নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৬৭

0
827

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৭

সবকিছুই রেকর্ড হয়েছিলো। রায়হান যখন আব্রাহাম কে খুন করার প্ল্যানগুলো নিজ মুখে সব স্বীকার করছিলো তাও আবার প্রীতির নাম সহ সেটাও রেকর্ড হয়েছে আর আর ব্লেক মানির ব্যাপার টাও অর্থাৎ আইরাতকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাসানোর ব্যাপার টাও রেকর্ড হয়েছে। সবই রায়হান তার মরার আগে নিজ মুখে স্বীকার করে গেছে। আব্রাহাম কে খুন করার অংশ টুকু আব্রাহাম রেকর্ড করে আগেই তনয়া কে পাঠিয়ে দেয়। অর্থাৎ সেই ক্লিপ টুকু আলাদা ভাবে সেন্ড করা হয়েছে তনয়া কে। তবে পরবর্তীতে কিন্তু ক্যামেরা বন্ধ হয় নি। ক্যামেরা অন করাই ছিলো৷ যার দরুন ব্লেক মানির ব্যাপার টাও রেকর্ড হয়। তা শুধু আব্রাহাম নিজের কাছেই রেখেছিলো। অতঃপর আব্রাহাম যখন জানতে পারে যে আইরাত কে এরেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন আব্রাহাম দ্রুত পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আইরাতকে একদম নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য প্রুভ হিসেবে সেই ভিডিও ক্লিপ টা দেখিয়েছে অফিসার কে। সেখানেও রায়হান সব নিজের মুখেই উগ্লে দিয়েছে৷ আব্রাহাম যখন জেলে আইরাতকে দেখে তখন সে কোন কথা না বলেই সোজা আইরাতের হাত ধরে তাকে পুলিশ স্টেশন থেকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে৷ এখনো পুরনো অনেক কিছুই বলার আছে আব্রাহামের আইরাতকে। সব ঠিক করে নিতে হবে, সব আবার আগেরমিতো করে নিতে হবে যেকোন মূল্যেই। আব্রাহাম আইরাতকে বাইরে এনে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়৷ তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম। সে এক হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেক হাত নিজের কপালের সাইডে ঠেকিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। তবে আইরাতের মাঝে কোন ভাব নেই। সে একদম ভাবলেশহীন ভাবেই বসে রয়েছে। ঠিক আগের মতো চুপ থাকার লক্ষণ টা আবারও দেখা যাচ্ছে৷ আব্রাহাম বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আইরাত কেনো এভাবে বসে আছে। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই আইরাতকে একটা আলাদা ফ্লাটে নিয়ে যায়। সেটাও অবশ্য পুরো টাই আব্রাহামের। আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে দেয়৷ নিজে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে আইরাতের পাশে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। কিন্তু এবারও আইরাত আগের মতোই চুপ মেরে বসে আছে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত নেমে পরে। আব্রাহামের আগেই আইরাত নেমে গিয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে যায়। আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই ফ্লাটে আইরাত এর আগেও ২-১ বার এসেছিলো যার ফলে তার চিনতে বেশি একটা অসুবিধে হয় না। আব্রাহাম গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে চাবি দিয়ে গাড়ি লক করে ভেতরে চলে আসে। সিড়ি বেয়ে আব্রাহাম ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই দেখে আইরাত কাচের দরজাতে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আব্রাহাম ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়৷ দরজা লাগানোর শব্দ শুনে আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। তবে আইরাতকে দেখেই আব্রাহামের বুকের ভেতর টা কেমন যেনো একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কেননা আইরাতের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে রয়েছে,, তাতে পানি গুলো যেনো টলমল করছে। আইরাত এক দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ টুপ করেই কয়েক ফোটা পানি তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে।

আব্রাহাম;; আই………..

আইরাত দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আব্রাহামের জেকেটের কলার দুহাতে খামছে ধরে। রাগ, দুঃখ সব একসাথে কাজ করছে আইরাতের মাঝে। চোখে অশ্রু, মুখে রাগ নিয়ে বলে ওঠে…..

আইরাত;; আমাকে কীভাবে আর ঠিক কতো ভাবে ভাঙবেন আপনি। আর কতো? যেগুলো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি সেগুলো কিনা আজ আমার সাথে হয়ে যাচ্ছে৷ আমি কিসে ছিলাম এতোদিন, কি নিয়ে ছিলাম আমি। একটা ধোয়াসার মাঝে থেকে এসেছি আমি এতোগুলো দিন। আপনি, আপনি আমাকে? আমাকে এতোদিন আপনার খুনি ভেবে এসেছিলেন? আমি মারবো আপনাকে। আব্রাহাম কীভাবে মেনে নিলেন আপনি এটা? আপনাকে খুন করার আগে আমি নিজেই না মরে যাই৷

আব্রাহাম;; আইরাত আমার কথা টা!

আইরাত;; আপনি খাদে পরে যাবার পর কোথায় ছিলেন এই বছর গুলো, এই পর্যায়ে কীভাবে এলেন, বা এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডেই কীভাবে এলেন? আমার কাছে আসতেন আপনি। আপনি আমার কাছে আসেন নি। সব সমাধান করা উচিত ছিলো আপনার। আমার কাছে এসে আমাকে একবার জিজ্ঞেস তো করতেন। রাগ করতেন, আমাকে কাটতেন, মারতেন, বকতেন যা খুশি করতেন বাট এই Misunderstanding তো ক্লিয়ার করতেন নাকি। এতো গুলো বছর আমার জন্য পুরো একটা ভূল ধারণা নিয়ে ছিলেন আপনি। (চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম;; আমি তোমাকে দোষী বলছি না। আমি তোমার কোন দোষই এখানে দিচ্ছি না। আমার কথা তো শুনবে। তুমি যে এভাবে এতো সহজে বলছো না ব্যাপার টা ঠিক এতো টা সহজ ছিলো না আইরাত। আমি, আমি যে কিসের মাঝে ছিলাম তা কেবল আমি ই জানি। তুমি কি ভেবেছো যে নিজের ওপর দিয়ে এতো বড়ো একটা ঝড় বয়ে যাবার পরও আমি খুব ভালো ছিলাম, খুশি ছিলাম? ভুল তুমি। অনেক বেশি আঘাত পেয়েছিলাম আমি। মাথার পেছনে অনেক ভারি আঘাত লেগেছিলো। আমার এক্সিডেন্ট হবার পর কতো কিছু হয়েছে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও তোমার নেই।

আব্রাহামকে খাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। গাড়ি সহ একদম নিচে আছড়ে পরেছিলো সে। এক পর্যায়ে আব্রাহাম গাড়ি থেকে ছিটকে গিয়ে বেশ দূরে পরে যায়। আর গাড়িটার অবস্থা একেবারেই বাজে হবার ফলে তা ক্র‍্যাশ হয়ে যায়। তবে আব্রাহামের তখনও কোন স্যান্স ছিলো না। কপালের অংশ বেশ খানিক কেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেধে গিয়েছিলো। গায়ের শার্ট টা তেও রক্ত লেগে ছিলো। সেই খাদের অন্ধকার জায়গাতেই আব্রাহাম পরে ছিলো।

