প্রেমের পাঁচফোড়ন💖 #পর্ব_৪০

0
1879

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#পর্ব_৪০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানার মুখে এমন কথা শুনে শান্তর মুখের ভঙ্গি বদলে গেলো
এসব কি বলছে ও,একবার রুপা এখন আবার সে নিজে??
রুপারটা না হয় মানলাম তাই বলে তারও
.
জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে শান্ত বললো আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড!
.
নাহ বলি সমস্যা নাই তো আপনার!
.
কথা শেষ করে আহানা হাঁটা ধরলো
শান্ত তার চুলগুলো ঠিক করে পিছু পিছু আসতেসে
আহানা এসে রুম ভর্তি মানুষের সামনে দাঁড়ালো
শান্ত আহানার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে গিয়ে সোফায় বসলো
আহানা হেসে রুপার রুমের দিকে চলো গেলো
স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললো শান্ত
শরবতের গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে নিলো,টেনসন ফ্রি!
আহানা রুপাকে নিয়ে আবার ফেরত এসে ওকে সোফায় বসিয়ে নিজেও বসলো
.
বড়রা কথা বলতেসে আর এর মাঝে রুপা নওশাদ মনে মনে প্রেম নিবেদন করছে
তার মাঝে আহানা শান্ত চোখ দিয়ে একজন আরেকজনকে গিলে খাচ্ছে,অবশেষে বড়দের আলাপ আলোচনায় এই ঠিক হলো যে ২সপ্তাহ পর কাবিন হবে যেহেতু রুপা গর্ভবতী ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি চুকাতে হবে
নওশাদ জব নেওয়া পর্যন্ত রুপা তার বাবার বাসায় থাকবে
এবার সবাই মিষ্টিমুখ করতেছে,আহানা ট্রে নিয়ে রুপার মা বাবা, নওশাদের মা বাবাকে মিষ্টি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো
করিডোরে কেউ একজন হাত বাড়িয়ে ওকে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে ধরলো
.
কি সমস্যা?
.
মিষ্টি খাব দাও,তোমার এত বড় সাহস বরের বড় ভাইকে মিষ্টি খাওয়াও না,বিয়ে ক্যানচেল করে দিব চিনো আমাকে?
.
আহানা মুচকি হেসে বললো আপনার এত বড় সাহস বরের বড় ভাবীকে ধমকান? একদম বিয়ে ক্যানচেল করে দিব
দুজনে হেসে দিলো একসাথে,তারপর আহানা মিষ্টি একটা শান্তর হাতে দিতেই দূর থেকে সেই এক দল মেয়েরা দাঁত কেলিয়ে বললো এই মিষ্টিতে কি আর দুলাভাইয়ের পেট ভরবে?
শান্ত কাশতে কাশতে আহানার হাতের ট্রে থেকে পানি নিয়ে খেয়ে চলো গেলো
আহানা মেয়েগুলোর দিকে না তাকিয়েই পালালো,মেয়েগুলো কথায় কথায় লজ্জা দেয়!
বিয়ে না হয়েও লজ্জার সাগরে ডুব দিতে হচ্ছে
.
শান্ত গিয়ে সোফায় বসতেই নওশাদের বোন তমা তার বাবুরে শান্তর কোলে দিয়ে দিলো
শান্ত বাবুটাকে কোলে নিয়ে মুখটা ফুলিয়ে বসে আছে,কারণ বাবু তার কোলে স্থির নেই,সে শান্তর মাথায় উঠে বসে ওর চুল টানতেসে,গাল টানতেসে
আহানা ট্রে রেখে সোফার রুমে ফেরত এসে এমন কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলো
.
শান্ত গালটা বাঁকিয়ে উঠে এসে আহানার কোলে বাবুটাকে রেখে চলে গেলো
ফেরত এসে দেখলো বাবুটা আহানার কোলে শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে
.
ওমা!শয়তান মেয়ে কোথাকার,আমার কাছে থেকে আমাকে ইচ্ছামত জ্বালিয়েছে আর আহানার কোলে গিয়ে উনি কি শান্তশিষ্ট! বাচ্চাদের বোঝা দায়!
সন্ধ্যা হয়ে গেছে যে যার বাসার দিকে রওনা হয়েছে,আহানা শান্তর বাইকে উঠে বসে হাতের চুড়িগুলো দেখছে আবার বাসার দিকে তাকাচ্ছে,শান্ত কার সাথে যেন কথা বলতেসে,আসতেছেই না
শেষে পাক্কা ১০মিনিট পর এসে বাইকে বসলো সে
.
এত দেরি হলো কেন?কার সাথে কথা বলতেছিলেন?
.
একটা মেয়েকে ভালো লাগছে,জোস একদম জোস,তার সাথেই কথা বলতেছিলাম
.
আহানা শান্তর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিলো
.
শান্ত মাথায় হেলমেট পরতে পরতে বললো কাঁধে হাত রাখো নাহলে পড়ে যাবে
.
আপনার কি?ঐ মেয়েটাকে গিয়ে ড্রপ করে আসেন,আমি হেঁটে যেতে পারবো
.
ও আজ রুপাদের বাসায় থাকবে
.
আহানা রেগে ঘুরে বসলো
শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে পিছন ফিরে আহানার হাত টেনে সামনে এনে একহাতে আহানার হাত ধরে রাখলো আরেক হাতে বাইক ধরলো
.
ছাড়ুন,এত দরদ দেখাতে হবে না
.
কোথা থেকে কারখানা পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেসে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো এলিনা,বেবির পরে কেউ আসলেও আমার কিছু যায় আসবো না হুহ
.
আমি তো তোমার জ্বলার কথা বলি নাই,সত্যি দেখো দূরে একটা কারখানায় আগুন ধরছে
আহানা চোখ বড়করে চেয়ে ভাবলো সত্যি তো,ধুর!
.
শান্ত হাসতে হাসতে বাইক চালাচ্ছে
.
আহানা এক রাশ অভিমান নিয়ে বললো খাবো
.
সাথে সাথে শান্ত একটা টংয়ের সামনে বাইক থামিয়ে নেমে সেদিকে গেলো
খাবো বলায় বুঝে গেছে আহানা কি খাবে
চা এনে দিয়ে আহানার গম্ভীর ভাব দেখে তার মায়া হলো
হেসে শান্ত বললো আরেহহ ববির সাথে দুদিন কথা বলে আমার শখ মিটে গেছে
তোমার কি মনে হয় আমি আরেকটা মেয়ের সাথে লাইন মারবো?ইমপসিবল!
.
আমাকে বলছেন কেন?
.
তোমাকে তো বলিনি,ঐ যে একটা সিমেন্টের পিলার দেখছো সেটারে বলসি
.
আহানা আর কিছু বললো না,যাই বলে শান্ত কথা ঘুরিয়েই ছাড়ে,কথা মাটিতে পড়তে দেয় না
বাসায় এসে আহানা দেখলো তার বাসার সামনে ২টা মেয়ে দাঁড়িয়ে তারেক রহমানের সাথে কথা বলতেছে
আহানা সেখানে যেতেই তারেক রহমান আহানার দিকে চেয়ে মেয়েগুলোকে যেতে বললো,মেয়েগুলো আহানার বাসার ভেতর চলে গেলো
.
কি ব্যাপার আঙ্কেল?ওরা কারা?আর বাসায় ঢুকলো যে?!
.
তুমি আর আমার বাসায় ভাড়া থাকতে পারবে না,একটা ছেলে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে,তোমার সাথে মেশামিশি!! ছিঃ!
মানুষ এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছে,আজ তো ২জন এসে কথাই শুনিয়ে গেলো
আমি এদের ভাড়া দিব,তুমি তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যাও
.
কিন্তু আঙ্কেল আমি এই সন্ধ্যাবেলায় কই যাবো??আমাকে ১টা দিন সময় দিন আমি বাসা খুঁজে চলে যাবো
.
এখন মীম কণিকা নেই বাসায়,তুমি থাকতে পারো,তবে জাস্ট ১টা দিন সময় দিলাম,চলে যেও
আহানা বাসায় ঢুকে চুপ করে বিছানায় বসে রইলো,বাসা খোঁজা তো এত সহজ না,কি করবো কোথায় যাব,রুপার বাসায় ও তো যেতে পারবো না,ওর পুরো পরিবার জানে আমি শান্তর ওয়াইফ!
.
আহানা তার ব্যাগে সব গুছিয়ে নিতে লাগলো,সব বলতে জামা কয়েকটা,শাড়ী,বিছানার চাদর বালিশ,আর একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগে হাড়ি পাতিল নিচ্ছে
এসব তো রইলো,বাসা কই পাবো এখন!
আমি জানতাম শান্তর এমন আসা যাওয়া তারেক আঙ্কেল আর আশেপাশের মানুষ ঠিকভাবে নিবে না,আর সেটাই হলো এখন!
পরেরদিন সকালে আর মুখে খাবার দিলো না সে,চুপ করে বসে আছে,সারারাত ঘুমাতে পারেনি,৬টা বাজতে ৩০মিনিট বাকি
ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আবারও হাঁটা ধরলো সে,মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসায় আসার সময় কিছু বাসা খুঁজবো থাকার জন্য
.
আহানা মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখতেসে,সব বহুতল ভবন,এসবে তো মাসে ২০/৩০হাজারের বেশি ভাড়া,ছোটখাটো বাসা পাবো কই
.
শান্ত ঘুমাচ্ছে,আজ আর আহানাকে জ্বালাতে জলদি উঠে নাই,কালকের জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সে
.
আহানা হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেলো,একটা পুরান বাড়ি দেখে
২তলা বিল্ডিং
বিল্ডিংটার রঙ উঠে ছাই রঙ ধারণ করেছে
দালানের নিচতলায় সামনের বারান্দাকে স্টোর রুম বানানো হয়েছে মনে হয়
দুনিয়ার সব জিনিস ঠেসে ঠেসে রাখা,আর দোতলার বারান্দাটা একদম পরিষ্কার,শান্তদের বাসা থেকে এক কিলোমিটারের চেয়ে একটু কম দূরে হবে বাসাটা,এখানে দাঁড়িয়ে শান্তদের বাসা দেখা যায়
আশেপাশে বস্তির মত
আহানা বাড়িটার সামনে গিয়ে দেখলো “ভাড়া দেওয়া হবে” লিখা একটা সাইনবোর্ড
আহানা খুশি হয়ে ভিতরে গেলো
নিচতলার বাসার দরজায় নক করতেই একজন বয়স্ক লোক এসে দরজা খুললেন
আহানা উনাকে সালাম দিলো
লোকটা সালাম নিয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছে
তার মুখে সব পাকা দাঁড়ি,এমনকি ব্রু ও পেকে গেছে
লোকটা কাশির জন্য কথা বলতে পারছেন না
আহানাকে ভিতরে আসতে বলে উনি চলে গেলেন
আহানা গিয়ে সোফায় বসলো,সোফা লাল রঙের তবে মনে হয় না এটা কেনার পর আর কেনোদিন এটা পরিষ্কার করা হয়েছে,ময়লা হয়ে আছে
সোফার রুমের পাশেই ডাইনিং টেবিল,রান্নাঘর থেকে রান্না করার আওয়াজ আসতেসে
লোকটা সারা বাসায় চশমা খুঁজতেসে আর একটাই কথা বলতেসেন সালমা!সালমা আমার চশমা কই?
রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসলো তোমার মাথায় দেখো
.
আহানা হেসে দিলো,কারণ আসলেই উনার চশমাটা উনার মাথায়
উনি ও হাসলেন আর আহানার দিকে তাকিয়ে বললেন বয়স তো কম হয়নি,এতদিক কি আর মনে থাকে?
চশমাটা পরতে পরতে সোফায় এসে বসলেন তিনি
.
কি দরকার?
.
আসলে আঙ্কেল আমি বাসা ভাড়া নিতে চাই
.
তুমি একা?
.
হুম
.
তোমার মা বাবা কি গ্রামে থাকে?
.
না আসলে আমার মা বাবা নেই,আমি অনাথ,এখানে চাকরি করি,সেই সূত্রে বাসা ভাড়া নিব
.
লোকটা চশমা খুলে তাকালেন তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন তাহলে তো তোমাকে আশ্রয় দেওয়া আমার কর্তব্য
.
আমার খুব দরকার আঙ্কেল,আমি আজই আসি?
.
হ্যাঁ আসতে পারো,উপরের তলা খালি পড়ে আছে,১বছর ধরে,আগে যারা থাকতো তারা নতুন বাড়ি পেয়েছে,এই পুরান বাড়িতে কে থাকতে চাইবে,সাইনবোর্ডটায় ও জংয়ে ধরে গেছে
আর কটাদিন হলে পেরেক নড়ে নিচে খুলেই পড়তো সাইনবোর্ডটা
.
ভাড়া?
.
৭হাজার দিতে হবে
.
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে তাকিয়ে রইলো
.
আহানার মুখটা ফ্যাকাসে দেখে লোকটা বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বললেন আমরা ভাড়ার টাকায় সংসার চালাইতাম
এই এক বছরে আমি মোটামুটি সংসার টেনেছি,মসজিদের ইমামতি করে,ঐ যে দূরে একটা ছোটখাটো মসজিদ আছে না ওটাতে,এখন আর হাত পা চলে না,বসে খাওয়ার বয়স,পোলাপাইন গা ঝেড়ে চলে গেছে দূরে,দেখতেও আসে না
.
আহানা রাজি হয়ে গেলো
.
উঠতে যেতেই রান্নাঘর থেকে একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা আসলেন,হাতে ট্রে,চায়ের কাপ ৩টা
মুখে হাসি,আর পরনে ম্যাক্সি,মাথায় ওড়না পেঁচানো,হিজাবের মত করে,ইমামের বউ তো
আহানা মেয়ে বলে সামনে আসলেন,সাদা রুক্ষ চুল তার হিজাবের বাইরে একটু একটু দেখা যাচ্ছে
হেসে দিয়ে এসে চায়ের কাপের ট্রেটা টেবিলে রাখলেন তিনি
আহানা উনাকেও সালাম দিলো
উনি আহানার পাশে বসে বললেন যাক আমার কথা বলার সাথী পেলাম তাহলে,কেউ কথা বলে না বুড়োবুড়ির সাথে,তুমি তো বলবে?
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে সাঁই দিলো
২টা কাপে দুধ চা আর একটাতে রঙ চা,রঙ চা মহিলাটি খান আর দুধ চা লোকটা,আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উনাদের কথায় মনোযোগ দিলেন
মনে হচ্ছে সত্যিকারের তার দাদাদাদি
.
লোকটা চা খেতে খেতে বললেন আঙ্কেল ডাকিও না,আমার তো বয়স আঙ্কেলের মতন না,দাদার মত,দাদা ডাকিও কেমন?
.
আহানা ঠিক আছে বললো
মহিলাটি এবার উনি আজ কি রাঁধবেন সেই গল্প শুরু করে দিলেন,কাঁঠাল গাছ একটা বাসার পিছনের জায়গায় উঠেছিল কয়েকবছর আগে
সেটার কাঁঠাল কাল নিয়ে বিচি গুলো রোদে শুকিয়েছে,আজ রাঁধবে ইলিশ দিয়ে,এসব বলে যাচ্ছেন
অনেকদিন কারোর সাথে কথা না বললে মনে হয় কত কথা জমে আছে উনার ও তাই,আহানাকে পেয়ে বলেই যাচ্ছেন
অবশেষে কথার ঝুড়ি খালি করে উনি আহানাকে ছাড়লেন,আহানা আজ আর ভার্সিটিতে যাবে না,জিনিসপাতি সব নিয়ে এই বাসায় উঠবে,আগে ঐ বাসায় ভাড়া ৪হাজার ছিল আর এটায় ৭হাজার,তাও খারাপ না,বেতনের ১০হাজার থেকে ৭হাজার ভাড়া দিলে আর ৩হাজার থাকবে,মিষ্টির মা ২হাজার দিবেন,শান্তর নোটসের জন্য সে ৩হাজার দিবে,ভালোই হবে সমস্যা নাই
আহানা সোজা বাসায় ফিরে গেলো
সবকিছু নতুন বাসায় নেওয়ার জন্য একটা রিকসা ধরিয়ে নিলে সুবিধা হতো আমার
কিন্তু ১০০টাকা ভাড়া লাগবে,আর আমার কাছে তো ১টাকাও নেই

আঙ্কেল আমি যাচ্ছি
.
যাও,ভালো থেকো
.
আঙ্কেল আমাকে ১০০টাকা দিতে পারবেন?আমি আপনাকে বেতন পেলে দিয়ে দিব
.
কেন?
.
রিকসা দিয়ে জিনিসগুলো নিতে লাগবে
.
