প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমার কোনো গুনই আপনার নজরে পড়ে না তাই না?
.
পড়ে বলেই তো বিয়েটা করে নিয়েছি তাও দুবার করে
.
ঢং করতে হবে না,বাই
.
আহানা চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে,মুখে সামান্য হাসি
রিপা একটা খোঁচা দিয়ে বললো”কি ব্যাপার এত হাসি কিসের?আর একটা কথা এত সুন্দর করে বাসর সাজিয়ে দিলাম তুমি এখানে কি করতেছো?”
.
আহানা কানের পিছনে চুলগুলো সরিয়ে বললো”কিসের বাসর,বিয়ের ১৪দিন চলে,এখন এসব বলে লজ্জা দিচ্ছো কেন?”
.
তাই বুঝি?তার মানে বাসর আগেই গেছে?
.
আহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দৌড়ে মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো
মা একটা উপন্যাস পড়তেছিলেন এতক্ষণ,দরজায় নক হওয়ার আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে পাশে তাকালেন
আহানা মুচকি হেসে উনার কাছে এসে বসলো তারপর হাত থেকে বইটা নিয়ে আরেক হাতে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললো”নাও খেয়ে বলো দেখি তোমার পুত্রবধূর হাতের চা কেমন?”
.
মা এক চুমুক দিয়ে ব্রুটা নাচিয়ে হেসে দিলেন তারপর আহানার হাতজোড়া ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরালেন
.
চা খাও,ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো
.
মা মাথা নাড়িয়ে নিজের হাতের থেকে দুজোড়া বালা খুলে আহানার হাতে পরিয়ে দিলেন
.
আহানা নিতে চাইলো না কিন্তু মা তাও জোর করে ওর হাতে পরিয়ে দিলেন
আহানা বালাগুলোর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো,ওজনে অনেক হালকা তবে দেখতে ভারী মনে হয়,পুরোনো ডিজাইনের তবে যে কেউ দেখলে পাগল হয়ে যাবে এরকম সুন্দর বালাটা
মা চা পুরোটা শেষ করে আবারও বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে দিলেন
আহানার কাজ শেষ তাই সে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলো,কাপ রেখে এরপর গেলো শান্তকে তার হাতের বালা দেখাতে
শান্ত সবেমাত্র তার মিটিং শেষ করে বিছানায় এসে বসেছে বিছানার উপরের গোলাপের পাপড়ি সরিয়ে টিভি অন করলো সে
আহানা এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো”দেখুন আমার হাতের বালাগুলো,মা দিয়েছে”
.
সুন্দর
.
সুন্দর মানে?আর কিছু না?
.
আর কি?
.
আহানা গিয়ে শান্তর পাশে দপ করে বসে কিছু বলার আগেই ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো
শান্ত ভাবলো আহানা মজা করতেছে,কিছুক্ষন ওর সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশে চেয়ে দেখলো আহানা হাত ধরে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আবার বিছানায় ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে,শান্ত কিছুই বুঝতে না পেরে ঘুরে ওর দিকে ফিরে বসলো তারপর বললো”কি হয়েছে?”
.
আপনার জানার দরকার নাই,ব্যাথা পাওয়ার ১৪ঘন্টা পর আসে জিজ্ঞেস করতে যে কি হয়েছে
.
ব্যাথা পেয়েছো?কি করে?আমি ভাবলাম মজা করতেছো
.
ব্যাথা নিয়ে মানুষ কেন মজা করবে,বিছানায় গোলাপ একটা ছিলো কাঁটা সমেত
কথাটা বলে আহানা বিছানা থেকে নেমে চলে গেলো
শান্তর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব
তারপর বিছানায় হাত বুলিয়ে একটা গোলাপ পেলো যেটা গোটা তাও কাঁটা যুক্ত
ওহহহ তার মানে এটা দিয়ে ব্যাথা পেয়েছে?সোজাসুজি বললেই হয়,আমি তো টিভি দেখছিলাম আমার এত দিকে খবর আছে?আবার রাগ ও দেখায়,এই মেয়েটা!!