এখন আসি রাত্রি কে আর রাত্রির সাথে আব্রাহামের দেখা কি করে হলো তাতে। তাবাসসুম আলাম রাত্রি, পেশাগত ভাবে রাত্রি একজন ডক্টর। পড়াশোনা শেষ করে দেশেই কাজ করছে। বাবা সরকারি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি গত হয়েছেন। রাত্রিরা দুই বোন ছিলো। রাত্রির বড়ো বোন তমা আর রাত্রি। মোট তিনজনের সংসার ছিলো তাদের,, রাত্রির বড়ো বোন তমা ছিলেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তমার বিয়ে ঠিক হয়, সবাই খুশি ছিলো এই বিয়েতে। আর বিয়ে হয়েও গিয়েছিলো তবে তমার বিয়ে পর যখন সে তার হাসব্যান্ডের সাথে গাড়িতে করে আসছিলো তখন দূর্ভাগ্যবশত একটা দানব আকৃতি ট্রাকের সাথে তাদের গাড়ির ধাক্কা লাগে। গাড়িতে ছিলো তারা বর-কণে এবং গাড়ির ড্রাইভার। আর কাকতালীয় ভাবে তমা আর তার বর সেই পাহাড়ি রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো। তাদের গাড়ি এক ধাক্কায় নিচে খাদে গিয়ে পরে। এদিকে তো রাত্রি তার মা নিশ্চিন্তে ছিলো তমাকে নিয়ে যে সে তার শশুড় বাড়ি চলে গিয়েছে। তবে বেশ ঘন্টা পেরিয়ে যায় তাদের আসার আর নাম নেই। দেখতে দেখতে যখন প্রায় সকালই হয়ে গেলো, তখন তমার শশুড় বাড়ির লোকজন সবাই রাত্রির কাছে ফোন দেয়। তমা বা কেউই এখনো বাড়ি আসে নি। বিয়ের পরের দিনই এমন খবর পেয়ে রাত্রির তো চিন্তায় যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সবার মাঝেই একটা দুশ্চিন্তা আর ভয় এসে ভর করলো। রাত্রির বাবা যেহেতু একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার ছিলেন তাই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তাদের বেশ কিছু চেনা জানা লোক রয়েছে। সেখান থেকেই রাত্রির কাছে ফোন আসে। রাত্রির পুরো ফ্যামিলি কেই প্রায় সেই ডিপার্টমেন্টের সবাই চিনতো। এক অফিসার রাত্রি কে ফোন করে বলে যে “”” খাদে একটা গাড়ির বাজে ভাবে কিছু অংশ পাওয়া গেছে, গাড়িটা সাজানো ছিলো। হয়তো বিয়ের। আর দুটো লাশ পাওয়া গেছে, একদম বর-কনের বেশে। তবে চেহারা বিগড়ে গেছে খুব খারাপ ভাবে তাই চেনা যাচ্ছে না”””। রাত্রির হাত থেকে ফোন পরে যায়। কি বলবে খুঁজে পায় না, তার মা কেই কি করে সামলাবে তাও জানা নেই তার। অতঃপর রাত্রি আর তা মা সেই এক্সিডেন্ট স্পটে যায়। লাশ গুলোকে চেক করতে হবে, না করে উপায় নেই তাই লাশ গুলোর ওপর হাত দেওয়া বা ধরা নিষেধ। তাই বাধ্য হয়েই খাদের একদম নিচে নামতে হয়েছিলো রাত্রি কে। রাত্রির সেইদিন মনে হচ্ছিলো যে নিজের চোখের সামনে নিজের বড়ো বোনের এমন নির্মম মরন দেখার চেয়ে ভালো সে এর আগেই মরে যেতো। সবকিছু দেখে শুনে অবশেষে রাত্রি বলে যে হ্যাঁ এরাই তার বড়ো বোন আর বোনের স্বামী। তারা মারা গিয়েছে। রাত্রি তো সেখান থেকে এসেই পরতো কিন্তু হঠাৎ তার চোখ যায় কিছু একটা কিছুর ওপর। পুলিশ রা অন্য দিকে আর রাত্রি অন্যদিক দিয়ে যাচ্ছিলো। আর এছাড়াও এখানে বেশ বন্য পশুও আছে তাই সহজে কেউই আসতে চায় না। রাত্রি তার কপাল কুচকে সেদিকে এগিয়ে যায়। আর যেতেই অবাক। কারণ এখানে আরো একটা লাশ। রাত্রি ভেবেছিলো যে এটাও লাশ। তাই রাত্রি দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায়। রাত্রি ভয়ে যেই না পুলিশ কে ডাক দিতে যাবে তখনই সে খেয়াল করে যে লোকটার হাত নড়ছে। রাত্রি তার হাটু