বলা সব কথা ইশানের ফোনে রেকর্ড করে নেয়। কিন্তু মৌ এর কথাগুলো শুনে ইশান প্রচন্ড রেগে গেছে। ইশানের কপালের রগ ফুলে উঠেছে, চোখ লাল বর্ন ধারণ করেছে। ইশান কোনো কথা না বলে ক্লাস রুমের দরজা জোড়ে ধা’ক্কা দিয়ে খুলে ফেলে৷ হঠাৎ এমন বিকট শব্দে মৌ আর ওর সব বন্ধুরা চমকে উঠে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইশান দাঁড়িয়ে আছে। ইশানের এই ভ’য়ং’ক’র চেহারা দেখে মৌ এর আ’ত্মা’র পানি শুঁকিয়ে যায়। মৌ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে ভিতু চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান হনহন করে মৌ এর দিকে এগিয়ে এসে….
#চলবে….
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ)