নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৪৬ [বোনাস🦋]

0
923

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৬ [বোনাস🦋]

আব্রাহাম আইরাতের পাশেই বসে ছিলো তার ঠিক দশ মিনিট পর ডক্টর আসে। আব্রাহাম আইরাতের কাছ থেকে সরে আসে তারপর ডক্টর তার চেকাপ করে।

আব্রাহাম;; What happened doctor? Anything serious?!

ডক্টর;; না তেমন কিছু না। সব ঠিকই আছে।

আব্রাহাম;; তাহলে হুট করেই সেন্সল্যাস?

ডক্টর;; দেখুন উনার বাইরের জিনিস অনেক খাওয়া হয়। মানে আসলে পুরোপুরি জাংক ফুড’স না তবে হাবিজাবি বেশি। এই ধরুন চিপ’স, পপকর্ন, আর স্পেশালি ফুচকা। ফুচকা টা টক-ঝাল জাতীয় খাবার আর এই দুইটা জিনিসের মাত্রা অত্বাধিক হলে বমি বা ফুড পয়জনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই উনি আজ বমিও করেছেন একাধিক বার। আর রইলো কথা অজ্ঞান হয়ে পরার তো মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী আপনার ওয়াইফ আইরাতের কিছু জিনিসে বিরাট ফোবিয়া আছে। এই ধরুন অন্ধকার, অনেক উচ্চতা আর ব্লাড। মানে উনি এই তিনটে জিনিস অতিরিক্ত পরিমাণে দেখলে বেশ ভয় পেয়ে যান। তার ভেতরে একটা ভয় কাজ করে তাই অজ্ঞান হয়ে পরেছেন। আচ্ছা আজ কি উনি রক্ত দেখেছিলেন নাকি মানে অনেক বেশি???

ডক্টরের কথায় আব্রাহাম কিছুটা চুপ থাকে। সে বেশ বুঝতে পারছে যে তার রক্তে মাখা হাত গুলো নিয়ে সোজা আইরাতের সামনে আসা একদম ঠিক হয়নি। মোটেও না। আব্রাহাম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ইলা বলে ওঠে….

ইলা;; কই না তো। কারো শরীরে কোন আঘাতও লাগে নি। আর মাচ বা মাংস এই সবের তো প্রশ্নই আসে না।

ডক্টর;; জ্বি না মাছ-মাংস না উনার মানুষের রক্তেই ফোবিয়া আছে। একসাথে অনেক রক্ত দেখলে উনার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে চাপ পরে যারফলে তার অবস্থা এমন হয়। যাই হোক ভয়ের কোন ব্যাপার নেই। সব ঠিকই আছে। শুধু একটু রেস্ট আর ঠিকঠাক ভাবে খাওয়া-দাওয়া করলেই ভালো হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবেন উনি যেনো এই বাইরের জিনিস বেশি একটা না খায়। আর উনি কিন্তু প্রচুর ঝাল খাবার খান এটা কমাতে হবে।

চেকাপ শেষ হলে আব্রাহামের একটা গার্ড গিয়ে ডক্টর কে এগিয়ে দিয়ে আসে। ইলা আব্রাহাম কে আইরাতের ওপর নজর রাখতে বলে চলে যান। আব্রাহাম একটা ক্ষীণ দম ছেড়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুটা ঝুকে আইরাতের কপালের চুল গুলো সরিয়ে একটা চুমু খেয়ে এসে পরে। সোজা শাওয়ার নিতে চলে যায়। এখন এই মূহুর্তে তার মাথা ঠান্ডা করা বেশ প্রয়োজন। কেননা আব্রাহাম সত্যি সত্যিই একজন কে মেরে রেখে এসেছে। আব্রাহামের কাছে তখন রাশেদের ফোন এসেছিলো। কথায় আছে না যে “” লাতো কে ভূত বাতো সে নেহি মানতে “” বিষয় টা ঠিক তেমনই। রায়হান এতো সহজেই হাল যে ছেড়ে দিবেনা তা আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো কিন্তু রায়হান যে এতো পরিমাণে হারামি বের হবে তা সে জানতো না। রায়হান তো আইরাতকে বিয়ে করতে পারে নি আর তার জন্যই নিজের মনে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। আইরাতের চাচার বাড়িতে সে জাসুছ লাগিয়েছে। সে সব খবরাখবর এতোদিন ধরে রায়হান কে দিয়ে আসছিলো। কিন্তু রায়হানের থেকেও আব্রাহাম বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। অর্থাৎ রায়হান তার কিছু চেলাপেলা দের কে আইরাতের চাচার বাড়ির ওপর নজর রাখতে বলেছিলো কিন্তু আব্রাহাম রায়হান-তার সব গার্ড”স, এমন কি আইরাতের চাচার বাড়িতে সব জায়গায় A-Z বডিগার্ড দের পাহাড়া দিয়ে রেখেছে। পান থেকে চুন খসার আগেই সেই খবর আব্রাহামের কানে পৌঁছে যাবে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।
আজ একজন লোক সোজা রাশেদের হাতে পরে। রাশেদ তাকে ধরে বেধে রেখেছিলো। আব্রাহাম কে ফোন দিয়ে বলে দেয়, আব্রাহাম সেখানে চলে যায়। প্রথম চান্স তো জেলের আসামী দেরও দেওয়া হয়। আব্রাহাম প্রথমে ভালোভাবেই জিজ্ঞেস করেছিলো। বলে নি, কিন্তু তারপর হাতুড়ি দিয়ে তার এক পায়ের সবগুলো আঙুল থেতলে দেওয়া হয়েছে তারপর গরগর করে সব বলে দিয়েছে। আর যখন আব্রাহাম শুনলো যে ” রায়হান আব্রাহাম-আইরাতকে আলাদা করতে চায়” তখন যেনো আব্রাহাম আর ঠিক থাকতে পারলো না। একদম কুরবানির গরুর মতো করে কেটে দিয়েছে লোকটাকে। আর কি একদম সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছে সে। আর আব্রাহামের কানে যেনো তাদের আলাদা হবার কথা টাই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলো না। তাই রাগের বসে নিজের রক্তমাখা হাত নিয়ে আইরাতের সামনে এসে পরেছিলো। আর আইরাতের এই দশা।

আব্রাহাম শাওয়ার অন করে দিয়ে শূন্য গায়ে পানির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়ে আছে। পানির বিন্দু গুলো সারা বডিতে বেয়ে বেয়ে পরছে তার। কতোক্ষন এভাবে থেকেই আব্রাহাম একটা গ্রে কালারের টি-শার্ট পরে টাওয়াল দিয়ে তার চুল গুলো মুছতে মুছতে বের হয়ে পরে।

রাগের চোটে আব্রাহাম কিছু খায়ও নি। সে ল্যাপটপ নিয়ে সোফাতে বসে পরে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষন পর আইরাতের জ্ঞান ফিরে এলে আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের কাছে চলে যায়। আইরাত পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। মাথায় হাত দিয়ে কোন রকমে বসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের পেছনে বালিশ রেখে তাকে হেলান দিয়ে শুইয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; Feeling better?!

আইরাত;; হ্যাঁ আগে থেকে ভালো আছি।

আব্রাহাম;; হাজার বার, হাজার বার বারণ করলাম এতো ফুচকা খেয়ো না এতো ফুচকা খেয়ো না। কিন্তু না তুমি তো নিজের মর্জির মালিক। ইচ্ছে মতো খেলে এখন বুঝো মজা। ভমেট করেছো আমাকে বলো নি কেনো?

আইরাত;; আমি তো আ………..

আব্রাহাম;; না মানে প্রব্লেম কি কথা শুনবে না তুমি। বাচ্চা তুমি যে কিছু দেখলেই এভাবে লাফাও। বড়ো হয়েছো বুঝো না। কাল থেকে না না আজ থেকে এখন থেকেই বাইরের সব জিনিস খাওয়া বন্ধ। কোন আজাইরা জিনিস খাবা না। শুধু হ্যালথি খাবার খাবে। মরিচ হাতে দেখলে হাত কেটে দিবো। ঝাল খাবে না। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে রাখবে, ছাদে যাওয়া বন্ধ সেটা অনেক উঁচু, আর ব্লাড যেখানে আছে তার থেকে একশ হাত দূরে থাকবে।

আইরাত;; __________________________

আব্রাহাম;; বুঝেছো কথা?

আইরাত;; 😔😔

আব্রাহাম;; আবার কি হলো?

আইরাত;; আপনি বকা দিছেন কেনো 🥺🥺😭

আব্রাহাম;; আরে….

আইরাত;; আপনি যেভাবে রুটিন বানিয়ে দিলেন এর থেকে আমি মরেই যাই। আমি এভাবে থাকতে পারবো না। ছাদে না গেলে আমি তো দম আটকে মরে যাবো। আর ঝাল কমিয়ে খাই কিন্তু খাই। তা নাহলে আমি কি খাবো। (নাক টানতে টানতে)

আব্রাহাম;; আইরাত রাগ তুলবে না আমার খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। এমনিই আমার মেজাজ ভালো না।

আইরাত;; সরি 😰

আব্রাহাম বেশিই চিল্লা-পাল্লা করে ফেলেছে আইরাতের ওপর। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। তারপর মাথাতে চুমু দিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; সরি রাগের মাথায় চিল্লিয়ে ওঠেছি। আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যখন তুমি সেন্স হারালে। আমি ভেবেছি না জানি কিনা কি হয়ে গেলো।

আইরাত;; ছাড়ুন আমাকে।

আইরাত উঠে আসে।

আইরাত;; আব্রাহাম সত্যি সত্যি বলবেন। কাকে মেরে এসেছেন আপনি?

আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; আব্রাহাম বলুন প্লিজ। চুপ করে থাকবেন না। আমি জানি কিছু তো একটা হয়েছে অবশ্যই, বলুন না। কি হয়েছে, আবার কাকে মেরে এসেছেন। আমি আপনার হাতে তখন রক্ত দেখেছি।

আব্রাহাম;; রায়হানের একজন লোককে। তোমার বাড়িতে সবার ওপর নজর রাখছিলো। আমার গার্ড রা আবার তাদের ওপর নজর রাখছিলো তাই আজ রাশেদের হাতে-নাতে একদম ধরা পরেছে। আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তাই মেরে দিয়েছি।

আইরাত;; তাকে ভালোভাবে বুঝালেও তো হতো নাকি?

আব্রাহাম;; কিহ? আমার এখন হাসি পাচ্ছে তোমার কথা শুনে।

আইরাত;; 😒😒

আব্রাহাম;; একটা কথা মাথায় রেখো এখানে না “ভালো” বলে কোন শব্দ নেই বুঝলে। আর কাকে বুঝাবো, কেনো বুঝাবো 😆৷ ছেড়ে দাও এইসব তুমি বুঝবে না।

আইরাত;; তাই বলে একটা লোককে এভাবে মেরে দিবেন। হাত কাপে না আপনার মানুষ মারতে?

আব্রাহাম;; না কাপে না।

আইরাত;; ইশশশ আমার তো দেখেই গা গুলিয়ে যায়। ইয়াক।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তবে বাড়ি ফাকা মানে শশুড়আব্বু-আম্মু নেই বাড়িতে।

আইরাত;; হ্যাঁ তারা বাইরে গিয়েছেন মানে চাচির মায়ের বাড়ি আর কি। আমাকে ফোন করেও বলেছিলেন।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা। বাই দি ওয়ে তোমার ফোন টা দাও।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; ট্রেক করবো আমি।

আইরাত;; কি আপনি আমার ফোন ট্রেক করবেন কেনো? আমি কি করেছি?

আব্রাহাম;; আরে আস্তে। মানে কেউ ফোন দিলে বা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলে বা যা কিছুই হলেই আমি জানতে পারবো সো আমার লাগবে দাও।

আইরাত;; মানে কি এইসবের?

আব্রাহাম তার একহাতে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে গালে ধরে নিজের কপালের সাথে আইরাতের কপাল ঠেকিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; Because i Don’t wanna lose you Babygirl…..

আইরাত;; _____________________

আব্রাহাম;; আমি হারাতে পারবো না তোমাকে। কখনো নাই। কোন ক্রমেই না।

আইরাত;; এর সাথে আমার কি সম্পর্ক?

আব্রাহাম;; তা তুমি বুঝবে না।

এভাবেই চলে যায় সেইরাত। পরেরদিন সকালে আব্রাহামের ঘুম ভাংে ফোনের আওয়াজে। আব্রাহামের চোখ খুলতেই দেখে আইরাত তার বুকে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। আব্রাহাম আস্তে করে আইরাতকে সরিয়ে ফোন রিসিভ করে। যার যা শুনে তাতে আব্রাহামের নিজের কানেও বিশ্বাস হয় না। আর এটা আইরাতের স্বভাব যে আব্রাহাম যদি আইরাতের পাশে থেকে উঠে চলে যায় তাহলে আইরাত টের পেয়ে যায় আর তার ঘুম ভেঙে যায়। আইরাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। দেখে আব্রাহামের কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।

আইরাত;; আব্রাহাম..!

আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঘুড়ে তাকায়৷

আইরাত;; কি হয়েছে আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?

আব্রাহাম;; না মানে…..

আইরাত;; আব্রাহাম কি হয়েছে এমন করছেন কেনো? চিন্তিত আপনি কিছু নিয়ে? কি হয়েছে, কে ফোন করেছে?

আব্রাহাম;; লাশ পাওয়া গেছে।

আইরাত;; লাশ? কিসের লাশ, কার লাশ?

আব্রাহাম;; ____________________

আইরাত;; আব্রাহাম কিছু তো বলুন প্লিজ। এভাবে চুপ করে থাকবেন না।

আব্রাহাম;; রাশেদ ফোন করেছিলো বাড়ির কাছে লাশ পাওয়া গেছে।

আইরাত;; কাদের লাশ? (কিছুটা চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম;; শশুড়আব্বু-আম্মুর।

আইরাত;; কিহহহহ?

আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত ধপ করে নিচে বসে পরে। আইরাত কি শুনলো যেনো তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। কি বলছে আব্রাহাম এগুলো। আইরাতের যেনো মাথায় পুরো আকাশ টা ভেঙে পরেছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এখন আইরাতকে সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য। আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসে পরে।

আব্রাহাম;; আইরাত প্লিজ সামলাও নিজেকে। এভাবে এখনই ভেঙে পড়ো না। আমাদের সেখানে যেতে হবে। তারপর দেখি কি হয়েছে। প্লিজ এভাবে ভেঙে পরো না এখনই।

আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন সকাল সকাল এগুলো ভালো লাগে না। প্লিজ আমার সাথে মজা করবেন না। কি বলছেন আপনি এগুলো? মানে আমার চা চাচ্চু আর চা চাচি কী কীভা কীভাবে তারা। আর মানে কা কা কাল না ভালো ছি ছিলো আজ কীভাবে কি? রনিত, রনিত কোথায়? ও কোথায়, ওকে পাওয়া গেছে? আব্রাহাম রনিত কোথায়?

আব্রাহাম;; আইরাত আমি জানি না কিছু এখন আমাদের আগে সেখানে যেতে হবে তারপর বাকি কিছু।

আইরাত;; জলদি চলুন।

আইরাত কোন রকমে উঠে ফ্রেশ হয়ে আব্রাহামের সাথে বের হয়ে পরে। আইরাত বাইরে এসেও ঠিক ভাবে দাড়াতে পারছিলো না। পা গুলো যেনো রীতিমতো কাপছে। ইলাকে এখনো খবর টা বলা হয় নি। উনি বয়স্ক মানুষ। এই কথা বললে সামলাতে পারবেন না তাই আগেই কিছু বলা হয় নি। আব্রাহামের পাশেই গাড়িতে আইরাত বসে আছে। দরদর করে ঘেমেই যাচ্ছে। আইরাত তার হাতের উলটো পাশ দিয়ে কোন রকমে নিজের কপাল আর মুখ টা মুছে ফেলে।

আব্রাহাম;; আইরাত প্লিজ শান্ত হও, এভাবে থাকলে তুমি নিজে অসুস্থ হয়ে পরবে। প্লিজ সামলাও নিজেকে।

আইরাত এবার হু হু করে কেদেই দিলো।

আইরাত;; কীভাবে সামলাবো আব্রাহাম। আমি জীবনেও আমার বাবা-মার আদর পাই নি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি এই চাচ্চুই আমার সব ছিলো। চাচি আগে দেখতে না পেলেও আমাকে এখন চাচি ঠিকই ছিলো আমার সাথে। আমার আপন বলতে চাচা-চাচি ছাড়া কেউ ছিলো না। আর এখন কিনা…….! কাল আমার সাথে কথা বললো আজ এসে পরার কথা ছিলো তাদের কিন্তু এখন কিনা লাশ। না জানি রনিত কি হালে আছে এখন।

আব্রাহাম;; চিন্তা করো না রনিত কে পাওয়া গেছে। তারা আমার গার্ডের কাছেই আছে সেখানে।

আইরাত;; আব্রাহাম, প্লিজ দ্রুত চলুন।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আব্রাহাম আর আইরাত ইকবাল সাহেবের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থামতেই আইরাত দ্রুত নেমে পরে। আইরাতকে দেখে রনিত দৌড়ে এসে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। রনিত কান্না করছে অনেক। আইরাত রনিতের সামনে বসে রনিতের চোখের পানি গুলো মুছে দিতে দিতে বলে ওঠে….

আইরাত;; কি হয়েছে ভাই? কে কে এগুলো করেছে দেখেছিস কাউকে? কীভাবে হলো?

রনিত;; জানি না আপু। কাল আমরা গাড়িতে করে আসছিলাম। বাবা দেখলো যে একটা গাড়ি অনেক সময় ধরে আমাদের গাড়ির পিছু নিচ্ছে। তবে আমরা যেই না আমাদের বাড়ির সামনে এসে থামলাম। তখনই ওই গাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন লোক এসে পরলো আমাদের সামনে। আম্মুর সাথে কি যেনো কথা বলে তারা। হয়তো আম্মু ওদের আগে থেকেই চিনতো। একসময় আম্মুর সাথে কথা কাটাকাটি লেগে গেলো তাদের। তারা আব্বু-আম্মু সবাইকেই মেরে দেয়। জানো আমি না খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ছুটে এসে গাড়ির ডিকির পিছনে লুকিয়ে পরি। তাই তারা আমাকে দেখতে পারে নি। নইলে তো আমাকে, আমাকেও তারা………….

আইরাত;; চুপ চুপ চুপ।

আইরাত রনিত কে জড়িয়ে ধরে চুপ করায়। তারপরই দেখে যে বাড়ির আঙিনায় দুটো লাশকে সাদা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দেয়া হয়েছে। সাসা কাপড়ের ওপর দিয়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। তা দেখেই আইরাতের বুকের ভেতর টা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। আইরাত রনিত কে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়। রনিত আব্রাহামের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। বাচ্চা টা অনেক ভয় পেয়ে আছে। আইরাত কাপা কাপা পায়ে লাশ গুলোর দিয়ে এগিয়ে যায়। আইরাতের সেখানে যেতেই লাশ গুলোর মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেওয়া হয়। রক্তে মাখা লাশ হয়ে আছে ইকবাল সাহেব আর তার স্ত্রী কলি। আইরাত তাদের দেখেই চিৎকার দিয়ে ওঠে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত তো কোন কূল কিণারা খুঁজে পাচ্ছে না। পাগলের মতো করে কেদেই যাচ্ছে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতকে ধরে কিন্তু আইরাত ইকবাল সাহেবের গালে ধরে চাচ্চু চাচ্চু করে ডেকেই যাচ্ছে। কলির কাছে গিয়ে ডাকছে। কিন্তু লাভ নেই, তারা আজীবনের জন্য চলে গিয়েছে সেই না ফেরার দেশে। আইরাতের কানতে কানতে নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এভাবেই এখানে আইরাত থাকলে সে অসুস্থ হয়ে পরবে। তাই এক প্রকার জোর করেই আইরাতকে আব্রাহাম নিয়ে এসে পরে৷ ইকবাল সাহেবের থেকে কলিকে যেনো আরো বাজে ভাবে খুন করা হয়েছে। কলির লাশের ওপর থেকে সাদা কাপড় টা উঠিয়ে নিলে আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে তার বুকের সাথে চেপে ধরে। আইরাতের কান্না করতে করতে খুব খারাপ দশা হয়ে গেছে। আব্রাহাম কোন রকমে তাকে সামাল দিচ্ছে।





চলবে~

(তো পোলাপান রা যারা যারা ভাবছিলা যে আইরাত প্রেগন্যান্ট তাদের ভাবনা-চিন্তায় এক বালতি সমবেদনা ঢাইলা দিলাম 🌊🤣)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here