.
আহানা গেস্ট রুমে এসে গাল ফুলিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে আছে
শান্ত পুরো বাড়ি খুঁজেও ওকে না পেয়ে শেষে গেস্ট রুমে এসে দেখলো আহানা রাগ করে বসে আছে
.
এত রাগ আসে কই থেকে?হুম?
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওলটপালট করলো কিন্তু কিছুই পেলো না তারপর বললো”কই কাটা গেছে?”
.
রক্ত মুছে ফেলেছি,আমি মানুষকে দেখানোর জন্য রাখি না
দরকার নেই কারোর কেয়ার
.
তুমি হুটহাট এত রাগ করো কেন একটু বলোতো?আমার কি দোষ?এভাবে রাগ করে এই রুমে চলে এসেছো!মা জানতে পারলে কি ভাববে?
.
সেটা আপনার ব্যাপার আমার না,আমার সাথে ভালোমতন বিহেভ করলে তো আমি এই রুমে চলে আসতাম না,তাই না?
.
বুঝলাম,এই মেয়ে আমার কোলে উঠার জন্য আর কি কি করবে কে জানে
শান্ত নিজের হাতের কুনুই ধরে নেড়ে চেড়ে আহানার কাছে এসে ওকে বিছানা থেকে তুলে নিলো
.
আহানা গাল ফুলানো বাদ দিয়ে এবার দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো শান্তর মুখের দিকে
শান্ত ভ্রু কুঁচকে বললো”তুমি এত দুষ্টুমি কি করে করতে পারো?আজীবন জ্বালিয়েছো এবার বাকি রয়েছে বিয়ের পরেরটা??
মাই গড!!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে,মা ওদের দেখে মুচকি হেসে চেয়ে রইলেন,রিপা পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো”আহানা রাগ করেছিলো আর শান্ত স্যার রাগ ভাঙ্গিয়ে এখন মনে হয় নিয়ে যাচ্ছে”
.
মা হাত দিয়ে রিপাকে চুপ থাকতে বলে ওদের দিকে তাকালেন,দুজনেই ওদের একসাথে দেখে অনেক খুশি হলো তারপর যে যার কাজে চলে গেলো
.
আপনাকে কে বলে আমাকে কোলে তুলতে?তারপর আবার খোঁটাও দেন
শান্ত আহানাকে বিছানায় নামিয়ে ওর ঠোঁটজোড়ার মাঝখানে আঙ্গুল দিয়ে বললো”চুপ!এখন চুপচাপ ঘুমাও,অনেক বেশি দুষ্টুমি হইছে তোমার,, আর না,আমার মাথা ভারী করে ফেলেছো তুমি”
.
এখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে,এসময়ে ঘুমাবো?
.
তাহলে বসে বসে কার্টুন দেখো তাও এরকম বাঁদরামো অফ করো
.
বিছানায় বসে গোলাপের কাঁটা দিয়ে চোট পেলাম সেটা কি ইচ্ছে করে করছি আমি?
.
না,সেটা হলে আমি মলম লাগিয়ে দিতাম,বাট তুমি কি করলা তুমি সোজা রাগ করে গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলা
.
আমার সাথে ভালো বিহেভ না করলে এমনটাই করবো আমি তাও শান্তি আম্মুর সামনে,বলে দিলাম
.
আম্মু ও হয়ে গেলো তোমার?সবার আগে উনি আমার মা
.
তো এখন থেকে উনি আমার মা
.
তুমি অতিরিক্ত করো ইদানিং,আমি তোমার আম্মুর কাছে বিচার দিব,তখন দেখিও কি হয়
.
কচু হবে
.
একটু চুপ থাকো প্লিস
.
