নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৪৮

0
895

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৮

তারপরের দিনই আব্রাহাম সবকিছু রেডি করে ফেলে। যে করেই হোক লন্ডন যেতে হবে। তবে আইরাত কে এই ব্যাপারে কিছুই বলা হয় নি। সে অযথা চিন্তা করবে তাই। আব্রাহামের কাছে বর্তমানে রায়হানের মূল ঠিকানা বা ফোন নাম্বার সব আছে। ইন ফ্যাক্ট ফ্লাইটও রেডি। আব্রাহাম আজ যদি রায়হান কে নিজের সামনে পায় তাহলে কি যে করবে বলা বড়ো দায়। এখন আব্রাহাম ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে আছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন একটা করছে। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশে বসে।

আইরাত;; কি করছেন?

আব্রাহাম;; আমাকে ইমিডিয়েটলি লন্ডন যেতে হবে।

আইরাত;; কিন্তু কেনো?

আব্রাহাম;; কাজ আছে ইম্পর্ট্যান্ট।

আইরাত;; কিন্তু হুট করে লন্ডন! ভিসা……

আব্রাহাম;; ভিসা-পাসপোর্ট সব রেডি। ইভেন ফ্লাইটও।

আইরাত;; কবে আসবেন?

আব্রাহাম;; একদিন পর। কেননা আজ সেখানে গিয়ে আবার আজকেই এখানে বেক করা কঠিন। তো আগামীকাল আসবো।

আইরাত উঠে আব্রাহামের পাশ থেকে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ফেলে। টেনে নিজের কাছে বসিয়ে দেয়। আইরাত কে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে তার দুই হাত নিজের দুই হাতের ভাজে রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আইরাত;; কই কিছু না তো।

আব্রাহাম;; মন খারাপ?

আইরাত;; আমার না কিছুই ভালো ঠেকছে না। কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে সামনে বড়ো কোন বিপদ আছে। মানে কিছু তো একটা হবেই। আমার মন কু ডাকছে। কোন কিছুতেই আমি মন বসাতে পারছি না। এক অজানা চিন্তা-ভয় মনে এসে বাসা বাধছে।

আইরাতের কথা শুনে আব্রাহাম মুচকি হাসে। আইরাতের গালের পাশে নিজের হাত রেখে দিয়ে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; এগুলো তোমার মনের ভূল ছাড়া আর কিছুই না ওকে। ভয় পেয়ো না কিছুই হবে না, কিচ্ছু না।

আইরাত;; আচ্ছা আপনি লন্ডন কেনো যাচ্ছেন বলুন না?
আব্রাহাম;; রায়হান লন্ডনে আছে।

আইরাত;; ____________________।

আব্রাহাম;; আমি জলদি এসে পরবো।

আইরাত;; আমি যাই, রনিত কে খাওয়াতে হবে আর দাদি কে মেডিসিন দিতে হবে। আপনিও নিচে আসুন।

আব্রাহাম;; আসছি।

আইরাত উঠে রুমের দরজার দিকে যেতে ধরবে তখনই ইলা কিছুটা চিন্তা মাখা মুখ নিয়েই রুমের ভেতরে আসেন।

ইলা;; আব্রাহাম…!

আব্রাহাম;; বলো দাদি।

আইরাত;; দাদি তোমরা কথা বলো আমি যাই।

আইরাত চলে আসে সেখান থেকে। ইলা আব্রাহামের কাছে বসে পরে।

ইলা;; আব্রাহাম রাগ করিস না!

আব্রাহাম;; দাদি হয়েছে কি?

ইলা;; রুকশানা এসেছে (রায়হানের মা)

আব্রাহাম;; উনি এখানে কেনো?

ইলা;; আমি জানি না হলরুমেই বসে আছে। তোর সাথে দেখা করতে এসেছে। প্লিজ সোনা তুই রাগ করিস না।

আব্রাহাম;; দাদি! মানলাম আমি একটু রাগি কিন্তু এতো টাও না যে যার তার সাথে খারাপ বিহেভ করে দিবো। যাই হোক উনাকে পাঠিয়ে দিয়ো।

ইলা;; আচ্ছা।

ওদিকে আইরাত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। নিচে নেমেই দেখে একজন মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে। আইরাত তাকে চিনে না। তাই সাধারণতই আইরাত কপাল কুচকে সেখানে যায়। আইরাতের কিছু বলার আগেই রুকশানা হাসিমুখে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়।

রুকশানা;; তুমি বুঝি আব্রাহামের বউ?