ভাজ করে বসে পরে, কান কিছুটা সেই ব্যাক্তিটির মুখের কাছে নেয়। শ্বাস চলছে। সেই আব্রাহাম ছিলো। রাত্রি তার হাতের পার্লস চেক করে দেখে সে জীবিত আছে। রাত্রি আব্রাহাম কে খেয়াল করে দেখে বেশ চেনা চেনা লাগছে। কোথাও তো দেখেছে৷ রাত্রি তখনই সেই খাদ থেকে আব্রাহাম কে নিয়ে আসে। আব্রাহাম কে বাসায় এনে রাত্রির পক্ষে যতটুকু সম্ভব সে তার সাধ্য মতো সব করে। আব্রাহামের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে সব বুঝতে পারে। আর রাত্রিও বুঝে যে এই আব্রাহাম। রাত্রির মারও কোন রকম কোন সমস্যা ছিলো না। তবে রাত্রি পরবর্তীতে এই ভেবে অবাক হয় যে এতো বড়ো একজন মানুষ এভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে তার আর পুলিশ রা টের অব্দি পেলো না। আশ্চর্য!! রাত্রি অনেক ট্রাই করেছে পুলিশ কে ইনফর্ম করার কিন্তু প্রত্যেক বারই আব্রাহাম তাকে বাধা দিয়েছে, তাকে মানা করেছে। আর রাত্রি যেইদিন আব্রাহাম কে নিয়ে এসে পরে তারপরের দিনই পুলিশ রা সেই খাদে গিয়ে তদন্ত করে আব্রাহাম কে পাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম যখন সেখানে ছিলোই না তাহলে পাবে কোথা থেকে। কারণ তার আগেই রাত্রি আব্রাহাম কে নিয়ে এসে পরেছিলো। আব্রাহাম সুস্থ হয়ে যায় মোটামুটি, আর সে তো আর হাতে হাত রেখে বসে থাকবে না। আব্রাহাম বেশ কিছুদিন পর বাইরে বের হয়। উদ্দেশ্য ছিলো সব কাহিনীর মূল খুঁজে বের করা। কিন্তু ততদিনে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী যে নিখোঁজ তা পাবলিক হয়ে গিয়েছিলো। আর সিচুয়েশন টা এমন ছিলো যে আব্রাহাম কারো সামনেও আসতে পারছিলো না। আব্রাহাম যেহেতু মাফিয়া তো তার বাইরের দেশেও কানেকশন ছিলো। সেখানেও আব্রাহাম অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু হাতে কিছুই আসে নি। অবশেষে আব্রাহাম জানতে পারে যে তাকে মৃত্য ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। তাই কোন কিছুই আর বাকি নেই। এখন তো কারো সামনে যাওয়ার প্রশ্ন আরো আসে না। আব্রাহাম প্রতিদিন বাসায় বসে বসে তার মৃত্যুর খবর টিভিতে দেখতো। ব্যাপার টা হাস্যকর। অনেকের সন্দেহও ছিলো যে আব্রাহামের এই মৃত্যু শুধুই সাধারণ নাকি এটা ছিলো মার্ডার? আর সেইদিন রাতে প্রীতি যেভাবে আব্রাহাম কে কথা গুলো বলেছিলো বা যা যা প্রুভ রেখেছিলো সেগুলো যে কেউ বিশ্বাস করবে। আব্রাহাম যে খুঁজে নি, বা তার পক্ষ থেকে কোন তালাশি করেন না তা নয়। সব করেছে সব, নিজের সাধ্য মতো সব করেছে। এমনও হয়েছে যে কালো হুডি পরে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিজের পুরো পরিচয় হাইড করে তারপর খুঁজেছে কিন্তু যে প্রমাণ গুলো পেয়েছে তার সবই আইরাতের বিপক্ষে ছিলো, সবই তার বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু এতো কিছুতেও যেনো আব্রাহামের মন মানছিলো না। তার মস্তিষ্ক বলছিলো আইরাত ই তার খুনি কিন্তু মন বলছিলো তার বিপরীতে। আইরাত যদি আব্রাহাম কে খুন করেই থাকে তাহলে এতোদিনের এই ভালোবাসা, এতো ওয়াদা, এতোকিছু সব কি মিথ্যে ছিলো তাহলে। মানুষ এতো নিখুত অভিনয় টা কি করে করতে পারে। আব্রাহাম দ্বিধায় ছিলো। সবকিছু ছিলো কিন্তু তবুও যেনো আব্রাহামের মন মানছিলো না আইরাতকে নিজের খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করতে। একদিন