আহানা মুচকি হেসে শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে রিমোটটা নিয়ে গোল হয়ে বসলো,তারপর মটু পাতলু দেখায় গভীর মনোযোগ দিলো
শান্ত আহানার ঐ হাসি দেখে ঝগড়া বিবাদ এক পাশে রেখে সেও চেয়ে রইলো কিছুক্ষন
মাঝে মাঝে আহানার হাসির কারন শান্ত বুঝে উঠতে পারে না
ভালোই লাগে তার এই রহস্যমাখা হাসিগুলো
তবে এই হাসির দেখা সে মাঝে মাঝেই পায়,সবসময় না কিন্তু!
.
আহানা কার্টুন দেখতেছে আর শান্ত গালে হাত দিয়ে সাজানো বাসর ঘরটা দেখছে,পৃথিবীতে হয়ত সেই একমাত্র বর যার বউ কিনা বাসর ঘরে বসে কার্টুন দেখতেছে
এটা কে সৌভাগ্য বলবো নাকি দূর্ভাগ্য বলবো?
.
আহানা খিলখিল করে হাসতেছে কার্টুন দেখতে দেখতে
শান্ত হাত ভাঁজ করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”নাহ এটা আমার সৌভাগ্যই বটে”
.
শান্ত এবার এগিয়ে এসে বিছানায় বসলো অথচ আহানা টের ও পায়নি,তার চোখ টিভির দিকে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার দুপাশে দুহাত রাখতেই আহানা কিছুটা চমকে ওর মুখের দিকে তাকালো
শান্ত কিছুই বললো না,শুধু আহানার কপালে একটা চুমু দিয়ে উঠে চলে গেলো
আহানা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,ছেলেটার হলোটা কি?
একবার বকে তো একবার কেয়ার করে,একবার ঝগড়া করে তো একবার আদর করে
আসলেই সে কি করতে চায় আমি বুঝি না
.
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে তার সূর্যমুখী ফুলের বাগানটায় এসেছে,ফুলগুলোর ঠিকমত যত্ন নেয় কিনা মালি সে বিষয়ে তদারকি করতে হয় মাঝে মাঝে
শান্ত ফুলগুলো দেখতে দেখতে একবার উকি দিয়ে তার রুমের ভেতর দিকে তাকালো,বিছানায় আহানা নেই,টিভিও অফ দেখছি,তাহলে গেলো টা কই?
.
আমি এখানে😎
.
শান্ত পিছন ফিরে দেখলো তার একমাত্র বউ গন্ধরাজ ফুল ২টি নিয়ে মাথায় লাগাতে লাগাতে এদিকে আসতেছে
.
কি ব্যাপার?আবার আমার পিছু পিছু চলে এলে,আজ সারাদিনে কি ঝগড়া কম হয়ে গেছিলো?
.
না তো!আমিও একটু বাগানবিলাস করতে এলাম,বলি আপনার মাথায় কি বুদ্ধি নেই,বেছে বেছে সূর্যমুখীর বাগান করতে গেলেন কি জন্যে?আর ফুল নেই দুনিয়ায়?
.
এটা আমার প্রিয় ফুল
.
আর গন্ধরাজ?
.
না সেটা প্রিয় না,মায়ের প্রিয় বলেই বাগানটা করা হয়েছে,তোমার সাথে মায়ের পছন্দ অপছন্দ অনেকাংশই মিলে যায়
.
তাইতো আমি তার পুত্রবধূ হয়েছি
.
এখন যাও রুমে,কি শীত পড়েছে খবর আছে তোমার?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিতেই হাতের ফোনটা বেজে উঠলো,একটা অাননোউন নাম্বার
আহানা কৌতুহলবশত রিসিভ করলো
ওপাশ থেকে একটা বয়স্ক লোকের আওয়াজ ভেসে এসেছে
উনি বললেন”আমার আহানা কেমন আছে?”
.
আহানা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো,এটা তো মজনু চাচার ভয়েস,আহানা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এদিক ওদিক তাকালো তারপর বললো”ভালো আছি,আপনি? ”
.
আমি কেমন আছি বা আমাকে তোমার হাসবেন্ড শাহরিয়ার শান্ত কেমন রেখেছে তা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো
.