আইরাত;; জ্বি।

রুকশানা;; বাহহ, মাশআল্লাহ ভারি মিষ্টি দেখতে তুমি। (আইরাতের গালে হাত রেখে)

আইরাত;; জ্বি কিন্তু আমি আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। (আমতা আমতা করে)

রুকশানা;; না চেনারই কথা। আর এছাড়াও চিনেই বা কি করবে তেমন কিছু বা কেউই লাগি না আমি তোমার।

আইরাত;; আপনি কি আব্রাহামের কিছু হন?

রুকশানা;; সৎ মা। আমি রায়হানের মা।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা। আপনি দাঁড়িয়ে কেনো বসুন বসুন।

রুকশানা;; না না মা আমি ঠিক আছি।

আইরাত;; আপনি কি আব্রাহামের সাথে দেখা করতে এসেছেন?

রুকশানা;; হ্যাঁ।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা। আপনি বসুন।

আইরাতের এখন ঠিক কি করা উচিত জানা নেই তার। রায়হান যে তার চাচা-চাচি কে মেরে ফেলেছে তাই যেনো আইরাতের মাথায় এখন ঘুরছে। রুকশানার ব্যাবহারেই বুঝা যাচ্ছে যে সে কত্তো নরম মনের একটা মানুষ। কিন্তু রায়হান এমন জানোয়ার হয়েছে কেনো। তবুও একজনের রাগ আরেকজনের ওপর তুলতে নেই তাই আইরাত চুপ থাকে। রুকশানার সাথে যথেষ্ট ভালো আচরণ করে। আইরাত টুকটাক কথা বলছিলো তখনই ইলা ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। রুকশানা ইলা কে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।

রুকশানা;; মা…!

ইলা;; হ্যাঁ আব্রাহাম ওপরেই আছে তুমি যাও।

রুকশানা;; জ্বি।

রুকশানা আব্রাহামের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আইরাত কতোক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থেকে ইলা কে বলে….

আইরাত;; দাদি..!

ইলা;; হুমম

আইরাত;; আব্রাহামের সাথে কি কথা বলতে এসেছেন উনি?

ইলা;; জানি না রে নাতবউ।

আইরাত;; আব্রাহাম রাগারাগি করবে না তো?

ইলা;; তাই তো বলে এলাম। দেখি কি হয়।

আইরাত;; আচ্ছা ধরো মেডিসিন নাও।

রুকশানা গিয়ে আব্রাহামের রুমে চলে যায়। আব্রাহাম করিডরে ছিলো। রুকশানা কে দেখে সে ভেতরে আসে।

আব্রাহাম;; কেমন আছেন?

রুকশানা;; আলহামদুলিল্লাহ বাবা, তুমি?

আব্রাহাম;; আপনার গুনোধর ছেলে ভালো আর থাকতে দিলো কই।

রুকশানা;; ___________________

আব্রাহাম;; তো আমার কাছে এতো বছর পর কি মনে করে?

রুকশানা;; কি করবো বাবা বলো, ছেলে হাজার ভুল করলেও। এমনকি মাকে ভুলে গেলেও মা তো আর তা করতে পারে না তাই না।

আব্রাহাম;; কথা টা বলার জন্য আমাকে মাফ করবেন কিন্তু আপনি আপনার ছেলের ভালোভাবে লালন-পালন করতে পারেন নি। একদম না। তা নাহলে এমন অমানুষ হতো না।

রুকশানা;; আমি জানি রায়হান আর তোমার মাঝে কিছুই ঠিক নেই, কিছুই না। কিন্তু তবুও আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে এসেছি।

আব্রাহাম;; বলুন।

রুকশানা;; আব্রাহাম বাবা এখনো কি রাগ করে আছো আমার সাথে?

আব্রাহাম;; না। হ্যাঁ যখন ছোট বেলা রৌনক চৌধুরী আপনাকে বিয়ে করে আনে তখন সবার জন্যই ঘৃণার
পাহাড় জন্ম নিয়েছিলো আমার মনে। কিন্তু যখন বড়ো হলাম, বুঝতে শিখলাম তখন বুঝলাম যে আপনারও যাওয়ার মতো কোন জায়গা ছিলো না তাই বাধ্য হয়েই আপনি এখানেই থেকেছেন। নয়তো একটা সুখের সংসার কে এভাবে তছনছ করে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আপনাও ছিলো না।

রুকশানা;; আমি জানি আমি কখনোই তোমার মায়ের জায়গা নিতে পারবো না। আর আমি নিতে চাইও না। যার‍ যার মায়ের প্রতি একটা আলাদা মায়া থাকে। হয়তো আমার ছেলের তাও নেই।

আব্রাহাম;; আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কেনো এসেছেন।

রুকশানা;; বাবা, আমি জানি রায়হান আইরাতের চাচা-চাচি কে মেরেছে। পুলিশ অফিসার রা আমার বাসাতেও এসেছিলো তাদের মুখ থেকেই সব শুনেছি। সব জানি আমি। তুমি তো রায়হান কে মেরেই ফেলবে যদি তাকে কাছে পাও। এটাও আমি জানি। কিন্তু কি করবো বলো মা আমি। ছেলের সাত খুন মাফও করে দিতে পারি। এতে হয়তো তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো। কিন্তু………

আব্রাহাম;; কি হয়েছে তা সোজাসাপটা বলুন।

রুকশানা;; আব্রাহাম বাবা, আমি তোমার সামনে হাত জোর করছি প্লিজ রায়হান কে মেরো না। আমি জানি ও অনেক বেশি অন্যায় করেছে। কিন্তু আমি তোমার কাছে হাত জোর করে মিনতি করছি প্লিজ ওকে মেরো না। (হাত জোর করে)

আব্রাহাম গিয়ে রুকশানার হাত দুটো ধরে ফেলে।

আব্রাহাম;; না না এভাবে হাত জোর করবেন না। মানলাম আপনি আমার মা না কিন্তু আমার মায়ের মতোই। প্লিজ এভাবে হাত জোর করে আমাকে লজ্জা দিবেন না।

রুকশানা কেদে মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে।

রুকশানা;; রায়হান কে মেরো না আব্রাহাম, আমার কোল খালি হয়ে যাবে। রায়হান শান্তি পাওয়ার যোগ্য আমি জানি কিন্তু ওকে একদম মেরে দিও না। আমি অনুরোধ করছি।

আব্রাহাম;; আমি ওকে মারবো না।

রুকশানা;; সত্যি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ মারবো না ওকে আমি। ছেড়ে দিলাম।

রুকশানা;; ধন্যবাদ বাবা। আর পারলে আমাকেও মাফ করে দিও। এতে আইরাতের সাথেও ভুল হবে কেননা ওর বাবা-মা সমতুল্য চাচা-চাচি কে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার ওপর আজ হয়তো স্বার্থপর চিহ্ন টা লেগে গেলো।

আইরাত;; একদম না।

আব্রাহাম আর রুকশানা পেছনে তাকিয়ে দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত এগিয়ে আসে।

আইরাত;; আমার কথা ছাড়ুন। আন্টি আমি বুঝতে পারছি যে আপনার কেমন লাগছে। পৃথিবীতে এমন কোন মা ই নেই যে নিজের ছেলের মরণের কথা শুনে ছুটে আসবে না। আপনিও এসেছেন ঠিক আছে। হ্যাঁ মানলাম রায়হান আমার চাচা-চাচি কে মেরেছে। তবে খুনের প্রতিশোধ যে সবসময় খুন করেই নিতে হবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না। মাফ করে দেওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো কাজ। আর যে মাফ করে দেয় তার মাথা এমনিতেই উঁচু হয়ে যায়। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন রায়হানের গায়ে একটা আচড় অব্দি আসবে না। বাবা-মা বা নিজের আপন কেউ নিজের থেকে চিরতরে দূরে সরে গেলে কেমন লাগে তা আমি বুঝি। আমি চাই না যে এই বুঝটা আরো কেউ বুঝুক। আব্রাহাম কাউকে মারবে না 😊।

রুকশানা কেদে কেদে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে।
তারপর সবার সাথে কথা বলে রুকশানা চলে যায়।
আইরাত বাইরে রুকশানা কে বিদায় দিয়ে এসে পরে। নিজের ওরনা তে টান লাগলে আইরাত তাকিয়ে দেখে রনিত গোলগোল চোখে তার ওরনা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত তার সামনে ঝুকে পরে।

আইরাত;; কিরে মোটু কি করিস এখানে? (গালে ধরে)

রনিত;; উনি কে?

আইরাত;; বললেই কি তুই চিনবি?

রনিত;; আম্মু-আব্বু কে এই মেরেছে?

আইরাত কি বলবে খুঁজে পায় না। রনিতের সামনে এক হাটু ভাজ করে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে….

আইরাত;; না না, একদম না। কে বলেছে এইসব কথা। কেউ মারে নি।

রনিত;; আমি শুনেছি।

আইরাত;; কেউ কাউকে মারে নি রনিত। তুমিই না বলেছিলে যে ওরা পাঁচজন ছিলো। তাহলে এদের মাঝে এই কি করে আসবে বলো। এই তো একা। আর ওরা সবাই ছেলে ছিলো তাই না। কেউ কাউকে মারে নি।

রনিত;; আপু আম…….

আইরাত;; সবজি খেতে দিয়েছিলাম তোকে খেয়েছিস?

রনিত;; 🤪

আইরাত;; এখন যদি সবগুলো সবজি না খাস তুই তাহলে আমি তোকে মেরে আলু ভর্তা বানাবো।

রনিত দৌড়ে চলে যায়। আর হ্যাঁ রনিত মোটাসোটা।

আইরাত;; এই মোটু দাড়া, একদম দৌড়াবি না দাড়া।

আইরাত রনিতের পেছনে পেছনে ছুটে চলে যায়। আইরাত হলরুমে এসে ওপরের দিকে তাকায়। আব্রাহাম না জানি কি করছে। সে রুমে চলে যায়।
গিয়েই দেখে আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো তার বাইরের দিকে। আইরাত গিয়ে আব্রাহামের কাধে হাত রাখে….

আইরাত;; কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; মায়েরা এতো অদ্ভুত হয় কেনো?

আইরাত;; কারণ আল্লাহ তাদের সবার থেকে আলাদা ভাবে বানায় তাই।

আব্রাহাম;; না মানে তুমি ভাবতে পারছো যে দু-দুটো মানুষ কে খুন করা হয়েছে আর তারই মা কিনা আজ এসে নিজের ছেলের জন্য আহাজারি করছে আমার কাছে।

আইরাত;; আপনি লন্ডন রায়হান কে মারার জন্য যেতে চাইছিলেন তাই না?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; ছেড়ে দিন। যেভাবে আছে সেভাবেই থাক। মাফ করে দিন। আর ঝামেলা করতে হবে না। হয়তো আমার চাচা-চাচির ভাগ্যে তাদের মৃত্যুটা এভাবেই লিখা ছিলো তাই মারা গেছে। আমি তো এই ভেবে খুশি যে আমার রনিতের কিছুই হয় নি।

আব্রাহাম;; কোথায় ও??

আইরাত;; এক একটা সবজি তুলে তুলে মুখের সামনে নিয়ে দেখছে তারপর নাক-মুখ কুচকাচ্ছে আবার রেখে দিচ্ছে।

আব্রাহাম;; তুমিও না বাচ্চাদের কি না কি খেতে দাও। দরকার কি সবজি খাওয়ার, চকোলেট দাও।

আইরাত;; হ্যাঁ আমার তো মাথা খারাপ হয়েছে। বেশি করে বাইরের জিনিস খাওয়াই ওকে।

আব্রাহাম;; হয়েছে, নিজে কি কম খাও নাকি!?

আইরাত;; আগে থেকে অনেক কমেছে আমার।

আব্রাহাম;; আমাকেও আমার মা আর দাদি মিলে ঠেসে ঠেসে আগে সবজি খাওয়াতো। ধুর কি ঘাস-ঘুস এগুলোও মানুষ খায়।

আইরাত;; না গরু-ছাগলে খায়।

আব্রাহাম;; আমাদের বেবি হলে না জানি তুমি কি করো।

আইরাত;; এই চুপ করুন। আপনি বাইরে যাবেন না তাই আমার হ্যাপি লাগছে।

আব্রাহামের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসে। সে আইরাতের কোমড়ে একটান দিয়ে নিজের বুকের ওপর ফেলে দেয়।

আব্রাহাম;; ওহ তাই না, আমি বাইরে যাবো না এতে তুমি খুব খুশি কেনো বলোত?

আইরাত;; আব..না মানে, মানে আসলে আমি তো।

আব্রাহাম;; হুম হুম তুমি কি বলো।

আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে-পেটে সুরসুরি কাটতে লাগলো। আর আইরাত ছটফট করছে, আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম যেনো আরো আকড়ে ধরে।

আইরাত;; আব্রাহাম কি করছেন ছাড়ুন। আমার কাতুকুতু লাগছে 😆😆 ছাড়ুন।

আব্রাহাম;; না বাইরে যেহেতু যাবোই না তাহলে সারাদিন তোমার সাথে চিপকে থাকি। (আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে)

ইলা;; আইরাত! আইরাত!

আইরাত;; ওই যে দাদি ডাকছে। আব্রাহাম ছাড়ুন তো আমাকে।

আব্রাহাম আইরাতের ঘাড়ে চুমু দিয়ে দেয়। আইরাত কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে আব্রাহামের দিকে একটা ভেংচি কেটে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে পরে।

আব্রাহাম মুচকি হেসে করিডরে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই নিজের ফোন বেজে ওঠে। আব্রাহাম গিয়ে তা ধরে। আননোন নাম্বার।

আব্রাহাম;; হ্যালো..

রায়হান;; হ্যালোওওওওওও বড়োভাই।

আব্রাহাম;; কেনো ফোন করেছিস?

রায়হান;; আরে আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমি তো তুই কেমন আছিস তা জানার জন্য ফোন করেছি।

আব্রাহাম;; হুমম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আর তোকেও ভালো রেখেছি।

রায়হান;; আমি তো ভালোই থাকবো।

আব্রাহাম;; হুমম। মরনের মুখ থেকে ফিরে আসলে কেউ না খুশি থেকে পারে বল।

রায়হান;; মানে?

আব্রাহাম;; বেশ ভালো হয়েছে যে তুই আমাকে কল করেছিস। আর শোন কথা বলার পর সিম ভেঙে ফেলার দরকার নেই। আমি তোকে ট্রেস করবো না। ছেড়ে দিয়েছি তোকে। নয়তো এতোক্ষনে তুই দুনিয়ার ওপারে থাকতি।

রায়হান;; মানে কি এইসবের?

আব্রাহাম;; শুধু জন্ম দিলেই যেমন বাবা-মা হয়ে যায় না ঠিক তেমনই মানুষের পেটে থেকে জন্মালেও সবসময় মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়া যায় না। মানুষের পেট থেকে অমানুষ হয়ে বের হয়েছিস তুই।

রায়হান;; যা ইচ্ছে বল।

আব্রাহাম;; তোর মা এসেছিলো আমার কাছে।

রায়হান;; কিহ, কেনো এসেছিলো?

আব্রাহাম;; তোর প্রাণ ভিক্ষা চাইতে আর কি।

রায়হান;; কি বলতে চাস তুই?

আব্রাহাম;; তুই লন্ডনে আছিস। এতোক্ষনে আমি তোর সামনে থাকতাম। আর তুই থাকতি লাশ হয়ে। কিন্তু তোর মা এসে আমার কাছে যা বললো তাতে তোকে মারার জন্য আমার মন আর সাই দিলো না। ভাগ্য ভালো তুই মা এতো ভালো পেয়েছিস। সময় থাকতে মানুষের কদর করতে শিখ, সময় ফুরিয়ে গেলে আফসোস করেও লাভ নেই। ভালো থাক।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আর ওইদিকে রায়হান কি করবে ভেবে পায় না। রাগ হচ্ছে তার। প্রথমত আব্রাহাম এতো জলদি তার ঠিকানা পেয়েও গেছে আর কি দরকার ছিলো রুকশানার আব্রাহামের কাছে গিয়ে এগুলো বলার। রায়হান রাগে তার হাতে থাকা ফোন টা ছুড়ে মারে। আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আব্রাহাম ভিক্ষে দিয়েছে তাকে, ভিক্ষে। আব্রাহাম তার জীবন তাকে ভিক্ষে দিয়েছে। এটা ভাবতেই যেনো রায়হানের মাথায় আগুন ধরে উঠছে। রায়হান রাগে রুমে শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে তখনই হাই হিলের টগবগ শব্দ তুলে প্রীতি রুমে আসে। রায়হানের মুখ খানা দেখে বুঝলো যে বেশ রেগে আছে…..

প্রীতি;; রায়হান, সবকিছু ঠিক আছে তো?

রায়হান;; কিচ্ছু ঠিক নেই।

রায়হান রাগে চিল্লিয়ে ওঠে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ব্যাস টা ভেঙে ফেলে। প্রীতি ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।

রায়হান;; আমার মা ওই আব্রাহামের কাছে গিয়ে নাকি বলেছে যে আব্রাহাম যেনো আমাকে না মারে। তার মানে কি আমি কি আব্রাহাম কে দেখে ভয় পাই নাকি। ওই আব্রাহাম আমার সামনে আসলেই বা কি। আমি কম না। মা কেনো যে আব্রাহামের কাছে গেলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার।

প্রীতি;; আচ্ছা ঠিকআছে আগে তুমি শান্ত হও। ব্যাপার হাতের বাইরে যায় নি এখনো। তুমি ঠান্ডা করো মাথা। আর এভাবে হাল ছেড়ে দিলে হয় না। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। শান্ত হও।

রায়হান প্রীতির হাত খপ করে ধরে ফেলে নিজের দিকে নিয়ে আসে।

রায়হান;; আমার আইরাতকে চাই (দাত কটমট করে)

প্রীতি;; ওকে, ওকে ফাইন। সব হবে। আগে তুমি চুপ করো। রাগের মাথায় নেওয়া সব ডিসিশন খারাপই হয়। ঠান্ডা হও। আর এখন যে আব্রাহাম লন্ডন আসবে না তাতে আমাদেরই ভালো হয়েছে।

রায়হান প্রীতি কে ছেড়ে দেয়। প্রীতি একটা সিগারেট জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া উড়িয়ে দিয়ে রায়হানের পাশে এসে দাঁড়ায়।

প্রীতি;; আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে। এন্ড আই এম সিওর যে এটা কাজ করবে।


