প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আচ্ছা আহানা আপু!ভাইয়ার দেখি তোমার ছোটবেলার সব মনে আছে,তো তোমার কিছু মনে নেই?
.
না রে,তখন আমি এইটুকুন ছিলাম,আমার তো কিছুই মনে নাই
.
তো শান্ত ভাইয়া কতটুকুন ছিলো?যে উনার সব মনে আছে?
.
ওটা তো বুইড়া খাটাস!মনে হয় উনার ৮বছর ছিলো তখন
.
মানে আমার বয়সি ছিলো?
.
তোমার তো ৭বছর,তুমি আরও ছোট,আরও কিউটি
.
সবাই বলে আমি নাকি ভাইয়ার মতো হয়েছি,ভাইয়া তো আরও কিউট
.
তুমি সুন্দর চিনোনা!তোমার শান্ত ভাইয়াকে তো একটা ঝুলন্ত বাঁদরের মতন লাগে😂
.
শিসসস!আস্তে বলো,ভাইয়া শুনলে রাগ করবে অনেক
.
তোমার ভাইয়াকে ভয় পাই না আমি,আচ্ছা একটা কাজ করো তো,তোমার ভাইয়াকে ধরে বিয়ে দিয়ে দাও,আমিও একটু বাঁচি
.
হুম তাহলে তুমি রেডি হও
.
আরে আমি কেন?আমার কথা বাদ দাও,আমি জীবনেও তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করবো না
অন্য মেয়ে খুঁজো
.
না আপু তোমাকেই ভাবী বানাবো
.
কথাটা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”জিন্দেগি বারবাদ হো গেয়া”
.
নিতু খিলখিল করে হেসে দিলো আহানার গান শুনে
♣
এই আহানা ঘুমাতে আয়,কটা বাজে খবর আছে তোর?
.
আসতেছি মা
.
আহানা নিতুর রুম থেকে বের হতেই এক ধাক্কা খেলো শান্তর সাথে
শান্তর হাতে ছিলো স্যুপের বাটি,সে কোনো মতে বাটিটা ধরে সবদিক সামলিয়ে আহানাকে এক ধমক দিয়ে দিলো
.
কি সমস্যা? চোখ কোথায় তুলে হাঁটো?
.
আপনি?আপনার চোখ কই থাকে?সরুন!ঘুম পাচ্ছে আমার
আহানা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আর একটিবার ফিরেও তাকালো না
অথচ কিছুক্ষণ আগে সে এত এত কেয়ার করছিলো
.
এই মেয়েটা নিজের দোষ কখনও চোখেই দেখে না!
.
রাত শেষ,সকাল সকাল শান্ত রেডি হয়ে অফিসে চলেও গেছে
জ্যাম বেশি হওয়ায় শান্তর আজ অফিসে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো
আহানা আজ পরিপাটি হয়ে কাজে বের হয়েছে
তার আজ একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো একটা চাকরি,চাকরি পেলেই মাকে নিয়ে সে নতুন বাসায় উঠবে
রতনের ভয়ে সায়দাবাদে আর পা রাখা যাবে না,তার মানে সে বাসাটা বাতিল
কড়া রোদের ভিতর আহানা ঢাকার অলিগলি সব খানে চাকরি খুঁজে যাচ্ছে,সারাদিন ধরে তন্নতন্ন করে অবশেষে আহানা চাকরির দেখা পেলো
কথা হলো গিয়ে বেতন নিয়ে,মাত্র ৫হাজার টাকা, সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হবে,মেয়েদের কসমেটিকসের দোকান,একটা ছোটখাটো দোকান, আরও অনেক সহকারী আছে আহানার সাথে,
আহানা সেটাতেই রাজি হয়ে গেলো
এখান থেকে ৫হাজার পাবে সেটা দিয়ে নতুন একটা বাসা নিয়ে ভাড়ায় থাকা যাবে,আর বাকি যে ৩টা টিউশনি আছে ওগুলা থেকে ৬হাজার আসবে প্রতিমাসে তাহলে এমনিতেই সংসার ভালোই যাবে
আহানা আজ খুশি খুশি বাসায় ফিরে গেলো
মা শান্তর মায়ের সাথে গন্ধরাজটার বাগানে চা খাচ্ছেন বসে বসে
আহানা দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বললো”মা আমি চাকরি পেয়ে গেছি”
.