আব্রাহাম শুনে যে তার অফিসের একটা অংশ নাকি নিলামে উঠেছে। আব্রাহাম নিজ হাতে, নিজ একার দক্ষতায়-যোগ্যতায় তার এই অফিস তার এই ডাক-নাম-পরিচয় সব বানিয়েছিলো। আব্রাহাম ভেবেছিলো হয়তো তার জীবন টা এভাবেই আস্তে আস্তে আরো বরবাদ হয়ে যাবে কিন্তু না। এভাবেই চলতে থাকে ধীরে ধীরে দিন যেতে থাকে। আব্রাহাম রাত্রি দের সাথেই ছিলো। এদিকে রাত্রির মা আর রাত্রি জানতো যে আব্রাহাম কেমন পারসোনালিটির ব্যাক্তি। আর আব্রাহাম কিন্তু আইরাত আর তার ব্যাপারে রাত্রি কে কিছুই জানায় নি। থাকতে থাকতে রাত্রির সাথে আব্রাহামের বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আর সেই সুবাধেই তুই-তুকারি ডাকা। একদিন আব্রাহামের অফিসের ওনার কে এওয়ার্ড দেওয়া হয়। আব্রাহাম তখন কপাল কুচকায়। তবে পরে সব ক্লিয়ার হয়। আইরাত হাল ছাড়ে নি। সে নিজে সবকিছু হ্যান্ডেল করেছে। আর সেটাই ছিলো আইরাতের জীবনের প্রথম এওয়ার্ড। তবে তাতেও আব্রাহাম বেশ বিচলিত হয়। কেননা আইরাতের এওয়ার্ড ফাংশনের একদিন আগেই আইরাতের আর কবিরের বিয়ের ফেইক খবর টা ঘোষণা করা হয়েচছিলো। এবার তো আইরাতের ওপর থেকে আব্রাহামের মন একদম উঠেই পরেছিলো। পুরো ভেঙে গিয়েছিলো আব্রাহাম যখন সে আইরাতের বিয়ের খবর শুনে। আইরাত কীভাবে পারলো আব্রাহাম কে ভুলে আরেক জন কে আবার বিয়ে করতে এটাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। আইরাত তো আরেকটা বিয়ে করে খুশিই থাকবে এই ভেবেই আব্রাহাম ছিলো। কিন্তু তার পরের দিনই আব্রাহাম তার অফিস থেকে আবার এওয়ার্ডের এনাউন্সমেন্ট শুনে। পরবর্তীতে আব্রাহাম খোঁজ নিয়ে দেখে আইরাতের সেই বিয়ের খবর ভুয়া। ব্যাস সেইদিন রাতেই আব্রাহাম সীদ্ধান্ত নেই যে এভাবে কিছুই হবে না, কিচ্ছু না। সব নতুন করে আবার শুরু করতে হবে,, আব্রাহাম এবার তার লাইফের সেকেন্ড চয়েসটা প্রফেসন হিসেবে নেয়। যদিও এটা তার জীবনের ফার্স্ট চয়েস ছিলো একটা সময়। রকস্টার 🤟 🔥। আব্রাহাম নিজের পরিচয় একদম গোপন রাখে। তবে এক্ষেত্রে কিছু মানুষ তার কাজে আসে। অর্থাৎ যারা আব্রাহামের হয়ে ছোট খাটো কাজ করতো। তাদের দ্বারা নিজের সব পুরানা পরিচয় গোপন রেখে বাকি কাজ গুলো করে ফেলে। এন্ড একচুয়ালি আব্রাহামের গানের গলা ভীষণ সুন্দর… তাই তাকে এই প্রফেশনে আসতে আর পাবলিসিটি পেতে বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি। একদম চকোলেট বয় বলে কথা। আব্রাহাম যেখানে এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডে গিয়েছে প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি হবে সেখানে আব্রাহাম বলে দিয়েছে সাড়ে তিন বছর আর এটা বলার মানে হচ্ছে কেউ যেনো সন্দেহ না করে তাই। আব্রাহাম এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডে যাওয়ার পর থেকে আইরাতের চর্চা আরো যেনো দ্বিগুণ হারে শুনতে পায়।
আর যখনই কেউ আইরাতের প্রশংসার পুল আব্রাহামের সামনে নিয়ে বসতো তখন আব্রাহাম এমন একটা ভাব ধরতো যেন সে তাকে চিনেই না। অবশেষে আব্রাহাম তনয়া কে আইরাতের কাছে পাঠায়। তনয়া আইরাতের সাথে কাজ করে বেশি দিন হবে না। প্রায় ৭-৮ মাস। এভাবেই আব্রাহামের দ্বিতীয় জার্নি টা শুরু হয়। একদম প্রথম বারেই ছক্কা মেরে দেয়। তার ফ্যান, ফলোয়ার”স, নাম-ডাক উঠে আরে আরেক দফা।

