#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৫
এভাবেই মাঝখানে আরো ৩-৪ দিন কেটে গেলো। সব কিছু ভালোই ভালোই চলছে। আব্রাহাম অফিসে যায় আবার আসে। আইরাত কে টাইম দেয় অনেক। মাঝে মাঝে তো আইরাত থাকতে না পেরে কাউকে কিছু না বলেই সোজা আব্রাহামের অফিসে টপকে পরে। এভাবেই হাসি-খুশিতেই সবার জীবন চলছে। তবে আজ আব্রাহামের অফিসের অফ ডে তাই সে বাড়িতে। আইরাত বসে বসে চিপস খাচ্ছে তখনই হঠাৎ আব্রাহাম বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; আচ্ছা, আমাদের বিয়ের কদিন হলো?
আইরাত;; কিসের কদিন? ১ মাসই তো হয়নি।
আব্রাহাম;; হুমম। আচ্ছা তো হানিমুনে কবে যাচ্ছি আমরা?
আইরাত;; হানিমুন?
আব্রাহাম;; হুমম
আইরাত;; যাচ্ছি না।
আব্রাহাম;; হেই মানে কি?
আইরাত আব্রাহামের দিকে ঘুড়ে বসে।
আইরাত;; বাসায় দাদি একা। কীভাবে থাকবেন? আর আপনার অফিস আছে, সেখানে সেগুলো কে সামলাবে। কত্তো কাজ এইদিকে এগুলো ফেলে দূরে যাবো কীভাবে?
আব্রাহাম;; আমরা কি ওখানে আজীবন থাকতে যাচ্ছি নাকি?
আইরাত;; ওকে ফাইন আপনি কোথায় যেতে চাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; সুইজারল্যান্ড।
আইরাত;; মালদ্বীপ”স বা বালি তে গেলে কি সমস্যা?
আব্রাহাম;; আমার ড্রীম সিটি সুইজারল্যান্ড আর হ্যাঁ আইসলেন্ডও।
আইরাত;; প্যারিস?
আব্রাহাম;; সুইজারল্যান্ড।
আইরাত;; আমরা বাংলাদেশেই থাকবো। আর হানিমুনও এখানেই হবে। আর আজই হানিমুনে যাবো।
আব্রাহাম;; মানে কি?
আইরাত;; আসুন।
আব্রাহাম;; কিন্তু!
আইরাত;; আরে আসুন তো।
আইরাত আব্রাহাম কে নিয়ে কাবার্ডের সামনে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর আইরাত আব্রাহামের দিকে একটা ডার্ক ব্লেক কালারের পাঞ্জাবি এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; এই নিন।
আব্রাহাম;; ???
আইরাত;; একদিনে তো আর ৬৪ জেলা পাড়ি দেওয়া সম্ভব না তাইনা। তাই আজ আমরা আমাদের শহর টা ঘুড়বো।
আব্রাহাম;; এই শহর লাইক সিরিয়াসলি?
আইরাত;; আব্রাহাম, নাক কুচকানো বন্ধ করুন তো। আর আমাদের হানিমুন টা সবার থেকে বেশি সুন্দর আর আলাদা রকমের হবে বুঝলেন।
আব্রাহাম;; আব..আচ্ছা।
আইরাত;; আপনি এই কালো পাঞ্জাবি টা পরবেন আর আমি পরবো এই যে এই কালো শাড়ি টা।
আব্রাহাম;; আচ্ছা ঠিকআছে।
যেই ভাবা সেই কাজ আব্রাহাম রেডি হয়ে গেলো। কালো পাঞ্জাবি, হাতে কালো ঘড়ি, চুল গুলো যেনো আপনা আপনিই বাতাসে ডুলছে। আর মুখে থাকা সেই ঘন চাপদাড়ি। আহা, লুক লাইক ব্লেক চার্মিং প্রিন্স। আব্রাহাম তার পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে রুমে আসে। তবে সে সামনে তাকাতেই থমকে দাঁড়ায়। আইরাতকে দেখে। আইরাত একদম কালো কালারের একটা শাড়ি পরেছে তাতে ছোট ছোট বেশকিছু সাদা স্টোন। হাতে এত্তো গুলো কালো চুড়ি। মাথার চুল গুলো পেছনে খোপার মতো করে বেধে নিয়ে কপালের সাইড দিয়ে কিছু চুল বের করা। আইরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো কারো রুমে আসার শব্দ পেয়ে পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত তাকে দেখে হেসে দেয়। আব্রাহামের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়…
আইরাত;; কেমন লাগছে?