মা তো মহাখুশি,তারপর যখন শুনলেন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে পাবে মাত্র ৫হাজার টাকা তখনই মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন তিনি তার উপর আহানা বললো সে কিছুতেই শান্তর সাথে এক বাসায় থাকতে চায় না
.
মা মন খারাপ করে বললেন”ওসব নাহয় বুঝলাম,কিন্তু তোর পড়াশুনার কি হবে যদি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজই করিস”
.
মা ওসব বাদ দাও,সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি আবার পড়াশুনা?এতকিছুর খেয়াল রাখতে হলে আর চাকরি করা হবে না,একটা চাকরি পেয়েছি এটাই বা মন্দ কি!
.
আহানার কথায় আজ মা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললেন!সংসার চালানোর দায় ভার মেয়ের উপর দিয়ে মেয়ের থেকে তিনি তার সব ইচ্ছা,স্বপ্ন তুলে নিলেন
স্বামী,বাবা ছাড়া সব পরিবারের বুঝি এই হাল হয়
কবে এই দিন গুজবে আমাদের!
তার উপর এমন একটা মেয়ে জন্ম দিলাম যে কারোর থেকে একটা টাকাও এমনি এমনি নেয় না
তার জন্য শান্তর মতো একটা ছেলে,সাজানো গোছানো একটা পরিবার রেডি থাকার পরেও সে এসব কিছু নাকোচ করে তার এই সংসার চালানোয় মনপ্রাণ সবটা দিয়ে রেখেছে
সে বুঝে না এসবেই সব হয়না,মাঝে মাঝে নিজেরও ভাবতে হয়
আত্নসম্মানকে উঁচু করে দেখতে গিয়ে সে আজ তার পড়ালেখাই বিসর্জন দিয়ে দিলো
আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে এমনটা কখনওই হতো না,কেন আমার ভাগ্য একটা কার এক্সিডেন্টের দরুন এভাবে ছারখার হয়ে গেলো
.
আহানা রুমে এসে নিজের জামাকাপড় সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে বিছানার উপর ব্যাগটা রেখে আবারও বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো, সে এবার যাবে বাসা খুঁজতে
.
মা মন খারাপ করে শান্তি রহমানের পাশে বসে আছেন,তিনি মেয়েকে মানা ও করতে পারেন না কারণ আহানা অনেক জেদি একটা মেয়ে,তার কাছে তার সম্মানটাই সব
.
শান্তর সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে এতকিছুই হতো না,ভাগ্য এসে দরজায় কড়া নাড়ছে আর এই মেয়ে কিনা দরজা বন্ধ করে বসে আছে
.
আহানা এই গলি সেই গলি খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা বাড়ি পেলো যেটাতে প্রতি ফ্ল্যাটের ইউনিটকে ১৪ভাগ করে ভাড়া দেওয়া হয়,মানে মানুষে গিজগিজ করতেছে চারিদিকে
৩রুমের একটা ইউনিট ভাড়ার জন্য পেলো আহানা
তাও ৫তলাতে,ছাদের সাথে এটাচড ৩রুম,দুটো বেডরুম,আর একটা রান্নাঘর
৫হাজার টাকা শুনে আহানা সেটাতেই হ্যাঁ বলে দিলো,আর দেরি না করে আবার শান্তদের বাসায় ফেরত আসলো সে
মা একবার না করছেন তো একবার হ্যাঁ করছেন,যাওয়ার প্রতি কোনো মতই নেই তার
এদিকে শান্তি রহমান আহানার দিকে তাকাচ্ছেন ও না,তিনি আহানার উপর প্রচণ্ডভাবে রেগে আছেন
কারণ আহানা একে তো বিয়েতে না করেছে তার উপর এই বাসায় থাকতেও চাচ্ছে না সে
আহানা উনাকে সালাম দিলো কিন্তু উনি আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন সাথে সাথে
আহানা আর কি করবে,,মন খারাপ করে মায়ের হাত ধরে চলে গেলো বাসা থেকে
♣
সন্ধ্যা ৭টা বাজে,শান্ত সবে বাসায় ফিরতেছে,আজ একটু দেরি হয়ে গেছে,কাজের চাপ বেশি ছিলো সকালে লেট করে যাওয়ার কারণে
শান্ত বাসায় ফিরতেই দেখলো বাসার পরিবেশ একদম ঠাণ্ডা,কোথাও কোনো টু শব্দটাও নেই
শান্ত বিষয়টায় নজর না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেছে
আহানা কি নাই বাসায়??থাকলে তো আমার সূর্যমুখীর বাগানে ঢুকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলতো সব, তাহলে কোথায়?নিশ্চয় আম্মুর গন্ধরাজ বাগানটাই গিয়ে ফুল ছিঁড়তেছে
আজ এক ঝাড়ি দিব ওরে
শান্ত টি শার্টটা পরে নিয়ে রুম থেকে বের হলো,রিপাকে নাস্তা দিতে বলে সব রুমে একবার করে চক্কর দিয়ে আসলো কিন্তু কোথাও আহানাও নেই, ওর মাও নেই
শান্ত একটা বিসকিট মুখে দিয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো”আহানা কোথায়?”
.
উনারা তো চলে গেছেন কিছুক্ষণ আগে
.
মানে!চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে?আমাকে বলেনি কেন?
.
আহানারা নতুন বাসা নিয়ে সেখানে উঠেছে,আহানা নাকি একটা দোকানে চাকরি পেয়েছে
.
হোয়াট!আর আমাকে একবার জানালো ও না?মা ওদের বাধা দেয়নি?
.
আহানা তো শুনে না কারোর কথা
.
শান্ত রেগে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো
♣
আহানা রে এটা কোথায় বাসা নিলি,এরকম চিপা কেন,থাকবো কেমনে?এত মানুষের হইচই কেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে
.
তো কি করবো আর!অন্যের বাসায় থাকার চেয়ে এটা হাজারগুন ভালো,তুমি সবসময় অন্যের দয়ায় থাকতে চাও কেন বলোতো?
.
যাতে তোকে ভালো জীবন দিতে পারি,তা তো বুঝবি না তুই
.
আমার ভালো জীবন লাগবে না মা,আমার আত্নমর্যাদাসম্পন্ন একটা জীবন চাই,যেখানে আমি আমার পরিশ্রমের কামায় দিয়ে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে পারবো,কারোর কোনো দয়া থাকবে না
.
যা কি রাঁধবি রাঁধ!রাতে কি না খেয়ে থাকবো তোর আত্নসম্মানের জন্য?
.
আহানা মুখটা ছোট করে রান্নাঘরে গেলো,চোখে পানি এসে গেছে তার,চোখ মুছে রান্নাঘরটা একবার পরোক করে নিলো সে,পুরো তাকগুলো খালি,সবই খালি
হাতে টাকা আছে ১৫০০,এগুলো দিয়ে মাসের বাকি দিন মানে ২০দিন কাটাতে হবে,পরের মাসে বেতন পাবো
এখন বরং তরকারি কিনে আনি
আহানা বাসা থেকে বের হতেই শুনতে পেলো নিচে কতগুলো ছেলের হট্টগোল,সবগুলো চিকনার দল
১৭/১৮বছর বয়সি হবে মনে হয়,আহানা মাথার ঘোমটা টেনে চুপচাপ নামতেছে সিঁড়ি দিয়ে,ছেলেগুলো কথা বলা বন্ধ করে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই মিলে
মনে হয় আর এর আগে মেয়ে দেখেনি
এবার সবাই ফিসফিস শুরু করে দিলো একে অপরের সাথে
একজন বললো “মনে হয় নতুন এসেছে মেয়েটা”
আরেকজন বললো “মনে হয় বড় আপু”
আরেকজন বললো “তাহলে আসসালামু আলাইকুম”
আরেকজন বললো”সিনিয়র আপু যখন বউ”
এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে
আহানা পিছন ফিরে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”আরেকটা আছে!”সিনিয়র আপু যখন শাশুড়ি”
এটা বলেই আহানা চলে গেলো
এবার সবাই মিলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে,এটা কি বললো মেয়েটা!
.
আহানা নিচে নেমে এদিক ওদিক তাকালো,এসময়ে তরকারি পাবো কই,এই এলাকা তো ভালো করে চিনি না আমি
সামনে দোকানপাট আছে,আর এপাশে সব বাড়ি,২তলা,৫তলা,৭তলা এরকম
তো আহানা সামনে রাস্তার ওপাশে গেলো দোকানদারকে জিজ্ঞেস করার জন্য
.
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
.
আঙ্কেল এখানে আশেপাশে কোথাও তরকারি বাজার আছে বলতে পারবেন??
.
তুমি তো মনে হয় এখানে নতুন,,তরকারি বাজার তো এখান থেকে দূরে তবে এ সময়ে ভ্যানগাড়ী যায় এই রোড দিয়ে,ওটাতে তরকারি পাবা
.
এখন?আচ্ছা তাহলে আমি অপেক্ষা করতেছি
.
আহানা দালানগুলোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতেছে,টিনের ঘর পেলো না,পেলে হয়তবা ভাড়া আরও কম লাগতো,যেহেতু বেতনে সব হয়ে যাবে তাই দালানেই উঠলো
চিকন গলির রোড,মানুষ এত বেশি এই এলাকায়,আহানা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে কয়েকজন বয়স্ক লোক টুলে বসে আজকের খবরের ব্যাপারে আলোচনা করতেছেন হাতে গরম চায়ের কাপ নিয়ে
এরকম জনবহুল এলাকা আমি আর দুটো দেখিনি,মনে হচ্ছে কোনো যৌথ পরিবারে থাকতে এসেছি,এত মানুষ চারপাশে!দু একদিনেই সবার সাথে ভাব হয়ে যাবে,মা তো মনে হয় এতক্ষণে প্রতি ইউনিটের আন্টিদের সাথে ভাব ও করে ফেলেছে
এই সরু পথটা দিয়ে কিছুক্ষন বাদেই সাইকেলে করে কেউ না কেউ যাচ্ছে,বাপরে বাপ এত ব্যস্ত এরিয়া!!
ভ্যানগাড়ী আসতে প্রায়ই ১০/১৫মিনিট লেগে গেছে,দূর থেকে ভ্যানগাড়ী দেখতে পেয়ে আহানা জলদি করে উনার সামনে এসে দাঁড়ালো
পটল/বেগুন/পুঁইশাক/কলমিশাক/লাল শাক/বরবটি/লেবু এসব আছে
আহানা অনেক ভেবে কলমিশাক আর বরবটি নিবে ঠিক করলো
তো ভাইয়া কলমিশাক ২মুঠা কত করে?
.
১৫টাকা
.
এটা আবার কোন হিসাব?এক মুঠা ৫টাকা হলে,২মুঠা ১০টাকা,১৫টাকা হয় কেমনে?
.
আপনি ৩মুঠা নেন ১৫টাকা দিয়ে
.
না,বাসায় ফ্রিজ নাই,রাঁধলে আজকেই রাঁধতে হবে,কাল পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাবে,আমি ২মুঠাই নিব ব্যস
.
আচ্ছা,আর কি নিবেন?
.
বরবটি কেজি কত করে?
.
৮০টাকা
.
ঐদিন না দেখলাম ৫০টাকা
.
কোথায়?
.
আমাদের সায়দাবাদে ৫০টাকা করে পাওয়া যায়,আপনি এত দাম চাচ্ছেন কেন?
.
আমি সায়দাবাদ থেকেই আনছি,তো এতদূর থেকে আনছি একটু বেশি চাইবো না?
.
নিব না আমি বরবটি,কাল সায়দাবাদ যাবো একটা কাজে তখন আসার সময় ৫০টাকা দিয়ে বরবটি নিয়ে আসবো দেখিয়েন আপনি
চলবে♥