আব্রাহাম A-Z সব আইরাতকে খুলে বলে। আর সবকিছু শুনে আইরাত ধুপ করে বিছানার কিণারে বসে পরে।

আব্রাহাম;; আইরাত, তনয়া কোন বিজন্যাসের জন্য তোমার সাথে কাজ করে নি, তাকেও আমিই পাঠিয়েছিলাম।

আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আইরাত এক ঝটকায় আবার উঠে গিয়ে আব্রাহাম কে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। তাতে তো আব্রাহাম একবিন্দুও নড়ে না ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাত একদম আব্রাহামের কাছে গিয়ে রেগে বলে…..

আইরাত;; “” উপসংহারে যদি বিচ্ছেদই থেকে থাকে, তাহলে তার সূচনা টা এতো রঙিন কেনো? 🖤🥀””

আব্রাহাম;; উপসংহার এখনো আসে নি আর না ই আসবে। আর আসলেও তা হাজারো রঙ দ্বারা রঙিন হবে।

আব্রাহাম আইরাতকে এখন কীভাবে শান্ত করাবে তা জানা নেই। তবে আইরাত অনেক হার্ট হয়েছে, যদিও আব্রাহামের ক্ষেত্রেও একই।

আব্রাহাম;; জানপাখি…..

আইরাত;; আপনি জানেন না আব্রাহাম আমি আপনাকে ছাড়া কি হালে থেকেছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। প্লিজ আমাকে আর ভুল বুঝবেন না।

আব্রাহাম;; আমি ভুল বুঝি নি তোমায়।

আইরাত;; আমি ভেঙে গিয়েছিলাম পুরো, আপনাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। আমি নিজেকেও এতোটা ভালোবাসি না যতটা আপনাকে বাসি। আমি সবসময় দূরে থেকেছি ভালোবাসা নামক এই জিনিস থেকে। কারণ আমি এতে বিশ্বাস করতাম না। মানতাম না যে ভালোবাসা নামক জিনিস আসলেই আছে কি। কিন্তু আমার ধারণা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আমার জীবনে আপনি এলেন। ভালোবাসতে আমাকে আপনি শেখালেন আর সেই আপনিই কিনা এভাবে আমাকে ছেড়ে দূরে চলে গেলেন।

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে এসে তার দুই হাতে আইরাতের গালে ধরে।

আব্রাহাম;; আমি আছি। ছিলাম আর সবসময় থাকবো।

আইরাত এবার হুহু করে জোরে শব্দ করেই কেদে দেয়। কেদে কেদে নিচে বসে পরে। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। আইরাত প্রথমে আব্রাহাম কে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে চায় রাগে কিন্তু আব্রাহাম যেনো আইরাতকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরে রাখে। একটা সময় আইরাত হাপিয়ে যায়। তারপর গা এলিয়ে দিয়ে সেখানেই বসে থাকে। চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে গেছে কান্না করতে করতে।

সেখানে আইরাত বেশ কিছুক্ষণ থেকে আব্রাহাম কে এক ঝটকায় নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের নাম ধরে ডাকে কিন্তু আইরাত থামে না। সে একদম বাইরে এসে পরে। বাইরে এসে দেখে আইরাতের ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাক ভালোই হলো, আইরাত গিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে চলে আসে আর আব্রাহাম কোমড়ে দুইহাত রেখে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিমানের পাহাড় জমে রয়েছে তা আব্রাহাম বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু এভাবে থাকলে তো আর চলবে না রাগ ভাঙাতে হবে। আর তার জন্য আব্রাহাম কে আবার আগের ফর্মে ফিরে আসতে হবে। এটা ভেবেই আব্রাহাম এক ক্ষীণ দম ত্যাগ করে। তরপর আব্রাহাম নিজেও তার ওই ফ্ল্যাট থেকে এসে পরে। আব্রাহাম হয়তো তার এই বাড়ি তেও বেশি একটা দিন আর থাকবে না। অর্থাৎ যেই বাড়ির সাথে রাত্রি রা থাকে আর কি। আব্রাহাম গিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে শার্টের হাতাগুলো গুটিয়ে নেয়। তখন আব্রাহামের রুমের দরজাতে রাত্রি কড়া নাড়ে।

আব্রাহাম;; কিরে রাত্রি বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো আরে ভেতরে আয়।

রাত্রি;; আজ তোকে অনেক খুশি খুশি লাগছে যে!! ঘটনা কি হুম হুম?