আব্রাহাম;; তোমার কাজল টা দাও।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ কাজলটা আমাকে দাও।
আইরাত;; কিন্তু আমি চোখে কাজল পরেছি তো।
আব্রাহাম;; আহা দাও না।
আইরাত কাজল টা এনে আব্রাহামের হাতে দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম তার কানি আঙুলে সামান্য কিছু কাজল নিয়ে আইরাতের কানের পেছনে লাগিয়ে দেয়।
আইরাত;; এটা কি ছিলো?
আব্রাহাম;; যে পরিমাণ কিউট লাগছে কেউ নজর দিলে পরে আমার সমস্যা হবে।
আইরাত;; আয় হায়, ফ্লার্টিং লেভেল হাই।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, বলতে পারো।
আইরাত;; এখন আমি কি করবো আপনাকে বোরকা পরাবো?
আব্রাহাম;; এটা কোন কথা?
আইরাত;; হ্যাঁ এটাই কথা,, আপনি এত্তো পরিমাণে সুদর্শন হবেন পরে সব মাইয়া মানুষ আপনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে তখন আমি, আমার কি হবে?
আব্রাহাম;; আরে ধুর রাখো তো। চলো।
আব্রাহাম-আইরাত ইলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম যেই না গাড়ির চাবি দিয়ে লক খুলতে যাবে তখনই আইরাত তার হাত ধরে টান দেয়।
আইরাত;; আজ আমরা গাড়িতে যাবো না।
আব্রাহাম;; তাহলে?
আইরাত;; আজ আমরা রিকশা তে করে ঘুড়বো।
আব্রাহাম;; তাহলে গার্ড দের সাথে নিয়ে যেতে হবে।
আইরাত;; কিন্তু কেনো?
আব্রাহাম;; তো কি আমি এভাবে একা বের হবো নাকি?
আইরাত;; আচ্ছা নিয়ে নিন।
আব্রাহাম;; আরে আমরা আমাদের মতো করেই থাকবো ওরা জাস্ট আমাদের আশে পাশে থাকবে আর কিছুই না।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহামের গার্ড রাই একটা রিকশা ডেকে আনে তারপর আব্রাহাম আর আইরাত রিকশা তে উঠে পরে। আইরাতের এক হাত আব্রাহামের এক হাতের ভাজে।
আব্রাহাম;; তো কোথায় যাবো আমরা?
আইরাত;; আগে কিছুক্ষন রিকশা তে করে ঘুড়ি তারপর।
আইরাত আর আব্রাহাম কমপক্ষে ৩০ মিনিট রিকশা করে ঘুড়েছে। তবে ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ আব্রাহাম রিকশা থামিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এইযে চাচা রিকশা থামান।
আইরাত;; কোথায় যাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; আসছি দাড়াও।
আব্রাহাম নেমে সোজা চলে যায়। কিছুক্ষন পর হাতে একটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; কোথায় গিয়েছিলেন?
আব্রাহাম;; এটা আনতে।
আইরাত;; বেলী ফুল।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এবার এদিকে এসো।
আব্রাহাম রিকশা তে উঠে পরে তারপর নিজ হাতে আইরাতের খোপায় বেলী ফুলের মালা টা পরিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এবার পারফেক্ট লাগছে দেখতে।
আইরাত;; থাংকু জামাইজান।
রিকশা আবার চলতে লাগলো। সোজা রাস্তা, তার আশে পাশে প্রচুর গাছ-গাছালি তার ওপর খোলা হাওয়া। আর নিজের প্রিয়জনের হাতটি ধরে রিকশা করে ঘুড়ে বেড়ানো। আর কি লাগে। এবার আইরাত-আব্রাহাম রিকশা থেকে নেমেই পরলো। তারা গিয়ে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে পরে। গাছে কিছু সবুজ পাতা আর সম্পূর্ণই ফুলে ফুলে ভরা। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেও প্রায় অনেক ফুল পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জায়গা টা ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। আইরাতের এতোসব কিছু দেখে এখন যেনো লাফাতে মন চাইছে। আইরাত গিয়ে ঠিক গাছের নিচটায় বসে পরে। আর আব্রাহাম তখনই এসে ফট করে আইরাতের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে। আইরাত তার আলতো হাতে আব্রাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
আইরাত;; জায়গা টা অনেক সুন্দর না??