আহানা চুপ করে থাকলো
.
তা সবই তো পেয়ে গেলে,আমাকে ভুলে গেলে কেন?আমি বুঝি সম্পর্কে তোমার কিছু লাগি না?
.
চাচা আমি কি সেটা বলেছি একবারও?
.
সে যাই হোক একটা কথা শুনে রাখো এত শত সুখ তোমার আর তোমার মায়ের কপালে ঠিক কতদিন টিকে সেটা আমিও দেখবো বুঝলে?
তোমাদের সেফ করার জন্য যিনি দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ঠিক কতদিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আমিও দেখবো
কার চালিয়ে অনেকেই মারা যায়,দেখো আবার!
তোমার বাবা,তোমার বাবার একমাত্র বন্ধু মারা গেলো,তোমার মা তোমার শান্তি আন্টি বিধবা হলেন
কে জানে বংশের ধারা তুমি পেয়ে বসো নাকি,তুমিও বিধবা হও নাকি,কি আছে তোমার কপালে কে জানে
.
কলটা কেটে গেলো
.
আহানা হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে দিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত সূর্যমুখী ফুল গাছের গোড়ায় মাটি দিতেছে বালতি করে এনে
আহানা দৌড়ে সেদিকে গেলো,শান্ত বালতিটা নিচে রেখে রেগে রেগে বললো”তুমি এখনও রুমে যাও নাই,আবার আসছো কি জন্যে?যাও ভিতরে”
.
আহানা কেঁদে দিলো হঠাৎ তারপর শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে
শান্ত বুঝছে না আহানা কেন এত করে কাঁদতেছে
আহানা শান্তর গায়ের টিশার্টটা টেনে ধরে ওকে আরও ঝাপটে ধরলো
শান্ত আহানার মাথায় হাত দিয়ে বললো”আহানা?কি হয়েছে তোমার??এভাবে কাঁদতেসো কেন?কেউ কিছু বলেছে?আমাকে বলো,আহানা?”
.
আপনি প্লিস আর কার চালাবেন না কোনোদিন,কারে উঠতেও হবে না
.
কেন?কি হবে?
.
না আমি চাই না আপনাকে হারাতে,একবার প্রিয় মানুষের হারিয়ে যাওয়াতে অনেক কষ্টের মুখে পড়তে হয়েছিলো আমাকে
আমি আর চাই না,আর সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই শান্ত
আপনি প্লিস আর কোনোদিন কার চালাবেন না আমাকে কথা দিন”
.
এটা কেমন কথা,কি হলো সেটা তো বলো,আর এভাবে কাঁদতেসোই বা কেন?
.
আহানা কান্নার জন্য কিছু বলে উঠতে পারছে না,বারবার চোখের সামনে ভাসতেছে বাবার লাশের সেই মর্মান্তিক ছবিটা
যতবার ছবিটা আরও সামনে আসতেছে ততবারই আহানা শান্তকে আরও শক্ত করে ধরতেছে
.
শান্ত এবার আহানার দুকাঁধ ধরে ওকে বুক থেকে সরিয়ে সামনে এনে দাঁড় করালো
তারপর ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”কি হয়েছে ক্লিয়ার করে বলো,আর কান্না করা বন্ধ দাও”
.
আপনি প্লিস আমার এই কথাটা রাখুন,কখনও কিছু চাইবো না আপনার থেকে
.
তার আগে আমাকে কারণটা জানতে হবে,তুমি খোলসা করে বলো আমাকে,আগে কান্না থামাও
.
শান্ত হাত দিয়ে আহনার চোখ মুছে দিয়ে ওকে নিয়ে বাগানের একপাশে থাকা চেয়ারে এনে বসালো
.
তারপর সে আহনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো “হুম এবার বলো কি হয়েছে”
.
আসলে মজনু চাচার ফোন এসেছিলো আর উনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন,আপনার কোনো ক্ষতি করবে এই নিয়ে
চলবে♥