আব্রাহাম রাত্রি কে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে সে তার সামনে বসে পরে।

আব্রাহাম;; দেখ অনেক কিছুই আমি তোকে বলি নি। আমার ব্যাপারেই। আমার পারসোনাল লাইফের ব্যাপারে। আমি ম্যারিড রাত্রি, সেইদিন যে মেয়েটা এসেছিলো। সে আইরাত, আমার বউ। ওকে তো চিনিসই। ওর জন্যই আমার এতো কিছু করা। আর আমার এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী থেকে আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল হওয়ার কাহিনী তো তুই জানিস ই। অর্নীল শুধুই একটা ছদ্মনাম। আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আর ও মিসেস চৌধুরী।

রাত্রি;; আরে হ্যাঁ আমি, আম আমি জা জানি। আমার সেইদিনই সন্দেহ হয়েছিলো তোর ওপরে। আর ঠিকই আছে। তোর বউ তোর থেকেও বেশি সুন্দর। আর তুই যে রাফ & টাফ মুন্ডা তাতে আইরাত তোর বউ হিসেবে একদমই পারফেক্ট, এক্কেবারে মানানসই।

আব্রাহাম;; আর তুই ফ্রেন্ড হিসেবে।

রাত্রি আর আব্রাহাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর রাত্রি নিজেই বলে ওঠে…..

রাত্রি;; চলে যাবি কি এখান থেকে??

আব্রাহাম;; হ্যাঁ রে যেতেই হবে, সেখানে সব ঠিক করতে হবে। আমি আইরাতকে ছাড়া পারবো না থাকতে। ওকে আমার লাগবে। সেখানে সব আগের মতো করে নিতে হবে। আমি করবো।

রাত্রি;; 😊

আব্রাহাম;; আচ্ছা তুই একজন ডক্টর,, রাত জেগে থাকার সাইড ইফেক্ট”স গুলো অবশ্যই বেশ ভালো করেই জানিস। তাহলে ইদানীং কেনো এতো রাত অব্দি জেগে থাকিস বল তো। যা গিয়ে ঘুমা।

রাত্রি;; না মানে তুই আসতে দেরি করছিলি তো তাই।

আব্রাহাম;; এখন তো এসে গেছি তাই না, এবার তুই যা গিয়ে ঘুমা।

রাত্রি;; গুড নাইট।

আব্রাহাম;; গুড নাইট উইথ সুইট ড্রিম”স।

রাত্রি সেখান থেকে এসে পরে। নিজের রুমে গিয়ে দেখে তার মা বসে আছে। এতো রাতে রাত্রি তার মাকে তার রুমে দেখে অবাক।

রাত্রি;; মা তুমি? ঘুমাও নি?

লাবণী;; এদিকে আয়।

রাত্রি তার মায়ের কাছে চলে যায়। সোজা তার মায়ের কোলে মাথা রেখে দিয়ে শুয়ে পরে।

লাবণী;; রাত্রি রে একটা কথা বলবি?

রাত্রি;; হ্যাঁ বলো না কি কথা!!

লাবণী;; তুই আব্রাহাম কে পছন্দ করিস তাই না?

রাত্রি;; আব্রাহাম পাগলের মতো করে আইরাতকে ভালোবাসে। যেনো আব্রাহামের জীবন টা আইরাতের মাঝেই রয়েছে। ও নিজের জান দেখে আইরাতকে। এদের এত্তো ভালোবাসার মাঝে সেখানে আমার একতরফা ভালোবাসাটা একেবারেই ঠুনকো মা। আমি কখনো বলবোও না আব্রাহাম কে যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম৷ এমনকি এখনো বাসিই।

লাবণী;; শোন একতরফা জিনিস টা খুব বেশিই খারাপ। সেটা বন্ধুত্বই হোক বা ভালোবাসা।

রাত্রি;; মা মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না,, ঘুম দরকার আমার।

লাবনী রাত্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর রাত্রি ঘুমিয়ে পরে।

ওদিকে আইরাত সোজা নিজের বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু না বলেই রুমে চলে যায়। কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু আব্রাহামের তো ঘুম নেই। আইরাতকে ফোনের ওপরে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু সুইচ অফ দেখাচ্ছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এভাবে কাজ হবে না। আবার উল্টো পথ বেছে নিতে হবে।

আব্রাহাম;; বাঘীনি রেগে গেলে শুধু বাঘ কেনো বাঘের পুরো চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলবে। এমনিতেই ব্যাপার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। আর যেতে দেওয়া যাবে না তার আগেই আইরাতকে সামলাতে হবে।

শুরু হয়ে গেলো আবার আগের কাহিনি। আগামীকাল থেকে আব্রাহামের সাইকোগিরি আবার শুরু।



চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here