আব্রাহাম;; তোমার থেকে বেশি না।
আইরাত;; হয়েছে থাক।
আব্রাহাম;; এই মাথা থেকে হাত সরালে কেনো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত টা টেনে আবার তার মাথায় রেখে দেয়। জায়গা টা খোলা মেলা। তেমন কোন মানুষ জন নেই। পাখিদের কিচিরমিচির গুলো কানে এসে বাজছে। একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখে আইরাত। সে ফুল ব্রিক্রি করে। তার কাছ থেকে আইরাত অনেক গুলো গোলাপফুল আর কদমফুল নেয়। বাদাম বিক্রেতা আসলে তারা ৫-১০ টাকার বাদাম পর্যন্ত কিনে খেয়েছে। এভাবেই তারা সেখানে কিছুক্ষন বসে থেকে তারপর চলে যায়। কিছুটা বাইরে আসতেই আইরাত খুশিতে গদগদ করে বলে ওঠে….
আইরাত;; ইইইইইই, আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; কি হলো জানপাখি?
আইরাত;; ওইযে দেখুন।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; ফুচকা ফুচকা।
আব্রাহাম;; না না এটা খাওয়া যাবে না। এগুলো প্রচুর শরীরের জন্য খারাপ৷ খাওয়া যাবে না।
আইরাত;; কি খেতে দিবেন না? খেতে দিবেন না আপনি আমাকে? আচ্ছা ঠিকআছে আমিও বাড়ি যাবো না। এখানেই রাস্তায় বসে থাকবো।
আব্রাহাম;; কি এক মুশকিল রে বাবা। আরে…
আইরাত;; ফুচকা খেতে না দিলে আমি বাড়ি যাবোই না।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন চলো।
আইরাত;; 😃😃
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে ফুচকার দোকানে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর ফুচকা এসে হাজির হলো।
আইরাত যেনো নিজের জীবন তার হাতে পেয়েছে। গপাগপ খেতে লাগলো। আব্রাহাম শুধু কোমড়ে দুই হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আব্রাহাম কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আইরাত বলে ওঠে….
আইরাত;; আমার যদি পেটে সমস্যা হয়েছে তারপর আপনার একদিন কি আর আমার যতদিন লাগে বুইঝেন। এভাবে নজর দিচ্ছেন কেনো?
আব্রাহাম;; কীভাবে খাও এগুলো?
আইরাত;; আরে হুম হুম ধরুন আপনিও খান একটা।
আব্রাহাম;; এই না না না না।
আইরাত;; খাবেন মানে খাবেন। ধরুন।
আব্রাহাম;; আরে কিন্তু।
আইরাত;; হা করুন।
আইরাত জোর করেই আব্রাহামের মুখে একটা ফুচকা পুড়ে দেয়। আব্রাহাম কোন রকমে সামলায়।
আইরাত;; কেমন লাগলো?
আব্রাহাম;; হুমম হুমম টেস্ট গুড কিন্তু…
আইরাত;; কিন্তু ভালো। নিন আরেকটা খান আর আমার মতো হয়ে যান।
আব্রাহাম;; জ্বি না ম্যাডাম আমার দরকার নেই আপনিই খান।
আইরাত একটা ভেংচি কেটে আবার নিজের খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেয়। তখনই আকাশ টা কেমন মেঘলা মেঘলা হয়ে আসে। হয়তো বৃষ্টি নামবে। আইরাত গুনে গুনে চার প্লেট ফুচকা খেয়েছে।
আব্রাহাম;; খাওয়া হয়েছে নাকি আরো আছে?
আইরাত;; আমি তো চাইছিলাম আরো খাবো কিন্তু কে জানে আপনি কখন আমার ওপর ঠাডা ফেলে দেন তাই আর না।
আব্রাহাম;; হুম বুঝলাম।
আইরাত;; এই ফুচকাওয়ালা মামা শুনুন আপনি তো আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর বাড়ির চিনেন তাই না। উনার বাড়ি কেই না চিনে। শুনুন প্রতিদিন বিকেল বেলা আপনি সেখানে চলে যাবেন কেমন। গার্ড দের আমি বলে রাখবো। আপনার এক মাসে যত টাকা লাভ না হয় তা একদিনে লাভ হয়ে যাবে। মানে আমি খেয়ে ফেলবো আর কি। আপনি রোজ আমার জন্য বিকেলবেলা ফুচকা নিয়ে যাবেন কেমন?