তারেক রহমান পকেট থেকে ১০০টাকা দিতে দিতে বললেন যার জন্য এই বাসা তোমাকে ছাড়তে হচ্ছে সে বুঝি তোমাকে এক টাকাও দেয়নি?
আহানা চুপ করে থেকে ১০০টাকার নোটটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো
রিকসায় সব উঠিয়ে দেখলো আর বিন্দু মাত্র জায়গাও নেই
রিকসাআলা যেতে যেতে বললো আপা আরেকটা রিকসা ধরে আসেন
.
আহানা উনাকে থামতে বলে বললো ভাই আপনি ভাড়াটা রাখেন,জিনিসগুলো ঠিকানাটার বাসার সামনে চিকন সরু রোডটায় রেখে দিয়ে আপনি চলে যাইয়েন,আমি আসতেসি
আহানা হাঁটা ধরলো,যত দ্রুত সম্ভব পোঁছাতে হবে

শান্ত ভার্সিটিতে এসে বটতলায় বসে আছে সেই কখন থেকে
গেটের দিকে তাকাচ্ছে আবার ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে তাকাচ্ছে
আহানার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না
তমাল ওয়ান টাইম গ্লাসে কফি নিয়ে এসে শান্তর হাতে দিয়ে ওর পাশে বসলো
তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললো আহানা ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে নেই,আমি ক্যানটিন থেকে আসার সময় দেখলাম
.
নওশাদ ফোন টিপতে টিপতে বললো হয়ত কোনো কাজে আটকে পড়েছে,রুপাও আসেনি,নয়ত খবর নিতে পারতাম
.
শান্ত ফোন নিয়ে আহানাকে কল দিলো
আহানা তখন শান্তর বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছে,ফোন রিসিভ করতেই শান্ত বলে উঠলো কি হইসে তোমার?ভার্সিটিতে আসতেসো না কেন?
.
আহানা থেমে বললো কাজে ব্যস্ত আছি
তারপর সে লাইন কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে আবার হাঁটা ধরলো
শান্ত বুঝতেসে না কি হয়েছে!
আহানা তার নতুন বাসায় এসে রোড থেকে সব জিনিসপাতি টেনে টেনে দোতলায় তুললো
.
বাড়িওয়ালারা তো আর বিছানা দিবে না,আগেরটাতে তো হোস্টেলের মত ছিল বলে খাট ছিল কিন্তু এটাতে তো খাট নেই
আহানা সালমা দাদি থেকে ঝাড়ু এনে দোতলা পরিষ্কার করলো ভালো করে
১২টা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে অফিসের জন্য বের হতে হবে
ফ্লোরে বিছানার চাদর বিছিয়ে বালিশ রেখে বসলো সে
পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে খেয়ে ৫মিনিট জিরিয়ে আবার উঠে রান্নাঘরে গেলো,পাতিলগুলো সেখানে রেখে চালের বালতিটা তাকে রাখলো,এই মাসের আর ১০দিন আছে,তার পরেই আমি বেতন পাবো
চাল যা আছে তাতে মনে হয় না ১০দিন যাবে,কিছু একটা করতে হবে
তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধরে দরজায় তালা লাগিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো সে
হেঁটে হেঁটে চলছে
.
শান্ত কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে আহানার অপেক্ষা করেছে,কিন্তু আহানা আসলো না
২৬বার কল করেছে তাও সে রিসিভ করেনি,আহানা তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে তার এতদিকে খেয়াল নেই
অফিসে আসতেই দেখলো শান্ত গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
১টা বাজতে ৭মিনিট বাকি,সব কর্মচারী আসেনি,আর যারা এসেছে তারা ক্যানটিনে
.
আহানা চেয়ার টেনে বসতেই শান্ত রেগে ওর চুলের মুঠি ধরলো তারপর পা দিয়ে চেয়ার টেনে চেয়ারসহ আহানাকে কাছে নিয়ে আসলো
.
কি সমস্যা তোমার??কতবার কল করেছি?কিছু না বলে লাইন কেটে রেখে দিসো কেন তুমি?তোমার এত সাহস আসে কোথা থেকে?
.
আমি বাসা চেঞ্জ করসি তাই রিসিভ করতে পারিনি,ব্যস্ত ছিলাম
.
হঠাৎ!!কিন্তু কেন?
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here