নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৩১

0
1117

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩১

আব্রাহাম যে আইরাত কে কেনো ডেকেছে তা আইরাত নিজেও জানে না। এখন শুধু সে দিয়া কে নিয়ে রিকশা করে যাচ্ছে।

দিয়া;; আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আইরাত;; ক্যাফেতে।

দিয়া;; কেন?

আইরাত;; আব্রাহাম যেতে বলেছে।

দিয়া;; কেন?

আইরাত;; আমিও জানি না।

দিয়া;; কেন?

আইরাত;; এই কেনোর বাচ্চা চুপ থাক নইলে রিকশা থেকে ধাক্কা মাইরা ফালাই দিমু কইলাম।

দিয়া;; 🤐

একটা সময় দিয়া আর আইরাত ক্যাফের সামনে এসে পরলো। রিকশা থেকে নেমেই আইরাত দেখে ক্যাফে থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আব্রাহাম ফোনে কথা বলছে। আইরাত দিয়া কে ভেতরে যেতে বলে আইরাত নিজেই আব্রাহামের কাছে চলে যায়। আইরাত আব্রাহামের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভেবেছিলো আব্রাহাম কে ভুউউউউ করে চমকে দিবে। আইরাত যেই না ভুউউ করতে যাবে তখনই সাথে সাথেই আব্রাহাম তার বাম হাত দিয়ে আইরাতের কোমরে ধরে দেয় এক টান। আইরাত সোজা আব্রাহামের বুকে এসে পরে। আব্রাহাম তার কানে এক হাত দিয়ে ফোন ধরেই এক ভ্রু উঁচু করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত যেন বোকা বনে গেলো। তার ভাবনা-চিন্তা তে এক বালতি পানি ফেলে দিয়েছে আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; কি জানেমান!! কি ভেবেছো চমকে দিবে। ন্যাহ, তুমি যখন দিয়া কে নিয়ে রিকশা থেকে নামছিলে তখনই আমি তোমাকে দেখেছি।

আইরাত;; এইটা কোন কথা।

আব্রাহাম আইরাতের কোমড় টেনে ধরে তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; অতি চালাকের গলায় দরি বেবিগার্ল।

আইরাত;; হয়েছে ছাড়ুন।

আর ওদিকে দিয়া ক্যাফের ভেতরে গিয়ে একটা টেবিলে বসে। ক্যাফেতে তেমন কোন মানুষজন নেই। নিরিবিলি বলা যায়। আর দিয়া যেই টেবিল টাতে বসেছে সেটা মোটামুটি বড়ো সড়ো একটা টেবিল। দিয়া টেবিলে বসে বসে ফোন ঘাটছিলো তখনই একজন লম্বাচওড়া ছেলে দিয়ার সামনে দাঁড়ায়। দিয়া মাথা তুলে সামনে তাকায়। ছেলে টা আর কেউ না অয়ন। দিয়া তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে ছিলো। অয়ন নিজের চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে দিয়ার দিকে তাকায়।

দিয়া;; কিছু বলবেন কি?

অয়ন;; জ্বি, এটা আমাদের বুক করা টেবিল। সো বাইরের কেউ এলাও না। আপনি উঠুন।

দিয়া;; প্রথমত এটা একটা পাবলিক ক্যাফে, কোন ফাইভ স্টার হোটেল না যে বুক করবেন আপনি। আর এখানে এমন শত শত টেবিল আছে অন্য জায়গায় গিয়ে বসুন।

অয়ন;; ওও হ্যালো এটা আমাদের টেবিল। আমরা অন্য কোথায় গিয়ে কেন বসবো। আপনি উঠুন।

দিয়া;; ওও তাই না আপনাদের টেবিল। তা কোথাও কি আপনার নাম লেখা আছে নাকি?

অয়ন;; বাংলা কথা বুঝেন না আপনি, আপনাকে এখান থেকে উঠতে বলেছি।

দিয়া;; উঠবো না।

অয়ন;; এইই দেখুন ভালোই ভালোই বলছি উঠে পরুন। নয়তো…..

দিয়া;; কি কি নয়তো কি হ্যাঁ নয়তো কি?