ফুচকাওয়ালা;; জ্বে আইচ্ছা মা।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম কিছু বলে না শুধু আইরাতের কান্ড দেখে যাচ্ছে। তখনই আকাশে বিদ্যুৎ চমক দেয়। আইরাত আর আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে।
আব্রাহাম;; এখন কোথায় যাবে?
আইরাত;; হুম এখন আমরা যাবো টং এর দোকানে চা খেতে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এটা খাওয়াই যায়।
আব্রাহাম-আইরাত সোজা টং এর দোকানে চলে যায়।
তখনই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো। পরিবেশ টাকে আরো শীতল বানিয়ে দিলো। আব্রাহাম আর আইরাত একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরম চা খাচ্ছে। পাশেই বিভিন্ন ভাজাপোড়া জাতীয় জিনিস ভাজা হচ্ছে। শূন্য রাস্তায় বৃষ্টির পানির গুলোর শব্দ কানে আসছে। আবহাওয়া টা কেমন বৃষ্টি ভেজা হয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; কেমন লাগছে?
আইরাত;; অনুভূতি টা ভাষ্যহীন। প্রকাশ করা যায় না। বৃষ্টি ভেজা দিনে এমন টং দোকানের চা তাও আবার জামাইয়ের সাথে আহা 🥰।
আব্রাহাম আইরাতের কথায় হেসে দেয়। এভাবেই সারাটাদিন চলে যায় তাদের। পাঁচ টা হাওয়াই মিঠাই কিনেছে আইরাত। পাঁচ টা হাওয়াই মিঠাই পাঁচ আলাদা আলাদা রঙের। সন্ধ্যা নেমে এলে আব্রাহাম-আইরাত বাড়ি ফিরে আসে।
আইরাত;; তো দিন টা কেমন লাগলো?
আব্রাহাম;; অনেক বেশি ভালো ছিলো।
আইরাত;; আপনার সুইজারল্যান্ডের শখ মিটিছে?
আব্রাহাম;; না তা তো মিটে নি। বাট এটা আমার লাইফের বেস্ট দিন ছিলো। কারণ আমার কাছে তুমি ছিলে।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু একে দেয়।
আইরাত রুমের ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই আইরাতের মাথা টা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। ঝিমঝিম করছে। আইরাত টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা পরে যেতে নিলেই আব্রাহাম এসে ধরে ফেলে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ঠিক আছো? কি হলো?
আইরাত;; জানি না কেনো জানি মাথা কিছুটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
আব্রাহাম;; আচ্ছা তুমি বসো এখানে।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিলে আইরাত ঢকঢক করে পানি টা খেয়ে নেয়।
আব্রাহাম;; এখন ঠিক আছো?
আইরাত;; হ্যাঁ ঠিক আছি।
আব্রাহাম;; হঠাৎ মাথা ঘুড়ালো কেনো?