আব্রাহাম-আইরাত সেদিকে ভালোই আছে। আইরাত আগে থেকে তার চাচা-চাচি মৃত্যুর শোকে টা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। আব্রাহাম তাকে সবসময় হাসি খুশি রাখে। আগে ছিলো তিনজন এখন চারজন। রনিত আছে। আসলেই বাড়িতে একটা ছোট বাচ্চা থাকলে বাড়ির চেহারাই পালটে যায়। খুনশুটিতে দিন কাটছে। আব্রাহাম অফিসে যায় আবার আসে। মাঝে মাঝে আইরাতের জিদের ফলে তাকে অফিস কামাই দিতে হয়। আগে চকোলেট আনতে হতো একজনের জন্য এখন দুইজনের জন্য আনতে হয়। রনিতকে আব্রাহাম নিজের জান দেখে। মাঝে মাঝে এই দুই ভাই-বোনের কান্ড দেখে তো আব্রাহাম বলেই উঠে যে “”এই দুই পাগলের জন্য আমি নিজেও পাগল হয়ে যাবো””। তখন আর আব্রাহাম কে পায় কে। আইরাত আর রনিত মিলে ফাইট শুরু করে দেয়। আজ আব্রাহামের দাদার মৃত্যুবার্ষিকী। তাই ইলা আর আইরাত মিলে জমিয়ে রান্না করছে। আজ কোন স্টাফ রানবে না। আইরাত আর ইলা সকাল থেকেই সব শুরু করে দিয়েছে। আব্রাহাম যদিও না করেছিলো কিন্তু ইলা আর আইরাতের সাথে পায় নি। অনেক সময় ইলা রান্নাঘরে ছিলো তাই আইরাত ইলা কে হলরুমে এসির নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার ঘন্টা খানিক পর আইরাত ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। রনিত ওপরে আব্রাহামের কাছে। আইরাত ভাবলো গরমের দিন যেহেতু তাই সবার জন্য ঠান্ডা জুস নিয়ে যাক। ইলাকে জুস দিয়ে আইরাত দুটো গ্লাস নিয়ে ওপরে রুমে যায়। তবে রুমে গিয়ে রুমের দরজা খুলতেই আইরাতের মুখ হা। তার মাথা ঘোরাচ্ছে। পুরো রুম বালিশের ভেতরের তুলা দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চারিদিকে খালি তুলা আর তুলা। কিছু কিছু উড়েও যাচ্ছে। আর বিছানার ওপর তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম আর রনিত পিলো ফাইট করছে। দুইজনের হাতে দুটো বালিশ। আর তার ভেতরের তুলা নেই বললেই চলে। সব তুলা বাইরে বের হয়ে গেছে। আব্রাহাম-রনিত এতোক্ষন বালিশ নিয়েই এগুলো করছিলো আইরাতকে হঠাৎ এভাবে দেখে দুজনেই চুপ হয়ে যায়। আইরাত চোখ গুলো ছোট ছোট করে তাদের দুইজনের দিকে তাকায়। আইরাতের এমন চেহারা দেখে আব্রাহাম রনিত দুজনেই শুকনো ঢোক গিলে।

আইরাত এগিয়ে গিয়ে কোন রকম করে টি-টেবিলের ওপর জুসের গ্লাস দুটো রাখে। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম আর রনিত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েই আছে। এটা দেখে আইরাতের মাথা খারাপ হয়ে যায়।

আইরাত;; এইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই!! এগুলো কি? সারাদিন রান্নাঘরে এতো কাজ করার পর এখন এগুলো। ঘেমে নেয়ে শেষ হয়ে গেছি আমি। এখন এই রুম কে পরিষ্কার করবে। রুম নাকি কোন গরুর গোয়াল। কি একটা অবস্থা করেছে। এগুলো কে করবে এখন। আর কিছু ছিলো না খেলার জন্য। বাইরে বাগানে গিয়ে খেলেতে। দুইজনেই এগুলো কি করেছো। (অনেক চিল্লিয়ে)

আইরাতের চিল্লানোর ফলে আব্রাহাম আর রনিত দুইজনেই কানে আঙুল দিয়ে রেখেছে। আইরাত আরেকবার চিল্লিয়ে উঠলে আব্রাহাম আর রনিত দুজনেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কি আর করার আইরাত সব পরিষ্কার করে। তার যেনো নাকের পানি আর চোখের পানি এক। পুরো জঙ্গলি হয়ে গেছে। আইরাত ইনিয়ে-বিনিয়ে নিচে নেমে আসে। ইলা আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম-রনিত আইরাতকে দেখে হিহিহি করে হেসে দেয়। তারপর দুইজনেই হাই ফাইভ করে। আইরাতকে চেনা যাচ্ছে না। মাথায় এতো গুলো তুলা, মুখ টা কালো হয়ে গেছে। আব্রাহাম আর রনিত কে হাসতে দেখে আইরাত দেয় আরেক ধমক।

কি আর করার ইলা এদের কান্ড দেখে হাসছে। বিকেলের দিকে পুরো এলাকার যত গরিব-অসহায় মানুষ ছিলো তাদের সবাইকে ডেকে খাওয়ানো হয়েছে আব্রাহামের দাদার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে। এভাবেই দিন গেলো হাসি-খুশিতে। তবে কেনো জানি তাদের এই খুশিতে কালো ছায়া পরে গেছে। নজর লেগে গেছে কারো।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here