অয়ন;; ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।

দিয়ার বেশ রাগ উঠে গেলো। সে এক ঝটজায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে।

দিয়া;; এইই উঠমু না আমি যা কি করবি কর।

অয়ন;; এই আপনি তো আচ্ছা ফাউল। তুই-তুকারি তে নেমে এসেছেন।

দিয়া;; মারামারি তেও নেমে আসতে পারি দেখবি, আর ফাউল হবো তোর বউ।

অয়ন;; বিয়েই করি নি আমি।

দিয়া;; এহহহহহ এই বান্দর মূখো কে কোন মেয়ে বিয়ে করবে?

অয়ন;; হ্যাঁ আর নিজে তো ক্যাটরিনা কাইফ তাই না।

দিয়া;; না না ওকে আমার ভালো লাগে না। জেকলিইন কে ভালো লাগে।

অয়ন;; আপনি সরেন এখান থেকে।

দিয়া;; এই মিয়া কথা কানে যায় না আমি যাবো না যাবো না যাবো না এখান থেকে। কি করবেন করেন যান।

অয়নেরও তো রাগ কম না। সে টেবিলের ওপর পানি ফেলে দিলো। দিয়ার মুখ হা হয়ে গেলো। অয়ন যে এমন কিছু করবে সে ভাবে নি। দিয়া আর অয়নের মাঝে আবার লেগে যায় কুকুর-বিড়ালে যুদ্ধ। এক্কেবারে যা ইচ্ছে তাই একটা অবস্থা। ক্যাফেতে যারা যারা বসে ছিলো তারা মনে হয় বিনে পয়সায় ফ্রিতে মুভি দেখছে। ঝগড়া খুব বাজে ভাবে লেগে গেছে। এখন শুধু চুল টানাটানির অপেক্ষা 🙂। এরই মধ্যেই আইরাত আর আব্রাহাম ক্যাফের ভেতরে আসে। ভেতরে এসেই আইরাতের মুখ যেন হা হয়ে গেলো। আর আব্রাহামের মাথার ওপর দিয়ে সব যাচ্ছে। আব্রাহাম শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সামনে যুদ্ধ লেগেই আছে। আইরাত অবাক হয়ে কপাল কুচকে আছে। আইরাত দ্রুত আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম কি আর ঝগড়া থামাবে সে উলটো মুখে হাত দিয়ে হাসছে। আইরাত তা দেখে নিজেই রেগে গেলো।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি কিছু বলছেন না ওদের। এভাবে ঝগড়া করছে কেন? একটু আগেই না দিয়া ক্যাফেতে আসলো এসেই ঝগড়া।

আব্রাহাম;; 😆😆

আইরাত;; হাসা বন্ধ করুন আর ওদের থামান।

আব্রাহাম;; আরে দারুন লাগছে ঝগড়া দেখতে। চুপচাপ দেখো তো।

আইরাত;; আপনি কি হ্যাঁ?

আব্রাহাম;; তোমার জামাই।

আইরাত;; ধুর ছাই।

অবস্থা বেগতিক। অয়ন টেবিলের ওপর পানি ফেলে দিয়েছে। আর দিয়ার সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া চালিয়েই যাচ্ছে৷ দিয়াও কম না। হঠাৎ একটা ওয়েটার দিয়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। ওয়েটারের হাতে ট্রে ছিলো আর তাতে কোল্ড কফি। দিয়ার অয়নের ওপর এত্তো রাগ উঠেছে যে সে আর না পেরে ওয়েটার কে থামিয়ে তার হাতে থাকা ট্রে থেকে এক বড়ো কফির মগ নিয়ে সোজা অয়নের মাথার ওপর ঢেলে দেয়। পরিস্থিতি এবার পুরোই খারাপ। অয়নের চুল মুখ সব একদম কফি কফি হয়ে গেছে। মাথার ওপর দিয়ে কফি চুইয়ে চুইয়ে পরছে। দিয়া অয়নের এমন অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। আর অয়ন তো রাগে কাপছে।

আইরাত;; হায়রে দিয়ার বাচ্চা এইটা কি করলি 😟!