আইরাত;; জানি না।
আব্রাহাম;; আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।
তখনই আব্রাহামের ফোনে কারো ফোন আসে। আব্রাহাম দ্রুত তা রিসিভ করে। হঠাৎ কথা বলতে বলতেই আব্রাহামের চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে আসে। যেনো প্রচন্ড রাগ পেয়েছে। আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। দ্রুত চেঞ্জ করে নিজের জেকেট টা পরতে পরতে বাইরে বের হয়ে আসে।
আইরাত;; আব্রাহাম কোথাও যাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ এসেছে তো যেতে হচ্ছে। তুমি নিজের খেয়াল রাখো দরকার পরলে দাদির কাছে যাও।
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাতকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আব্রাহাম দ্রুত পায়ে হেটে বাইরে চলে যায়।
এদিকে আইরাত এই ভাবছে যে ভালোই তো ছিলো হুট করেই আবার এতো রেগে গেলো কেনো। যাই হোক আইরাত চেঞ্জ করে ইলার কাছে চলে গেলো। আইরাতের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ইলা তার মাথায় তেল মালিশ করে দিতে লাগলো। ইলা তো বেশি রাত জাগতে পারে না তাই আইরাত তাকে রাতের খাবার সহ মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে আসে। তিনি এখন ঘুম। তবে ঘড়ির কাটা ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতেই রাত ১১ টা বেজে গেলো। তবুও আব্রাহামের আসার কোন নাম-গন্ধ নেই। এই যে সন্ধ্যারাতের দিকে বের হয়েছিলো। গেলো কোথায়?। আইরাত আব্রাহামের জন্য খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে অনেকক্ষণ বসে ছিলো। আব্রাহাম আসছে না দেখে আইরাত মন টা কালো করে ওপরে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তারপর চলে গেলো আরো এক ঘন্টা। এখন বাজছে ১২ঃ০৭ মিনিট। আইরাত করিডরে দোলনাতে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়েই পরেছিলো কিন্তু তখনই বাইরে গাড়ির হর্ণের শব্দ হয়। আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। ফট করে চোখ মেলে নিচের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে বাড়ির গেট দিয়ে আব্রাহামের গাড়ি ভেতরে আসছে। তারমানে আব্রাহাম এসে পরেছে। আইরাত খুশি হয়ে যায় কিন্তু তারপরেই মনে জায়গা নেয় একরাশ অভিমানের। আইরাত রুমে এসে পরে। আইরাত ভাবে যে নিচে যাবে কি যাবে না। রাগের ফলে সে ভেবেই নেয় যে যাবে না। কিন্তু আর থাকতে না পেরে আইরাত বাইরে যেতে ধরলেই আব্রাহাম সামনে এসে পরে। আইরাত আব্রাহামকে দেখে কিছুটা ভয়ই পায়। কেননা আব্রাহামের চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। আইরাতের এবার চোখ যায় আব্রাহামের হাতের দিকে। আর আব্রাহামের হাত গুলো দেখতেই আইরাতের বুক টা ভয়ে ছাত করে উঠে। কারণ আব্রাহামের দুইহাতেই রক্ত। আইরাত একবার আব্রাহামের হাতের দিকে আরেকবার তার দিকে তাকায়। আব্রাহামের হাত এমন রক্তেভেজা কেনো। কাকে মেরে এসেছে আব্রাহাম? আব্রাহাম আইরাতকে দেখে বুঝলো যে সে কিছুটা ভয় পেয়েছে। আব্রাহাম গিয়ে নিজের হাত গুলো পরিষ্কার করে নেয়। আব্রাহাম যেই না আইরাতকে কিছু বলতে যাবে তখনই আইরাত মাথা ঘুড়িয়ে নিচে পরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের নাম ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। দ্রুত গিয়ে আইরাতের মাথা টা নিজের কোলে তুলে নেয়।
আব্রাহাম;; আইরাত, আইরাত বেবিগার্ল। আইরাত চোখ খুলো আইরাত। কি হলো হুট করেই। আইরাত, আইরাত।
আব্রাহাম এক নাগারে আইরাতকে ডেকেই চলেছে কিন্তু আইরাতের কোন খেয়াল নেই। তখনই রুমে ইলা আসে।
ইলা;; আইরাত? আব্রাহাম কি হয়েছে আইরাতের?
আব্রাহাম;; জানি না দাদি। অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো হুট করেই। আইরাত চোখ খুলো জানপাখি আমার প্লিজ চোখ খুলো।
ইলা;; আমি তো ঘুমিয়েই পরেছিলাম কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় আমার। আর তুই তো রাতে দেরি করে আসিস তাই ভাবলাম যে আইরাতকে এক নজর দেখে আসি।
আব্রাহাম;; যখন আমরা বাইরে থেকে আসি তখনও আইরাতের মাথা হাল্কা ঘুড়াচ্ছিলো।
ইলা;; আর তুই বাসা থেকে চলে যাবার পর আইরাত দুই বার বমি করেছে।
আব্রাহাম;; কি?
ইলা;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম আইরাতকে কোলে করে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। দ্রুত ডক্টর কে ফোন দেয়। আব্রাহামের চিন্তায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। এখনো আইরাতের কোন হুস খেয়াল নেই। অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। আর আব্রাহামেরই ভুল হয়েছে তার একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো। আইরাত যে এগুলো খুন-খারাবা দেখে ভয় পায় রাগে তা মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো আব্রাহামের। আব্রাহাম আইরাতের হাত টা নিজের দুহাতে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
।
।
।
।
চলবে~~