আব্রাহাম;; ওহহ শিট!

অয়ন দিয়ার দিকে তেড়ে যেতে ধরবে তখনই আইরাত আর আব্রাহাম দৌড়ে ওদের কাছে চলে যায়। আইরাত দিয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে টানছে আর থামতে বলছে। আব্রাহাম অয়ন কে আটকাচ্ছে। কিন্তু কেউ থামার নাম নেই। এভাবে আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে…

আব্রাহাম;; গাইস, প্লিজ স্টোপ। স্টোপ ইট ইয়ার (চিল্লিয়ে)

রাতের আধারে নীরবতায় ঝিঝি পোকা যেমন ডাকে, একদম চুপচাপ। এখন অবস্থা টাও সেইম। আব্রাহামের ধমকে সব একদম চুপ মেরে গেছে।

আব্রাহাম;; ছোট বাচ্চা তোরা। এভাবে ঝগড়া কেন করছিস? আরে বাবা টেবিলের কি অভাব পরেছে। এভাবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার কোন মানে হয়। আর অয়ন তুই কি হয়েছে কি? অন্য টেবিলে গিয়ে বসলে কি হতো। আর দিয়া…… কি আর বলি তোমাকে। আইরাতেরই তো বেস্টি লাগো।

আইরাত;; এই আপনি কি ইন্ডিরেক্টলি আমাকে ঝগড়াটে বলছেন?

আব্রাহাম;; এইযে চোরের মনে মনেই জানা আছে।

আইরাত;; কিহহহ?

আব্রাহাম;; আরে ঝগড়া থামাতে এসেছি করতে নয়। অয়ন তোকে বলেছিলাম না দিয়ার কথা এই দিয়া।

অয়ন;; কি এই…!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; অয়ন ভাইয়া আপনি প্লিজ ফ্রেশ হয়ে আসুন।

অয়ন দিয়ার দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে আসে পরে। আব্রাহাম আইরাত আর দিয়া অন্য টেবিলে গিয়ে বসে। আর আইরাত আচ্ছা মতো দিয়া কে বকে দেয়। দিয়াও বুঝতে পারে নি যে অয়ন আব্রাহামের ফ্রেন্ড লাগে তাও একদম জানে জিগার। প্রায় বিশ মিনিট পর অয়ন ফ্রেশ হয়ে আসে। একদিকে দিয়া আর আইরাত বসেছে আরেক দিকে আব্রাহাম আর অয়ন।

আইরাত;; এবার বলুন আপনি কি জন্য ডেকেছেন?

আব্রাহাম;; কেন ডেকেছি তা একটু পরেই এসে পরবে।

আইরাত;; মানে?

তখনই ক্যাফের ভেতরে আরুশি আর রহিত আসে। দিয়া তো আরুশি কে দেখেই এক লাফ দিয়ে ওঠে। আরুশি দিয়ার যে খালাতো বোন লাগে। আর আইরাতও বেশ অবাক। দিয়া আরুশি কে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। প্রায় কেদেই দিয়েছে। ওইযে বিয়ের দিন গুম হয়েছিলো তারপর আজকে দেখছে আরুশি কে। আরুশিও এসে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। টেবিলের এক পাশে আরুশি-আইরাত-দিয়া বসে আছে। আর রহিত আব্রাহাম অয়ন এক পাশে।

আইরাত;; আচ্ছা তো এই ছিলো প্ল্যান আপনার তাই না?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; তো! আরুশি বেবি পালিয়ে বিয়ে করেছো কেমন লাগলো?

আরুশি;; অল ক্রেডিট গোস টু আব্রাহাম ভাই।

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ নাটের গুরু তো সেই ই।

আব্রাহাম;; থ্যাংক্স ফর দি কমপ্লিমেন্ট গার্লস।

দিয়া;; হিহিহিহিহিহি।

রহিত;; আরে আর বলিস না ভাই শশুড় হলো কশাই। পরে কিন্তু ঠিকই মেনে নিয়েছে অযথা ন্যাকামো সব। আমার তো মন চায়…..

রহিত এগুলো বলছিলো কিন্তু তখন আব্রাহাম থামিয়ে দেয় তাকে ইশারা করে। রহিত কে আরুশির দিকে তাকাতে বলে। রহিত তাকিয়ে দেখে আরুশি রাগে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিজের বাবার এতো সুনাম তার কেমন যেন হজম হলো না। সবাই গল্প করছে। আব্রাহাম বলে ওঠে…৷

আব্রাহাম;; আসলে আরুশি বোনু অনেক থ্যাংকস তোমায়।

আরুশি;; কেন ভাইয়া?

আব্রাহাম;; তোমাকে তুলে আনতে গিয়েই অয়ন আর কৌশল আইরাত কে তুলে এনেছিলো। আমার ভালোই হয়েছে।

আইরাত;; হ্যাঁ আর আমার জীবন যায় যায় অবস্থা।

সবাই হেসে ওঠে৷

আব্রাহাম;; আচ্ছা এবার বলো সবাই কে কি খাবে?

রহিত;; বারগার।

আরুশি;; আইসক্রিম।

আইরাত;; আমিও আইসক্রিম আর ক্যাপাচিনো।

দিয়া;; আমি পিজ্জা।

আব্রাহাম;; অয়ন তুই কি খাবি? কফি?!

আব্রাহাম নিজেই বলে নিজেই আহাম্মক সেজে গেলো যে আসলে সে ঠিক কি বললো এই মাত্র। অয়ন অসহায় মুখ নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। কেননা দিয়া অয়নের মাথায় কফি ঢেলে দিয়েছে আর আব্রাহাম কিনা এখন তাকে আবার কফি খাওয়ার জন্য অফার করছে। দিয়া আর আইরাত হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; না না থাক কফি খেতে হবে না। তুই আর আমি কোল্ড ড্রিংকস খাই চল।

অয়ন;; হ্যাঁ তাই অর্ডার কর।

অবশেষে সব খাবার হাজির হলো। অনেক আড্ডা দিলো সবাই। অনেক মজা লেগেছে। সারা বিকেল থেকে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে সবাই চলে আসে। আরুশি আর রহিত চলে গিয়েছে এক সাথে। অয়নও চলে গেছে। আব্রাহাম তার গাড়িতে করে দিয়া আর আইরাতকে নিয়ে এসে পরে। দিয়াকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে এসে পরে। এখন আইরাত আর আব্রাহাম এক সাথে গাড়িতে। দেখতে দেখতে আইরাতের বাসাও এসে গেলো৷ আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। তার গালের সাথে নিজের গাল গুলো লাগিয়ে নেয়। আর তখন আইরাত সাথে সাথে তার গাল সরিয়ে ফেলে।

আইরাত;; ধুরু আপনার এই চাপদাড়ি গুলো আমার গালে লাগে।

আব্রাহাম হেসে দেয়। তারপর ইচ্ছে করেই আইরাতের গালের সাথে নিজের গাল ঘষা দেয়।

আব্রাহাম;; আমার এই চাপদাড়ি গুলোর ওপর মেয়েরা মরে আর তুমি এমন করো।

আইরাত;; অন্য মেয়েরা হয়তো মরে কিন্তু আমি মরি না ওকে।

আব্রাহাম;; হুম হুম।

আইরাত;; এখানে কি করেন বাড়ি যান।

আব্রাহাম;; যেতে তো ইচ্ছে করছে না।

আইরাত;; ঘোড়ার ডিম বাড়ি যান। আর হ্যাঁ অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা ইভিনিং গিফট করার জন্য।

আব্রাহাম;; মোস্ট ওয়েলকাম বেবিগার্ল।

আব্রাহাম আইরাতকে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। আইরাতও তার বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আজ রাতে তার চাচা চাচির এসে পরার কথা। আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে এসে পরলেই বাইকে করে একজন আইরাতের বাড়ির সামনে আসে। মাথায় হেলমেট পড়া। তার তীব্র চোখ গুলো আইরাতের দিকে তাকায়। চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে গেছে যেন খুব রেগে আছে। আইরাত বাড়ির ভেতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর তখন সেই বাইকে থাকা লোকটিও সেখান থেকে কেটে পরে।





চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here